#প্রজাপতি মন (পর্ব-15)
♡আরশিয়া জান্নাত
হাসিবের ফোনে সেই কখন থেকে কল বাজছে তার কোনো পাত্তাই নেই। ঘুমের তীব্রতা কাটিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে কল আসছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় দুইটা, এতো রাতে কে ফোন করবে তাকে?
অনিচ্ছাস্বত্বেও কলটা রিসিভ করলো,
হ্যালো আস্সালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
ওয়ালাইকুমুস্সালাম। হাসিব আমি নিশিথা আনহার বোন!
হাসিব হকচকিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো, নিশিথা আপু আপনি! কেমন আছেন?
ভালো আছি তুমি কেমন আছ?
আলহামদুলিল্লাহ। আমিতো ভাবিই নি এতো রাতে আপনি ফোন করবেন! সব ঠিকঠাক আছে তো?
এখানে সব ঠিকই আছে কিন্তু ওখানে ঠিক নেই! হাসিব তোমার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে। আমি জানিনা সবটা শুনে তুমি কেমন রিয়েক্ট করবে তবে কথাগুলো জানানো ভীষণ প্রয়োজন।
জ্বি আপু বলুন? আপনার ফোনে ব্যালেন্স আছে তো নাকি আমি ফোন করবো?
নিশিথা হেসে বললো, এতোটাও গরীব না এরা যে ফোনে টাকা থাকবেনা।
না না আপু ছি আমি ওটা বুঝাই নি।
ফান করলাম। শুনেছি আনহার সঙ্গে তোমার কাবিন হয়েছে। এটা শুনে যেমন আনন্দিত হয়েছি তেমনি শঙ্কিত আছি। আমার ঝোঁকের বশে করা ভুলগুলোর শাস্তি সবসময় আনু ভোগ করে,এবারো তার ব্যতিক্রম হয় নি।
যা হয়েছে হয়েছে এসব ভেবে কষ্ট পাবেন না।
হাসিব আনু তোমাকে অনেক পছন্দ করে। একদম কলিজার বন্ধু ভাবে বলতে পারো। তুমি যখন তাহেরের সঙ্গে চলাফেরা করে বখে যাচ্ছিলে ও কতোটা টেনশনে ছিল জানোনা। রোজ আমাকে এসে বলতো তোমার অবনতির কথা। আমিই প্রথম বুদ্ধি বের করি রং নাম্বারে কথা বলার। আমার বা আনহার ইনটেনশন খারাপ ছিল না। আমরা যা সহজ ভাষায় বলে করতে পারতাম না তাই তিতলিকে দিয়ে করিয়েছি। আনহা আমাকে বহুবার বলেছে হাসিব উইক হয়ে যাচ্ছে ওকে অযথা ইমোশনাল করোনা। কিন্তু হুট করে তো আর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা যায় না তাই ঐ অসুস্থতার নাটকটা বলা হয়।( নিশিথাই যে তিতলি ছিল এই কথাটা গোপন করে যায়। কারণ এখন তাদের সম্পর্কটা ভিন্ন মাত্রায় গেছে। শত হলেও ছোট বোনের হাজবেন্ড।)
হাসিব আমি জানি তুমি তিতলির প্রতি অনেক উইক ছিলে, কিন্তু একবার ভেবে বলোতো ও কি তোমাকে একটাও খারাপ কথা বলেছে? সে সর্বদা তোমাকে ভালো পথে চলার উপদেশ দিয়েছে, ওর কথায় তুমি যতোটা প্রভাবিত হয়েছিলে আনহার বা তোমার মায়ের কথায় তখন ততোটা হতে? আমি জানি আমরা অন্যায় করেছি এমনভাবে ইমোশন নিয়ে খেলা কারোই উচিত না। তবে ব্রেইন খাটিয়ে ভাবো এখানে লাভটা কার ছিল।
হাসিব চুপচাপ সবকিছু শুনে গেল মুখে কিছু বললো না। নিশিথা হাসিবের নিরবতায় ফের বলতে লাগলো, আমি দেখেছি তুমি কতোটা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়েছিলে আনুর থেকে, তিতলি তখনই তোমাকে সবটা বলতো কিন্তু তুমি তিতলির ফোন রিসিভ করোনি। তোমরা এখন কেবল বন্ধু না জীবনসঙ্গী। তোমাদের সম্পর্কের গভীরতা এখন সবকিছুর উর্ধ্বে আমি চাইনা এখানে অতীতে কোনো ছাপ পড়ুক। তিতলি জাস্ট একটা কাল্পনিক চরিত্র তার জীবনে যেমন তোমার বিশেষ অস্তিত্ব নেই তোমার জীবনেও তার অস্তিত্ব রাখার দরকার নেই। আনু খুব লক্ষী মেয়ে, অনেক অভিমানীও। ওকে তুমি যত্ন করে আগলে রেখো ভাই। আমার বোনটা ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেলেও মুখে কিচ্ছু বলবেনা। তুমি ওর মনটা বোঝার চেষ্টা করো। এইটুকু বলতে পারি ওকে পেয়ে তুমি ঠকবেনা। ওর জীবনে তোমার মতো অবস্থান আর কোনো ছেলের নেই। ভালো থেকো রাখছি।
হাসিব ফোন কানে নিয়ে তখনো বসে রইলো। নিশিথার বলা প্রতিটি শব্দ তার কানে বাজতে লাগলো। গভীরভাবে চিন্তা করতে লাগলো পুরনো সব ঘটনা।
????
কি বলছো মা নিশিপু প্রেগনেন্ট? আমি খালা হবো!
আনিসা চোখের পানি লুকানোর বৃথা চেষ্টা করতে করতে বললেন, ভাঁজ পড়েছে বলে কিছুই খেতে পারেনা। সবকিছুতেই গন্ধ লাগে। মেয়েটা তাও সবার জন্য রান্না করছে, ঘরের কাজ করছে। আমার মেয়েটা এই শরীরেও খেটে মরছে!
মা বাবাকে বলেছ?
তোর বাবার সামনে ওর নাম নেওয়ার সাহস আছে?
আপুকে বলো চলে আসতে। বাবার সামনে আপু এসে দাঁড়ালে দেখবে সব রাগ গলে গেছে। আপুকে বাবা আমার চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসে। ও সামনে এলে কিচ্ছু বলতে পারবেনা।
বলেছিলাম নিশিকে এই সময়ে বাপের বাড়ি থাকতে হয়। ওখানে তো মনমতো কিছু খেতেও পায় না। আমার কাছে থাকলে অন্তত,,,,কিন্তু তোর বোন শোনেই না আমার কথা। ও নাকি ওখানেই থাকবে কোন মুখে আসবে এ বাড়ি!
আনহার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এতো সুন্দর একটা খবর অথচ কত কষ্টের পরিস্থিতি। সে না পারছে বোনকে জড়িয়ে ধরে আনন্দটা প্রকাশ করতে না পারছে বাবাকে জানাতে। আজ যদি নিশিথা এভাবে না যেত এই খবরটা শুনে এতোক্ষণে আনন্দের বন্যা বয়ে যেত বৈকি!
বেশ কয়েকদিন পর আনহা হসপিটাল থেকে বের হতেই দেখে হাসিব বসে আছে। যদিও ও রোজই বসে থাকে তবে আনহা বের হওয়া অবধি থাকেনা। আনহাকে দেখে দাঁড়িয়ে বললো, বাইকে উঠো
আনহা কিছু না বলে বাইকে উঠলো হসপিটাল ক্রস করার পর হাসিব এক হাতে আনহার হাতটা তার কাঁধ থেকে সরিয়ে বুকের মাঝখানে নিলো। হাসিবের কর্মকান্ড কিছুই বুঝতে পারছেনা। কি হলো তাঁর হঠাৎ? আর কোথায়ই বা যাচ্ছে!
বাড়ির পথে যাচ্ছেনা দেখে আনহা বললো, কোথায় যাচ্ছি?
যেখানে দু’চোখ যায়। কেন ভয় লাগছে নাকি ভরসা নেই?
আনহা ওর পিঠে গাল ঠেকিয়ে বললো, আমি খুব টায়ার্ড। ঘুম পাচ্ছে অনেক।
প্রায় দুই ঘন্টার জার্নি শেষে তারা গিয়ে পৌছাল একটা সুন্দর বাগানবাড়িতে। হাসিবকে দেখে ভেতর থেকে কয়েকজন এগিয়ে এসে বললো, আস্সালামু আলাইকুম স্যার ভালো আছেন তো? বড় স্যার আর ম্যাডাম ভালো? পথে কোনো সমস্যা হয় নি তো?
হাসিব হেসে বললো,ওয়ালাইকুমুস্সালাম। জ্বি সবাই ভালো। পথে কোনো সমস্যা হয় নি। ভেতরে সব ব্যবস্থা করেছেন তো?
জ্বি সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনি ম্যাডাম কে নিয়ে ভেতরে বসুন আমরা খাবার পরিবেশন করছি।
হাসিব পাশে তাকিয়ে দেখে আনহা বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখছে, এতো সুন্দর বাগানবাড়ি সে আগে কখনো দেখেনি। চারদিকে শুধু গাছপালা আর ছোট্ট একটা পুল। বসার জন্য বেশ কয়েকটি আসন পাতা আছে। হাসিব বললো, পছন্দ হয়েছে?
হুম অনেক! এখানে নিঃশ্বাস নিতেই কেমন শান্তি লাগছে।
চলো ভেতরে ফ্রেশ হয়ে নাও।
এই বাগানবাড়িটার কথা অনেক শুনেছি মায়ের মুখে। আজ প্রথম দেখলাম।
মা এটা নিজে সাজিয়েছেন। সবকিছুর তদারকি উনিই করেছিলেন। তাই হয়তো এটা বেশিই সুন্দর।
হুম এক টুকরো জান্নাত! বাসায় ফোন করে বলা উচিত আম্মু নিশ্চয়ই টেনশন করবেন।
আমি কথা বলেছি। কেউ টেনশন করবেনা। তাছাড়া উনাদের মেয়েতো যার তার সাথে নেই, তার হাজবেন্ড এর সাথে আছে। এখানে টেনশনের কিছু নেই।
আনহা যদিও লক্ষ্য করেছে হাসিবের কথাবার্তা আজ অন্য মাত্রার। তুই না বলে তুমি করে বলছে! বাইকে অমন কাছে টেনে নেওয়া সবকিছুই অন্য রকম। কি হয়েছে হাসিবের?
হালকা নাস্তা করে হাসিব বললো, বামের ঘরটাতে গিয়ে রেস্ট করো। আমি বাইরে থেকে আসছি,
কোথায় যাচ্ছ?
কাজ আছে। বেশিক্ষণ লাগবে না যাবো আর আসবো।
আচ্ছা।
হাসিব যাওয়ার পর আনহা রুমে গিয়ে চারদিকে চোখ বুলিয়ে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লো।
ঘুমের মাঝেই মনে হলো এই বাসাটায় ম্যাজিক আছে, কেমন শান্তি শান্তি লাগছে।
চলবে,,,