#প্রজাপতি মন (পর্ব-22)
♡আরশিয়া জান্নাত
এতো স্ট্রেস নিও না আনু। তোমাকে এমন দেখতে আমার ভালো লাগে না। যা হবে সব ঠিকই হবে দেখো।
আমি খুব স্যরি হাসিব। আমাদের প্ল্যান ছিল যাওয়ার কিন্তু এতোকিছুর মাঝে ঐটা ক্যানসেল হলো।
এমনভাবে বলছো যেন আমি তোমার পর কেউ? ফ্যামিলিতে কোনোকিছুই তোমার আমার না। এখন দুজনের সবকিছু। যাই হোক দেখি বসো আমার সামনে।
হাসিব আনহাকে সামনে বসিয়ে মাথা ম্যাসাজ করে দিতে লাগলো। আনহা হাসিবের বুকে হেলান দিয়ে বললো, তুমি খুব সাপোর্টিভ হাজবেন্ড। আমি তোমাকে পেয়ে সত্যিই ভাগ্যবতী। আমাদের বিয়ের এতোগুলো বছর হয়ে গেছে অথচ তোমার একবিন্দু অভিযোগ নেই আমার প্রতি। আমাদের মাঝে দূরত্ব ছিল, অভিমান ছিল তবুও আমরা একসঙ্গে আছি! আলহামদুলিল্লাহ ফর এভ্রিথিং। তোমার প্রতি আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ!
আনু শোন আমি মনে করি রিলেশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বন্ডিং। একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস আর অফুরন্ত ভালোবাসা। আমাদের বন্ডিং টা ছোটবেলার। আর আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করি। ভালোবাসার ব্যাপারটা আমাদের মাঝে পরে এসেছে। তাই এখানে দূরত্বটা আমাদের ক্ষতি করেনি তবে পুড়িয়েছে অনেক। এই যে মাঝেমধ্যে তুই আমার বুকে মাথা রাখিস, আমার ক্ষতটা শুকিয়ে যায়। তোর আশেপাশে থাকলে আমার মনে হয় আমার কোনো যন্ত্রণা নেই। টেনশন নেই। আমি একদম ফুরফুরে। জানিস যখন তুই ছিলি না রাতে আমার কত একা লাগতো? এমন না আমরা একসঙ্গে ছিলাম তবুও এক শহরে তো ছিলাম। চাইলেই তোকে দেখতে পেরেছি। তোকে কত মিস করেছি বলে বোঝাতে পারবোনা। আমার মনে হয় আমাদের দূরত্বটা ভালোবাসার বাড়ানোর এজেন্ট হিসেবে কাছ করেছে।
আনহা ঘুরে বসলো দু’হাতে হাসিবের গাল ছুঁয়ে বললো, আমায় বলতে না কেন এসব? কতবার ভিডিও কলে দেখতে চেয়েছি অথচ পাথরের মতো মুখটা পর্যন্ত দেখতে দাও নি। আমাকে ওখানে সবাই কি বলে ডাকতো জানো? C.O.H
ক্রেজি অফ হাসিব?
হু! তারা নাকি এমন বরপাগল আর দেখে নি।
আমার তো বিশ্বাস হয় না। আমার মতে তুই হচ্ছিস নিষ্ঠুর নির্দয় পাষাণ! আমাকে এক বিন্দুও ভালোবাসিস না। এক বিন্দু ভুল বলেছি এক পরমাণু পরিমাণ ও না।
ওহ তাই? শোন এই কথা আমি বললে খাটবে তুই না। বিয়ের আগে কয়টা মেয়ের সাথে লাইন মারছিলি মনে আছে? বলবো লিস্ট টা? তোর মন টা তো আমার আগেই কতবার ভাগ হয়েছে। কিন্তু আমার মন একদম পিওর। এখানে একটাই নাম প্রথম এবং শেষ নাম এই একটাই!
এহহ মানছি আমি আমি অনেকের সাথেই কথা বলেছি লাইন মারার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মনে করে দেখ ঘুরেফিরে সবাই তোর জন্যই ব্রেকাপ করেছে। সবার একটাই কথা আমি গফের চেয়ে বফের দিকে বেশি ফোকাসড। এমনকি তিতলিও,,,,,,
বলতেই হাসিব চুপ হয়ে গেল।
আনহা টপিক এড়িয়ে বললো, তোর সাথে ঝগড়া করতে গেলে এই জীবন যথেষ্ট হবেনা।
ভালোবাসলেও কিন্তু যথেষ্ট হবে না। আমি তো এই ভেবে আনন্দিত যদি আল্লাহ চায় মৃত্যুর পর অনন্ত জীবন তুই আমার স্ত্রী হয়ে থাকবি। আহা সাথে কত হুরপরীও থাকবে!
কি বললি তুই?! হুরপরীর কথা ভেবে বড় আনন্দ হচ্ছে না? যাইস তুই ওদের কাছে।
ইশ রাগলে তোর নাকটা কি লাল থাকে ইচ্ছে করে ,,,,
কি ইচ্ছে করে!
উহু বলা যাবে না।
ঢং!
ঢং না গো ঢং না এইসব হচ্ছে প্রেমের নেশা। তোমার নেশা! আমার নেশা লাগানো বৌ টা!
আনহার রাগটা টুপ করে পড়ে গেল। রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো পুরো মুখ জুড়ে। হাসিব কেমন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে তার দিকে, ঐ দৃষ্টিতে তাকানোর সাধ্যি কি তার আছে?
আনু!
হুম
I wanna feel you deeply.. will you give me permission? Please
আনহা লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললো। হাসিব ওর হাতটা আঙুলের ভাঁজে নিয়ে গভীর করে চুমু খেয়ে বলল, “অনেক ভালোবাসি বৌ!”
আনহা হাসিবের বুকে মুখ লুকালো। আজ সে কিছুতেই হাসিবের দিকে তাকাবে না। কিছুতেই না!
?????????
ইমরানের খুব অস্বস্তি হচ্ছে হাসিবদের এখানে। হাসিব তাকে সেদিন জোর করে ওর বাসায় এনে রেখেছে। আনহা আর হাসিব তাকে একমুহূর্তের জন্য মনে হতে দেয় নি সে এই প্রথমবার এখানে এসেছে। আনহার শাশুড়ি তো আদরযত্নের ত্রুটি রাখেননি। একদম মেয়ের জামাইয়ের মতো আদর করছেন। এরা সবাই এতো আপ্যায়ন করছে বলেই ওর লজ্জা বেশি হচ্ছে। চলে যাবে ভেবেও যেতে পারছেনা ছেলেটাকে ফেলে গেলে আর কি কখনোই ফেরত পাওয়ার সুযোগ থাকবে? আনহা চা নিয়ে ইমরানের রুমে ঢুকলো, ভাইয়া এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?
নাহ কি যে বলো! তোমরা আমাকে এতো যত্ন করছো অসুবিধা হবে কিভাবে।
যত্ন আর করতে পারছি কই! মা যে কতবার করে ফোন করে আপনার খবর নিচ্ছে। উনার বড় মেয়ের জামাইয়ের যত্নের যেন কমতি না হয়। আমার মায়ের কাছে গেলে বুঝতেন আদর কি জিনিস। উনি এখন না পারছেন আপনাকে কিছু করতে না পারছেন ওখানে শান্তিতে বসে থাকতে।
আনহা। আমি জানিনা আমার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত। তোমরা সত্যিই খুব অমায়িক। অবশ্য নিশি সবসময়ই বলতো তুমি আর আন্টি এক ধাঁচের। তোমাদের মনে আল্লাহ মায়া মমতা ঢেলে দিয়েছেন। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে এসেছি এই সময়েও যে এমন কিছু করবে কল্পনাও করিনি।
ছাড়ুন এসব কথা। এতোটাও করতে পারছি না। ভাইয়া বলছি কি আপনি কি একবার আপুর সঙ্গে কথা বলে দেখবেন? দেখুন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অনেক ঝগড়া বিবাদ হয়। তাই বলে কথায় কথায় ছাড়াছাড়ি হয় না। আপুর জেদ বেশি, ও রগচটাও বটে। কিন্তু এখন আপনাদের একটা সন্তান আছে। ওর দিকে তাকিয়ে হলেও দুজনে মিটমাট করুন না? আমাদের পরিবারে ডিভোর্স কেইস নেই। বাবা এমনিতেই অনেক অপমানিত হয়েছেন। আমি চাই না আবারো সেটা ঘটুক। ছোটবোন ভেবে একটাবার চেষ্টা করে দেখুন না?
একটা কথা কি জানো আনহা। আমি গরীব ঘরের ছেলে। কখনোই এক বেলা ভালো খাবার রান্না হলে পরের বেলায় অবশিষ্ট থাকেনা। আমি জানি নিশিথার সেসবে অনেক কষ্ট হয়েছে। তোমরা যেমন বাড়ির মেয়ে আমার মতো হতদরিদ্র কারোর সাধ্য নেই তোমার বোনের অভাব পূরণ করার, সুখে রাখার। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমার বোনকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি বলেই সাহস হচ্ছেনা সেই অভাবের সংসারে ওকে ফিরিয়ে নিতে। আবার ওকে ছাড়া জীবনটাও ভাবতে পারছি না। আমি কি করবো জানি না।
ভাইয়া হাসিব আপনার জন্য ঢাকায় একটা জবের ব্যবস্থা করেছে। আপনি প্লিজ খারাপ ভাবে নেবেন না। আপনার হাই কোয়ালিফিকেশন দেখেই আসলে,,, কিন্তু আপনি বিষয়টা কিভাবে নিবেন ভেবেই বলতে পারছেনা। আমরা আপনার পর না ভাইয়া। আমার বড় ভাই নেই ভেবেছিলাম আপুর বরকে বড় ভাইয়া বলবো। সেই হিসেবে আপনি আমার বড় ভাই। ছোটবোনের আবদার রাখুন। জবটাতে জয়েন করুন। আমার বিশ্বাস আপনি আপনার যোগ্যতায় অনেক উপরে উঠবেন।
ইমরান বুঝে পেলো না কি বলবে আনহা কে। এতো আপন করে কথাগুলো বলছে সে কিভাবে ফেলে দিবে? কিন্তু নিশিথার বোনের স্বামী থেকে জব নেওয়াটা কি ঠিক হবে?
এই পৃথিবীতে কেউই সাহায্য ছাড়া কিছু করতে পারেনা। ধরুন না আল্লাহ আপনার সাহায্যকারী হিসেবে এই ব্যবস্থাটা হাসিবের মাধ্যমে করাচ্ছে। বিশ্বাস করুন আমরা কেউই আপনাকে অনুগ্রহ করছি না। প্লিজ ভাইয়া অন্য ভাবে নিবেন না।
আমি অবশ্যই জয়েন করবো আনহা। তুমি খুব সুখী হও আমি মন থেকে দোআ করি। আর হ্যাঁ আমি তোমার বড় ভাই। তুমি আমার আরেকটা ছোট বোন। এই বোনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ থাকবো আজীবন।
বোন ও বলছেন আবার কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ এসব ঠিক না।
ইমরান চোখে পানি নিয়ে হাসলো।
চলবে,,,