#প্রজাপতি মন (পর্ব:21)
♡আরশিয়া জান্নাত
আনহা লাঞ্চ পিরিয়ডে কেবিনে এসে বসতেই কাইয়্যুম ওর দরজায় নক করলো। কাইয়্যুমকে দেখে আনহা একপ্রকার দৌড়েই দরজায় গেল, ভাইয়া আপনি এখানে? What a pleasant surprise! দেশে ফিরেছেন কবে? আসুন না ভেতরে আসুন।
কাইয়্যুম হেসে বললো, দেখতে এলাম আমাদের ডাক্তার আপা কেমন ট্রিটমেন্ট করায়। এসেছি বেশ কিছুদিন হলো। তোমার সঙ্গে দেখা করবো করবো করে সময় হচ্ছিল না। আজ এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম ভাবলাম যাই দেখে আসি।
আপনি কিভাবে জানলেন আমি এখানে বসি?
খবর নিতে কতক্ষণ? তারপর বলো কি অবস্থা? আঙ্কেল আন্টি সবাই ভালো তো? শুনলাম বিয়েও করে ফেলেছ! কয়েক বছরে কত কি বদলে গেছে!
সব গল্প হবে ভাইয়া, ভালো টাইমেই এসেছেন। আগে বলুন লাঞ্চে কি খাবেন?
নাহ এখন কিছু খাবো না! খেয়েই বেরিয়েছি আমি।
এসব বললে হবে না। কত্তদিন পর দেখা আপনার সঙ্গে! আপনি একদম বদলান নি সেই আগের মতোই লাগছে। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে সময় বদলায় নি।
হাহা, এভার গ্রীণ?
হতেই পারে।
তবে তুমি কিন্তু বদলেছ। এনিওয়ে নিশিথার কি খবর? কেমন আছে ও?
আনহা ভেবে পেলো না এই বিষয়ে কি বলবে, কিভাবে বলবে। সত্যি বলবে নাকি মিথ্যা বলবে!
কি এতো ভাবছো?
নাহ তেমন কিছু না। আপু শ্বশুরবাড়িতে আছে, ওর একটা ছেলে আছে।
ওর হাজবেন্ড কি করে?
কোন একটা কোম্পানিতে জব করে মনে পড়ছে না নামটা।
কাইয়্যুম হেসে বললো, আনহা একটা কথা কি আগে বলেছি?
কি কথা?
তুমি মিথ্যা বলায় খুব আনাড়ি!
আনহা বিব্রতবোধ করলো। কাইয়্যুম হাসিমুখেই বললো, নিশিথা পালিয়ে গেছিল তাই না! তোমরা ওকে মেনে নাও নি এখনো। আর ওর জবটাও নেই আর। আর ওর হাজবেন্ড,,,,, সে কিন্তু এখন পাক্কা গাঁয়ের বধূ এম আই রাইট?
হুম
নিশিথাকে আমি ভালোবেসে বাটারফ্লাই ডাকতাম। কিন্তু ও যে সত্যি বাটারফ্লাই হবে ভাবি নি। তবে জব করছেনা শুনে অবাক হয়েছিলাম। যতটুকু জানি এটা ওর একমাত্র এইম ছিল।
আব্বুর রাগটা পড়ে নি এটা সবচেয়ে বড় কারণ।
ভাইয়া আছেন তো কিছু দিন নাকি চলে যাবেন আবার?
বলতে পারছি না আপাতত।
আনহা মনে মনে বললো, ভাইয়া আমার মাঝেমাঝে মনে হয় আপনি ছাড়া নিশি আপুকে কেউ হ্যান্ডেল করতে পারছে না। আপনার অভিশাপেই বুঝি আমার বোনটার এই দশা? অবশ্য বাবার অভিশাপও আছে এখানে।
নানান গল্প শেষে কাইয়্যুম চলে গেল। আনহা তাকে বাসায় যাওয়ার দাওয়াত দিতে ভুললো না।
বেশ কয়েকদিন পর ইমরান তার ছেলে নিশানকে নিয়ে আনহাদের বাসায় উপস্থিত হলো। আনিসা বেগম নাতি আর মেয়ের জামাইকে দেখে যতোটা না খুশি হয়েছেন তার চেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়েছেন পাশে নিশিথাকে না দেখে। নিশানকে কোলে তুলে আদর করলে, গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদেই ফেললেন। তার নিশির ছেলে এই প্রথম এসেছে, তার প্রথম নাতি!
ইমরান দ্বিধাগ্রস্ত চেহারায় বললেন, আন্টি নিশিথাকে ডেকে দিবেন একটু? ছেলেটাকে কিচ্ছু খাওয়ানো যাচ্ছেনা। শুধু কান্নাকাটি করছে। অন্য সময় মায়ের হাতেই খেতো কিন্তু এ ক’দিন কি হয়েছে বুঝতে পারছিনা,,
মানে কি? নিশি কোথায় গেছে? তোমার ওখানে নেই ও? এইটুকু বাচ্চাকে রেখেই বা এখানে আসবে কেন?
ইমরান কিছু বলতে পারলো না।
নাফিজ সাহেব খবর পেয়েই ছুটে এলেন। ইমরানের কলার চেপে বললেন, কি করেছিস আমার মেয়েকে? কোথায় আমার মেয়ে? আমার মেয়ের যদি কিছু হয় আমি তোকে ছাড়বোনা।
কনস্টেবল আরিফ আর মনসুর তাকে ধরে শান্ত করলো। নাফিজ সাহেব তখনো বলে যাচ্ছেন, নিশ্চয়ই এ আমার মেয়েকে নির্যাতন করে তাড়িয়েছে। এখন আসছে ভালো মানুষ সাজতে! তোর দুইদিনের সন্তানের দুঃখ সহ্য হচ্ছে না আমার সন্তানকে যে তুই ছিনিয়ে নিলি, কষ্টে রাখলি বুঝ কেমন লাগছে আমার! আমার মেয়েটাকে আমি ফুলের টোকাও পড়তে দেইনি আর তোর ওখানে কেমন রেখেছিলি সব খবর জানি আমি।
এখনো সময় আছে ভালোয় ভালোয় বল কোথায় আমার মেয়ে?
আমি সত্যি জানি না ও কোথায়। আমিতো ভেবেছি এখানে আছে, তাই তো বাবুকে নিয়ে এখানে এসেছি।
আরিফ একে আমার সামনে থেকে দূর করো। আমি নাহয় ওকে খুন করে ফেলবো।
ইমরান অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলো নিশানের দিকে। নিশান শান্ত হয়ে তার নানীর কোলে বসে আছে। ইমরান ওর শান্ত মুখখানা দেখে সাথে নেওয়ার সাহস করলো না। আনিসার ভাব দেখেও মনে হলো না সে চাইলেই নিশানকে নিতে পারবে।
এখানে এসে বাচ্চাটাকেও না হারাতে হয় এই ভয়েই তার আত্মা কেঁপে উঠলো যেন।
নাফিজ সাহেব তার সোর্স লাগালেন নিশিথার খবর বের করতে।
রাতে আনহা আর হাসিব খবর পেয়েই ও বাড়িতে গেল। পুরো ঘটনা শুনে আনহা বললো, আব্বু আপু আমার কাছে। দুই সপ্তাহ আগে এখানে এসেছে।
তুই আমাকে বলিস নি কেন?
আপু নিজেই চাইছিলনা কাউকে বলি। আমিও জানতাম না হাসিবের সাথে কনট্যাক্ট করেছে।
????
আনিসা বলতে পারো কোন পাপের শাস্তি আল্লাহ আমাকে দিচ্ছেন? নিশিথা চায় কি? ওকে নিয়ে আমার কত গর্ব ছিল জানো? ও সব ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। পুরনো ক্ষত সেড়ে উঠেনি এখনো তোমার মেয়ে আবার কেলেঙ্কারি করে বসেছে। দুধের বাচ্চাকে ফেলে চলে এসেছে? বিয়েটা কি ছেলেখেলা? যখন ইচ্ছে সংসার করবো যখন ইচ্ছে ভেঙে চলে আসবো?
ওর পক্ষের কথা শুনো আগে। কেন ও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আগে জানি। তারপর নাহয় দোষারোপ করো!
আমি বলি শুনো! তোমার মেয়ের চোখ থেকে আবেগের পর্দা উঠে গেছে। সে তো গিয়েছিল মোহে পড়ে, বাস্তবতার মুখোমুখি হতেই বুঝে গেছে এমন লাইফ সে লিড করতে পারবেনা।
তোমার কাছে একটাই মিনতি তুমি ওকে বকঝকা করোনা। দেখি না আমার মেয়েটা কোন দুঃখে এভাবে চলে এসেছে।
আমি কিছুই বলবোনা। তবে জেনে রাখো এর পেছনে যদি আমি ঐ ছেলের কোনো ফল্ট পাই ওকে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো।
নিশানকে বুকে জড়িয়ে নিশিথা বসে আছে। আনহা ভেবে পায় না কিভাবে পারলো তার বোন এই নিষ্পাপ শিশুটাকে ফেলে আসতে। ওকে সঙ্গে করে নিয়ে আসলে কি ক্ষতি হতো?
আপু বাবুকে শুইয়ে দে। অনেকক্ষণ হলো তো ঘুমিয়েছে।
আনু জানিস ওকে ছেড়ে আসতে আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তখন তো ভাবি নি এখানে আসবো। ভেবেছিলাম রেললাইনে কাঁটা পড়বো। এই জীবন আর রাখবো না। কোন মুখে আসতাম এখানে? এতো বড় পৃথিবীতে যাওয়ার জন্য একটা জায়গাও মনে করতে পারিনি। নাহয় আমি কখনোই পারতাম না আমার কলিজাটাকে ফেলে আসতে!
আপু কি হয়েছে তোর বলতো কেন এভাবে চলে আসতে হলো? ইমরান ভাই কি কিছু করেছে? ওখানে কি হয়েছিল?
যা হয়েছে বললেও বুঝবি না। যার সাথে ঘটে সে ছাড়া কেউ বোঝেনা। আমি ভালোবাসার কাঙাল হয়ে ঘর বেঁধেছিলাম। ওদের ছোট্ট ঘরটাতে অনেক কিছুর অভাব থাকলেও ইমরানের ভালোবাসা ছিল। এখন ঐখানে আমার দমবন্ধ লাগে। আমি আর ওখানে ফিরতে চাই না। আনু আব্বুকে বল না কিছু একটা করতে আমি এই সংসার আর করতে চাই না প্লিজ বোন।
কারণ জিজ্ঞাসা করলে কি বলবো?
বলবি আমার ভালোবাসা ফুরিয়ে গেছে। ঐখানে আমার ভালোবাসা নেই। যদি তোরা কিছু করতে না পারিস এই বাবুর কসম আমি সুইসাইড করবো। বাবুকে তোর কাছে রেখে দিস!
আনহা হতবিহ্বল হয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। নিশিথার মন কেউ কি বুঝবে কখনো?
চলবে,,,