প্রণয়_কোন্দল #মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম) পর্ব:১৪

0
756

#প্রণয়_কোন্দল
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:১৪

‘আমার বউকে রাস্তা ঘাটে ইভটিজিং করিস শয়’তান ছেলে! আমি জামাই হয়ে আমার বউকে দু’টো রোমান্টিক কথা বলতে পারি না আর তুই কিনা সরাসরি বাজে ইঙ্গিত করিস আজ তোর দুষ্টুমি বের করে দিব।’

উৎস নয়ন শেখকে থাপ’ড়াতে থাপ’ড়াতে কথাগুলো বললো।নয়ন শেখের চেলাপেলা গুলোকে উৎসের লোকেরা ইচ্ছে মতো মা’রছে।উৎস ক্লান্ত হয়ে চেয়ারে বসে তৌসিফের উদ্দেশ্যে বলল,

– তৌসিফ আমার খেলনাটা দাও তো এই বাচ্চাটার সঙ্গে একটু খেলি।

তৌসিফ শুকনো ঢুক গিলে বলল,
– স্যার! আজ না খেললে হয় না?

– একদম না, ও নিজেই উকিল সাহেবাকে বলেছে ও খেলতে পছন্দ করে তাই আমি আজ খেলবো।

নয়ন শেখ ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
– চরম ভুল করছো তুমি আর তোমার বউ নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনলে।

উৎস চেয়ার থেকে উঠে নয়নের মুখে একটা ঘু’ষি দিয়ে বলল,
– এর তেজ এখনও কমেনি, তৌসিফ একে সারারাত থেরাপি দিয়ে সকালে রাস্তায় ফেলে দিয়ে এসো।

– ওকেহ স্যার।

উৎস চলে গেল। ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল তখনও কেউ ঘুম থেকে উঠেনি কাজ শেষ করে আবারও বাড়িতে চলে গেছে উৎস।

শতাব্দীর ঘুম ভেঙ্গে গেছে ঘরের চারিদিকে তাকিয়েও উৎসকে দেখতে পেল না। বাইরে অল্প অল্প আলো ফুটেছে, শতাব্দী শোয়া থেকে উঠে রান্নাঘরে চলে গেল এক কাপ কফি বানিয়ে আবারো ঘরে চলে এলো জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সকাল উপভোগ করতে লাগলো।

উৎস সন্তর্পণে চুপি চুপি বাড়িতে প্রবেশ করে নিজের ঘরে আসতেই চমকে গেল। শতাব্দীকে জাগ্ৰত দেখে শুকনো ঢুক গিলে সামনে এগিয়ে যেতেই শতাব্দী ব্রু কুঁচকে উৎসের দিকে তাকালো তারপর জিজ্ঞেস করলো,

– কোথায় গিয়েছিলেন?

– হাঁটতে।

– জিন্স শার্ট পরে হাঁটতে গিয়েছিলেন?

– আজব তুমি আমাকে জেরা করছো কেন? আমি কি আসামি নাকি?

– আসলে এত সকালে তো আপনি বের হোন না তাই আর কি।

– ঘুম ভেঙ্গে গেছিল তাই বের হয়েছিলাম।

– ওহ।

– হুম আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

উৎস বাথরুমে ঢুকে গেল। শতাব্দী আবারও বাইরে তাকালো।
__________

সারাদিন বাড়ি থেকে বের হয়নি উৎস।বাড়ি ফিরে একটা ঘুম দিয়েছিল আর তা ভাঙ্গে দুপুরে। শতাব্দী কোর্ট থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে, এসেই উৎসকে দুপুরের খাবার খেতে দেখলো তাই কিছু বললো না চুপচাপ ঘরে চলে গেল।

উৎস খাওয়া শেষ করে ঘরে এলো, শতাব্দীর গম্ভীর মুখ দেখে কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করলো। উৎসকে দেখেই শতাব্দী ধমকের সুরে বলল,

– কিছুদিন হলো একটা ঝামেলা থেকে বেঁচে ফিরলেন এখন আবার ঝামেলা পাকাচ্ছেন? আপনার কি মনে হয় বারবার অন্যায় থেকে পার পেয়ে যাবে?

– কি করলাম আমি?

– নয়ন শেখকে মেরে’ছেন কেন? এটা নিয়ে কতবড় ঝামেলা হতে পারে আন্দাজ করতে পারছেন?

– কোনো কিছুই হবে না আমারটা আমি বুঝে নিব তোমায় চিন্তা করতে হবে না। আগে যা হয়েছে তাতে আমার হাত ছিল না কেউ আমায় অজান্তেই ফাঁসিয়ে দিয়েছিল তাই ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল।

– আপনি সত্যিই ভালো হবেন না কেন মেরে’ছেন সেটা বলুন।

– আমার বউকে রাস্তায় ইভটিজিং করেছে তাই মে’রেছি।

– নিশ্চই ড্রাইভার বলেছে?

– হুম।

শতাব্দী ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। আয়মানের কাছ থেকে খবর পেয়েছে নয়ন শেখের অবস্থা আর তখনি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করায় সেও শিকার করে ড্রাইভার উৎসকে পুরো ঘটনা জানিয়েছে সেখান থেকেই শতাব্দী নিশ্চিত হয় উৎস ছাড়া আর কেউ এটা করতে পারে না। কেউ দরজায় নক করতেই উৎস বলল,

– কে?

ঊষা ভেতরে এসে বলল,
– আমি ভাইয়া।

– কিছু বলবি?

– হুম।

– বল।

ঊষা আড়চোখে শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে বলল,
– খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা ছিল।

– হুম বল।

– কথাটা গোপনীয়।

শতাব্দী হয়তো ঊষার ইতস্ততা বুঝতে পেরেছে তাই ঘর থেকে বের হয়ে গেল।ঊষা হাফ ছেড়ে বাঁচলো দ্রুত ভাইয়ের কাছে গিয়ে বসলো।উৎস জিজ্ঞেস করলো,

– কি ব্যাপার ভয় পাচ্ছিস মনে হচ্ছে।

– ভাইয়া প্রমিস কর রাগ করবি না?

– প্রমিস।

ঊষা একটা দম নিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
– আমি তৌসিফকে পছন্দ করি।

উৎসের সাড়া শব্দ না পেয়ে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চোখ মেলে তাকালো ঊষা। উৎসের মুখে রাগের অবয়ব ফোঁটে উঠেছে এতে ঊষার ভয় আরও বেড়ে গেছে।উৎস রাগ সংবরণের চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করলো,

– তৌসিফ জানে তুই ওকে পছন্দ করিস?

ঊষা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।উৎস পুনরায় প্রশ্ন করলো,
– তৌসিফ তোকে পছন্দ করে?

– জানি না তোমার ভয়ে ঠিকমতো কথাও বলে না।

– আচ্ছা ঘরে যা পড়তে বস।

– ভাইয়া আমাদের ব্যাপারটা..

– এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল, তৌসিফের সঙ্গে তোর বিয়ে কখনও সম্ভব নয় যা এখান থেকে।

– ভাইয়া!

– রাগ উঠাস না।

ঊষা মাথা নিচু করে চলে গেল চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।ঊষা যেতেই বার কয়েক জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো উৎস। শতাব্দী ঊষাকে দৌড়ে বের হতে দেখে কিছু একটা আঁচ করে ঊষার পেছনে পেছনে গেল গিয়েই দেখতে পেল ঊষা কাঁদছে কোনো কিছু না ভেবেই শতাব্দী ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো।

ঊষার কাঁধে হাত রেখে বলল,
– কাঁদছো কেন? তোমার ভাইয়া কিছু বলেছে?

ঊষা দ্রুত চোখের পানি মুছে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। শতাব্দী ঊষার আরেকটু কাছে গিয়ে বসে আশ্বস্ত কন্ঠে বলল,

– তুমি নির্দ্বিধায় আমাকে সবটা বলতে পারো।

ঊষা এখনও নিশ্চুপ, শতাব্দী ঊষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
– আজ যদি তোমার বড় কোনো বোন থাকতো আর সে যদি এভাবেই প্রশ্ন করতো তাহলেও কি চুপ থাকতে?

ঊষা আর নিজেকে সামলাতে পারলো না কান্না করে দিল শতাব্দী বাঁধা দিল না। কিছুক্ষণ এভাবেই কেঁদে তারপর ভাঙ্গা কন্ঠে বলল,

– আমি তৌসিফ ভাইকে পছন্দ করি আম্মুকে সরাসরি বলার সাহস নেই বাবাকে বললেও লাভ হবে না ভাইয়া যা বলবে বাবাও তাই শুনবে তাই ভাইয়াকে বলেছি কিন্তু ভাইয়া আমার কথা বুঝার চেষ্টাই করলো না উল্টো রেগে গেল।

– এ জন্য কান্না করতে হবে?

– তাহলে কি করবো? ভাইয়া একবার যেহেতু রাজি হয়নি আর কখনও হবে না আমি অনেক ভেবে চিন্তে তারপর ভাইয়াকে গিয়ে বলেছিলাম।

– তোমার ভাইয়ার সঙ্গে আমি কথা বলবো।

– ভাইয়া তোমাকে বকবে।

– ওর সাহস আছে আমাকে বকার একেবারে গু’লি করে দিব।

কান্নার মধ্যেই ঊষা হেসে দিল। শতাব্দী বলল,
– আর কেঁদো না।

– হু।

শতাব্দী ঘরে চলে গেল। ঘরে এসেই ঠাস করে দরজা আটকে দিল, উৎস ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। শতাব্দী উৎসের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

– প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার আছে নিজের জীবনসঙ্গী নিজে নির্বাচন করার তাই না?

– হ্যাঁ।

– তাহলে আপনি আপনার বোনের পছন্দ ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না কেন?

– আমার বোনের ভালো মন্দ কি এখন তোমার কাছ থেকে জানতে হবে?

– আমি তা বলিনি কিন্তু তৌসিফকে তো আপনি ভালো করেই চিনেন ওদের বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ার কারণ কি?

– তৌসিফ আমার আন্ডারে কাজ করে ওকে আমারও পছন্দ তাই বলে বোনের সঙ্গে বিয়ে দিব।

– অথচ আমার বাবা ভাইয়ের অপছন্দের ছেলে ছিলেন আপনি তাও আমায় জোর করে বিয়ে করেছিলেন সেক্ষেত্রে আপনার বোন তো আপনাকে সবটা বলেছে।

– তুমি আমার সঙ্গে..

শতাব্দী হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল,
– কোনো কাজ ছোট নয় ঊষা যদি তৌসিফের কাছে ভালো থাকে তাহলে ওদের বিয়ে দিতে সমস্যা কোথায়? একজন রিক্সা ওয়ালাও কিন্তু নিজের বউ সন্তান পালতে পারে তাই যেটায় ওর ভালো হবে ভাই হিসেবে আপনার তাই করা উচিত।

উৎসকে কিছু বলতে না দিয়ে শতাব্দী উৎসের সামনে থেকে চলে গেল।উৎস চিন্তায় পড়ে গেল ব্যাপারটা নিয়ে।
___________

উৎসের সামনে তৌসিফ বসে আছে। তৌসিফের দৃষ্টি নিচে নিরবতা ভেঙ্গে সরাসরি উৎস প্রশ্ন করলো,

– ঊষাকে তোমার কেমন লাগে?

উৎসের শান্ত গলায় সামান্য একটা প্রশ্ন শুনেই তৌসিফের হার্ট বিট যেন বেড়ে গেছে গলা শুকিয়ে গেছে।উৎস উওরের আশায় তৌসিফের পানে চেয়ে আছে। তৌসিফ হাসার চেষ্টা করে বলল,

– ভালো।

– কেমন ভালো?কি হিসেবে ভালো লাগে?

– আপনার বোন মানে আমারও বোন ওই হিসেবেই ভালো লাগে।

– তোমার মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে না সত্যি বলছো।

– বস এত কঠিন কঠিন প্রশ্ন করছেন কেন? আমি তো কিছুই করিনি ঊষাকে ঠিক মতো বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি একটা কথাও বেশি বলিনি বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করুন ঊষাকে।

উৎস হেসে বলল,
– তুমি এতো ভয় পাও কেন আমায়? আমি তো এমনি জিজ্ঞেস করলাম।

তৌসিফের ভয় এখনও কাটেনি।উৎস তৌসিফের কাঁধে হাত রেখে বলল,
– এতো ভয় পাওয়া ভালো না, ওকে কোথায় রেখেছ?

– আপনাদের ফ্যাক্টরির পাশে যেই বাড়িটা আছে ওখানেই।

– ভালো করে আদর যত্ন করো আমি রাতে আসবো দেখা করতে।

– আচ্ছা বস।

– তুমি ওখানেই যাও যতক্ষণ পেটের কথা বের না করবে মার’তেই থাকবে।

– আচ্ছা বস।
__________

আজ রাতে সবাই একসঙ্গে খাবার খেলো। শতাব্দী মিসেস উপমার সঙ্গে গল্প করছে, এদিকে উৎস আর ইসতিয়াক আহমেদ সোফায় বসে আছে। ইসতিয়াক আহমেদ ছেলের হাবভাব বোঝার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু বুঝতে ব্যর্থ হয়ে প্রশ্ন করলেন,

– কি করবি ওইটাকে?

– মুডের উপর ডিপেন্ড করছে।

– আমাকেও নিয়ে চল।

– আমি আছি তো তোমার এতো কষ্ট করে যেতে হবে না।

– আমি গেলে সমস্যা কি?

– আম্মু সন্দেহ করবে এছাড়া শতাব্দী জানলেও সমস্যা আছে।

ইসতিয়াক আহমেদ মুখ ভার করে রইলেন।উৎস বলল,
– অযথা কল দিও না ফিরলে সবটা এমনিতেই জানতে পারবে।

– আচ্ছা।

– ঘুমাতে যাও।

– আজ সারারাত এমনিতেও ঘুম আসবে না।

– দোয়া দরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দিও ঘুম তার বাপ দাদা নিয়ে চলে আসবে।

ইসতিয়াক আহমেদ ঘরের দিকে গেলেন উৎসও নিজের ঘরে গেল।
.
.
রাত বারোটা বাজতেই অতি সাবধানে বিছানা থেকে উঠে গেল উৎস। শতাব্দীর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝে নিলো শতাব্দী ঘুমিয়েছে নাকি। শতাব্দী ঘুমিয়ে গেছে ভেবে সাবধানতা অবলম্বন করে টি-শার্টের উপরেই একটা কালো শার্ট পরিধান করে গাড়ির চাবি আর মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে গেল।

উৎস বের হতেই শতাব্দী শোয়া থেকে উঠে গেল এতক্ষণ ঘুমের ভান ধরে ছিল। ইসতিয়াক আহমেদ এবং উৎসের কথোপকথনের কিছু অংশ শুনতে পেয়েছিল শতাব্দী ওখান থেকেই সন্দেহ হয়েছে। শতাব্দী দ্রুত রেডি হয়ে উৎসের পিছু নিলো, ড্রাইভারকে আগেই গাড়ি নিয়ে আসতে বলেছিল তাই পিছু নিতে সমস্যা হয়নি।

উৎসের গাড়িটা একটা বাড়ির সামনে থামলো বাড়িটা বেশ বড়।উৎস নামতেই কয়েকজন লোক এসে উৎসকে সালাম দিল উৎস সালামের উওর দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। শতাব্দী গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভারকে বলল,

– আপনি মেইন রাস্তায় গিয়ে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করুন আমি আসছি।

ড্রাইভার শতাব্দীর কথা মতো গাড়ি নিয়ে চলে গেল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here