#প্রণয়_কোন্দল
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:১৫
‘এত কষ্ট সহ্য করে কি লাভ? ধরা যখন পড়েই গেছিস সত্যিটা বলে দে, কেন জঘন্য একটা গেইম খেললি? আমি তো তোকে চিনিও না তাহলে?
আসিফ ইসলাম ভয়ে ঢুক গিললো কপাল থেকে ঘাম চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। উৎসের লোকেরা আসিফ ইসলামকে ধরে এনে অনেক মে’রেছে তারপরেও মুখ দিয়ে একটা কথাও বের করতে পারেনি।উৎস আসিফ ইসলামের মুখোমুখি বসে উক্ত প্রশ্নগুলো করলো।আসিফ ইসলাম এখনও নিরুত্ত্যুর,উৎস ধৈর্যশীল ছেলে নিজের রাগ নিজে কন্ট্রোল করতে পারে তাই এখনও নিজেকে শান্ত রেখে কথা বলছে। আসিফ ইসলাম উৎসের উদ্দেশ্যে বলল,
– আমি খু’নের ব্যাপারে কিছুই জানি না আমাকে যা করতে বলা হয়েছে তাই করেছি।
– কে করতে বলেছে?কি করতে বলেছে?
– আমাকে বলা হয়েছিল এডভোকেট আহিরী শতাব্দীকে আপনার বিরুদ্ধে কেস লড়ার জন্য ঠিক করতে আমি তাই করেছি।
– কে বলেছে?
আসিফ ইসলাম থেমে গেল।উৎস লোকটির গাল দু’টো চেপে ধরে বলল,
– আমি একটা প্রশ্ন করেছি।
– তাকে আমি কখনও দেখিনি তার লোক এসে আমার সঙ্গে কথা বলেছিল শতাব্দী ম্যাডামকে যেই প্রমাণ গুলো দিয়েছিলাম সব তার লোক আমায় দিয়েছিল।
– চিনিস না জানিস না তাহলে কেন করলি এমন কাজ?
– ওরা আমায় মোটা অংকের টাকা অফার করেছিল তাই আমি না করতে পারিনি।
উৎস প্রতিত্ত্যুরে হাসলো। উৎসের হাসি দেখে ভরকে গেল আসিফ ইসলাম, উৎস হেসেই আসিফ ইসলামের ডান হাতে গু’লি করে দিল। তৌসিফ ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– বস!
– ওর হাতটা যত্ন সহকারে ব্যান্ডেজ করে দাও পুরো সত্যিটা জানো তারপরেও যদি কিছু লুকায় একেবারে কপাল বরাবর শুট করে দিবে।
উৎসের কথা অনুযায়ী চারজন লোক আসিফ ইসলামকে নিয়ে যেতে লাগলো। তৌসিফ অস্পষ্ট কন্ঠে আবারো ডেকে উঠলো,
– বস!
– কি হয়েছে? ছাগলের মতো করছো কেন?
– ম্যা…ম্যাম….
উৎস কপাল কুঁচকে তৌসিফের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কোন ম্যাম?কার ম্যাম?
– আমার ম্যাম আপনার বউ।
– কোথায়?
– আপনার পেছনে দরজার কাছে।
তৌসিফের কথা অনুযায়ী পিছনে ঘুরতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল উৎসের। ভয়ে একটা ঢুক গিললো। শতাব্দীর চোখমুখ লাল হয়ে গেছে রাগে,উৎস অসহায় কন্ঠে বলল,
– উকিল সাহেবা!
শতাব্দী উৎসের কথা শুনলো না হাত মুঠো করে চলে যেতে লাগলো।উৎস দ্রুত বসা থেকে উঠে শতাব্দীর পেছনে দৌড় দিল। শতাব্দী সামনের দিকে হাঁটছে উৎস শতাব্দীর হাত ধরে থামানোর চেষ্টা করে বলল,
– তুমি এত রাতে এখানে কি করছিলে?
– আপনার কীর্তি দেখতে এসেছিলাম আপনি জঘন্য একটা মানুষ,মানুষ মা’রতেও দু’বার ভাবেন না।
– তুমি ভুল বুঝছো।
– আমি একদম ঠিক বুঝছি আপনার মতো একটা খারাপ লোকের সঙ্গে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়।
– সবসময় নিজের মতো ভুলভাল বুঝো কেন?
– হাত ছাড়ুন আপনার কোনো কথা শোনার ইচ্ছে নেই।
উৎস শতাব্দীকে থামাতে না পেরে জোর করে কোলে তুলে নিয়ে একটা ঘরের দিকে হাঁটা ধরলো। শতাব্দী হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে কিন্তু উৎসের কাছ থেকে ছাড়া পাচ্ছে না। উৎস তৌসিফের উদ্দেশ্যে বলল,
– তোমার ম্যাম দিনে দিনে দুষ্টু হয়ে যাচ্ছে দ্রুত মোটা একটা দড়ি নিয়ে আসো।
তৌসিফ দড়ি নিয়ে আসার জন্য দৌড় দিল। শতাব্দীর কন্ঠস্বরের শব্দ আরও বেড়ে গেল উৎসকে ধমক দিয়ে বলল,
– উৎস ভালোয় ভালোয় নিচে নামান আমায়।
উৎস শতাব্দীর কথায় পাত্তা দিল না বরং একটা ঘরে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দড়ি দিয়ে শতাব্দীকে বেঁধে ফেলল। অনেক চেষ্টার পরেও উৎসের বলিষ্ঠ শক্ত দেহের সঙ্গে পেরে উঠলো না শতাব্দী।উৎস এবার জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে পানি খেতে লাগলো।পানি খাওয়া শেষ হতেই শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে বলল,
– এতো ছটফট করো কেন? উকিল হয়েছ বলে কি সারাক্ষণ সবার পেছনে নজরদারি করে বেড়াবে?
– আমাকে আটকে রাখার সাহস হলো কিভাবে?
– সাহসের কি আছে?এটা আমার অধিকার।
– আপনার অধিকার ছিনিয়ে নিব একবার শুধু বাঁধন খুলুন।
– রাগছো কেন বউ?
– জানেন না কেন রাগছি?
– ওই আসিফ ইসলাম ভালো করে প্রশ্নের উওর দিচ্ছিল না তাই গু’লি করে দিয়েছি তবে যেখানে গু’লি করেছি কিছু হবে না।
– আমি কিছু শুনতে চাই না ছাড়ুন আমায়।
উৎস বিরক্ত হলো শতাব্দীর আরও কাছে গেল নিজের এক হাত দিয়ে শতাব্দীর গালে স্লাইড করতে করতে বলল,
– সবসময় কারণে অকারণে কেন ভুল বুঝো আমায়? আমি তো শুধু তোমাকে নিজের করে চেয়েছি এর থেকে বেশী কিছু চাইনি তাহলে কেন আমায় বুঝতে চাও না আমি কি তোমার এতোই অপছন্দের?
শতাব্দী উৎসের চোখের দিকে তাকালো আজ সেখানে অনেক অভিযোগ দেখতে পাচ্ছে কিন্তু বলার মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না নিরবতা পালন করা ছাড়া।উৎস নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে মুখের গম্ভীরতা কাটিয়ে মৃদু হাসলো তারপর বলল,
– এবার থেকে অযথা রাগ করলে এভাবেই বেঁধে রাখবো তোমায়।
শতাব্দী রাগ মিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।উৎস অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– আবারও ধানি লঙ্কা রূপ ধারণ করলে? দাঁড়াও একটা চুমু দেই।
– খবরদার কোনো অসভ্যতামি করবেন না।
উৎস শতাব্দীর কথা কানে না নিয়ে গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
– ইস কি ঝাল!
– হাতে ব্যথা লাগছে বাঁধন খুলুন।
– হ্যাঁ আমি বাঁধন খুলি আর তুমি আমাকে আক্রমন করো।
– করবো না আপনাকে কিছু করবো না।
– তার মানে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে! এবার তো আর বাঁধন খুলবোই না আমি তোমাকে খাইয়ে দিব ঘুম পাড়িয়ে দিব।
– কোথাও যাব না এবার খুলুন।
– প্রমিস করে বলো?
– প্রমিস।
– তোমার হিটলার বাপের কসম কেটে বলো?
শতাব্দী কপাল কুঁচকে তাকালো, উৎস মেকি হেসে বলল,
– দুষ্টুমি করেছি।
শতাব্দীর বাঁধন খুলে দিল উৎস। শতাব্দী হাত-পা ঝেড়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল।উৎস শতাব্দীর কাছে বসে বলল,
– ক্লান্ত লাগছে?
– হুম।
– জুস খাবে নাকি কফি?
– কিছু না।
– বিশ্রাম নাও আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।
উৎস দাঁড়িয়ে গিয়ে দরজার দিকে হাঁটা ধরলো শতাব্দী পেছন থেকে বলল,
– যাই করুন না কেন লোকটাকে মা’রবেন না আমি চাই না আমার হাজব্যান্ড কোনো অন্যায় করুক।
– হুম।
_________
‘স্বীকার করেছে কিছু?
– না বস।
উৎস আসিফ ইসলামের সামনে বসলো বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে মৃদু হাসলো তারপর বলল,
– শেষ বারের মতো ভালো করে বলছি সত্যিটা বলবে নাকি বলবে না? সত্যিটা বললে ভালো আর না বললে তোমার পুরো পরিবারকে কিন্তু সাজা ভোগতে হবে।
উৎস নিজের থুতনিতে আঙ্গুল ঘষতে ঘষতে বলল,
– ধরো তোমার বউ মেয়ে রাস্তা পার হচ্ছে তখনি অপরপাশ থেকে একটা গাড়ি এসে….
– না না এসব করবেন না।
– তুমি আমার প্রশ্নের সঠিক উওর না দিলে এসব তো করতেই হবে।
আসিফ ইসলাম ঢুক গিলে বলল,
– একটু পানি হবে?
– রফিক চাচা একে পানি দাও।
রফিক ছোট একটা পানির বোতল এগিয়ে দিতেই আসিফ সবটুকু পানি পান করে বলতে লাগলো,
– আমি নাঈম স্যারের অফিসে কাজ করি উনিই আমাকে এই কাজটা করতে বলেছেন আমার কাজ ছিল শতাব্দী ম্যাডামের কাছ পর্যন্ত আপনার কেসটা নিয়ে যাওয়া এর বেশি কিছু জানি না।
উৎস চমকে গেল চোখমুখে বিষ্ময় প্রকাশ পাচ্ছে অবিশ্বাস্য স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
– কোন নাঈম?
– নাঈম আবরার।
উৎস যেন কিছুতেই কোনো কথা বিশ্বাস করতে পারছে না চুপচাপ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তৌসিফকে কিছু একটা ইশারা করে ওখান থেকে শতাব্দীর কাছে চলে গেল। উৎসকে দেখে শতাব্দী উঠে বসলো, উৎস তাড়া দিয়ে বলল,
– বাড়িতে যাব চলো।
– আসিফ সব বলে দিয়েছে?
– না বলেনি এবার চলো।
শতাব্দী উৎসের কথা অনুযায়ী উঠে গেল তারপর দু’জনে বাড়িটা থেকে বের হয়ে গেল। শতাব্দী তার ড্রাইভারকে ফোন করে চলে যেতে বলে উৎসের গাড়িতে উঠলো।
.
.
বাড়িতে পৌঁছে গেছে উৎস আর শতাব্দী, সাবধানতা অবলম্বন করে পা টিপে টিপে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো ড্রয়িং রুম পার হয়ে নিজেদের ঘরে চলে আসলো। শতাব্দী বলল,
– জানেন আসার সময় মনে হয়েছে আমরা চোর এই বাড়িতে চুরি করতে এসেছি।
– তুমি তো আগে থেকেই একটা চোর।
শতাব্দী রাগ দেখিয়ে প্রশ্ন করলো,
– আমি চোর! আপনার কি চুরি করেছি?
– মন, আমার মন চুরি করেছ।
শতাব্দী ভেংচি কেটে হাতমুখ ধুতে চলে গেল, হাতমুখ ধুয়ে ঘরে আসতেই উৎসও হাতমুখ ধুতে গেল। উৎসের এখন আর কিছুই ভালো লাগছে না বিশ্বস্ত মানুষগুলোও যে এভাবে বেঈমানি করে ক্ষতি করার চেষ্টা করে ভাবলেই শরীর শিউরে উঠছে।
শতাব্দী ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় শুয়ে পড়েছে উৎসও শতাব্দীর থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পাশ ফিরে শুয়ে আছে চোখে একটুও ঘুম নেই। হঠাৎ উৎসের এমন নিরবতা দেখে শতাব্দী অবাক হয়ে গেছে, ইচ্ছে করছিল জিজ্ঞেস করবে কিন্তু মন সায় দিল না।
উৎস এবং নাঈম ভালো বন্ধু ছিল। ওদের বন্ধুত্ব কলেজ লাইফ থেকেই শুরু এই বন্ধুত্বের ইতি ঘটেছিল ভার্সিটি লাইফের শেষে। নাঈম ঊষাকে পছন্দ করতো কিন্তু উৎসের সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে মনের কথা মনেই চেপে রেখেছিল।পরে অবশ্য সাহস করে ঊষাকে নিজের ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিয়েছিল তখন ঊষা সবেমাত্র ক্লাস নাইনে পড়তো।এতো জটিল ব্যাপার তার ছোট্ট মাথায় বোঝ খেলেনি তাই বাড়িতে এসেই উৎসকে সবটা বলে দেয়।উৎস নাঈমকে তখন সরাসরি কিছু বলেনি বরং ঊষাকেই নিষেধ করেছিল নাঈমের সঙ্গে কথা বলতে।
নাঈম আগেও অনেকগুলো রিলেশনে জড়িয়ে ছিল বলতে গেলে সে ছিল একজন প্লে বয়।উৎস সবকিছু জেনেও নাঈমের সঙ্গ ছাড়তে পারেনি কারণ নাঈম যেমনি হোক না কেন বন্ধু হিসেবে খুব ভালো।উৎসের কথা অনুযায়ী ঊষা নাঈমের সঙ্গে কম কথা বলতো এড়িয়ে চলতো।ঊষার প্রতি নাঈমের ভালোবাসা সত্যি ছিল একসময় উৎস নিজেই নাঈমকে বলেছিল,
– দেখ নাঈম ঊষা এখনও ছোট প্রেম ভালোবাসা এসব সম্পর্কে ওর এখনও তেমন বোঝ হয়নি তুই ওকে বিরক্ত করিস না আমি তোকে বন্ধু কম নিজের ভাই মনে করি সেক্ষেত্রে ঊষাও তোর বোন, বোনের সঙ্গে এসব গেইম না খেলাই ভালো।
– আমি বাকিদের সঙ্গে যাই করি না কেন ঊষাকে আমি সত্যি ভালোবাসি, কাউকে মন থেকে ভালোবাসা কি অন্যায় কাজ? ঊষা আমার নিজের বোন নয় বন্ধুর বোনকে বিয়ে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে।
উৎস এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলতে পারেনি কারণ সে নিজেও তো শতাব্দীকে ভালোবাসে।উৎস কয়েক সেকেন্ড থেমে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
– ভালোবাসা অন্যায় হবে কেন? তবে বললাম তো ঊষা এখনও ছোট, ও বড় হোক তখন যদি ওর তোকে পছন্দ হয় তখনি না হয় ভেবে দেখব আমার বোনকে তোর হাতে তুলে দেওয়া উচিত হবে নাকি।
– কথা দে?
– কথা দিতে পারছি না ঊষার যদি তোকে অপছন্দ হয় তাহলে ব্যাপারটা ওখানেই থেমে যাবে।
– ঠিক আছে।
চলবে………
[গল্পটায় নারী পুরুষ কাউকে কোথাও ছোট করা হয়নি।তাই অযথা নিজের মতো ভুল বুঝে আমায় কথা শুনাতে আসবেন না।বুঝি না গল্প ভালো লাগে বলে পড়েন নাকি লেখিকার ভুল ধরার জন্য পড়েন?]