#প্রণয়_কোন্দল
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:১৬
ইসতিয়াক আহমেদ উৎসের পি.এ হিসেবে তৌসিফকে নিয়োগ দিয়েছিলেন।কয়েকদিনের মধ্যেই তৌসিফ উৎসের বিশ্বস্ত একজন মানুষ হয়ে যায়। তৌসিফের কাজ ভালো লাগায় তৌসিফকে নিজের সব কাজের দায়িত্ব দিত উৎস। ঊষার ততদিনে এসএসসি শেষ উৎস আর ইসতিয়াক আহমেদ দু’জনেই কাজে ব্যস্ত থাকতো মিসেস উপমা বাড়ি সামলাতেন তখন তৌসিফ উৎসের কথায় ঊষাকে ঘুরতে নিয়ে যেত ছোট ছোট আবদার পূরণ করতো এভাবেই তৌসিফের প্রতি ঊষার একটা ভালো লাগা শুরু হয়।
ততদিনে নাঈম আবারো ঊষার নিকট নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করে কিন্তু ঊষা সরাসরি তাকে নাকোচ করে দেয় এটা যেন কিছুতেই নাঈম মেনে নিতে পারে না তখন ঊষাকে বিরক্ত করতে থাকে। ঊষা সবটা আবারও উৎসকে গিয়ে বলে এবং এও বলে,
– আমার নাঈম ভাইকে ভালো লাগে না ভাইয়া আমি তো এতদিন তোমার বন্ধু হিসেবে উনাকে ভাইয়ের চোখেই দেখতাম।
উৎস ঊষার মাথায় হাত রেখে বলে,
– আমি বলে দিব ও যেন তোকে আর বিরক্ত না করে, নাঈম ডাকলেও তুই যাবি না কথা বলারও দরকার নেই।
– আচ্ছা ভাইয়া।
ঊষা খুশি হয়ে চলে গেল।উৎস সরাসরি নাঈমের সঙ্গে দেখা করে বলল,
– ঊষার তোকে পছন্দ নয় চ্যাপ্টার এখানেই ক্লোজ তুই আর ঊষাকে বিরক্ত করিস না ওর এসব ভালো লাগে না।
– কিন্তু উৎস!
– প্লিজ নাঈম আর কথা বাড়াস না ঊষা আমার ছোট বোন ওর পছন্দ অপছন্দ আমার কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে অযথা ঝামেলা করে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করিস না।
উৎস নাঈমের সামনে থেকে চলে এলো।তার ঠিক দু’দিন পরেই ঊষা কলেজে যাচ্ছিল পথিমধ্যে নাঈম তার রাস্তা আটকায়।ঊষা জিজ্ঞেস করে,
– কিছু বলবেন নাঈম ভাই?
– যা বলার তা তো বলেই দিয়েছি এবার তোমার বলার পালা আমাকে কেন পছন্দ নয় তোমার?
– পছন্দ হবে না কেন? আপনাকে সবসময় আমি ভাইয়ের দৃষ্টিতে দেখেছি ভাইয়ার পর আপনি আমার আরেকটা ভাই।
– আবোল তাবোল কথা বলে একদম মাথা গরম করবে না বলে দিলাম, তোমরা দুই ভাই বোন কি শুরু করেছ? এতগুলো দিন আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি সেগুলোর কোনো মূল্য নেই?
– আপনাকে তো অপেক্ষা করতে বলিনি।
নাঈমের মাথা কোনভাবেই কাজ করছিল না ঊষার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেছে তাই কোনো কিছু না ভেবেই শক্ত করে ঊষার হাত ধরে টেনে নিতে নিতে বলল,
– তোমার পছন্দ অপছন্দ দিয়ে আমার কিছু যায় আসে না আমি এখনি তোমাকে বিয়ে করবো।
– নাঈম ভাই ভালো হচ্ছে না কিন্তু আমার ভাইয়া জানতে পারলে..
– তোমার ভাই কিছুই করতে পারবে না।
অনেক চেষ্টা করেও নাঈমের মুষ্টিবদ্ধ শক্ত হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে না পেরে নাঈমের হাতে নিজের দাঁত বসিয়ে দিল ঊষা। আচমকা এমন হওয়ায় নাঈম ঊষার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের ক্ষত স্থান দেখতে লাগলো।ছাড়া পেয়েই ঊষা জোরে দৌড় দিয়ে একটা গাড়ি থামিয়ে উঠে গেল। নাঈম আর ঊষার নাগাল পেল না।
উৎস বের হওয়ার জন্য হল ঘরে আসতেই ঊষাকে দৌড়ে বাড়িতে ঢুকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো।ঊষা কোনদিকে না তাকিয়ে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল উৎসও দ্রুত বোনের পেছনে পেছনে গেল।ঊষা বিছানায় বসে আছে মুখে ভয়ের ছাপ উৎস ঊষার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল।ঊষা সাথে সাথে গ্লাস থেকে পুরো পানি খেয়ে ফেলল তারপর উৎস জিজ্ঞেস করলো,
– তুই তো কলেজে গিয়েছিলি ফিরে এলি কেন?
ঊষা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,
– নাঈম ভাই!
– নাঈম আবার কি করেছে?
ঊষা কান্না করতে করতে সবকিছু উৎসকে বলে দিল।ঊষার কথা শুনে উৎসের রাগ বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে তখনি বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা নাঈমের কাছে যায় উৎস। কোনো কথা না শুনেই ইচ্ছে মতো নাঈমকে পেটায় মা’ইর খেয়ে নাঈমের অবস্থা খুব খারাপ ছিল বাকি বন্ধুরাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। এরপর থেকেই ওদের মধ্যে দন্ড শুরু হয় অবশ্য উৎস এরপর আর কখনও নাঈমের মুখ দর্শনটাও করেনি।
.
.
মাঝরাত হয়ে গেছে উৎস এখনও জাগ্ৰত মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরছে কিন্তু সেসব নিয়ে ভাবতে গেলেই সব যেন জটলা বেঁধে যাচ্ছে। শতাব্দী উৎসের বুকে মাথা রেখে একহাত দিয়ে উৎসকে ঝাপটে ধরলো।উৎস ভাবনা থেকে বের হয়ে শতাব্দী জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে আছে বুঝার চেষ্টা করছে। শতাব্দী চোখ বন্ধ করেই জিজ্ঞেস করলো,
– এখনও ঘুমাননি কেন?কার কথা ভাবছেন?
– তুমি ঘুমাওনি কেন?
– আপনি জেগে আছেন তাই।
উৎস নিরুত্ত্যুর, অন্যসময় হলে শতাব্দীর এত সুন্দর ব্যবহারে উৎস হয়তো অনেক খুশি হতো নিজেও শতাব্দীকে জড়িয়ে ধরতো কিন্তু এখন তার কোনো হেলদোল নেই। শতাব্দী উৎসের পেটে চিমটি দিয়ে বলল,
– কি হয়েছে বলবেন তো, কোনো কিছু নিয়ে আপসেট হলে আমার সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন ভেতরটা হালকা হয়ে যাবে।
– বললে কি তুমি সমাধান করতে পারবে?
– চেষ্টা করতে সমস্যা নেই।
উৎস শতাব্দীর মুখের দিকে তাকালো মুচকি হেসে বলল,
– তুমি আমাকে এখনও পর্যন্ত একটা চুমুও দেওনি যার কারণে আমি ডিপ্রেশনে ভুগছি তুমি কি চুমু দিয়ে আমার এই ডিপ্রেশন কাটাতে পারবে উকিল সাহেবা?
শতাব্দীর নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে এ কার পাল্লায় পড়লো মাঝরাতে কেউ এসব চিন্তা করে জাগ্ৰত থাকে ভেবেই উৎসকে গু’লি করে দিতে ইচ্ছে করলো কিন্তু পারলো না গু’লি করলে নিজেরই আবার উৎসকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হবে সেবা করতে হবে। শতাব্দী উৎসের থেকে একহাত দূরে সরে গিয়ে ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করে নিলো।
____________
উৎসের বুদ্ধিমতো তৌসিফ আসিফ ইসলামকে টোপ হিসেবে নাঈমের কাছে পাঠিয়েছে। নাঈমের হাতের ঘরি এবং শার্টের বোতাম ছোট ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছে যাতে সবটা রেকর্ড করতে পারে।আসিফ ইসলাম এমন কাজ করতে কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না শেষে তার বউ আর বাচ্চাকে বন্দি করা হলো এই ভয়েই আসিফ বাধ্য হয়ে কাজটা করছে।
আসিফ নাঈমের সামনে বসে আছে, আসিফের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা উৎসের ল্যাপটপে কানেক্ট করা যার মাধ্যমে সবকিছুই উৎস,তৌসিফ,ইসতিয়াক আহমেদ দেখতে পাচ্ছে।শতাব্দী এ ব্যাপারে এখনও কিছু জানে না উৎস জানতে দেয়নি।
নাঈম ড্রিংক করছে আসিফ নিজেকে স্বাভাবিক রেখে হাসার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করলো,
– স্যার একটা প্রশ্ন করবো? আসলে অনেকদিন ধরে মাথায় প্রশ্নটা ঘুরছে।
– এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয়? তুমি আমার কাছের মানুষ বলে ফেল প্রশ্নটা।
– স্যার মি.উৎসকে কেন রুহি হ’ত্যা কেসে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন? রুহিকে কে মে’রেছে?কেন মে’রেছে স্যার?
– তুমি এসব জেনে কি করবে?
– আপনার কথামতো সব কাজ করেছি এবং শেষে আমিও জড়িয়ে গেছি তাই আরকি জানতে ইচ্ছে হলো।
নাঈম হাতের গ্লাস রেখে দিয়ে টেবিলের নিচ থেকে বন্দুক বের করে টেবিলের উপর রাখলো আসিফ ভয় পেয়ে গেল।নাঈম হাসতে হাসতে বলল,
– উৎস তোকে টোপ বানিয়ে আমার কাছে পাঠিয়েছে তাই না?তুই কি ভেবেছিস আমি জানতেও পারবো না?
আসিফের কপাল থেকে ঘাম চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। তৌসিফ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে উৎসের উদ্দেশ্যে বলল,
– বস নাঈম সব বুঝে গেছে এখন কি হবে?
– পুরো ভিডিও রেকর্ড করো দেখা যাক কি হয়।
তৌসিফ সবটা রেকর্ড করছে। নাঈম হাসি থামিয়ে রাগমিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– নাঈম আবরার বিশ্বাস ঘাতকদের কখনো বাঁচিয়ে রাখে না।
বলেই আসিফের কপাল বরাবর পরপর দু’টো গু’লি করে দেয়। আসিফের শার্টের বোতাম থেকে ক্যামেরাটা খুলে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। নাঈমের হাসিতে পুরো বাড়ি যেন কাঁপছে।
ইসতিয়াক আহমেদ হতাশ কন্ঠে ছেলেকে বললেন,
– আসিফকে তো মে’রে ফেলল এখন সত্যটা জানবো কিভাবে? নাঈম শাস্তি পাবে কিভাবে?
উৎস মৃদু হেসে বলল,
– আসিফ ইসলামকে মে’রে ফেলার ভিডিও রেকর্ড করা শেষ আপাতত এই কেসেই ওকে ফাঁসাবো তারপর না হয় বাকি ঘটনাও জানা যাবে।
উৎস ভিডিওটা তোফায়েলকে পাঠিয়ে দিয়ে ফোনে সবকিছু বলে দিল। তোফায়েল পুলিশের এস আইকে ভিডিও দিয়ে বিস্তারিত বললেন।
__________
নাঈম বাড়িতেই আছে কলিং বেল বাজতেই নাঈমের ওয়াইফ তরী গিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলে পুলিশদের দেখে ভরকে গেল তরী দ্রুত নিজের স্বামীকে ডেকে বলল,
– নাঈম দেখো বাড়িতে পুলিশ এসেছে।
নাঈম স্ত্রীর হাঁক শুনে হল ঘরে এসেই পুলিশকে দেখতে পেল। মৃদু হেসে প্রশ্ন করলো,
– আপনারা আমার বাড়িতে! কোনো সমস্যা?
পুলিশের এস আই সজিব এরেস্ট ওয়ারেন্ট নাঈমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– আসিফ ইসলামকে খু’ন করার অভিযোগে আপনাকে গ্ৰেফতার করতে এসেছি মি.নাঈম।
নাঈমের হাস্যজ্জল মুখটা মুহূর্তেই বিবর্ণ রং ধারণ করেছে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
– এসব কি বলছেন অফিসার? আমি কাউকে খু’ন করিনি।
– প্রমাণ আছে বলেই আমরা আপনাকে গ্ৰেফতার করতে এসেছি বাকি কথা কোর্টে হবে।
নাঈম আতকে উঠলো।তরী পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলল,
– আমার হাজব্যান্ড এমন একটা কাজ করতে পারে না আপনাদের ভুল হচ্ছে অফিসার।
– আপনার যা বলার থানায় এসে বলবেন।
পুলিশ নাঈমকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিজেদের জিপে উঠালো। আশেপাশের মানুষগুলো হা করে তাকিয়ে ছিল অনেকে কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে।তরী তার বড় বোনকে ফোন করে সবটা জানালো তার বড় বোন কথাটা শুনেই তার হাজব্যান্ডকে নিয়ে আসছে বলে জানালো।
.
.
জেলখানায় বসে আছে নাঈম, উৎস এবং তৌসিফ থানায় পৌঁছে গেছে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে লকাপের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।উৎস নাঈমের উদ্দেশ্যে বলল,
– নাঈম আবরার কেমন লাগছে জেলখানা?
নাঈম উৎসের দিকে তাকালো আজ অনেক বছর পর তাদের সামনাসামনি দেখা হলো। নাঈম কোনো জবাব দিল না এমনিতেও জবাব থাকলে তো দিবে।উৎস তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
– এত প্লান করলি আমাকে এই চারদেয়ালে বন্দি করার জন্য অথচ দেখ আজ তুই নিজেই নিজের পাতানো ফাঁদে পড়ে এই অন্ধকার কারাগারে বন্দি হয়ে আছিস।
– তুই আবারও আমার সঙ্গে শত্রুতা করে ফেললি উৎস।
– আমি কখনো তোর সঙ্গে শত্রুতা করিনি শত্রুতা তুই করেছিস আর আমি তা প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি।
এই ছেলেটাকে একদিন নিজের বন্ধু বানিয়েছিল ভাবতেই উৎসের হাসি পেল আর কথা না বাড়িয়ে চলে এলো সাথে অফিসারকে বলে এসেছে যাতে তারা দ্রুত বাকি সত্যিটাও বের করে ফেলে।
শতাব্দী ইতোমধ্যে সবটা জেনে গেছে নাঈমকে সে ঠিকভাবে চেনে না শুধু কলেজ জীবনে উৎসের সঙ্গে একবার দেখেছিল। শতাব্দী উৎসকে কোনো প্রশ্ন করেনি তৌসিফের কাছ থেকে সব জেনে নিয়েছে।
নাঈমের কেস কোর্টে উঠেছে পুলিশ আসামিকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছে আদালত আবেদন গ্ৰহন করেছে। নাঈমের পক্ষের আইনজীবী অনেক চেষ্টা করেও নাঈমের জামিন করাতে পারেনি কারণ সব প্রমাণ নাঈমের বিরুদ্ধে। নাঈমকে বেঁধে রাখা হয়েছে মাথার উপর হলুদ রঙের তিব্র আলোর একটা লাইট জ্বালিয়ে রাখা কয়েকহাত দূরে একটা টেবিল, টেবিলের উপর পানির বোতল রাখা। শক্তপোক্ত মোটা লাঠি দিয়ে নাঈমকে পি’টিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছে সজিব। বোতলের ছিপি খুলে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নাঈমের দিকে ঝুঁকে বলল,
– অযথা পরে পরে মা’র খেয়ে লাভ নেই সত্যিটা বলে দিন মি.নাঈম এতে রিমান্ডের বাকি যন্ত্রনাদায়ক মা’ইরের হাত থেকে অন্তত রক্ষা পাবেন।
ইতোমধ্যে নাঈমের ঠোঁট আর কপাল থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়ে গেছে শরীরে আঘাতের যন্ত্রনা। সজিব আবারো বলল,
– কি হলো বলা শুরু করুন রুহিকে কে মে’রেছে?
নাঈম ঠোঁট দিয়ে জিভ ভিজিয়ে বলতে লাগলো,
– রুহিকে আমি মা’রিনি তাকে তো আমি ভালো করে চিনতামও না।
– তাহলে উৎসকে ফাঁসানো হলো কিভাবে?
– আমার ছোট ভাই নাহিদ যেই ভার্সিটি থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করে বের হয়েছে রুহিও সেই ভার্সিটিতেই অনার্স করছে ওখান থেকেই ওদের পরিচয় একসময় দু’জন নিজেদের ইচ্ছায় সম্পর্কে জড়ায় এক বছরের সম্পর্কের পর নাহিদ এই সম্পর্ক থেকে বের হতে চাচ্ছিল কিন্তু রুহি কোনমতেই নাহিদকে ছাড়তে চাচ্ছিল না বিভিন্ন ভাবে ব্ল্যাকমেইল করছিল সেদিনও রুহি নিজেই নাহিদকে ভার্সিটির পাশের গলির মোড়ে আসতে বলে নাহিদ ওর বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল একসময় অনেক কথা কাটাকাটি হয় আর নাহিদ রেগে গিয়ে বন্ধুদের নিয়ে ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আর মে’রে দেয়।
– তাহলে মি.উৎসকে ফোন করলো কিভাবে?
– বললাম না প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়েছে,ওখান থেকেই নিজের উপর আক্রমণ হতে পারে ভেবে দ্রুত উৎসকে ফোন করে রুহি।
– কল ডিটেইলসে নাহিদের নাম্বার তো পাওয়া যায়নি।
– নাহিদের সঙ্গে যে নাম্বার দিয়ে কথা বলতো সেই নাম্বার রুহি আর নাহিদ ছাড়া কেউ জানতো না রুহিকে মা’রার পর নাহিদ ওই সিম নষ্ট করে ফেলে।
– আপনি সব জানলেন কিভাবে মি.উৎসকে কেন ফাঁসালেন?
– রুহিকে মে’রে নাহিদ আমায় ফোন করে তারপর বিস্তারিত সব বলে এও বলেছে রুহি নাকি উৎস নামের কাউকে ফোন করে আসতে বলেছে তখনও আমি সিউর ছিলাম না এটাই সেই উৎস, ভাইকে বাঁচানো তখন আমার একমাত্র কাজ ছিল তাই সব প্রমাণ নষ্ট করে দ্রুত বাড়িতে চলে আসতে বলি আর তারপর আসিফকে দিয়ে পুলিশে খবর দেই।
নাঈম একটু থেমে আবারও বলতে লাগলো,
– পরেরদিন জানতে পারি শাহরিয়ার আহমেদ উৎসকে রুহির খু’নি হিসেবে স্পট থেকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে তখনি পুরনো ক্ষতটা পুনরায় জেগে উঠে সব বন্ধুদের সামনে উৎস আমায় মে’রেছিল যার কারণে কোনো বন্ধুর সামনে আমি মুখ দেখাতে পারিনি নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাইনি তাই প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে হলো সবকিছু প্লান মতো সাজাই আসিফকে দিয়ে শতাব্দীর কাছে উৎসের বিরুদ্ধে কেস লড়ার জন্য পাঠাই ও দেখুক ভালোবাসার মানুষ নিজের বিরুদ্ধে গেলে কেমন লাগে সারাজীবন জেলে পঁচে মরুক কিন্তু সব প্লান ভেস্তে গেল উৎস শতাব্দীকে বিয়ে করে নিলো আর শতাব্দী সেও প্রমাণ করে দিল উৎস নির্দোষ।
সজিব কপালের ঘাম মুছে বেরিয়ে গেল। নাহিদকে ধরার জন্য পুলিশ পাঠানো হয়েছে, নাঈমের খবরটা শুনেই নাহিদ পালিয়ে গেছে।
____________
সব প্রমাণ নাঈমের বিরুদ্ধে যাওয়ায় আদালত তাকে শাস্তি দিয়েছে, নাহিদকে খোঁজে বের করার জন্য পুলিশকে আদেশ দিয়েছে।তরী এবং নাঈমের বিয়েটা পারিবারিকভাবেই হয়েছে তিন বছরের বৈবাহিক জীবন। নাঈমের বাবা-মা জোর করেই নাঈমের বিয়েটা দিয়েছিল তবে বিয়ের পর এক মুহূর্তের জন্যও তরীকে কষ্ট দেয়নি নাঈম। নাঈমের সত্যিটা জেনে তরী অনেক ভেঙ্গে পড়েছে।
শতাব্দী সব চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছে এই কেস নিয়েই এতদিন অনেক চিন্তায় ছিল।উৎস শতাব্দীর পাশ ঘেঁষে বসে আছে শতাব্দীর ওড়না নিজের আঙ্গুলে প্যাচাতে প্যাচাতে বলল,
– বুঝলে উকিল সাহেবা একদিক দিয়ে কিন্তু নাঈমের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ।
– মাথায় সমস্যা আছে? পাবনার সিট বুকিং করবো?যে আপনার এত বড় ক্ষতি করতে চাইলো তার প্রতি আপনি কৃতজ্ঞ!
– নাঈম যদি ক্ষতি না করতো তাহলে তোমার আমার আবার দেখাও হতো না আর না বিয়ে হতো।
– এটাই তো বড় ভুল করেছে ইচ্ছে করছে ওই নাঈমকে গু’লি করে দেই।
– আমার বউ হওয়া তোমার বড় ভুল!
– হুম।
– আমার ভালোবাসাটা বুঝলা না।
উৎস বসা থেকে উঠে গেল শতাব্দী জিজ্ঞেস করলো,
– কোথায় যান?
– বাহিরে।
– কেন?
– যার বউ ঘরে অত্যাচার করে সে বাহিরে যাবে না তো কোথায় যাবে?
– নাটক।
উৎস দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেল।নাহিদকে পুলিশ আটক করেছে এয়ারপোর্ট থেকে।নাহিদ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছিল তখনি ওখানকার পুলিশ তাকে ধরে ফেলে।উৎস সেই খবর পেয়েই তৌসিফকে নিয়ে সেখানে যায়। উৎসকে দেখে নাহিদ যেন আরও হাইপার হয়ে গেছে বারবার মনে হচ্ছে সবকিছুর মূলে উৎস। পুলিশ নাহিদকে হ্যান্ডকাপ পরাতে যাবে তখনি আচমকা সজিবের পকেট থেকে বন্দুক নিয়ে উৎসের দিকে গু’লি ছুড়ে দেয় নাহিদ।গু’লিটা উৎসের বাম হাতে লাগে, তৎক্ষণাৎ যন্ত্রনায় চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নেয় উৎস। তৌসিফ দ্রুত উৎসকে ধরে আর পুলিশরা নাহিদের হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ফেলে।
চলবে………