প্রণয়_কোন্দল #মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম) পর্ব:০৭

0
999

#প্রণয়_কোন্দল
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৭

উৎস শতাব্দীকে দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে আছে। শতাব্দী নিজের থেকে উৎসকে সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে বিরক্ত নিয়ে বলল,

– এগুলো কি ধরনের অসভ্যতামি হচ্ছে? ছাড়ুন বলছি।

– বউয়ের সঙ্গে প্রেম করতে চাওয়া কি অসভ্যতামি?

– উফ ভালো লাগছে না সরুন।

– উহু আমার না মনে হচ্ছে জ্বর আসবে।

– এখানে কি করছেন? ওষুধ ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রাখা আছে খেয়ে নিন।

– এই জ্বর ওষুধে ছাড়বে না।

– তাহলে কিসে ছাড়বে?

– তোমার চুমুতে।

– কলেজে পড়ুয়া নিব্বাদের মতো আলগা পিরিত।

– আলগা পিরিত নয় এটা হচ্ছে ভালোবাসা।

– দেখুন আমার অনেক ক্লান্ত লাগছে সাথে ঘুমও পাচ্ছে।

– আসো চুমু দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই।

– আরে শ্বাশুড়ি আপনি…

উৎস এক ঝটকায় শতাব্দীকে ছেড়ে দিয়ে দরজার দিকে তাকালো কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না এই সুযোগে শতাব্দী দ্রুত বন্দুক হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।উৎস চোখ ছোট ছোট করে বলল,

– কোথায় আম্মু?

– জানি না।

– তাহলে বললে যে।

– প্রাঙ্ক ছিল।

– তোমাকে তো আমি…

এগিয়ে যেতে নিলেই উৎসের দিকে বন্দুক তাক করে শতাব্দী বলল,
– আমার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটালে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিব।

– উকিল সাহেবা তুমি অনেক নিষ্ঠুর।

– হুম এবার ভালো ছেলের মতো সোফায় গিয়ে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে থাকুন।

– এইটুকু সোফায় চিৎপটাং হয়ে শুয়ে থাকা যায় না।

– তাহলে মেঝেতে শুয়ে থাকেন।

– নিষ্ঠুর বউয়ের এওয়ার্ড থাকলে আমি নিশ্চিত তুমিই এওয়ার্ডটা পেতে।

– আর আপনি লুচ্চামির‌ এওয়ার্ড পেতেন।

উৎস হুট করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে শতাব্দীকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরে বলল,
– তুমি বলেছিলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হলে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে এখন তো সব প্রমাণ হয়েছে তুমি নিজেই করেছ তাহলে কেন এত দূরত্ব?

শতাব্দী বন্দুক নাড়িয়ে বলল,
– সত্যি সত্যি গুলি করে দিব ছাড়ুন আমায়।

– যা ইচ্ছে করো তোমার থেকে দূরে থাকার চেয়ে গুলি খাওয়া অনেক ভালো।

শতাব্দী শব্দহীন নিঃশ্বাস ছাড়লো,উৎস যে একটা বেহায়া ছেলে তা এ কয়দিনে শতাব্দীর বোধগম্য হয়ে গেছে। শতাব্দী প্রতিজ্ঞা করলো এখন সে চুপচাপ ঘুমাবে উৎসের সঙ্গে কথা বলবে না।
_____________

সকাল সকাল হল ঘরের সোফায় মিসেস উপমা এবং ঊষা মুখে ফেসপ্যাক, চোখে শসা লাগিয়ে বসে আছে। শেফালী দু’জনকে বাতাস করছে, দু’টো মেয়ে তাদের মা-মেয়ের হাতে প্যাক লাগিয়ে দিচ্ছে। শতাব্দী নিচে নেমে শ্বাশুড়ি ননদের এমন অবস্থা দেখে বলল,

– এখানে কি হচ্ছে এগুলো? পুরো পার্লার কি বাড়িতে চলে এসেছে!

শেফালী দাঁত কেলিয়ে বলল,
– ম্যাডাম যাইবে বাপের বাড়ি আর আপায় যাইবে বন্ধু গো সঙ্গে ঘুরতে।

– এই জন্য এত রূপচর্চা!

মিসেস উপমা মেয়ে দু’টোকে বললেন,
– এ হচ্ছে আমার ছেলের বউ যাও ওকে গিয়ে এই প্যাকটাই লাগিয়ে দাও।

শতাব্দী তিক্ষ্ম কন্ঠে বলল,
– না না আমি এসব মাখবো না।

মিসেস উপমা শতাব্দীর কথা পাত্তা না দিয়ে বললেন,
– আমি যা বলেছি তাই করো।

মেয়ে দু’টো শতাব্দীকে টেনে সোফায় বসিয়ে মুখে ফেসপ্যাক লাগানো শুরু করলো। শতাব্দী মনে মনে উৎসকে গালি দিয়ে নিজের রাগ সংবরণ করার চেষ্টা করছে। মিসেস উপমা শতাব্দীর উদ্দেশ্যে বললেন,

– ঊষা বন্ধুদের সঙ্গে ট্যুরে যাবে তোমার শ্বশুর নাকি কাজে ব্যস্ত উৎসের কথা কি বলবো একেবারে বাপের মতো ফাঁকিবাজ হয়েছে এখন আমাকে একা একা ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে যেতে হবে তুমি তো ফ্রি আছোই চলো শ্বাশুড়ি বউমা মিলে কিছুদিন বেড়িয়ে আসি।

শতাব্দী ইতস্তত করে বলল,
– আমি?

– হ্যা চলো না ভালো লাগবে ওখানে তোমার সম বয়সী অনেকে আছে, এছাড়া ওরা বাপ ব্যাটা কয়েকদিন একা একা বাড়িতে থেকে মজা বুঝুক।

শতাব্দী শ্বাশুড়ির কথা শুনে ভাবতে লাগলো,’উৎসের হাত থেকে কিছুদিন রেহাই পাওয়ার জন্য এটাই সুযোগ।’

শতাব্দী হেসে বলল,
– আপনি যখন বলছেন যাওয়াই যায়।

মিসেস উপমা অনেক খুশি হলেন। শতাব্দী দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,
– আমি ঘরে গেলাম।

শতাব্দী খুশি মনে সিঁড়ি বেয়ে ঘরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো।উৎস ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ঘর থেকে বের হতে যাবে তখনি শতাব্দীর মুখোমুখি হলো।উৎস শতাব্দীকে দেখেই চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

– আম্মু পেত্নী….

শতাব্দী বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কোথায় পেত্নী?

– এই যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে!

– পেত্নী হতে যাব কেন? আমি শতাব্দী।

– মুখে কি মেখেছ এগুলো?

– আমার ডিজিটাল শ্বাশুড়ি জোর করে ফেসপ্যাক লাগিয়ে দিয়েছে।

শতাব্দী দ্রুত বাথরুমে ঢুকে গেল, মুখ ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে বের হয়ে আসলো। উৎস এখনও দাঁড়িয়ে আছে, শতাব্দী উৎসের দিকে তাকিয়ে বলল,

– এই আপনার কি কোনো কাজকর্ম নেই? সারাক্ষণ দেখি বাড়িতে পরে থাকেন, শুনুন আমার বেকার ছেলে একদম পছন্দ নয়।

উৎস তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো শতাব্দীর দিকে।নিরস মুখে বলল,
– বেকার হতে যাবো কেন? বাবার সব ফ্যাক্টরি আমি চালাই।

– ওহ তার মানে নিজের কোনো যোগ্যতা নেই সব বাবার দান।

উৎস ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। শতাব্দী মুখ বাঁকিয়ে আবারো বলল,
– শেষ পর্যন্ত শ্বশুরের রোজগার খেতে হবে? যেখানে পড়াশোনা শেষে আমি নিজেই নিজের বাবার টাকা নিতে লজ্জাবোধ করছিলাম সেখানে বিয়ের পর শ্বশুরের টাকা ছি ছি।

উৎস মনে মনে শপথ করলো সে এখন কোনমতেই রাগবে না।উৎস ইজি চেয়ারে গিয়ে বসে গালে হাত দিয়ে মনোযোগ সহকারে শতাব্দীর কথা শুনতে লাগলো। শতাব্দী মনে মনে বলল,’কি ব্যাপার রাগছে না কেন?’

উৎস শতাব্দীকে থেমে যেতে দেখে বলল,
– থামলে কেন? তোমার কথা শুনতে তো ভালোই লাগে।

– এই আপনার কি লজ্জা শরম নেই?

– না নেই, প্রথমত আমি বসে বসে বাবার টাকা খাই না। বাবার ফ্যাক্টরি আমি চালাই পরিশ্রম করে সময় নষ্ট করে এবং নিজের বুদ্ধি দিয়ে, তোমার মতো অত শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই তবে এতটা অকৃতজ্ঞ নই যে বাবার টাকায় বউকে খাওয়াবো আর হ্যা আমার নিজের পার্সোনাল বিজনেসও আছে যেটা থেকে আমি আমার নিজের খরচ চালাই বাবার একমাত্র ছেলে হওয়ায় বাবার ফ্যাক্টরি গুলো আমাকেই দেখতে হয় এটা আমার দায়িত্ব।

উৎস থেমে আবারও বলল,
– চাকরির ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী অফিসে যেতে হয় আমি তো চাকরি করি না তাই যখন ইচ্ছে বাড়িতে থাকবো বাহিরে যাব সব আমার ইচ্ছে। তোমার যদি আমাকে বাড়িতে দেখে বিরক্ত লাগে তাতে আমার কিছু করার নেই আমাকে তোমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও সহ্য করতে হবে।

উৎস কথা শেষ করে নিচে চলে গেল। শতাব্দী ঝগড়া করার জন্য উৎসকে এসব বলেছিল কিন্তু উৎস কথাগুলো সিরিয়াস নিয়ে শান্ত গলায় এভাবে বলে যাবে ভাবতে পারেনি।

উৎস হল ঘরে এসে মা আর বোনের রূপচর্চা দেখে জিজ্ঞেস করল,
– কি ব্যাপার আম্মু তুমি আর ঊষা কোথাও যাবে নাকি?

মিসেস উপমা বললেন,
– আমি তোর মামার বাড়িতে যাব সঙ্গে শতাব্দীকেও নিয়ে যাব।

ঊষা বলল,
– আর আমি বন্ধুদের সঙ্গে ট্যুরে যাব তোকে বলেছিলাম না ভাইয়া।

উৎস মায়ের পাশে বসে বলল,
– আম্মু আমার বউটাকে নিয়ে যাওয়ার কি দরকার? সবেমাত্র বিয়ে করলাম বিয়ে করার পর থেকে শুধু মা’ইর আর গালি খেলাম এখন আবার তুমি ওকে দূরে নিয়ে যেতে চাইছো।

– আমি একা একা যেতে পারবো না।

– বাবাকে নিয়ে যাও।

– আমি কিছু বললেই তোর বাবা ব্যস্ত হয়ে যায়।

উৎস গালে হাত দিয়ে বসে রইলো।
______________

‘আমি কিছু শুনতে চাই না বাবা তুমি আম্মুর সঙ্গে শ্বশুর বাড়িতে যাবে এটাই ফাইনাল।’

ইসতিয়াক আহমেদ অসহায় কন্ঠে বললেন,
– এখন কি আমার শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার বয়স?

– জানি না তবে তুমি না গেলে আম্মু আমার বউকে নিয়ে যাবে আর আমি বউ ছাড়া থাকতে পারবো না।

– বাবার সঙ্গে এসব কথা বলতে লজ্জা করে না?

– কিসের লজ্জা?

– আচ্ছা তোর আম্মুর সঙ্গে আমি যাব।

উৎস ইসতিয়াক আহমেদের গালে চুমু খেয়ে বলল,
– এই জন্যই তোমাকে এত ভালো লাগে বাবা।

ইসতিয়াক আহমেদ মৃদু হাসলেন উৎস খোশ মেজাজে নিজের কাজে গেল।
.
.
মিসেস উপমা সাজগোজ করছেন আর শেফালী ব্যাগ গুছাচ্ছে। ইসতিয়াক আহমেদ শেফালীকে বললেন,

– শেফালী তুই এখন যা।

– আচ্ছা চাচা।

শেফালী চলে যেতেই স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন,
– শুনলাম ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছো?

– হুম তোফায়েল অনেকবার বলেছে যেতে কিন্তু যাওয়া হচ্ছিল না এখন ফ্রি আছি তাই ভাবলাম ঘুরে আসি।

– শতাব্দীকে নেওয়ার দরকার নেই তোমার সঙ্গে আমি যাবো।

মিসেস উপমা কানের দুল হাতে নিয়ে স্বামীর দিকে আড়চোখে তাকালেন কয়েক সেকেন্ড মৌন থেকে বললেন,
– তোমার না অনেক কাজ তুমি না ব্যস্ত?

– কাজ ছিল কিন্তু তোমার জন্য সব কাজ ফেলে এসেছি তোমার ছেলে সব কাজ করে নিবে আর আমি তোমার সঙ্গে যাবো।

– এই হচ্ছে আসল কাহিনী।

– কিসের কাহিনী?

– কিছু না তৈরি হয়ে নাও আর কিছুক্ষণ পরেই বের হবো।

উৎস শতাব্দীর ব্যাগ থেকে সব কাপড় পুনরায় আলমারিতে গুছিয়ে রাখছে। শতাব্দী গোসল করে এসে উৎসের এমন কাজ দেখে চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

– এগুলো রেখে দিচ্ছেন কেন?

– তোমার রাখতে কষ্ট হবে তাই আমিই রেখে দিচ্ছি।

– আমি তো শ্বাশুড়ির সঙ্গে বেড়াতে যাবো তাই ব্যাগ গুছিয়েছি।

– আম্মুর সঙ্গে বাবা যাবে তোমাকে আর যেতে হবে না।

– এই সিদ্ধান্ত কখন নেওয়া হলো?

– এখনি।

– আপনি ইচ্ছে করে এমন করেছেন।

– হুম তোমার যদি ঘুরতে যেতে ইচ্ছে হয় তাহলে আমার সঙ্গে ঘুরতে যাবে আমি তোমায় নিয়ে যাব তুমি কেন নিজের জামাইকে ছেড়ে শ্বাশুড়ির সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার জন্য লাফাবে?

– আপনাকে বিরক্ত লাগে তাই।

– এটাই ভালোবাসার প্রথম ধাপ, প্রথমে বিরক্ত লাগবে তারপর মনে পড়বে ভালো লাগা শুরু হবে তারপর হবে ভালোবাসা।

– ভালোবাসা বিশেষজ্ঞ এসেছে।

– আমি তো বউ বিশেষজ্ঞ হতে চাইছিলাম।

– এসব না হয়ে ভালো হবার চেষ্টা করুন।

– আমি তো ভালোই।

– ভালো না ছাই বদের হাড্ডি একটা।

দুপুরের খাবার খেয়েই ঊষা তার বান্ধবীদের সঙ্গে ট্যুরের জন্য বের হয়ে গেছে। ঊষা ঘুরতে অনেক পছন্দ করে বছরে দু-তিন বার বান্ধবীদের সঙ্গে ট্যুর দেয়। বিকেলের দিকে ইসতিয়াক আহমেদ এবং মিসেস উপমাও চলে গেলেন তোফায়েলদের বাড়িতে তাদের সঙ্গে শেফালীও। পুরো বাড়িতে এখন শুধু শতাব্দী-উৎস আর কয়েকজন সার্ভেন্ট আছে।
__________

‘সবাইকে যে এভাবে ছুটি দিয়ে দিলেন এখন রান্না করবে কে? যাবতীয় কাজগুলো কে করবে?

বাড়ির সব সার্ভেন্টদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে উৎস এতে বেশ রেগে আছে শতাব্দী।উৎস শতাব্দীর প্রশ্নের পাল্টা জবাবে বলল,
– দু’দিনের জন্য ছুটি দিয়েছি দু’দিন পর এসে সব কাজ করে দিবে।

– আর রান্না?

– তুমি করবে।

– হুয়াট! আমি রান্না করবো? ভাবলেন কি করে আমি রান্না করতে পারবো না আপনি গিয়ে করেন।

– সামান্য রান্না করতে পারো না? সমস্যা নেই অকর্মা বউই আমার পছন্দ।

– আপনি অকর্মা আপনার গোষ্ঠী অকর্মা।

– আমি অকর্মা হতে যাব কেন? আমি তো রান্না করতে পারি কিন্তু গোষ্ঠীর খবর জানি না।

– এ কার সঙ্গে আমার বিয়ে হলো? এই লোকের সঙ্গে সারাজীবন থাকা অসম্ভব ব্যাপার।

– কেন কেন?

শতাব্দী রাগমিশ্রিত চোখে তাকাতেই উৎস চুপ করে গেল। শতাব্দী একটা শো-পিস মেঝেতে আছাড় মে’রে রান্নাঘরে চলে গেল রাতের রান্না করার জন্য।উৎস চোখমুখ কুঁচকে বলল,

– ধানি লঙ্কাতেও এতটা ঝাল নেই যতটা আমার বউয়ের মধ্যে আছে বউটাকে আমার মতো শান্ত শিষ্ট বানানোর জন্য অনেক কষ্ট করতে হবে।

শতাব্দী বিড়বিড় করে উৎসকে বকতে বকতে রান্না করছে পেছন থেকে উৎস এসে শতাব্দীকে জড়িয়ে ধরে বলল,

– জানো বউ এখন না তোমাকে শুকনো মরিচের মতো দেখতে লাগছে ইচ্ছে করছে গাল দু’টোতে চুমু খাই কিন্তু ভয় হচ্ছে চুমু খেলে যদি ঝাল লাগে আমি তো ঝাল খেতেই পারি না।

শতাব্দী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
– তোমার ন্যাকামি আমি বন্ধ করছি।

বলেই গরম খুন্তিটা উৎসের হাতে ছুঁইয়ে দিল শতাব্দী। উৎস কিছুটা আর্তনাদ করে বলল,
– হায় হায় বউ কি করলে এটা? বাড়িতে একা পেয়ে এভাবে জামাইকে অত্যাচার করছো? উকিল হয়ে অন্যায় কাজ করছো?

– আরেকটা ফালতু কথা বললে খুন্তি আপনার মুখে চেপে ধরবো।

উৎস মুখটা কাদুকাদু করে বলল,
– ঠোঁট তো পুড়ে যাবে তখন তোমায় চুমু খাবো কি করে?

– উৎস!!!

– চেঁচাও কেন? তুমি চেঁচালে মনে হয় পেত্নী ডাকছে আমার পেত্নী অনেক ভয় লাগে।

– আপনার কাছে ঘুমের ওষুধ আছে?

– ঘুমের ওষুধ দিয়ে কি করবে?

– আপনাকে খাওয়াতাম।

– আমি কেন ঘুমের ওষুধ খাবো? আমার তো ঘুমে কোনো সমস্যা নেই।

– তাহলে আমাকে দিন আমি খাই।

– তোমার কি ঠিকমতো ঘুম হয় না? ওষুধ খেতে হবে কেন আমি তোমায় আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিব।

শতাব্দী নিজের কপালে কয়েকটা চাপড় মে’রে বলল,
– কার পাল্লায় পড়লাম।

– তোমার কি মাথা ব্যথা করছে?

শতাব্দী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রান্নায় মনোযোগ দিল। রান্না শেষ হতেই উৎস বলল,
– আহারে বউ তুমি তো ঘেমে গেছো দাঁড়াও আমি গিয়ে টেবিল গুছাই।

উৎস টেবিল গুছাতে চলে গেল তখনি শতাব্দীর মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসলো বাঁকা হেসে উৎসের খাবারে অনেকগুলো মরিচের গুঁড়া আর লবন মিশিয়ে দিল। উৎস টেবিল গুছিয়ে বসে আছে শতাব্দী উৎসের খাবারের প্লেট উৎসের সামনে রেখে নিজের খাবার খাওয়া শুরু করলো। উৎস খাবারটা মুখে দিয়ে চিবাতেই শক খেল, উৎসের চোখমুখ ঘেমে লাল হয়ে গেছে। শতাব্দী মৃদু হেসে বলল,

– খাবারটা অনেক মজা হয়েছে তাই না?

উৎস চুপ করে আছে শতাব্দী উৎসের কষ্টটা বুঝতে পেরে হেসে বলল,
– ভালো না লাগলেও পুরো খাবার আপনাকে খেতে হবে আমি কিন্তু অনেক কষ্ট করে রান্না করেছি।

উৎস শতাব্দীর কথা শুনেও শুনলো না পানি খাওয়ার জন্য গ্লাসটা ধরতে যাবে তখনি শতাব্দী দ্রুত গ্লাস নিয়ে গিয়ে বলল,

– খাবার শেষ করে পানি খেতে হয়।

উৎসের অবস্থা নাজেহাল কথাও বলতে পারছে না চুপও থাকতে পারছে না। উৎসের অবস্থা দেখে শতাব্দী মিটিমিটি হাসছে মনে মনে আওড়াচ্ছে,’এখন দেখ কেমন লাগে সবসময় আমার পেছনে লাগা তাই না।’

উৎস আর ঝাল সহ্য করতে না পেরে বসা থেকে উঠে রান্নাঘরে চলে গেল ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করে খেয়ে ঝাল নিবারণ করলো। শতাব্দী এবার জোরে জোরে হেসে দিল উৎস রাগী স্বরে বলল,

– আমার এই অবস্থা করে খুব হাসি পাচ্ছে তাই না?

– হু আপনাকে একেবারে লাল টমেটোর মতো লাগছে মন চাচ্ছে সস বানিয়ে খেয়ে নেই।

– আমাকে কপি করা হচ্ছে?

– না তো।

– দাঁড়াও আমার সঙ্গে লাগার মজা দেখাচ্ছি তোমায়।

বলেই শতাব্দীর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো উৎস। শতাব্দী এক দৌড়ে ঘরে চলে গেল, উৎসও পেছনে গেল। উৎস দরজা আটকে দিয়ে বলল,

– এবার কোথায় পালাবে উকিল সাহেবা?

শতাব্দী ভয়ে একটা শুকনো ঢুক গিলে বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে উৎসের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল,

– আমার সঙ্গে লাগতে আসলে নাক বুচা করে দিব।

– তার আগেই তোমার হাত ধরে ফেলব।

– অসভ্য।

– আর তুমি বেয়াদব।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here