প্রণয়_কোন্দল #মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম) পর্ব:০৮

0
997

#প্রণয়_কোন্দল
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৮

বালিশ দিয়ে মা’রা’মা’রি করতে করতে বালিশ ছিঁড়ে গেছে কিন্তু তাও একজনের উপর আরেকজনের আক্রমণ বন্ধ হয়নি। শতাব্দী উৎসকে মা’রার জন্য আর কিছু না পেয়ে উৎসের চুলের উপর হামলা করলো।দুই হাত দিয়ে উৎসের চুল টানতে টানতে শতাব্দী বলল,

– আজ আপনার চুল ছিঁড়ে টাকলু বানিয়ে দিব আমার সঙ্গে টক্কর।

উৎস ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে বলল,
– ভালো করে বলছি চুল ছাড়ো ব্যথা লাগছে।

– লাগুক ব্যথা।

শতাব্দী আরও জোরে জোরে টানতে লাগলো।উৎস নিজের সর্বশক্তি দিয়ে শতাব্দীর হাত উল্টো করে ধরে নিজের চুলকে রক্ষা করলো। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে শতাব্দীর গলায় দাঁত বসিয়ে দিল। হঠাৎ এমন আক্রমণে শতাব্দী আর্তনাদ করে উঠলো, উৎস শতাব্দীকে ছেড়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে বলল,

– উকিল বউ জামাই নির্যাতনের মামলা কিভাবে করে?

শতাব্দী রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই উৎস আবারো বলল,
– আসলে আমার বউ আমাকে অনেক অত্যাচার করে এই অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছি না তাই বউয়ের নামে মামলা করতে চাইছি তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?

শতাব্দীর থেকে কোনো উওর না পেয়ে উৎস মেকি হেসে বলল,
– ফিস নিয়ে চিন্তা নেই তুমি যত চাইবে ততই দিব।

– হারাম’জাদা তোর নামে মামলা ঠুকে দিব আমি, আমারে কামড় দেওয়া? কু’ত্তা।

উৎস মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
– আসতাগফিরুল্লাহ বউ তুমি আমাকে গালি দিলে সাথে তুই তুকারি করে বললে?

– একদম নাটক করবেন না।

– আহারে বউ আমার রাগ করেছে আসো চুম্মা দেই।

শতাব্দী সোফায় গিয়ে বসলো তারপর বলল,
– আপনি বিছানায় শুয়ে থাকুন আমার কাছাকাছি আসলেই গুল্লি করে দিব।

– বিছানার অবস্থা খারাপ করে আমাকে বিছানায় শুতে বলছো ছিহ বদ’মাইশ নারী।

– আমি নয় বিছানা আপনি নষ্ট করেছেন অসভ্য লোক।

– পাইছো তো একটা ভুলা ভালা জামাই তাই যখন ইচ্ছে যা খুশি দোষ চাপিয়ে দেও।

– বদের হাড্ডি একটা, ছেলে মানুষ এত ন্যাকামো করে কেমনে?
.
.
ঊষা আর তার তিনজন বান্ধবী মিলে বান্দরবান ঘুরতে এসেছে। উৎস তৌসিফকে ঊষার সঙ্গে পাঠিয়েছে যাতে বোনের কোনো অসুবিধা না হয়।

প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ পাহাড়ি ভ্রমন স্থানের নাম বান্দরবান। প্রতিদিন অনেক মানুষ বন্ধুবান্ধব পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসে এখানে। ঊষারা প্রথমদিন এসেই জাদিপাই আর থানচিতে ঘুরেছে।তারা বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডের কাছে হোটেল হিলটনে উঠেছে, ঊষার ট্যুরের কথা শুনে উৎস তৌসিফকে দিয়ে সেদিনই হোটেল ঠিক করে রেখেছে যাতে বোনের কোনো সমস্যা না হয়।

রাতের খাবার খাওয়ার সময় তৌসিফ বলল,
– কাল কোথায় ঘুরতে যাবে?

সবাই একসঙ্গে বলে উঠলো,
– নীলগিরি যাব।

– ঠিক আছে তাহলে আজকেই গাড়ি ঠিক করে ফেলি।

ঊষা মৃদু হেসে বলল,
– তৌসিফ ভাই, চান্দের গাড়ি দিয়ে যাব।

– ওইসবে যাওয়ার দরকার নেই আমি জিপ ভাড়া করছি।

– নাহ আমরা চান্দের গাড়ি দিয়েই যাব।

ঊষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাকিরাও বলে উঠলো,
– হ্যা আমরা চান্দের গাড়ি দিয়েই যাব।

তৌসিফ দমে গিয়ে বলল,
– ঠিক আছে।

সকাল ৬ টার আগেই সবাই নাস্তা করে নিয়েছে।আজ তারা নীলগিরি ঘুরতে যাবে, তৌসিফ আগের দিন গাড়ি ভাড়া করে নিয়েছে। সবাই গাড়িতে উঠে গেছে, গাড়ি চলছে তার নিজ গতিতে ঊষা বাইরের দৃশ্য অনুভব করতে ব্যস্ত আর একজোড়া চোখ ঊষার বাতাসে উড়তে থাকা এলোমেলো চুল দেখতে ব্যস্ত। ঊষা আচমকা চেঁচিয়ে উঠে বলল,

– গাড়ি থামান।

তৌসিফ ব্রু যোগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
– গাড়ি থামাবে কেন?

– শৈলপ্রপাত ঝর্ণা দেখা যাচ্ছে ওখানে যাব।

ড্রাইভার বান্দরবান এলাকার হলেও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারে।ড্রাইভার শুদ্ধ ভাষায় বলল,
– মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামানোর কথা তো বলা হয়নি আগে থেকে, কথা ছিল নীলগিরি গিয়ে একেবারে গাড়ি থামাবো।

তৌসিফ আড়চোখে ঊষাকে দেখে ড্রাইভারকে বলল,
– বাচ্চা মানুষ থামাতে যখন বলছে থামান দরকার হলে ভাড়া ডাবল দিব।

এবার যেন ড্রাইভার সন্তুষ্ট হলেন গাড়ি থামতেই ঊষা আর তার বান্ধবীরা নেমে গেল। তৌসিফ ঊষার হাত চেপে ধরে বলল,
– ধীরে সুস্থে চলাফেরা করো তোমার কিছু হলে বস আমাকে মে’রে নদীতে ভাসিয়ে দিবে।

ঊষা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
– ভাইয়াকে যে তোমরা এত কেন ভয় পাও বুঝি না।

তৌসিফ মনে মনে বলল,’ভয় পাই কি আর স্বাদে তোমরা যদি বসের আসল রূপ দেখতে তাহলে তোমাদেরও আমার মতোই অবস্থা হতো।’

ঊষা বিরক্ত কন্ঠে বলল,
– তৌসিফ ভাই হাতটা এবার ছাড়ো ঝর্ণার পানিতে ভিজবো।

তৌসিফ ভয়ে দ্রুত হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল,
– ভিজতে হবে না ঠান্ডা লেগে যাবে তার উপর এক্সট্রা ড্রেস আনোনি এখানে।

ঊষার বান্ধবী মৌ এসে বলল,
– আমরা আগেই সঙ্গে করে ড্রেস নিয়ে এসেছি ভাইয়া।

– ওহ তার মানে আগে থেকেই প্লানিং করা।

ঊষা ফিচেল হেসে চলে গেল ঝর্ণার পানিতে। তৌসিফ গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে অন্যদিক ফিরে দাঁড়িয়ে আছে।ঊষা তার বান্ধবীরা মিলে আনন্দ এবং দুষ্টুমি করছে পানিতে গিয়ে।মৌ একটা পাথরের উপরে বসে পড়ে বলল,

– তৌসিফ ভাই কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর তাই না?

বর্ষা অসহায় কন্ঠে বলল,
– আমার তো শুধু উৎস ভাইয়াকেই ভালো লাগে আহা কি সুন্দর একটা ছেলে।

ঊষা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– ভাইয়া এখন বিবাহিত তাই নজর দিবি না আমার ভাবী যেই হিটলার একবার কানে গেলে বন্দুক দিয়ে গুলি করে দিবে নয়তো মামলা ঠুকে দিবে।

বর্ষা কাদুকাদু মুখে বলল,
– হুম শতাব্দী আপুকে আমি চিনি তাই তো উৎস ভাইয়াকে ভুলার চেষ্টা করছি।
____________

দু’দিন পর ইসতিয়াক আহমেদ এবং মিসেস উপমা বাড়িতে ফিরলেন।ছেলে আর ছেলের বউকে দেখে বিষ্মিত হয়ে গেলেন। উৎসের গালে আর চোখের কাছে খামচির দাগ খয়েরী রঙ ধারণ করেছে আর শতাব্দীর গলার কাছে কামড়ের দাগ।

মিসেস শতাব্দী নিরস মুখে তাদের উদ্দেশ্যে বললেন,
– তোদের এমন অবস্থা হলো কিভাবে? মা’রামা’রি করেছিস নাকি?

শতাব্দী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
– আপনার এই রাক্ষস ছেলে আমার গলায় কামড় দিয়েছে দেখুন আমি কিছু বলিনি।

উৎস তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– এমনি এমনি কামড় দিয়েছি নাকি? তুমি এই দু’দিন আমার উপর অত্যাচার করেছ।

উৎস সোফায় ঢপাস করে বসে পড়লো তারপর বলতে লাগলো,
– দেখো আম্মু আমার মুখের কি করুন অবস্থা করেছে বাড়ি থেকে বের হতেও পারছি না আমাকে অনেক মে’রেছে শেষে নিজেকে বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে কামড় দিয়েছি।

শতাব্দী মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– শ্বাশুড়ি আপনার ছেলে একটা নাটক বাজ এর কথা জীবনেও বিশ্বাস করবেন না।

মিসেস উপমা কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন,
– এরা বাপ-ছেলে দু’টোই নাটকবাজ খামচি দিয়ে একদম ঠিক করেছ।

উৎস অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– আম্মু!!

– ঢং করিস না একটা মেয়ে তোর মতো হাতিকে মে’রেছে এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে আমি কি বোকা নাকি?

উৎস সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো সে বুঝতে পেরে গেছে তার মা এখন বউ ভক্ত হয়ে গেছে। ইসতিয়াক আহমেদ এতক্ষণ চুপচাপ কথাগুলো শুনছিলেন এখন মুখ খুললেন,

– উপমা এটা কিন্তু ঠিক নয় সবসময় কথায় কথায় আমাকে কেন টেনে আনো? ছেলে-মেয়েদের সামনে অপমান না করলে হয় না?

– তোমার মতোই তো তোমার ছেলেটা হয়েছে তাই তো তোমার নাম আনতে হয়।

ইসতিয়াক আহমেদ স্ত্রীকে আর ঘাটালেন না উৎসের উদ্দেশ্যে বললেন,
– ঊষা তো এখনও ফিরলো না কবে ফিরবে?

– আরও দু’দিন থাকবে বলেছে।

– আরও দু’দিন! আমাদের তো একদিনের কথা বললো।

– পুরো বান্দরবান ঘুরে তারপর আসবে।

– আমার চিন্তা হচ্ছে বাড়ির বাইরে অচেনা জায়গা বিপদ আপদের তো শেষ নেই।

– চিন্তা করো না তৌসিফ আছে তো এছাড়া কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাতে বলেছি।

– ওহ।
___________

সন্ধ্যা থেকে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে একটু পর পর আকাশ ডেকে উঠছে। শতাব্দী জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানি ছোঁয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।উৎস শতাব্দীর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,
– এভাবে পানি ধরলে ঠান্ডা লাগবে।

– আমার বৃষ্টির পানিতে ঠান্ডা লাগে না।

– তাহলে ছাদে গিয়ে ভিজলেই পারো এখানে কষ্ট করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

– শুনছেন না মেঘ ডাকছে, বিদ্যুৎ চমকালে আমার ভয় লাগে।

– সমস্যা নেই আমি আছি তো চলো।

শতাব্দী খুশি হলো উচ্ছোসিত কন্ঠে বলল,
– আপনি ভিজবেন আমার সঙ্গে! চলুন তাহলে।

উৎস মুচকি হেসে ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে যাবে তখনি শতাব্দী কিছু একটা ভেবে বলল,
– উহু যাব না।

– কেন?

– লুচুদের বিশ্বাস করতে নেই কে জানে কখন কি করেন।

– ছিহ উকিল সাহেবা এভাবে জামাইকে অবিশ্বাস করো ছিহ।

– আপনার সঙ্গে বৃষ্টিতে ভেজার থেকে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানো ভালো গুড নাইট।

শতাব্দী বিছানার মাঝখানে শুয়ে পড়লো কাঁথা মুড়ি দিয়ে। উৎস নিজের মাথায় হাত দিয়ে বলল,
– উকিলদের বিয়ে করলে যা হয় সবকিছুতেই শুধু সন্দেহ।

উৎসের মোবাইল বেজে উঠলো, শতাব্দী কাঁথার নিচ থেকেই কান খাড়া করলো কথা শোনার জন্য।উৎস ফোন রিসিভ করে কানে ধরে বলল,

– কোনো সমস্যা নাকি? ঊষা কোথায়?

তৌসিফ ভিতু কন্ঠে বলল,
– ঊষা নিজের রুমে।

– ওহ।

– বস প্লিজ আপনি ঊষাকে চলে আসতে বলুন আমার এখানে ভালো লাগছে না এতগুলো মেয়ের মাঝখানে একা একটা পুরুষ শরম লাগে স্যার।

– ছেলে মানুষের শরম কিসের?

– জানি না বস যাই হোক আমি এখানে থাকতে পারবো না ঊষা আসতেই চাচ্ছে না আপনি প্লিজ আপনার বোনকে ফোন করে বলুন।

– আচ্ছা কাল থেকে পরশু চলে এসো।

– বস!

– আর একটাদিনের ব্যাপার সবসময় তো আর বান্দরবান যাবে না গেছে যখন একটু ঘুরে আসুক।

– ওকে বস শুধু কালকেই।

– হুম আর খেয়াল রেখো ওর একা একা যেন কোথাও না যায়।

– ওকে স্যার।

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here