প্রণয়_কোন্দল #মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম) পর্ব:১০

0
890

#প্রণয়_কোন্দল
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:১০

শতাব্দীর চিৎকারে আজ সবার ঘুম ভেঙ্গেছে। বিছানার একপাশে বসে শতাব্দী বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে কান্না করছে।উৎস তার বিশাল আলমারির উপর আরামছে বসে গালে হাত দিয়ে শতাব্দীকে দেখছে আর মনে মনে বলছে, ‘কাঁদলে আমার বউটাকে কি সুন্দরই না লাগে আহা এবার থেকে রোজ এভাবে কান্না করাতে হবে।’

কান্নাকাটির শব্দে মিসেস উপমা,ইসতিয়াক আহমেদ,ঊষা উৎসের ঘরে চলে এসেছে। শ্বাশুড়িকে দেখে শতাব্দীর কান্নার পরিমাণ আরও বেড়ে গেল। মিসেস উপমা শতাব্দীর পিঠে হাত বুলিয়ে আহ্লাদি সুরে বললেন,

– কি হয়েছে বউমা কাঁদছো কেন?

কান্না করতে করতে শতাব্দীর চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল,
– আমার চুল কেটে দিয়েছে। ত্র্যা…হে…

– আহা কাঁদে না কে চুল কেটেছে?

শতাব্দী উৎসের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল,
– আপনার এই অসভ্য বাজে ছেলে আমার চুল কেটে দিয়েছে।

সবাই শতাব্দীর আঙ্গুল বরাবর তাকিয়ে উৎসকে দেখতেই চমকে গেল। ইসতিয়াক আহমেদ অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

– তুই ওখানে কেন?

উৎস মুখ কাঁচুমাচু করে বলল,
– সাত সকালে বউয়ের হাতে মাইর খাওয়ার ইচ্ছে নেই তাই নিরাপদ জায়গায় বসেছি।

ইসতিয়াক আহমেদ আস্তে করে বললেন,
– ছেলে দেখছি আমার থেকেও ভিতু।

মিসেস উপমা রূঢ় কন্ঠে বললেন,
– দুষ্টুমির একটা লিমিট থাকে উৎস, মেয়েটার এত বড় চুল গুলো কেন কেটেছিস?

– ওর চুল গুলো আমাকে অনেক বিরক্ত করে তাই কেটে দিয়েছি।

– এই জন্য তুই কেটে দিবি!

– এছাড়া কোনো উপায় ছিল না প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে চুল দিয়ে আমার মুখে খোঁচা দিয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় নিষেধ করার পরেও করেছে তাই কেটে দিয়েছি।

শতাব্দী আরও জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,
– শ্বাশুড়ি মা আপনি যদি আপনার ছেলের বিচার না করেন তাহলে আপনার ছেলের নামে আমি মামলা ঠুকে দিব।

– তুমি চিন্তা করো না এই হা’রামজা’দা নিচে নামুক তারপর মজা দেখাচ্ছি সারাদিন কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখবো।

শতাব্দী এখনও ফোপাচ্ছে, শতাব্দী নিজের থেকেও বেশি নিজের চুলের যত্ন করে মিসেস তাসলিমা কতবার আগা কেটে দিতে চেয়েছিল কিন্তু শতাব্দী কখনো কাটতে দিতো না আর আজ সেই চুল গুলো কেটে পিঠ পর্যন্ত করে দিয়েছে উৎস।

উৎস ইসতিয়াক আহমেদকে ইশারা দিল। ইসতিয়াক আহমেদ হালকা কেশে বললেন,
– সত্যিই তো উৎস এটা তুই ঠিক করিসনি আমার বউমার সঙ্গে এত বড় অন্যায় আজ আমি তোকে শাস্তি দিব নিচে নেমে আয় বেয়াদব।

কথার ফাঁকে ফাঁকে ছেলেকে চোখ মারছেন ইসতিয়াক আহমেদ।উৎস আলমারির উপর থেকে নিচে নেমে ড্রেসিং টেবিল থেকে নিজের মানিব্যাগ নিয়েই ভো দৌড় দিল। মিসেস উপমা স্বামীর দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,

– এখানে হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? ইচ্ছে করে ছেলেকে পালাতে সাহায্য করেছ।

– আমি তো শাস্তি দেওয়ার জন্য ওকে নামিয়েছিলাম ও যে এভাবে পালাবে বুঝতে পারিনি।

শতাব্দী নাক টেনে বলল,
– আপনারা কেউ ভালো না আপনাদের ছেলে এত বড় অন্যায় করার পরেও কিছু বললেন না ঠিক আছে আজ ও বাসায় আসুক ওর মাথা যদি না ফাটাই দেখে নিয়েন।

মিসেস উপমা বললেন,
– তোমার সঙ্গে আমিও আছি আজ বাড়িতে আসুক।
.
.
বিকেল হয়ে গেছে কিন্তু উৎস সারাদিনে একবারও বাড়িতে আসেনি। তৌসিফের বাড়িতে গিয়ে বসে আছে, তৌসিফদের দুই রুমের একটা ফ্ল্যাট সেখানে তৌসিফ আর তৌসিফের মা থাকে দুই বছর আগে তৌসিফের বাবা মা’রা গেছেন। তৌসিফ উৎসের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,

– বস বাড়িতে কিছু হয়েছে?

– কিছু মানে! অনেক কিছু হয়েছে।

– কি বস?

– তোমাকে বললে তুমি বুঝবে না তোমার তো আর বউ নেই।

তৌসিফ মাথা নাড়িয়ে চা খাচ্ছে।উৎস বলতে লাগলো,
– তোমাকে ফ্রি তে একটা সাজেশন দেই জীবনে আর যাই কর না কেন বিয়ে কর না।

– কেন বস?

– আমার মতো বউয়ের হাতে মাইর খেতে হবে এই যে আজ নিজের বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি বউয়ের মাইরের হাত থেকে বাঁচতে নিজের আম্মুও বউয়ের সাপোর্ট নিয়েছে।

– ম্যাম আপনাকে মারে!

– না আদর করে।

তৌসিফের হাসি পাচ্ছে কিন্তু এখন হাসা নিষেধ তাই নিজের হাসি অনেক কষ্টে চাপিয়ে রেখেছে।

ইসতিয়াক আহমেদের উৎসের জন্য চিন্তা হচ্ছে তাই ছেলেকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

– কোথায় তুই?

– তৌসিফের বাড়িতে।

– আসবি কখন?

– আমার বউ আর নানুর মেয়ের রাগ কমলে।

ইসতিয়াক আহমেদ আর কিছু বলার আগেই মিসেস উপমা হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,
– পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোকে বাড়িতে দেখতে চাই, তোর বউ কান্না করতে করতে নাক মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে সকাল থেকে কিছু খায়নি দরজা আটকে বসে আছে।

উৎসের মনটা খারাপ হয়ে গেল আস্তে করে বলল,
– প্রমিস করো বাড়িতে গেলে কিছু বলবে না আমায়।

– হুম প্রমিস।

– বাবার কসম দাও এর আগেও প্রমিস করে তুমি আমার কান ধরে টেনেছিলে।

– তোর বাবার কসম কিছু বলবো না তুই আয়।

উৎস কল কেটে দিয়ে তৌসিফের মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল। ইসতিয়াক আহমেদ শুকনো ঢুক গিলে মনে মনে বললেন, ‘মা-ছেলে কথায় কথায় আমার কসম কাটে কেন?’

সারাদিন একবারের জন্যও ঘর থেকে বের হয়নি শতাব্দী ঘর অন্ধকার করে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। কান্না করতে করতে ক্লান্ত সে তবে চোখ দিয়ে এখনও পানি পড়ছে। উৎস পা টিপে টিপে হল ঘর পেরিয়ে সিঁড়ির কাছে আসলো পেছন থেকে মিসেস উপমা বললেন,

– চোরের মতো ঢুকছিস কেন?

উৎস দাঁত বের করে হেসে বলল,
– কই না তো।

মিসেস উপমা খাবারের ট্রে উৎসের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
– বউকে যেভাবে কাঁদিয়েছিস সেভাবে গিয়ে কান্না থামিয়ে খাবার খাওয়া, আহারে এমন তেজি একটা মেয়ে কি কান্নাটাই না করলো সারাদিন।

উৎস ঘরে চলে এলো, পুরো ঘর অন্ধকার ঘরের লাইট জ্বালিয়ে শতাব্দীকে উপর হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে কিছু বললো না বাথরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।

উৎস ফ্রেশ হয়ে এসে শতাব্দীর দিকে হেলে শুয়ে পড়ল তারপর বলল,
– এতদিন জানতাম উকিল সাহেবা রাগারাগী আর মারপিট করতে পারে এখন দেখছি কাঁদতেও পারে।

শতাব্দী মুখ ঘুরিয়ে নিলো।উৎস শতাব্দীর উপর দিয়েই অন্য পাশে গিয়ে শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে বলল,
– কাঁদলেও তোমায় অনেক সুন্দর লাগে বউ একেবারে বেদানা ফলের মতো।

– একদম ঢং করবেন না আমার লম্বা লম্বা চুল গুলো কেটে এখন নাটক করা হচ্ছে।

– তুমি যদি আমায় চুল দিয়ে বিরক্ত না করতে তাহলে কি আমি এমনটা করতাম জানটুস?

– চুল দিয়ে বিরক্ত করেছি বলে চুল কেটে দিয়েছেন এখন কি আমি বিরক্ত করলে আমাকেও মে’রে দিবেন?

– ছি ছি বউ এসব বলে না আচ্ছা তোমার জন্য কোরিয়ান তেল নিয়ে আসবো তারপর দেইখো তোমার চুল মাটিতে গড়াগড়ি খাবে।

– ওইসব তেল লাগবে না আমার আগের চুলগুলোই লাগবে।

– এ কি মুসিবতে পড়লাম?
___________

তিন দিন পার হয়ে গেছে সবার সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে কথা বললেও উৎসের সঙ্গে মা’রামা’রি ঝগড়া চলছেই শতাব্দীর। শতাব্দী উৎসকে শর্ত দিয়েছিল প্রতিদিন বিকেলে তার মাথায় তেল দিয়ে যত্ন সহকারে চুল বেঁধে দিতে হবে, উৎস কোনো উপায় না পেয়ে শর্তে রাজি হয়ে গেছে।

শতাব্দী ঊষার সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।ঊষা তেমন করে শতাব্দীর সঙ্গে মিশতেই চায় না মুখ দেখেই বুঝা যায় যেন বাধ্য হয়ে কথা বলছে। শতাব্দী আশা ছেড়ে দিয়ে ঘরে চলে আসলো, পশ্চিমা আকাশ লালচে রঙ ধারণ করেছে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। শতাব্দী এই দৃশ্যটা ছাদে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে ব্যস্ত, ইচ্ছে করছে চা খেতে খেতে দৃশ্যটা উপভোগ করতে কিন্তু এখন নিচে গিয়ে চা বানানোর মতো শক্তি পাচ্ছে না আলসেমি লাগছে।

শতাব্দীর পাশে উৎস এসে দাঁড়ালো এক কাপ চা শতাব্দীর দিকে এগিয়ে দিয়ে আরেক হাতে থাকা আরেকটা চায়ের কাপে চুমুক দিল। শতাব্দী উৎসকে দেখে চমকে গেল চায়ের কাপ নিজের হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

– আপনি বুঝলেন কিভাবে আমার চা খেতে ইচ্ছে হচ্ছিল?

– আমারও চা খেতে ইচ্ছে হয়েছিল তাই তোমার জন্যও বানিয়েছি আমি কিন্তু কারো মন পড়তে পারি না।

– আপনি চা বানিয়েছেন!

– হুম খেয়ে বলো তো কেমন হয়েছে?

শতাব্দী মৃদু হেসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে হাসিটা আরো প্রশস্ত করে উওর দিল,
– অনেক ভালো হয়েছে আচ্ছা কফি বানাতে পারেন?

– হুম।

– একটা কাজের কাজ শিখেছেন তবে, আপনিতো বাড়িতে ছিলেন না কখন এলেন?

– অনেকক্ষণ হয়েছে।

দু’জনের মধ্যে নিরবতা শুরু হলো, পাশাপাশি একসঙ্গে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপ হাতে সন্ধ্যা উপভোগ করছে তারা। মাগরিবের আজান দিচ্ছে শতাব্দী মাথায় কাপড় দিল, উৎস শতাব্দীর কাছ থেকে খালি চায়ের কাপ নিজের হাতে নিয়ে বলল,

– আজান হয়ে গেছে ঘরে গিয়ে নামাজ পড়ে নাও।

– আপনি পড়বেন না?

– হুম বাবার সঙ্গে মসজিদে যাব।

– আচ্ছা।
.
.
উৎস কিছুক্ষণ আগেই মসজিদ থেকে বাড়িতে ফিরেছে। ঘরে এসে সোফায় বসতেই শতাব্দী উৎসের দিকে তেল আর চিরুনি এগিয়ে দিয়ে বলল,

– তাড়াতাড়ি মাথায় তেল লাগিয়ে দিন।

– এভাবে আর কতদিন খাটাবে?

– যতদিন না আমার চুল আগের পজিশনে ফিরছে ততদিন।

উৎস মিনমিনিয়ে বলল,’আর জীবনেও এমন ভুল কাজ করবো না।’

– কি হলো নিজের কাজ করুন।

– হুম করছি।

শতাব্দী বসলো। উৎস শতাব্দীর মাথায় তেল লাগিয়ে দিয়ে বেনুনী করে দিল বেনুনী দেখতে বেনুনীর মতো না হলেও উৎসকে জব্দ করতে পেরেছে ভেবেই শতাব্দী অনেক খুশি। উৎস অসহায় কন্ঠে বলল,

– আর কিছু?

– না এখন আপনার ছুটি।

– উফ শান্তি।

শতাব্দী মুচকি হেসে উঠে যাচ্ছিল তখনি উৎস বলল,
– আসিফ ইসলাম নামক ব্যক্তিটির ছবি তো দেখালে না?

– আমার কাছে ছবি নেই বললাম তো।

– তোমার এসিস্ট্যান্টের কাছে আছে নাকি জিজ্ঞেস করো।

– এটা তো মাথাতেই আসেনি দাঁড়ান আয়মানকে কল করি।

শতাব্দী আয়মানকে কল করে কয়েক সেকেন্ড কথা বলে উৎসের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
– আয়মানের কাছে আছে এখনি পাঠাবে বলেছে।

কিছুক্ষণ পর শতাব্দীর হুয়াটসএপে একটা ছবি আসলো। শতাব্দী ছবিটা উৎসের দিকে ধরে বলল,

– ইনি হচ্ছেন আসিফ ইসলাম।

ছবিটি দেখে উৎসের মুখটা আপনাআপনি গম্ভীর হয়ে গেল। শতাব্দী জিজ্ঞেস করল,
– চিনেন একে?

উৎস খাপছাড়া ভাবে উওর দিল,
– চিনি না।

চলবে………

[শ্বাশুড়িকে শ্বাশুড়ি বলে সম্বোধন করলে বেয়াদবি বলা হয় এটা আবার কোন লজিক? গল্পটায় শ্বাশুড়ি বউমার সম্পর্কটা দুষ্টু মিষ্টি সম্পর্ক আকারে রূপ দিতে চেয়েছি নেগেটিভলি ভেবে কিছু লিখিনি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here