প্রণয়ের_ঢেউ (২য় খন্ড) #Part_03

0
812

#প্রণয়ের_ঢেউ (২য় খন্ড)
#Part_03
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

বিয়ের অনুষ্ঠানটা ভালোয় ভালোয় কেটে গেলেও বিপত্তি ঘটলো নতুন বউকে ঘরে তুলার পর। নুরিকে ঘরে তুলার ঘন্টাখানিক বাদেই অরণ্য নিখোঁজ। কোথায় বা কখন সে বাসা থেকে বের হয়েছে জানা নেই কারোই। শতবার করেও লাভ হয়নি তাকে কেন না ফোন বন্ধ৷ প্রথম ঘন্টা সকলে অরণ্যের প্রতিক্ষা করলেও পর ঘন্টাতেই দিহান ও অরণ্যের কিছু সংখ্যক বন্ধু অরণ্যের খোঁজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। শত জায়গা খুঁজেও যখন অরণ্যের খোঁজ পাওয়া গেল না তখন তারা আশাহত হয়ে বাসায় ফিরে আসলো। আঁধারের প্রগাঢ়তা বৃদ্ধি পেতেই অরণ্যের বন্ধুরা বাড়ি চলে যায়। শুধু থেকে যায় দ্যুতির পরিবারের সকলেই, অপেক্ষা করে অরণ্যের ফিরে আসার।

রাত তখন তিনটা ছুঁই ছুঁই। চারদিকে পিনপতন নিস্তব্ধতা। সকলেই থমথম মুখে বসে আছে অরণ্যের বাসার ড্রয়িংরুমে। কপালে তাদের চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠেছে স্পষ্টভাবে। দৃষ্টিতে রয়েছে বিমর্ষতা। সকলেই এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে যে মাথা তুলে তাকাতেও বিব্রতবোধ করছে৷ বাসায় মেহমানের তেমন আনাগোনা ছিল না বলে বিষয়টা চাপা পড়ে। নাহলে হয়তো কাউকে মুখ দেখানোর মত পরিস্থিতিই থাকতো না কারোই। ঘরের ছেলে এমন করবে তা হয়তো কেউ কল্পনায়ও ভাবতে পারেনি। তাই তো ধাক্কাটা বেশ জোরেই লেগেছে।
দ্যুতি ড্রয়িংরুমের এক কোনে উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে আছে সকলের পানে। অরণ্যের এইভাবে নিখোঁজ হওয়াটা হজম করতে পারছে না। বিষয়টার গতিবেগ বুঝতে সময় লাগছে তার। এমন এক বিশ্রী অবস্থার সম্মুখে আদৌ কি করা উচিৎ দ্যুতির জানা নেই। কিন্তু বিষয়টা এইভাবে হেলায়ও ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না। দ্যুতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিহানের কাছে এগিয়ে যায়। দিহানের সাহায্য নিয়ে সে শাখাওয়াত সাহেব, শাহিদা বেগম ও রুহুল সাহেবকে কিছু খায়িয়ে দেয়। দ্যুতি জোর করেই শাখাওয়াত সাহেবকে তার মেডিসিনগুলো খায়িয়ে রুমে দিয়ে আসে বিশ্রাম করার জন্য। সেই সাথে তাকে আশ্বস্ত করে, “অরণ্য ভাইয়া চলে আসবে নে। তুমি এত চিন্তা না করে একটু ঘুমাও। বিশ্রাম প্রয়োজন তোমার।” শাখাওয়াত সাহেবের মন এইভাবেই বিষিয়ে ছিল তাই তিনি দ্যুতির সাথে কোন প্রকার কথা বারিয়ে শুয়ে পড়ে। দ্যুতি রুমের লাইট অফ করে বেরিয়ে আসে। অতঃপর বাহিরে এসে সে দিহানকে শাহিদা বেগম আর রুহুল সাহেবকে বাসায় নিয়ে যেতে বলে আর জানায়, সে নুরিকে খাবার দিয়ে আসছে। সকলে তাতে সম্মতি জানিয়ে চলে যেতেই দ্যুতি অগ্রসর হয় রান্নাঘরের দিকে। একটি থালিতে খাবার সাজিয়ে চলে যায় অরণ্যের রুমে।

অরণ্যের রুমে সামনে এসে দাঁড়াতেই দ্যুতির হৃদয়ে অসহ্যনীয় ব্যথা শুরু হয়ে যায়। মনটা হু হু করে উঠলো মুহূর্তেই। জড়তা কাজ করলো রুমের ভিতরে যেতে। নক করার প্রয়োজনবোধ করলো বেশ। হঠাৎ এমন কেন হলো তার সাথে সে জানে। আগে তো নির্বিঘ্নে সে এই রুমে যাওয়া আসা করেছে। মাঝে মধ্যে অনুমতি ছাড়াও ঢুকে পড়েছে তাহলে আজ এই রুমে প্রবেশ করতে তার এত দ্বিধাদ্বন্দ্ব কেন? আজ থেকে এই রুমটা একার অরণ্যের নেই বলেই কি? বিষয়টা স্পষ্ট জানা নেই দ্যুতির। আর আপাতত সে জানতে ইচ্ছুকও না। দ্যুতি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মুখে কিঞ্চিৎ মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে ভিজিয়ে রাখা দরজায় টোকা দেয়। অপর পাশ থেকে মূহুর্তেই ভেসে আসে ‘কে?’ বাক্যটি। দ্যুতি মৃদুস্বরে একবার ‘আপু আমি’ বলতে নিয়েও থেমে যায় সে। নুরি তো এখন আর তার আপু নেই, এখন তো সে তার ভাবী। কথাটা আনমনে আওড়াতেই কন্ঠস্বর কেঁপে উঠে তার। বিষিয়ে যায় হৃদয়টি। কান্নারা দলা পাকিয়ে আসে কণ্ঠনালীর মধ্যভাগে। পুনরায় অপরপাশ থেকে ‘কে?’ প্রশ্নটি ভেসে আসতেই দ্যুতি কোনমতে চাপা কন্ঠে বলে উঠে,

— ভাবী আমি দ্যুতি।

অপরপাশ থেকে নুরি বলে উঠে,

— দরজা খোলাই, ভিতরে এসে পড়।

দ্যুতি লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে দরজা খুলে ঢুকে পরে রুমে। রুমে ঢুকার পরমুহূর্তেই একবার চারদিকে নজর বুলায় সে। রুমটা সেই আগের মতই সাদামাটা। কৃত্রিমতা নেই কোন। অবশ্য তা অরণ্যের কথায়। সে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল তার রুমে যদি কেউ আসে বা রুমটা কিঞ্চিৎ পরিমানও সাজায় তাহলে এর পরিমাণ অনেক খারাপ হবে। অরণ্যের ক্রোধান্ধ দেখে শাখাওয়াত সাহেবও সবাইকে নিষেধ করে দেন ফুলসজ্জার জন্য অরণ্যের রুম সাজাতে। তাই কেউ আর চেষ্টাও করেনি।
দ্যুতি এইবার বিছানার তাকাতে দেখতে পায় বিছানার উপর নুরি হাটু মুড়ে মাথা নুয়ে বসে আছে। গায়ে তার এখনো বিয়ের শাড়ি ও গহনা। দ্যুতি নুরির পানে এক দৃষ্টিতে তাকায়। এক সময় এই রুমের মাঝে নিজেকে বধু অবস্থায় কল্পনা করেছিল সে। কিন্তু সেই রুমে বসে আছে অন্য কেউ। তার অরণ্যের উপর আজ তার অধিকার নেই। আছে অন্য এক নারীর অধিকার। কথাটা ভাবতেই কষ্ট দ্বিগুণ বেগে হানা দেয় মনের মাঝে। ক্ষণেই বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘনিশ্বাস। দ্যুতি কোনমতে বলে উঠে,

— ভাবী ফ্রেশ হয়ে এই খাবারটুকু খেয়ে নিও কেমন? আমি এইখানে রেখে যাচ্ছি প্লেটটা।

নুরি এইবার মুখ তুলে তাকায় দ্যুতির পানে। দ্যুতি এইবার নুরির মুখ দেখে কিছুটা মূর্ছা যায়। নুরির মুখে-চোখে ছেয়ে আছে মলিনতা। ভারী পল্লবে জমে আছে মুত্তার ন্যায় অশ্রুকণা। চোখের নিচের কাজলটুকু লেপ্টে গিয়েছে বিশ্রীভাবে। নুরির এমন অবস্থা দেখে দ্যুতির খারাপ লাগলো বেশ। বিয়ের প্রথম রাতেই নিজের স্বামী নিখোঁজ হওয়াটা একটা মেয়ের জন্য কতটা অপ্রীতিকর ও অপমানকর তা ভাষায় হয়তো প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সকল মেয়েরই নিজের বিয়ের প্রথম রাত কত শত স্বপ্ন থাকে, নুরির হয়তো ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় দ্যুতি ও অরণ্যের পাশাপাশি হয়তো নুরির আশাও পূরণ হওয়ার ছিল না। কিন্তু এইখানে নুরির দোষটা কোথায়? সে তো নির্দোষ তাহলে সে কেন কষ্ট পাচ্ছে এইভাবে? তার ভাগ্যে কি আদৌ এই কষ্টটুকু লিখা ছিল? হয়তো হ্যাঁ আবার হয়তো না। স্পষ্ট কোন উত্তর নেই দ্যুতির কাছে। নুরিকে সান্ত্বনা দেওয়ার মত কিছু পাচ্ছে না দ্যুতি। যে নিজেই কষ্টের সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে সে আর কি সান্ত্বনা দিবে অন্যকে? দ্যুতিকে চুপ থাকতে দেখে নুরি বলে উঠে,

— তুমি কি জানো অরণ্য কোথায়?

কথা শুনে দ্যুতি না বোধক মাথা নাড়িয়ে বলে,

— জানি না।

নুরি আর কিছু বলে মাথা নুয়ে ফেলে। নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেঝেতে। দ্যুতি তা দেখে মৃদুস্বরে বলে,

— তুমি চিন্তা করো না আপু ভাইয়া এসে পড়বে। তুমি প্লিজ কেঁদো না। ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও।

নুরি স্বগোতক্তি কন্ঠে বলে,

— আচ্ছা।

দ্যুতি কথার পৃষ্ঠে বলার মত কিছু পেল না তাই ‘আসছি’ বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো সে।আর এক মূহুর্ত বিলম্ব না করে চলে গেল নিজের বাসায়। নিজের রুমে এসে দরজা ভিজিয়ে দেয় সে। চ্যাপ্টা হয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়, আঁখিদুটি বন্ধ করতেই নিভৃতেই গড়িয়ে পড়ে অশ্রুকণা।
ভাগ্য কেন এত বিশ্রী একটা খেলা খেললো তাদের সাথে? কেন এইভাবে কষ্টে ফেললো তিন তিনটে জীবনকে? গল্পটা এত বিষাদময় না হয়ে, উচ্ছাসে কি পরিপূর্ণ হতে পারতো না? জীবনের হিসাব খাতায় সবটাই কি প্রাপ্তিতে পরিপূর্ণ হতে পারতো না?

_________________

অরণ্যের খোঁজ মিললো পরের দিন। সকাল আটটার নাগাদ নিজ থেকেই বাসায় ফিরেছে সে। বাসায় আসার পরমুহূর্তেই শাখাওয়াত সাহেব গর্জে উঠে অরণ্যের উপর। ক্ষিপ্ত কন্ঠে অরণ্যকে শাসাতে থাকেন তিনি। কিন্তু তাতে অরণ্যের মাঝে কোন ভাবান্তর দেখা দিল না। সে নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে শাখাওয়াত সাহেবের সকল কথা শুনছে। টু শব্দ পর্যন্ত করছে না সে। ছেলের এমন গা ছাড়া শাখাওয়াত সাহেব আরও ক্ষিপ্ত হলেন কিন্তু বললেন না কিছুই। অরণ্য তখন কিছু না বলে চলে যায় নিজের রুমে। নিজের রুমে নুরিকে দেখেও অরণ্য না দেখার ভাণ করলো। কাবার্ড থেকে নিজের কাপড়-চোপড় নিয়ে ঢুকে পড়লো ওয়াশরুমে। নুরি অরণ্যের ব্যবহারে আশাহত হলেও কিছু বললো না। চুপচাপ বেরিয়ে গেল রুমটি থেকে৷ অরণ্য ওয়াশরুম থেকে একবারে অফিসের পোশাক পড়েই বের হলো। অফিসের ফাইলপত্র গুছিয়ে রুম থেকে বের হলো। ড্রয়িংরুম দিয়ে যাওয়ার সময় শাখাওয়াত সাহেব অরণ্যকে অফিসের পোশাকে দেখে অবাকই হলেন। সে গলা খেঁকিয়ে জিজ্ঞেস করেন,

— কোথায় যাচ্ছ তুমি?

অরণ্য এক মূহুর্তের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,

— অফিসে।

শাখাওয়াত সাহেব বিস্মিত কন্ঠে বলে,

— বিয়ের পরের দিনই কিসের অফিস? তোমাকে না আমি এক সপ্তাহের ছুটি নিতে বলেছিলাম? তাহলে?

— বিয়ে তো হয়েই গিয়েছে আর ছুটি দিয়ে কাজ কি?

শাখাওয়াত সাহেব ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে,

— অনেক কাজ আছে আর তুমি কোন অফিস টফিস যাচ্ছ না।

অরণ্য শ্লেষের হাসি হেসে বলে,

— শ্বাসটাকেও নাহয় বলে দাও বন্ধ হয়ে যেতে। আমিও বাঁচি, তুমিও বাঁচো। আসছি!

কথাটা বলে অরণ্য আর এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। শাখাওয়াত সাহেব সেদিকে বিমর্ষচিত্তে তাকান। রান্নাঘরের মুখে দাঁড়িয়ে নুরিও সবটাই লক্ষ্য করলো। অরণ্য যে বিয়েতে রাজি ছিল না তা বুঝতে নুরির আর দেরি নেই। অরণ্যের কথার ভঙ্গিমা আর অনিহাই প্রমাণ কথাটির।

_____________

সিড়ির কাছে আসতেই দ্যুতির দেখা হয় অরণ্যের সাথে৷ অরণ্যকে ফরমাল ড্রেসাপে দেখে দ্যুতি কিঞ্চিৎ অবাক হলেও মুখে তা প্রকাশ করলো না। দ্যুতি অরণ্যের চোখে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায় তাদের। দৃষ্টি দুইজনেরই বিষাদে পরিপূর্ণ। দ্যুতি ক্ষণেই নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে তাকায় মেঝের দিকে। তা দেখে অরণ্য দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে দ্যুতির দিকে তাকিয়ে বলে,

— এইখানে কেন তুই?

দ্যুতি মেঝের দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করে,

— রাতে কোথায় ছিলেন ভাইয়া?

— ছিলাম যেখানেই, তা জেনে তোর কাজ কি?

দ্যুতি একপলক অরণ্যের দিকে তাকিয়ে বলে,

— এইভাবে হারিয়ে যাওয়া কি ঠিক ছিল? নুরি আপু তো কোন দোষ করে নি, তাকে এইভাবে অপ্রীতিকর এক অবস্থায় কি ফেলা ঠিক ছিল?

— আর ভাগ্য যে আমাদের এমন অপ্রীতিকর অবস্থায় ফেলে দিল তার বেলায় কি? দোষ নাও করেও তো ভুগছি আমরা।

দ্যুতি স্বগোতক্তি কন্ঠে বলে,

— আমাদের কথা আলাদা ভাইয়া। সেটা নিয়ে এখন কথা না বলাই শ্রেয়। বাদ বাকি, বিয়েটা যেহেতু হয়ে গিয়েছে সেহেতু সম্পর্কটা যত তাড়াতাড়ি মেনে নিবেন ততই ভালো। নুরি আপুকে এইভাবে কষ্ট দেওয়ার মানে হয়না।

অরণ্য এক কদম দ্যুতির দিকে এগিয়ে এসে বলে,

— তা না হয় করলাম কিন্তু, তুই পারবি সহ্য করতে আমার বুকে অন্য কাউকে? অন্যের মাঝে আমার অস্তিত্বকে বিলীন হতে? তোর নামে লিখা সোহাগ সব অন্যের হতে?

দ্যুতি সাথে সাথে নিজের কান চেপে ধরে। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠে,

— চুপ! একদম চুপ! আপনার থেকে আমি আর কিছুই শুনতে চাই না। নির্লজ্জ বেহায়া আপনি আগেও ছিলেন, এখনো আছেন। আমাকে না পোড়ালে আপনার হয় না, না?

অরণ্য তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,

— নিজে যেহেতু এইসব সহ্য করতে পারবি না সেহেতু আসিস কেন বলতে আমায় এইসব? ভাল্লাগে আমাকে দহনে নিঃস্ব করতে? যদি এমনই হয় তাহলে কান খুলে শুনে রাখ, আমাকে নিঃস্ব করতে আসলে আমার সাথে তুইও নিঃস্ব হবি। তাও তীব্রভাবে।

দ্যুতি কিছু না চুপ করে থাকে। শীতল দৃষ্টিতে তাকায় মেঝের দিকে। দ্যুতির নীরবতা দেখে অরণ্য স্বগতোক্তি কন্ঠে বলে উঠে,

— দূরে আছিস, দূরেই থাক না। নিজের ক্যারিয়ার আর জীবনে ফোকাস কর, আমার জীবন নিয়ে তোর না ভাবলেও চলবে। ভালো থাক নিজের মত।

কথাটা বলেই অরণ্য গটগট করে চলে। ফেলে যায় পিছনে দ্যুতিকে দহনের মাঝে। নিকৃষ্ট এক অনুভূতির অন্তঃস্থলে।

________________

সময়চক্রের কাটা ছুটে চলেছে আপন গতিতে। দিনকে পেরিয়ে সপ্তাহে তার আনাগোনা চলছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে হয়তো মাসেও আনাগোনা শুরু হয়ে যাবে তার। বেড়ে যাবে আষাঢ় মাসের প্রখরতা। দ্যুতি জানালার ধারে বসে আনমনে তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে৷ বাহিরের আকাশের মত তার মনেও ছেয়ে আছে বিষন্নতা। কয়েকদিন যাবৎ ধরে নিজেকে রুমে বন্দি করে রেখেছে দ্যুতি। খাওয়া-দাওয়া ব্যতীত বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকেই বের হয় না সে। সারাদিন এইভাবেই বসে, শুয়ে, আনমনে ভাবতে ভাবতেই চলে যায়। কয়েকদিন ধরে সে অন্যের চেয়ে নিজেকে নিয়েই বেশি ভাবছে। নিজের লাইফ, ক্যারিয়ার নিয়ে৷ কিন্তু ঠিক কোন নির্দেশনা পাচ্ছে না বলে লক্ষ্য স্থির করতে পারছিল না। অবশেষে সে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে জানে, তার জন্যই এই সিদ্ধান্তটাই বেস্ট কিন্তু সেটা কে কিভাবে নিবে তাই নিয়েই বেশ চিন্তিত। হঠাৎ শাহিদা বেগমের ডাক পড়তেই দ্যুতি আপন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। রাতের খাবারের সময় হয়ে গিয়েছে বলেই শাহিদা বেগম ডাকছেন। দ্যুতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যায় খাবারের টেবিলে।

টেবিলে এসে দেখে আগে থেকেই সকলে বসে আছে। শুধু তারই প্রতিক্ষায় এখনো খাওয়া শুরু করেনি। দ্যুতি স্মিত হেসে কিছু না বলে চুপচাপ খেতে বসে পড়ে।
খাওয়া-দাওয়ার শেষ পর্যায়ে রুহুল সাহেব দ্যুতিকে বলে উঠেন,

— নিজের লাইফ নিয়ে কি করবে কিছু ভেবেছ? এইচএসসি দিলে তো একমাস হয়ে আসতে চললো, কোন কোচিং-টোচিং করবে না নাকি?

পাশ থেকে শাহিদা বেগম বলে উঠেন,

— কয়েকদিন ধরে দেখছি রুম ছেড়ে বেরই হয়না। সারাদিন রুমে বসে কি করে কে জানে? তুমিই বলো এমন হেলা করলে মেডিক্যাল বা পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাবে ও? আমি আগেই বলে দিচ্ছি ওকে কিন্তু আমি বেসরকারিতে পড়াব না। মেডিকেল বা পাবলিকে চান্স পেলে সোজা ধরে বিয়ে দিয়ে দিব।

রুহুল সাহেব তীক্ষ্ণ কন্ঠেই বললেন,

— তুমি চুপ থাকো তো। আমাকে কথা বলতে দাও।

অতঃপর রুহুল সাহেব দ্যুতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন,

— কি মামনী কথা বল। কি করতে চাও তুমি লাইফে? নেক্সট প্ল্যান কি?

দ্যুতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

— বাবা আমি দেশে না বরং দেশের বাহিরে যেতে চাই পড়ালেখা করার জন্য।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here