প্রণয়ের_ঢেউ (২য় খন্ড) #Part_04

0
840

#প্রণয়ের_ঢেউ (২য় খন্ড)
#Part_04
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

— বাবা আমি দেশে না বরং দেশের বাহিরে যেতে চাই পড়ালেখা করার জন্য।

দ্যুতির কথা সকলের কর্ণগোচর হতেই বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দ্যুতির মুখপানে। সকলের দৃষ্টি দ্যুতিতে নিবদ্ধ হতে সে নড়েচড়ে উঠে। অস্বস্তিবোধ করে খানিকটা। দ্যুতি একপলক সকলের দিকে তাকিয়ে মাথা নুইয়ে ফেলে। রুহুল সাহেব গলা খেঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

— বাহিরে গিয়ে পড়তে চাও মানে কি? আগে তো বলো নি?

শাহিদা বেগম স্বগোতক্তি কন্ঠে বলে উঠে,

— দেশের ভিতরে কি ভালো ভার্সিটি,মেডিক্যাল নেই যে তুই দেশের বাহিরে যেতে চাস? বাহিরে এমন কি আছে যে দেশে নি? আর তুই ভাবলিও কি করে তোকে আমরা একা দেশের বাহিরে যেতেও দিব?

রুহুল সাহেব তার স্ত্রীকে শান্ত হতে বলে বলেন,

— আমি কথা বলছি তো নাকি? মেয়ে কি বলতে চায় আগে শুনো না-হয়। আগেই হাইপার হচ্ছো কেন?

অতঃপর তিনি দ্যুতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন,

— তুমি বল, হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে কারণ কি মামনী?

দ্যুতি মৃদুস্বরে বলে,

— বিশেষ তেমন কোন কারণ নেই বাবা। আমারই অনেকদিনের ইচ্ছা বাহিরে গিয়ে পড়ালেখা করার। কিন্তু কখনো তা বলার সাহস হয়নি বলে, বলা হয়নি।

দিহান এইবার দ্যুতিকে ব্যঙ্গ করে বলে উঠে,

— তো এখন বলছিস কিভাবে? হরলিক্স খেয়ে সাহস বাড়িয়েছিস নাকি?

দ্যুতি কটমট দৃষ্টিতে দিহানের দিকে তাকাতেই দিহান গা জ্বলানো একটা হাসি উপহার দেয়। যা দেখে দ্যুতি ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে উঠে,

— তোকে কেউ কিছু বলতে বলেছে? নিজের লেম জোকস নিজের কাছেই রাখ। ইডিয়ট!

দিহান ভেঙচি মেরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুহুল সাহেব দিহানকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেন।অতঃপর দ্যুতির দিকে তাকিয়ে বলে,

— তুমি ভেবে চিন্তে বলছো তো? দেখো বাইরে গিয়ে পড়ালেখা করা এতটা সহজ না। আর তুমি একা মেয়ে হয়ে পরিবার থেকে দূরে গিয়ে থাকবে কিভাবে? আদৌ থাকতে পারবে?

— আমি সব বুঝে শুনেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাবা। আমি পারবো সব।

শাহিদা বেগম এইবার তেতে উঠে বলেন,

— তুই ভাবলিও কি করে তুই বলবি আর তোকে আমরা বাইরে পাঠিয়ে দিব? এতই সহজ? তোকে আমি এক মূহুর্ত নিজের দৃষ্টির আড়াল করতে রাজি না সেখানে তোকে বিদেশ যেতে দেওয়া তো দূরের কথা।

দ্যুতি স্বগোতক্তি কন্ঠে বলে,

— সমস্যা কোথায়? আমি কি বিদেশ গিয়ে পড়ালেখা করতে পারি না? আমার কি ইচ্ছা থাকতে পারে না? আমি তো বলছি আমি সব বুঝে শুনেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ঠিক সামলে নিব সব।

রুহুল সাহেব আশ্বস্ত স্বরে বলেন,

— অবশ্যই তোমার ইচ্ছা থাকতে পারে। কিন্তু মামনী, তোমারও বুঝতে হবে তুমি আমাদের একমাত্র মেয়ে৷ তোমার প্রতি আমাদের চিন্তা একটু বেশি৷ তোমাকে হয়তো আমরা ঢাকার বাইরেই একা ছাড়তে সাচ্ছন্দ্যবোধ করবো না সেখানে ভিনদেশ তো পরের কথা।

— আমি বুঝতে পারছি বাবা। তোমাদের চিন্তা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু আমার ইচ্ছার কথাটাও ভাবো একটু।

রুহুল সাহেব স্মিত হেসে বলেন,

— তোমার কি দেশে থেকে মেডিক্যাল বা পাবলিকে পড়তে কোন সমস্যা?

দ্যুতি মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে উঠে,

— সমস্যা না বাবা কিন্তু মন টানে না। আমার তীব্র ইচ্ছা বাহিরে গিয়ে পড়ালেখা করার। তাই আমি চাই তোমরা আমার ইচ্ছাটার মান রাখো।

রুহুল সাহেব চোখ ছোট ছোট করে বলেন,

— তুমি কি মন স্থির করে ফেলেছ?

দ্যুতি হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বলে,

— হ্যাঁ।

রুহুল সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,

— আচ্ছা আমি ভেবে দেখবো নে।

রুহুল সাহেবের কথা শুনে শাহিদা বেগম তিক্ত স্বরে বলে উঠেন,

— তুমিও ওর সুরে তাল মিলাচ্ছো? আস্কারা দিচ্ছ? একটা কথা বুঝে রেখ দিহানের বাবা, আমি কিন্তু আমার মেয়েকে কোন ভাবেই একা এক অচেনা দেশে ছাড়বো না। যত যাই হোক। ওর যত পড়ালেখা ও দেশে থেকেই করুক না, ভিনদেশ কেন যেতে হবে?

রুহুল সাহেব বিরক্তিকর কন্ঠে বলেন,

— তুমি চুপ করবে?

— হ্যাঁ! হ্যাঁ! আমাকেই চুপ করাও তোমরা। এই সংসারে তো আমার দামই নেই। আমি কে হ্যাঁ? কেউ না তো। আবর্জনা হয়ে শুধু পড়ে আছি।

এই বলে শাহিদা কেমন ন্যাকা কান্না জুড়ে দিলেন। সকলে শাহিদা বেগমের এমন ব্যবহারে বেশ বিরক্তবোধ করলো। তাই কেউ বেশি একটা কথা না বলে, খাবারটুকু শেষ করে একেক করে উঠে পড়লো। আপাতত এইখানে থাকাই বিপদ।

_____________

ঝিরিঝিরি বৃষ্টির কলধ্বনিতে মাতোয়ারা পরিবেশ। মেঘের মৃদু মৃদু ডাক ঝংকার তুলছে কর্ণকুহরে। ভেজা মাটির সুবাস চারদিকে ছড়াতেই দ্যুতি প্রতি নিঃশ্বাসে তা ভরে নেয় অন্তরে। দখিনা বাতাসের সাথে বৃষ্টির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা মিশে দ্যুতির চোখে মুখে পরশ বুলাতেই দ্যুতি আঁখি দুটি কপাট বন্ধ করে ফেলে। বারান্দার রেলিংটা শক্ত করে ধরে মুখটা আরেকটু বাড়িয়ে দেয় শূন্যে। অনুভব করতে থাকে পরিবেশে শীতলতা। নিজের কষ্টগুলো মুড়িয়ে রাখছে বন্ধ সিন্দুকের অন্তঃস্থলে। হঠাৎ বৃষ্টির মধুর শব্দে পেরিয়ে কৃত্রিম শব্দের কর্কশতা কর্ণকুহরে বারি খেতেই দ্যুতি সচকিত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকায়। ল্যাম্পপোস্টের হলদেটে আলোয় অরণ্যের মুখশ্রী দেখে দৃষ্টি স্থির হয়ে আসে তার। গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিতে দিতেই প্রায় অর্ধেক ভিজে গিয়েছে সে। চুলগুলো থেকে চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে হিম মুক্তকণা। অরণ্য ভাড়া চুকিয়ে গেটে সামনে এসে চুলগুলো হাত দিয়ে ঝেড়ে নিয়ে অভ্যাসবশত দ্যুতির বারান্দার দিকে তাকায়। আঁধারের মাঝেই সেখানে কারো দৃঢ় অবয়ব দেখে অরণ্যের দৃষ্টি ছেয়ে যায় শীতলতায়। বেড়ে যায় কাউকে দেখার তীব্র আকাঙ্খা। দ্যুতিও নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অরণ্যের পানে। নিভৃতেই মিটাতে তাকে নিজের মনের তৃষ্ণা। ঘোর লাগা পরিবেশে সুপ্তি চাহনির আদান-প্রদানে কয়েক প্রহর হয়তো এভাবেই অতিবাহিত হয়ে যায়। হঠাৎ শীতলতা প্রখরতা বৃদ্ধি পেতেই অরণ্য হাঁচি দিয়ে উঠে। ভেঙে যায় দুইজনের ঘোর৷ দ্যুতি দ্রুত সরে আসে বারান্দা থেকে। অরণ্যও দ্যুতির অস্তিত্ব বিলীন হতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঢুকে পড়ে গেটের ভিতর। অরণ্য বাসার ভিতর ঢুকে যেতেই দ্যুতি দরজার কাছ থেকেই উঁকি মারে নিচে। অরণ্যকে না দেখতে পেয়ে মনের অজান্তেই আশাহত হয় সে। কেন হয় জানে না সে৷ একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেয়াল ঘড়িটার দিকে নজর বুলালো সে। রাত প্রায় একটা ছুঁইছুঁই। মানুষটা মাত্র অফিস থেকে ফিরলো কথাটা ভাবতেই দ্যুতি অভিঘানিত হলো। যে মানুষটা আগে আটটার মধ্যে বাসায় উপস্থিত থাকতো আজ তার রাতের প্রখরতা তীব্র না হওয়া পর্যন্ত খোঁজই পাওয়া যায় না। এতটাই কেন অবিন্যস্ত হয়ে উঠেছে তার জীবন? হঠাৎ গালের পাশটায় তপ্ত তরল কিছুর স্পর্শ পেতেই চমকে উঠে দ্যুতি। আলতো হাতে গাল ছুঁয়ে দিতে বুঝতে পারে এর উৎস কোথা থেকে। শ্লেষের হাসি সে নিজের দিকে তাকায়। এতক্ষণ বারান্দায় থাকার কারণে শরীরের অর্ধাংশই ভিজে গিয়েছে তার। যার দরুন, শরীরের উষ্ণতা নিভে গিয়ে কাঁপন ধরেছে সর্বাঙ্গে। ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন বলে সে চলে যায় ওয়াশরুমে।

________________

অরণ্য বাসায় এসে কলিংবেল বাজাতেই নুরি এসে দরজা খুলে দেয়। অরণ্য নুরিকে দেখেও না দেখার ভাণ করে সোজা চলে যায় নিজের রুমে। অফিসের ব্যাগটা স্টাডি টেবিলের উপর রেখে চলে যায় কাবার্ডের কাছে। কাবার্ড থেকে এক সেট কাপড় বের করে ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হয়। ঠিক সে সময় পিছন থেকে নুরি মিইয়ে যাওয়া স্বরে বলে উঠে,

— তুমি না-হয় একটু দাঁড়াও আমি গরম পানি করে নিয়ে আসছি৷ এত রাতে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল শরীর খারাপ করবে তোমার।

অরণ্য ঘাড় ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠে,

— আমার কথা আমি কাউকে ভাবতে বলি নি। আমার ভালো আমি নিজেই বুঝি। সো স্টে আউট অফ ইট। বোন ছিলি, বোনের মতই থাক বউ হতে আসবি না আমার।

কথা বলেই অরণ্য ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে এবং সশব্দে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। শব্দটা এত প্রখর ছিল যে নুরি কেঁপে উঠে৷ অভিঘানিত চোখে তাকিয়ে থাকে দরজার পানে। তাদের সম্পর্কটা এখনো সেই ভাই-বোনের মতই রয়ে গিয়েছে। কোন পরিবর্তন আসেনি। চাইলেও কেউ এই সম্পর্কে সহজ পারছে না। নুরিও বিষয়টা খানিকটা মেনে নিয়েছে। কেন না, বিয়েটা যে তারও কাম্য ছিল না৷ সে জানে অরণ্য এখনো বিয়েটা মেনে নেয় নি কিন্তু তাও অরণ্যের এমন ব্যবহারে তার কোথাও একটা চাপা কষ্ট অনুভব হয়। যা দিন যাওয়ার সাথে সাথে তীব্র হয়ে আসছে।
হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে নুরি আপন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। একপলক তাকায় অরণ্যের দিকে। অরণ্য এদিক সেদিক না তাকিয়ে বারান্দায় তোয়ালেটা মেলে দিয়ে সোজা বিছানায় এসে একটা কাঁথা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে এক কিনারে শুয়ে পড়ে। নুরি সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আজও অরণ্য না খেয়েই শুয়ে পড়েছে।

______________

দ্যুতি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই দরজায় টোকা পড়ে। দ্যুতি তোয়ালেটা স্টাডি টেবিলের উপর রেখে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজা খুলতেই সে দিহানকে দেখতে পায়। এই অসময়ে দিহানকে নিজের রুমে দেখে দ্যুতি একটু চমকালো বটে। কিন্তু মুখে প্রকাশ করলো। দরজাটা খুলে সরে আসলো সে, স্টাডি টেবিলের উপর থেকে তোয়ালেটা নিয়ে ভেজা চুলের মাঝে ডুবিয়ে দিল। দিহান বিছানার উপর আয়েশ করে বসে বলে,

— কি রে পেত্নি এত রাতে গোসল করলি যে? আজ তাপমাত্রা বেশি হট নাকি?

দ্যুতি দিহানের কথায় তেমন কান না দিয়ে বলে,

— বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম এতক্ষন, তাই গোসল করলাম।

— তা মা জানে?

দ্যুতি অকপট রাগ দেখিয়ে বলে,

— এত রাতে ফাজলামো করতে এসেছিস আমার রুমে? কেন এসেছিস তা বলে বিদায় হো।

দিহান দ্রুত বিছানা থেকে উঠে দ্যুতির কাছে এসে তার কান মলা দিয়ে বলে,

— আমাকে বের হতে বলিস সাহস তো কম না। দিন দিন আস্ত বেদ্দব হচ্ছিস।

দ্যুতি ব্যথাতুর স্বরে বলে,

— আহা ভাইয়া ছাড় ব্যথা পাচ্ছি।

দিহান দ্যুতিকে ছেড়ে দিতেই দ্যুতি ছিটকে সরে দাঁড়ায়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই দিহান বিপরীতে শীতল দৃষ্টিতে তাকায়। মৃদুস্বরে বলে,

— তুই কি সত্যি বিদেশ গিয়ে পড়ালেখা করতে চাস? নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত তো তুই?

দিহানের কথায় দ্যুতির রাগ নিভে যায়। কিছুটা সময় নীরব থেকে সোজা স্বীকারোক্তি করে সে,

— হ্যাঁ ভাইয়া আমি নিশ্চিত। আমি সত্যি বাইরে গিয়ে নিজের পড়ালেখা কমপ্লিট করতে চাই।

দিহান সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

— এই মনোবল ওপার দেশে গিয়ে অটল থাকবে তো? মাঝপথে সব ছেড়ে-ছুড়ে আবার চলে আসবি না তো? ভিনদেশে গিয়ে পড়া কিন্তু এত সহজ না।

দ্যুতি আশ্বস্ত কন্ঠে বলে,

— এমন হবে না। আমি ঠিক সবটা মানিয়ে নিব।

— এইটাই তোর শেষ কথা?

— হু।

দিহান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

— আচ্ছা। আমি বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে দেখবো নে। তাদের রাজি করানোর দায়িত্ব এখন আমার, তুই প্যারা নিস না।

দ্যুতি বিস্মিত নয়নে দিহানের দিকে তাকায়। দিহান কখনোই দ্যুতির পক্ষে কথা বলে না, সর্বদাই ওর বিপরীতেই কথা বলে। আজ সেই দিহান ওর হয়ে বাবা-মাকে রাজি করানোর দায়িত্ব নিচ্ছে তা ভাবতেই দ্যুতির অবাক লাগছে। তার ভাই এত ভালো কবে হলো? দ্যুতি স্বগোতক্তি কন্ঠে বলে উঠে,

— হঠাৎ তুই আমার প্রতি এত উদার হচ্ছিস কেন? ব্যাপার কি?

দিহান নরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

— আমি কুলাঙ্গার ভাই হতে চাই না তাই৷

কথাটা বলে দিহান আর এক মূহুর্ত বিলম্ব না করে দ্যুতির ঘর প্রস্থান করে। আর দ্যুতি হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেইদিকেই।

______________

পরবর্তীতে দিহান ঠিকই রুহুল সাহেব ও শাহিদা বেগমকে মানিয়ে নেয় দ্যুতিকে ভিনদেশে গিয়ে পড়ালেখা করতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কিভাবে তা জানা নেই৷ দ্যুতি বিষয়টা জানার পর বেশ কিছুটা সময় স্তম্ভিত ছিল। সে ভাবতে পারেনি তার বাবা-মা এত দ্রুত মেনে যাবে। অবশ্য সবই দিহানের কারসাজি। এর জন্য সে দিহানের নিকট কৃতজ্ঞও বটে। সকলের অনুমতি নিশ্চিতরুপে পাওয়ার পরমুহূর্তেই দিহান দ্যুতিকে আইএলটিএসে ভর্তি করিয়ে দেয়। আইএলটিএসে ভর্তি হওয়ার পর দ্যুতি বিষয়টা নিয়ে আরও সিরিয়াস হয়ে যায়। নিজেকে সর্বদা পড়ার মাঝেই রাখতে শুরু করে। কোচিং ব্যতীত বাহিরে যাওয়া আসা করাটা একদম কমিয়ে দেয়। ভিতরে ভিতরই নিজেকে গুছিয়ে নিতে থাকে পরবর্তী সময়ের জন্য।

অর্ধচন্দ্র আকাশে ছেঁয়ে আছে স্বচ্ছতা। মেঘের আনাগোনা তেমন নেই বললে চলে। হিম শীতল বাতাসে মুখরিত পরিবেশ৷ দ্যুতি জানালার পাশে মাথা এলিয়ে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের পানে। তার থেকে এক হাত দূরেই টেবিলের উপর ছড়িয়ে আছে অজস্র শিট-খাতা। মস্তিষ্ক আপাতত আঁটকে আছে কোন এক অদৃশ্য জ্যামে। পড়ার চাপ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে উঠায় হাপিয়ে উঠেছে মন, ক্লান্ত হয়ে পড়েছে শরীর। এক সপ্তাহ বাদেই দ্যুতির মেইন পরীক্ষা। যার দরুন, সে বেশ কিছুদিন যাবৎ দুনিয়া-দাড়ি ভুলে নিজেকে একদম ঘরবন্দী করে পড়ার মাঝে ডুবে গিয়েছিল। একটানা এইভাবে গৃহবন্দী আর প্রেশারে থাকার ফলে দ্যুতির মাঝে এখন তার প্রতিফলন লক্ষিত হচ্ছে৷ না চাইতেও মন ডুব দিচ্ছে বিষন্নতায়। হাওয়া বদলের বেশ প্রয়োজনবোধ করছে সে। চার দেয়ালের মাঝে দ্যুতির দম বন্ধ হয়ে আসতে উঠে দাঁড়ায় সে। মাথায় ওড়না জড়িয়ে নিয়ে হাটা দেয় ছাদের উদ্দেশ্য। আর কিছুক্ষণ এই রুমে থাকলে তার উন্মাদ হতে দেরি নি৷ আসার আগে শাহিদা বেগমকে সে জানিয়ে আসে৷ শাহিদা বেগম প্রথমে নাকছ করলেও মেয়ের অস্থিরতা দেখে রাজি হয়ে যান। আদেশক্রমে জানিয়ে দেন, সে যাতে বেশি দেরি না করে।

দ্যুতি ছাদের এক কিনারে এসে দাঁড়ায়। প্রাণভরে নেয় সতেজ নিঃশ্বাস। কিছুটা প্রহর অতিক্রম হতেই সিগারেটের দগ্ধ গন্ধ নাকে এসে বারি খেতেই দ্যুতি থমকে যায়। ক্ষণেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটির অনাকাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি বুঝতে পেরে দ্যুতি দৃষ্টিতে ছেঁয়ে যায় বিমর্ষতা৷

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here