প্রণয়ের_ঢেউ ২য় খন্ড,Part_02

0
868

#প্রণয়ের_ঢেউ ২য় খন্ড,Part_02
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

দ্যুতি স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। নয়ন দু’টিতে তার অপার বিস্ময়৷ গলা শুকিয়ে প্রায় কাঠ হয়ে এসেছে। সে অন্ধকারের মাঝেই নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে সেই অবয়বটির দিকে। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সামনে থাকা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পারছে ঠিকই কিন্তু মন সেটা মানতে চাইছে না। নিজের মনকেই আশ্বস্ত করতে অন্ধকারের মাঝেই দ্যুতি কম্পিত হাতে হাতড়ে হাতড়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিল৷ মনে প্রাণে চাইলো তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যাকে ইঙ্গিত করছে সে যাতে না হয়। কিন্তু তা আর হলো না৷ ক্ষণেই চারদিকে মৃদু পরিমাণ হলদেটে আলো ছড়িয়ে যেতেই দ্যুতির সামনে অরণ্যের বিধ্বস্ত মুখশ্রী ভেসে উঠে। চোখ দু’টি তার রক্তিম লাল, কপালের চুল ও পড়নের পাঞ্জাবি অবিন্যস্ত। গালে লেগে থাকা কিছু অংশক হলুদ শুকিয়ে খরখরে রুপ ধারণ করেছে। মুখখানি শুকিয়ে আসার ফলে চোখের নিচের গর্তটা গভীরতা লাভ করেছে। রুক্ষ অধর দু’টির কোনে নেই কোন হাসি। অরণ্যকে এই কয়েকদিন সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি দ্যুতির। যার দরুন আজ এতটা কাছ থেকে তাকে এমন অবস্থায় দেখে দ্যুতির বুকটা হু হু করে উঠে৷ মনের মাঝে বয়ে যেতে থাকে উথাল-পাতাল ঢেউ। সে কম্পিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠে,

— ভাইয়া! আপনি এত রাতে এইখানে কি করছেন?

অরণ্য দ্যুতির দিকটা অগোছালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

— আমি না থাকলে কে থাকবে রে চাঁদ?

দ্যুতি ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠে,

— কেউ না। আপনি এখন বাসায় যান৷ এত রাতে আপনাকে আমার রুমে কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।

অরণ্য কিছু না বলে উঠে দাঁড়ায়। নীরবেই এসে বসে দ্যুতির পাশে। দ্যুতি ভড়কে গিয়ে সরে যেতে চাইল্র অরণ্য ওর হাত চেপে ধরে আঁটকায়। কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে,

— তখন তুই এইভাবে উঠি এলি কেন? এখন কি আমার মত আমার গানও আর তোর ভালো লাগে না? আচ্ছা, আমি কি এতটাই খারাপ? আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না?

অরণ্যের কথা শেষ হতেই দ্যুতির নাকে বিশ্রী এক গন্ধ এসে বারি খায়। যা মাত্রায় সহ্য করার মত নয়। দ্যুতিও গন্ধটা সহ্য করতে না পেরে ছিটকে সরে বসে। তার বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগে যায় বুঝতে আসলে গন্ধটা কিসের এবং অরণ্যের কাছ থেকেই বা এমন গন্ধ আসছে কেন? অতঃপর বিষয়টা বুঝতে পেরে দ্যুতি বিস্মিত নয়নে তাকায় অরণ্যের দিকে। স্বগতোক্তি কন্ঠে বলে উঠে,

— আপনি ড্রিংকস করেছেন?

অরণ্য মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,

— হ্যাঁ করেছি তো? ড্রিংকস করে কি তোর কাছে আসা মানা? টেক্স দিতে হবে?

দ্যুতি তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠে,

— সিগারেট কি কম ছিল নাকি যে আপনি এখন এইসব ছাইপাঁশও খান?

অরণ্য মাথা নাড়িয়ে না বোধক উত্তর দিয়ে বলে,

— খাই না তো। বন্ধুরা সব আজ মজা করবে বলে এনেছিল। আমি খেতে চাইনি কিন্তু ওরাই জোড় করে খায়িয়ে দিয়েছে।

দ্যুতি একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,

— আপনি এখনই আমার রুম থেকে বের হন, বলছি। কোন মাতাল মানুষের আমার রুমে জায়গায় নেই৷

অরণ্য দ্যুতির কথা সম্পূর্ণ অনাগ্রহ করে বলে,

— জানিস! ওরা বলছিল, এইসব খেলে নাকি সব কষ্ট ভুলে থাকা যায়, ভিতরে শান্তি শান্তি লাগে। তাই পরে নিজ থেকেই খেয়েছিলাম। কিন্তু আমার তো ভিতরে শান্তি লাগছে নারে৷ সে আগের মতই কষ্ট হচ্ছে আমার। হৃদয়টা পুড়ে আমার ছারখার হয়ে যাচ্ছে রে।

দ্যুতি কাঠ কাঠ গলায় বলে,

— আপনি রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন, দেখবেন সব ঠিক লাগছে৷

অরণ্য পুনরায় দ্যুতির কথা অনাগ্রহ করে বলে,

— একটা কথা বলতে পারবি?

দ্যুতি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

— কি?

— আমার ভালোবাসায় কি কোন খাদ ছিল? আমি কেন তোকে পেলাম না বল তো? কেন আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পেল না?

অরণ্য টলমল চোখে তাকাতেই দ্যুতি মূর্ছা যায়৷ মনের মাঝে স্থান নেয় এক ঝাঁক কালো মেঘ। সে অস্পষ্ট সুরে বলে,

— সব ভালোবাসা যে পূর্ণতা পায় না ভাইয়া। কিছু ভালোবাসা অপূর্ণতায় পূর্ণতা পায়। আর ভাগ্যের উপর তো কারো জোর নেই। হয়তো আপনার ভাগ্যে আমি কখনো ছিলামই না।

— ভাগ্য আমার প্রতি এতটা নিষ্ঠুর হবে জানলে আমি কখনই তোকে আমার জীবনের সাথে জড়াতাম না। নিজের অনুভূতি কখনোই প্রকাশ্যে আসতে দিতাম না৷ নিজে মরে যেতাম কিন্তু তাও তোকে এতটা কষ্ট পেতে দিতাম না।

শেষের কথাটা বলার সময় অরণ্যের গলা জড়িয়ে আসে। চোখ দু’টো হয়ে উঠে আরও রক্তিম। অরণ্যের কথা পৃষ্ঠে দ্যুতি নিরুত্তর থেকে যায়। কন্ঠস্বর কেঁপে কেঁপে উঠছে বার বার, অশ্রুরা ঝাঁক দিয়েছে চোখের কার্নিশে। যেকোন সময় বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পড়বে গাল ও চিবুক বেয়ে। দ্যুতি আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজের অশ্রুগুলো ধরে রাখার। সে চাইছে না অরণ্যের সামনে দূর্বল হয়ে পড়তে। শেষ মূহুর্তে এসে সব বিগড়ে দিতে। কিন্তু তাও শেষ পর্যন্ত তা হলো না। অরণ্যের পরবর্তী কথা শুনে দ্যুতি কেঁদে দেয়। সিক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে অরণ্যের দিকে।

— যে বাবা নাকি তার পুরো জীবনই আমার নামে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। এক আমার জন্য তিনি আজ পর্যন্ত বিয়ে করেন নি৷ আমার চাওয়ার আগেই আমার সকল চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ করেছেন। আমাকে কখনো মায়ের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে দেন নি। নিজের অসুস্থতা দূরে ঠেলে দিয়ে দিন-রাত কাজ করেছেন আমার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে। এই আমিটাকে ভালো জীবন দিতে। সেই বাবার এত ত্যাগ, ঋণ ও অসুস্থতার সামনে নিজের ভালোবাসাকে আমি টিকিয়ে রাখতে পারলাম না রে। পারলাম না আমি বাবা আর ভালোবাসা দু’টো কেই আঁকড়ে ধরতে। হয়তো আমি বাবার কাছে যোগ্য পুত্র কিন্তু তোর কাছে যে আমি ব্যর্থ প্রেমিক রে চাঁদ। ব্যর্থ প্রেমিক! আমি পারলাম না তোকে দেওয়া কথাগুলো পূরণ করতে, পারলাম না তোকে নিজের করতে। পারলে মাফ করে দিস আমায়।

কথাটা বলতে বলতে অরণ্য নিজের চোখের পানি ছেড়ে দেয়৷ তার গাল ও চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে তপ্ত অশ্রুর ধারা। দ্যুতি নিজেও কাঁদছে৷ বাঁধ মানছে তার অশ্রুসিক্ত নয়ন দু’টি। সে কোন মতে ধরা কন্ঠে বলে উঠে,

— এইভাবে বলবেন না, প্লিজ। আপনি ব্যর্থ নন ভাইয়া। আপনি ব্যর্থ নন। আপনার জায়গায় আমি হলে সব কিছুর উর্ধ্বে নিজের বাবাকেই বেছে নিতাম। আমি কখনোই নিজের বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে আপনার হতাম না ভাইয়া। যে বাবা-মা তাদের সবটা দিয়ে আমাদের আগলে রেখেছেন তাদের কৃতজ্ঞতা কিভাবে অস্বীকার করি বলুন?

অরণ্য দ্যুতির ডান হাতটি নিজের হাতের মাঝে নিয়ে অনুতপ্ত সুরে বলে,

— এতটা অসহায় আমি জীবনে কখনোই বোধ করেনি রে চাঁদ৷। কখনো না। এই অসহায়ত্বের মাঝে আমি নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি রে। যদি সবটা আমার হাতে থাকতো না, আই সোয়ের তোকে আমি কখনো আলাদা হতে দিতাম না রে। সব কিছুর বিনিময়ে হলেও তোকে আমি নিজের করে নিতাম।

দ্যুতি নিরুত্তর থেকে নিজের নয়ন দু’টির দুয়ার বন্ধ করে ফেলে। নীরবেই বিসর্জন দিতে থাকে নিজের অশ্রুগুলো। বেশ কিছুটা সময় এইভাবেই অতিবাহিত হয়ে যায়। দ্যুতি এর মাঝেই নিজেকে গুছিয়ে নেয়। শক্ত করে ফেলে অনুভূতিগুলো। এইভাবে ভেঙে পড়লে হবে না। তাকে এই সম্পর্কের সকল পিছুটান শেষ করতেই হবে। তাও আজই। দ্যুতি নিজেকে সম্পূর্ণ গুছিয়ে চোখের কোনে পড়ে থাকা অশ্রুটুকু মুছে নিয়ে রিক্ত কন্ঠে বলে,

— কাল আপনার বিয়ে ভাইয়া। তাই এখন থেকেই চেষ্টা করুন অতীতটা ভুলে গিয়ে ভালো থাকার। সকল পিছুটান আজই শেষ করে দিন।

অরণ্য সিক্ত দৃষ্টি দ্যুতির দিকে স্থাপন করতেই দ্যুতি বলে উঠে,

— আপনার মোবাইলটা দিন?

অরণ্য প্রশ্নবোধক চাহনি নিক্ষেপ করতেই দ্যুতি কথাটা আরেকটু জোর দিয়ে বলে। অজ্ঞাত অরণ্য বাধ্য ছেলের মত নিজের পকেট থেকে ফোনটা বের করে এগিয়ে দেয় দ্যুতির দিকে। দ্যুতি মোবাইলটা নিয়ে অরণ্যের গ্যালারি থেকে তার সকল ছবি ডিলিট করে দেয়, হোম আর লকস্ক্রিনে থাকা তার ছবি দুটো বদলে দেয়। অরণ্য সজ্ঞানে না থাকায় পাসওয়ার্ডটা চেঞ্জ করতে গিয়েও করলো না। সবশেষে দ্যুতি অরণ্যের দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বলে,

— আমার ছবি বা স্মৃতি রাখার কোন অধিকার আপনার আর নেই ভাইয়া। তাই সকল কিছু মুছে দিলাম। শেষ করে দিলাম সকল পিছুটান। এখন আমার প্রতি আপনার কোন অধিকার নেই৷

অরণ্য করুণ দৃষ্টিতে তাকায় দ্যুতির দিকে। অতঃপর জড়িয়ে আসা কন্ঠে বলে উঠে,

— হাতে-কলমে সব মুছে দিলেও অন্তঃস্থলের গহীন থেকে কিছুই মুছে দেওয়া যায় না রে।

— হয়তো যায় না কিন্তু চেষ্টা তো করা যায়? সেই চেষ্টাটাই করলাম।

— যদি পুনর্জন্ম বলে কিছু হয় না, তাহলে
সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি সেই জন্মে তোকেই চাইবো। যে কোন মূল্যেই হোক।

দ্যুতি কিছু না বলে চুপ থাকে। দূর্বল হয়ে আসা মনটা শক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিছু সময়ের পর অরণ্য ঝিমিয়ে পড়ে। নেতিয়ে পড়তে থাকে দ্যুতির বিছানায়। তা দেখে দ্যুতি সাথে সাথে অরণ্যকে জাগিয়ে তুলার চেষ্টা করে। তার রুমে অরণ্যকে ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। কোনভাবেই না। নাহলে সকালে এলাহি কান্ড বেঁধে যাবে৷ দ্যুতি কোনমতে অরণ্যকে টেনে নিজের রুম থেকে বের করে আনে৷ অরণ্য টলছে, ঠিক মত হাটতে পারছে না। তাই দ্যুতি আর কোন উপায় না পেয়ে অরণ্যকে দিহানের রুমে নিয়ে যায়। দিহানের রুমে এসে দেখে দিহান এলোমেলো ভঙ্গিতে অর্ধেক শরীর বাহির দিকে ঝুলিয়ে ঘুমিয়ে আছে। দিহানের ঘুমের অবস্থা দেখে বুঝতে দেরি নেই সেও ছাইপাঁশ খেয়ে টাল হয়ে পড়ে আছে। দ্যুতি হতাশাজনক নিঃশ্বাস ছেড়ে অরণ্যকে টেনে দিহানের অপর পাশে শুয়ে দেয়। অরণ্যের মাথার নিচে বালিশটা দিয়ে চলে আসতে নিলে অরণ্য বিরবির করে বলে উঠে,

— ভালোবাসি তোকে চাঁদ। খুব ভালোবাসি৷

ক্ষণেই দ্যুতি থমকে যায়। অশ্রুভরা চোখে তাকায় অরণ্যের দিকে। মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে,

— আমিও আপনাকে ভালোবাসি অরণ্য। ভালো থাকবেন!

কথাটা বলেই দ্যুতি দিহানের রুমের দরজা ভিজিয়ে চলে আসে। চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। না কোথাও কেউ নেই। সবটা আগের মতই নিরবতায় পরিপূর্ণ। আর হবেও বা না কেন? বাসায় তো দিহান, দ্যুতি আর অরণ্য বাদে কেউ নেই৷ শাহিদা বেগম জরুরী ভিত্তিতে গিয়েছেন তার বোনের বাড়ি। রাত হয়ে এসেছিল বিধায় রুহুল সাহেবও সাথে গিয়েছেন। ভোরেই এসে পড়বেন তারা। আজ তারা বাসায় ছিল না বলেই হয়তো সবটা এইভাবে চাপাই থাকলো। অন্যথায় প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসতো সব। বেঁধে যেত এক অপ্রীতিকর অবস্থা। সাবলীলভাবে চলতে থাকা জীবনগুলো অগোছালো হয়ে যেত ক্ষণেই৷ দ্যুতি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চলে যায় নিজ রুমে। দরজা ভিজিয়ে বালিশে মুখ চেপে শুয়ে থাকে। অবাদ্ধ অশ্রুগুলো চোখের কার্ণিশ থেকে গড়িয়ে ভিজিয়ে দিতে থাকে বালিশের কিনারটি।

_________________

আজ অরণ্যের বিয়ে। চারদিকে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ। সোরগোল লেগে আছে আনাচে-কানাচে। সকলে তৈরি হতেই বেরিয়ে পড়ে কনের বাসার উদ্দেশ্যে। বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হচ্ছে বলে কনের বাড়িতেই বিয়ের আয়োজনটা করা হয়েছে৷ কনের বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে আসে। দরজার সামনে বরের গাড়ি থামতেই চারদিক থেকে হৈ-হুল্লোড়ের তীক্ষ্ণ শব্দ ভেসে আসে। ক্ষণেই সকলে ব্যস্ত হয়ে উঠে বরকে বরণ ও আপ্যায়ন করতে। সকলের চোখে-মুখে উচ্ছাসের ছায়া হলেও দুইজনের নয়নে জ্বলজ্বল করছে বিষাদের ছায়া। সেই দুইজন বরং আর কেউ অরণ্য ও দ্যুতিই। নিস্তেজ ভঙ্গিতে সবটাই দেখছে দু’জনেই কিন্তু করতে পারছে না কিছুই। পরিস্থিতির হাতে পড়ে মানতে হচ্ছে সবই।

অবশেষে সকল কার্য শেষে অরণ্যকে বসানো হয় কনের পাশে। দ্যুতি চারপাশে চোখ বুলিয়ে একবার দেখলো। কনের বিপরীত পাশেই হুইলচেয়ারে একজন ভদ্রলোক বসে আছেন। তিনিই হচ্ছেন কনের পিতা হারুন শেখ। পাশেই কনের মাতা রিনা বেগম। আশেপাশে আরও অনেক লোকজন আছে যাদের দ্যুতি চিনে না। সব দেখে তার কষ্ট হলেও কিছু করার যে নেই। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। নীরবেই গিয়ে দাঁড়ালো এক কোনে। ক্ষণিকের মাঝেই কাজী সাহেব এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করে। দেখতেই দেখতে কাজী সাহেব অরণ্যকে কবুল বলতে বলেন। অরণ্য তখন কিছু না বলে নজর ঘুরিয়ে দ্যুতির দিকে বিষাদময় দৃষ্টিতে তাকায়। দৃষ্টি তার শক্ত হয়েও যেন ছলছল করছে। দ্যুতিও তাকিয়ে আছে সিক্ত চোখে। এতটা সময় ধরে নিজেকে শক্ত রাখতে পারলেও এখন সে দূর্বল হয়ে পড়ছে। চোখ ঝাপসা হচ্ছে বার বার। অরণ্য তখনও নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দ্যুতির পানে। এইদিকে কাজী ও সকলেই অরণ্যকে কবুল বলার জন্য বলছে। অতঃপর অরণ্য পরিস্থিতির নিকট নিজেকে সমর্পিত করে তিক্ত কন্ঠে কবুল বলে উঠে। অতঃপর বিয়েটা সম্পন্ন হতেই চারদিকে উচ্ছাসের কলধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে। সবটাই দ্যুতির কর্ণগোচর হওয়া মাত্রই চোখ সিক্ত হয়ে উঠে এবং শরীর হয়ে পড়ে নিস্তেজ। নিজের ভালোবাসাকে চিরতরের জন্য হারিয়ে ফেলার তীব্র যন্ত্রণা নির্জীব ফেলে মন ও হৃদয়কে। ঝাপসা চোখ দু’টির সামনে ছেয়ে যায় অন্ধকার, নেতিয়ে আসে শরীর। দ্যুতি কোনমতে দেয়ালের সাথে নিজের শরীর ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। অশ্রুসিক্ত চোখেই তাকিয়ে থাকে অরণ্য ও নুরির পানে।

#চলবে

পরবর্তী পর্বে এই উপন্যাসের মোর ঘুরে যাবে এবং মেইন ট্রেকে চলে আসবে।
একটা কথা না বললেই নয়, সুখ ও দুঃখ মিলিয়েই একটা উপন্যাস তৈরি। তাই সবটা সহজ ভাবে নেওয়ার অনুরোধ রইলো। এখন হয়তো পড়তে খারাপ লাগছে কিন্তু পরবর্তীতে হয়তো নাও লাগতে পারে। তাই একটু ধৈর্য ধরুন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here