#প্রণয়ের_ঢেউ
#Part_04
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
‘অবশেষে আমিও ভালোবাসি’
অরণ্যের মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠা মেসেজটির দিকে দ্যুতি এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। সে আদৌ ঠিক পড়ছে কি-না তা শতভাগ সিউর হওয়ার মনে মনে কয়েকবার আওড়ালো কথাটা। না সে যা পড়ছে তাই ঠিক৷ এইখানে স্পষ্ট ভালোবাসি কথাই উল্লেখ করা। তার মানে কি? অরণ্যের কারো সাথে কোন সম্পর্ক আছে? দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে? কথাটা কেন যেন হজম হচ্ছে না দ্যুতির। যতবারই মেসেজে লিখিত কথাটা আওড়াচ্ছে ততবারই ক্রোধে তার চোখ জ্বলে উঠছে। অসহ্য লাগছে সবকিছুই। খানিকক্ষণ বাদে বিষন্নতার দল হানা দিল তার মনের অন্তরালে। প্রাণহীন মনে হলো নিজেকে। দ্বিতীয় বার ফোন ভাইব্রেট হতেই দ্যুতি দ্রুত ফোন অফ করে দিল৷ আর এমন কিছু সে দেখতে চায় না যাতে তার মন সম্পূর্ণ রুপেই বিষিয়ে যাক। কিন্তু সেটা কি কৌতূহলী মন মানে? কৌতূহলের তাড়নায় সে নিজের ভিতর কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে নেয়। অতঃপর ধীরে ধীরে পাওয়ার বাটনে টিপ দেয়। মোবাইল স্ক্রিনে লাইট জ্বলে উঠতেই কেউ একজন ছো মেরে মোবাইল ফোনটা নিয়ে যায়। তীক্ষ্ণ সুর হাওয়ায় ভেসে সেকেন্ড দুই-এক পরেই,
— ফোন আনতে বলেছিলাম নাকি পুরো ফোনের দোকান যে এতসময় লাগে তোর? আমার এক মিনিট সময়ও কত মূল্যবান জানিস? এক মিনিট এদিক সেদিক মানেই প্রচুর লস আমার। আর তুই সেই সময় নষ্ট করার ধান্দায় আছিস। বেদ্দব মেয়ে একটা।
অরণ্যের এমন কথায় দ্যুতির বেশ অভিমান হলো। ক্ষণেই অভিমানের পাল্লা এতই ভারী হলো যে তা চোখের কার্নিশে এসে ভীড় জমাতে শুরু করলো। দ্যুতি কোনমতে নিজেকে সামলে নিস্তেজ কন্ঠে বললো,
— সরি!
অতঃপর আর একটা মূহুর্তেও বিলম্ব না ছুটে চলে যায় রুমে। রুমে যাওয়ার সাথে সাথে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিল সে। দ্যুতির এমন ব্যবহারে অরণ্য হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো রুমের দরজার দিকে। ঘটনাক্রমে বুঝে উঠার জন্য সময় নিলো মিনিট দুই-এক। দ্যুতির ব্যবহার অরণ্যের কাছে খানিকটা অস্বাভাবিক লাগলো বলে মনে হলো। তাই সে কিছুটা এগিয়ে গেলো দ্যুতির রুমে দিকে। রুমের দরজার কাছে আসতে অরণ্যের ফোন বেজে উঠলো। সে একপলক দরজার দিকে তাকিয়ে মোবাইলের পানে তাকালো। কলটা জরুরি বলে ফোনটা রিসিভ করে কথা বলতে বলতে চলে গেল দিহানের রুমের দিকে।
_________________
গোধুলির শেষ লগ্ন। দূর আকাশের কমলা রঙের সরু রেখা মিইয়ে যেতে থাকলো আঁধারের অন্তরে। ঘরে ঘরে জ্বলে উঠলো কৃত্রিম আলো। শুরু জ্বললো না দ্যুতির ঘরের আলো। আঁধার ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তার রুমেও তলিয়ে গেলো তাতে। কিন্তু তাতে যেন দ্যুতির কোন মাথা ব্যথা নেই। নিস্তেজ ভাবে পড়ে আছে বিছানায়। ভালো লাগছে না তার কিছুই। সকালের পর থেকে মেয়ের রুম বন্ধ দেখে শাহিদা বেগম খোঁজ নিতে এসেছিলেন কয়েকবার। কিন্তু দ্যুতি বার বার টালবাহানা করে কাটিয়ে গিয়েছে। খাওয়া-দাওয়া বাদ দিচ্ছে বলে শাহিদা বেগম কতক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও দ্যুতি রুম থেকে বেরিয়ে না আসায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যান তিনি।
দ্যুতি আনমনে তাকিয়ে আছে বিস্তৃত আকাশের পানে। চোখে তার ভাসছে এখনো সেই মেসেজটি। যতবারই মেসেজটি মনে পড়ছে ততবারই দ্যুতির ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। অজানা কষ্টে পিরিত হচ্ছে। মাঝেমধ্যে বাঁধ ভেঙে চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রুকণা। তার কিশোরী মনটা আজ যে ভেঙে গিয়েছে আচমকাই। তার প্রতি অরণ্যের চিন্তা, অপ্রকাশিত কেয়ারগুলো,অধিকারবোধ, হঠাৎ হঠাৎ কথার ধরণে পরিবর্তন সবই দ্যুতিকে তার কিশোরী মন ভাবতে বাধ্য করেছিল অরণ্যের মনে হয়তো দ্যুতির জন্য কোন অনুভূতি আছে। হয়তো সে ভালোবাসে তাকে। আর সেই কথা ভেবেই দ্যুতির মনের এককোনে নিভৃতেই জায়গা গড়ে উঠে অরণ্যের জন্য। জন্ম নেয় কিছু অনুভূতি। যা ছিল সবসময় সকলের নিকট অপ্রকাশিত। কিন্তু সেই অনুভূতির নাম জানে না সে। আদৌ এই অনুভূতির নাম আছে কি-না তাও সে জানে না। শুধু জানে দিন যত যাচ্ছে অরণ্যের প্রতি তার অনুভূতিগুলো প্রগাঢ়তা পাচ্ছে। হয়তো এই অনুভূতিগুলোই আজ তাকে পীড়া দিচ্ছে।
সে বার বার নিজেকে বুঝাচ্ছে, অরণ্যের ভালোবাসার মানুষ থাকতেই পারে। এমন তো নয় সে দেখতে খারাপ বা তার মধ্যে কোন ক্রটি আছে। লুক বলো, গুণ বলো সব দিক দিয়েই সে মাশাআল্লাহ। শ্যাম বর্ণ হলেও কি? দ্যুতির কাছে তো সে কোন হরিণডাঙ্গার রাজকুমারের চেয়ে কম। এমন এক ছেলের গার্লফ্রেন্ড থাকাটাই তো স্বাভাবিক তাই না? কিন্তু তাও কথাটা মানতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার। অরণ্য অন্য একজন ভালোবাসে তা ভাবতে বার বার তার গলা জড়িয়ে আসছে। স্পষ্ট দৃষ্টি ঘোলা হয়ে আসছে বার বার।
অবশেষে দরজাটা খোলা হলো রুহুল সাহেবের ডাকে। দ্যুতি সবাইকে অবজ্ঞা করতে পারলেও নিজের বাবাকে অবজ্ঞা করার সাধ্য তার নেই। কেন না, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সে তার বাবাকেই ভালোবাসে। সেই সাথে প্রচন্ড মান্যও করে। তাই বাবার ডাকে সে সাড়া না দিয়ে পারলো না। মুখ হাত ধুয়ে দরজা খুলতেই রুহুল সাহেব ঢুকলেন মেয়ের রুমে। দ্যুতি তখন এমন ভাব করলো যেন সে ঘুমিয়ে ছিল আর মাত্রই রুহুল সাহেবের ডাকে উঠেছে। দ্যুতি বিছানার উপর গিয়ে বসতেই রুহুল সাহেব আদরমাখা হাত দ্যুতির মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করেন,
— কি হয়েছে আমার মামনীটার? শুনলাম, সারাদিন ধরে নাকি রুম থেকে বের হও নি? কেউ কি কিছু বলেছে? বললে বলো আমি এখনই তার খবর নিচ্ছি।
দ্যুতি স্মিত হেসে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
— তেমন কিছুই না আব্বু। কেউ কিছু বলেনি আমায়। শরীরটা ভালো লাগছিল না বলে রুম থেকে বের হতে ইচ্ছে করেনি।
রুহুল সাহেব চিন্তিত মুখে দ্যুতির কপাল ও গাল ছুঁয়ে দিলেন। দেখার জন্য জ্বর আছে কি-না। দ্যুতির শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। মেয়েটা তার প্রাণভোমরা। মেয়ের কিছু হলেই তার মন বিচলিত হয়ে উঠে। রুহুল সাহেবের চেহেরা ভঙ্গিমা দেখে দ্যুতি হেসে উঠে। কোমল স্বরে বলে,
— আমি ঠিক আছি আব্বু। তুমি এত চিন্তা করো না তো।
রুহুল সাহেব পুনরায় দ্যুতির মাথায় বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
— খাবে না? রাত তো হলো বেশ।
— ইচ্ছে করছে না খেতে।
রুহুল সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন,
— আমি খায়িয়ে দেই?
বাবার এত আদরমাখা কন্ঠ শুনে দ্যুতি আর না করতে পারলো না। খেতে রাজি হয়ে গেলো নিমিষেই।
______________________
অরণ্য পড়াতে এসেছে প্রায় আধা ঘন্টা হতে চললো। এর মাঝে দ্যুতি হু হা ছাড়া তেমন কোন কথাই বলেনি। বড়জোড় দুই-একটা বাক্য বলছে। তাও কর্কশ কন্ঠে। যা অরণ্যের বোধগম্য হচ্ছে না। সে অসন্তুষ্ট চোখে তাকিয়ে আছে দ্যুতির পানে। কিন্তু সেদিকে দ্যুতি কোন ধ্যানই নেই। মূলত সেইদিনের পর থেকে দ্যুতি এমনটা করছে। অরণ্যকে কিছুটা এড়িয়েই চলছে। তার সাথে পড়ালেখা বা গুরুত্বপূর্ণ কথা ব্যতীত বাড়তি একটি কথাও অপচয় করতে সে নারাজ। সেই সাথে নিজের মনকেও আয়ত্তে আনার যথা সাধ্য চেষ্টা করছে। যে মানুষটা অন্য কারো তার প্রতি কোন রকম অনুভূতি নিজের ভিতরে পুষে রাখার মানেই হয় না। এইভাবেই এসএসসি সামনে তাই আপাতত সবদিক উপেক্ষা করে পড়ার দিকেই জোড় দিচ্ছে সে বেশি।
দ্যুতি চুপচাপ বসে পদার্থবিজ্ঞানের একটি প্রশ্ন সমাধান করছে। প্রশ্নটি সমাধান করা শেষে নীরবেই খাতাটা এগিয়ে দেয় অরণ্যের দিকে। অরণ্য তখন এক ধ্যানে দ্যুতিকে দেখতে ব্যস্ত। হঠাৎ সে শীতল কন্ঠে বলে উঠে,
— কি হয়েছে তোর? আমার সাথে ঠিকমত কথা বলিস না কেন? এড়িয়ে চলিস কেন আমায়?
দ্যুতি মাথা তুলে একপলক অরণ্যকে দেখে নিল। চুলগুলো তার অবিন্যস্ত। চোখে-মুখে ছেঁয়ে আছে শুষ্ক ভাব। দ্যুতি মাথা নুয়ে নিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে,
— কোথায়?
অরণ্য এইবার রুদ্ধদ্বার কন্ঠে বলে উঠে,
— একদম ন্যাকা সাজবি না। আমাকে কি তোর আহাম্মক মনে হয় যে আমি তোর ভাব-হাব ঠিক মত বুঝতে পারবো না? চুপচাপ ঢং না করে বল তোর সমস্যা কোথায়? এমন কেন করছিস?
শেষের কথাগুলোই অরণ্যের ভিতরের অস্থিরতা যেন প্রকাশ পেয়ে গেলো। দ্যুতি অরণ্যের এমন অস্থিরতা দেখে বিরক্ত হলো। তার ভালো লাগছে না এইসব নাটক। দ্যুতি তার সাথে যেমনই আচরণ করুক তাতে অরণ্য এত রিয়্যাক্ট কেন করছে? দ্যুতি রুদ্ধ কন্ঠেই বলে উঠে,
— আমি কোন কিছুই করছি না। সবই আপনার মনের ভুল।
অরণ্য এইবার কিছুটা রেগে বলে,
— ঠাডিয়ে দিব এক। তোকে আমার বেশ জানা আছে। বরং তোকে আমি তোর চেয়ে বেশি জানি। বুঝলি! তাই আমার সাথে ওভারস্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করবি না। সোজা মুখে বল কি হয়েছে তোর?
দ্যুতি এইবার মাথা তুলে রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো অরণ্যের দিকে। স্পষ্ট ভাষায় বললো,
— মানুষ মুখে শুনেছি, অন্যের দেখানো পথে চলতে গেলে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়। আমিও পড়েছি তাই এখন নিজেকে নিজের মত গুছাচ্ছি। আর আমাকে নিয়ে এত না ভেবে নিজের প্রিয় মানুষটার কথা ভাবুন।
দ্যুতির এমন কড়া কথায় অরণ্য কিছুটা সময়ের জন্য থমকে যায়। ভিতরে ভিতরেই দমে যায় সে। অতঃপর শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
— প্রিয় মানুষ বলতে কাকে বুঝাতে চাইছিস তুই?
— প্রিয় মানুষের সংখ্যা বেশি নাকি আপনার যে কাকে বুঝাতে চাইছি তাও উল্লেখ করে বলতে হবে?
ক্ষণেই অরণ্যের ভ্রু কুঁচকে আসে৷ সে কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
— তুই কি বুঝাতে চাইছিস আমার গার্লফ্রেন্ড আছে?
দ্যুতি এইবার একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,
— বুঝানোর কি আছে? আপনার তো অলরেডি গার্লফ্রেন্ড আছেই৷ নাহলে কি ঘন্টায় ঘন্টায় ‘ভালোবাসি’ মেসেজ আসে?
অরণ্য এইবার বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
— ভালোবাসি মেসেজ আসে মানে? এই তুই কোন মেসেজের কথা বলছিস? সত্যি করে বলতো। কিছু কি দেখেছিস তুই আমার ফোনে?
দ্যুতি এইবার দাঁত চিবিয়ে বললো,
— সেদিন আপনার মোবাইলে একটা মেসেজ এসেছিল। মোবাইল আমার হাতে থাকায় সেটাই ভুলবসত দেখে ফেলেছিলাম। আপনার সেই পার্সোনাল মেসেজটি দেখে ফেলার জন্য দুঃখিত।
অরণ্য সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— মেসেজে কি লিখাছিল বলতো একটু।
দ্যুতি এইবার মাথা নুয়ে ফেলে। খামচে ধরে নিজের হাত। অতঃপর মিনমিনে স্বরে বলে,
— অবশেষে আমিও ভালোবাসি, কথা লিখা ছিল।
অরণ্যের ভ্রু নিমিষেই মিইয়ে যায়। দ্রুত নিজের ফোন বের করে মেসেঞ্জারে চলে যায়। দ্রুত একটা চ্যাট বের করে নেয় অতঃপর সেটা দ্যুতির সামনে ধরে বলে,
— এইটা ছিল কি?
দ্যুতি দ্বিতীয় বার মেসেজটা দেখার সাহস হলো না। তাই চুপচাপ মাথা নুয়েই বসে থাকলো। দ্যুতিকে এইদিকে তাকাতে না দেখে অরণ্য রেগে বলে,
–দেখে বল এইটা ছিল কি-না? হারি আপ!
অরণ্যের ধমল খেয়ে দ্যুতি কিছুটা নড়েচড়ে উঠে। চোখ দুটো নরম হয়ে আসে। সে মাথা তুলে সিক্ত চোখে তাকায় মোবাইলের দিকে। তাতে সেই কথাটিই লিখা। উপরে নিচে আরও অনেক মেসেজই আছে কিন্তু সেগুলো দ্যুতি পড়লো না। শুধু ওই কথাটাই বার বার দেখলো। অতঃপর চোখ সরিয়ে নিয়ে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। অরণ্য তা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর ফোনটা এগিয়ে দিলো দ্যুতির দিকে। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,
— উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সব চ্যাট পড়। তার আগে মেসেজগুলা কে দিয়েছে তা আগে দেখবি। জলদি!
দ্যুতি না করতে গেলেও অরণ্যের রক্তিম চোখ দুটো দেখে চুপ বনে যায়। নীরবেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে নেয়। চোখ বুলাই মেসেজ দাতার নামটির দিকে, ‘আহমদুল শেখ রিয়াদ’। নামটি পড়ার সাথে সাথেই দ্যুতির ভ্রু কুঁচকে যায়। দ্যুতি এইবার চ্যাট বক্সে থাকা মেসেজগুলো পড়তে থাকে। সেখানে একজনের লাভ স্টোরি লিখা৷ লাভ স্টোরির সারমর্ম এই যে, একটা মেয়ে আগে একটা ছেলেকে প্রাপোস করে এবং ওই ছেলে তাকে অনেক ঘুরায়। দীর্ঘ তিন মাস ঘুরানোর পর সেই ছেলেটাও অবশেষে মেয়েটিকে ভালোবাসি বলে।
সেখানে ‘অবশেষে আমিও ভালোবাসি’ মেসেজটির পরে যে আরেকটা মেসেজ এসেছিল যেটা দ্যুতি দেখতে পায়নি সেটা ছিল ‘বলে দিয়েছিলাম তাকে’। মূলত হাফ মেসেজ লিখে সেন্ট করাতেই এই ভুল বুঝাবুঝিটা হয়েছিল। দ্যুতি এইবার অপরাধী চোখে অরণ্যের দিকে তাকাতেই অরণ্য গলা খেঁকিয়ে বলে উঠে,
— কি দেখেছিস আমার প্রেমিকাকে? অনেক সুন্দর না? আমাদের প্রেমকাহিনী পড়েছিস নিশ্চয়ই? একবারে সুপার ডুবার, তাই না?
দ্যুতি এইবার মিনমিনে গলায় বলে,
— সরি ভাইয়া! আমি আসলে…
অরণ্য দ্যুতিকে বলতে না দিয়ে বলে,
— চুপ একদম চুপ। তোর আসলে নাকি নকলে সে কথা রাখ। মাথায় তো গবর ভরা, এখন দেখি চোখেও গবর ভরা। নাম-টাম না দেখে অর্ধেক-টর্ধেক মেসেজ পড়ে, আমার জান কবজ করছিস তুই। এই কয়েকদিন জীবনটাই আমার অর্ধেক শেষ করে দিয়েছিস বেদ্দব।
দ্যুতি এইবার কিছু না বলে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে। অরণ্য কিছুক্ষণ ফোঁস ফোঁস করে ফোনটা নিয়ে কাউকে ফোন লাগায়। অপর পাশে ফোন রিসিভ হতেই অরণ্য রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠে,
— শালা রিয়াদের বাচ্চা, তোকে পাই একবার ক্যাম্পাসে। তোর অর্ধেক অর্ধেক কথার মেসেজ ছুটাচ্ছি আমি।
— আরেহ ভাই আমি করসিটা কি?
— তোর এই মেসেজে প্রেমকাহিনী বলার চক্করে আমার প্রেমকাহিনী শুরু হওয়ার আগেই স্টোপ হতে নিচ্ছিল। ষ্টুপিড! তুই আয় একবার ক্যাম্পাসে, তোকে যদি পিটিয়ে আমি লাল না করেছি আমার নামও অরণ্য না।
কথাটা বলেই অরণ্য ফোনটা কেটে দেয়। অতঃপর দ্যুতির দিকে একপলক তাকিয়ে গটগট করে চলে যায় সে। তা দেখে দ্যুতির হতাশাজনক নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। নিজের কপালে নিজেই চাটি মেরে বিরবির করে বলে,
— ভাইয়া ঠিকই বলে, আসলেই আমার মাথায় ও চোখে গবর ভরা।
#চলবে