প্রণয়ের_তৃষ্ণা-১৫,১৬

0
506

#প্রণয়ের_তৃষ্ণা-১৫,১৬
অলিন্দ্রিয়া রুহি
১৫
_______
ঘন্টা খানেক হয়ে গেছে ইথিশা গায়েব। সম্ভাব্য সব জায়গায় পাগলের মতো তাকে খুঁজে হতাশ চিত্ত নিয়ে বাড়ি ফিরেছে অর্ক। এতক্ষণ যা চিন্তা হিসেবে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল তা এবার দুশ্চিন্তায় রূপ নিলো। মেয়েটা কোথায়, কোনো বিপদে পড়ল কীনা, ভালো আছে তো? নানান রকমের প্রশ্ন ভীড় জমাচ্ছে অর্ক’র মনের ভেতর আস্তেধীরে। বাড়ির বারান্দায়ই বসে পড়ল অর্ক। ঠিক তখনই তার মোবাইল ফোন টুং করে বেজে উঠল। অর্ক দ্রুততার সঙ্গে মোবাইল ফোন পকেট থেকে বের করে দেখতেই গোটা আকাশটা তার মাথার উপর ভেঙে পড়ল।
ইথিশা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। লিখেছে,
‘আমি ঢাকায় ব্যাক করেছি। আশা করি তোমাদের ভেতর আমি বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না কখনো। তোমরা ভালো থাকো।’

মানুষের মাথায় আসমান ভেঙে পড়লে অথবা পায়ের নিচের মাটি সরে গেলে সে ঠিক কেমন বোধ করে? অর্ক দিশেহারা বোধ করছে। ইথিশার ম্যাসেজের আগামাথা কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না। উপরন্তু দুশ্চিন্তা সরে গিয়ে এক দলা বিষন্নতার মেঘ ধীরে ধীরে গুমোট মস্তিষ্কটাকে দখলে নিয়ে নিচ্ছে। অর্ক দ্রুততার সঙ্গে ইথিশার নাম্বারে কল করল। একবার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ হলো। কিন্তু কোনো কথা এলো না।

অর্কই বলল,

‘হ্যালো! ইথি…ইথিশা?’

আক্ষেপ নাকী অভিমান! ইথিশার গলাটা ভার শোনালো ভীষণ।

‘শুনছি।’

‘তুমি কোথায়? ঠিক আছো তো? আমি কিছু বুঝলাম না ইথি। প্লিজ যেখানেই থাকো এক্ষুনি আমার সামনে আসো। আই হ্যাভ টু টক উইথ ইউ।’

‘আই হ্যাভ নাথিং টু টক! আর আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করতে হবে না। আমি যেখানেই আছি,ভালো আছি। আর এই মুহূর্তে বাসে আছি। আই এম গোয়িং ফ্রম ইউর লাইফ ফরেভার!’

ইথিশার কাটাকাটা জবাব। গলার স্বর দিয়ে আগুন বের হচ্ছে যেন। অর্ক হতবিহ্বল কণ্ঠে বলল,

‘কী বললে? কোথায় তুমি?’

‘বা-সে!’

টেনে টেনে পূর্বের স্বরেই জবাব দিলো সে।

এবার গলা ভারী হয়ে আসলো অর্ক’রও। ফোনের ওপাশ থেকে বাসের হর্ণ শোনা যাচ্ছে। শাঁই শাঁই বাতাসের শব্দও ভেসে আসছে। এর মানে ইথিশা সত্যি বলছে। ও সত্যি সত্যি অর্ককে ফেলে একা বাসে উঠে গেছে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। অথচ কেন ও এরকমটা করল! অর্ক কী এমন করেছে যার ফলে এতবড় একটা স্টেপ নিলো ও? অর্ককে এভাবে আঘাত দিলো?

‘ও! তা জানতে পারি কোন কারণে এভাবে পালিয়ে গেলেন?’

‘পালিয়ে? এক্সকিউজ মী! আমি কী চোর যে পালিয়ে যাবো? বরং তোমাকে আর তোমার তাকে মুক্ত করে দিয়ে চলে এসেছি। আমি থাকলে তো তোমাদের লুকোচুরি করতে হয়। আমি না থাকলে এই লুকোচুরি খেলা আর খেলতে হবে।’

‘ইথি, কাম ডাউন! আমাকে প্লিজ খুলে বলবে যে তুমি কেন এরকম করছো আমার সঙ্গে? হোয়াট ইজ মাই ফল্ট? আর তুমি বারবার একটা থার্ড পারসন কে মেনশন করছো। অথচ আমি জানিই না সে কে! উড ইউ কাইন্ডলি টেল মী এবাউট দ্যাট ইথি? প্লিজ?’

গলার স্বর নরম হয়ে এসেছে অর্ক’র। ও ভীষণ নির্ভেজাল একজন মানুষ। ঝামেলা,যন্ত্রণা বরাবরই এড়িয়ে চলে। আর সেই ওর সঙ্গেই একটার পর একটা কিছু হচ্ছে! বিশেষত যবে থেকে ইথিশা ওর জীবনে এসেছে তবে থেকেই। ইথিশাকে এত ভালোবাসে, তবুও কেন ওর প্রতি ইথিশার বিশ্বাস নেই এটা ভেবে পায় না অর্ক। ইথিশার উপর কোনোদিন অন্যায় বা জুলুম- এ জাতীয় কিচ্ছু করেনি অর্ক। বরং সবসময় সমস্যা হলে নিজে মানিয়ে গুছিয়ে সব সমাধান করে নিয়েছে ছেলে হয়েও। তারপরও ইথিশা বোঝে না তাকে! কেন?

ইথিশা কোনো জবাব দিচ্ছে না। তার নিঃশ্বাসের শব্দ নাকী বাতাসের শব্দ ভেসে আসছে, অর্ক জানে না।
অর্ক অধৈর্য্য কণ্ঠে ডাকলো,

‘ইথি! শুনছো?’

‘শুনছি।’

গলার রাগ কমে এলেও তেজটা আগের মতোই বজায় থাকলো কণ্ঠে। অর্ক’র ভীষণ ভীষণ খারাপ লাগতে শুরু করল। ইথিশার প্রতি না, ওর নিজের প্রতি। এ কাকে এতকাল যাবত ভালোবেসে এসেছিল ও! কিছু কঠিন বাক্য ব্যয় করতে গিয়েও নিজেকে মহা কষ্টে সামলে নিলো। অনুনয়ের সুরে বলল,

‘তুমি কার সঙ্গে আমাকে জুড়ে দিচ্ছো? শুধু এইটুকু বলো ইথি…আই রিকোয়েস্ট ইউ..’

ইথিশা তবুও কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইলো। তার ঠোঁট চিঁড়ে নামটা বেরিয়ে আসতে গিয়েও আসছে না। রাগ হচ্ছে, প্রচুর রাগ হচ্ছে। কার উপর হচ্ছে, সে নিজেও ঠিক বুঝতে পারছে না।
অর্ক আরও একবার একই প্রশ্নের জবাব চাইলে ইথিশা ভোঁতা মুখ করে জবাব দেয়,

‘পুতুল, আমি পুতুলের কথা বলছি। প্লিজ এমন নাটক কোরো না যে তোমাদের ভেতর কিছু নেই!’

‘আর ইউ…’ ঠোঁট ভেঙে এবার গালি-ই বেরিয়ে আসলো অর্ক’র। সে কল্পনাও করেনি পুতুলকে জড়িয়ে ইথিশা এভাবে রিয়েক্ট করে বসবে!

‘তোমার মাথাটা কী আছে না একদম গেছে ইথি? পুতুল এসেছে দু’দিনও হয়নি! ওর মতো ছোট্ট একটা মানুষ কে নিয়ে তুমি আমার সাথে… তোমার মনের ভেতর এত নোংরা ইথি? পুতুলের মতো ফুলকেও কলংক লাগিয়ে দিচ্ছো?’

‘আমি নোংরা? সে ফুল? আমি শিউর ছিলাম না তবে এবার শিউর হলাম। তুমি আমায় এভাবে চিট করলে অর্ক, না? ওকে, জাস্ট ওয়েট এন্ড সী- আমি কী করতে পারি তোমার সঙ্গে!’

‘পাগল হয়ে গেছো তুমি, ভালোবাসার দহনে পুড়তে পুড়তে পাগল হয়ে গেছো।’

‘সেই আগুন তুমিই জ্বালিয়েছো অর্ক।’

‘মিথ্যে অপবাদ দিতে লজ্জা করছে না? পুরুষ হয়েও কতটা নমনীয়তার সঙ্গে তোমাকে হ্যান্ডেল করেছি সবসময়। যখন বিদেশে ছিলাম, এক দণ্ড শান্তি দিয়েছো তুমি? সবসময় সন্দেহ করে এসেছো যে আমার সঙ্গে ওখানে নিশ্চয়ই কোনো অনৈতিক সম্পর্ক আছে কারো। এমনকি এও বলেছো, আমি কোনোদিন দেশে ফিরবো না, ফিরলেও তোমায় বিয়ে করব না। অথচ আমি দেশে ফিরেই আমার পরিবারের সাথে তোমার মিট করিয়েছি। দুই পরিবারকে একত্রে বসিয়ে নিজে বুঝিয়েছি,মানিয়েছি। এরপরও, এতটুকু বিশ্বাস বা ভরসা জন্মালো না তোমার আমার প্রতি?’

‘অনেক করেছো তুমি আমার জন্য! এতই করেছো যে আমি প্রতি মুহূর্তে গুমরে গুমরে ম’রেছি। অস্বীকার করতে পারবে,তোমার ভেতর পুতুলের জন্য কোনো কিছু নেই? তুমি ওর সঙ্গে কী কথা বলছিলে যে আমাকে দেখামাত্র দু’জনেই হতভম্ব হয়ে পড়লে? তুমি এখান থেকে যেতে চাইলে, অথচ ও বাড়ি আসার পর তুমিই পল্টি মারলে যে এখন না পরে যাবো? আবার ওকে দেখে তুমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকোনি মিনিটের পর মিনিট? বলো অর্ক? আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছুই এড়িয়ে যায়নি।’

একটা লম্বা দম টেনে নিয়ে বুক বায়ু পূর্ণ করে অর্ক বলতে লাগল,

‘তোমার সব কথাই ঠিক কিন্তু সমস্যা হলো এটাই যে আমার আর তোমার দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই ভিন্ন। আমি পুতুলকে যে নজরে দেখেছি, তুমি সেটাকে নেগেটিভ সাইডে নিয়ে নিয়েছো। ওর সঙ্গে আমি তেমন কোনো কথা-ই বলিনি যেটা তোমার মাইন্ডে লাগবে। তবে হ্যাঁ হতভম্ব হয়েছিলাম ঠিক এটা ভেবেই যে তুমি কী না কী মনে করো! আর রইলো এখানে থাকার ব্যাপারটা, তুমি খুব ভালো করেই জানো, পুলিশ বলে দিয়েছে আমাকে বা এই বাড়ির সবাইকে কেসের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত থাকতে হবে। এমনকি গ্রামের কেউও গ্রাম ছাড়তে পারবে না। সেখানে তুমি জিদ দেখিয়ে চলে গিয়ে একটা নতুন সমস্যার মুখে ফেললে আমাকে। আর তোমার শেষ কথাটা- আমি চেয়েছিলাম ওর দিকে, তবে কোনো ভালোবাসার নজরে নয়, ওর ভেতরের চঞ্চলতা আমায় আকৃষ্ট করেছিল, মুগ্ধ করেছিল, ওই ছোট্ট মেয়েটার খাঁচায় বন্দী হওয়ার দৃশ্য টা আমায় করুণ ভাবে বিধ্বস্ত করেছে সেটা তুমিও খুব ভালো করেই জানো ইথি। এরপরও তুমি এই কাজটা করলে আবার আমায় এতবড় অপবাদ ও দিচ্ছো! গুড,ভেরি গুড। উইশ ইউ এ সেফ জার্নি।’

ইথিশা ফোন কেটে দিলো। অর্ক নিস্তেজ ভঙ্গিতে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে রইলো। নিজেকে এতোটা হতাশ, দিশেহারা লাগছে যে ইচ্ছে করছে কোনো একটা দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে ম’রে যেতে। জীবনে এই প্রথম কাউকে এতোটা প্রায়োরিটি দিয়েছিল। বিনিময়ে দিনকে দিন সন্দেহের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে জালে আঁটকা পড়া মাছের মতো তড়পেছে। তবুও ইথিশাকে এতটুকু বুঝতে দেয়নি।

বাস চলছে ড্রাইভারের দেওয়া গতিতে। ইথিশা জানালার পাশে বসেছে। অর্ক’র উপর হওয়া রাগগুলো এখন অভিমান আর অভিযোগ হয়ে ইথিশার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করলেও কোনোভাবেই মন মানছে না। সে জানালার দিকে চেঁপে বসল আরও খানিকটা। বাইরে মুখ ঘুরিয়ে নীরবে কাঁদতে লাগল। হুট করে মুখ ভেঙে গোঙানির ন্যায় আওয়াজ বেরিয়ে এলো। নিজের অজান্তেই। ইথিশা চকিতে মুখ ঘুরিয়ে দেখল, একজন গভীর মনোযোগে তার দিকে চেয়ে রয়েছে।

‘আপনি ঠিক আছেন ম্যাম?’

পাশে বসা অপরিচিত আগন্তুকের এহেন প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল ইথিশা। নিজেকে সামলে জড়সড় হয়ে বলল,

‘হুম।’

ছোট্ট উত্তর, তারপর চুপ করে একেবারেই এড়িয়ে গেল ওঁকে। ভেবেছিল আগন্তুক ব্যক্তি পুনরায় কিছু একটা জিজ্ঞেস করে ইথিশাকে বিরক্তিতে ফেলবে কিন্তু ইথিশার ভাবনাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে ওঁ আর কিচ্ছু বলল না। বরং কানে হেডফোন দিয়ে ইথিশাকে ইগনোর করল সে নিজেই। ইথিশা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। পুনরায় নিজের ভাবনায় মন দিলো।

_______

‘আর কী করা লাগবো?’

শম্পা চোখ তুলে তাকালেন। তার কপালে চিমটি চিমটি ঘাম, চোখমুখ কুঁচকে এতটুকু হয়ে আছে। তিনি চোখ সরিয়ে উনুনের ভেতর বাঁশ ঠেলতে ঠেলতে বললেন,

‘কিচ্ছু করোন লাগবো না। যাও, ঘরে যাও।’

‘হাত গুটাইয়া বইয়া থাকলে আপনের দেওর আমারে গালি দিবো। আমি কী গালি খামু নাকি? গালি খাইবার আহি নাই। কন, কী করতে হইবো আর।’

শম্পা তাকালেন, বিদ্রুপের সুরে হাসলেন, বললেন,

‘দিন ফুরায় নাই তাতেই তেল মইজা গেছে? তাইলে আমি কেমনে বছরের পর বছর সংসার করতাছি?’

‘আপনে তো আর আমার জামাইর লগে সংসার করেন না। আপনের জামাই থাকে বিদেশ। আপনের তো আর হের গাইল খাওন লাগে না।’

ফটর ফটর করে বলে ফেলল পুতুল। শম্পা কপাল কুঁচকে বললেন,

‘মুখে বুলি ফুঁটছে নাকি? হুনো মাইয়া, আইছো মাত্র একদিন, জামাইডা কার হেইডা আস্তেধীরে চক্ষু দিয়াই দেখতে পারবা। এহন যাও, ভিত্রে যাও। আমার সামনে সংয়ের মতো দাঁড়াইয়া থাকবা না।’

ধমকের সুরে কথাগুলো বলে উঠেন শম্পা। পুতুল সামান্য কেঁপে উঠলেও একটা কথা মাথার ভেতর গেঁথে গেল। ‘জামাইডা কার!’ এই কথার দ্বারা উনি ঠিক কী বুঝাতে চাইলো? এর জবাব কী আখতারের কাছে চাওয়া উচিত নয় ওর? কিন্তু আখতারের কাছে জানতে চাইলেই আখতার বলবে কেন? সে তো কোনো সুপুরুষ নয় বরং কাপুরুষ। স্ত্রীকে কষ্ট দিয়ে নিজের আনন্দ খুঁজে নেয়।

পুতুল আর একটি কথাও না বলে চুপ করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। সারা গা কুটকুট করছে। কাদামাটি মেখে একাকার। তার উপর আখতার ওর সাথে যা করেছে! আরও একবার সেসব চোখের সামনে ভেসে উঠতেই সমস্ত শরীর কেমন গুলিয়ে উঠল ওর। গোসল করতেই হবে। আচ্ছা গোসলের পানি কী পারবে শরীর থেকে এসব অসহনীয় স্পর্শ তুলে ফেলতে?
পুতুল আসমানের দিকে অসহায় চোখ তুলে তাকাল। মনে মনে ভাবে, আজ যদি রাত না হতো! খুব কী ক্ষতি হতো?

(চলবে)

#প্রণয়ের_তৃষ্ণা (১৬)
অলিন্দ্রিয়া রুহি
______
আকাশে সন্ধ্যের কালো মেঘ। পাখির কিচিরমিচিরে চারিদিক অস্থির তোলপাড় হয়ে উঠেছে। আখতার এখনো বাড়ি ফেরেননি। সেই যে বেরিয়েছেন, দুপুরেও আর খেতে আসেননি। সাঁঝবাতি জ্বালিয়ে পুতুল বাড়ির দাওয়ায় এসে দাঁড়াল। দুপুর থেকে এই পর্যন্ত কতবার যে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে! এখান থেকে সামনের বড় গেটটা দেখা যায়। মনে হয় এই বুঝি গেট দিয়ে বাবা-মা ঢুকল। কিন্তু হায়! মেয়েকে বিদায় করে দিয়ে তারা কী ভুলেই গেল পুতুলকে? কই! একবারও তো এদিকে পা মা’ড়া’লো না! পুতুলের মন খারাপ ভাব বাড়তে বাড়তে চোখজোড়া জলে টইটম্বুর হয়ে উঠে। মাটির দিকে তাকিয়ে এক আঙুল দিয়ে চোখের কোণা মুছে নেওয়ার সময় একজোড়া পায়ের শব্দ তার পেছন পর্যন্ত এসে থেমে দাঁড়াল। পুতুল চকিতে চাইলো। অর্ক দাঁড়িয়ে আছে।

‘কী অবস্থা?’

ছোট্ট একটা প্রশ্ন তাতেই ভয়ে বুকে ভীষণ রকমের কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেল। ঠোঁট চিঁ’ড়ে উত্তরের বদলে অস্ফুট একটা শব্দ বেরিয়ে এলো। চলে যাওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি শুরু করতেই অর্ক ভ্রু বিলাস করে। পরপর কয়েকটা ভাঁজ ফুঁটে উঠে কপালে। দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে পুতুলের পথ পুরোপুরি ভাবে আগলে দাঁড়ায় সে। এতে করে পুতুল আরও চমকে ভয়ে জুবুথুবু হয়ে গেল। পেছনে পিছাতে পিছাতে দরজার সঙ্গে নিজের পিঠ ঠেকিয়ে ফেলল। মাথানিচু করে তাকিয়ে রইলো মাটির দিকে। অস্বাভাবিক হারে তার বুক ওঠানামা করছে। অর্ক ভ্রু কুঁচকেই তাকিয়ে রইলো।

‘এত ভয় কীসের?’

বিনিময়ে জবাব এলো না। অর্ক’র রীতিমতো জেদ চেপে বসেছে মাথায়। তার সামনে এলেই মেয়েটা এত অদ্ভুত আচরণ করে কেন! তার উপর এই মেয়ের জন্য কতবড় গ্যা’ঞ্জাম লেগে গেল তার আর ইথিশার মধ্যে! যদি ও স্বাভাবিক থাকতো, হয়তো ইথিশা এত নেগেটিভ ভাবে কিছুই নিতো না। অর্ককে দেখলে পুতুলের লজ্জা পাওয়া,পালিয়ে যাওয়া- সবকিছুই কেমন যেন! আজব!

‘আমি কী বা’ঘ নাকী ভা’ল্লু’ক যে আমাকে দেখলেই পালিয়ে যেতে হয়? কেউ দেখলেই বা কী? এখানে দাঁড়িয়ে আমরা কী প্রেম করছি নাকী অন্যকিছু? প্লিজ স্পিক আউট! বোবার মতো দাঁড়িয়ে থাকবেন না।’

রাগে গরগর করে কতগুলো কথা ছোট্ট প্রাণের উপর ছুঁড়ে দিয়ে দু’পা এগিয়ে এলো অর্ক। যা দেখে জীবনের সবচাইতে বড় ভয়টা এসে জেঁকে ধরলো পুতুলকে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি সে অজ্ঞান হয়ে এখানে পড়ে যাবে। কেন অর্ক চলে যাচ্ছে না! শম্পা বা আঁখি- কোথায় ওরা?

পুতুল বুঝতে পারছে তাকে কিছু একটা জবাব দিতেই হবে নইলে এই লোক তার পথ ছাড়বে না। আর এভাবে সময়ের পর সময় এখানে আঁ’টকে থাকাও তার পক্ষে অসম্ভব। আখতার যেকোনো সময় বাড়ির ভিতর চলে আসবেন। মেইন গেট খুললেই বাড়ির দাওয়া দেখা যায়। তার চোখে যদি একবার পড়ে..
বাকীটুকু ভাববার অবকাশ নেই পুতুলের। সে খোলা চোখেই শিউরে উঠল। অতঃপর অধিক সাহস সঞ্চয় করে খুব আস্তে, যেন অর্ক ছাড়া আর কেউ শুনতে না পায়, বলল,

‘দেহেন, এমনে দাঁড়ায়ে কথা কইলে যে কেউ ভুল বুঝবো আমারে। আর আপনের লগে আমার কীয়ের কথাই বা থাকতে পারে? আপনি যান এইহান থেইকা নাইলে আমারে যাইবার দেন।’

‘সম্পর্কে আপনি আমার চাচী হন। চাচীর সঙ্গে কথা বললে কে কী ভাববে?’

অনেকটা ঠাট্টার সুরে বলে উঠে অর্ক। পুতুল স্পষ্ট চোখে এবার তার দিকে তাকাল। এবং তাকাতেই সম্মোহিত বোধ করল। অর্ক তাকিয়েই ছিল, পুতুল তাকাতেই দুই জোড়া চোখ এক হলো। পুতুল বা অর্ক কেউই কিছু বুঝে উঠে পারল না। তবুও দু’জনার মনে হলো একে অপরের চোখজোড়া একে অপরকে অনেক কিছু বলছে! কিন্তু কী বলছে?
সর্বপ্রথম চোখ সরিয়ে নিলো পুতুলই। তার চোখ সরিয়ে নেওয়ায় ধ্যান ভঙ্গ হলো অর্ক’রও। সেও দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে নিক্ষেপ করল।
পুতুল রিনরিনে কণ্ঠস্বরে বলল,

‘আপনে আমার চাইয়া ম্যালা বড়। আপনে সবই বুঝেন। আপনেরে আলদা কইরা বুঝানোর কিছু নাই।’

অন্যমনস্ক দেখালো অর্ককে। এবার সে বুঝতে পেরেছে ঠিক কী কারণে তাকে দেখলে পালিয়ে বেড়ায় মেয়েটা! ওই একই কারণে তার কাছ থেকে পালিয়ে গেছে ইথিশাও। অথচ এখানে না দোষ আছে পুতুলের, আর না অর্ক’র। একটা ছেলে-মেয়ে একত্রে দাঁড়িয়ে কথা বলাটাকে কেন এখনো এই সমাজ ভালো চোখে এক্সেপ্ট করতে পারে না,কে জানে!

হতাশামিশ্রিত শ্বাস বেরিয়ে আসে অর্ক’র বুক চিঁ’ড়ে। সে মাথা দুলিয়ে পুতুলের কথায় সম্মতি প্রকাশ করে বলল,

‘একটু ভুল বললে। তোমার চেয়ে ভালো বুঝি না। তুমি ছোট হয়েও যেটা মীন করেছো, তা আমি আগে বুঝিনি। বুঝলে আজ ইথিশা আমাকে ফেলে এভাবে চলে যেতো না।’

চোখজোড়া ছিল জানালার দিকে। কথাখানা শুনে অজান্তেই তা এসে নিক্ষেপ হলো অর্ক’র উপর, আরও একবার। এবার আর লজ্জা নয়, বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করল পুতুল, নিজে থেকেই,

‘মানে?’

অর্ক হাসল, শব্দ ছাড়া মলিনতায় জর্জরিত হাসি।

‘ইথিশা তোমাকে আমাকে নিয়ে সন্দেহ করেছে। ভেবেছে আমাদের ভেতর কিছু একটা আছে। এটা ভেবেই আমাকে না জানিয়ে আজ ঢাকায় চলে গেছে।’

দুপুরবেলা খেতে ডাকতে চেয়েও অর্ক থাকতে পারে এই ভেবে আর এদিকে আসেনি পুতুল। নিজে খেয়ে উঠে গেছে। জানেই না ইথিশা আছে কী নেই বাড়িতে। এখন অর্ক’র কথা শোনার পর তার মনে হলো, সত্যিই তো! ইথিশাকে অনেকক্ষণ যাবত দেখা হয়নি। পুতুল বিব্রতবোধ করবে নাকী অবাক হবে নাকী ইথিশার বোকামিতে হেসে উঠবে- নিজেই এক নতুন আ’তংকে পড়ে গেল। যদি ইথিশা এইরকম ভাবতে পারে বিনা কারণে তাহলে বাড়ির অন্য কেউও কী ভেবেছে? আস্তে আস্তে করে কমে যাওয়া ভয়টা পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।
চোখজোড়া করুণ করে তাকাল সে অর্ক’র পানে। ব্যথিত কণ্ঠে বলল,

‘আপু এগ্লা ভাবলো ক্যান? আপনের লগে তো আমি কথাই কইলাম না। দেহাও হয় নাই। তাও..’

‘বাদ দাও ওর কথা।’ পুতুলের কথার মাঝখানেই বলে উঠে অর্ক, ‘ও এমনই। আসলে আমরা সবাই বোধহয় এমন। ভালোবাসার মানুষ বা প্রিয় মানুষ কে কেউ কারো সঙ্গে মেলাতে পারে না। যাদের ভেতর ইনসিকিউরিটিটা বেশি তারা একটু বেশি বেশি সন্দেহপ্রবন হয়ে পড়ে। যাদের কম, তারা সবকিছুর সঙ্গে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে। ও বরাবরই আমার উপর সন্দেহপ্রবন। এ আর নতুন কিছু নয়।’

কঠিন সব শব্দ, বাক্য, পুতুলের সব কথা বোধগম্য না হলেও এতটুকু বুঝলো, ইথিশা ভীষণ ভাগ্যবতী মেয়ে। নইলে কেউ এমন কাউকে পায়! যে মানুষটা নিজের জন্য কম, অন্যের জন্য চিন্তা করে বেশি? কোথাকার পুতুল, সেই তাকে নিয়েও তার কত চিন্তা! পুতুলের হঠাৎ করেই চোখ ভরে এলো। এই পৃথিবীতে বাবা-মায়ের পর তাকে নিয়ে কারো চিন্তা থাকবে, এ যেন কল্পনীয় তার নিকট! একটা কী ধন্যবাদ দেবে? দেওয়া কী উচিত নয় এই মানুষটিকে? পুতুল চোখ তুলে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে তার মাথায় খেলে গেল নতুন একটি কথা, নতুন বুদ্ধি। এই মানুষটা..এই মানুষটা তো ওকে সাহায্য করতেই চায় প্রথম থেকে। একবার যদি ও-ও সাহায্যের জন্য হাত বাড়ায়, তবে কী দোষ হবে?
উনাকে মনের জমানো কথাগুলো বললে খুব বেশি ক্ষতি তো নেই। যতটুকু চিনেছে, বুঝতে পারছে, এ ভীষণ ভালো লোক, ভদ্রলোক!

‘ওমন চেয়ে আছো যে! কিছু বলবে?’

ফের প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দেয় ওঁ। পুতুল অস্ফুটে বলে উঠে,

‘হু, বলব।’

এরপর একবার আশেপাশে চেয়ে কেউ নেই নিশ্চিত হয়। স্বর চাপিয়ে নিচু কণ্ঠে বলে,

‘একটা উপকার করবেন?’

চোখের তারায় উৎসাহ ঝিলিক দিয়ে উঠে। এতক্ষণ কথা না বলতে চাওয়া মেয়েটা তার কাছে সাহায্য চাইছে। তবে কী অর্ক’র সঙ্গে একটু একটু করে ইজি হচ্ছে পুতুল?

‘অবশ্যই করব। বলো কী করতে হবে।’

‘আমার বান্ধবী, ওর নাম শাপলা। আপনে ওরে দেহেন নাই। আমার বাড়িত গিয়া ওর নাম জিগাইলেই যে কেউ ওর খবর কইয়া দিবো। ওর লগে আমার খুব দরকার। ওরে এই বাড়িতে কোনো ভাবে আইনা দিবার পারবেন?’

চোখজোড়া ছলছল করছে। করুণ আকুতি। নিশ্চয়ই দরকারটা ভীষণ নইলে কী আর এভাবে অনুনয় করে বলতো? অর্ক কয়েক সেকেন্ড নিচের ঠোঁট কা’মড়ে ভেবে জবাব দিলো,

‘এই বাসায় আনতে পারব কীনা জানি না। কিন্তু তোমার দরকারটা ওকে বলতে পারব। আচ্ছা, তুমি ওকে যা বলতে চাও তা আমাকে বলো। আমি গিয়ে নাহয় ওকে বলে দিবো।’

‘আপনেরে কমু?’

একদণ্ড ভাবে পুতুল। তাকে দ্বিধান্বিত দেখে অর্ক মত বদলালো,

‘আমাকে না বললে, অন্তত একটা কাগজে লিখে দাও। সেটা নাহয় দিয়ে চলে আসলাম। অনেকটা চিঠির মতো করে। বুঝেছো?’

এইবার পছন্দ হলো পুতুলের। চিঠিতে সবকিছু লিখে আরও বিস্তারিত জানতে একবার এ বাড়ি আসার আমন্ত্রণ দিলে শাপলা নিশ্চয়ই আসবে। বান্ধবীকে দেখতে আসার বাহানা করে এ বাড়িতে ঢুকলে কেউ কোনো সন্দেহও করবে না। বিষয়টা নিরাপদ।

পুতুল এদিক ওদিক মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। বলল,

‘আইজ আর পারুম না। আগামীকাইল সক্কাল সক্কাল আপনেরে আমি সবকিছু লিখা দিমু। পেছনের বাঁশ ঝাড়ে আপনে থাইকেন।’

‘বাঁশ ঝাড়? সেটা আবার কই?’

‘ওমা! আপনে বাঁশ ঝাড় দেহেন নাই এহনো? পুকুর পাড় চিনেন?’

‘ওটা চিনি।’

‘ওইনেই থাইকেন। আমি নিয়া যামু নে। এহন যাই।’

অর্ক সরে দাঁড়াতেই পুতুল হুড়মুড় করে জায়গা ত্যাগ করল। সে চলে যাওয়ার দুই সেকেন্ডের মাথায়ই মেইন গেট খুলে গেল। আখতার এসেছে। সঙ্গে একটা ছেলে। গেট থেকেই বিদায় নিয়ে চলে গেল। দরজা আঁটকে দিয়ে আখতার ভেতরে আসতে আসতে অর্কও সরে দাঁড়াল। বড্ড বাঁচা বেঁচেছে দু’জনে। ওরা কোনো অপরাধ করছে না তবুও কেন বুকের ভেতর একটা অপরাধবোধ খামচি দিয়ে ধরে রেখেছে! কে জানে!

_____

দুপুরের খাবার সন্ধ্যায় খেতে বসেছেন আখতার। তাকে দেখে বড় উৎফুল্ল লাগছে। মনে হচ্ছে মাথার উপর থেকে বিশাল বড় একটা পাথর সরে গিয়েছে। কেমন হাসি হাসি মুখ করে তিনি খাচ্ছেন। শম্পা বিষয়টা দূর থেকে খেয়াল করল। আখতারের উপর রাগ করে আছেন তিনি তাই খাবার টেবিলে খাবার বেড়ে দেওয়ার কাজটা আঁখিকে দিয়ে করিয়েছেন। আঁখি চলে গেছে। পুরো ঘর খালি। শম্পা মৃদু পায়ে আখতারের পেছনে এসে দাঁড়ালেন।

চিত্তপ্রসাদে আখতার বললেন,

‘এতক্ষণ পর আইলা?’

শম্পা মুখখানা অতিশয় গুমোট করে জবাব দিলেন,

‘নয়া মানুষ পাইলে পুরাতনরে দেখতে ভালা লাগে না। এইডাই স্বাভাবিক।’

আখতার রাগ করলেন না। শম্পার একটা হাত টেনে তার পাশের চেয়ারটায় বসিয়ে দিলেন।

‘আমি কী তোমারে একবারও কইছি যে তোমারে আমার ভালা লাগে না?’

‘কইতে হয়? বুঝোন যায় না?’

শম্পার চোখজোড়া টলমল করছে। আখতার অবাক হওয়ার ভান ধরে বললেন,

‘বড়ই গোসা (রাগ) করছো দেহি! আইচ্ছা জবান দিলাম, আইজকা রাইত টা তোর। আর কেউর না। এইবার খুশি?’

শ্বাসরোধী মুখমণ্ডল মুহূর্তেই চিকচিক করে উঠে খুশিতে। দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল আঁখি। মায়ের সঙ্গে চাচার প্রেম-কীর্তি তাকেও খুশিতে উচ্ছলিত করে তুললো। আজকের রাতটা শাহিনের সঙ্গে কাটাতে আর কোনো বাঁধা নেই। সঙ্গে সঙ্গে লুকিয়ে রাখা নিজের মুঠোফোনের মাধ্যমে শাহিনের নাম্বারে একটা ম্যাসেজ পাঠালো সে, ‘রাইত বারোটায় আইয়া পইড়েন। মায়ে থাকবো না।’
তারপর বুকের মধ্যিখানে মুঠোফোনটা চেপে ধরে শব্দহীন হাসিতে মেতে উঠে সে। শাহিনকে ঠিক কতটা ভালোবেসে আঁখি, তা বলে বোঝানো বোধহয় সম্ভব না!

_____
নিশি ঘটী বাড়ছে যত বুকের ভেতর তোলপাড় চলছে ঠিক তত! চারপাশে ঝিঁঝি পোকার বিরতিহীন শব্দ চললেও পুতুলের মনে হচ্ছে সে একা, বড্ড একা। কোথাও কেউ নেই তাকে রক্ষা করার জন্য।

আখতার ঘরের ভেতর ঢুকে পুতুলকে জড়সড় হয়ে নির্জীব পদার্থের মতো বসে থাকতে দেখে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুঁটালেন। আলনার উপর থেকে একটা গামছা, একটা নতুন লুঙ্গি, বেড়ার ফাঁকে গুঁজে রাখা কাঁ-চি একটা ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে বললেন,

‘পাত্থরের মতোন সাজবার দরকার নাই। আমি যাইতাছি গা। তোর মতো ন-টিরে ছোঁয়োনের ইচ্ছা আমার নাই।’

পুতুল বিস্ময় আর খুশি মিশিয়ে আখতারের পানে তাকাল। তার চাউনির অর্থ আখতার বুঝতে পারলেন। মনে হলো কেউ সূ-চ গরম করে আখতারের বুকের ভেতর খোঁ-চা মে-রে দিয়েছে। খুব যন্ত্রণা হলো। মেয়েটা তাকে এত ঘৃণা করে! তার চলে যাওয়া দেখে খুশিতে আ-ত্মহারা হয়ে পড়েছে। আখতার এত সহজে কাউকে খুশি হতে দেয় না। বিশেষত তাদেরকে তো না-ই যারা মনের মধ্যে রাখে এক এবং করে আরেক।

তিনি ঘুরে দাঁড়িয়ে গলার কণ্ঠস্বর ভীষণ কাঠকাঠ করে বললেন,

‘ওরে মা**! আমার যাওনের এত খুশি তোর? তোর ভাইরে যে পুলিশে ধইরা লইয়া গেছে হেই খবর জানোস? তোগো বাড়িতে শোকের মাতম লাগছে। আর তুই এইনে বইয়া খুশিতে খিলখিল করতাছোস?’

মেয়েটার ললাটে একটুখানি সুখও লেখা নেই। অল্প একটু হেসেছিল, সেই হাসি উপচে পড়া কান্না হয়ে দুই নয়ন ভাসিয়ে দিলো। নদীর প্রবাহিত ঢেউয়ের মতোন হু হু করে চোখের পানি টপটপ করে গড়িয়ে চললো রাতের বাকি প্রহরটায়। দম বন্ধ করা অস্থিরতা নিয়ে পুতুল আরেকটি কথা আবিষ্কার করল, তার স্বামী আখতার বর্তমানে তারই জা শম্পার ঘরে সুখ শীৎকারে ডুবে যাচ্ছেন।

(চলবে)
*এই পর্বে ৩ টা টুইস্ট আছে। বলুন তো,কী কী?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here