#প্রণয়ের_তৃষ্ণা (১৮)
অলিন্দ্রিয়া রুহি
_____
তীব্র ব্যথা সহ্য করতে না পেরে পুনরায় চোখ বন্ধ করে নেয় পুতুল। ওর ছোট্ট পাখির তুলোর মতো নরম শরীরটাকে দলাই মলাই করে পৈশাচিক আনন্দে ডুব মা’রেন আখতার। আযানেরও অনেক পরে তার দ্বিতীয় বার নারী দেহের মধু আহরণ সম্পন্ন শেষে ক্লান্ত দেহখানি বিছানায় মেলে ধরলেন।
চোখের কোল ঘেঁষে অনেকগুলো অশ্রু ফোঁটা গড়িয়ে পড়েছে এতকাল যাবত। এবার একটু কমলো। আখতারের পুষ্ট হাত থেকে ছাড়া পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে উঠবার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। সে উঠার আগেই আরও একবার আখতার তাকে টেনে বিছানায় শুয়ে দিয়ে তার একটা পা বিশ্রীভাবে পুতুলের গায়ের উপর উঠিয়ে দিলেন। পুতুলের খুব কাছে এসে নাক উঁচু করে লম্বা করে কিছু একটা শুঁকার ভণিতা করে বললেন,
‘তোর গাও দিয়া সোন্দর ঘেরান কয়। কী মাখোস গায়ে?’
পুতুল জবাব দেয় না। এই মানুষটির সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার জমা নেই মনের মধ্যে। আখতারের প্রশ্নকে সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করে উঠে যেতে নিলে আখতার পুনরায় তাকে চেপে ধরে। গলার স্বরে খানিকটা কাঠিন্য যোগ করে বলেন,
‘কথা কইলে কথার জবাব দেস না। এহন এর লিগা যাইয়া তোর বাপ মায়ের গলা চিপা দিয়া ধরমু? ক..’
রোষের আগুন ধ্বিক করে জ্বলে উঠে আবার নিভে যায়। ভয় লাগে, অর্ক’র মুখ থেকে যা যা শুনেছে তা যদি সত্যি হয় তবে এই লোক সত্যি সত্যি তার বাবা-মাকে কিছু একটা করতে পারবে। বলতেও পারবে। আর কিছু বললে সেটা অপমান ব্যতীত অন্য কিছু হবেও না। পুতুলের চোখের সামনে ভেসে উঠে বাপজানের শুকনো মুখখানা। সে গলার স্বর যথেষ্ট নিচু করে কোনোরকমে বলল,
‘সক্কাল হইয়া গেছে। বাইরে কাম আছে। আমারে যাইতে দেন।’
অনুভূতিতে আবিষ্ট হয়ে পুতুলকে নিজের অনেকখানি কাছে টেনে তার গাল দিয়ে পুতুলের গাল ঘঁষে দেন আখতার। তারপর হুট করেই নরম সুরে বলতে লাগলেন,
‘আমার বয়সটা একটু বেশি দেইখা আমারে তোর পছন্দ না, না?’
পুতুলের চোখ উপচে কান্না পেয়ে বসে। নিজেকে সংযত করে ভেজা গলায় জবাব প্রদান করে সে,
‘এমন কিছু না..’
‘তাইলে কী? আমি খারাপ ভাষা করি এই লিগা পছন্দ করোস না আমারে? সমস্যা কোন জায়গায়, হেইডা খুইলা ক না। আমি দেহি তোর মনের মতোন হইবার পারি কীনা।’
পুতুলের অবাক লাগছে। সেই সঙ্গে এখন একটু ভালোও লাগছে। কথায় আছে, ‘এককালের চুন্নি, আজকের গিন্নি’। আখতার যতই খারাপ হন, সে যদি চায় এবং চেষ্টা করে তবে ভালো হতেও পারবেন। পুতুলের কাছে যখন নিজেকে এভাবে সমর্পণ করে দিচ্ছেন তখন কী পুতুলের একবার উচিত নয় তাকে ভালো রাস্তায় আনার পথটা দেখিয়ে দেওয়া? পুতুল কী একবার চেষ্টা করবে? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে মনের ভেতর থেকে কোনোরকম উত্তর না পেয়ে অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়েই পুতুল বলে ফেলে,
‘আপনে গতকাল রাইতে কই আছিলেন?’
ব্যস, একটি কথা, চট করে আখতারের মেজাজ নষ্ট করে ফেলল। নিজ ইচ্ছায় একটু ভালো ভালো কথা বলছিলেন তিনি মেয়েটার সঙ্গে সেটাও আপাতত আর সম্ভব না। পুতুল একটু লাই পেয়েই মাথায় উঠে বসতে চাচ্ছে! সাহস কতবড়!
গমগমে সুরে আখতার বললেন,
‘আছিলাম কাজে। হেইডা তোমার জানার দরকার কী? কারো কাছে কৈফিয়ত দেওয়া আমি পছন্দ করি না।’
পুতুলকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে অপর পাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন আখতার। পুতুল আহত হলো। একটু আগে যে আশার আলো দপ করে জ্বলে উঠেছিল, তা আবার দপ করেই নিভে গেল। নাহ! আখতার শুধরানোর লোক নয়। পাল্টানোর লোকও নয়। এ এখন যেমন, আজীবন এমনই থাকবে। মাঝখান থেকে পুতুলের জীবন টা নষ্ট করে ছাড়বে। পুতুলের ইচ্ছে করে রাগে দুঃখে নিজের মাথার চুল নিজেই টেনে টেনে ছিঁ’ড়ে ফেলতে।
নিজেকে সামলে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল পুতুল। শাড়ির কুঁচি গুলোকে গুছিয়ে নিতে নিতে বলল,
‘আমারে দুইডা ছোডো শাড়ি আইনা দিবেন? এত্তবড় শাড়ি পরার অভ্যাস নাই। কাম করতে গেলে বিরক্ত হইয়া যাই। গা খচখচ করে কেমন জানি।’
‘তা অভ্যাস থাকবো কেমনে ছোডোলোকের বাচ্চা? দিবানি।’
রাগে গজগজ করে বললেন আখতার। পুতুল চিকচিক করা চোখ মেলে তাকাল। লোকটাকে যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে। একটা মানুষ এতোটা জানোয়ারের মতো আচার আচরণে কীভাবে হতে পারে! মনের মধ্যে মায়াদয়া বলতে কিচ্ছু কী নেই? হতাশা মিশ্রিত একটি নিঃশ্বাস পুতুলের নাসিকাপথ ভেদ করে বেরিয়ে আসে। দ্রুত রুম ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে সে।
______
শম্পা এখনো উঠেননি। বাড়িতে কেউ জেগে নেই পুতুল বাদে। পুতুল ঘুরে ঘুরে পুরো বাড়ি দেখলো। বারান্দা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ থেমে বাড়ির দেয়াল গুলো তীক্ষ্ণ চোখে পরখ করল। অর্ক’র একটা কথা মনে ঘুরছে।
‘এই বাড়ির প্রতিটি দেয়াল কোনো না কোনো অনৈতিক কাজের সাক্ষী।’ সত্যিই কী তাই? হাত বুলিয়ে একটি দেয়াল ছুঁলো। কেন যেন সারা গায়ে কাঁ’টা দিয়ে উঠে। মনে হয়, অর্ক সত্যি বলছে। আখতার যতটা খারাপ রূপ দেখিয়েছেন, তার চেয়েও বেশি নিকৃষ্ট উনি। পুতুল ভাবে, এগুলো কেন বিয়ের আগে জানলো না সে! এখন কীভাবে দিনের পর দিন সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে জীবন কাটাবে? এটাকে আদৌও কোনো জীবন বলে? বলে না! কী করবে পুতুল? কই যাবে? কাকে বলবে তার মনে চলা ভয়াবহ ঝড়ের কথা? কী তাণ্ডব টাই না হচ্ছে ভেতরে ভেতরে। পুতুল মৃদু শ্বাস ছাড়ে। যত ভাববে ততই মাথা ব্যথা বাড়বে। কিন্তু সমাধান মিলবে না। তার চাইতে যতটা সময় আখতারের থেকে দূরে থাকা যায়, ততই ভালো। নিজের পায়ে নিজে কু’ড়াল মে’রেছে। এখন তো ভোগ করতেই হবে।
শম্পা জেগে থাকলে কী করবে বা না করবে তা জিজ্ঞেস করা যেতো। যেহেতু সে ঘুমিয়ে তাই পুতুল রসুই ঘরের দিকে গেল না। নিজের বাড়িতে প্রতিদিন সকালে উঠে আগে ঘর-বাড়ি আর উঠান টা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করত পুতুল। এখানেও তাই করল। পাক্কা চল্লিশ মিনিট লাগলো পুরো বাড়ি আর উঠান টা পরিষ্কার করতে গিয়ে। হাপিয়ে উঠল পুতুল। পুরো শরীর ঘামে ভিজে জবজব করছে। গা ঘিনঘিন লাগছে। এখনো কেউ উঠেনি। গোসলটা সাড়তে পারলে ভালো হয়। পুতুল ঝাড়ু রেখে নিজের ঘরে গেল। আখতার বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছেন। এই লোকটাকে গ’লা টিপে মে’রে ফেললে কেমন হয়? পুতুল ভেবে হেসে উঠে। তার অত শক্তি নেই, সাহসও নেই। কিন্তু যদি মা’রা যেতো, তবে খুব ভালো হতো। ওর জীবন টা বাঁচতো। আচ্ছা, সত্যিই কী বাঁচতো? গরীব মেয়েদের বিধবা হলে তো আরেক জ্বালা!
পুতুল ভারী ভারী কয়েকটি নিঃশ্বাস ছাড়ে। যাই ভাবে তাতেই শুধু নেগেটিভ উত্তর! নিজের মনও নিজের সঙ্গ দিচ্ছে না, হাহ্!
বাড়িতে দুইটা কলপাড়, একটা ছোট পুকুর, পেছনে বড় খাল। ছোট পুকুরটা আখতারের দাদার বাবার আমলে খনন করা হয়েছিল। আকারে গোল, খুব বেশি বড় না। তবে গভীর। এর ভেতর আগে মাছ চাষ করা হতো। এখন আর করা হয় না। পানিও কেমন ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। তাই কেউ পুকুরের পানি ব্যবহার করে না। পুকুরটা অবহেলায় পড়ে রয়েছে। পেছনের বড় খাল যেটা বড় নদীর সঙ্গে গিয়ে মিশেছে, সেটা থেকে পানি এনে আগে কাজ করা হতো। এরপর কলপাড় বসানো হলো। এখন আর খালেও কেউ যায় না। সবাই চাপ কলের মাধ্যমে পানি তুলেই কাজ সাড়ে। একটা চাপকল উঠানের মধ্যিখানে। এখান থেকেই আশেপাশের অনেক বাড়ির মানুষ এসে পানি তুলে নিয়ে যায়। আরেকটা চাপকল বাড়ির পেছনের রসুইঘরের পাশে। ওটা ব্যক্তিগত। শুধুমাত্র বাড়ির লোকেরা ব্যবহার করে। একে তো ভোর সকাল, চাপকলের পানি অনেক গভীর থেকে আসে বিধায় এমনিতেই ভীষণ ঠান্ডা থাকে। পুতুলের শীত শীত লাগলো। সে কল পাড়ে গেল না। সরাসরি পেছনের বড় খালে চলে গেল গোসলের জন্য। এত সকালে আশেপাশে তেমন কেউ থাকে না তাই চিন্তারও কিছু নেই। দ্রুত গোসলটা সেড়ে উঠে গেলেই কেল্লাফতে।
বড় খালে কোনো ঘাট নেই। নিচু কাদামাটির সঙ্গে পানি এসে মিশেছে। সেই কাদামাটিতে দাঁড়িয়েই গায়ে সাবান মাখালো পুতুল। তারপর একটু একটু করে এগিয়ে যেতে লাগলো। নিজেকে প্রায় কোমড় পানি সমান জায়গায় নিয়ে গেল একের পর এক ডুব দিতে লাগলো বিরামহীন ভাবে। ঠিক তখনই শোনা গেল একটি কণ্ঠ, খালটা চওড়ায় কম হলেও লম্বায় বিশাল…
খালের অপরপাশ থেকে একজন নারী কণ্ঠ বলছে,
‘এই সক্কালে এমন ডুবান ডুবাইয়ো না। ঠান্ডা লাইগা যাইবো।’
কণ্ঠ শুনে পুতুল থামে। চোখের পাতা পানিতে ভিজে ভারী হয়ে গেছে। তা টেনেটুনে খুলে দু’হাতে মুখের পানি সরিয়ে স্পষ্ট চোখে তাকাল ও। দেখল, একেবারে কম বয়সী একটি যুবতী মেয়ে। পুতুলের চেয়ে দুই-তিন বছরের বড় হবে। ঘর্মাক্ত মুখখানা চিকচিক করছে। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি। পুতুল এর আগেও একে দেখেছে তবে কখনো কথা হয়নি। মাঝে মাঝে এ বাড়ি এলে খাল পাড়ে দাঁড়ালে এই মেয়ের দেখা পাওয়া যেতো। প্রায় সময় ওকে দড়িতে কাপড় মেলে দিতে অথবা দড়ি থেকে কাপড় তুলতে দেখা যেতো। আজ এই প্রথম ওর কণ্ঠ শুনলো।
পুতুলকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকতে দেখে মেয়েটা মৃদু হাসে। বলল,
‘অমন কইরা চাইয়া আছো ক্যান? ভালা কথা কইলাম।’
পুতুল জবাব দিলো না। তবে মেয়েটির কথা রাখলো। আর ডুব দিলো না। ধীরে ধীরে এবার পাড়ে উঠতে লাগলো। আবারও এসে কাদামাটিতে দাঁড়ালো। শাড়ির আঁচলটা চিপড়ে একটু শুকনা শুকনা করে তাই দিয়ে নিজের হাত,মুখমণ্ডল,গলা,মাথা মুছতে শুরু করল।
মেয়েটি আবারও বলল,
‘এইনে আইয়া যে গোসল দিছো, তোমার জামাই দেখলে দুনিয়াদারি এক কইরা ফালাইবো। শিগগির ঘরে যাও। কেউ দেহার আগেই।’
পুতুলের রাগ লাগলো। সবখানেই এই আখতার আর ওর কড়াকড়ি বারণ! সেটা এতক্ষণ নিজের ঘরের মানুষের ভেতর থাকলেও এখন বাহিরেও ছড়িয়ে পড়ছে। এই মেয়েও একে জ্ঞান দিচ্ছে! যেন এ আখতারের আগের বউ। আখতারের ব্যাপারে এই বাড়ির ব্যাপারে সবকিছু জানে!
পুতুল কাঠখোট্টা গলায় জবাব দিলো,
‘সেইটা আমি বুঝুম। তোমার মাথা ঘামান লাগবো না।’
পুতুলের রাগ রাগ কণ্ঠস্বরেও মেয়েটির ভাবান্তর হলো না। সে পূর্বের ন্যায় মৃদু হেসে বলল,
‘গোসা করো ক্যান? তোমার ভালার লিগা কইলাম। আইচ্ছা আর কমু না। গোসা কইরো না।’
পুতুল চুপ করে রইলো। সাবানের কেসটা হাতে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা করল। গোসলের পর শরীর ঠান্ডা হয়ে এলেও মন ঠান্ডা হয়নি। হুট করে এই উটকো ঝামেলাটা কোথা থেকে এলো আর ওর মগজ গরম করে দিলো! পুতুল বিড়বিড়িয়ে স্বগতোক্তি ছাড়ে, ‘যত্তসব!’
______
ভেজা শাড়ি দড়িতে মেলে দিচ্ছে পুতুল। শাড়ি বদলে চুলগুলো গামছা দিয়ে বেধে ফেলেছে ও। দেখতে স্নিগ্ধ শীতল লাগছে। মাথার উপর রোদ ফুঁটেছে। ঘড়ির কা’টায় সকাল সাতটা। প্রত্যেক বাড়ি থেকে ধোঁয়ার গন্ধ আসছে। সবার ঘরে উনুন ধরে গেছে। এই বাড়িতে এখনো রান্নার জোগাড়যন্তর হয়নি। না হোক, না খেয়ে ম’রুক সবাই। সব মাথাব্যথা কী পুতুলের?
শম্পা মাত্রই ঘরের বাইরে বেরিয়েছেন। ওমনি পুতুলের সতেজতায় ভরা রূপ তার চোখে পড়ল। সদ্য গোসল সেড়ে আসা ফুলটাকে দেখে তিনি কেমন কুঁকড়ে উঠলেন নীল ব্যথায়। আখতার ঘরে গিয়ে একেও সোহাগ করতে ভোলেনি!
সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে নিজেই সংযত করেন শম্পা। এটা তো অনেক আগে থেকেই তিনি জানতেন, একদিন আখতার বিয়ে করবে। তার নতুন বউ আসবে। শম্পার আদর সোহাগে ভাগ বসাতে কেউ আসবে। তবুও কেন যেন মানতে পারেন না উনি। মুখে যতই বলুক, আখতারের অন্য সম্পর্ক নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই, কিন্তু আদতে পুতুলকে মানতে ভীষণ কষ্ট হয়। সেই সঙ্গে এটা ভেবেও কষ্ট লাগে যে পুতুল আর আখতারের সম্পর্ক টা সমাজের চোখে স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন হলেও তাদের সম্পর্ক টা অনৈতিক, লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে হয়। চাইলেই সবার সামনে আখতারকে কিছু একটা বলা যায় না। চাইলেই আখতারকে নিজের করে পাওয়া যাবে না। সবকিছুর জন্য শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা-ই করে যেতে হবে!
পুতুল শম্পাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো। কথা বলতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তবুও জোরপূর্বক বিনয়ের সঙ্গেই বলে উঠল,
‘রানবেন না?’
প্রত্যুত্তরটা স্বাভাবিক ভাবে, ঠান্ডা স্বরে করতে পারলেও কেন যেন ঝামটা মে’রে উঠেন শম্পা। আক্রোশ পূর্ণ রাগ নিয়ে বললেন,
‘হেইডা আমারে জিগাও ক্যান? নিজের বোধবুদ্ধি নাই? এতদিন তো একলা হাতে আমিই সবকিছু সামলাইছি। এহন তোমার পালা। তুমি সামলাও।’
কথাগুলো ছুঁড়ে দিয়েই শম্পা ভেতরে ঢুকে ঘরের খিল আঁটকালেন। বুকের ভেতরটা তেঁতো স্বাদে ভরে গেল। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কান্না সামলালো পুতুল। কেমনতর কথা! একটু কিছু হলেই চোখ ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে চায়! কী অদ্ভুত।
রসুইঘরের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছি কী বাড়ায়নি, সিড়িঘর থেকে একজনকে বেরিয়ে আসতে দেখে আকাশ পাতাল উলোটপালোট হয়ে গেল পুতুলের। আগত ব্যক্তিটিও নিশ্চয়ই আশা করেনি পুতুল এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। ওঁ-ও হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে রইলো। কথা বেরোলো পুতুলের মুখ থেকেই। বিস্ময়, হতবাক, হতভম্ব, সবকিছু মিলেমিশে একটা জগাখিচুরি ভাবভঙ্গি নিয়ে বলে উঠল,
‘শাহীন ভাই! আপনে এইহানে?’
শাহীন জবাব দিতে পারল না। কেমন গুটিয়ে গেল। তারপর কোনোরকম জবাব না দিয়েই লম্বা লম্বা পা ফেলে পুতুলকে পাশ কাটিয়ে উঠোনের দিকে ছুটলো। পুতুলের মনে পড়ল অর্ক’র কথা, আঁখির সঙ্গে একটা ছেলে এই বাড়িতে ঢুকেছে। তবে কী এই…
পুতুল আর ভাবতে পারল না। শাহীনই কী আঁখির সঙ্গে ছিল, তা নিশ্চিত হতে সেও ছুটলো অর্ক’র ঘরের দিকে…
(চলবে)