প্রতিশোধের_আত্মা পর্ব_০৩,৪

0
1335

প্রতিশোধের_আত্মা
পর্ব_০৩,৪

জান্নাতের নগ্ন দেহ( গায়ে একটি সুতোও
নেই) সবার চোখের সামনে দৌড়ে
যাচ্ছে,শরীরের প্রতিটি স্তানে
ক্ষতবিক্ষত নখের আচড়।জান্নাত সেই নগ্ন
দেহ নিয়ে কাদতে কাদতে নিজের রুমের
দিকে ছুটে যাচ্ছে। সব ছেলে মেয়ে
জান্নাতের শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে।
সবার মাঝখান দিয়েই জান্নাত ছুটে চলছে।
আর মনে মনে একটাই ভাবনা আঘাত করছে
তাকে, কে তাকে এভবে এট্যাক করলো,
রিয়াজের আত্মা নাতো?
চারপাশে যে এতজন ছেলেমেয়ে ওর দিকে
তাকিয়ে আছে, সেই দিকে জান্নাতের
খেয়ালই নেই। যেন এক অজানা রহস্যের
ভিতরে ঢুকে আছে জান্নাত।নগ্ন দেহটা
নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে অবশেষে জান্নাত তার
রুমের ভিতর ঢুকে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ
করে দিল। সবাই দৌড়ে এসে ওর দরজার
বাহির থেকে ধাক্কাতে থাকে। কিন্তু
জান্নাতের কোন সাড়াশব্দ বাহির হচ্ছিল
না। অনেকটাই ভয় পেয়ে যায় সবাই, আবার
অনেক টেনশনে পড়ে যায় সবাই। সবার মনে
একটাই প্রশ্ন, এই নগ্ন দেহ নিয়ে কেন সবার
সামনে পালিয়ে এসেছে জান্নাত,কোথা
থেকে এসেছে, কি জন্য এসেছে, কি হয়েছিল
তার সাথে, কেউ বুঝতে না পারলেও
সামিয়া কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে।
কারণ সামিয়া সেই ব্যক্তি, যাকে মৃত্যুর
আগে জান্নাত শেষ এসএমএস করেছিল এবং
জান্নাতের সাথে অস্বাভাবিক ভাবে ঘটে
যাওয়া সবগুলো ঘটনা ও শেয়ার করেছিল
সামিয়ার কাছে। সবাই দরজার বাহির
থেকে এমন জোরে পিটাচ্ছে, যেন পুরো
হোস্টেলের মধ্যে শুধু সে দরজার
আওয়াজটাই এদিক সেদিক ধাক্কা খেয়ে
বেড়াচ্ছে। অবশেষে সবাই কিছু না পেরে
জান্নাতের রুমের দরজা লাথি দিয়ে
ভেঙ্গে ফেলে। সবাই রুমের ভিতরে প্রবেশ
করতেই আতঙ্ক হইয়ে যায়, জান্নাতকে এই
অবস্থায় তারা সেখানে আবিষ্কার করবে,
সেটা কারোই কল্পনার মধ্যে ছিল না।
জান্নাত তার সেই নগ্ন দেহ নিয়ে ফ্লোরের
মধ্যে পড়ে আছে, জান্নাতের বুক রক্তে
ভেসে আছে। যেন কেউ একটা ছুরি নিয়ে
তার দুই স্তনের মধ্যে অসংখ্য ভাবে আঘাত
করেছে।
জান্নাতের স্তন ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে
আছে। অবাক করার মত হচ্ছে জান্নাতের
যৌনি দিয়ে অস্বাভাবিক ভাবে রক্ত
ঝরছিল। রক্তের পরিমান এতই বেশি ছিল
যে রুমের মধ্যে পুরো ফ্লোর রক্তে ভেসে
যাচ্ছে। সবাই জান্নাতের এই নগ্ন মৃতদেহ
দেখে জোরে চিৎকার করে বাকিদের কেউ
উপস্থিত করে ফেলে। কান্নাকাটির ঝড়
উঠেছে সেই হোস্টেলের মধ্যে। কিছু
ছেলেরা জান্নাতের নগ্ন মৃতদেহ নয়,
জান্নাতের নগ্ন দেহ দেখতে মুগ্ধ।
অনেকে ভিডিও করে, পিক তুলে সাথে
সাথেই ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার,
হোয়াটসঅ্যাপে আপলোড করে দেয়। ওরা যে
জান্নাতের মৃতদেহ সবাইকে দেখাচ্ছে, এর
কারণ মূলত এটা নয়, কারণ হচ্ছে ওরা
জান্নাতের নগ্ন দেহ ভাইরাল করছে। অনেক
ছেলে-মেয়ে প্রতিটি স্ট্যাটাসে কস্টের
রিয়েক্ট দিচ্ছে, অনেকে তাঁকে
জান্নাতবাসী করার জন্য দোয়া করছে।
কিন্তু আসলেই কি তাদের এ মন্তব্য গুলো
সঠিক? নাকি শুধুমাত্র লোক দেখানো।
জান্নাতের এ ব্যাপারটা ছড়াছড়ি হয়ে যায়
পুরো বাংলাদেশ। কেউ ডাটা অন করলেই
নোটিফিকেশনে আসে,
” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে
কেউ নিসশংস ভাবে খুন ও রেপ করে মেরে
ফেলেছে ”
জান্নাতের বাড়ির লোক জানতে পেরে
জান্নাতের লাশটি পর্যন্ত নিতে আসেনি।
সবাই ভেবেছিল জান্নাত হয়তো কোন
ছেলের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে,
এরপর সেই ছেলেটি জান্নাতকে এভাবে
মেরে ফেলেছে।
সমস্ত ইন্টারনেটের মধ্যে ব্যাপারটা
ছড়াতে থাকে। অনেক ছেলেরা ফেমাস
হওয়ার জন্য জান্নাতকে নিয়ে বানিয়ে
বানিয়ে অনেক খারাপ গল্প লিখে ফেলে,
জান্নাতের চরিত্র নিয়ে শুরু করে দেয় গুজব
ছড়ানো। ফেসবুকে তোলপাড় হয়ে যায়
জান্নাতের ব্যাপারটা নিয়ে।
এভাবে কেটে যায় প্রায় এক মাস।
হয়ে যায় আবার সবগুলো স্বাভাবিক।
এখন কেউ জান্নাতের নামটি পর্যন্ত মনে
রাখে না। কিছুদিন আগে যে ছেলে প্রতি
ঘন্টা পর পর জান্নাতকে নিয়ে স্ট্যাটাস
দিত, সে ছেলেটিকে ও যদি এখন জিজ্ঞেস
করা হয় জান্নাতকে চিনো কিনা, সে বলবে
নামটা পর্যন্ত শুনেনি। আবার নীরবতা
নেমে আসে ফেসবুকে। সবাই পরের
আরেকটা ঘটনার জন্য খাপ পেতে থাকে,
কখন আরেকটি ঘটনা প্রকাশ হবে, তখন
তারা এটা নিয়ে গুজব ছড়ানো শুরু করে
দিবে, কখন তারা একটা কাহিনী কে
আরেকটা কাহিনী বানিয়ে নিজেদেরকে
ফেমাস করে তুলবে সেই প্রতীক্ষায় বসে
থাকে।

এক মাস পর মায়ার ফোনের মধ্যে একটা কল
আসে, ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে কল
দিছিলো সামিয়া। সামিয়া ফোন কেন
দিয়েছে মায়াকে, মায়া তা ঠিক বুঝে
উঠতে পারছে না। এর কারণ হচ্ছে
জান্নাতের মৃত্যুর পর তারা একে অপরের
সাথে এখনো পর্যন্ত কোনো কথা বলেনি।
এর পেছনের কারণ এই নয় যে তারা ভয়
পেয়েছে। এর পিছনের কারন হচ্ছে এটা,
তারা যেন কোন পুলিশের ঝামেলায় না
পড়ে। হয়তো অনেকে এটাও বলেছে যে
তাদের বান্ধবীরা হয়তো ওর খুনের সাথে
জড়িত ( জান্নাতের খুন)
ঘটনাটা কতটা সঠিক, কতটা গুজব, সেদিকে
তো কেউ তাকাবে না। সবার সামনে কোন
তদন্ত আসলেই সেটা নিয়ে মাথা ঘামানো
শুরু করে আমাদের যুগের মানুষ। এই ভয়ে সব
বান্ধবীরা নিজে থেকে আলাদা হয়ে যায়।
হোস্টেল চালু হয়েছে প্রায় 17 দিন হয়ে
গেছে। কেউ এখনো পর্যন্ত হোস্টেলে
আসেনি। নিজেদের মন মানসিকতা শক্ত
করার পর হোস্টেলে আসবে বলে
জানিয়েছে সবাইকে।
এই সময়টা চলাকালীন এর মধ্যে মায়া অবাক
হলো সামিয়ার ফোন পেয়ে। এক মাস কোন
যোগাযোগ নেই, তার উপর কেন ফোন দিল
ভাবতে ভাবতে মায়া ফোনটা রিসিভ
করলো। ওপাশ থেকে সামিয়ার কন্ঠ ভেসে
আসলো)
— কিরে, কি অবস্থা তোর?
–এইতো ভাল আছি, তুই কেমন আছিস?
–আছি কোনরকম।
–কোনরকম কেন?
–জানিস? জান্নাত আর তানিয়ার মৃত্যুর
পিছনে অনেক বড় এক রহস্য লুকিয়ে আছে?
— কেন কি হয়েছে?
–অনেক কিছু দোস্ত, একটা জিনিস তুই
খেয়াল করেছিস? ওদের দুজনেরই মৃত্যুর
পিছনে একই রকম ঘটনা আছে।
— যেমন..?
–ওদের দুজনের মৃত্যু হয়েছে অনেক
অস্বাভাবিক ভাবে। প্রত্যেকের মৃত্যু
হয়েছে কোন ফ্লোরের উপর। তুই খেয়াল করে
দেখ, আমরা একটা ছেলেকে আজ থেকে আরও
7 মাস আগে জোর করে সেক্স করেছিলাম।
ওই ছেলেটাকে কিন্তু আমরা ফ্লোর এর উপর
রেখে সেক্স করেছিলাম। আবার এদিকে
জান্নাত এবং তানিয়ার মৃত্যু ফ্লোর এর উপর
হয়েছে। রিয়াজের মাথা ফেটে রক্ত
ঝরেছিল, এখানেও তাদের মৃত্যুর পর রক্ত
ঝরে ফ্লোর ভেসে যায়। আমরা রিয়াজের
গোপনাঙ্গ এর উপর হামলা চালিয়েছি। এটা
তুই খেয়াল করেছিস? ওদের দুজনেরই
গোপনাঙ্গের উপর হামলা চালানো হয়েছে,
এরপর অস্বাভাবিক ভাবে তাদের মৃত্যু
হয়েছে।
–তুই কি বলতে চাচ্ছিস? এসবের পিছনে
রিয়াজ আছে? তাকেই তো আমরা এসব
করছি।
— হ্যাঁ আমি সেটাই বলতে চাচ্ছি। রিয়াজ
ফিরে এসেছে, ওর আত্মা এসে জান্নাত
এবং তানিয়াকে মেরে ফেলেছে। বাকি
আছি আমরা ছয় জন। ধীরে ধীরে সে
আমাদের কাছে চলে আসবে। আমি জানি
না পরের টার্গেট টা কে, তবে এইটা বলতে
পারি, আমাদের মধ্যে আরও একজন কিছুদিন
পর মরতে চলছে।
–দেখ দোস্ত, তুই এসব বলছিস?
হা,
আচ্ছা,পরিস্থিতি হিসেবে সবই মেনে
নেওয়া যায়, কিন্তু এতটা শিউর কিভাবে
হচ্ছিস তুই, মানে এসব যে রিয়াজের কাজ,
সেটা কিভাবে বুঝলি।
–আমার বাসার পাশে একজন হুজুর আছে,
উনি এসব প্রেতাত্মা নিয়ে বিশেষ করে
কাজ করে থাকেন। উনার কাছ থেকে
শোনা। আমরা রিয়াজকে মারার পরে
আবার ফিরে এসেছে রিয়াজ।হুজুরকে
বলেছি এসব কাওকে না জানাতে। কিন্তু
আরেকটা কথা। ওর আত্মা আমাদের কে
মেরে ফেলার জন্য ফিরে আসেনি, ওর
আত্মা এসেছে আমাদের সাথে শারীরিক
সম্পর্ক করে, আমাদেরকে দিনে দিনে দুর্বল
করার জন্য। আমাদের সাথে এমন ভাবে
শারীরিক সম্পর্ক করবে, যার কারণে
আমাদের শরীরের সমস্ত শক্তি কিছুদিন পর
অটোমেটিক চলে যাবে। তারপর সে
আমাদেরকে মারতে হবে না, আমাদের
শরীরের এমব অবস্তায় হবে যে, আমরা
নিজেরাই নিজে নিজে মারা যাবো।

— ফাজলামি করিস না, জান্নাত এবং
তানিয়া সেদিনই মরেছে, যেদিন তাদের
উপর হামলা হয়েছিল। রিয়াজ যদি এভাবে
মারতে চায়, তাহলে তারা একদিনের মাঝে
কিভাবে মরে গেলো?
— আমি তোকে সেটাই বলতে চাচ্ছি, এর
পিছনে আরো একটা হাত আছে। আরও একটা
আত্মা আছে, যে আমাদেরকে মারার জন্য
খাপ পেতে আছে।
— মানে? আরো একটা আত্মা? কি বলতে
চাচ্ছিস তুই হা?
–হ্যা, আমি ঠিকই বলছি। রিয়াজ এর কাজ
রিয়াজ চালাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু রিয়াজের
পরে আরও একটা আত্মা আছে, যে আমাদের
উপর হামলা করে। ওরা দুজনেই একসাথে
হামলা করে, এবং টার্গেট একজনকেই করে।
একজন একজন করে তারা সবাইকে মারবে।
প্রথমে একটি আত্মা আমাদের উপর হামলা
করবে, তারপর দ্বিতীয় আত্মাটি এই সব
করবে।
— এসব কি বলছিস আমি কিছু বুঝতেছি না..!
আরেকটা আত্মা আসলো কোথা থেকে?
— হ্যাঁ আরেকটা আছে, জান্নাতের মৃত্যুর
আগে সে আমাকে সব বলেছিলো। একটা
অজানা নাম্বার থেকে তার কাছে ফোন
আসছিলো। ব্যাপারটা আমিও জানতাম,
কারন সেই নাম্বার আমিও দেখেছিলাম।
নাম্বারটি হচ্ছে 3063। ওই নাম্বারটাই
প্রথম জান্নাতের উপর অ্যাটাক করে,মানে
ভয় দেখায়।আবার তাকে ৫ম তলায়ও নিয়ে
যায়,জান্নাত আমাকে মেসেজে
জানিয়েছিলো। এইটা ছিল অন্য একজন
আত্মা, তারপর জান্নাতের ওই হাল করার
পর রুমের ভিতরে যখন জান্নাত লজ্জায়
কষ্টে ঢুকে পড়ে। তারপরে জান্নাতের উপর
হামলা করে রিয়াজের আত্মাটি। কিন্তু
দ্বিতীয় ধাক্কাতে ওর উপর অ্যাটাক
করেছিল সেই রিয়াজ, ওটা নিশ্চিত।
কিন্তু প্রথমে যে আত্মাটি জান্নাতের উপর
অ্যাটাক করেছিল, সে রিয়াজ না, সে হচ্ছে
একটা বাচ্চা মেয়ে।
— আচ্ছা তুই কি পাগল টাগল হয়ে গেছিস?
এখানে বাচ্চা আসলো কোথা থেকে,উফফফ
এতো পেছানো কেন সব।
— সেটা আমি জানি না, তবে রিয়াজের
আত্মার সাথে আরেকটা আত্মা আছে, যে
আমাদের উপর হামলা করছে.. সে একটা
বাচ্চা মেয়ে, বয়স মাত্র ৮ বছর..
— কি? ৮ বছর? ওই ৮ বছরের একটা বাচ্চা
আমাদের উপর হামলা করছে?? কিন্তু কেন,
আমরা তো কোন ৮ বছরের বাচ্চাকে
কোনদিন কিছু করিনি।
— সেটা তো আমিও জানি না দোস্ত।
–কিন্তু এই বাচ্চাটি কে হতে পারে? কে সে
কি তার নাম?
— জানিনারে
— এখন এ বিপদ থেকে আমরা বাঁচবো
কিভাবে।
–এর প্রতিরোধ আমি বের করেছি, হুজুরের
কাছ থেকে আমি ছয়টা তাবিজ নিয়ে
নিয়েছি.. এ তাবিজটা যতক্ষণ আমাদের
সাথে থাকবে, ততক্ষণ ওই আত্মা দুটো
আমাদেরকে স্পর্শ করতে পারবেনা। আমি
আরো বাকি 4 জনকে পাঠিয়ে দিয়েছি এই
তাবিজ, তাদেরকেও আমি ফোন দিয়ে এ
ব্যাপারে বলেছি। তোকে আমি পাঠিয়ে
দিয়েছি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। তুই
তাবিজটা নিয়ে হাতে পড়বি। ভুলেও
তাবিজটা খুলবিনা, না হলে তোর মৃত্যু
নিশ্চিত।
–ঠিক আছে দোস্ত, আমি তাবিজ নিয়ে
আসব। আর হ্যাঁ, এখন কি সিদ্ধান্ত
নিয়েছিস, হোস্টেলে কি যাবি?
— হ্যাঁ আগামী 13 তারিখে সবাই ঢাকা
চলে আসিস। সবার হাতে তাবিজ থাকলে
ওই আত্মা আমাদেরকে আর কিছু করতে
পারবে না। আমাদের জীবন অনেক বিপদের
মধ্যে আছে। তবে তাবিজটা আমাদের
হাতে একটানা তিন মাস থাকলে,ওই আত্মা
দুটো আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবে। আমরা
বেঁচে যাব অভিশপ্ত জীবন থেকে। তাই এই
তিন মাস আমাদেরকে তাবিজটা সাথে
সাথে রাখতে হবে।
— ঠিক আছে, তাহলে 13 তারিখে সবাই
ঢাকা আসবো।
( ফোনটা রেখে দেয় মায়া। এসব আত্মা,
তাবিজে ওরা কেও বিশ্বাসী ছিলোনা।
কিন্তু কি আর করার, সামিয়ার কথামত
কুরিয়ার সার্ভিসে যে তাবিজ এসেছিল,
সেটা নিয়ে আসে। এরপর তার হাতেও সুন্দর
করে বেঁধে ফেলে।
এদিকে পিংকিকেও সামিয়া ফোন দিয়ে
সবকিছু বলে, পিংকিও তাবিজটা হাতে
রেখেছে। পিংকির একটা বদ অভ্যাস ছিল,
গোসল করার সময় সে নিজের শরীরে একটা
সুতো পর্যন্ত রাখে না। কিন্তু এখন তো
হাতে তাবিজ, এইটা যদি খুলে, তাহলে তার
জীবন বিপদে পড়তে পারে। সেজন্য সে
তাবিজটা না খুলেই ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল
করতে লাগলো।
তাবিজটা হাতে থাকায় ওর কেমন একটা
অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল, ওর মনে হচ্ছে মাত্র
10 মিনিটের জন্য না হয় খুলে রাখি, এরপর
আবার পড়ে নিব।
পিংকি তাবিজ খুলে এক পাশে রাখল, এরপর
গোসল করায় মন দেয়। অদ্ভুতভাবে পিংকির
সাথে কিছুই ঘটেনি। পিংকি ঠিক ভাবে
গোসল শেষ করে জামা কাপড় বদলে নেয়।
কিন্তু একটা মিস্টেক হয়ে গেছিল, পিংকি
তাবিজটা যেখানে রেখেছিল, তাবিজটা
সেখানেই পড়ে আছে। এরপরে তাবিজটি
নিতে সে ভুলে গেছে।
পিংকি রুমে এসে স্পিকারে একটা গান
চালু দিয়ে, নিজে নিজে ডান্স করতে
লাগলো। ওর এই ডান্সের পিছনে কারণ
আছে, কারণ ওর বয়ফ্রেন্ড এর সাথে বিয়ে
ঠিক হয়েছে। ২ পরিবারের সাথে কথা
হয়েছে, কিছুদিন পর তারা এঙ্গেজমেন্ট
শেষ করে বিয়ের তারিখ ফেলবে.. সে
কারণে পিংকি একটু উৎসাহিত হয়ে আছে।
পিংকি ডান্স করতে করতে একসময়, হঠাৎ
করে পিংকির হাতের ধাক্কা লেগে,
টেবিলের উপর থেকে ফুলদানীটা ফ্লোর এর
মধ্যে পড়ে যায়। ফুলদানি ভাঙ্গার শব্দ শুনে
পিংকির আব্বু আম্মু দৌড়ে আসে। পিংকির
রুমের দরজাটা নক করতেই পিংকি স্পিকার
ভলিউম কমিয়ে দেয়। দরজার সামনে গিয়ে
দাঁড়ায় পিংকি।)
–কিরে, কি হয়েছে।
–আরে না, ডান্স করছিলাম, তাই হাতে
ধাক্কা লেগে ফুলদানীটা পড়ে যায়।
–আচ্ছা, তুই কি আর মানুষ হবি না? এই বয়সে
তুই এখনো পোলাপানদের মত আচরন করছিস..
ডান্স করবি কর, তবে আশপাশ ভালো করে
দেখে করিস।
— ঠিক আছে।
( পিংকি দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আবার
ভলিয়ম বাড়িয়ে দেয়। এরপর ডান্স করতে
করতে হঠাৎ খেয়াল করলো, পিংকির পিছন
থেকে কেউ তাকে জড়িয়ে তার সাথে
ডান্স করছে। কিন্তু পিংকি ব্যাপারটা
এড়িয়ে যায়, তার মনে হচ্ছিল ডান্স করতে
করতে হয়ত শরীর থেকে যে তাপ বের হচ্ছে,
সেই তাপ অনুভব করে সে রকম কিছু ভাবছে।
কিন্তু এই মন মানসিকতা পাল্টে দিয়ে
কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো, ওর গলার মধ্যে
কারো ঠোটের স্পর্শ। পিংকি দৌড়ে
আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, এরপর
আড়চোখে গলার দিকে তাকিয়ে দেখে,
গলা বেয়ে রক্ত ঝরছে। পিংকি ব্যাপারটা
দেখে চমকে যায়। এরপর হাতের দিকে
তাকিয়ে দেখে, হাতে তাবিজ নেই। ভুলে
গেছে তাবিজটা সে বাথরুমে রেখে
এসেছে। ভয়ে পিংকি দৌড়ে বাথরুমের
দিকে যাবে, তখনই পিংকি হোচট খায়।
যেনো কেও তাকে ধাক্কা দিয়েছে।
পিংকি ফ্লোর এর মধ্যে পড়ার সাথে সাথে
ওর হাত থেকে মোবাইলটা উড়ে গিয়ে
দেওয়ালের সাথে আঘাত খায়। আঘাতে
মোবাইলটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
পিংকি আবার ফ্লোর থেকে উঠে যাবার
সময়, আগের মত হাতের আঘাত খেয়ে,
টেবিলের উপর থেকে পিংকির মেকআপ
বক্স পড়ে ফেটে যায়। এই আওয়াজটা ওর আব্বু
আম্মুর কান পর্যন্ত গেছে। কিন্তু তারা
ভাবছে হয়ত মেয়েটি আগের মতো ডান্স
করতে করতে ফুলদানির মত কিছু একটা ফেলে
দিয়েছে। সেজন্য তারা আর রুমের দিকে
এগোয়নি। পিংকি জোরে জোরে চিৎকার
করতে চাচ্ছে, কিন্তু পারছে না, ফ্লোর এর
মধ্যে যেভাবে পড়ে আছে, ঠিক সেইভাবে
শোয়া থেকে উঠতে পারছেনা। ওর হাতটা
যেন কেউ ফ্লোরের সাথে চেপে ধরে আছে।
এমন সময় খেয়াল করলো, পিংকির প্লাজু
কেও ধরে টানছে। পিংকি আবার চোখ বড়
করে দাঁত কামড়াতে লাগলো,সে হয়তো
বুঝতে পেরেছে কি হতে যাচ্ছে।
এরপর অদ্ভুতভাবে পিংকি নিজের শরীরকে
হালকা আবিষ্কার করে। তারপর আবার
ফ্লোর থেকে উঠে দৌড় দেওয়ার সময়, এক
অদৃশ্য বাতাসে উড়ে গিয়ে বেডের উপর
পড়ে।কেউ যেন তার হাত পা দুটো বেডের
সাথে আটকে রেখেছে। পিংকির শরীরে
কোন শক্তি নেই, যেমন সে নড়াচড়া করতে
পারছে না, তেমনি ভাবে চিৎকারও করতে
পারছে না। এরপর পিংকি খেয়াল করে ওর
গেঞ্জিটা মাঝ বরাবর ধীরে ধীরে ফেটে
যাচ্ছে। গেঞ্জি এভাবে ছিড়ে যাওয়ার
কারণ সে বুঝতে পারে। কারণ সে বুঝতে
পেরেছ, এইটা রিয়াজ। পিংকি মুখে
আওয়াজ করতে না পারলেও, মনে মনে
অনুরোধ করছে “রিয়াজ প্লিজ আমাকে
ছেড়ে দাও, আমি ক্ষমা চাচ্ছি, প্লিজ
আমাকে ক্ষমা করো ”
কিন্তু পিংকির অনুরোধটা যেন তার মুখের
ভিতরেই রয়ে যায়। কারো কান পর্যন্ত
পৌঁছায়নি। পিংকির গেঞ্জিটা অবশেষে
চিড়তে চিড়তে পুরো খুলে যায়। পিংকির
পুরো নগ্ন দেহ বেডে পড়ে আছে।অনুভব
করলো ওর স্তনে কেও কামড় বসাতে লাগল।
রক্তে ভিজে যাচ্ছে পিংকির স্তন।
পিংকি চিৎকার করার শক্তি একেবারের
জন্যই যেন ফিরে আনতে পারছে না।
পিংকি আবার খেয়াল করল, তার গোপনাঙ্গ
ধীরে ধীরে গরম হয়ে যাচ্ছে। পিংকি এবার
আরো ভাল করে বুঝেছে, রিয়াজ তার আসল
কাজটা শুরু করতে যাচ্ছে…

চলবে_কি ??

প্রতিশোধের_আত্মা
পর্ব_০৪

কিন্তু পিংকির অনুরোধটা যেন,
তার মুখের ভিতরেই রয়ে যায়।
কারো কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি।
এদিকে পিংকির গেঞ্জিটা অবশেষে
ছিড়তে ছিড়তে পুরো খুলে যায়।
পিংকির পুরো নগ্ন দেহ বেডে পড়ে আছে।
অনুভব করলো,
ওর স্তনে কেও কামড় বসাতে লাগল। রক্তে
ভিজে যাচ্ছে পিংকির স্তন। পিংকি
চিৎকার করার শক্তি একেবারের জন্যই যেন
ফিরে আনতে পারছে না। পিংকি আবার
খেয়াল করল, তার গোপনাঙ্গ ধীরে ধীরে
গরম হয়ে যাচ্ছে। পিংকি এবার আরো ভাল
করে বুঝেছে, রিয়াজ তার আসল কাজটা শুরু
করতে যাচ্ছে…
পিংকি অনুভব করলো, একটা গরম
নিঃশ্বাসের বাতাস তার পুরো শরীর
বেয়ে যাচ্ছে। পিংকি আরো বুঝতে পারে,
তার শরীরটা আগের থেকে অনেকটাই ওজন
হয়ে গেছে। প্রায় 50 থেকে 60 কেজি কোন
বস্তু তার উপরে পড়ে আছে। পিংকি
নড়াচড়া তো করতে পারছেয় না, তার উপর
ওর শরীরের উপর এভাবে হামলা চলছে।
সমস্ত শরীর রক্তে ভিজে গেছে। স্তনদুটি
যেন রক্তে লাল হয়ে গেছে। ওর পেট বেয়ে
নাভির মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধছে। এতক্ষণ
পরে পিংকি মৃত্যুর নিঃশ্বাস ফেলা শুরু
করে দেয়। পিংকির চোখ দুটো ঠিক
সেইভাবে বড় বড় হয়ে গেছে, যেভাবে
রিয়াজের উপর হামলা করার সময় রিয়াজের
চোখ বড় হয়ে গিয়েছিল। পিংকি অনুভব
করতে লাগলো রিয়াজকে দেওয়া সে
কষ্টগুলো।রিয়াজ কতটা আঘাত পেয়েছে, সব
গুলো ধীরে ধীরে অনুভব করত পারছে
পিংকি।
” আজ রাত আটটার দিকে এক যুবতী মেয়েকে
ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে। যাকে
তারা মেরেছে, আমরা তার বিচার চাই ।
তাকে কঠিন ও কঠিনতম শাস্তি দেওয়া
হোক । ”
স্ট্যাটাস শুরু হয়ে গেছে ফেসবুকে। আবার
গরম হয়ে গেছে সেই ভাবেই ফেসবুকের
নিয়ম কানুন গুলো, আগে যেভাবে করে
এসেছিল। কি লাভ হচ্ছে সবার এসব
স্ট্যাটাস দিয়ে? তারা কি পেরেছে
পিংকি কে বাঁচাতে? তারা কি পেরেছে?
রিয়াজকে বাচাতে?
কেন শুধু শুধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সে মৃত
ব্যক্তিদের অসম্মান করে সবাই? কেন
বারবার একটা অবিচার অন্যায় কাজ কে
প্রশ্রয় দিয়ে ফেলি আমরা? কেন? কেন করি
আমরা এইরকম? এর জবাব কি আমাদের
কারো কাছে আছে?
এখানে পিংকিকে যদি কেউ সত্যি সত্যি
ধর্ষণ করে মেরে ফেলত, তাহলে স্ট্যাটাস
টার সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যেত। কিন্তু
পিংকিকে তো কোন মানুষ করেননি,
ধর্ষণকারী হচ্ছে রিয়াজের আত্মা। তবে
কেন তারা স্ট্যাটাস দিল যে কোন
ধর্ষণকারী তাকে মেরেছে, সে
ধর্ষণকারীকে কোন একটা মানুষকে উদ্দেশ্য
করেছিল ওরা।
এভাবে তাদের সন্দেহকে দাম দিয়ে পুলিশ
ধরে নিয়ে যায় ওই এলাকার যুবক যুবক
ছেলেদের। সন্দেহ পড়ে সেই সব ছেলেদের
উপর, যে সব ছেলেরা এলাকার মধ্যে হয়তো
সবার কাছে খারাপ হিসেবে পরিচিত ।
আবার হয়তো সেই মেয়ের পিছনে কিছু
ছেলেরা ঘুরঘুর করত, অথচ তাকে কখনো
স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। সন্দেহটা পড়েছে
তাদের উপরেই।
তাহলে আমাদের স্ট্যাটাস, আমাদের
ভাইরাল পৃথিবী কি পেরেছে? এসবের
বিচার করতে?
মৃত্যুর খবরটা গিয়ে পৌঁছায় বাকি ৫ জনের
কাছে। সামিয়া এবার বেশ অবাক হয়ে
যায়। তার মানে কি তাবিজ কাজ করেনি?
সামিয়া ব্যাপারটার যুক্তি দাঁড় করাতে
চেষ্টা করে, এরপর সে নিজেই পিংকির
লাশের ছবি গুলো ফেসবুক থেকে ডাউনলোড
করে দেখে। দেখল যে পিংকির হাতের
মধ্যে কোন তাবিজ নেই। তার মানে
পিংকি কি নিজে থেকেই তাবিজটা
খুলেছিল? নাকি খোলা হয়েছিল। পিংকির
মৃত্যুর পরে বাকি ৫ জন আতঙ্ক খেয়ে যায়।
তিনদিন পর তাদের কলেজে আসার কথা।
সবাই মিলে যেহেতু প্লেন করেছিল, তো
এটা আর মিস্টেক করা যাচ্ছে না। ওদের
সবার বাড়ি যে এক জায়গায় তা কিন্তু নয়।
এক একজনের বাড়ি এক এক অঞ্চলে। কিন্তু
তাদের থেকে একজনের মৃত্যুতে বাকিদের
রিএকশনটা আরো শক্ত হয়। তারা আরো ভয়
পেয়ে যায়।
এভাবে কেটে যায় দুই দিন। তিন দিনের
মাথায় বাকি চারজন এসে ঢাকায় পৌছায়।
মায়া আগে থেকেই ঢাকা তার এক
বান্ধবীর বাসায় ছিলো। গ্রামের বাড়িতে
যায়নি মায়া, ওর নাকি ইচ্ছে হচ্ছিল না,
সেজন্য গ্রামের বাড়িতে যায়নি।

রিয়া, প্রিয়া, সুমাইয়া, সামিয়া সবাই
আবার একত্রিত হয় হোস্টেল এর মধ্যে।
৫ জন ই খুব আতঙ্ক আছে, খুব ভয় পেয়ে আছে।
কি থেকে কি হচ্ছে ওইটা ওদের কল্পনার
বাহিরে। তাবিজ গুলো সবাই সবার হাতে
শক্ত করে বেঁধে রেখেছে, যেন কোন সমস্যা
না হয়। কিন্তু কি লাভ, কখন কোথা থেকে
এসে কিভাবে এইটা করে, সেটা তো বলা
যায় না। এভাবে কেটে যায় আরও এক
সাপ্তাহ।ব্যাপারটা ছড়িয়ে ছিটকে পড়ে
পুরো বাংলাদেশ। সবার মুখে মুখে পিংকি
আর পিংকি।পিংকির নগ্ন ছবি ও ভাইরাল।
ওর নামে যেমন বদনাম এবং তেমন সুনাম।
অনেক লোক শোকাহত জানায়,আবার
অনেকে দোষ চাপাচ্ছে। কেউ বলছে
হত্যাকারীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য,আবার
কেও বলছে সে নিজেই নিজের মরণের
সাথে এক ছিল। এভাবে একটার পর একটা
গুজব ছড়াচ্ছে তো ছড়াচ্ছেই। হোস্টেলে
আসার বরাবর ১৮ দিন পর সুমাইয়ার
জন্মদিন। সুমাইয়ার জন্মদিনের পার্টিতে
বাকি চারজন এসেছে। গ্রামের বাড়িতে
জন্মদিন পালন করতে পারেনি, কারণ
কিছুদিন আগেই গ্রাম থেকে এসেছিল।
সেজন্য ওরা জন্মদিন সেলিব্রেট করার জন্য
হোস্টেলের মধ্যে একটা রুম নিয়ে
নিয়েছিল। ৫ জন ছিল ওখানকার এক
শক্তিশালী গ্রুপ। তিনজন মারা গেছে,
কোথায় তাদের ব্যবহার ধীরে ধীরে ভালো
হবে, তা কিন্তু না। মারা যাবার এক বা দুই
সপ্তা পর পরই তারা যেন সবই ভুলে যায়। এর
পিছনের কারণটা খুবই সহজ, কারণ যে
তিনজন মরেছে, সে তিনজন তো তাদেরই
মত। তাদের থেকে তো একটুও ভালো না। যে
তাদের মতো, তাকে মনে রেখে লাভ কি।
মনে রাখবে তাদের,যে তাদের চেয়ে উঁচু
লেভেলের। উদাহরন দিয়ে বলতে গেলে
রিয়াজের কথা বলতে হয়। কারণ রিয়াজের
ব্যবহারের দিক দিয়ে রিয়াজ ছিল সবার
থেকে উপরে। আজ সবার মৃত্যুর পিছনে
তারা দায়ী রিয়াজ কেই করছে। প্রকাশিত
হচ্ছে এটাই, রিয়াজের কথা এখনো তারা
বলতে বাধ্য।
যাই হোক, জন্মদিনের সময় সবাই এসেছে
হাতের মধ্যে একটা ইয়া বড় গিফট নিয়ে।
সুমাইয়া অবাক হয় খুব। এত টাকা দিয়ে
এরকম জিনিস গিফট দেওয়ার মতো এরা না।
অবশ্য এখানে সুমাইয়ার লাভ নেই, ফায়দা
হচ্ছে ওই চারজনের। টাকাটা তাদের
নিজের না, সুমাইয়ার জন্মদিনের কথা বলে
বয়ফ্রেন্ড এর থেকে গিফটটা কিনে
নিয়েছিল। ব্যাপারটা যেন জানতে না
পারে, সেজন্য তারা আগে থেকেই প্ল্যান
করেছে। যে কোনটা কত করে ক্রয় করেছে,
ওটা সুমাইয়াকে বলবেনা।
রাত ১২ টায় কেক কাটার সময় যাবে। এর
আগে সুমাইয়া ফ্রেশ হতে বাথরুমে যায়।
সবাইকে রুমের হোস্টেলের রেখে সুমাইয়া
চলে যায় বাথরুমে। একটু ফ্রেশ হয়ে এসে নতুন
জামা কাপড় পড়বে সে উদ্দেশ্যে। সামিয়া
ব্যাপারটা লক্ষ্য করার সাথে সাথে মাথার
মধ্যে একটা কল্পনা শক্তি জেগে উঠলো,
একি! একটু পরে যে কেক কাটতে যাবে, সে
এখন বাথরুমে যাচ্ছে কেন।পাশে তো ফ্রেশ
হওয়ার রুম ছিল। সেখানে নিজেকে ফ্রেশ
করে নিয়ে আসতে পারতো। এতদূর বাথরুমে
যাওয়ার কারন কি। এইটা কি সে নিজেই
গেছে, নাকি তাকে নেওয়া হয়েছে।
সামিয়ার চিন্তার মধ্যেই হঠাৎ এক
চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পায় সবাই। এতই
জোরে আওয়াজটা ছিল, যে সবার কানের
পর্দাটা যেন প্রায় ফেটেই গেছে। ভয় পেয়ে
সবাই ভয়ে রুম থেকে দৌড়ে বাহিরে এসে
দাঁড়ায়। গিয়ে দেখে বাথরুমের নিচ দিয়ে
রক্ত বের হচ্ছে। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক
মনে হলেও, কারোই বিশ্বাস হচ্ছে না যে
ভিতরের কিছু হয়েছে। তাদের চোখের
সামনে থেকে একটু আগে ভালো একজন
মানুষ হিসেবে সুমাইয়া বাথরুমে প্রবেশ
করেছে। এর মধ্যে তার সাথে আবার কি হয়ে
গেল।
সবাই হতাশ হয়ে বাথরুমের সামনে যায়।
দরজা ভিতর থেকেই লক করা। বাধ্য হয়ে
দরজার লক লাথি মেরেই খুলতে হয়েছে।
বাথরুমের দরজাটা খুলেই তারা দেখল
সুমাইয়ার নগ্ন দেহ বাথরুমে পড়ে আছে।
বাকিদের মতো সুমাইয়ার মৃত্যু টাও তেমন
ভাবেই হয়েছে, যেভাবে আরো তিনজনের
হয়েছিল। সুমাইয়ার স্তন রক্তে রক্তাক্ত
হয়ে,পুরো লাল হয়ে আছে। স্তনের রক্ত গুলো
ছড়িয়ে যেন, তার বাকি অংশ ভিজে
একাকার। চোখ দিয়ে অঝোর-ধারায় রক্ত
বের হচ্ছিল সুমাইয়ার।

সামিয়া এবং প্রিয়া দৌড়ে এসে
সুমাইয়াকে ধরাধরি করে বাথরুম থেকে বের
করে। বাহিরে আনবার সাথে সাথেই ছবি
তুলা প্লাস ভাইরাল হওয়া শুরু হয়ে গেছে।
বাকি ৪ জনেই সব কিছু মন দিয়ে লক্ষ করে।
হিসাব তো কিছুতেই মিলছেনা কারো।
হিসাব মেলানোর জন্য তারা ভেবে দেখল,
সুমাইয়া তো সেভাবেই মরেছে, যেভাবে
আরও তিনজনের মরণ হয়ে ছিল। ফ্লোর, রক্ত,
ধর্ষণ, বাথরুম। সবকিছু মিলে যাচ্ছে। সবাই
বুঝতে পেরেছে, রিয়াজ এখানে এসেছিল,
সাথে রহস্যময় এক বাচ্চা।তখনি প্রিয়ার
মাথায় একটা ব্যাপার কড়া নাড়লো।
সুমাইয়ার হাতে তো তাবিজ ছিলো।
তাহলে মরলো কিভাবে। প্রিয়া ব্যপারটা
সামিয়াকে জানায়। সামিয়া প্রিয়ার
কথা শুনে জলদি করে,সুমাইয়ার উপর থেকে
সাদা কাপড়টা সরায়।সারনোর সাথে
সাথেই তারা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
রইল। সুমাইয়ার হাতের মধ্যে তাবিজ নেই।
এবার তারা সন্দেহ করছে, হয়তো রিয়াজ
মারার আগে কোন না কোন কৌশলে, আগে
তাবিজটা খুলে নেয়। কিন্তু সেখানে কিছু
বলেনি তারা। কারণ অনেকে হয়তো সন্দেহ
করবে, যে ওর মৃত্যুর ব্যাপারে এরা এত
ভালো করে জানে কেমনে। তারমানে ওর
সাথে জড়িত সবাই। ওরা আর কাওকে কিছু
বলেনি। কিন্তু তারা কিছু না বললেও, বন্ধ
থাকেনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া। সেই
গুজব আবার শুরু হয় অনেক রুপে।এভাবে আরো
কিছুদিন গরম হয়েছে ফেসবুক। নতুন টপিক
খুঁজে পেয়ে কেউই আর চুপ রইলোনা। এবার
ওরা চারজন খুব বেশি সতর্ক হয়ে যায়।
তাবিজটা খুলছে কিভাবে, এইটা যদি তারা
জানতে পারত তাহলে হয়তো সেটুকুর
সাবধানতাও মেনে চলত।
কিন্তু আপনাদের মনে তো খটকা লেগেই
আছে যে সুমাইয়ার তাবিজ কিভাবে
খুলছে।ওর মরণ হলো কেমনে।হুম তাহলে
শুনুন।
সুমাইয়ার হাত থেকে তাবিজ খোলার কারন
অবশ্যই আছে। এর পিছনের কারন,ও নিজে ওর
বাড়িতে সব সময় গোসল করার টাইমেও
তাবিজ এর দিকে তাকিয়ে থাকতো। আর
মনে মনে ভাবে” আমার এত সুন্দর চেহারা
এত সুন্দর চামড়ার উপর, এরকম একটা তাবিজ
পড়ে আছে। এইটা ওর অসহ্য মনে হতো।কিন্তু
তাবিজ বাধার স্থানে ফ্রেশ করতে
পারতোনা বলে তাবিজ ফেলে দেওয়ার
সিদ্ধান্তে আসে সে অনেকবার।
তবে রিয়াজের ভয়ে তা আর করা হচ্ছেনা
ওর।কিন্তু কি করবে, জীবন বাঁচানোর জন্য
তাবিজ রাখা বাধ্যতামূলক। এইটা সে আর
বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারেনি।ওর
জন্মদিনের সময় ও ভাবল, আজকে না হয়
গোসল করার সময় তাবিজটা খুলবে। ইচ্ছে
আছে খুব ভালোভাবেই ও স্নান করে,
জন্মদিনের কেক কাটবে। কিন্তু কেক কাটা
হলো না, কাটা হল ওর দেহটা। ধীরে ধীরে
মুছে যায় সুমাইয়ার নাম। সুমাইয়াও হয়ে
যায়, এক হারিয়ে যাওয়া বস্তুর মতো।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদিন, ভোর
সকাল বেলা একটা অবাস্তব ঘটনা ঘটে যায়।
যে ঘটনা দেখে হোস্টেলের দারোয়ান
থেকে প্রিন্সিপাল স্যার পর্যন্ত অবাক হয়ে
যায়। সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।
নিজের চোখ যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে
পারছে না। সবার মনে মনে একটাই কথা,
ওরা কি আত্মা?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here