প্রতিশোধের_আত্মা
পর্ব_০৫,০৬
সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদিন, ভোর
সকাল বেলা একটা অবাস্তব ঘটনা ঘটে যায়।
যে ঘটনা দেখে হোস্টেলের দারোয়ান
থেকে প্রিন্সিপাল স্যার পর্যন্ত অবাক হয়ে
যায়। সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।
নিজের চোখ যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে
পারছে না। সবার মনে মনে একটাই কথা,
ওরা কি আত্মা? নাকি অন্য কিছু?
ভোর সকালে রিয়া, প্রিয়া, মায়া এবং
সামিয়া কলেজের দরজা ঝাড়ু দিচ্ছে। যে
মেয়েরা কখনো নিজের কলমটা পর্যন্ত
নিজের হাতে নিত না, পাশে থাকা
সিটের একটা মেয়েকে দিয়ে অথবা কোন
ছেলেকে ডেকে কলমটা হাতে নিতো,
কলেজের মধ্যে ওদের নেত্রীত্ব চলত সব সময়,
প্রিন্সিপাল কিছু বলতে পারত না, বলতো
বা কিভাবে, যদি তাদের কিছু বলতো
তাহলে এর শাস্তি হয়তো উনিই পেতো।
ওনার চাকরিটা হারাতো উনি।চাকরি
হারানোর কারণ সবারই ব্যাকগ্রাউন্ড
অনেক ভাল ছিল। যদি ওদের কিছু বলা হয়
তাহলে ওরা ইচ্ছে করলেই, ২ মিনিটের মধ্যে
প্রিন্সিপালের চাকরিটা খেয়ে নিতে
পারে। মেয়ে মানুষের বিশ্বাস নেই।
যদি আমজনতার সামনে কোন মেয়ে একটা
ছেলের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়, তখন সেই
ছেলেটির উপর ক্ষেপে যায় পাবলিক, যে
ছেলেটির বিরুদ্ধে কথা বলেছি মেয়েটি।
যদিও সেখানে ছেলেটির কোন দোষ নেই,
কিন্তু আমজনতা তো সেটা বুঝবেনা,বুঝবে
সেই মেয়েটির কথা। পাবলিক তো বুঝেনা
এসব।এই যুগে সবাই মেয়ে আর মেয়ে নিয়ে
পড়ে আছে।বুঝিনা কি আছে এদের মধ্যে।রস
কস ওটুকুই তো..? কেনো ভাই,বিয়ে করলে কি
আপনার বউয়ের রস কম হবে? ১০ জনের মধ্যে
যা আছে আপনার বউয়ের মধ্যেও তা
আছে,তাহলে কেনো অন্য মেয়েদের প্রতি
আপনার এমন কুরুচিপূর্ণ চোখ পড়ে।
বিবাহিতদের বা কি বলবো,আজকাল
ইভটিজারদের মধ্যে বিবাহিত লোক বেড়ে
যাচ্ছে। কিছু মেয়েরা বা কেমন মেয়ে,
ছেলে দেখলেই কোমরের ঢোলের আওয়াজ
যেনো বেড়ে যায়।যে মেয়ের কোনোদিন
কোমর নাড়া খায়নি,সেও কোমর এমন ভাবে
নাচায়,যেনো কোনো প্রতিবন্ধী সামনে
দিয়ে হেটে যাচ্ছে। ( সবার ক্ষেত্রে
নয়,যারা এসবে লিপ্ত,তাদেরকেই উদ্দেশ্য
করা হয়েছে।)
কলেজে ওদের এমন কাজ দেখে বাকিদের
চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। এতো এতো
দেমাগি মেয়ে গুলো,হটাৎ করে এমন ধোয়া
তুলসি পাতা হলো কিভাবে। কিছু ছেলে-
মেয়ে ভেবেছে হয়তো ওদের বান্ধবীদের
মরনে তারা ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু এই
কারণ আর বেশিদিন টিকেনি। হুট করেই
মায়া একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রিয়া,রিয়া
আর সামিয়া মিলে মায়াকে প্রশ্ন করলো
ডক্টর কেন দেখাচ্ছেনা। কিন্তু এতে কোনো
জবাব দিলোনা মায়া। ওরা ভেবেছে হয়তো
মায়ার নিজেস্ব কোনো সমস্যা
হয়েছে,তাই ওদের কাছে বলতে চাচ্ছেনা।
কিন্তু গোপন কথা বেশিদিন টিকে রাখা
যে অসম্ভব, বিশেষ করে মেয়েদের। ছেলে
ছেলে মারামারি লাগলে, বের হয় রক্ত,আর
মেয়ে মেয়ে ফাইট হলে,বের হয় তথ্য।
তেমনি হয়েছে ওদের ব্যাপারে।
মায়ার থেকে প্রিয়া ৭০০০ ( সাত হাজার)
টাকা পাওনা ছিলো। প্রিয়ার বাড়িতে
নাকি তার আব্বু অসুস্থ, প্রিয়াকে খুব
ইমারজেন্সি যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু
মায়া যে টাকা না দিলে প্রিয়ার যাওয়া
অসম্ভব হয়ে পড়বে।প্রিয়া মায়ার কাছে
টাকাটা চাইলো।এরপর যা হলো)
— মায়া, আব্বু খুব অসুস্থতার মধ্যে আছে।
কাল বাসায় যাবো।তোর কাছে যে সাত
হাজার টাকা পাই,সেগুলো দিস প্লিজ।
— আপাতত হাতে টাকা নেই। আর তুই তো
জানিস আমি এই ১ মাসে কতো টাকা খরচ
করেছি।বাসা থেকে টাকা চাইলে সমস্যা
হবে।
— তোর দোষে আজ তোর এই অবস্তা। কি
দরকার ছিলো? বাচ্চাটাকে নস্ট করার..?
— প্রিয়া স্টপ দিজ,এসব কথা বলছিস কেন!
— তো কি করবো,তুই আমার টাকা আজকের
মধ্যেই দিবি।নয়তো আমি সবাই বলে দিবো
আসল সত্য।
— দেখ প্রিয়া,এবার কিন্তু বেশি বেশি
হয়ে যাচ্ছে।
— বেশি বেশি হলে কি করবি তুই?
— প্রিয়া লিমিট ক্রস করিস না,আমার রাগ
তুলছিস তুই,
— ১০০ বার করবো,পারলে আমার বাল ছিড়ে
দেখা।
— এবার আর সহ্য হচ্ছেনা আমার বলে
দিলাম।
— যাহহ, তোর মতো একটা লম্পট মেয়ের
আবার কেমন সহ্য আছে,তা আমার জানা
আছে।
( প্রিয়া কথাটা শেষ করতে না করতে মায়া
প্রিয়ার গালে একটা লাল তারা একে
দিলো {ঠাসসসসসসসসসসসস}
প্রিয়াও রেগে গিয়ে মায়ার চুল ধরে টানতে
লাগলো। লাথি,ঘুষা,উস্টা,মাইরের উপর
মাইর শুরু হয়ে গেছে। ওদের এমন মারামারি
দেখে ছুটে আসে রিয়া আর সামিয়া।
মারামারি আটকাতে গিয়ে ওরাও দু চারটা
লাথি উস্টা খেয়েছে বটে.. রিয়া বলল)
— আরে এইইই, কি করছিস তোরা,এভাবে
মারামারি লাগাইলি কেন।
( এরমধ্যেই প্রিয়া বলে উঠলো)
— এই মায়ার জন্য আমাদের বন্ধবীরা
মরেছে,এখন আমাদের জীবনও বিপদে আছে।
সব দোষ এই মায়ার।
( সামিয়া বলল)
— কি..? মায়া কি করেছে?
( মায়া বলল)
— দেখ প্রিয়া,আর একটা কথা বললে তোর
জ্বীব্বা আমি কেটে ফেলবো।
( প্রিয়া)
— আমার লগে এসব চাপা চু**য়া লাভ
নাই,পারলে করে দেখা কিছু।
( সামিয়া)
— আচ্ছা চুপ হইবি তোরা( একটা রেগে)
এই প্রিয়া, মায়া কি করছে বল তুই,
( মায়া)
— প্রিয়া তুই কিছুই বলবিনা একদম,
( প্রিয়া)
— তুই আর আমাকে আটকাতে পারবিনা।শুন
সামিয়া, ওইদিন রিয়াজের হরমোন মায়ার
যোনিতে পড়ে গিয়েছিলো। যার জন্য
মায়ার পেটে রিয়াজের বাচ্চা জন্ম
নিয়েছিলো।কিন্তু মায়া কথাটা আমাদের
সবাইকেই এড়িয়ে যায়।ঈদের সময় মায়া
বাড়িতে যায়নি কারণ সে বাচ্চা নস্ট করার
জন্য, মায়া যে অপারেশন করেছে,সে
অপারেশনে মায়ার ভগাঙ্কুরে সমস্যা
হয়েছিলো।ভগাঙ্কুরের সমস্যা ঠিক করার
জন্য মায়া অনেক টাকা খরচ করেছে।কিন্তু
কিছুতেই কিছু হচ্ছিলোনা।এক সময় ওর টাকা
শেষ হয়ে যায়। বাড়ি থেকে এতো পরিমান
টাকা এনেছে যে আর চাইতে পারেনি।পরে
আমার থেকে ৭হাজার টাকা নিয়ে নিজের
চিকিৎসা করেছে।পরে যখন জানতে
পারলাম সবার মরার পিছনে একটা বাচ্চাও
আছে।তখন আমি ঠিক ধরে নিয়েছি যে সে
আর কেও নয়,ও হচ্ছে রিয়াজের বাচ্চা।
.
#বিঃদ্র গল্প পড়ে কেউ কেটে পরবেন
না,আপনানাদের মতামত আমাকে উৎসাহ
দেয় পরবর্তী পর্ব দেওয়ার।আর সব সময় কিছু
গঠনমূলক কথা লিখে কমেন্ট করলে খুশি
লাগে।
.
(রিয়া)
— ছি.. মায়া ছি…. এতো বড় একটা কথা তুই
আমাদের থেকে লুকিয়েছিস? তোর লজ্জা
হওয়া উচিৎ।
( মায়া)
— কিসের লজ্জারে? রিয়াজকে তোরাও তো
করেছিস,তোদের কি এমন দেমাগ, যে আমার
উপরেই আঙুল তুলছিস?
( সামিয়া)
— স্টপ.. ব্যস অনেক হয়েছে,আর না।
আমি আজকেই বাড়ি চলে যাবো। এখন আমি
বুঝতে পেরেছি,তাবিজ কেনো কাজ
করছিলোনা। বাচ্চাটিই ভূলিয়ে ভালিয়ে
ওদের থেকে তাবিজ আলাদা করেছে,তারপর
রিয়াজ এসে এক এক করে সবাইকে
সেইভাবেই মেরেছে,যেভাবে ওকে মারা
হয়েছে।
( সামিয়ার কথা শেষ হতে না হতেই
প্রিন্সিপাল স্যার হটাৎ দরজা থেকে
আওয়াজ করে উঠলো)
— ছি..ছি..ছি… এই আমি কাদের পড়ালেখা
করাচ্ছি। যারা শুধু বেহায়া,লম্পট, বেশ্যা
নয়, খুনিও।আর কোনো ছেলেকে তোমারা
খুজে পাওনি? সহজ সরল একটা সাধাসিধে
ছেলের উপর তোমারা এভাবে করতে
পারলে? তোমরা কি মানুষ? নাকি পশু…
( মায়া)
— প্লিজ স্যার,আমাদের ভূল হয়ে গেছে,
আপনি আমাদের বাচান প্লিজ। ( স্যারের
সামনে গিয়ে হাত জোড় করে অনুরোধ করতে
লাগলো মায়া)
— তোমাদের আমি এতোদিন কিছু বলিনি
আমার চাকরি যাবে বলে।কিন্তু আজ আর
সে ভূল হবেনা।চাকরি গেলে যাক,তবুও
তোমাদের শাস্তি পাওয়া উচিৎ। আমি
এক্ষুনি পুলিশকে খবর দিচ্ছি।
( প্রিন্সিপাল কথাটা বলে যেই দরজা খুলে
বের হতে যাবে,তখনি রিয়া ফুলদানি দিয়ে
স্যারের মাথায় আঘাত করে বসে।
ততক্ষনাৎ প্রিন্সিপাল সেখানেই জ্ঞ্যান
হারায়।ওরা প্রিন্সিপালকে রুমের ভিতর
আটকিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেলে, এরপর প্লেন
করে বসে,
” উনাকে বাঁচিয়ে রাখলে আমাদের জীবন
বিপদে পড়তে পারে।শেষ করে গুম করে
ফেলি ”
ওদের কথা অনুযায়ী ওরা তাদের মিশন শুরু
করতে লাগলো। মায়া রান্নাঘর থেকে বটি
নিয়ে এসে প্রিন্সিপাল এর গলায় ধরে। এমন
সময় প্রিয়া বলল)
— আচ্ছা,উনাকে খুন করলে লাশ গুম করবি
কিভাবে। সাজেদা বেগম( ক্লিনার) তো
বাহিরে ঝাড়ু দিচ্ছে।তাছাড়া উনি
প্রিন্সিপাল এর লাশ দেখলে হয়তো
উল্টোপাল্টা কিছু করে বসবে।উনার জ্ঞ্যান
পিরার আগেই প্লেন কর যে লাশ কোথায়
লুকাবি।
(রিয়া)
— হোস্টেলের পিছনে একটা ময়লার ড্রেন
আছে। লাশ টুকরো টুকরো করে সেই ড্রেনের
মধ্যে ফেলে দিলেই হবে। কেও কিছু বুঝতে
পারবেনা।
(মায়া)
— হুম,সেটাই করা হবে।দাড়া আমি গলাটা
কেটে আগে মেরে ফেলি।
(মায়া বটি হাতে নিয়ে প্রিন্সিপাল এর
গলায় চালাতে যাবে,তখনি চলে যায়
ইলেকট্রনিক। অন্ধকার হয়ে যায় পুরো রুম।
মায়া রিয়াকে বলল যে)
–জানালাটা খোলে দে।রুমে কিছু দেখা
যায়না।
— বাহিরেও তো অন্ধকার হয়ে গেছে। সন্ধ্যা
নেমে এসেছে দেখ।
–তো হা করে তাকিয়ে আছিস কেন,ফোনের
ফ্লাস লাইট অন কর।
— ঠীক আছে দাড়া।এক্ষুনি করছি।
( এই বলে রিয়া নিজের ফোন বের করে
ফ্ল্যাশ লাইট অন করে। এরপর লাইটের
আলোয় ওরা যা দেখলো,তা কখনো মেনে
নেওয়া তো দূরের কথা,কখনো ভাবতেও
পারেনি। ওরা দেখে প্রিন্সিপাল স্যার
হাতে একটা সামান্য ছোট ছুরি নিয়ে
দাড়িয়ে আছে।মায়া ভয় পেয়ে বটি টা শক্ত
করে ধরে প্রিন্সিপাল এর গলায়..
চলবে
প্রতিশোধের_আত্মা
পর্ব_০৬
এরপর লাইটের আলোয় ওরা যা দেখলো,তা
কখনো মেনে নেওয়া তো দূরের কথা,কখনো
ভাবতেও পারেনি। ওরা দেখে প্রিন্সিপাল
স্যার হাতে একটা সামান্য ছোট ছুরি নিয়ে
দাড়িয়ে আছে।মায়া ভয় পেয়ে বটি টা শক্ত
করে ধরে প্রিন্সিপাল এর গলায়.. সজোরে
কোপ মারলো।
কিন্তু গলা কাটা যাওয়ার আগেই
মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট অফ হয়ে যায়।
মায়ার দেওয়া কোপ যেনো বাতাসের
মধ্যেই উড়ে যায়। আবার হয়ে যায় চারদিক
নিরব।ধুপ ধুপ শব্দ ভেসে চলছে রুমের ভিতর।
এইটা অন্য কোনো আওয়াজ না,তাদেরই
বুকের ধুকপুকানির আওয়াজ। মায়া রাগম্বিত
কন্ঠে রিয়াকে যা তা বলে গালি দিচ্ছে
অন্ধকারে।এরপর ফ্ল্যাশ লাইট অন করার জন্য
আবার বলে। কিন্তু রিয়ার ফোন যেনো
একেবারের জন্যেই অফ হয়ে গেছে।কিছুতেই
চালু হচ্ছিলোনা।সামিয়া নিজের ফোন
বের করে দেখে, তার ফোনও অফ হয়ে গেছে।
বরাবরের মতো প্রিয়ার ফোনেরও একই
অবস্তা। কি থেকে কি হচ্ছে কারোরই
মাথায় ঢুকছেনা। তবে এই রহস্য বেশিক্ষন
ভিতরে না থেকে বাহির হয়ে আসে।
হুট করেই কেও একজন হাসতে লাগলো।
অন্ধকার রুমের কালো ছায়াটাও যেনো
তাদের ঘিরে ফেলেছে।শনশান নিস্তব্ধ
শব্দের মধ্যে হাসির শব্দটা দেওয়ালের
এদিক থেকে সেদিক ধাক্কা খেয়ে যাচ্ছে।
যেনো একজন নয়,রুমের ভিতর হাজার হাজার
মানুষ প্রান খুলে হাসছে।এই হাসিও তাদের
কিছু কথা বুঝাতে চাচ্ছে।সেই হাসির অর্থ
যেনো তাদের এমন বলতে চাচ্ছে যে,ওদের
সাথে এদেরকেও নিয়ে যেতে চায়।
প্রিয়া,রিয়া,সামিয়া আর মায়া। ৪ জনই
এবার সেই হাসির শব্দে ভয় পেয়ে চিৎকার
করতে থাকে।দরজার ওপাশে মনে হচ্ছে
তাদের চিৎকার শুনা যাচ্ছেনা।অথচ রুমের
মধ্যে আগুন লাগলে বাচার জন্য মানুষ যেমন
চিৎকার করে,তেমন ভাবেই তারা প্রানের
ভয়ে চিৎকার করা শুরু করে। এদিকে ভয়ংকর
হাসির শব্দ,অন্যদিকে তাদের ভয় কন্ঠের
স্বর।মোট কথা পুরো রুমটাই শব্দে
এলোফাতাড়ি হয়ে আছে।
এরমধ্যে হুট করেই একটা ছেলের কন্ঠ ভেসে
আসে।সেই শব্দের সাথে সাথে সবাই চুপ
হয়ে যায়। কারো কোনো আওয়াজ নেই।শুধু
রুমের ভিতর তাদের বুকের ধুকপুকানির শব্দ
ভেসে যাচ্ছে। সেই অন্ধকারে এক অদ্রিশ্য
শব্দে নিস্তব্ধ হয়ে যায় রিয়া,সামিয়া,
প্রিয়া আর মায়া। কন্ঠটা কেমন যেনো
চেনা চেনা লাগছিলো সবার। তবুও সবাই
মন দিয়ে সেই আওয়াজ শুনছে।)
— কেমন অনুভব হচ্ছে তোমাদের? মনে পড়ে?
সেই দিনটির কথা? যেদিন একজন সাধারণ
ছেলেকে, তোমরা ৮ জন মেয়ে মিলে
হামলা করেছো।তাকে জিন্দাও ছাড়োনি
তোমারা। হত্যাও করেছো।হত্যা করার পর
তার জানাযাটাও করতে দিলেনা।ময়ালার
মধ্যে, দূর গন্ধে আমাকে ফেলে দিয়ে
এসেছো।আমার লাশ পশুরা ছিড়ে ছিড়ে
খেয়েছে।কালো কালো ভয়ংকর চোখে
তাকানো কিছু কাক আমাকে খুটে খুটে
খেয়েছে।আমার শরীর ধীরে ধীরে পচতে
থাকে।কুকুর গুলো দল বেধে এসে আমার পচা
মাংস গিলে খেয়েছে। আমি পাশে
দাঁড়িয়ে আমার দেহটাকে দেখছি,যে
জানোয়ার গুলো কি করছে আমার দেহকে।
ইচ্ছে হলেও কিছু করার ছিলোনা আমার।
চোখ বন্ধ করে কান্না করেছি শুধু।আমার
কান্নার শব্দটা শুধু আমিই শুনতে
পাচ্ছিলাম।কারো কান অব্দি যায়নি
আমার অর্থনাধ গুলা সেইদিন।একসময় আমার
দেহটা মাটির সাথে মিশে যায়। এই মায়ার
ভুবনে আমার কোনো অস্তিত্ব রইলোনা।
অনেকে আমার নাম বেচে বেচে নিজেকে
অনেক বড় কিছু ভেবেছে, বিচারক হয়ে
উঠেছে হাজারো বালক/বালিকা, ভাইরাল
করে তুলেছিলো আমাকে।কিন্তু কেউ
একটিবারের মতো আমাকে ময়লার ড্রেন
থেকে তুলে নিয়ে আসেনি।কেউ দেখতেও
যায়নি।আমার লাশ পচা গন্ধ অনেকের
নাকে গিয়েছিলো।কিন্তু ময়লার সাথে,
আমাকেও ময়লা ভেবে কেউ দেখতে
আসেনি।সেদিনের পর থেকে আমার মা
একটি রাত ঠিক করে ঘুমায়নি।প্রতিরাতে
আমাকে নিয়ে আল্লাহ্র কাছে দোয়া
করেছে।যে বাবা আমাকে কোনোদিন
রিয়াজ নামটি বলে ডাকেনি।আমাকে
সবসময়ই ভয়ের চোখে রাখতো,সেই বাবার
ভালোবাসা আমি দেখেছি।প্রতি
নামাজে আমাকে নিয়ে কান্না করে।
অনেক স্বপ্ন ছিলো,একদিন বাবার মতো
আমিও হবো একটি পরিবারের বাবা।আমিও
একটি পরিবার সামলাবো।আমিও বাকি ১০
জন বাবার মতো হবো।কিন্তু সব স্বপ্ন
তোমরা এক নিমেষেই শেষ করে দিয়েছো।
তলিয়ে দিয়েছো আমাকে অজানা কোনো
শহরে।ভেসে চলছি আমি কস্টের জলে।
চাইলেও হতে পারছিনা আগের মতো।
( কথা গুলো বলেই রিয়াজ কান্না করতে
থাকে।রিয়াজের কথা গুলো রিয়া,মায়া,
প্রিয়া আর সামিয়ার চোখে পানি
নামিয়ে দেয়। ওরা ফিল করতে পারছে
রিয়াজের কস্ট।বুঝতে পেরেছে তাদের ভূল।
রিয়াজ কান্না থামিয়ে হুট করেই আবার
ভয়ংকর কঠিন গলায় বলতে শুরু করে)
— এখন আমার শরীরে প্রতিশোধ এর আগুন
জ্বলে।আমি আর সে তোমাদের সবাইকে
সেইভাবে মারবো।যেভাবে আমাদের
তোমরা মেরেছো।
( মায়া বলল)
— আমি সরি রিয়াজ, তোমার বাচ্চাটাকে
বাচাতে পারিনি।সমাজের চোখে আমি
খারাপ হয়ে যেতাম।সেই ভয়ে আমি তাকে
মেরে ফেলেছি।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে
দাও।
আবার অন্ধকারের মধ্যে সেই অদ্রিশ্য
আওয়াজ,
— তোকে ক্ষমা? তাও আমি? সেতো
কোনোদিন হবেনা।তবে তোমার পেটে
আমার যে বাচ্চা ছিলো,সে ফিরে
আসেনি,ফিরে এসেছে অন্য কেউ। সে আরো
বেশি প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে।সে খুব
ক্ষুধার্ত, ফাদ পেতে আছে তোমাদের উপর।
ওর মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাইকো।
— কিন্তু সে কে? তোমার বাচ্চা ছাড়া তো
কোনো বাচ্চার সাথে আমাদের কিছু হয়নি।
কে হতে পারে সে।প্লিজ বলো।
— ধীরে ধীরে সবই বুঝতে পারবে।এখন শুধু
সময়ের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দাও। যা
করার সে করবে।
( কথাটা বলার শেষেই হটাৎ রুমের মধ্যে
আলো জ্বলে উঠে। রুমের লাইট আপনা-
আপনি জ্বলে উঠে।রিয়া,সামিয়া, প্রিয়া,৩
জনেরই ফোন চালু হয়ে যায়। সবাই বেশ
আতংক এর মধ্যে আছে। কে হতে পারে
সে,যে তাদের মারতে চায়? এদিকে
প্রিন্সিপাল স্যারের হুদিশ মিলছেনা
রুমে।ওরা অনেক খোজাখুজি
করেও,প্রিন্সিপাল এর দেখা পেলোনা
রুমে।এবার তাদের ভয়ের মাত্রা আরো
বেড়ে যায়। স্যার বাহিরে চলে যায়নি
তো? স্যার ওদের ফাসিয়ে দিবে নাতো?
এই চিন্তাশক্তির মধ্যেই হোস্টেলের নিছ
থেকে একটা হা হাকারের শব্দ তাদের
কানে আসে।সবাই স্থবিত হয়ে যায়।ভয়
এবার তাদের জেনো ঘিরে আছে। স্যার
সবাইকে বলে দিয়েছে ভেবে। তড়িঘড়ি
করে ৪ জনই নিছে নেমে আসে। এসে দেখতে
পায়,প্রিন্সিপাল হোস্টেলের সামনে শুয়ে
আছে।চারদিকে হোস্টেলের ছাত্র/
ছাত্রীরা ঘিরে আছে। সম্ভবত প্রিন্সিপাল
মাঠে জ্ঞ্যান হারিয়ে পড়ে আছে এমন
ভাব। হোস্টেলের লাইটের আলো সুবিধার
হচ্ছেনা দেখে সবাই নিজের ফ্ল্যাশলাইট
অন করে।মাঠের মধ্যে তারার মতো সবার
ফোন জ্বলছে।এমন সময় মাঠের অপর
প্রান্তের গেইট দিয়ে পুলিশ প্রবেশ করে
মাঠে। রিয়া মায়া সামিয়া প্রিয়ার গলা
দিয়ে যেনো দম বাহির হতে যাচ্ছে।
স্যারের এমন অবস্তা দেখে সবাই পুলিশকে
ফোন করেছে।ওদের ভয় হচ্ছে স্যার পুলিশকে
সব বলে দিবে নাতো?
ওরাও ধীরে ধীরে মাঠের মধ্যে সবার ভিড়ে
দাঁড়িয়ে থাকে। পুলিশ এসে স্যারের চোখে
পানি মেরে স্যারের হুস ফিরিয়ে আনে।
এরপর স্যারের কথা শুনে সবাই নিস্তব্ধ হয়ে
যায়।পুরো হোস্টেল কেপে উঠে চিৎকার
চেচামেছিতে।রিয়া,মায়া,প্রিয়া আর
সামিয়া খুশিই হয়েছে বেশ। এর পিছনের
কারণ হচ্ছে, স্যার কিছুই মনে করতে
পারছেনা।গত ১ মাস আগের দিনে পড়ে
আছে তিনি।কিন্তু এই ১ মাসে কি হয়েছে
না হয়েছে,সেটা উনার মনে পড়ছেনা।যেই
কিছু বলুক,তিনি এই ১ মাস আগের কথা
গুলোই বলছে।মায়া ধমক দেওয়ার সাথে
সাথে ছেলে/মেয়েরা পথ ছেড়ে দেয়।অবশ্য
এখনো ওরা লিডার হিসেবে পরিচিত।
পুলিশের সাথে মায়া গিয়ে কথা বলা শুরু
করে।)
— দেখুন স্যার, আমার প্রিন্সিপাল কিছুদিন
যাবত খুব চিন্তায় আছে।আমাদের কাছে
শেয়ার করেছে যে,উনার যদি কিছু হয়ে
যায়,তাহলে উনাকে ভালো করে যেনো
কলেজের সবাই দেখে।আমরা উনার যত্ন
যেনো নি।আমরা বিশ্বাস করিনি,ভাবছি
উনি রসিকতা করেছিলো।কিন্তু এ কি হয়ে
গেলো ( বলেই কান্না করতে থাকে মায়া।
খুব সুন্দর অভিনয় করে)
পুলিশ
—- ঠিক আছে।ব্যাপরটা আপনারা সামলান।
হয়তো উনি চিন্তা করতে করতে অজ্ঞান
হয়ে গেছে। আপনারা উনাকে দেখেশুনে
রাখবেন।
— জ্বী স্যার।আসতে পারেন।
— হুম।
( পুলিশ যাওয়ার পিছনেই সবাই দূরে গিয়ে
দাঁড়িয়ে পড়ে। মাঝখানে শুধু মায়া,
রিয়া,প্রিয়া আর সামিয়া দাঁড়িয়ে আছে।
মায়া প্রিন্সিপালকে জিজ্ঞেস করা শুরু
করে।)
— স্যার,একটু আগে কি হয়েছিলো?
— কি হবে আবার মায়া, বাথরুমে ছিলাম।
এরপর শুনলাম কলেজের একটা ছেলে
মারামারি করতেছে।আমি বাহির
হবো,ঠিক তারপর কি হয়ছে জানিনা।
— এইটা তো এক মাস আগের কথা স্যার। ৪-৫
ঘন্টা আগে কি হয়েছিলো মনে নেই?
— আরে, আমি তো সেটাই বলছি।বাথরুম
থেকে বের হলামি তো ১০ মিনিট আগে।আর
তোমরা কি এক মাস এক মাস করতাছো।
সবাই কি জ্ঞ্যান হারাইয়া ফেলছো নাকি।
( মায়া একটা মুছকি হাসি দিয়ে বলল)
— হুম স্যার,আমরা আপাতত পাগল হয়ে
গেছি। আপনি রেস্ট নিন।
— হুম,যাচ্ছি। ঘুমাও তোমরা।এই দিন থেকে
যে কেমনে রাত হয়ে গেলো,কিছুই
বুঝতাছিনা।
— বুঝা লাগবেনা স্যার,আপনি রেস্ট নিন।
( স্যারকে কিছু ছেলের কাছে দিয়ে ওরা
রুমে চলে আসে নাচতে নাচতে।তখনি রিয়া
বলে)
— আচ্ছা প্রিয়া, এই ব্যাপার তো নিশ্চিত
যে স্যার সব ভুলে গেছে।কিন্তু রিয়াজ কার
কথা বলে গেলো? সে কে।
— আরে!আমার তো মাথায়ই ছিলোনা।
রিয়াজ আসলে কার কথা বলে গেছে।
মায়া বলল
— এই শুন? আমি কবিরাজে বিশ্বাসী
না,কিন্তু জানামতে একজন কবিরাজের নাম
শুনেছি।বেশ ভালো নাম কামিয়েছে
শুনেছি।তোরা যদি বলিশ তো এক্ষুনি উনার
কাছে যাবো আমরা।
— হুম,তবে তাই কর। জীবন তো বাচাতে হবে।
— ওকে চল।
( ৪ জন মিলেই রওনা হয়েছে নোয়াখালী।
কবিরাজের বাড়ি সেখানেই। এদিকে
প্রিয়ার বাড়ি যাবার কথা ছিলো।কিন্তু
কি করবে,বেচে থাকলে তো বাড়ি যাবে
সে।তাই সেও ওদের সাথে রওন দেয়
নোয়াখালী। অবশ্য এর জন্য কাওকে জবাব
দিতে হয়না তাদের।ওরা নিজের ইচ্ছায়
বাহির হয়,নিজের ইচ্ছেমতো ফিরে আসে।
দারোয়ান কিছু বলতেও পারেনা।একদিন
ওদের এই নিয়ে বকা দেয় দারোয়ান। যার
জন্য অনেক কঠিন শাস্তি পায় দারোয়ান।
সারা রাত ল্যাংটা করে দাঁড় করিয়ে
রাখে হোস্টেলের বাগানে। এরপর থেকে
দারোয়ান আর কিছু বলার সাহস করেনি।
প্রাইভেট কার বের করে সবাই এগুতে
থাকে। মায়া গাড়ি চালাচ্ছিলো।
মাঝপথে তিনজনেরই খিদে পায় ভিশন।
চলতে চলতে দেখতে পায়, দূরে কোথাও
একটা দোকান দেখা যাচ্ছে।তাড়াহুড়ো
করে বের হতে গিয়ে ওরা খাবারও নেয়নি।
মাইজদি রেল স্টেশনের পাশে এসে একটা
দোকানের সামনে গাড়ি থামায় মায়া।
রিয়া গাড়ি থেকে বের হয়ে বলল”” আমি
কিছু কিনে নিয়ে আসছি।তোরা গাড়িতেই
বস। ”
রিয়া কথাটা বলে দোকান থেকে কিছু
খাবার সংগ্রহ করে।এরপর যেই সে দোকান
থেকে আসতে যাবে,ওমনি একটা বাচ্চা
মেয়ে রিয়ার হাত থেকে খাবারের
পলিথিনটা কেড়ে নিয়ে দৌড় দেয়। রিয়ার
মেজাজ এতোই খিটখিটে হয় যে পাশে পড়ে
থাকা একটি লোহার দন্ড নিয়ে বাচ্চা
ছেলেটার পিছনে ছুড়ে মারে। লোহার
দন্ডটি অদ্ভুতভাবে বাচ্চাটির পিঠে গিয়ে
গেথে যায়। পুরো পিঠ দিয়ে ঢুকে পেট দিয়ে
বের হয়ে যায়। কিন্তু অবাক করার ব্যাপার
হচ্ছে, বাচ্চাটি সেই লোহাটা নিজের
গায়ে রেখেই দৌড়ে পালিয়ে যায়।
মায়া, প্রিয়া আর সামিয়া গাড়ি থেকে
বের হয়ে রিয়ার কাছে আসে। রিয়া ভয়
পেয়ে জোরে চিৎকার করতে লাগলো।মায়া
এসে বলল)
— আরে! এইটা কি হলো। তুই কি করলি এইটা।
বাচ্চাটা মারা গেলে?
— দোস্ত আমার ভয় করছে।এখানে এক মুহুর্ত
থাকা ঠিক হবেনা।চল যাই।
— আরে দাড়া,কিছু তো খেয়ে নি,
— বেচে থাকলে হাজারবার খেতে পারবো।
চল এক্ষুনি।
( রিয়া এই কথা শেষ করতে না করতেই, সেই
বাচ্চা ছেলেটি লোহার দন্ডটি
নিয়ে,দৌড়ে এসে রিয়ার যৌনি দিয়ে
ঢুকিয়ে দেয়।নিমিষেই সবাই আতংক হয়ে
যায়।রিয়ার যৌনি দিয়ে রক্ত বের হতে
থাকে।বাচ্চা ছেলেটি দাত কেলিয়ে
হাসতে থাকে।
রাত প্রায় ৩ টা নাগাত,এই গভীর রাতে,
নিঝুম রেল স্টনের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে ৫ টা
প্রান। ৪ জন মেয়ে,আর ১ টি বাচ্চা।
দোকানটাও যেনো অদ্ভুত ভাবেই উধাও হয়ে
যায়। সবাই নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাচ্চা ছেলেটি লোহার দন্ডটা এখনো ধরে
আছে রিয়ার যৌনিতে। বাকি ৩ জন হা
করে দাঁড়িয়ে আছে।পরিবেশ নিস্তেজ হয়ে
গেছে।শনশন করে ঠান্ডা বাতাস ধীর
গতিতে বেয়ে চলছে। এবার কি হবে….?
.
চলবে