প্রনয়ের_ছন্দ,পর্ব-৮
আনজুম_তানিশা
১৩.
অবশেষে হাজারো বাধার সম্মুখীন হয়ে আদালতে প্রমান হলো নূর জীবিত।
নূরের হাসি পাচ্ছে এই ব্যাপার টায়।
যে নিজের জীবিত থাকার প্রমান ও এখন দিতে হচ্ছে তাকে৷
নূর সহ সবাই আদালত থেকে বের হলো। আদালত নূরের সেই মিথ্যে মৃত্যু র কেস টা আবার রি-ওপেন করলো।
আর আদালতে জজ এটাও বললেন নূরের যদি কোনো হ্মতি হয় তাহলে এই কেসের সাথে জড়িত সবাই কে জেলে নেওয়া হবে।
এর কারন নূরের পরিবার থেকে শুরু করে সবাই সন্দেহ জনক।
আর নূরের এই কেসের বিষয় টা সোসাল মিডিয়ায় খুব ভালো ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যা জাতিসংঘের নজরে আসে।
জাতিসংঘ থেকে নূরের কেস টা সঠিক ভাবে হ্মতিয়ে দেখার তাগিত দেওয়া হয়েছে।
সারাদেশ উওাল নূর কেস নিয়ে।
ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় আন্দোলন চলছে। যার মূল বিষয় নূর কেস।
তাদের আন্দোলন হলো,
‘ যেখানে দেশের আইন একজন জীবিত অফিসার কে মৃত বানিয়ে দিলেন। কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া কেস বন্ধ করে দিলো। সেখানে দেশের আইন দেশের জনগন কে কী সুরহ্মা দিবে। ‘
নূর আদালতের সামনে দাড়িয়ে আছে।
আর ওর সামনে ওর পুরো পরিবার।
নূরের মা নূরের সামনে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
— ছেলেটা বুঝি তোর সেই বয়ফ্রেন্ড?
নূর ভেবিছিলো ওর মা হয়ত ওকে জিজ্ঞেস করবে ‘কেমন আছে’ কিন্তু যা বলল তাতে
নূর সহ আফ্রাম, নিশান, মনিকা অবাক।
একজন মা কী করে এইসব বলতে পারে, তাও এতবছর পর মৃত মেয়ে কে জীবিত দেখে ভাবতেই পারছে না আফ্রাম।
নূর একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল,
— তা তো বলতে বাধ্য নই আমি৷
নূরের মা নূরের কথা তেজে উঠল।
নূরের বাবা বললেন,
— ব্যবহার সংযত করো। উনি তোমার মা হয়। যখন মৃতই ছিলা তখন আবার কেন আসলে?
নূরের বাবার এই কথায় বাঁকা হেসে বলল,
— অনেক সুখেই তো ছিলা এতবছর। এবার একটু খাটুনি করো নাহয়। আমি ফিরে এসেছি। তোমাদের সুখের ঘরে হানা দিতে।
ইট মারলে পাটকেল খেতে হয় ব্যাপার টা তে জানোই৷ সাবধানে থেকো।
প্রতি পদে পদে বিপদ। ব্লাক কুইন আগের চেয়ে হিংস্র হয়ে আছে। বায়।
কথা গুলো বলে নূর একপলক নিশানের দিকে চেয়ে আফ্রাম সাথে বেড়িয়ে পড়ল।
নূরের এমন কথায় হতবম্ব সবাই।
এতবছর নূর চন্ঞল থাকলেও প্রচন্ড ভদ্র ছিলো।
কারো সাথে গলা উচু করে এমন ত্যাড়া কথা বলে নাই৷ তাই নূরের কথা গুলো ভয় জন্মে দিলো সবার মনে।
তারপর যে যার যার মতোন নিজেদের বাড়ি চলে গেল।
‘নিভৃত কুন্জ’
— নিশান নূর বেঁচে আছে। তোমার একমাএ বোন তুমি কেন ওর সাথে কথা বললা না? বাকিরা নাহয় কারো ভালো চায় না কেউ তাই বলে তুমিও। মেয়েটা আজ কত কষ্ট পেলো আর তুমি।
নিশাম মন খারাপ করে বেলকনিতে দাড়িয়ে রইল৷
নিশান ভাবেনি কখনো এমন পরিস্থিতি তে পড়তে হবে।
হয়ত সব সত্য সবার সামনে চলে আসবে৷ এত বছরের সাজানো গুটি এবার এলোমেলো হয়ে যাবে৷
১৪.
নূর আর আফ্রাম দাড়িয়ে আছে ছাদে।
বিকেলে শেষ গোধুলির আলো ছড়িয়ে রক্তিম হয়ে আছে সাদা তুলোর মতো আকাশে।
গোধূলির রক্তিম আকাশ কমবেশি সবারই পছন্দ।
হঠাৎ নিরবতা ভেঙে আফ্রাম এক প্রশ্ন করার অনুমতি চাইলে নূর কে।
নূর বলার জন্য ইশারা করল৷ তা দেখে আফ্রাম বলতে লাগল,
— আদালতে বলা তোমার কথা গুলোর গভীরতা অনেক। তুমি কী কিছু লুকাচ্ছো?
নূর বলল,
— কিছু সত্য আপাতত নাহয় আড়ালে আবডালেই থাকুক। সময় সবটা বলে দিবে।
আফ্রাম কিছু বলল না এই বিষয়ে। কথা পাল্টিয়ে নূর বলল,
— আফিম ভাইয়া খুব চালু।
আফ্রাম ব্রু কুচকে বলল,
— কেন?
— আপনার ভাই আমার বেস্টুরে টান দিসে?
— মানে??
— আফিম ভাইয়া আর মিষ্টি রিলেশন এ আছে৷
আফ্রাম বলল,
— ওরাই ভালো কিন্তু সুন্দর প্রনয়ের জ্বলে ভাসছে। বৃষ্টিশেষে ওরাও প্রনয়ের ছন্দে মেতে উঠেছে। ব্যাপার টা দারুন। ওদের দেখাও হয়েছে কোনো এক মেঘনা স্নিগ্ধ বৃষ্টি ভেজা বিকেলে। তারপর থেকে দুজনে মেতে উঠেছে গভীর প্রনয়ে। ব্যাপারটা দারুন।
— তারমানে আপনি সব জানতেন?
— আবার জিগায়? আমার ভাই যে তোমার বেস্টুরে প্রোপজ করার আগে আমার থেকে আইডিয়া নিসে ?
— ওরে লাভ গুরুরে!
আরে কিছুহ্মন কথা বলে আফ্রাম চলে গেল হসপিটালের উদ্দেশ্য।
আর নূর উপভোগ করতে লাগল গোধূলির আকাশ।
কেটে গেল বেশ কিছু সময়। নূর রুমে গিয়ে নিজেী পুরাতন রুপে বেড়িয়ে পড়ল৷
তবে যাওয়ার আগে আফ্রামের মাকে বলে এসেছে।
আফ্রামের মা সাবধানে থাকতে বললেন। আর কিছু দোয়া-দুরুদ পড়ে নূরকে ফু দিয়ে বিদায় দিলেন।
???
অন্ধকার রুমে কেউ একজন ফোনের ফ্লাসের সাহায্যে কিছু একটা খুজছে। দূর থেকে বুঝা যাচ্ছে না কে সে? ছেলে না মেয়ে? তবে আড়াল থেকে সে বুঝতে পারলো সে যেই কাজে এই অন্ধকার রুমে এসেছে তার সামনের আগুন্তকঃ ও একই কাজে এসেছে।
এমন সব ভাবনা ভাবতে ভাবতে দেখতে পেল সামনের আগুন্তকঃ বেড়িয়ে যাচ্ছে। দরজার আড়াল থেকে বের হলো নিবিড়। কে সে, যে কীনা এই পুরাতন রুমে এসেছে কিছু খুজতে। এইসব ভাবতে ভাবতে নিবিড় পিছু নিল সেই আগুন্তকঃ এর। তবে বেশি দূর পিছু করতে পারে নি। কারন সেই আগুন্তকঃ বাইক নিয়ে অনেক স্পিডে এসেছিল।
আবার ফিরে গেল গোডাউনের সেই রুমে। তারপর সব কিছু ঠিক করে বেড়িয়ে গেল।
১৫.
হসপিটালে একের পর এক রোগী দেখে রাউন্ড দিয়ে ক্লান্ত আফ্রাম। কিন্তু ক্লান্ত হয়ে লাভ নেই। আজ একটু বেশিই কাজের চাপ। কিছুহ্মন পর আবার একটা অপারেশন আছে। আফ্রাম বাড়িতে ফোন দিলো সবার সাথে কথা বলে নূরকে দিতে বললেই জানল নূর বাড়ি নেই। আফ্রামের কপালে সূহ্ম ভাজ পড়ল। এই ভর সন্ধ্যায় একা একা কোথায় গেল মেয়েটা। আফ্রাম চট করে নূর কে কল দিলো৷ কিন্তু ফোন রিসিব হচ্ছে না। আফ্রাম কিছু না ভেবে আফিম কে ফোন করে বলল নূর কে খুজতে। চারপাশে নূরের বিপদ। শত্রুর অভাব নেই।
♣
রাত ২ টা………
স্বাভাবিক ভাবে বাড়ি ডুকল নূর। বাড়ির ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সবাই সেই সাথে মিষ্টি, আর গোয়েন্দা অফিসের কিছু অফিসার আর নূর কেস হ্যান্ডেল করা ওসি। সবাই চিন্তিত নূর কোথায়। ফোন ও রিসিব করছে না। আফ্রামের চোখ গুলো প্রচন্ড লাল৷ মনে হচ্ছে এই বুঝি ফেটে রক্ত বেরুবে৷
নূরকে বাড়িতে ডুকতে দেখে আফ্রাম দৌড়ে জড়িয়ে ধরল। নূরের কাধে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল৷ নূর বুঝতে পেরেছে আফ্রাম কাঁদছে। আফ্রাম নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করল কোথায় ছিলো নূর। নূর বলল,
— ভাইয়া-ভাবীর এর কাছে গিয়েছিলাম।
এই কথা শুনে আফ্রাম রেগে বলল,
— পাগল তুমি জেনে বুঝে বাঘের মুখে যাও কেন? সমস্যা কী? বুঝো না তোমায় নিয় চিন্তিত আমরা। চারদিকে শত্রু উৎ পেতে আছে তোমাকে মারতে আর তুমি নাকে তেল দিয়ে ঘুরছো। ঐ মানুষ গুলো কে বিশ্বাস করছো কেন তুমি। ভুলে যেও না সবাই রহস্য জনক। এক রহস্য ময়ী গোলক ধাধায় আটকা পড়েছো তুমি। চাইলে সহজে তুমি কাউকে ভরসা করতে পারো না।
— আপনাকেও না?
নূরের কথা থমকে গেল আফ্রাম। আফ্রাম কিছু না বলে চলে গেল। বাকিদের সাথে কথা বলে নিজের রুমে দিকে ছুটল নূর।
???
সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক অদ্ভুত নিজউ শুনল সবাই । এই নিউজ টা দেখে কেঁদে ফেলল নূরের মা । আর অন্য দিকে এই কান্নার আওয়াজ শুনে বাঁকা হাসল কেউ৷
চলবে…