প্রবর্তন 02

0
3202

প্রবর্তন
02
#মিমুনী

সে চলে যাওয়ার পর,আমি মেকআপ দূয়ে বাহিরে আসতেই মা আসলো।
-নিনিতা এইটা দর। আর যা আছে পরে বাহিরে আয়।
আমিও জানতে চাইলাম কি আছে এতে?
মা বললো ফারহান দিয়েছে…..আর বলেছে এটাতে যা আছে তা পরলেই তোকে বিয়ে করবে।

প্যাকেটটা হাতে নিয়ে ভিনের উপর বসে একটু দেখলাম। কি আছে ভাবতে ভাবতে ভিতরের জিনিস টা দেখেই আমি থ। একটা সাদা রংয়ের হিজাব সহ বোরকার সেট। আমি জীবনে ভালো করে বোরকা পরি নি। আজ পরতে খারাপও লাগছে নাহ। আরো সময় হলে নাক মুখ কালো করে রাখতাম। যাক বোরকাটা গায়ে জড়াতেই কেমন যেন নিজেকে হুর দের মতোই লাগলো। হিজাবটাও বোরকার মতো পাথরের স্টোন বসানো। নিকাবটা সাদা আস্তরনে গোল্ডেনে মিহি করে কাজ করা। সত্যিই আজ নিজেকে দেখেই অবাক হলাম। এটা আমি। এই আমার রুপ। যে ছেলে বিয়ের আগ মুহূর্তেও আমার এতো ভালো চায় সে নিশ্চই আমার জন্য মহান।

এতোখনে মাথায় আসলো যে আমার বরের নাম ফারহান । আমি তার নামটাও জানতাম না । নামের মতোই তার মনটাও সুন্দর।

এর পর বাহিরে গেলাম। সবাই আমাকে দেখে চমকে গেলো। আত্নীয় যারা আমাকে চিনে তারা তো ভূত দেখছে এমন করে তাকিয়ে আছে। তাতে আমার কী। আজ থেকে আমার স্বামীর পছন্দই আমার পছন্দ। কারন তার সব কিছুই তার মতোই সুন্দর।

তার পাশে আসনটাতে বসতেই অল্প আওয়াজে শুনতে পেলাম……
মাশাআল্লাহ…… এক হুরের আগমন হলো। আশা করি এমন আচ্ছাদনে সব সময় নিজেকে আড়াল রাখবে। তাহলে আমার আর তোমার দ্বীনের পথ আল্লাহ নিজে তৈরী করে দিবেন।

কথা টা শুনতেই চোখের পানি আবার দেখা দিলো।

যার সাথে এতো বছরের সম্পর্ক ছিলো সে কখনো আমাকে এমন রুপে দেখতে চায় নি। আর স্বামী নামের লোকটা আমাকে তার জন্যই বরাব্দ করছে। নিজের চোখের জন্য । অন্যের মনের খোরাক হিসেবে নয়।
মনে মনে একটা প্রতিজ্ঞা করেই নিলাম। এখন থেকে নিয়মিত নামাজ পরবো। আর নিজেকে হেফাজতে রাখবো। সত্যিইকারের মানুষ টাকে আজ পেয়ে গেছি আর কি লাগে।

অবশেষে বিয়ে টা হয়েই গেলো। বিদায় হওয়ার পর পথ পারি দিলাম নিজের স্বামীর ঠিকানায়। এখন এটাই আমার পরিচয়। আমি ফারহান এর বউ। একজন ভালো মনের মানুষ এর বউ। আর কি চাই আমার।
ঐ বাড়িতে পৌচ্ছাঁতে প্রায় 4ঘন্টা লাগলো। এই পুরো সময়টা ফারহান আমাকে তার বুকে আগলে রেখেছে। আর বলেছে ভালোবাসি তোমায় নিনিতা।

আশা করি আমাকে বুঝবে তুমি।
আমার চাওয়া পাওয়া। ইচ্ছে অনিচ্ছে সব কিছুই এখন তোমাকে নিয়ে। তুমি আমার কথা একটু শুনবে বাকীটা আমি দেখবো। তোমার রাগ, মান-অভিমান সব আমি নিতে চাই। তোমার ঐ কালো চোখের কাজলের রেখা টানার কারনটাও এই আমি হতে চাই।

কথা গুলো সত্যিই বুকে গিয়ে লাগছিলো। বাড়ির গেটে গাড়ি থামলো। আমাকে বরন করার পর শাশুড়ি মা আমাকে বুকে নিয়ে বল্লেন এতো দিন একছেলে ছিলো এখন একটা রাজকন্যা এলো। আমার রাজ্য আজ পূর্ন হলো। আমি সত্যিই বলতে অবাক না হয়ে পারছিলাম নাহ। তারা এতো ভালো হবে। আমাকে মেনে নিবে তাও মেয়ের মতো। এখন একটা কথা বার বার মনে হচ্ছে বাবা মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় নাহ। আর এটাই তার প্রমান।

এর পর আমাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে বলা হলে আমি এক পা ফেলতেই ফারহান সবার সামনে আমাকে কুলে তুলে নিলো।

আর বল্লো…..
-আমি চাই আমার রানী প্রথম পা বাড়িতে রাখলেও ভিতরে প্রবেশ আমার সাথেই করুক। মনে হয় এতে ভালোবাসা বাড়বে কমবে নাহ। ওর কথায় বাড়িতে যারা ছিলো সবাই হেসে খুন। আমি লজ্জাতে মিশে যাই। হায় আল্লাহ কি বলছে উনি।

রাত প্রায় 12টা আমাকে খাটে রেখে উনি বাহিরে চলে যান। এর পর শাশুড়ি মা আমাকে বলেন নেকাপ টা সরাতে। ভয় লাগছিলো তাও সরালাম। শাশুড়ি মা আমাকে দেখে বললেন আগের চেয়ে মেয়েটা আমার রুপবতী হয়ে গেছে। বলেই কপালে চুমু দিয়ে বললেন যা মুখ ধুয়ে আয় । আমি হালকা পানি মুখে ছিটিয়ে বাহিরে এলাম।

মা আমাকে নিজে হাতে খাইয়ে দিলেন। যদিও পেটে জায়গা নেই । তাও খেলাম।

যাওয়ার সময় মা বলে গেলেন. আমি তোর নিজের মা না তাতে কি। আজ থেকে আমিও তোর আরও একটা মা। দোষ করলে আমিই দেখবো বকলে আমিই বকবো। তবুও দূরে যাবি নাহ। কে আছে আমার বল তুই আর ফারহান ছাড়া।

মায়ের চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বললাম আমি একটু ভদ্র বাট পুরোটা পাজি। সহ্য করতে পারলে ভালো নয়তো আরো ভালো। বলতেই মা বললেন মায়ের কাছে এ কিছুই নাহ। তুই বোস আমি ফারহানকে ডেকে দিচ্ছি।
বলেই চলে গেলেন।

সত্যিই আমি অনেক কপাল করে এমন ঘর পেয়েছি।

ফারহান এসেই আমাকে সালাম দিলেন।
আমিও সালামের উওর দিতেই বল্লেন ফোনটা তো নিজের কাছে রাখতে শিখো। বুঝতে শিখো কে আপন কে পর।
কার মন কেমন।

আর হাতটা দেখি বলেই আমার হাতটা নিয়ে 2আঙ্গুলে 2টা রিং পরিয়ে দিয়ে বললেন….. যদি কোন দাবি থাকে বলতে পারো।

আমি বললাম আমাকে একটু সময় দিবেন। আর শুধু একটু বিশুদ্ধ ভালোবাসা আর কিছুই নাহ।

ফারহান এর মুখ দেখেই বুঝতে পারলাম উনি আমার কথায় খুশি।

বললেন যাও কাপড় পাল্টে আসো….2রাকাত নামাজ আদায় করবে।

আমিও তার কথা মতো নামাজ আদায় করলাম।

এর পর আজ আমাদের বিয়ের 2দিন।
আজকে বাড়ি যাবো।
এই 2 দিনে সবার চোখের মনি আমি। আমাকে নিয়ে কারো মনে কোন অভিযোগ নেই। কাজের লোক গুলাও অনেক ভালো। অনেকটা বড়লোক শ্রেনীর লোক আমার স্বামীর বাড়ির লোক জন।
তাদের বাড়ি, গাড়ি, আর ব্যবহার অন্যদের মতো নয়। টাকার বড়াই তো করেনই না। আর এই 2দিনে ফারহান আমার কাছে কোন দাবি করে নি ।
আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে।
আমার কেন যেনো তাকে মেনে নিতে একটু কষ্ট লাগছিলো। আমি মুখে না বললেও সে বুজে যেতো।

বোরকা আর নিকাব পরে গাড়িতে বসলাম…………পথের মাঝেই দেখতে পেলাম ফুচকার দোকান।

উনি আমাকে বললেন চলো ফুচকা খাই। বলেই সামনে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলেন। আমাদের বাড়ি থেকে 1½ ঘন্টার মাথায় এই রেস্টুরেন্ট টা।
তাই নেমে গেলাম…… ভিতরে বসতেই সামনে কাউকে দেখে ভয় পেলাম আবার ঘৃনাও লাগলো।

একটু ভিতরের দিকে গিয়ে বসলাম।
অনেক গরম লাগছিলো তাই নিকাব খুলে বসতেই ফারহান বললো অর্ডার দিয়ে আসছে সে…… আমি যেনো চুপটি করে বসে থাকি।

নিকাব সরাতেই সামনে দেখলাম ইহসান (প্রাক্তন) দাড়িয়ে আছে। আমাকে দেখা মাত্রই……………..

#চলবে
#ভুল গুলো মার্জনীয়

#টেষ্ট_এক্সাম_দিচ্ছি_একটু_যদি_লেট_হয়_দয়াকরে_সহ্য_করবেন।☺

সবাই নিয়মিত নামাজ আদায় করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here