প্রমত্ত_হৃদয়,পর্বসংখ্যা:৪

0
1852

#প্রমত্ত_হৃদয়,পর্বসংখ্যা:৪
#লেখনীতে:সারা মেহেক

আজ ভীষণ দেরি করে ফেলেছে সাবিহা। যেখানে সকাল নয়টায় ভার্সিটি পৌঁছানোর কথা সেখানে এখন বাজে নয়টা পাঁচ। অথচ সে এখনও বাড়িতে আছে৷ কারণ আজ তার ঘুমই ভেঙেছে নয়টার সময়। ইশ, আজকের প্রথম ক্লাসটাই মিস।

সাবিহা দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। দ্রুততার সাথে পার্পেল কালারের একটা কুর্তির সাথে জিন্সের প্যান্ট পরলো। গায়ে জড়িয়ে নিলো কালো একটি জ্যাকেট। তার উপর গলায় পেঁচিয়ে নিলো কুচকুচে কালো রঙের একটা ওড়না। কাঁধ ছাপিয়ে পড়া মাঝারি সাইজের চুলগুলো উঁচু করে পনিটেইল করে করে নিলো সে। অতঃপর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো। ডাইনিং এসে সালমা বেগমের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়লো,
” আম্মু, নাস্তা দাও৷ আজকে অনেক লেট হয়ে গিয়েছে। ”
এই বলে সে হাত ঘড়ির দিকে চোখ বুলালো। নয়টা বিশ বাজে। ঘড়িতে সময় দেখামাত্র তার ব্যস্ততা পূর্বের তুলনায় বহুগুণ বেড়ে গেলো। সালমা বেগম ততক্ষণে কিচেন হতে নাস্তা নিয়ে এসেছেন। সাবিহার সামনে নাস্তার প্লেট দিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,
” সেই কখন থেকে ডাকছি তোকে! কিন্তু তোর ঘুম ভাঙার নাম গন্ধ নেই৷ লেট তো হবেই। ”

সাবিহা মায়ের কথা কানে তুললো না। সে দ্রুত খাবার খেয়ে নিলো। অতঃপর পানি খেতে খেতে ব্যস্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” সামাদ ভাই কোথায় আম্মু? বেরিয়ে গিয়েছে?”

” হ্যাঁ। তোর আসার কয়েক সেকেন্ড আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছে ও। গ্যারেজে থাকতে পারে।”

সাবিহা মায়ের কথার প্রত্যুত্তর করলো না। দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে লনে নেমে এলো। এক প্রকার দৌড়ে ব্যাক ইয়ার্ডে চলে এলো সে। কিন্তু গ্যারেজে ঢুকার পূর্বেই অসাবধানতাবশত পায়ের সাথে পায়ে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে নিলো সে। তবে এর পূর্বেই রাগীব তার হাত ধরে নিলো। ফলস্বরূপ এ যাত্রায় মুখ থুবড়ে পড়া হতে বেঁচে গেলো সে।

ঘটনার আকস্মিকতায় সাবিহা একদিকে যেমন ভয় পেলো ঠিক তেমনি অকস্মাৎ রাগীবকে দেখে কিঞ্চিৎ চমকে উঠলো। ফলস্বরূপ তার টানা টানা গভীর চোখদুটো স্বাভাবিকের তুলনায় ঈষৎ বৃহদাকার রূপ ধারণ করলো। তার মুখশ্রীতে ফুটে উঠা বিস্মিত ভাব দেখে রাগীব মুচকি হাসলো। বললো
” সাবধানে মিস সাবিহা। ট্রেন ছুটে যাচ্ছে না আপনার৷ ”

রাগীবের স্বাভাবিক সুরের উক্তিতেও সাবিহা ঈষৎ অপমানিত বোধ করলো। তৎক্ষনাৎ রাগীবের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললো,
” সে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। ”

রাগীব ঘাড় ঘুরিয়ে হেসে নিলো। বিড়বিড় করে বললো,
” এই ভাবনাই তো কাজ…”

রাগীবের কথা অস্পষ্টভাবে সাবিহার কানে এলো। তবে সে কথার মর্মার্থ বুঝতে পারলো না৷ ফলে সে কান খাড়া করে বললো,
” কি বললেন?”

রাগীব মৃদু হেসে বললো,
” কিছু না৷ আপনাকে সাবধানে চলতে বলেছি এই তো। ”

সাবিহা প্রত্যুত্তর করলো না। ভ্রু কুঁচকে কিয়ৎক্ষণ রাগীবের দিকে চেয়ে রইলো। আজকে ফর্মাল স্যুটে রাগীবকে দারুণ লাগছে। সাদা শার্ট, কালো ব্লেজার, কালো প্যান্টে তাকে কোনো অফিসের সিইও এর ন্যায় লাগছে। অথচ এখানে সে অফিসের মামুলি এক কর্মকর্তা! সাবিহা নিমিষের জন্য রাগীবের চোখের দিকে তাকালো। সে এই ভেবে অবাক হলো, দুই সাক্ষাৎ এ মানুষটি কি করে নিজের চোখের গভীরতায় তাকে আটক করেছে! অদ্ভুত! এ মানুষটার চোখের দিকে কিয়ৎক্ষণ তাকালেও কেমন যেনো প্রহেলিকার ন্যায় মনে হয় সবকিছু। ঘন প্রহেলিকা। দু চোখের গভীরতা অনেক। যেনো এ চোখেই হারিয়ে পার করে দেওয়া যায় শত শত বছর।

সামাদ গাড়ি নিয়ে গ্যারেজ থেকে বের হলো। সাবিহা ও রাগীবকে একসাথে দেখে সে কিছুটা অবাক হলো। এরা দুজন একসাথে কি করছে! সামাদ গাড়ি নিয়ে ব্যাক ইয়ার্ডের সিমেন্ট নির্মিত রাস্তায় দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে মাথা বের করে সাবিহাকে জিজ্ঞেস করলো,
” কি রে সাবু? তুই এখনো বের হোসনি! ভার্সিটি যাবি কখন?”

সাবিহা চকিতে সামাদের দিকে তাকালো। অতঃপর এক পলক রাগীবের দিকে চেয়ে সামাদকে বললো,
” আজকে ঘুম ভাঙতে দেরি হয়েছে বিধায় ক্লাসে যেতে পারেনি৷ বাট পরের ক্লাসটা ধরতে চাই৷ আমাকে ভার্সিটিতে ড্রপ করে দাও সামাদ ভাই। ”

” আচ্ছা আয়। ”

সাবিহা বিনা বাক্য ব্যয়ে ফ্রন্ট সিটে বসে পড়লো। রাগীব সেদিকেই এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। তার এ চাহনি সামাদের দৃষ্টিগোচর হলো না। সামাদ ভ্রু উঁচিয়ে রাগীবকে জিজ্ঞেস করলো,
” তোমার নাম রাগীব। রাইট?”

রাগীব মৃদু হেসে বললো,
” জি।”

” তুমি অফিসের জন্য বের হচ্ছো না? গাড়িতে বসো৷ ড্রপ করে দিচ্ছি। ”

রাগীব যেনো এটাই চাইছিলো। ফলে সামাদের প্রস্তাব দেওয়ার সাথে সাথে সে ভদ্রতাসূচক হাসি দিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো। রাগীবের এমন আচরণে সাবিহা ও সামাদ ভীষণ অবাক হলো। দুজনে ভাবলো, রাগীব হয়তো এ প্রস্তাব নাকচ করবে। কিন্তু সে তো এক বলায় রাজি হয়ে গেলো!
সামাদ ও সাবিহা পরস্পরের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করে রাগীবকে নিয়ে নিজেদের মনোভাব বুঝালো। অতঃপর সামাদ গাড়ি স্টার্ট দিলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here