প্রমত্ত_হৃদয়❤️,১৪

0
1140

#প্রমত্ত_হৃদয়❤️,১৪
#লেখনীতে:সারা মেহেক

রাগীব সিসিলি হতে ভেনিসে ফিরেছে গতকাল৷ ভেনিসে ফিরে সে পূর্বের ন্যায় সিসিলি’র সবার সাথে সবরকম যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যতিত এন্ড্রু। রাগীব ভেনিসে নতুন দুজন গুপ্তচরের ব্যবস্থা করে নিয়েছে৷ যারা সিসিলি শহরের স্থানীয় এবং রাগীবের অধীনে কাজ করে। তারা লোকচক্ষুর আড়ালে ভেনিসের স্থানীয় মানুষ হয়ে অত্যন্ত সাধারণভাবে জীবনযাপন করবে। তবে অভ্যন্তরীণে তারা নিজেদের উপর আরোপিত সকল কাজ করবে। রাগীব ইতোমধ্যে নিজের পরিকল্পনা পুরোপুরি সুবিন্যস্ত করে নিয়েছে। আপাতত তার মূল লক্ষ্য আদিলের আসল রূপ সাবিহা ও তার মায়ের সম্মুখে নিয়ে আসা। এতে সে মূল চাক্ষুষ সাক্ষী হিসেবে সালমা বেগমকে চিহ্নিত করেছে। এবার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হলেই আদিলের লুকোচুরি খেলা শেষ।

সাবিহা ভার্সিটি শেষ করে সেখান থেকেই সোফিয়ার বাসায় চলে গিয়েছে। সালমা বেগমের কাছে বলে গিয়েছে, জরুরি এসাইনমেন্ট শেষ করার জন্য গ্রুপ স্টাডি করবে তারা। সালমা বেগমও এতে অনুমতি দিয়েছেন। আফসার সাহেব ও সামাদ এখনও আমেরিকা হতে ফিরেনি৷ তাদের আগামীকাল ফেরার কথা। এ কারণে বাড়িতে আপাতত সালমা বেগম, সাবিত ও রাগীব অবস্থান করছে। সাবিত নিজের রুমে বসে ভিডিও গেম খেলতে ব্যস্ত। এদিকে রাগীব অফিস হতে ফিরেছে বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। রাগীবকে অফিস হতে ফিরতে দেখেই সালমা বেগম পূর্ব পরিকল্পিত পরিকল্পনা অনুযায়ী রাগীবের সাথে আলাপ আলোচনা করতে মনস্থির করলেন। ফলে খানিক বাদে তিনি চা নাশতা নিয়ে গেস্ট হাউজে উপস্থিত হলেন। সাময়িকভাবে রাগীবের রুম বলে পরিচিত গেস্ট রুমে পা রাখতেই সালমা বেগম দেখলেন, রাগীব পোশাক পাল্টে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ফোন চালাচ্ছে।
ট্রেসহ সালমা বেগম দরজায় করাঘাত করতেই রাগীব দ্রুত উঠে বসে। তড়িঘড়ি করে হাত হতে ফোন রেখে দরজার নিকট এগিয়ে গেলো সে। ঠোঁটের কোনে ভদ্রতাসূচক হাসি বজায় রেখে সালমা বেগমকে জিজ্ঞেস করলো,
” আন্টী আপনি এখানে! আসুন, ভেতরে আসুন৷ ”

সালমা বেগম ভেতরে এলেন। খাটের সম্মুখে অবস্থিত সোফায় বসে পড়লেন। রাগীব সেই টুলটি নিয়ে সালমা বেগমের সম্মুখ প্রান্তে বসে জিজ্ঞেস করলো,
” হঠাৎ এভাবে এলেন যে আন্টী?….কোনো জরুরি কাজ আছে? ”

সালমা বেগম মৃদু হাসলেন। ট্রে থেকে এক কাপ চা রাগীবের দিকে এগিয়ে দিয়ে নিজে অপর কাপ চা নিলেন। চায়ের কাপে প্রথম চুমুক দিয়ে বিস্তৃত হেসে বললেন,
” তোমার সাথে নাস্তা করতে এলাম৷ কোনো প্রবলেম থাকলে বলতে পারো। ”

রাগীব মুহূর্তেই বলে উঠলো,
” আরে না না আন্টী। কি যে বলেন, সমস্যা থাকবে কেনো। আপনি যে এখানে এসে আমার সাথে নাস্তা করতে চেয়েছেন এতেই আমি খুশি।”

সালমা বেগমের ঠোঁটের কোনে এখনও পূর্বের ন্যায় হাসি বজায় আছে। চায়ের কাপে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে তিনি রাগীবের সাথে টুকটাক কথা বললেন, প্রশ্ন করলেন৷ রাগীবও হাসিমুখে সবকিছুর জবাব দিলো। কথাবার্তার এক পর্যায়ে সালমা বেগম জিজ্ঞেসই করে ফেললেন,
” আমার মেয়েকে পছন্দ করো রাগীব?”

অকস্মাৎ সালমা বেগমের নিকট হতে আগত এ প্রশ্নের তোড়ে রাগীব বিষম খেলো। চাহনিতে অতি আশ্চর্যান্বিত একটি ভাব ফুটে উঠলো। তবে সালমা বেগম স্থির রইলেন। জবাবের আশায় রাগীবের মুখপানে চেয়ে রইলেন। রাগীব চায়ের কাপটি টেবিলে রেখে কিয়ৎ বিস্ময়তার সহিত জিজ্ঞেস করলো,
” হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলেন যে?”

সালমা বেগম দৃঢ় প্রত্যয়ের সহিত মৃদু হেসে বললেন,
” আমি প্রশ্ন শুনতে চাইনি রাগীব। জবাব শুনতে চাই। ”

রাগীব কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ রইলো। তার স্থির দৃষ্টি সালমা বেগমের পানে আবদ্ধ। সে বুঝতে চাইছে, অকস্মাৎ এ প্রশ্ন করার কারণ কি। তাহলে কি সাবিহা নিজের মনের কথা তার সালমা বেগমকে জানিয়ে দিয়েছে? রাগীব ভাবছে। তবে তার ভাবনার যানকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে সালমা বেগম স্মিতহাস্যে বললেন,
” খুব জটিল প্রশ্ন করে ফেলেছি বুঝি?”

রাগীব মাথা চুলকিয়ে মৃদুভাবে লাজুক হাসলো। বললো,
” আপনার সামনে উত্তর দেওয়া জটিলই বটে।হবু শাশুড়ীর সামনে এমন সহজ প্রশ্নও জটিল বলে মনে হয়। ”

সালমা বেগম হকচকালেন। রাগীবের কণ্ঠ নিঃসৃত ‘হবু শাশুড়ী’ শব্দগুচ্ছ তার কর্ণপাত হতেই বিষম খেলেন তিনি। রাগীবের সম্পূর্ণ কথা বুঝতে তিনি কয়েক সেকেন্ড সময় নিলেন। অতঃপর রাগীবের অতি নৈপূন্যতার সহিত পরোক্ষভাবে জবাব দেওয়া দেখে সালমা বেগম হাসলেন। প্রশংসামূলক কণ্ঠে রাগীবের উদ্দেশ্যে বললেন,
” বাহ! ভারী চালাক গোছের ছেলে তো তুমি!

রাগীব প্রত্যুত্তরে বিস্তৃত হাসলো। ক্ষণিক সময় বাদে বললো,
” স্পেশাল ফিলিংসগুলো সরাসরি স্পেশাল মানুষটাকেই বলবো আন্টী। আপনার মেয়ে আমার জন্য স্পেশাল একজন। খুব স্পেশাল। ”

সালমা বেগমের হৃদয় সিক্ত হয়ে এলো। রাগীবের প্রতি স্নেহসূচক চাহনিতে চাইলেন তিনি। মনে অনুভব করলেন প্রশান্তি। তার মেয়ে যে ভীষণ ভাগ্যবতী হবে তা উপলব্ধি করতে পারলেন সালমা বেগম। উপরন্তু এই ভেবেও স্বস্তি অনুভব করলেন যে সাবিহার ভাগ্য অন্ততঃ তার মতো হবে না। মেয়েটা রাগীবের সাথে সুখে থাকবে এবং তিনি নিশ্চিত রাগীব সত্য বলছে। রাগীবের এ সত্যতা তার আঁখিজুগলে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠছে।
সালমা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে রাগীবের সম্মুখপ্রান্তে এলেন। রাগীবের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে সিক্ত কণ্ঠে বললেন,
” আমি সবসময় চাই আমার ছেলেমেয়ে দুটো ভালো থাকুক। সুখে থাকুক। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সাবিহা তোমার সাথে খুব সুখে থাকবে রাগীব৷ কিন্তু তোমাদের ভাগ্যে কি আছে জানি না। তবে খুব ভালো যে কিছু নেই, এটা আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। ”

সালমা বেগম কি সম্পর্কে কথা বলছেন তা বুঝতে সময় নিলো না রাগীব। টুলটি পিছিয়ে সেখান হতে উঠে দাঁড়ালো সে। সালমা বেগমের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তাকে অভয় দিয়ে বললো,
” আমি জানি আপনি কি নিয়ে কথা বলছেন আন্টী। একদম চিন্তা করবেন না এ বিষয়ে। নিশ্চয়ই কোনো না কোনো ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আপনি নাহয় আংকেলের সাথে কথা বলে দেখুন।”

সালমা বেগম কিছু বলতে চাইলেন। কিন্তু এর পূর্বেই এক প্রকার দৌড়াতে দৌড়াতে গেস্ট হাউজে প্রবেশ করলো এক সার্ভেন্ট। দৌড়ানোর ফলে হাঁপিয়ে উঠা স্বরে বললো,
” ম্যাডাম, স্যার আমেরিকা থেকে চলে এসেছেন। আপনাকে খুঁজছিলেন তিনি। ”

এ মুহূর্তে আফসার সাহেবের ফেরার কথা শুনে খানিক ভীত এবং অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন সালমা বেগম। তৎক্ষনাৎ রাগীবের হাত হতে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কোনো প্রকার কথা ছাড়াই বেড়িয়ে পড়লেন তিনি। সালমা বেগমের এরূপ অপ্রস্তুত এবং ভীত রূপ দেখে রাগীব মনে মনে ভীষণ আফসোস প্রকাশ করলো। খানিক সময় হেলদোল ছাড়াই দাঁড়িয়ে রইলো সে। অতঃপর বড় বড় পা ফেলে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে পড়লো সে। কল লাগালো এন্ড্রুকে।

.

ক্লান্ত শরীর নিয়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে বদ্ধ নেত্রপল্লব নিয়ে শুয়ে আছেন আফসার সাহেব। সালমা বেগম এক কাপ চা নিয়ে প্রবেশ করলেন রুমে। তার উপস্থিতি টের পেয়ে আফসার সাহেব চোখজোড়া মেলে চাইলেন। ধীরেসুস্থে শোয়া হতে আধশোয়াভাবে বসে সালমা বেগমের নিকট হতে চায়ের কাপটি নিলেন। সাথে সাথেই গরম চায়ে প্রথম চুমুকটি দিয়ে শীতল কণ্ঠে বললেন,
” আর দুদিন বাদে সাবিহার বিয়ে। ওকে জানিয়ে দিও।”

আফসার সাহেবের সাধারণ তবে তীক্ষ্ণ কথাগুলো সালমা বেগমের কানে ঝংকার তুললো। সাবিহার বিয়ে! তাও কি না দুদিন বাদে! এ যেনো কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না সালমা বেগম। বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে কিয়ৎক্ষণ আফসার সাহেবের পানে চেয়ে রইলেন তিনি। খানিক বাদে বিচলিত গলায় বললেন,
” বিয়ে তো আগামী সপ্তাহে হওয়ার কথা ছিলো তাই না? তো হঠাৎ এতো দ্রুত কেনো?”

আফসার সাহেব চায়ের কাপটি রাখলেন৷ শীতল চাহনিতে সালমা বেগমের পানে চেয়ে ভারী গলায় বললেন,
” কিছু কারণে। তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। তোমার দায়িত্ব যতটুকু, ততটুকুই পালন করো। বেশি প্রশ্ন আমার পছন্দ না। ”

আফসার সাহেবের এমন একগুঁয়েমিমূলক কথায় সালমা বেগম তড়িতেই সিদ্ধান্ত নিলেন, রাগীব ও সাবিহার ব্যাপারে আফসার সাহেবকে সব বলবেন। এ প্রস্তুতি নিয়েই তিনি জবান খুললেন। কিন্তু কণ্ঠ হতে কোনো প্রকার শব্দ নিঃসৃত হতে না হতেই আফসার সাহেবের জরুরি কল এলো। তিনি কাল বিলম্ব না করে কল উঠিয়ে দ্রুত রুম হতে বেড়িয়ে গেলেন। সালমা বেগম সেদিকে নির্বাক ও ব্যর্থ চাহনিতে চেয়ে রইলেন।

সে রাতে আফসার সাহেব বাড়িতে ফিরলেন না। ফলস্বরূপ রাগীব ও সাবিহার ব্যাপারে কিছুই বলতে পারলেন না সালমা বেগম।

.

আফসার সাহেবের নির্দেশানুসারে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়ের বাজার করতে বেড়িয়ে গেলেন সালমা বেগম। সাথে নিতে চাইলেন বান্ধবী মার্টিনাকেও। ছোট্ট পরিকল্পনা অনুসারে সালমা বেগম গন্ডোলা করে মার্টিনার বাসার সামনে গিয়ে মার্টিনাকে বাজারের উদ্দেশ্যে তুলে নিবেন। অতঃপর দুজনে গন্ডোলায় করে বিয়ের বাজার সারবেন। যার বিয়ে নিয়ে এতো আয়োজন সেই সাবিহাকেই এখনও অব্দি বিয়ের কথা জানাতে পারেননি সালমা বেগম। গতকাল আফসার সাহেবের প্রস্থান মাত্রই সালমা বেগম সাবিহার রুমে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু সাবিহা অতি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ায় তিনি নিজের কার্যে সফল হতে পারেননি৷ এমনকি আজ সকালেও একই ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন সালমা বেগম। গ্রুপ এসাইনমেন্ট থাকায় সাবিহা দ্রুততার সহিতই বাড়ি হতে বেড়িয়ে পড়ে। ফলে রাতের ন্যায় সকালেও কিছু বলতে পারেননি তিনি।

ব্যস্তপূর্ণ রাস্তার পার্শ্বদিক দিয়ে বেয়ে চলছে ছোট ছোট খাল। সে খালেই বয়ে বেড়াচ্ছে একেকটি গন্ডোলা। দুজন যাত্রী নিয়ে সালমা বেগমসহ ছোট একটি গন্ডোলা বয়ে চলছে। চিরচেনা বিল ধরে গন্ডোলাটি এগিয়ে যেতে যেতে অচেনা একটি মোড়ে ঘুরলে সালমা বেগম খানিক শঙ্কিত হলেন। গন্ডোলা চালককে জিজ্ঞেস করলেন এ পথ দিয়ে আসার কারণ। গন্ডোলা চালকটি মৃদু হেসে জবাব দিলো,
” ঐ রুট দিয়ে আসতে অনেক সময় লাগবে বলেি এ রুট দিয়ে আসা।”

চালকের কথা শুনে সালমা বেগম আর প্রত্যুত্তর করলেন। চুপচাপ বসে রইলেন। তার উদাস চাহনি বয়ে বেড়াচ্ছে ব্যস্ততম সড়কের ব্যস্ততম মানুষগুলোর মাঝে। কিছুক্ষণের মাঝেই ব্যস্ততম রাস্তা পেরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম জনবহুলতম জায়গায় চলে এলো গন্ডোলাটি। সালমা বেগমের দৃষ্টি তখনও ভেনিসের রাস্তায় রাস্তায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অকস্মাৎভাবে এমনই উদ্দেশ্যহীন দৃষ্টিজোড়ায় আটকে গেলো অনাকাঙ্ক্ষিত একটি দৃশ্য। যে দৃশ্যে সালমা বেগমের সরল দৃষ্টিজোড়া মুহূর্তে তীক্ষ্ণ হয়ে এলো। তিনি একটি ছেলে ও মেয়েকে ঘনিষ্টভাবে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে থাকতে দেখলেন৷ সাধারনভাবে চলমান প্রতিটি মানুষ এ দৃশ্যে সন্দেহজনক কিছু না খুঁজে না পেলেও সালমা বেগম অতি সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পেলেন।

রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির পার্শ্বরূপ দেখে মুহূর্তেই ছেলেটিকে আদিলের সাথে তুলনা করে ফেললেন তিনি। গন্ডোলা এগিয়ে যেতে যেতে সালমা বেগম ছেলেটির সম্পূর্ণ চেহারা দেখলেন এবং ভীষণ অবাকও হলেন। কারণ ছেলেটি অবিকল আদিলের মতো। অর্থাৎ ছেলেটি আদিল। কিন্তু এ সুনসান সড়কের রেস্টুরেন্টে এতো ঘনিষ্ঠভাবে কোন মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে সে! এই ভেবে সালমা বেগম বিস্মিত হলেন। তার এ প্রতিক্রিয়া বহিঃপ্রকাশ হতে হতে গন্ডোলাটি সে রাস্তা পেরিয়ে চলে এলো। তার নজর হতে ধীরেধীরে অদৃশ্য হতে লাগলো সে দৃশ্যটি। এরূপ পরিস্থিতিতে তিনি নিমিষের জন্য কিছু চিন্তা করলেন। অতঃপর অকস্মাৎ গন্ডোলা চালককে গন্ডোলা থামিয়ে দিতে বললেন। সালমা বেগমের এ আকস্মিক ব্যবহারে গন্ডোলা চালক খানিক চমকালেন। কিন্তু কাল বিলম্ব বাদে তিনি গন্ডোলা থামিয়ে ভাড়া মিটিয়ে নেমে এলেন সেখান থেকে। অতঃপর অতি দ্রুততার সহিত পা ফেলে এক প্রকার দৌড়িয়ে রেস্টুরেন্ট হতে নিকট দূরত্বে দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি। আদিল তখন মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে রাগত স্বরে কিছু বলছে। সালমা বেগম নিকট দূরত্বে দাঁড়িয়ে থেকে সে দৃশ্য স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন। আদিলকে অচেনা একটি মেয়ের সাথে দেখে তার মনে জেগে উঠা সন্দেহমূলক প্রশ্নগুলোড জবাব চাইতে তিনি এগিয়ে যেতে লাগলেন আদিলের দিকে। কিন্তু ততক্ষণে আদিল মেয়েটির হাত ধরে দুরন্ত গতিতে বিপরীত রাস্তায় ছুট দিলো। আদিলের অকস্মাৎ এ পদক্ষেপে সালমা বেগম খানিক বিচলিত হয়ে পড়লেন। কিন্তু কোনোরূপ চিন্তাভাবনা ব্যতিত তিনি ছুটে চললেন আদিল ও অচেনা সেই মেয়েটির পিছু পিছু।

এদিকে আদিল ও মেয়েটির এ সম্পূর্ণ কর্মকাণ্ড লুকিয়ে লুকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলো রাগীবের অধীনে থাকা গোপন এক সহচর কার্লো। আদিল সেই রেস্টুরেন্ট হতে প্রস্থান করতেই কার্লোও তার পিছু পিছু লুকিয়ে এলো।
আদিল মেয়েটিকে নিয়ে পথ বদল করতে না করতেই কার্লোর ফোনে রাগীবের ফোন এলো। সে কল রিসিভ করতেই ওপর পাশ হতে রাগীব জিজ্ঞেস করলো,
” কাজ কতদূর কার্লো? ”

কার্লো তীক্ষ্ণ নজরে আদিল ও সালমা বেগমের পানে চেয়ে বললো,
” সাকসেসের দিকে স্যার। স্যার, আমার মনে হয় আমরা এ প্ল্যানিং এ অবশ্যই সাকসেস হবো। ”

ওপাশ হতে রাগীব মৃদু শব্দে হাসলো। গমগম কণ্ঠে বললো,
” ইয়েস কার্লো। তবে সাকসেস না হলে সেক্ষেত্রে কি করতে হবে তা তো জানা আছে তোমার। রাইট?”

” ইয়েস স্যার। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না৷ কাজ হয়ে যাবে। ”

রাগীব প্রত্যুত্তরে কিছু বললো না। খট করে কল কেটে অফিসের সুইভেল চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে হাওয়ায় উড়িয়ে উড়িয়ে বলতে লাগলো,
” মিস্টার আদিল সাহেব। আপনি আমার পথে না আসলে আমার কাজটা আরো দ্রুত হয়ে যেতো। কিন্তু এসেই যখন পড়েছেন তখন কি আর করার৷ পথের কাঁটা তো সরাতেই হবে তাই না? ”
রাগীব হাসলো। নিগূঢ় হাসি হাসলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here