প্রমত্ত_হৃদয়❤️,২১

0
640

#প্রমত্ত_হৃদয়❤️,২১
#লেখনীতে:সারা মেহেক

সালমা বেগমের শরীর বিবশ হয়ে এলো। তিনি ঠিকভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। ভারসাম্য হারিয়ে মেঝেতে পড়ে যেতে নিলেই রাগীব তার এক হাত ধরে তাকে সামলে নেয়। অতঃপর তাকে সোফায় বসিয়ে রাগীব বললো,
” নিজেকে সামলান আন্টি। এখনও অনেক সত্য জানার বাকি আছে আপনার। ”

সালমা বেগম শূন্য চাহনিতে রাগীবের দিকে চাইলেন। অবিশ্বাস্যে ভরপুর আঁখিজোড়া অশ্রুতে সিক্ত হয়ে এসেছে। স্বামীর সম্পর্কে মস্ত বড় এ সত্য জানার পর তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তার দুনিয়া থমকে এসেছে। তিতকুটে এ সত্য এখনও তিনি মেনে নিতে পারছে না। তার মন বলছে এ সব মিথ্যে। যেনো নিজেকেই সান্ত্বনা দিতে তিনি কম্পিত কণ্ঠে রাগীবকে জিজ্ঞেস করলেন,
” আমাকে মিথ্যে বলছো না তো রাগীব?”

রাগীব সালমা বেগমকে সোফায় বসিয়ে নিজে মেঝেতে বসে পড়লো৷ সালমা বেগমের হেন প্রশ্নের জবাবে সে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
” মিথ্যে বলে আমার কোনো লাভ নেই আন্টি৷ ”
এই বলে সে সালমা বেগমের পানে পরিপূর্ণ চাহনিতে চাইলো। স্পষ্ট দেখতে পেলো সালমা বেগমের ছলছল আঁখিজোড়া। বিশ্বাস ভঙ্গের হৃদয়ের টুকরো যেনো অশ্রু হয়ে দু চোখ বেয়ে বইছে। রাগীব সালমা বেগমকে সান্ত্বনা দিলো না। কারণ এক্ষেত্রে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কিছুই নেই। আজ হোক কাল হোক এই জ’ঘ’ন্য সত্য সালমা বেগমকে মেনে নিতেই হবে।

কিয়ৎক্ষণ বাদে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে দিতে সালমা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
” এগুলো কবেকার ঘটনা রাগীব?”

রাগীব ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
” গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা এটি৷ ”

সালমা বেগম প্রত্যুত্তর করলেন না। মনের উপর তীব্র জোর খাটিয়ে নিজেকে দৃঢ় করলেন। অতঃপর স্থির, নির্বাক চাহনিতে রাগীবের দিকে চেয়ে রইলেন। রাগীব তার এ চোখের ভাষা স্পষ্ট বুঝতে পেলো। সালমা বেগম যে পুরো সত্য জানার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে ফেলেছেন তা বুঝতে রাগীবের সময় লাগলো না। সে প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” আপনার স্বামী যে ড্রা”গ স্মা’গ’লার, এ সম্পর্কে আপনার কোনো আইডিয়া আছে আন্টি?”

সালমা বেগম আরেকবার ধাক্কা খেলেন। অবিশ্বাস্য চাহনিতে মাথা ঈষৎ ডানে বামে নাড়ালেন। যার অর্থ এ সম্পর্কে তিনি অবগত নন। রাগীব পুনরায় বলতে আরম্ভ করলো,
” আপনার স্বামী বহু পুরোনো এক ড্রা”গ স্মা’গ’লার। এই সুবিশাল বিজনেসের আড়ালে উনি ড্রা’গ স্মা’গ’লিং করে। এই ড্রা”গ দিয়েই উনি রামিশাকে নে’শা’গ্রস্ত করেছিলো। তারপর রে’প করে মা’র্ডা’র করেছিলো। ঘটনা শুধু একজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। আপনার শ্রদ্ধেয় স্বামী এর আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। রামিশার আগে ও পরে উনি চারটা মেয়েকে রে’প করেছে। যার মধ্যে দুজনকে উনি টাকা দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু যারা উনার টাকায় চুপ হয়নি তাদেরকে মে’রে ফেলেছেন। ”

সালমা বেগম স্তব্ধ, হতভম্ব। যতই রাগীব কথা বলছে তিনি যেনো ততই ধীরে ধীরে নিজের বাকশক্তি হারাচ্ছেন। তিনি আফসার সাহেবের সম্পর্কে এতো তিক্ত সত্য শুনবেন তা তার কল্পনাতীত ছিলো। রাগীব এ পর্যায়ে খানিক কঠিন গলায় বললো,
” আপনার শ্রদ্ধেয় স্বামী হয়তো জানে না উনি কার মেয়ে ও কার বোনকে মে’রেছে। উনার আইডিয়াও নেই যে রামিশা সিসিলির সবচেয়ে বড় একজন গ্যাং’স্টারের মেয়ে।”

সালমা বেগম বিস্ফোরিত নয়নে রাগীবের পানে চাইলেন৷ রাগীবের শেষোক্ত কথাটি তার কানে ঝংকার তুললো। তিনি হতভম্ব হয়ে বললেন,
” মানে তুমি……”

” জি আন্টি। আপনি যা ভাবছেন তাই-ই। তবে আপাতত বাবার অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্বটা আমার কাঁধে। ”

” তাহলে তোমার সম্পর্কে যা যা তথ্য শুনেছিলাম সব ভুল?”

” জি। শুধু আমার বাবা আছে, এ তথ্যটা সঠিক। ”

সালমা বেগম এবার দু হাত মাথায় চেপে ধরলেন। উন্মাদের মতো বললেন,
” কি হচ্ছে এসব! এতো বড় বড় সত্যগুলো আমার অজানা! এর মানে তুমি কখনোই বাংলাদেশ থেকে আসোনি?”

” না আন্টি। আমি এ পর্যন্ত বাংলাদেশে গিয়েছি মাত্র দুবার। আমার জন্ম, বেড়ে উঠা সব সিসিলিতে। ”
এই বলে রাগীব কিয়ৎক্ষণ থামলো। অতঃপর পুনরায় বলা আরম্ভ করলো,
” আমার বাবা যখন কলেজে পড়তো তখন থেকেই বিদেশে আসার স্বপ্ন দেখেছিলো। আমার বাবা ছিলো উড়নচণ্ডী আর জেদি ধরণের। সে একবার যে কাজ বা ইচ্ছা পোষণ করে তা কমপ্লিট না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হয় না। তাই তো কলেজের গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই দা’লা’লের হাত ধরে বহু কষ্টে ইতালিতে পাড়ি জমান তিনি। দা’লা’লরা আমার বাবার কাছ থেকে সব টাকা নিয়ে সিসিলিতে এনে ছেড়ে দেয়। তখন বাবা বুঝতে পারে নিজের জিদের বশে কি মারাত্মক ভুলটাই না করেছিলেন তিনি। এরপর কয়েকটা দিন খুব কষ্টেসৃষ্টে রাস্তায় কাটিয়ে দেয় বাবা। ঐ কটা দিন খেতে না পেরে ক্ষুধার জ্বালায় চু’রি করে খাবার খেয়েছে আমার বাবা। একদিন ক্ষুধার জ্বালায় চু’রি করতে গিয়ে যখন ধরা পড়ে যায় তখন নিজের অজান্তেই একটি লোককে মেরে বসে বাবা। সেই লোকটিকে মেরে পালাতে গিয়ে বাবা একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়। সে তখনও জানতো না যে ঐ গাড়িতে তখনকার সিসিলির সবচেয়ে বড় গ্যাং’স্টার ছিলো। তার নাম ছিলো দেকার্তো। মা’ফি’য়াদের গডফাদার যার নাম। যে সম্পর্কের টানে এখন আমাদের দাদাজান।
দাদাজান বাবাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। নিজের কোনো সন্তান না থাকায় বাবার প্রতি দাদাজানের খুব মায়া জন্মায়। নিজের সন্তানের মতো তিনি বাবাকে দেখভাল করতে লাগলেন। এরই কয়েকদিনের মাথায় বাবা জানতে পারে দাদাজান ডা’র্ক ওয়ার্ল্ডের কাজকর্মের সাথে জড়িত। সেই বাবার ঐ মা’র্ডার কেসটাকে ধামাচাপা দিয়েছিলো। এভাবে জীবনের প্রথম মা’র্ডার করে বাবা রক্ষা পেয়ে যায়। তারপর নানা চড়াই উৎরাই পার করে বাবা দাদাজানের সাথে এ জগতে পা রাখে। দাদাজান মারা যাওয়ার পর উইল অনুসারে উত্তরাধিকার সূত্রে বাবা দাদাজনের সকল পাওয়ার, সম্পত্তি পায়। দাদাজান মারা যাওয়ার পর বাবা ঐ জগতে নিজের ভালো পজিশন বানিয়ে নেয়। এমনই এক সময় বাবা আমার মায়ের প্রেমের পড়ে এবং তাকে বিয়ে করে ফেলে। আমার মা ছিলো ইতালিয়ান।
বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় আমি ও কয়েক বছর পর রামিশার জন্ম হয়। সিসিলিতে আমার বাবার নাম ডাক হয়। এমনকি পুরো ইতালির ডার্ক ওয়ার্ল্ডের অন্যান্য গ্যাং’স্টাদের সাথে বাবার ভালো ভাব খাতির হয়ে যায়। কিন্তু ঐ যে বলে না এসব কাজে শত্রুর অভাব হয় না। বাবার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিলো। আমাদের জীবন ভালোই চলছিলো। কিন্তু দাদাজানের সবচেয়ে বড় শত্রু অর্থাৎ দাদাজানের আপন ভাই বাবার এ উন্নতি সহ্য করতে পারেনি। উনি দাদাজানের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। তাই বহু বছরের চেষ্টার পর উনি আমাদের সবাইকে মে’রে ফেলতে চায়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমরা তিনজন বেঁচে গেলেও আমাদের মা মা’রা যায়। ”
এই বলে রাগীব ক্ষণিকের জন্য থামলো।

(আজ পুরোপুরি লিখতে পারিনি। আগামীকাল বাকিটুকু দিয়ে দিবো ইন শা আল্লাহ। তো, রাগীবের আসল পরিচয় জানার পর সবার ফিলিংস কেমন?)

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here