প্রমত্ত_হৃদয়❤️,২২

0
733

#প্রমত্ত_হৃদয়❤️,২২
#লেখনীতে:সারা মেহেক

সালমা বেগম দ্বিধাগ্রস্ত চাহনিতে রাগীবের দিকে চেয়ে আছে। উনি ভীষণ দ্বিধান্বিত। রাগীবের সাথে ঠিক কেমন ব্যবহার করবেন তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। রাগীবকে ভয় পাবেন কি না এ নিয়ে তিনি বেশ দ্বিধান্বিত। কারণ রাগীব তাদের মতো প্রাত্যহিক জীবন যাপন করা স্বাভাবিক এক মানুষ নয়। সে এমন এক মানুষ যার কাছে খু”ন, অপহরণ এসব নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। ফলে এ মুহূর্তে রাগীবের সামনে বসে থাকতেও তিনি ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে আসছেন৷
রাগীব যেনো সালমা বেগমের এ মুহূর্তের মনাবস্থা আঁচ করতে পারলো। ফলস্বরূপ সে মৃদুহাস্যে বললো,
” ভয় পাবেন না আন্টি। আমি তাদের সাথেই খারাপ যারা আমার সাথে খারাপ, আমার ক্ষতি করেছে যারা। ”

সালমা বেগম নির্বাক রইলেন। রাগীবের এ কথার প্রত্যুত্তরে কি বলা উচিত তা তিনি ঠাওর করতে পারলেন না। এদিকে রাগীব বললো,
” বাকি ঘটনা শুনবেন না? রামিশার সাথে আসলে কি হয়েছিলো, ও ভেনিসে পৌঁছালো কি করে?”

সালমা বেগম ম্রিয়মাণ ভঙ্গিতে মাথা দোলালেন। রাগীব নিমিষের মাঝেই বলতে আরম্ভ করলো,
” রামিশা আমার ছোট হওয়ায় ওর প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না। বাবা ও আমি রামিশাকে খুব ভালোবাসতাম। সবসময় ওকে রাণীর হালে রাখার চেষ্টা করেছি। ওকে যথেষ্ট সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছি যেনো এসবের ভীড়ে ও কখনও নিজেকে একা না মনে করে।
রামিশা যে ভার্সিটিতে পড়তো সে ভার্সিটির একটা মেয়ের সাথে ওর খুব ভালো ফ্রেন্ডশিপ গড়ে ওঠে। মেয়েটার বাসা ভেনিসে ছিলো। ফলে যেকোনো ছুটিতে ও ভেনিসে গেলে রামিশাও ওর সাথে ছুটে চলে যেতো। আমরা এ নিয়ে রামিশাকে বাঁধা দিতাম না। ওকে ওর মতো বাঁচতে দিয়েছিলাম। কিন্তু এটাই যে পরে কাল হয়ে দাঁড়াবে তা আঁচও করতে পারিনি।
রামিশা মেয়েটাকে নিজের পরিচয় বলেনি। বলেনি সে গ্যাং”স্টার ফ্যামিলি থেকে বিলং করে। কারণ ওর ভয় ছিলো, ঐ মেয়েটা এমনটা জানলে রামিশার সাথে আর ফ্রেন্ডশিপ রাখবে না। রামিশার ভয়ের কারণটাও ঠিক ছিলো। তো, ভেনিসে গেলে মাঝে মাঝে রামিশা আর ওর ফ্রেন্ড ক্লাবে যেতো। রেগুলারলি না। মাঝে মাঝে যাওয়াআসা করতো ওরা। তবে সর্বোচ্চ রাত বারোটা পর্যন্ত ক্লাবে কাটাতো ওরা। এ বিষয়ে আমরা জানতাম। খুব বেশি রাত করতো না বলে রামিশাকে এ ব্যাপারে নিষেধ করিনি আমি। সেপ্টেম্বর মাসের আগেও রামিশা বেশ কবার ক্লাবে গিয়েছিলো৷ এর মাঝে লাস্ট দুবার রামিশা যখন ক্লাবে যায় তখন আপনার স্বামীর নজর রামিশার উপর পড়ে। প্রথম দুবার খুব ভালোভাবে রামিশাকে পর্যবেক্ষণ করে শেষ বারে অ্যা’টাক করে। ঘটনার দিনও রামিশা আর ওর ফ্রেন্ড ক্লাবে গিয়েছিলো, সঠিক সময়ে ফেরারও কথা ছিলো। কিন্তু আপনার স্বামী তা হতে দেয়নি। রামিশা রোজ যে সফট ড্রিংকস ওর্ডার করতো সেটাতে উনি সেদিন ড্রা’গ মিশিয়ে দেয়। আর উনার দেওয়া ড্রা’গের পরিমাণ এক্সেস ছিলো। এ কারণে রামিশা নিজের হুঁশে ছিলো না। এটাই তো চাইছিলো আপনার স্বামী। উনি রামিশার ঐ অবস্থার সুযোগে রামিশার সাথে বেশ কটা ছবি ক্লিক করে। যেটা আপনার অলরেডি দেখা হয়ে গিয়েছে। এরপর ঐ রুমেই সবাইকে বের করে দিয়ে আপনার স্বামী রামিশাকে……..”

সম্পূর্ণ বাক্য শেষ করতে পারলো না রাগীব। তার হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এসেছে। আঁখিজোড়ায় ভস্মীকরণ ক্রোধের ছাপ স্পষ্ট। যেনো এ ক্রোধের অনলেই সে আফসার সাহেবকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে। শুধুমাত্র সে-ই জানে যে নিজেকে সে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ বাড়িতে আসার পর যতবার সে আফসার সাহেবের সম্মুখীন হয়েছে ততবারই মনের জোরে তার হাত দুটোকে সে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। সে জানে, এ হাত দুটোকে সেসব মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণহীন হতে দিলে তখনই ঐ স্থানে বিরাট এক রণক্ষেত্র তৈরী হয়ে যেতো। যা সে কখনোই চাইতো না। এর পিছনের সবচেয়ে বড় কারণ ছিলো সাবিহা। সে সাবিহাকে ভালোবাসতো। সে চেয়েছিলো সাবিহার ভরসার পাত্র হয়ে আফসার সাহেবের এ মুখোশ উন্মোচন করে তবেই আফসার সাহেবের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে। সে পথ ধরেই রাগীব এগিয়ে যাচ্ছিলো।

সালমা বেগম রাগীবের অসম্পূর্ণ কথাটি বিড়বিড় করে নিজের অজান্তেই সম্পন্ন করেন৷ ভাবতে থাকেন তার স্বামীর মুখোশের পিছনের ঐ কালো রূপের কার্যকলাপ। খানিক ভাবতেই তার সমস্ত শরীর শিউরে উঠে। অল্প বিস্তর কেঁপে উঠেন তিনি।

রাগীব পুনরায় বলতে আরম্ভ করলো,
” ঘটনা এখানেই শেষ হলে পারতো। কিন্তু তা হয়নি। রামিশাকে নিচের ক্লাব রুমে একবার রে”প করা হলেও আপনার স্বামীর সাধ মিটেনি তাতে। সে রামিশাকে ঐ অবস্থায় একটি হোটেলে নিয়ে যান। সেখানেও তিনি একই কাজ করেন। তবে এবার তিনি একা ছিলেন না। গিয়াস সাহেবও উনার সাথে ছিলেন। গিয়াস সাহেবকে তো চিনার কথা আপনার। আপনার স্বামীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী যে। ”

সালমা বেগম আরেক দফা বিস্মিত হলেন। যে গিয়াস সাহেবকে এতোদিন তিনি ভালো একজন মানুষ মনে করেছেন সেও কি না শেষমেশ নিজের রূপ বদলিয়ে ফেললো! সালমা বেগম যেনো আজ আশ্চর্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় গিয়ে পৌঁছিয়েছেন। রাগীব একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় বললো,
” সেই রাতে দু জন কয়েক বার রামিশাকে রে”প করে ওকে ওভাবেই হোটেলে রেখে বেরিয়ে পড়ে। এ কারণে রামিশার ফ্রেন্ড ওকে রাতে খুঁজে পায়নি। সকালেও রামিশাকে খুঁজেছে সে। কিন্তু পায়নি। এদিকে আমাদের কাউকে ও এ ব্যাপারে জানায়নি। হয়তো ও আগেভাগে আমাদের জানালে রামিশা আজ বেঁচে থাকতো। কিন্তু ওর দায়িত্বে থেকে রামিশা গায়েব হয়েছিলো দেখে ও ভয়ে আমাদের কিছু বলেনি। যতক্ষণে ও আমাদের জানিয়েছে ততক্ষণ অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো। পরের দিন বিকালেই আপনার স্বামী ও গিয়াস সাহেব রামিশাকে টাকা অফার করে। কিন্তু বিধ্বস্ত শরীরটা নিয়েও রামিশা এতে রাজি হয়নি। সে এসব কিছু বেফাঁস করার কথা বলে। এরই ভয়ে উনারা দুজন মিলে রামিশাকে মেরে ফেলে। ওর মৃ’তুটা ছিলো সবচেয়ে ভয়ানক মৃ’ত্যু। রামিশার বডিটা যখন পাই তখন ওর শরীরে এক ফোঁটা কাপড়ও ছিলো না। ওর পেটে ছু’রির ক্ষত স্পষ্টভাবে প্রথমবারেই নজরে এসেছিলো। ওর হাতের কাছে পড়েছিলো এই স্কার্ফটা। যা র’ক্তে রঞ্জিত ছিলো।
ওর বডি স্বচক্ষে দেখার পর বাবা নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। আদরের মেয়ের এ অবস্থা দেখে বাবা তখনই ব্রেইন স্ট্রোক করে। এর জন্য বাবা পরে প্যারালাইজড হয়ে যায়। রামিশার এ অবস্থা দেখে আমিও নিজেকে সামলাতে পারিনি। আমাকে সামলানোর মতো ছিলো আমার একমাত্র বন্ধু, রামিশার ফিয়ন্সে অনিক। অনিক নিজেও সে মুহূর্তে একদম ভেঙে পড়েছিলো। কিন্তু তবুও নিজের সাধ্যমতো আমাকে সামলিয়েছে ও। ”
এই বলে রাগীব নিশ্চুপ বসে রইলো। সালমা বেগম লক্ষ্য করলেন, এতোক্ষণ বাদে রাগীবের চোখজোড়া খানিক সিক্ত হয়ে উঠেছে। তিনি এই ভেবে বিস্মিত হলেন, এই দীর্ঘ সময় যাবত রাগীব কিভাবে নিজেকে শক্ত রেখেছে! নিজের বোনের সাথে ঘটে যাওয়া এ জ’ঘ’ন্য ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়েও কান্নায় ভেঙে পড়েনি রাগীব! অবশ্য একজন গ্যাং’স্টার নিশ্চয়ই এতো নরম মনের মানুষ নয় যে প্রতি ঘটনায় সে কান্নায় ভেঙে পড়বে!

সালমা বেগম ও রাগীব দুজনেই নিশ্চুপ রইলেন। অকস্মাৎ সালমা বেগমের সাবিহার কথা মাথায় এলো। ঈষৎ কেঁপে উঠলেন তিনি। তৎক্ষনাৎ নিজের মাঝে ভীষণ আফসোস বোধ করলেন তিনি। আবেগের বশে সাবিহার সাথে রাগীবের বিয়ে দিয়ে কি ভুলটাই না করেছেন তিনি! সালমা বেগম শতভাগ নিশ্চিত হলেন, রাগীব প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সাবিহাকে বিয়ে করেছে। তৎক্ষনাৎ তিনি গলা চওড়া করে রাগীবকে বললেন,
” তাই বলে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিলে তুমি!”

অকস্মাৎ এমন কথায় খানিক ভড়কে গেলো রাগীব। চোখের কোনায় ভেসে উঠা অশ্রু মুছে সে বললো,
” কে বললো যে আমি রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য সাবিহাকে বিয়ে করেছি! রিভেঞ্জ নিতে হলে অন্যভাবে নিতাম। কিন্তু সাবিহাকে বিয়ে করার সাথে রিভেঞ্জ নেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনার স্বামীর উপর আমি রিভেঞ্জ নিবো ঠিকই তবে সাবিহাকে ব্যবহার করে নয়। ওকে আমি ভালোবাসি। আর আমার ভালোবাসায় কোনো খাঁদ নেই। ওকে ভালোবাসি বলেই এতোদিন অপেক্ষা করেছি। এতো নাটক ঘটিয়ে এ বাড়িতে এসেছি। ”

সালমা বেগম বিস্মিত হলেন। তবে কিছু বললেন না তিনি। বরঞ্চ দৃষ্টি মেঝেতে দিয়ে ভাবতে লাগলেন সাবিহার কথা, আফসার সাহেবের কথা। কিয়ৎক্ষণ বাদে তিনি দূর্বল কণ্ঠে রাগীবকে জিজ্ঞেস করলো,
” এ ব্যাপারে সাবিহাকে জানানো কি জরুরি রাগীব?”

রাগীব পরিপূর্ণ চাহনিতে সালমা বেগমের পানে চাইলো। দৃঢ় গলায় বললো,
” অবশ্যই বলা জরুরি। আমি চাই না ও সারাজীবন আপনার স্বামীকে ভালো মানুষ, ভালো বাবা বলে জানুক। যে মানুষটা নিজের মেয়ের বয়সী একটি মেয়েকে রে’প করেছে সে নিশ্চয়ই নিজের মেয়ের কাছে সম্মান পাওয়ার যোগ্য না। এখন এই সত্যটা সাবিহাকে আপনি বলবেন না কি আমি বলবো সেটা আপনার উপর ডিপেন্ড করে। আমার মনে হয় না এ ব্যাপারে আমার মুখ থেকে ডিরেক্টলি সাবিহাকে কিছু বলা ঠিক হবে। তবে হ্যাঁ, আমি ইনডিরেক্টলি ওকে ওর বাবার সম্পর্কে এসব কিছু বলবো। আপনি আমাকে আটকাতে পারবেন না আন্টি। তবে চাইলে আপনি নিজ মুখে সবটা বলতে পারেন ওকে। এসব কিছু আপনার বিবেকের উপর নির্ভর করে। সব সত্য জানার পরও এই মানুষটাকে আপনি সারাজীবন নিজের মেয়ের চোখে ভালো দেখবেন, না ওকে সত্য জানাবেন তা আপনার উপর নির্ভর করে। ”
এই বলে রাগীব চট করে উঠে দাঁড়ালো। দম ফেলে কঠিন স্বরে বললো,
” আপনার স্বামী ড্রা’গ স্মা’গ’লিং করতো, মার্ডার করতো, এতে আমার কোনো প্রবলেম ছিলো না। কিন্তু রে’প সেটাও আবার আমার আদরের বোনকে, এটা কোনোভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়। এখন আপনি আমার কাছে হাজার রিকুয়েষ্ট করলেও আমি আপনার স্বামীকে ছাড়বো না। উনার শেষ নিঃশ্বাসটুকু আমার সামনেই ফেলতে হবে। এটা মনে রাখবেন আন্টি। ”
এই বলে রাগীব চলে যেতে নিলো। কিন্তু সালমা বেগম পিছন হতে তাকে ডেকে তার পথ আটকালেন।
সালমা বেগম এ মুহূর্তে ভেতর হতে ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছেন। উঠে দাঁড়িয়ে থাকার মতো শক্তিটুকুও তিনি জুটাতে পারছেন না। রাগীবকে ডেকে অতি দূর্বল কণ্ঠে তিনি বললেন,
” জানো, রাগীব? আমি দ্বিতীয়বারেই তোমার কথা কেনো বিশ্বাস করে নিলাম?”

সালমা বেগমের পরিবর্তিত কণ্ঠস্বর শুনে রাগীব ফিরে চাইলো। প্রশ্নাতুর চাহনিতে সালমা বেগমের পানে চাইলো। সালমা বেগমের দৃষ্টি তখন মেঝেতে নিবদ্ধ। তিনি খানিক সময় নিয়ে পূর্বের ন্যায় বললেন,
” সাবিহার বাবার চরিত্র সম্পর্কে আমার আগে থেকেই জানা আছে রাগীব। তবে এতোটা খারাপ জানতাম না উনাকে।
সাবিহার বয়স তখন মাত্র পাঁচ মাস। দেশে থাকতে ওর বাবাকে আমারই এক পরিচিত মেয়ের সাথে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে দেখি। কিন্তু তখন বিষয়টা জানাজানি হওয়ায় গ্রাম্য সালিশে সব ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। তবে এরপরও উনি আরেকবার এমন পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন। কিন্তু তখন সাবিহার জন্য নিজেকে ঐ পথ থেকে ফিরিয়ে আনেন তিনি। এরপর ভেনিসে এসে উনার সম্পর্কে আর কিছুই শুনিনি বা দেখিনি আমি। কারণটাও ধরতে পারলাম আজ। কারণ সাবিহার বাবা আমাকে কিছু জানার সুযোগ দেননি। আমাকে পুরোপুরি আঁধারে রেখেছেন উনি৷ ”
এই বলে সালমা বেগম তীব্র যন্ত্রণার এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

আফসার সাহেবের চরিত্র সম্পর্কে আরো নতুন তথ্য জানতে পেরে অবাক হলো না রাগীব৷ সে সহজেই মেনে নিলো ব্যাপারটি। বললো না একটি কথাও। খানিক বাদে সালমা বেগম একই ভঙ্গিতে থেকে শান্ত সুরে বললেন,
” সাবিহার কাছে যাও রাগীব। আমি একটু একা থাকি। কোনো প্রয়োজন হলেও নক করো না। আর যাওয়ার সময় দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে যেও। ”

রাগীব টু শব্দটুকুও করলো না। কারণ সে কিছুটা হলেও সালমা বেগমের পরিস্থিতি অনুভব করতে পেরেছে। এ কারণে সে নিশ্চুপে রুম হতে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার সময় নিঃশব্দে দরজা ভিড়িয়ে গেলো।
রাগীব নিজেদের রুমে এসেই দরজা আটকিয়ে দিলো। বিছানার দিকে তাকিয়ে দূর হতেই ঘুমন্ত সাবিহাকে দেখে স্মিত হাসলো সে। অতঃপর রুমের লাইট নিভিয়ে সে নিঃশব্দে সাবিহার পাশে শুয়ে পড়লো। ঘুমন্ত সাবিহাকে নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে করতে সে বালিশে কনুই গেঁড়ে থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে সাবিহার পানে চাইলো। তার ঘুমন্ত স্নিগ্ধময়ীর পানে অপলক চাহনিতে চেয়ে রইলো সে। যে চাহনিতে মিশে রইলো অপরিসীম ভালোবাসা। অকল্পিত ভালোবাসা। যে ভালোবাসার সম্পর্কে সাবিহার কোনো ধারণা নেই। যে ভালোবাসা সম্পর্কে সাবিহা কল্পনাও করেনি কখনো, সে ভালোবাসায় রাগীব আগলে রেখেছে তাকে।

এক পর্যায়ে রাগীব অপর হাত দিয়ে আলতো করে সাবিহার চুলের মাঝে হাত বুলালো। অতঃপর তার স্নিগ্ধময়ীর কপালে আলতো করে গভীর চুমু এঁকে বললো,
” তুমি জানো না সাবিহা, আমি তোমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি। আমার ভালোবাসার গভীরতা সম্পর্কে তোমার ধারণাও নেই সাবিহা। আমি কখনও তোমাকে হারাতে চাই না। যেকোনো মূল্যে সারাজীবন নিজের কাছে রেখে দিতে চাই। আমার বুকের মাঝে আগলে রেখে দিতে চাই। তোমার দিকে কেউ অন্য নজরে তাকিয়ে থাকুক সেটা আমার সহ্য হয় না। এঞ্জোর ঘটনাটা আমাকে না বললেও আমি জানি সাবিহা। এবার ওকে সুযোগ দিয়েছি। তবে দ্বিতীয়বার ও ওর সীমা অতিক্রম করলে আমি আমার সীমা ভুলে যাবো। ওকে মে’রে ফেলতে দ্বিতীয়বারও ভাববো না আমি। ”
এই বলে রাগীব সাবিহার চুলের মাঝে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here