প্রমত্ত_হৃদয়❤️,২৩

0
776

#প্রমত্ত_হৃদয়❤️,২৩
#লেখনীতে:সারা মেহেক

এ বছরের চূড়ান্ত শীতের হাওয়া বইছে। প্রকোপ কমেছে হিম হিম অনিল অনুভূতির। এখন শরীর এ হাওয়ার ছোঁয়ায় শিউরে উঠে না। তবে শরীরের বহিঃবরণে শীতল হয়ে উঠে। সালমা বেগম ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে নির্বাক চাহনিতে মেঘের চলাচল দেখছেন। দেখছেন মেঘের আড়ালে হঠাৎ হঠাৎ লুকিয়ে যাওয়া চাঁদটি। তিনি তীব্রভাবে অনুভব করছেন, তার হৃদয়ে বৃহৎ একটি ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। সে ক্ষত শত চিকিৎসাতেও সেরে উঠার নয়। তার বিধ্বস্ত আঁখিজোড়া অশ্রুতে টলমল করছে। ক্ষণে ক্ষণে বেয়ে পড়ছে বাঁধভাঙা মর্মযন্ত্রণার নোনাজল। তার মন চাইছে চিৎকার করে কাঁদতে। মন চাইছে কাউকে জিজ্ঞেস করতে, ‘কি পাপ করেছিলাম যার শাস্তি এতোদিনেও শেষ হয়নি!’ কিন্তু সালমা বেগম চুপিসারে কাঁদলেন, চাপা কান্নার তোড়ে ঠোঁট চেপে নিজেকে সামলালেন। বারংবার তার চোখের সামনে চলমান দৃশ্যের ন্যায় আফসার সাহেবের নি’কৃ’ষ্ট কাজগুলো ভেসে উঠলো। এতে আরোও ভেঙে পড়লেন তিনি।

সময় গড়িয়ে গেলো। রজনীর গভীরতা বৃদ্ধি পেলো। রাত তখন মধ্যরাতে উপনীত হলো। সালমা বেগমের চাপা কান্নার তোড় কমে এসেছে। মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে উঠছেন তিনি৷ অতিবাহিত সময়ের সাথে সাথে তিনি নিজেকে পূর্বের তুলনায় দৃঢ়ভাবে সামলে নিয়েছেন। মানসিক অবস্থা খানিক স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তিনি আধভেজা অশ্রুসিক্ত গাল মুছে নিলেন। ব্যালকনি হতে বেরিয়ে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানির ঝাপটা দিলেন। অতঃপর ওয়াশরুম হতে বেরিয়ে তিনি নিজের ফোন নিয়ে চলে গেলেন সাবিতের রুমে। আজ সাবিতের কাছ ঘুমাবেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ কান্নার ফলে তার চোখ ও মাথা প্রচণ্ড ব্যাথায় জর্জরিত করছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই মাঝরাতেও ঘুম ভেঙে কান্না করতে বসে যাবেন তিনি। অন্ততঃ আজ সাবিতের কাছে ঘুমালে তিনি কান্না করবেন না। এই চিন্তায় যে, ঘুম হতে সাবিত জেগে উঠলে তাকে নিজের এ কান্নার অযুহাত দিতে হবে। যা সালমা বেগম কিছুতেই চান না। তিনি চান না, সাবিতকে আফসার সাহেবের কু’কীর্তি সম্পর্কে অবগত করতে। তিনি চান না ছোট ছেলেটার মনে এ নিয়ে কোনো প্রকার খারাপ প্রভাব পড়ুক। এ কারণে তিনি মনেপ্রাণে চাইছেন, সাবিতকে এসব বেঁফাস সত্য হতে দূরে রাখতে। নিষ্পাপ ছেলেটার মনে তার আপন বাবার জন্য ঘৃণার উদ্রেক ঘটাতে চাইছেন না তিনি। কিন্তু কত দিন এসব ঘৃণিত সত্য হতে সাবিতকে দূরে রাখতে পারবেন, তা সালমা বেগমের জানা নেই।

সালমা বেগম সাবিতের রুমে চলে এলেন। সাবিতের পাশে শুয়ে সাবিতের চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি।

.

থাই গ্লাস ভেদ করে প্রত্যুষের উষ্ণ সোনালী রোদের মৃদু ছোঁয়া এসে সাবিহার মুখশ্রী রাঙিয়ে দিলো। সেই রোদের উপস্থিতিতে ঘুম ভাঙলো তার। পিটপিট করে আঁখিজোড়া মেলে চাইলো সে। প্রথম কয়েক সেকেন্ড স্থির থেকে সে পার্শ্ব পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা নিলো। অতঃপর সবকিছু ঠাওর করতে পেরে সে খানিকা নড়েচড়ে উঠলো। মুহূর্তেই অনুভব করলো রাগীব তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে৷ ক্ষণেই রাগীবের উষ্ণ আলিঙ্গনে তার সমস্ত শরীরে স্নিগ্ধ পরশের ছোঁয়া অনুভব হলো। আবেশে কয়েক মুহূর্ত আঁখিজোড়া বুজে মিষ্টি করে হাসলো সে। অতঃপর ধীরেসুস্থে রাগীবের দিকে ফিরলো সে। ততক্ষণে রাগীবের হাতের বাঁধন খানিক আলগা হয়ে এসেছে। ফলে সাবিহা এক হাত ভাঁজ করে মাথার নিচে ঠেকিয়ে রাগীবের পানে চাইলো।
ঘুমন্ত রাগীবকে কয়েক মুহূর্ত নিষ্পলক দেখলো সাবিহা। রাগীবের মুখমণ্ডলের প্রতিটি রেখা ভীষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো সে৷ দুষ্টু মিষ্টি চাপা হাসির রেখা ঘিরে ধরলো সাবিহার ওষ্ঠজুগলকে৷ এক পর্যায়ে সে অপর হাত দিয়ে আলতো করে রাগীবের গাল বেয়ে আঙুল নামিয়ে নিলো। রাগীবের দাঁড়িতে কিয়ৎক্ষণ আলতো হাত বুলালো সে। ঘুমন্ত রাগীবকে এভাবে ঘাঁটতে ভীষণ আনন্দ পেলো সাবিহা। কিন্তু তার এ কান্ডে রাগীব যে কখন ঘুম হতে জেগে গিয়েছে তা টের পেলো না সে।
দাঁড়িতে সাবিহার হাতের স্পর্শে রাগীব বদ্ধ আঁখিজোড়া সহিত বললো,
” যে কাজটা ঘুমের মাঝে করো সে কাজটা আমি জেগে থাকতে করা যায় না?”

অকস্মাৎ ঘুমন্ত রাগীবের কণ্ঠস্বর কর্ণপাত হতেই চমকে উঠলো সাবিহা। তৎক্ষনাৎ নিজের হাত সরিয়ে নিতে চাইলে রাগীব তাতে বাঁধা দিলো। সে সাবিহার হাতের কব্জি ধরে নিজের গালের উপর রেখে আঁখিজুগল মেলে চাইলো। ঠোঁটে আবেশি চাপা হাসি বজায় রেখে নিদ্রাচ্ছন্ন কণ্ঠে ধীর স্বরে বললো,
” এখন হাত সরিয়ে নিচ্ছো কেনো? ভালোই লাগছিলো সকাল সকাল তোমার নরম হাতের ছোঁয়া। আচ্ছা শোনো, এখন থেকে রোজ সকালে আমাকে এভাবে জেগে উঠাবে। আন্ডারস্টুড?”

সাবিহা খানিক লজ্জা মিশ্রিত হাসি হাসলো। ঈষৎ ভেঙচি কেটে বললো,
” আমার তো খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে রোজ সকালে তোমাকে ঘুম থেকে উঠাবো। এলার্ম আছে কিসের জন্য? ”

রাগীব মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ উচ্চারণ করে বললো,
” এই মোলায়েম মোলায়েম হাত থাকতে ঐ কর্কশ এলার্মের শব্দে উঠবো কেনো! ওয়াইফ হিসেবে তোমার একটা দায়িত্ব কর্তব্য আছে কি নেই, হুম?”

” এতো কঠিন কাজ সকাল সকাল করতে পারবো না আমি। দরকার হলে একটা রাবারের হাত বানিয়ে নিয়ে আসো। ”
এই বলে সাবিহা উঠে নিতে চাইলো। কিন্তু রাগীব তাকে বাঁধা দিয়ে বরঞ্চ নিজের বুকের মঝে আগলে ধরলো। বললো,
” রাবারের হাতে কাজ হবে না৷ আমার স্নিগ্ধময়ীর হাতটাই লাগবে আমার। ”

সাবিহা দ্বিতীয় কিছু বললো না। রাগীবের মুখে ‘স্নিগ্ধময়ী’ নামটি শুনে তার অন্তঃস্থল মুগ্ধতায় ছেয়ে উঠলো। সমস্ত শরীর বেয়ে উষ্ণ প্রেমের ছোঁয়া বয়ে গেলো। এভাবেই নির্বিঘ্নে কেটে গেলো তাদের ভালোবাসায় মোড়ানো মুহূর্তটি। দুজনে নীরবে হৃদয়ের অন্তঃস্থল দিয়ে সে মুহূর্তটি ভীষণ উপভোগ করলো।

.

সাবিহাকে ভার্সিটি হতে নিতে এসেছে রাগীব। ভার্সিটির মূল ফটকের সম্মুখে গাড়ির উপর হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। অপেক্ষা সাবিহার। আধ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর সে সাবিহা ও সোফিয়াকে দেখতে পেলো। দুজনে গল্প করতে করতে আসছে। অকস্মাৎ সাবিহার পিছনে এঞ্জোকে দেখতে পেলো রাগীব৷ মুহূর্তেই সতর্ক চেতনায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থাপন করলো সাবিহা ও এঞ্জোর পানে।

এদিকে পিছন হতে হাঁটতে হাঁটতে পিছন হতে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে থমকে দাঁড়ালো। চট করে পিছনে চাইলো সে। এঞ্জোকে দেখে মুহূর্তেই তার চেহারার রূপরেখা বদলে গেলো। হাসি হাসি মুখশ্রী মুহূর্তেই ক্রোধান্বিত হয়ে এলো। সে কঠিন স্বরে এঞ্জোকে বললো,
” তোমাকে সেদিন নিষেধ করা সত্ত্বেও তুমি আজও আমার পিছনে এসেছো!”

এঞ্জো একটা পৈ’শা’চিক হাসি দিয়ে বললো,
” কি করবো বলো সাবিহা। তুমি মানুষটাই এতোটা লোভনীয় যে বারবার তোমার পিছনে ছুটে চলে আসি। ঐ যে মধুর পিছনে যেভাবে মৌমাছি লাগে ঠিক সেভাবেই তোমার পিছনে লেগে আছি আমি। এতে অবশ্য আমার কোনো আফসোস নেই। কারণ তুমি এতোটাই হ’ট যে চাইলেও নিজেকে কন্ট্রোল করা যায় না। ”

এঞ্জোর শেষোক্ত কথাটি শুনে সাবিহা ক্রোধের অনলে জ্বলে উঠলো যেনো। মুহূর্তেই সে এঞ্জোকে থা’পড় মা’রতে উদ্যত হলো। কিন্তু গোটা ভার্সিটির সামনে অযথা তামাশা করতে মোটেও ইচ্ছুক নয় সে। ফলে বহু কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখলো সে। এ পর্যায়ে সে রাগীবের সম্পর্কে এঞ্জোকে কিছু বলতে যাবে কিন্তু এর পূর্বেই এঞ্জো সাবিহার ডান হাত জোরজবরদস্তি করে ধরে বললো,
” সবার সামনে এভাবে কথা বলতে ভালো লাগছে না। চলো, একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে কথা বলি। ”

মুহূর্তেই সাবিহা নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে এঞ্জোকে থা’পড় মা’রতে উদ্যত হলো। কিন্তু চোখের পলকে এঞ্জো তাকে বাঁধা দিয়ে তার হাতটি পুনরায় ধরে বললো,
” এ হাতে থা’পড় মানায় না সাবিহা। তুমি যেমন আগুন তাতে তোমার এ থা’পড়ে তো আমি জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাবো। ”

সাবিহা নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু এঞ্জোর সাথে পেরে উঠলো না সে। উপরন্তু হাত ছাড়াতে না পেরে সে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
” আমি চাই তুমি জ্বলেপুড়ে একেবারে ছাই হয়ে যাও। এরপর যদি আমার পিছু ছাড়ো তো….”

” আমার থেকে পিছু ছাড়ানো এতো সহজ নয় সাবিহা। বরং যতোই তুমি আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করবে ততোই আমি তোমাকে নিজের কাছে টেনে নিবো। ”

” ইটস ইম্পসিবল এঞ্জো। কারণ আমি অলরেডি ম্যারিড। আমার হাজবেন্ড আমার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছে। ”

সাবিহার এ কথায় এঞ্জোর চাহনি মুহূর্তেই বদলে গেলো। সে চট করে সাবিহার হাত ছেড়ে দাঁড়ালো। কিয়ৎক্ষণ সাবিহার দিকে চেয়ে থেকে পুনরায় নিজের পুর্বের রূপে অবতীর্ণ হয়ে বললো,
” তো? হাজবেন্ড থাকলে বুঝি সময় কাটানো যায় না? অবশ্যই কাটানো যায় সাবিহা। আর তুমি আমার সাথে সময়ও কাটাবে। যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”

সাবিহা কোনো জবাব দিলো না। বরং এঞ্জোর দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে অপর দিকে পা বাড়ালো। তার সাথে হাঁটা শুরু করলো সোফিয়াও। সোফিয়া তাকে জিজ্ঞেস করলো,
” তুমি কি রাগীবকে এঞ্জোর ব্যাপারে বলবে সাবিহা?”

” হ্যাঁ। কারণ আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে। ”
এই বলে ভার্সিটির মূল ফটকের দিকে দৃষ্টি পড়তেই সে রাগীবকে দেখতে পেলো। রাগীব তাকে দেখে মৃদু হাসতেই সেও রাগীবকে মৃদু হাসি উপহার দিলো। অতঃপর সে রাগীবের নিকটে পৌঁছাতেই রাগীবকে জিজ্ঞেস করলো,
” কখন এসেছো?”

রাগীব তৎক্ষনাৎ জবাব দিলো না। পূর্বোক্ত স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা এঞ্জোর পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
” বেশিক্ষণ না। ”

” ওহ। আচ্ছা চলো যাওয়া যাক। সোফিয়াকেও ওর বাড়িতে ড্রপ করে দিবো আমরা। ওকে?”

রাগীব এখনও কঠিন দৃষ্টিতে এঞ্জোর দিকে চেয়ে আছে। সে তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এঞ্জোকে। এদিকে রাগীবের পাশে সাবিহাকে দেখে এঞ্জোর বুঝতে বাকি রইলো না, এটিই সাবিহার হাজবেন্ড। সে রাগীবের এ দৃষ্টিতে খানিক শিউরে উঠলো। অতঃপর শুকনো একটি ঢোক গিলে কালবিলম্ব বাদে পিছনে ফিরে হাঁটা শুরু করলো সে।

রাগীবের নিকট হতে কোনো জবাব না পেয়ে সাবিহা পুনরায় একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো। এ পর্যায়ে রাগীব বললো,
” ওকে। আচ্ছা, ঐ ছেলেটা কে যে তোমার হাত ধরেছিলো?”

সাবিহা এক পলক সোফিয়ার দিকে চাইলো। সোফিয়া তাকে এঞ্জোর ব্যাপারে বলতে আশ্বস্ত করলে সে বললো,
” ওটা এঞ্জো। বাড়িতে পৌঁছে তোমাকে ওর ব্যাপারে বলবো। ”

রাগীব দ্বিতীয় কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসলো।তার পাশে ফ্রন্ট সিটে বসলো সাবিহা ও ব্যাক সিটে বসলো সোফিয়া। দুজনে বসে পড়লে রাগীব গাড়ির জানালার কাচ ভেদ করে দূর হতে এঞ্জোকে এক নজর দেখে নিলো। অতঃপর নিজের মাঝেই আওড়ালো সে,
” মিস্টার এঞ্জো, আপনি আপনার সীমা অতিক্রম করেছেন। এখন আপনার জন্য একটু খাতিরযত্নে ব্যবস্থা না করলেই নয়। ”
এই বলে সে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

.

বদ্ধ ঘরে দু হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে ক্ষুদ্র ড্রা’গ ডিলার সার্জো। একটি কাপড়ের টুকরো দিয়ে তার মুখ বাঁধা। বদ্ধ করে এহেন অবস্থায় নিঃশ্বাসের জন্য হাসফাস করছে সে। সে জানে না, কে বা কারা কি উদ্দেশ্যে তাকে এখানে ধরে এনেছে। সে নিজের হাত ও পায়ের বাঁধন খোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু শত চেষ্টাতেও দৃঢ় এ বাঁধন হতে মুক্ত হতে পারলো না সে। তার আশেপাশে সুটবুট পরিহিত বেশ কজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষণ বাদেই সে শুনতে পেলো গাড়ি থামানোর শব্দ, কারোর পায়ে হাঁটা জুতোর শব্দ। এ নিয়ে তার মস্তিষ্কে উঁকি দিলো বেশ কটি প্রশ্ন। তার এ প্রশ্নের জবাব দিতেই যেনো সে স্থানে রাগীবের আগমন ঘটলো। কালো শার্ট, কোট, প্যান্ট পরিহিত রাগীবের দেহভঙ্গিমা ও আচরণ দেখে সার্জোর বুঝতে বাকি রইলো না যে সে কোনো সাধারণ মানুষের কবলে পড়েনি।

সার্জোর সামনে একটি চেয়ার টেনে পায়ের উপর পা তুলে বসে পড়লো রাগীব৷ হাতের পি’স্ত’লের ট্রিগার পয়েন্ট ধরে ঘুরাতে ঘুরাতে কোনোরূপ ভূমিকা ছাড়াই অতি শীতল কণ্ঠে বললো,
” মিস্টার সার্জো, নিজের প্রাণ ভিক্ষা চাইলে মিস্টার আফসার সাহেবের বিপক্ষে গিয়ে আমাদের জন্য কাজ করতে হবে তোমাকে।”

সার্জো রাগীবের এ শীতল কণ্ঠে নড়েচড়ে বসলো। আমতা আমতা করে বললো,
” কি কাজ?”

রাগীব তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লোককে দেখিয়ে বললো,
” ও তোমার কাজ বুঝিয়ে দিবে তোমাকে। শর্টে বলে রাখি, একটা পার্টিতে গিয়ে তোমাকে কিছু কাজ করতে হবে।”

সার্জো ভয়ার্ত চাহনিতে রাগীবের পানে চাইলো। অনেকটা সাহস জুগিয়ে দ্বিধান্বিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” যদি তোমাদের বলে দেওয়া কাজ না করি তবে? এতে আমার ফায়দাটা কি?”

সার্জোর এহেন কথায় রাগীব মুখ ফিরিয়ে হাসলো। অতঃপর অকস্মাৎ সার্জোর মাথায় পি’স্ত’ল ঠেকিয়ে ক্রুর হাসি দিয়ে বললো,
” এ পি’স্ত’ল চালাতে আমি এক মিনিটও সময় নিবো না সার্জো। নাও, ডিসিশন ইজ ইউরস। আই হোপ, তোমার দুটো প্রশ্নের জবাবই তুমি পেয়ে গিয়েছো।”

সার্জো দ্বিতীয় কোনো কথা বলার সাহস করলো না। শুকনো একটি ঢোক গিলে বললো,
” আচ্ছা, তোমরা যা বলবে তাই করবো আমি। ”

সার্জোর কথা শুনে রাগীব স্মিতহাস্যে পি’স্ত’ল সরিয়ে নিজের পকেটে পুরে দিলো। অতঃপর উঠতে নিলেই তার এক সাহচর্য পিছন হতে ফিসফিস করে তাকে বললো,
” স্যার, আপনার সাথে মিস্টার ডেভিড দেখা করতে চেয়েছেন। আজ রাতে যদি আপনার সময় হয় তবে।”

রাগীবের চাহনি খানিক চিন্তিত দেখালো। ঠোঁট কামড়ে কয়েক মুহূর্ত কিছু ভাবলো সে। অতঃপর বললো,
” ওকে। আজ রাতেই দেখা করবো উনার সাথে। আই থিংক আমি উনার দেখা করার কারণটা জানি। যাই হোক, তুমি মিস্টার ডেভিডকে জানিয়ে দিও যে আমিও উনার সাথে দেখা করে কিছু ব্যাপারে ডিসকাস করতে চাই। ”

রাগীবের সম্মতি পেয়ে তার সাহচর্য চলে গেলো। আর রাগীব খানিকক্ষণ সেখানেই বসে রইলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here