প্রমত্ত_হৃদয়❤️২৬

0
924

#প্রমত্ত_হৃদয়❤️২৬
#লেখনীতে:সারা মেহেক

উন্মুক্ত চোখেও সবকিছু আঁধারে নিমজ্জিত দেখছে এঞ্জো। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিতেও হাঁসফাঁস করছে সে। ফেব্রুয়ারীর শীতেও তার সমস্ত শরীর ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে আছে। বদ্ধ কালো কাপড়ের ভেতর ধড় ব্যতিত সমস্ত মাথা আবদ্ধ হয়ে আছে এঞ্জোর। হাত দুটো পেছনে শক্ত করে বাঁধা। পা দুটোও সামনে একত্রে বাঁধা৷ বাঁধনগুলো দৃঢ়, প্রচণ্ড দৃঢ়। শত চেষ্টাতেও এ বাঁধন উন্মুক্ত করা সম্ভব নয়।
এঞ্জো পুরোপুরি নিশ্চিত তাকে অপহরণ করা হয়েছে। কিন্তু কে বা কারা কি কারণে তাকে এভাবে অপহরণ করেছে তা এঞ্জোর অজানা। সে বদ্ধ মুখোশের ন্যায় কাপড়ের অভ্যন্তরে চিৎকার করছে। বারংবার জিজ্ঞেস করছে তাকে কেনো অপহরণ করা হয়েছে। কিন্তু তার এ চিৎকার ও প্রশ্নের জবাব দিতে কেউই আগ্রহ বোধ করছে না।

নিজেদের আস্তানায় গাড়িসহ পৌঁছালো রাগীব। গাড়ি রেখে ভেতরে প্রবেশ করতেই তার সাহচর্যরা নত মস্তকে তাকে সম্মান জানালো। তন্মধ্যে একজন রাগীবের সাথে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
” স্যার, মিস্টার এঞ্জো অনেকক্ষণ যাবত চিৎকার করে চলছে।”

রাগীব জরুরি কণ্ঠে বললো,
” স্কচটেপ লাগিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে পারোনি?”

লোকটি জবাব দিলো না৷ রাগীবের হাতে একটি লাঠি দিয়ে বললো,
” স্যার, আপনি চেয়েছিলেন এটা।”

রাগীব বিনা বাক্যে পরনের কোটটি খুলে লোকটির এক হাতে দিলো এবং তার অপর হাত হতে লাঠিটা নিলো। মাঝারি আকৃতির লাঠিটা ধরে হাতের পেশিগুলো টান টান করলো। অতঃপর এঞ্জোর সম্মুখে দাঁড়িয়ে তার মাথার কালো কাপড় হটানো ব্যতিত রাগীব তাকে বে’ধ’ড়’ক মা’রতে লাগলো। অকস্মাৎ এ এলোপাতাড়ি আ’ক্র’মণে এঞ্জো বিহ্বল হয়ে পড়লো। হাত পা বাঁধা অবস্থায় নিজেকে লাঠির আ’ঘা’ত হতে বাঁচাতে সে অ’ন্ধে’র ন্যায় এদিক ওদিক গড়াতে লাগলো। করুণ সুরে চিৎকার করতে করতে অনুনয় করলো,
” তুমি কে? আমাকে মা’রছো কেনো? আমার দোষ কি?”

রাগীব এঞ্জোর প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। বরং বিনা বাক্যে পুনরায় এঞ্জোকে মা’রতে লাগলো। লা’ঠির বাড়িতে এঞ্জোর সমস্ত শরীর ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে এলো। ব্যাথায় রীতিমতো কোঁকানো আরম্ভ করলো সে। কিন্তু এতে রাগীবের বিন্দুমাত্র মায়াদয়াও হলো না এঞ্জোর প্রতি। ফলে তার লা’ঠি পে’টা’নো ক্ষণিক সময়ের জন্যও বন্ধ হলো না। এঞ্জো সাবিহার সাথে ছোট বড় যে ধরনের ঔ’দ্ধ’ত্যমূলক আচরণ করেছে তার প্রতিটির প্র’তি’শো’ধ সে ইচ্ছেমতো নিলো। বে’ধ’ড়ক এ লা’ঠি’পে’টার ফলে রাগীবের ক্রোধ বাড়লো বৈকি কমলো না।
আগন্তুকের নিকট চরম পর্যায়ের মা’র খাওয়ার পর এক পর্যায়ে এঞ্জো ভয়ার্ত কণ্ঠে হড়বড় করে বলে ফেললো,
” তুমি মুক্তিপণ হিসেবে আমার বাবার কাছে যত টাকা চাইবে আমার বাবা তোমাকে তত টাকাই দিবে। একটাই রিকুয়েষ্ট, আমাকে আর মে’রো না প্লিজ।”

এঞ্জোর হেন কথা শুনে রাগীবের বে’ধ’ড়ক পর্যায়ের মা’র বন্ধ হলো। ভীষণ হাঁপিয়ে উঠেছে সে। নাক ও মুখ দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। নিঃশব্দে ক্ষণিকের জন্য হাসলো। অতঃপর হাতের লা’ঠি’টা পাশে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। এ শব্দে কালো কাপড়ের আড়ালে থাকা এঞ্জো মনে মনে বেশ খুশি হলো। ভাবলো, হয়তো ওপাশের লোকটিকে টাকার লো’ভে পেয়েছে। এই ভেবে সে নিজ হতে উঠে বসতে নিলো। কিন্তু এর পূর্বেই রাগীব চাপা ক্রোধ নিয়ে এঞ্জোর শার্টের কলার ধরে তাকে উঠে বসালো। অতঃপর তার মাথা হতে কালো কাপড়টি সরিয়ে তার শার্টের কলার চেপে ধরলো। ক্রোধান্বিত কণ্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
” এতো টাকার গরম কাকে দেখাও এঞ্জো মহাজন? তুমি জানো আমি কে?”

তাকে মা’র’ধ’র করা ব্যক্তিটি যে রাগীব তা জানা মাত্রই এঞ্জো স্তম্ভিত হয়ে এলো। সে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি যে রাগীব এ কাজটা করবে। প্রথমদিনই সে রাগীবের কাঠিন্যে ভরপুর দৃষ্টিতে ক্ষীণ ভীত হয়েছিলো। তবে আজ রাগীবের ছোট্ট ধ’মক স্বরূপ হু’ম’কি সে গায়ে মাখেনি৷ সুন্দরভাবে এড়িয়ে গিয়েছে সে। কিন্তু তার জানা ছিলো না রাগীব তাকে লোক দিয়ে উঠিয়ে এনে এতো নি’র্ম’মভাবে লা’ঠি’পে’টা করবে। রাগীবকে দেখা মাত্র এঞ্জোর মুখখানা শুকিয়ে এলো। সে ক্ষীণ স্বরে বললো,
” তুমি কে?”

এঞ্জোর সরলসোজা প্রশ্নে রাগীব মুখ ফিরিয়ে হাসলো। এ মুহূর্তে এঞ্জোর প্রতি তার ক্রোধ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সে কিছুতেই নিজের মাঝে জন্মানো ক্রোধের অনল নেভাতে পারছে না৷ উপরন্তু এঞ্জোর এমন বানোয়াট ভোলাভালা চেহারায় এ প্রশ্ন যেনো সে কিছুতেই সহ্য করতে পারলো না। ফলস্বরূপ নিজের সহ্যের সীমা অতিক্রম করে সে এঞ্জোর মুখে সর্বশক্তি দিয়ে একটা ঘু’ষি মা’রলো। তার হাতের আঘাতে এঞ্জো পড়ে যেতেই নিলে সে পুনরায় তাকে ধরে ফেললো। অতঃপর পকেট হতে পি’স্ত’ল বের করে তা এঞ্জোর মাথায় ধরলো। ক্রোধান্বিত হয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
” মাথাটা এমনিই গরম হয়ে আছে এঞ্জো মহাজন৷ তোমার এমন বে’হু’দা প্রশ্নে মাথাটা আরোও গরম করছো কেনো?”

এঞ্জো নিরুত্তর। তার জবাব দেওয়ার মতো কিছু নেই। সে স্তম্ভিত রাগীবের এ রূপ দেখে। তার এহেন অবস্থা দেখে রাগীব শীতল হাসি হাসলো। অতঃপর বললো,
” ইতালির মা’ফি’য়া, গ্যাং’স্টার এসব মানুষের নাম শুনেছো এঞ্জো মহাজন?”

রাগীবের কথা কর্ণপাত হতেই এঞ্জোর মুখশ্রী পাংশুটে হয়ে এলো। সে নির্বাক ও থমথমে চাহনিতে রাগীবের কিয়ৎক্ষণ চেয়ে রইলো। অতঃপর ভয়ার্ত কণ্ঠে আমতাআমতা করে বললো,
” এ-এর মা-মানে তুমি……”

রাগীব বিস্তৃত হাসলো। বললো,
” ইয়েস এঞ্জো মহাজন।”

” আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি? আমাকে ধরে এনেছো কেনো?”

এঞ্জোর প্রশ্নে রাগীব শীতল হাসি হাসলো। হাতের পি’স্ত’লটা এঞ্জোর মুখের নিকট ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,
” সাবিহাকে চিনো?”

রাগীবের একটি এই প্রশ্নই এঞ্জোকে সবটা বুঝিয়ে দিলো। সে তৎক্ষনাৎ হড়বড় করে বললো,
” বুঝেছি বুঝেছি। তোমার কথা বুঝেছি।”

এঞ্জোর এরূপ কথায় রাগীব প্রসন্নমূলক হাসি হাসলো। বললো,
” আ’ম ইম্প্রেসড এঞ্জো মহাজন। তুমি এতো সহজে মেনে নিবে জানলে তোমার পিছনে এতো সময় নষ্ট করতাম না। গুড বয়।”

এঞ্জো প্রত্যুত্তর করার মতো সাহস পেলো না। রাগীব পুনরায় গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
” তোমার মতো এসব ছ্যা’চ’ড়া ছেলেদের মোটেও পছন্দ না আমার। একটা মেয়েকে একবার বলবে। সে মানলে মানবে না হলে নেই। কিন্তু এভাবে পিছে পড়ে থাকো কেনো? তুমি কি জানো? এর আগে সোফিয়ার বার্থডে পার্টি থেকে ফেরার পথে দুজন ছেলে সাবিহাকে ডিস্টার্ব করেছিলো। তার মধ্যে একজনকে এ দুনিয়ার হিসাব কিতাব থেকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছি। বুঝতো পারছো তো কি করেছিলাম আমি?”

এঞ্জো তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো। রাগীব পুনরায় বললো,
” গুড বয়। এরপর থেকে যেনো সাবিহার আশেপাশেও তোমাকে আর না দেখি। আর বাকি রইলো পুরো ভার্সিটিতে আমার সম্পর্কে জানানো, সে চিন্তা মাথায় আনলে ঝেড়ে ফেলে দাও এঞ্জো মহাজন। কারণ এমন কিছু করলে তুমি আর এ পৃথিবীর রূপরঙ দেখতে পারবে না। গট ইট?”
এঞ্জো ভয়ার্ত চাহনিতে তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়ায়।

.

সাবিহা বিহ্বলিত চাহনিতে সালমা বেগমের দিকে চেয়ে আছে। এ অবিশ্বাস্যকর তিতকুটে সত্য জানার পর সে যেনো কাঁদতে ভুলে গেলো। সে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না তার মায়ের মুখ নিঃসৃত প্রতিটি কথা। সে থম মেরে সালমা বেগমের দিকে অনেকক্ষণ যাবত চেয়ে রইলো। অতঃপর লঘু কম্পিত স্বরে বললো,
” তুমি মিথ্যে বলছো, ঠিক না আম্মু? আব্বুর সাথে নিশ্চয়ই ঝগড়া হয়েছে?”

সালমা বেগম মেয়ের এ অবস্থা বুঝতে পারলেন। সাবিহার প্রতি ভীষণ মায়া হলো তার। ছলছল চাহনিতে তিনি সাবিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
” একটা কথাও মিথ্যে না পুতুল। সবগুলো কথাই সত্য। রাগীব আমাকে এসব বলেছে। আর তোর বাবাকে আমি ভালো করে চিনি। সে এসব…..”

সালমা বেগমকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে সাবিহা চট করে জিজ্ঞেস করলো,
” রাগীব বা রাগীবের বোনের সাথে এসব কিভাবে সম্পর্কিত আম্মু? রাগীবের বোন এলো কোথা থেকে? ও তো বাংলাদেশে থাকতো। তাহলে আব্বু কি বাংলাদেশে গিয়ে……”

” রাগীব কখনোই বাংলাদেশে থাকেনি সাবিহা। রাগীব সিসিলিতে থাকে। আর ও কোনো সাধারণ মানুষ না। গ্যাং’স্টার ফ্যামিলিতে বড় হওয়া আরেক গ্যাং’স্টার সে।”
অতঃপর সালমা বেগম সাবিহাকে শুরু হতে শেষ অব্দি সব বললেন। রাগীবের সম্পূর্ণ পরিচয়, আফসার সাহবের ঘৃ’ণিত কাজ সব বললেন তিনি। সাবিহা প্রতিটি কথা কাঠের পুতুলের ন্যায় থম মেরে বসে শুনলো। প্রচণ্ড ধাক্কায় সে যেনো অভিব্যক্তিহীন এক জড় বস্তুতে পরিণত হলো। আপন বাবা সম্পর্কে এ জ’ঘ’ন্য সত্য জানার পর কিরূপ প্রতিক্রিয়া করা উচিত বা করতে হবে তা বেমালুম ভুলে বসলো সে। শুধু বারংবার তার মানসপটে নিজের বাবার হাসিমাখা মুখখানার ছবি ভেসে উঠলো। তাকে আদর স্নেহ করার মুহূর্তের ছবি ভেসে উঠলো। রাগীবের ভালোবাসাময় কথাগুলো কানে ঝংকার তুললো। ঝংকার তুললো মায়ের বলা প্রতিটি বাক্য যা কানে কানে তীব্র যন্ত্রণার উদ্রেক ঘটালো। সাবিহা আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। সালমা বেগমের সামনে হতে উঠে গিয়ে ধীর পায়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। সালমা বেগমও আর আটকালেন না সাবিহাকে।

.

রুমে এসে জানালার ধারে বসে রইলো সাবিহা। তার দু চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরতে লাগলো। এ অশ্রুর বন্যা যেনো থামবার নয়। একসাথে এতো সত্য সে মেনে নিতে পারছে না। তার মন মস্তিষ্ক অগোছালো হয়ে আসছে। অনুভূতি সকল ভোঁতা হয়ে আসছে। কেনো সব ভালোবাসায় মোড়ানো মানুষগুলো তার বিশ্বাসটা এভাবে ভাঙলো? কেনো তাকে এ কু’ৎ’সিত সত্যগুলো এভাবে জানিয়ে মাঝপথে ছেড়ে দিলো? সে যে এখন একদম একা হয়ে পড়েছে। একদম একা। ভালোবাসার মানুষগুলো তাকে জীবনের সবচেয়ে বড় ধোঁকা দিলো, এটা সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। হাজারবার এ সত্য বললেও যেনো সে বিশ্বাস করতে পারবে না। কি করবে সে? এসব ভাবতে ভাবতেই চাপা চিৎকারের সহিত কান্না করলো সাবিহা। মাত্রাতিরিক্ত কান্নায় তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। নাক টেনে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। কিন্তু তার কান্নার বেগ বাড়ছে বৈকি কমছে না। এতো কান্নার পরও তার মনে হলো, তার গলার কাছে কান্নার দলা আটকে আছে, বুকের উপর ভারী একটা পাথর পড়ে আছে। আশ্চর্য! এতো কান্নার পরও এ অসহ্যকর যন্ত্রণা লাঘব হচ্ছে না কেনো, ভাবতে পারছে না সাবিহা।

.

আফসার সাহেব প্রচণ্ড ক্রোধের অনলে জ্বলতে লাগলেন। স্বীয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পি’স্ত’ল নিয়ে তেড়েমেরে নিজের রুমে ঢুকে পড়লেন তিনি। টগবগে উত্তপ্ত র’ক্ত তার মাথায় চড়ে বসেছে। এ মুহূর্তে তার একটাই কাজ। নিজের স্ত্রীকে প্রাণে মে’রে ফেলা৷
আফসার সাহেব রুমে ঢুকেই রকিং চেয়ারে বসে থাকা সালমা বেগমের মাথায় পি’স্ত’ল তাক করলেন। অকস্মাৎ এমন কিছু হওয়ায় ভীষণ ঘাবড়ে গেলেন সালমা বেগম। ফলস্বরূপ কোনোরকমে চেয়ার ছেড়ে উঠে আফসার সাহেবের সম্মুখ পানে দাঁড়ালেন। তাকে দেখে তৎক্ষনাৎ আফসার সাহেব ক্রোধিত স্বরে বলে উঠলেন,
” তোর তো সাহস কম না! তুই আমার লক্ষ টাকার খনি ওভাবে মাটিতে ছিটিয়ে রেখেছিস! তোর মতো ছোটলোকের কি জানা আছে ঐ ড্রা’গের প্রাইজ কত?”

সালমা বেগম কিছু বললেন না। নির্বাক চিত্তে দাঁড়িয়ে রইলেন। প্রথম পর্যায়ে খানিক ভীত হলেও আফসার সাহেবের এ দিশেহারা অবস্থা দেখে তিনি মনে মনে ভীষণ খুশি হলেন। এদিকে তার এ নিরুত্তর ভঙ্গি দেখে আফসার সাহেব পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ রে’গে গেলেন। অতি রাগে তার বাম হাত অল্প বিস্তর কাঁপতে শুরু করলো। তবুও তিনি পূর্ণোদ্যমে পি’স্ত’ল তাকে করে রইলেন।
সালমা বেগমের মাথায় পি’স্ত’লের অগ্রভাগ ঠুকতে ঠুকতে পূর্বের চেয়েও জোরালো কণ্ঠে বললেন,
” আমার এ কষ্টের টাকা কে শোধ দিবে? তুই? তুই না পারলে আমি তোর র’ক্ত দিয়ে এসব টাকা শোধ করবো। আচ্ছা, আমার এ ব্যবসার সম্পর্কে তুই জানলি কি করে?”

সালমা বেগম অতি শীতল হাসি হাসলেন। বললেন,
” রাগীব বলেছে আমাকে। আপনার সব কাজের কথা বলেছে। আপনি কয়টা রে’প করেছেন, কয়টা মা’র্ডা’র করেছেন, সব বলেছে ও আমাকে। আমিও কম না। আমি আজই সাবিহাকে সব বলে দিয়েছি আপনার সম্পর্কে। একদম সব। ”

সালমা বেগমের কথাগুলো কর্ণপাত হতেই আফসার সাহেব থমকে গেলেন। তার হাতের বাঁধন ঢিলা হয়ে এলো। ফলে পি’স্ত’ল নামিয়ে ফেললেন তিনি। ফ্যালফ্যাল চাহনিতে কিয়ৎক্ষণ সালমা বেগমের দিকে চেয়ে রইলেন তিনি। এতো বছর ধরে লুকিয়ে রাখা সত্য এভাবে বেরিয়ে আসবে তা কল্পনাও করেননি তিনি৷ অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে সবটা। আফসার সাহেব কিয়ৎক্ষণ দিশেহারা মন মস্তিষ্ক নিয়ে সালমা বেগমের কথা ভাবলেন। অকস্মাৎ তার মাথায় পূর্বের ন্যায় ক্রোধ চেপে বসলো। এবার তার তেজ দ্বিগুণ হলো। হিং’স্র’তায় উন্মাদ হয়ে উঠলেন তিনি। এবার সরাসরি ট্রিগার পয়েন্টে হাত রেখে পি’স্ত’ল প্রস্তুত করে সালমা বেগমের মাথায় ধরলেন তিনি। দাঁত কিড়মিড় করে বললেন,
” সবার আগে তোর ঘি’লু উড়াবো। এরপর ঐ রাগীব। আমি আন্দাজ করেছিলাম এ বা’স্টা’র্ডটা ছদ্মবেশে এসেছে,কিছু উদ্দেশ্যে এসেছে। কিন্তু ওর উদ্দেশ্য যে এটা তা আন্দাজ করতে পারিনি। আগে তোকে মা’র’বো তারপর ঐ হা*** মারবো। আর সাবিহাকে পরে দেখে নিবো আমি। ও…..”

আফসার সাহেব নিজের কথা শেষ করতে পারলেন না। এর পূর্বেই ঘটে গেলো এ অকল্পনীয় ঘটনা। মুহূর্তেই সাবিহা এসে তার বাবার হাত হতে পি’স্ত’ল কেড়ে নিয়ে তার বাবার দিকে তাক করলো। সাবিহার এ কার্যকলাপে আফসার সাহেব হতভম্ব হলেন। বিস্মিত ও বিস্ফোরিত চাহনিতে চেয়ে রইলেন নিজের অংশ, নিজের মেয়ের দিকে।
এদিকে সাবিহার চাহনিতে যে তীব্র কাঠিন্য ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা মোটেও উপেক্ষা করতে পারলেন না আফসার সাহেব। মেয়ের হাতে এভাবে বন্দি হয়ে তিনি যেনো আকাশ হতে পড়লেন।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here