প্রমত্ত_হৃদয়❤️,২৯

0
914

#প্রমত্ত_হৃদয়❤️,২৯
#লেখনীতে:সারা মেহেক

পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো সাবিহা। প্রথমেই সব ঝাপসা দেখতে শুরু করলো সে। তবে ক্ষণিকের মাঝেই তা ঠিক হয়ে গেলো। দৃষ্টি স্পষ্ট হলো তার। ডান পাশে ঘুরতেই মায়ের শুকনো মুখটা ভেসে উঠলো তার চোখে। সালমা বেগমকে দেখা মাত্র সে দূর্বল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” কান্না করেছিলে আম্মু?”

সালমা বেগম সাবিহার মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে দিলেন৷ শান্ত, থমথমে দৃষ্টিজোড়ায় মুহূর্তেই নোনাজল উপচে পড়লো। দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তেই তিনি বললেন,
” একটা মানুষের পক্ষে আর কত সহ্য করা সম্ভব পুতুল? ক’টা দিন ধরে শান্তিতে থাকতে পারছি না আমি। আবার আজ তুই….”

সাবিহা কিছু বললো না৷ নির্বাক চাহনিতে মায়ের দিকে চেয়ে রইলো। সালমা বেগম পুনরায় বললেন,
” ঐ মানুষটার জন্য কেঁদে কি হবে বল? এসব মানুষের জন্য কেঁদে বুক ভাসিয়ে দেওয়াটা বোকামি ছাড়া কিছুই না। ”

সাবিহা লক্ষ্য করলো তার মায়ের চাহনি। এ চাহনি পিছনের দিনগুলোর মতো নরম, অসহায় নেই। কেমন এক দৃঢ়তা এসে জায়গা করে নিয়েছে ঐ চাহনিতে। স্বামী নামক মানুষটির প্রতি একরাশ ঘৃ’ণার দেখা মিলছে ঐ চাহনিতে। সাবিহা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলো, তার মা, তার বাবার সম্পর্কে কথা বলার সময় কাঁদেনি। একটুও কাঁদেনি। মায়ের এ মজবুত রূপ দেখে সাবিহা হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” আম্মু? তুমি এতো স্ট্রং হয়ে থাকছো কিভাবে? তোমার কি একটুও খারাপ লাগছে না?”

সালমা বেগম তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন। বললেন,
” এতো বছর দূর্বল হয়ে দেখেছি তো। শেষ বয়সে এসে না হয় একটু মজবুত হলাম। আর রইলো খারাপ লাগার কথা, ঐ লোকটার জন্য একটুও খারাপ লাগছে না। বরং প্রচণ্ড ঘৃ’ণায় গা গুলিয়ে আসছে। তোর বুঝি খারাপ লাগছে?”

মায়ের নিকট হতে এ জবাব শোনার পর সাবিহা আর প্রশ্নেের উত্তর দিলো না৷ কারণ এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই এখন। আর এ প্রশ্নের জবাবই বা দিবে কি করে? তার যে বড্ড খারাপ লাগছে এটা কিভাবে বলবে তার মা কে? সে পারছে না নিজের মনে বাবার প্রতি সেই তীব্র ঘৃ’ণার জন্ম দিতে। কারণ হাজার হলেও লোকটা তার বাবা। জন্ম হতে এখন পর্যন্ত বাবার সাথে রয়েছে তার অসংখ্য স্মৃতি। যে স্মৃতিগুলো বুদ্ধি হওয়ার পর হতে সে সযত্নে নিজের মাঝে আগলে রেখেছে৷ বাবার হাত ধরে ছোট বেলায় ছোট ছোট পায়ে হাঁটা। বাবার হাত ধরে জীবনে প্রথম স্কুলে যাওয়া। বাবার উৎসাহেই ক্যারাটে শিখা, শ্যুটিং শিখা, বাবার সাথে দুষ্টুমিষ্টি মুহূর্তের কথা, এসব কি করে ভুলবে সাবিহা? এতো বছরের স্মৃতি কি এতোই সহজে ভুলে থাকা যায়? এটা কাকে বুঝাবে সাবিহা? সে যে বাবার গোনাহের সামনে এ স্মৃতির কথা বুঝাতে অক্ষম। বাবার প্রতি আকাশসময় ভালোবাসা বুঝাতে অক্ষম।

সাবিহা শুয়ে থাকা অবস্থাতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। খানিক বাদে লক্ষ্য করলো তার পায়ের কাছে সাবিত বসে আছে। সাবিতের হাস্যজ্জ্বল সুন্দর চেহারাখানা কেমন যেনো শুকিয়ে গিয়েছে মনে হয়। সে কেমন উদাস হয়ে বসে আছে। তার এ উদাসীনতার কারণ সাবিহা জিজ্ঞেস করলো না। কারণ সে তার ছোট ভাইয়ের এ উদাসীনতার কারণ অনুমান করতে পারছে। এদিকে সাবিত জানে না তার বাবা কোথায়, কি হয়েছে তার বাবার সাথে, সবাই তার বাবাকে দোষারোপ করছে কেনো। তবে সে এটা জানে, তার বাবা দোষ করেছে। বড়সড় রকমের দোষ করেছে। কিন্তু কি দোষ তা তার জানা নেই। চলমান এ পরিস্থিতি দেখেই সে এ ব্যাপারে কাউকে জিজ্ঞেস করেনি।

রুমে অবস্থানরত তিনজন সদস্যই নিশ্চুপে বসে আছে। তাদের এ নিশ্চুপতার দেয়াল ভেঙে রুমে প্রবেশ করলো রাগীব। রাগীবকে দেখা মাত্রই সাবিহা মুখ ফিরিয়ে নিলো। সালমা বেগমকে বললো,
” আম্মু, রাগীবকে এখান থেকে চলে যেতে বলো। আমি এ মুহূর্তে ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না। ”

সালমা বেগম সাবিহার এ অভিমানী রূপ দেখে নরম সুরে বললেন,
” রাগীব কি দোষ করেছে পুতুল? এ ঘটনায় ওর তো কোনো দোষ নেই। ”

সাবিহা নাছোরবান্দা। সে পূর্বের ন্যায়ই বললো,
” আমি ওর দোষ গুণ শুনতে চাই না আম্মু। ওকে দেখলেই আমার মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে৷ তুমি ওকে চলে যেতে বলো।”

সালমা বেগম এবার কঠোর হলেন। কণ্ঠে কাঠিন্য ভাব এনে বললেন,
” অবুঝের মতো কাজ করছিস কেনো তুই? রাগীবকে পক্ষের সাফাই তো শুনবি তুই। কি বলতে চাইছে ও সেটা আগে শোন। ”

সাবিহা চট করে সালমা বেগমের দিকে ঘুরে তাকালো। বিদ্রোহী কণ্ঠে বললো,
” কি সাফাই শুনবো? এই যে, ও আমাকে ভালোবাসে। সত্যিকারের ভালোবাসা যাকে বলে? ও আমাকে ভালোবাসে বলেই বিয়ে করেছে, রিভেঞ্জের জন্য না? ঠিক তো? এগুলোই শোনাবে ও? কিন্তু আমি ওর কথায় বিশ্বাস করছি না। হঠাৎ একদিন হুট করে আমাদের বাড়িতে এসে সবার সাথে ভাব জমিয়ে আমাকে বিয়ে করেছে৷ পরে আব্বুর সত্য সবার সামনে এনেছে। এগুলো কি প্ল্যানড কাজকর্ম না? এতে কোনো সন্দেহ নেই যে রাগীব রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্যই আমাকে বিয়ে করেছে। ”
এই বলে সাবিহা সিক্ত অভিমানী চাহনিতে রাগীবের দিকে চাইলো। রাগীব এ পুরো সময়ে চুপ করে ছিলো। সাবিহার অভিমানী কণ্ঠের অভিযোগগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনছিলো সে। অনুভব করছিলো বুকের মাঝে তীব্র যন্ত্রণা।

সালমা বেগম সাবিহার যুক্তির বিপক্ষে গিয়ে প্রতিবাদ করতে চাইলেন। কিন্তু রাগীব চোখের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিলো। সাবিহার পানে দৃষ্টিপাত করে বললো,
” আচ্ছা, চলে যাচ্ছি আমি৷ তুমি রেস্ট নাও। বেশি প্রেশার নিও না। ”
এই বলে রাগীব সে স্থান ত্যাগ করলো।

.

গত দুদিন রাগীব সাবিহাদের বাড়ির কাছেও ঘেঁষেনি। একটিবারের জন্যও সে তার স্নিগ্ধময়ীর সাথে দেখা করেনি৷ তবে আড়ালে ঠিকই তার খোঁজ নিয়েছে। সাবিহা এখন পূর্বের তুলনায় সামান্য সুস্থ হয়েছে। তবে সারাদিন সে চুপচাপ ঘরের এক কোনায় বসে থাকে। কান্না করে না, তবে উদাস দৃষ্টিজোড়া বেশিরভাগ সময়ই আকাশের পানে নিবদ্ধ থাকে। সে ভাবে নিজের বাবার কথা, রাগীবের কথা৷ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দুটো মানুষের কথা ভাবে সে। তাদের দেওয়া ধোঁকার কথা ভাবে সে। অতঃপর কোনো এক কল্পনার জগতে হারিয়ে যায়। যে জগতে তারা একটি সুখী পরিবার হয়ে মিশে আছে। যে জগতে তার কাছের মানুষগুলো হাসিখুশি মিলেমিশে আছে। কিন্তু এ জগত যে কল্পনার। আর কল্পনা কখনো বাস্তব হয় না। কখনো না।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাবিহা। ব্যালকনির দরজার সামনে বসে আছে। দৃষ্টি দিলো রাতের তারকাখচিত আকাশের পানে। অপলক চেয়ে থাকে নিঃসঙ্গ চাঁদের পানে। আজ ঐ চাঁদের মতো সেও একা৷

অকস্মাৎ দরজা খোলার শব্দে পিছনে ফিরে চাইলো সাবিহা। ফিকে হলদে আলোয় স্পষ্টরূপে রাগীবকে দেখতে পেলো সে। নিমিষের জন্য সেদিকে চেয়ে রইলো সে। অতঃপর শান্ত দৃষ্টিতে ঘাড় ঘুরিয়ে ফেললো। সে জানে রাগীব তার কল্পনা। হ্যালুশিনেশন। এ কদিন এটাই হয়ে আসছে। সময়ে অসময়ে রাগীব তার কল্পনা হয়ে তার মাঝে ধরা দিচ্ছে। তার দিকে অপলক চেয়ে আছে। সাবিহা জানে, এসবটাই তার কল্পনা। এজন্যই কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখে সে। অতঃপর চোখ খুলে রাগীবের অনুপস্থিতি পায়। এবারও রাগীবকে একটি কল্পনা ভাবলো সে। চোখ বন্ধ করলো সে, যেনো কল্পনার রাগীব হাওয়ায় মিলে যায়। কিন্তু এটি হলো না। রাগীব যে বাস্তবেই এসেছে।

রাগীব সাবিহার পাশে গিয়ে বসলো। নিজের পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে আঁখিজোড়া মেলে চাইলো সাবিহা। রাগীবকে পাশে দেখে কিয়ৎ চমকে উঠলো সে। আরে এ যে সত্যিই রাগীব এসেছে!
সাবিহা কিয়ৎক্ষণ অপলক রাগীবের দিকে চেয়ে রইলো। ইশ এ মুখখানা দুদিন দেখিনি সে। এ নিয়ে কি কষ্ট যে তার অন্তঃস্থলে জমা হয়েছে তা কল্পনাতীত। কিন্তু এ মানুষটার জন্য কষ্ট কি কারণে? এ মানুষটা যে সেদিনের পর থেকে একবারও তাকে দেখতে আসেনি।
সাবিহা অকস্মাৎ উঠে দাঁড়ালো। তার পিছু পিছু উঠে দাঁড়ালো রাগীবও। সাবিহা হাঁটতে হাঁটতে শান্ত কণ্ঠে বললো,
” এখানে এসেছো কেনো?”

রাগীব সোজাসাপ্টা জবাব দিলো,
” তোমাকে দেখতে এসেছি। আমার প্রতি জমিয়ে রাখা অভিমান ভাঙতে এসেছি। ”
এই বলে সে চলন্ত সাবিহার ডান হাত ধরে পিছন থেকে হ্যাচকা টানে তাকে সোফায় বসালো। নিজে বসলো মেঝেতে। সাবিহার হাঁটুতে হাত রেখে দৃষ্টি রাখলো সাবিহার দৃষ্টি বরাবর। রাগীবের এ কাজে সাবিহা কিয়ৎ বিরক্ত হলো। ক্রোধান্বিতও হলে বটে। তেরছা কণ্ঠে বললো,
” দুদিন পর আমাকে মনে পড়লো? কোথায় ছিলে এ দুদিন? একবারো কি আমার কথা মনে হয়নি? তোমার এ ব্যবহার কি প্রমাণ করে না তুমি আমাকে বিয়ে করেছো শুধুমাত্র রামিশার মৃ’ত্যুর শোধ তুলতে?”

সাবিহার এরূপ অভিমানী কণ্ঠে রাগীব ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললো। বললো,
” আমাকে বিশ্বাস করছো না কেনে সাবিহা? আমি শোধ তোলার জন্য মোটেও বিয়ে করিনি তোমাকে। তোমায় ভালোবাসি বলেই বিয়ে করেছি। ”

সাবিহা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। বললো,
” তোমার নকল পরিচয়ের মতো এ ভালোবাসাও নকল রাগীব। ”
এই বলে সাবিহা উঠে গেলো। এদিকে সাবিহার এ কাজে ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙলো রাগীবের। সে নিজের শান্ত মেজাজ হারিয়ে হবে হিং’স্র মেজাজ আপন করে নিলো। চোখের পলকে সাবিহার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিলো সে। পিছন হতে নিজের বুকে মিশিয়ে প্যান্টের পকেট হতে ছু’রি বের করে সাবিহার গলার সামনে ধরলো। অতঃপর সাবিহার কাঁধে থুতনি রেখে দাঁতে দাঁত পিষে ফিসফিস করে বললো,
” তুমি আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছো সাবিহা। তোমার অবুঝ আচরনের কারণেই এ কাজ করতে বাধ্য হলাম আমি। ”

এদিকে নিমিষের মাঝে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় হতভম্ব হয়ে রইলো সাবিহা। গলার সামনে ছু’রি দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো তার। নিঃশ্বাস আটকে এলো তার৷ রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতিতে সে রাগীবের অগোচরে একটা শুকনো ঢোক গিললো।
সাবিহা রাগীবের নিকট হতে এ কাজ মোটেও আশা করেনি। সে এখনও বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে আছে। রাগীব তার গলার সামনে ছু’রি রেখেই বললো,
” আমার কথা শোনানোর আর কোনো উপায় রাখোনি তুমি। আজ আমি আমার পুরো কথা শেষ করবো৷ তারপর তুমি এ পরিস্থিতি থেকে ছাড়া পাবে। ”

সাবিহা প্রত্যুত্তর করলো না। রাগীব সাবিহার কাঁধে থুতনি রেখেই বলা আরম্ভ করলো,
” তুমি মানো আর না-ই মানো, আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই বিয়ে করেছি। তোমার বাবার থেকে রিভেঞ্জ নিতে হলে আমি অন্য ওয়েতেও নিতে পারতাম। তার জন্য তোমাকে বিয়ে করার কোনো দরকার ছিলো না। আমি চাইলেই তোমার বাবাকে চার মাসে আগে মে’রে ফেলতাম। কিন্তু আমি এমনটা করিনি। কারণ কি জানো? আমি চাইছিলাম তোমার বাবার এ সত্য তোমরা জানো। তোমাদের মনে তোমার বাবাকে নিয়ে ঘৃ’ণা জন্মাক এটা চাইছিলাম আমি।
আর তুমি আমার অল্প দিনের ভালোবাসা নও। তোমার বাবাকে চিনার আগে আমি তোমাকে চিনেছিলাম। গত বছরের চেরি ব্লোসমে তুমি যখন তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে পার্কে গিয়েছিলে তখনই তোমাকে প্রথম দেখা, প্রথম দেখাতেই তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছিলাম। ধীরে ধীরে ভালোওবাসতে শুরু করি তোমাকে।
সেদিন একটা তোমার ছবি তুলে রাখি যা সবসময় আমার বুকপকেটে থাকে। আমার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছে থাকে। চেরি ব্লোসমের সিজনের পর আরো একবার ভেনিসে এসেছিলাম আমি৷ তখন একটা রেস্টুরেন্টে তোমাকে দেখি। সেদিন থেকে আমার নতুন জাগ্রত প্রেম ধীরে ধীরে পাখা মেলতে শুরু করি। তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলি। তোমার ফ্যামিলি সম্পর্কে তখনও খোঁজ নেইনি আমি৷ তবে ভেবেছিলাম খুব শীঘ্রই তোমার ফ্যামিলি সম্পর্কে খোঁজ নিবো, বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। কিন্তু এর আগেই ঘটে গেলো সেই অঘটন।”
এই বলে সে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে পুনরায় বলতে আরম্ভ করলো,
” রামিশার সাথে এসব যে করেছিলো তার সম্পর্কে খোঁজ নিতেই বেরিয়ে আসে যে তুমি রামিশার খু’নির মেয়ে। এ শোনার পর আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। তখন মনে হয়েছিলো তোমাকে ছেড়ে দেই। তোমার প্রতি অনুভূতিগুলো ভুলে যাই। কিন্তু শত চেষ্টাতেও আমি পারিনি৷ এজন্যই সিদ্ধান্ত নেই, তোমাদের বাড়িতে এসে তোমাকে বিয়ে করে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করবো। এরপর সব সত্য বলবো। ”
এই বলেই রাগীব সাবিহাকে ছেড়ে দিলো। প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে সাবিহার সম্মুখে দাঁড়ালো। বললো,
” আমি আমার পক্ষের সব সত্য বলে দিয়েছি৷ এরপর যদি তুমি আমাকে বিশ্বাস না করো তাহলে বুঝে নিবো আমার ভালোবাসাতেই নিশ্চিত খুঁত ছিলো। এজন্যই তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না। তুমি নিজেকে সময় দাও সাবিহা। চিন্তা করো আমার কথাগুলো। এরপর যা সিদ্ধান্ত নিবেই তাই হবে। ”
বলেই রাগীব বেরিয়ে যায়। আর সাবিহা স্তব্ধ দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকে। ভাবতে থাকে কিছুক্ষণ পূর্বের শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে কথা। ভাবতে থাকে রাগীবের বলা প্রতিটা কথা।

.

” আপনি কি শিওর?”

“……”

” আমি আবারো জিজ্ঞেস করছি৷ আপনি ভেবেচিন্তে ডিসিশন নিয়েছেন তো?” মুখ দিয়ে সিগারেটের সাদা ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ফোনের ওপর পাশের ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলো রাগীব।

“…….”

ওপর পাশের ব্যক্তির জবাব শুনে রাগীব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বললো,
” ওকে। আপনি যখন এ রিস্কি আর ডেয়ারিং কাজটা করতেই চাইছেন তখন আর কিছু বলবো না আমি। তবে এতটুকু জানিয়ে রাখি, এটা কোনো ছেলে খেলা নয়। অন্য পর্যায়ের সাহস থাকতে হবে এতে। ”

“…….”

” ওকে। রাখছি তাহলে।” এই বলে রাগীব কল কেটে দিলো। হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে সে। অনিক শুয়ে আছে একই রুমের বিছানায়৷ হঠাৎ অনিকের ফোনে কল এলো। সে কল রিসিভ করে কয়েক সেকেন্ড কথা বলেই কেটে দিলো। কল কেটে এক প্রকার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলে রাগীবের দিকে। রাগীবের সম্মুখে দাঁড়িয়ে দিশেহারা হয়ে বললো,
” পালিয়ে গিয়েছে। আমাদের হাতের নাগাল থেকে ব্যাটা পালিয়ে গিয়েছে।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here