প্রমত্ত_হৃদয়❤️,৯(দ্বিতীয়াংশ)

0
1130

#প্রমত্ত_হৃদয়❤️,৯(দ্বিতীয়াংশ)
#লেখনীতে:সারা মেহেক

লোকটি মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই সাবিহা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়ালো। রাগীবের বিস্মিত চাহনি অনুসরণ করে সে জিজ্ঞেস করলো,
” এভাবে সারপ্রাইজড হলেন কেনো?”

রাগীব তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিলো। সাবিহার দৃষ্টি পেরিয়ে লোকটির দিকে একবার নজর বুলিয়ে বললো,
” এভাবে না করলেও পারতেন। লোকটি শুধু শুধু মার খেলো। ”

রাগীবের এহেন কথা কর্ণপাত হওয়া মাত্রই সাবিহার নেত্রজোড়া যেনো বিস্ময়ে কপালে উঠে গেলো। সে বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
” শুধু শুধু মার খেলো! কি বলছেন আপনি! এ যে রীতিমতো আমাদের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে চাইছিলো, সেটা কি আপনার নজরে পড়েনি?”

রাগীব এ পর্যায়ে কিছুটা সংকুচিত হয়ে এলো। বললো,
” একটু ভয় দেখালেই লোকটা চলে যেতো। ”

সাবিহা রাগীবের কথা অনুসরণ করে লোকটির দিকে তেড়ে যেতে যেতে বললো,
” কখনোই যেতো না। একে আরো দু চারটা মারা দরকার। ”

নিজের দিকে সাবিহাকে আরো একবার তেড়ে আসতে দেখে ইতালিয় লোকটি ঘাড় ধরে কোনোমতে উঠে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড ভয়ে ছুরি রেখেই পালিয়ে যায়। তার কাছে এ মুহূর্তে সাবিহাকে য’মের চেয়ে কম মনে হচ্ছে না। সে আর পিছনে ফিরে তাকালো না। বরং যত দ্রুত সম্ভব পা ফেলে সে নিজ ঠিকানায় ফিরে যেতে পা বাড়ালো।

লোকটি চলে যেতেই রাগীব আত্মপক্ষ সমর্থনের স্বার্থে সাবিহাকে বললো,
” দেখলেন তো? লোকটা ভয়েই পালিয়ে গেলো। ”

সাবিহা প্রত্যুত্তর করলো না। দু হাতে পরনের জ্যাকেট, স্কার্ফ ঠিক করতে লাগলো। অতঃপর তার কাজ শেষ হতেই সে হতাশ কণ্ঠে রাগীবকে বললো,
” একজন ছেলে হয়ে আপনার কাছে মোটেও এমনটা আশা করিনি আমি। চাইলেই আপনি লোকটিকে মা’রতে পারতেন।”

রাগীব মৃদু হেসে জবাব দিলো,
” সব জায়গায় মা’র’পিট করা মানায় না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে হয় কিছু জায়গায়। ”

সাবিহা আর প্রত্যুত্তর করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলো না। ফলে সে বললো,
” আচ্ছা, বাদ দিন। যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। শুধু শুধু এ বিষয়ে কথা বললে আমাদের কথা কাটাকাটি হতে পারে। ”

” ইয়াহ, রাইট। ”

দুজন কিছু মুহূর্তের জন্য নিরবতা পালন করলো। অলিখিত নিরবতা। তাদের নিরবতার জালে ফেঁসে তাদের পদধ্বনির আওয়াজ স্পষ্টভাবে কর্ণগোচর হলো। নিস্তব্ধ নিরব পরিবেশে কংক্রিটের রাস্তায় জুতোর আওয়াজটা বেশ ভালোই লাগছে। অদ্ভুত রকমের উপভোগ্য। সাবিহা হাঁটতে হাঁটতে মনোযোগ সহকারেই তা শুনছে। ইশ, এ দারুণ শব্দটা সে এর পূর্বে লক্ষ্য করেনি কেনো!
এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে সাবিহা যে কখন বাড়িতে চলে এলো তা টেরই পেলো না৷ যখন সে টের পেলো যে সে বাড়িতে চলে এসেছে তখনই সে কোনোরূপ কথাবার্তা ছাড়াই রাগীবের হাত ধরে টেনে বাড়ির আঙিনার এক কোনায় নিয়ে এলো। সাবিহার অকস্মাৎ এ কর্মকাণ্ড রাগীব চূড়ান্ত পর্যায়ের বিস্মিত হলো। সে কণ্ঠে আকাশসম বিস্ময় প্রকাশ করে বললো,
” কি ব্যাপার সাবিহা? এভাবে হুট করে আমাকে টেনে নিয়ে এলেন কেনো?”

রাগীবের কণ্ঠস্বর সাবিহার নিকট খানিকটা জোরালো শোনালো। তার ভীত চেহারায় এ পর্যায়ে আরো অস্থিরতার দেখা মিললো। সে নিজের ঠোঁটের উপর আঙুল ঠেকিয়ে সতর্ক কণ্ঠে নিম্ন স্বরে রাগীবকে বললো,
” শশশ। ধীরে কথা বলুন। আমাদের দুজনকে রাতে এভাবে একসাথে দেখলে আমার আব্বু আমাকে সিন ক্রিয়েট করে ফেলবে। ”

সাবিহার সতর্ক বানী শুনে রাগীব হুশিয়ারী চাহনিতে চারপাশে এক নজর বুলিয়ে নিলো। অতঃপর সাবিহার ন্যায় নিম্ন স্বরে বললো,
” ডোন্ট ওয়ারি। আশেপাশে কেউ নেই। কিন্তু আপনি এভাবে লুকাচ্ছেন কেনো?”

” কারণ আছে লুকানোর। আসলে আমার এ ব্লাইন্ড ডেটের কথা বাসার কেউ জানে না। আমি কাউকে জানাতেও চাইছি না। কারণ আব্বু আর সামাদ ভাই এসব সহ্য করতে পারবে না। এখন আপনার কাছে আমার একটাই রিকুয়েষ্ট আমাদের ফ্যামিলির কাউকে এ নিয়ে কিছু বলবেন না।”

রাগীব বাধ্য ছেলের ন্যায় বললো,
” ওকে।”

” আপনি এবার চুপচাপ আপনার রুমে চলে যান। আমিও আমার রুমে চলে যাই। আমি সবাইকে বলে রেখেছি সোফিয়ার সাথে আজ রাতে মুভি দেখবো। এখন আবার গিয়ে বলতে হবে যে আমার ভালো লাগছিলো না বিধায় আমি চলে এসেছি। আপনাকে যদিও এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে না। তবুও সতর্ক থাকবেন। ”

” ওকে ডান৷ আর আপনি এ নিয়ে আর চিন্তা করবেন না। আমার পক্ষ থেকে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন সাবিহা। ”

রাগীবের কথায় সাবিহা মুচকি হাসি দিলো এবং মুহূর্তেই পূর্বের ন্যায় সতর্ক দৃষ্টি ফেলে একবার আশপাশে নজর বুলিয়ে নিলো। অতঃপর নিজেকে একদম স্বাভাবিক রূপে রূপান্তরিত করে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। রাগীব সাবিহার যাওয়ার পানে চেয়ে মৃদু হাসি সহিত বললো,
” ভালোই লাগে তোমার এ রূপটা৷ কখনো ভীতু, কখনো সাহসী৷ অদ্ভুত এক মিশ্র রূপ। ”

.

” সাবিহার বিয়ের জন্য ছেলে ঠিক করেছি আমি। ডেটও মোটামুটি ফাইনাল। আগামী দু সপ্তাহের মাঝেই বিয়ের ডেট পাকাপোক্ত করতে চাইছি আমি। তোমার কি মতামত?”
গম্ভীর কণ্ঠে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে বিরতি নিলেন আফসার সাহেব। এদিকে অকস্মাৎ স্বামীর নিকট হতে এমন সংবাদ শুনে কিয়ৎক্ষণের জন্য স্তম্ভিত চাহনিতে চেয়ে রইলেন সালমা বেগম। এ কি শুনছেন তিনি! তার মেয়ের বিয়ে! সবকিছু ঠিকঠাক, অথচ তিনি জানেন না! অবশ্য এ সংবাদটির বিষয়ে তার অবগত এবং অনবগত দুটোই একই কাতারে পড়ে। আফসার সাহেব যদি তার অনুমতি ব্যতিত বিয়েটা করিয়েও ফেলে তারপরও অবাক হবেন না সালমা বেগম। কারণ স্বামীর সামনে তিনি কিছুই না৷ তার কোনো ব্যক্তিত্ব নেই। নেই তার স্বামীর জীবনে তার কোনো গুরুত্ব। তিনি ছেলেমেয়ের জন্য স্বামীর অনুমতি ব্যতিত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সবটাই যেনো তথাকথিত বাঙালি সমাজের একজন আদর্শ স্ত্রী। কিন্তু আদৌ কি একে ‘আদর্শ’ নামক ভারী শব্দের তকমা দেওয়া যুক্তিযুক্ত?
সালমা বেগম অতি মোলায়েম স্বরে নিম্ন কণ্ঠে বললেন,
” ছেলে ভালো হলে সব ভালো। ”

আফসার সাহেব পূর্বোক্ত কণ্ঠে বললেন,
” ছেলেটাকে হয়তো তুমি চিনে থাকবে। এর আগে দেখেছো কি না। আমার বিজনেস পার্টিতে এসেছিলো। আমার এক বিজনেস পার্টনারের ছেলে। সে-ই আমাকে প্রস্তাবটা দেয়। আমি যতদূর দেখেছি, শুনেছি, ছেলেটা খুব ভালো। ইতালিতেই থাকে। এজন্যই প্রপোজাল ক্যান্সেল করতে পারিনি। ”

সালাম বেগম ব্যর্থ হাসার চেষ্টা করলেন। তার ভেতরটা এ মুহূর্তে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তার চেহারায় সে ভাব স্পষ্টরূপে ফুটেও উঠেছে। কিন্তু মা নামক ব্যক্তিটির এ যন্ত্রণা আফসার সাহেব উপলব্ধি করতে পারলেন না। হয়তো তিনি উপলব্ধি করতে চাননি। কারণ, নিজের গভীর অহং বোধ। তার বাচন, স্ত্রী নামক ব্যক্তিটিকে এতো গুরুত্ব দেওয়ার কি আছে? স্ত্রীর অবস্থান সবসময় স্বামীর নিচে। সুতরাং তাকে এতো গুরুত্ব দিয়ে মাথায় উঠানোর দরকার নেই। এসব ভেবেই আফসার সাহেব নিজের তথাকথিত ‘মেইল ইগো’কে আঘাত করতে চান না। সালমা বেগম আফসার সাহবের পানে ক্ষণিকের জন্য দৃষ্টিপাত করে তীব্র যন্ত্রণার প্রতিটি বিন্দু গলাধঃকরন করলেন। এখন তিনি কাঁদেন না। তার দু নেত্র ছাপিয়ে জল উপচে পড়ে না। কারণ তার শরীরে সবটা সয়ে গিয়েছে। সহ্যের সীমা অতিক্রম করতে করতে তিনি কঠোর হয়েছেন। কিন্তু এখনও তার মাঝে নম্রতা নামক অনুভূতিগুলো ক্ষুদ্র আকারে আছে। এজন্যই হয়তো যন্ত্রণার অনুভূতিগুলো হয়। সালমা বেগম এ পর্যায়ে ভেজা একটি ঢোক গিলে বললেন,
” যেহেতু সবদিক দিয়ে আপনি খোঁজ নিয়েছেন সেহেতু ভালোই হবে। আমার কোনো আপত্তি নেই। সাবিহার কাছে না হয় একবার শুনে নিন। ”

আফসার সাহেব মুহূর্তেই মাথা তুলে ভ্রু কুঞ্চিত করে বললেন,
” ওর কাছে আর কি শুনবো। ও ‘হ্যাঁ’ই বলবে। আমি সাবিহাকে খুব ভালোভাবেই চিনি। ও ওর বাবাকে খুব ভালোবাসে। আমার বিশ্বাস সাবিহা আমার সিদ্ধান্তে কখনো দ্বিমত পোষণ করবে না ও। ”
এই বলে তিনি কল লিস্টে নাম্বার ডায়াল করতে করতে সাবিহার রুমের দিকে পা বাড়ালেন। সালমা বেগম খাটের কাছেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। কিয়ৎক্ষণ গম্ভীর চাহনিতে মেঝের দিকে চেয়ে আনমনে কিছু ভাবলেন। অতঃপর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বললেন,
” আমার মেয়েটারও দু আনার দাম নেই আপনার কাছে। তবে একটাই চাওয়া, আমার মতো যেনো আমার মেয়ের কপাল না পু’ড়ে।”
এই বলে তিনি নিজের কাজে মনোযোগী হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন।

.

মাত্রই পোশাক বদলে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো সাবিহা। তখনই দরজার ওপারে কড়াঘাত ও আফসার সাহেবের কণ্ঠস্বর শুনে দ্রুত উঠে গিয়ে দরজা খুললো সাবিহা। বাবাকে দেখেই এক গাল হেসে বললো,
” এতোদিন পর মেয়ের সাথে দেখা করার চান্স পেলে। ”

সাবিহার কণ্ঠে ফোন থেকে মাথা তুলে চাইলেন আফসার সাহেব। বিস্তৃত হেসে সাবিহার কাঁধে এক হাত রেখে রুমে প্রবেশ করলেন তিনি। বললেন,
” খুব ব্যস্ত রে ইদানীংকাল। শোন, তোকে একটা কথা বলতে এলাম। ”

এই বলে আফসার সাহেব রুমে অবস্থিত সোফায় বসে পড়লেন। সাবিহাও তার পাশে বসে পড়লো। কৌতূহলী দৃষ্টিতে বাবার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” কি কথা আব্বু?”

আফসার সাহেব কোনো প্রকার ভণিতা না করেই বললেন,
” তোর জন্য একটা ছেলে ঠিক করেছি। আমার বিজনেস পার্টনারের ছেলে। আগামী দু সপ্তাহের মাঝেই তোদের বিয়ের ডেট ফাইনাল করতে চাইছি। ”

অকস্মাৎ এমন সংবাদে সাবিহার মাথায় যেনো বাজ ভেঙে পড়লো। তার ভেতরটা মুহূর্তেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। বাবার নিকট হতে এমন কথা শোনার জন্য সে কিছুতেই প্রস্তুত ছিলো না। মেয়ের অবস্থা হয়তো আফসার সাহেব উপলব্ধি করতে পারলেন। ফলশ্রুতিতে সাবিহার মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে বললেন,
” বুঝতে পারছি তোর অবস্থাটা। হঠাৎ বিয়ের কথা শুনেছিস তো। কিন্তু আমি জানি, আমার মেয়ে স্ট্রং এবং খুব দ্রুতই সে নিজেকে সামলে নিতে পারবে। কি পারবি তো?”

সাবিহা যেনো এখনও ভ্রমে আছে। সে কিছুতেই বিয়ের কথাটিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না। কিভাবেই বা নিবে সে। মাত্রই তো একজনের প্রতি প্রেম নামক অনুভূতির সূচনা লব্ধে পদার্পণ করেছে সে। সুখকর এ অনুভূতিটি পুরোপুরি হৃদয়ঙ্গম হওয়ার পূর্বেই অজানা এক মানুষের সাথে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ কোনো দুঃস্বপ্নের চেয়ে কম নয়। বরং এর চেয়ে বৃহৎ কিছু। সাবিহা বিমূঢ় চাহনিতে আফসার সাহেবের দিকে চেয়ে রইলো। আফসার সাহেব পূর্বের ন্যায় জিজ্ঞেস করলেন,
” কি? পারবি তো?”

সাবিহা নিজেকে সামাল দিলো। হঠাৎ-ই মৃদু হাসার চেষ্টা করে বললো,
” হ্যাঁ পারবো আব্বু। ”

মেয়ের জবাবে খুশি হলেন আফসার সাহেব। বললেন,
” ছেলে খুব ভালো বুঝেছিস? তুই দেখলেই পছন্দ করে ফেলবি। আমি ওদের সাথে কথা মোটামুটি পাকাপোক্ত করে এসেছি। এখন শুধু তোর মতামত জানলেই আমি ফাইনাল করে দিবো। কি? বাবার মান সম্মান রাখবি তো? আমার বিশ্বাস তুই আমার পছন্দকে সাদরে গ্রহণ করবি। করবি না?”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাবিহা জোরপূর্বক মাথা ঝাঁকালো। কিন্তু কোনোরূপ জবাব দিলো না। আফসার সাহেব আর কথা বাড়ালেন না। বরং উঠে দাঁড়ালেন। বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে পুনরায় বললেন,
” তুই তো আমাকে অনেক ভালোবাসিস তাই না? আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবি না? আমার সম্মান রাখবি না তাদের সামনে?”
আফসার সাহেব কথার জালে মেয়েকে ফাঁসালেন। খুবই সুক্ষ্মভাবে। যা সাবিহা ঘুণাক্ষরেও টের পেলো না।
সাবিহা নিরুত্তর রইলো। আফসার সাহেব আর তার জবাবের অপেক্ষা রইলেন না৷ বরং চলে গেলেন। কারণ তিনি জানেন সাবিহা কখনোই এ বিয়েতে দ্বিমত পোষণ করবে না৷

.

আজকের রজনীর তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি। হাড়কাঁপানো শীতে ভেনিস শহর আচ্ছাদিত। তারই রেশ ধরে চারপাশে মৃদুমন্দ গতিতে হাওয়া বইছে। গায়ে কাঁটা দেওয়া এ শীতল হাওয়ার ব্যাথা উপেক্ষা করেও সাবিহা ব্যাক ইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে আছে। এ মুহূর্তে তার শরীরের বহিঃর্ভাগে কোনো ব্যাথা হচ্ছে না। কিন্তু তার অন্তঃস্থল তীব্র ও তীক্ষ্ণ ব্যাথায় জর্জরিত। সে নির্বাক চিত্তে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিঃসঙ্গ নভস্থলে উদিত চন্দ্রিমার পানে দৃষ্টি স্থাপন করে আছে। এমনই নির্জনতা ভেদ করে অকস্মাৎ রাগীবের কণ্ঠস্বর শুনে ধরাধামে অবতীর্ণ হলো সাবিহা।
” এতো শীতে বাইরে কি করছেন সাবিহা?”

মুহূর্তেই সাবিহা পিছনে ঘুরে কোনো প্রকার ভণিতা ছাড়াই বললো,
” আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করেছে।”

অকস্মাৎ সাবিহা নিকট হতে মুখনিঃসৃত ‘বিয়ে’ নামক শব্দটি শুনে স্তম্ভিত হলো রাগীব। কিন্তু তার এ স্তম্ভিত ভাবটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। বরং হঠাৎ প্রজ্জ্বলিত ক্রোধে তার হালকা খয়েরী রঙের আঁখি দুটো যেনো ধপ করে জ্বলে উঠলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here