প্রাক্তন,১৩+১৪(শেষ) পর্ব
Wendrilla Jahan Nira
রুম টা পরিষ্কার করে দিলাম।দিয়ে লাইটস অফ করে দিয়ে বের হতে যাবো এমন সময় সে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বললো
“নীরা ভালোবাসি।”
__ আমি ভালোবাসি না।
আমি অন্যকারো হয়ে গেলে তোমার কিছু যায় আসে না?
__না কিচ্ছু যায় আসে না।
নীরা তোমার জেদ কিন্তু ৩টা জীবন নষ্ট করে দিবে।তোমার, আমার, রাইসার।
__আমার জীবন নষ্ট হবে না।
অহ তার মানে আমার জীবন নষ্ট হলে তোমার কিছু না? আমি নষ্ট হয়ে গেলে তোমার কিছু না?
__তোমার কিছুই হবে না। তুমি ভালো থাকবে।একটা সংসার ভালো রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন সব ই রাইসার মধ্যে আছে।তুমি ভালো থাকবে মশাই(ওনাকে আগে আমি মশাই বলে ডাকতাম) আর সব চেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো ভালোবাসা যা রাইসা তোমাকে বাসে।
আর আমি তোমাকে ভালোবাসি।সে তো আমার ভালোবাসা পাবে না।ওর জীবন টা আমি কেনো নষ্ট করবো বলতে পারো? সে কি আমার ভালোবাসা পাবে??
__সময় দাও নিজেকে তুমি ও ওকে ভালোবাসতে পারবে।ভালোবাসা টা এত্ত টাও কঠিন না।
তাহলে তোমার জন্য এত্ত কেন কষ্টের হচ্ছে কেনো আমাকে ভালোবাসা?নষ্ট হয়ে যাবো নীরা আমি তোমাকে ছাড়া।
__যাকে ভালোবাসি তাকে আবার কি ভালোবাসবো বলো?
এবার আর কোনো জবাব নেই সে ঘুমিয়ে পরেছে।বাচ্চার মত লাগছে।
এই লোক ভালোবাসি তোমায়। খুব ভালোবাসি।খুব ই।কিন্তু তোমাকে আর চাই না আমি ফেরত গো।
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। দ
ধুরু ঘুম ধরে না কেনো? রোজ রাতে ঘুমের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করতে করতে ঘুমিয়ে যাই।জানি না কে হারে আমার কাছে ঘুম, না ঘুমের কাছে আমি, না আমার কাছে আমি!!
এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি নিজেই জানি না।
ফোন বাজতেছে তেধ ঘুম টার ১২টা বাজায় দিলো।দেখি স্পর্শর ১৯টা মিসডকল।মানে এতোই ঘুমিয়েছিলাম যে ১৮বার কল করেছে আমি বুঝতেই পারি নি। ভাবলাম ফ্রেশ হয়ে কল ব্যাক করবো।ফ্রেশ হয়ে দেখি ১১টা বাজে।আজ ও ক্লাস মিস।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আন্টি বসে আসে বেড এ।
কি গো আন্টি এমন করে কি দেখছো?
__নীরা তুই অন্য কাউকে বিয়ে করে নে।আমার ছেলে তোর যোগ্য না।
কি হয়েছে সক্কাল সক্কাল এসব কথা।
__বাইরে রাইসার সাথে ও (আন্টির আর বলতে পারলো না।বুঝতে পারলাম)
তোমার বাড়ির হবু বউ আন্টি(হেসে হেসে)
__তুই অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখে থাক মা।
আবার স্পর্শ কল করেছে এবার ধরলাম।
হ্যালো
__এত্তবার কল করছিলাম ধরছিলেন না কেনো?
ঘুমিয়েছিলাম। বুঝতে পারি নি।
__দেখা করা যাবে?
আজ দেখা করবেন? কোথায়?
আন্টি আমার কাছ থেকে ফোন টা নিয়ে বললো।”বাবা তুমি আজ আমাদের বাসায় আসো।”
কি জানি কি বললো।আন্টি কল রেখে দিলো।
আমি বললাম “আসবে উনি?”
বললো আলমারি থেকে একটা লাল শাড়ি বের করে দিচ্ছি আজ পরবি।
__কেনো??
আমি বলছি তাই।
__আচ্ছা।
রুম থেকে বের হয়ে দেখি সমুদ্র আর রাইসা বেশ ভালোই গল্প করছে।আমাকে দেখে বললো।
এই যে মিস ভাড়াটিয়া আমাদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসেন।আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সে রাইসার কাছাকাছি যাচ্ছে।আজ কেনো জানি আমার রাগ হচ্ছে না কেন জানি খুব হাসি পাচ্ছে।সমুদ্র আমাকে রাগানোর জন্য এসব করছে। আমি বললাম
“আচ্ছা আমি কিছু আনছি”
রান্না ঘরে গেলাম ভাবলাম নুডুলস করে দেই।
সে পিছন থেকে এসে বলছে,
আমাকে আর রাইসা কে একসাথে কেমন লাগছিলো বললেন না তো?
__আমার কথা শুনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন?? (অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখেছি)
না অপেক্ষা করবো কেনো?
__তাহলে? আচ্ছা যাই হোক আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি আপনাদের বেশ ভালো বানাবে।
হুম জানি।আর হ্যা খাবার টা তাড়াতাড়ি নিয়ে আসেন।রাইসা অপেক্ষা করছে।
__আচ্ছা আনছি।মশাই শুনেন?
কি?
__আচ্ছা জনাব আপনি কি আমাকে জ্বালানোর চেষ্টা করছেন?
নাহ। আপনি জ্বলছেন?
__উহু না তো।তবে কি জানেন আমাকে জ্বলানোর চেষ্টায় আপনি নিজে অনেক বেশি জ্বলছেন।তাই এগুলো করিয়েন না।হাহাহাহা।
আমি কি করবো না করবো আমার ব্যাপার।বুঝলেন?(রাগি মুখ করে)
__আচ্ছা বুঝলাম হাহাহা।
সে চলে গেলো।আমি খাবার নিয়ে রাইসা আর ওকে দিলাম।এমন সময় আন্টি শাড়ি নিয়ে বের হয়েছে।লাল সিঁদুর রঙ কাতান শাড়ি।
এই নীরা।
__জ্বী
এদিকে আয়।
__হ্যা বলো।
এই ধর আজ এই শাড়ি টা পরবি আর সুন্দর করে সাজবি।
সমুদ্র আর রাইসার মাথার উপর দিয়ে ব্যাপার টা যাচ্ছে বেশ বুঝতে পারছি।সমুদ্র বললো “কেনো আজ কি তোমার ভাড়াটিয়া কে কেউ দেখতে আসছে মা?”
__হ্যা স্পর্শ কে দুপুর এ ডেকেছি।
স্পর্শ নাম শুনে সমুদ্র তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো আর বললো
“ও কেনো আসবে?”
__আমি আসতে বলেছি তাই(আন্টি)
মা তুমি যাকে তাকে বাসায় ডাকো কেনো?
__আমার বাসা আমি যাকে ইচ্ছা ডাকবো। তোর কি?আর রাইসা দুপুরে না খেয়ে জেয়ো না কেমন? নীরার হবু বর কেও দেখে যাবে কেমন?
রাইসা মাথা নাড়ালো।
সমুদ্র বেচারা না পারছে কিছু বলতে না পারছে সহ্য করতে।এগুলো দেখতে দেখতে দেখি ১টা বেজে গেছে।যাই গোসুল এ যাই।আবার শাড়ি ও পড়ার লাগবে।স্পর্শ নাকি ২টোয় আসবে।
গোসুল করে শাড়ি পরে ফেলেছি।
দরজায় কে জানি টোকা দিলো।খুলে দেখি জনাব.
আপনি? এখানে? এখন?
কিছু না বলে রুম এ ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
__করছেন কি? কেউ দেখলে খারাপ ভববে।আপনি বের হোন।
বাহ দেখতে তো বেশ সুন্দর লাগছো। আর কেউ কিছুই মনে করবে না সবাই সব জানে।মা বাবা তো জানেই যে আমি তোমাকে…..
__রাইসা ও জানে।আপনার হবু বউ সে যদি আপনাকে আর আমাকে এই অবস্থায় দেখে সেটা কি ভালো দেখাবে?
ওর কি অজানা তোমার মনে হয়?
__অজানা জানা টা ব্যাপার না। এখন আপনি বের হবেন বের হোন।
আরেহ দেখো তো কি আনছি নীল রেশমি চুড়ি দেখি হাত টা দাও(বলেই নিজেই পরানো শুরু করলো)
বাচ্চাদের মতো চেহারা করে বেশ আনন্দ নিয়ে কাজ টি মানে চুড়ি পরানোর কাজ টা সে করছে।দেখে বেশ ভালো ও লাগছে আমার হাসি ও পাচ্ছে।আবার সেইক্ষনেই রাগ হচ্ছে।আগে এত্ত ভালোবাসলে কি দোষ হতো?
এই পছন্দ হইছে তোমার (সমুদ্রর কথায় বাস্তবে ফিরলাম)
__কোথায় পেলে তুমি?
আকাশ থেকে আনছি!!কি যে প্রশ্ন করো না?কিনে আনছি নাহলে কোথায় পাবো?
__এই অবস্থায় বাইরে কেনো গেছিলা?
কেনো আবার? চুড়ি আনতে।
__তুমি কি পাগল নাকি?
হুম তা তোমার জন্য তো অনেক আগে থেকেই।এখন বলো চুড়ি গুলো ভালো লাগছে?
__জানো তো পাগল ও কিন্তু ঠিক হয়ে যায়।তুমি ও ঠিক হয়ে যাবা।
বেশ রাগ করে বললো তোমার সাথে কথায় আমি পারবো না।এই শুনো লাল টিপ পরবা না।কোনো টিপ ই পরবা না।যদি খুব পরতে ইচ্ছে করে তাহলে কালো টিপ পরবা।
__আচ্ছা দেখি।
আচ্ছা আমি গেলাম।রেডি হয়ে নিচে আসো।
__যাচ্ছি। যাও
ও চলে গেলো সাজতে বসলাম চোখে কাজল,ঠোট রাঙানো লাল লিপ্সটিক,চুল গুলো ছেড়ে দিলাম আর কানে ছোট্ট ২টা ঝুমকো। বেস আমি রেডি বেড়িয়ে আসলাম রাইসা, আন্টি, সমুদ্র, আংকেল আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমাকে কি বিচ্ছিরী লাগছে? না আয়নায় তো ভালোই লাগলো।
কি গো আংকেল আন্টি আমাকে কি খারাপ লাগছে?
__না রে মা অনেক সুন্দর লাগছিস(আংকেল)
তাইলে এম্নে দেখে আছো কেনো?
__নজর যেনো না লাগে মা তোকে(আন্টি)
তাই? আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা। তোমার রান্না সব শেষ? তাইলে যাও রেডি হয়ে আসো স্পর্শ তো চলে আসবেন।
__হুম তোমার গল্প কর আমরা রেডি হয়ে আসছি।
আপ্পি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে(রাইসা)
__তাই?
হুম।
__ধন্যবাদ বোন।
রাইসা আমাকে টানতে টানতে সোভায় নিয়ে গেলো।
আপ্পি তুমি এত্ত সুন্দর কেনো?
__আমি সুন্দর কারন তোমার চোখের দেখার ভাব সুন্দর বুঝলা?
আমাদের বিয়ে তে তুমি আমাকে সাজিয়ে দিবা আচ্ছা?
কথা টা শুনে কেমন জানি একটা ধাক্কা খেলাম।তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম
আচ্ছা আপু দিবো।দাওয়াত দিবা তো আমাকে?
__তোমাকে আবার দাওয়াত না দেই? আর সমুদ্র ভাইয়া তোমাকে ছাড়া যাবে? তোমার মনে হয়?
বিয়ে হতে যাচ্ছে এখনো সমুদ্র কে ভাইয়া বলবে?
__পরে অভ্যেস হয়ে যাবে।আচ্ছা আপু আমাকে যে একটু ফ্রেশ হতে হতো।
আমার রুম এ যাও। সব আছে ওখানে।
__ওকে আপ্পি।
মেয়ে টা কত্ত প্রাণোচ্ছল। তোতা পাখির মতো কথা বলে।মনে মনে হাসছিলাম এগুলো ভাবতে ভাবতে।
হঠাত করে সমুদ্র পিছন থেকে আমার মাথা টা উচিয়ে দিয়ে কপালে একটা আপ্পা দিয়ে দিলো।
__এইটা কি ছিলো?(আমি)
আপ্পা দিছি বুঝতে পারবো নাই?
আবার একটা দিয়ে বললো এইবার বুঝতে পারছো? না আরো দেওয়ার লাগবে?
__না লাগবে না।আপনি এগুলো কেনো করছেন বলেন তো?
সমুদ্র কিছু বলতে যাবে এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো মনে হয় স্পর্শ এসে গেছেন।
আমি দেখছি বলেই চলে গেলো সমুদ্র।
ঠিকি স্পর্শ ই এসেছেন।আমাকে দেখে ৫ সেকেন্ডের জন্য থেমে গেছিলো।আবার হেটে এসে সমুদ্রর হাতে ফুলের বুকে টা দিলো।
সুন্দর লাগছেন নীরা আপনি..(স্পর্শ)
__ধন্যবাদ।
আচ্ছা আপনারা গল্প করুন আমি আন্টি কে ডেকে আনছি।
ও আন্টি ও আংকেল হলো তোমাদের?চলে এসেছেন তো উনি।
__হ্যা হয়ে গেছে।চল।
চলো।
আসসালামু আলাইকুম (স্পর্শ)
__ওয়ালাইকুম আসলাম বাবা।কেমন আছো?
এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনারা?
__আমরাও ভালো আছি।এসো আগে খেয়ে নেই তারপর গল্প সল্প করবো।
আচ্ছা চলেন।
এসে দেখি সমুদ্র উধাও।স্পর্শ একা বলেছিলো।
হ্যা বাবা বসো(আন্টি)
উনি ও বসে গেলেন রাইসাও চলে এলো।ও ও বসে গেলো।কিন্তু সমুদ্র কই?
আন্টি আংকেল তোমরা ও বসো সবাই এক সাথে বসে খাই।
স্পর্শর ডানে আন্টি তার ডানে আংকেন তার ডানে রাইসা। রাইসার ডানের চেয়ার আর স্পর্শর বামের চেয়ার ফাকা আছে।আমি বামে বসতে যাবো কই থেকে জানি সমুদ্র এসে বসে পরলো।তাই আমাকে সমুদ্রর বামে আর রাইসার ডানে বসতে হলো।
খাওয়া দাওয়া চলছে।
রাইসা কিছু নাও(আমি)
__না আপু আর কিছু নিবো না।
নীরা আপনি ও তো কিছু নিলেন না(স্পর্শ)
__আমার ও খাওয়া শেষ।আপনি কিছু নিন?
হ্যা তা নিবো। টমেটোর চাটনি টা দেন।
এই নিন।সমুদ্র আপনি কিছু নিবেন?
__নাহ।কানের কাছে মুখ এনে বললো সিগারেট লাগবে মনে হয়।
আমি বেশ চমকে গেলাম।এর কি মাথা গেছে।
মাথা কি গেছে আপনার?
__হয়তো। তোমার আর ওর আদিক্ষেতা আমার পছন্দ হচ্ছে না। সহ্য করতে পারছি না।
বসে সে উঠি চলে গেলো।
সবাই একসাথে গল্প করছে কিন্তু সমুদ্র নেই।
আন্টি বললো নীরা যা উনাকে ছাদ টা দেখায় আন।বুঝতে পারলাম আন্টি আমাদের একলা কিছু সময় দিতে চাইছেন।
উনি ও বলে উঠলো চলুন দেখে আসি।
__আচ্ছা চলেন।
ছাদে গিয়ে দেখি আমার জনাব সত্যি সত্যি ই সিগারেট খাচ্ছেন।
কি ব্যাপার সিগারেট খান নাকি?(স্পর্শ)
__হুম। আপনি খান না?
নাহ। বাজে কোনো অভ্যেস নেই।
__তাইলে তো নীরা অনেক লাকি। ভালো ছেলে পাচ্ছে।তাই না নীরা?আমাদের মতো খারাপ কোনো ছেলে পাচ্ছে না।
আমি অনেক লাকি হবো যদি সত্যি ই উনাকে পাই।
__সন্দেহ আছে পাওয়া নিয়ে?
হ্যা ব্যাপক। উনি তো রাজি ই হচ্ছেন না।
__কেনো অন্য কাউকে ভালোবাসে নাকি?
হ্যা তা তো বাসেই।আপনাকে।
আমি বুঝতে পারছি না কি বলবো।
সমুদ্র সিগারেট টা ফেলেন আমার গন্ধে সমস্যা আছে।(আমি)
এত্ত কাহিনী করার কি আছে বাপু? বলো না যে তোমাদের একলা কিছু সময় চাই।
সে চলে গেলো আমি ও আর কিছু বললাম না।
ও চলে যাওয়ার পর আমি স্পর্শ দুজনেই চুপচাপ আছি।
শেষ স্পর্শ ই কথা শুরু করলো
আপনার জন্য একটা জিনিষ এনেছি।
__কি?
পায়েল।নিজে পরিয়ে দিতে পারি?
__নাহ।
আচ্ছা।এই নিন।ভালো লাগলে পরিয়েন।
__হুম। পরবো
বিয়াটা কি আমাদের হচ্ছে?
__জানি না।
তাহলে কে জানে?
তাও জানি না সে হঠাত হাটু গেরে আংন্টি নিয়ে প্রোপজ করে বসলো। এইটা বিয়ের প্রোপজাল না। আমরা কি একটু সহজ হতে পারি?
__আংন্টি নিয়ে সহজ হওয়ার প্রোপজাল?
ভেবেছিলাম তো বিয়ের প্রোপজাল দিবো আর হলো কই?
আমার তাও সময় লাগবে ততদিন আংন্টিটা নিজের কাছে রেখে দিন।
__আচ্ছা
চলেন নিচে যাই।
__চলেন।
স্পর্শ চলে গেলো রাইসাও চলে গেলো। আন্টি আর আমি গল্প করছি।
নীরা ছেলেটাকে আমার বেশ ভালো লেগেছে।
__তাই।হুম বেশ ভালোই উনি।আমার একটু সময় লাগবে। যা হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতেছি।বুঝে উঠলে আমার শুধু একটু সময় লাগবে।
বলতে বলতেই রাইসার বাবার কল চলে এলো।বিয়ে নিয়ে কথা বলতে চান।
সমুদ্র কে ডাকা হলো সে কি বলে শুনার জন্য।
(চলবে…)
প্রাক্তন
অন্তিম পর্ব ১৪ পর্ব
Wendrilla Jahan Nira
বলতে বলতেই রাইসার বাবার কল চলে এলো।বিয়ে নিয়ে কথা বলতে চান।
সমুদ্র কে ডাকা হলো সে কি বলে শুনার জন্য।
আমার তো জানাই সে কি বলবে।
সে এসে রাইসার বাবা কে বললো ৩০ মিনিট পর তাকে জানানো হবে।
আংকেল আন্টি সবাই চুপচাপ বসে আছি।সমুদ্র ও মুখে কুলুপ এটে আছে।
আমি ই কথা শুরু করলাম,
১৫ মিনিট চলে গেছে এবার তো কিছু বলেন
__মা তোমার নীরা কে কেমন লাগে?বউ হিসাবে বিবেচনা করবে।বাবা তোমাকে ও বলছি।এতো দিনে হয়তো বুঝেই গেছো নীরা কে ভালোবাসি।
আন্টি বললো শুধু তুই ওকে বউ করতে চাইলে তো হবে না।নীরাকে ও তোকে স্বামী করতে চাওয়া লাগবে।তোকে ও তো ওর পছন্দ করার লাগবে।
__হুম তা ঠিক।নীরা আজ শেষ বারের মতো তোমাকে জিজ্ঞাস করছি বিয়ে করবে আমায়? তোমায় ছাড়া অন্য কাউকে হয়তো ভালোবাসতে পারবো না।আর আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেলে এর দায়ভার তোমার।
তুই কি ওকে জোর করছিস? জোর করে সম্পর্ক হয়না সমু!!(আন্টি)
__না মা। উনাকে জোর করা ছেড়ে দিয়েছি।আমি শুধু সত্যি টা বলছি।
আমি আপনাকে ভালোবাসি।এইটা আপনি নিজেও জানেন। কিন্তু হ্যা আপনাকে বিয়ে করতে চাই না।
__ওকে ফাইন।মা রাইসার বাবা কে ফোন দিয়ে বলো আমি রাইসা কে ৭দিনের মধ্যে বিয়ে করতে চাই।কাল জেনো উনি উনার পরিবার নিয়ে আসেন। কথা বলে যাব।(ওর চোখে ১ম বার পানি দেখলাম)
__আচ্ছা।
নীরা আমার রুমে এসো।কথা আছে।আর হ্যা মা বিয়ের সব আয়োজন নীরা করবে।
__আমি কেনো করবো?(আমি)
আমি বলছি তাই।
__তুমি বললেই হবে?
আমি জোর খাটাতে চাইছি না।তাই জোর করিও না।
__দেখো রাইসার বাবা আমায় পছন্দ করেন না।বুঝো ই তো এইটা।
কে করলো না করলো আমার কিছু যায় আসে না।
__ধুরু।মাথা।আচ্ছা করবো।
হুম রুম এ এসো।
__ফ্রেশ হয়ে আসছি।আন্টি তুমিও এসো।
আমি যাবো না মা।তোরা আজ ঝামেলা টা মিটিয়ে নে।(আন্টি)
__এইটা খারাপ দেখায় আন্টি।
আমরা তোকে ও চিনি আমার ছেলেও চিনি।যা ঝামেলা টা মিটিয়ে নে।
আমি আর কিছু বললাম না।ফ্রেশ হয়ে ওর রুমে গেলাম দেখি ও নেই।আন্ট বললো ছাদে গেছে।আমি ও ছাদে গেলাম।
দেখি যা ভেবেছিলাম তাই তার প্রথম ভালোবাসা মানে সিগারেট খাচ্ছে।
গিয়ে বললাম “বলো”
__হুম।
হুম মানে? আর সিগারেট টা ফেলো।
(সে কথা তে কান ই দিলো না।তাই নিজেই হাত থেকে নিয়ে ফেলে দিলাম)
__এখনো আমার হাতে সিগারেট সহ্য করতে পারো না? অন্য কারো কাছে আমাকে সহ্য করতে পারবে কি করে?
তোমাকে তো প্রথম অন্য কারো সাথে দেখছি না।আগে ও তো রাহার সাথে দেখেছি।তাহলে?
__রাহা রাহা রাহা!!
হুম রাহা
__রাহা ছাড়া তোমার কিছু আছে? তুমি আমাদের মধ্যে ৩য় ব্যাক্তি কে বেশি ইম্পরট্যান্ট দিচ্ছো।আমি তোমাকে চাই।তুমি আমাকে চাও এই টা ইম্পরট্যান্ট না?রাহা বেশি ইম্পরট্যান্ট?
ক্যারেকশন।আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু চাই না।কিছু মানুষ হৃদয় এ থাকতে পারে কিন্তু জীবন এ না।
__কেনো? কেনো চাও না?(কাছে টেনে নিয়ে)
কেনো চাইবো? আচ্ছা তুমি শুনতে চাও কেনো চাই না? আচ্ছা তাহলে শুনো।
নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে ভালোবাসি। হ্যা কিন্তু আমি তোমাকে চাই না।আচ্ছা রাহার সাথে তো তোমার কোনো সম্পর্ক ছিলো না তাই না?
__নাহ ছিলো না।
জোরগলায় বলতে পারবা যে ছিলো না? কি হলো মুখে কথা নেই কেনো?
__কি বলতে চাও সেটা বলো?
হুম শুনো,যখন তোমার সাথে সম্পর্ক তে ছিলাম তুমি এমন একটা বিহ্যাভ করতা থাকলে থাকো না থাকলে চলে যেতে পারো।আমি বরাবরি থেকে গেছি নিঃলজ্জের মতো।এই তোমার কাছে আমি কি চাইতাম? খালি একটু সময় চাইতাম।তোমার বন্ধু বান্ধবী দের জন্য সময় হতো। ঘুরে বেড়ানোর সময় হতো।অন্য মেয়ের সাথে ডেটিং করার সময় হতো।কিন্তু আমার জন্য সময় হতো না।এই এত্তটাই অবহেলিত আমি? আর হ্যা আমাকে যে ভালোবাসার প্রস্তাব দিছিলা।সেটা কি মন থেকে দিছিলা?
দিছিলা তো রাগের চোটে।চ্যালেঞ্জ লাগছিলা ফ্রেন্ডদের সাথে।ওই মেয়ের সাথে প্রেম করবো তারপর ছেড়ে দিবো।হুম তুমি তা করছো ও।জিতে গেছো তুমি।এখন ফির কিসের ব্যান্ডের গান তোমার? রাহা তোমার কেউ না তাই না? এই ওকে নিয়ে যে রাত কাটাইছো মনে করছো জানি না?হোটেল এভারেস্ট রুম নাম্বার ৩৭৬।ছবি দেখবা? দেখাবো? এখন কেন রে ভাই ভালোবাসি ভালোবাসি করে নাটক করতেছো? যখন তোমাকে আমার দরকার ছিলো তুমি ছিলা না।শুনো মনে এত কালো ছায়া নিয়ে আমি তোমাকে চাই না।আমি তোমাকে কখনো সম্মান করতে পারবো না।একটা সম্পর্ক এ ভালোবাসা না থাকুক কিন্তু সম্মান টা না হলে হয় না।বেঈমান কে ক্ষমা করা যায় কিন্তু আবার বিশ্বাস করার মতো ভুল করা যায় না।আমি চাই ও না।সব ক্লিয়ার।আচ্ছা কেনো করলা আমার সাথে ওই থাপ্পড় টার প্রতিশোধ নিছিলা? আমাকে একটা থাপ্পড় মেরে তো প্রতিশোধ নিতে পারতা।কি দরকার ছিলো আমার ৩টা বছর বিষাক্ত করে তুলার?
__ইসস এত্ত ঘৃনা আমার জন্য? তোমার সত্যি মনে হয় আমি তোমার উপর প্রতিশোধ নিছি.? আর আমি রাহা কে নিয়ে হোটেলে রাত কাটাইছি? নীরা এতটাও ঘৃণা করো না।তোমার ঘৃনা আমার সহ্য হবে না।হ্যা আমি রাহাকে নিয়ে হোটেল এ গেছিলাম।বাট ওকে আমি ছুঁই ও নাই I was fully drunk.she took the advantage and take some snaps..and then that photographs she gave you…that’s it..নীরা আমি বাজী ধরেছিলাম।কিন্তু তোমাকে বুঝার পর সত্যি ই ভালোবেসে ফেলেছিলাম
__আর কিছু।যাই হোক তোমাকে আমি চাই না।না তোমাকে ভালো রাখতে পারবো, না নিজে ভালো থাকতে পারবো।তাই চাই না তোমাকে।
ওকে নীরা। তুমি যা চাও তাই হবে।ভালো থেকো। আর হ্যা আজ রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায় তাও আমার রুমে এসো না।সহ্য করতে পারবে না।
এইটা বলেই চলে গেলো সে।আমিও কিছু ক্ষন ছাদে থেকে গেলাম।আর মনে মনে ভাবছি আচ্ছা সমুদ্র ছবি গুলো না হয় ভুল কিন্তু তোমার আর ওর কাছে আসার ভিডিও টাও কি ভুল? তখনো কি বাজি ধরেছিলে?না অন্য কিছু?ভাবছিলাম আর আন্টি ছাদে এসে পরলো। কাউকে জরিয়ে ধরে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করতেছে।নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না ছাদেই বসে পরলাম বাচ্চা মানুষের মতো কাঁদতে কাঁদতে। আন্টি এসে আমায় জরিয়ে ধরলো আর বললো নীরা তুই যা করেছিস ভালো করেছিস মা।
__আন্টি আমিও তোমার ছেলে কে ভালোবাসি বিশ্বাস করো।কিন্তু ওকে ভরষা টা আর করতে পারি না।যাকে বিশ্বাস ই করতে পারি না তাকে ভালোরাখবো কি করে?
বললাম না তুই যা করছিস ভালো করছিস।
__এত্ত জোর গোলায় কি করে বলছো?
বলছি কারন আমি জানি।
__কি জানো তুমি? (বেস অবাক হয়ে)
কাল আমি রাজ কে কল দিয়েছিলাম।আমার ওত্ত রাতে কল পেয়ে বেশ অবাক হয়েগেছে।ওকে জিজ্ঞাস করলাম রাহা আর সমুদ্রর সম্পর্ক এর বিষয়ে। প্রথমে মুখ খুলতে চায় নি।পরে বললো।আমার ছেলের ও দোষ আছে যা বুঝলাম।
মানে কি কি শুনেছো তুমি?
__যা প্রয়োজন ততটুকুন।
আন্টি তোমার কি মনে হয় তোমার ছেলেকে আমি কষ্ট দিচ্ছি?
__না রে মা।তুই ও যে রোজ রাতে এখন নিয়ম করে ঘুমের ওষুধ খাস তা বুঝি রে।তুই যে রাতে ট্যাপ জোরে ছেড়ে দিয়ে চিৎকার করে কাঁদিস তা বুঝি রে মা।
অনেক্ষন আন্টিকে ধরে কাঁদলাম বেশ হালকা লাগছে এখন।আন্টি বললো বল খেতে যাবি।
__হুম চলো
সবাই এক সাথে খাওয়া শেষ করলাম আংকেল বললো রাইসার বাবা কাল বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে আসবে। কথাটা শুনে আর আগের মত খারাপ লাগাটা অনুভব করলাম না।একটা কথা আছে না অনুভুতি কারো জন্য নষ্ট হয়ে গেলে তা ফিরে পাওয়া কষ্ট কর।তা আজ প্রমাণ পেলাম।
বিয়ের আয়োজক কিন্তু আপনি নীরা(সমুদ্র)
__হ্যা তা আমি জানি।
কোনো ত্রুটি যেনো না হয়।
__আপ্রাণ চেষ্টা করবো।
সে চলে গেলো তার রুমে।খাওয়া শেষ সবার। আমিও বিছানায় গা এলি দিতেই ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুমের ওষুধের ও তো কিছু ক্ষমতা আছে তাই না?
সকালে আন্টিকে রান্না তে সাহায্য করলাম। বেশি ভাগ রান্নাই আমার পছন্দের। মনে হচ্ছে এক দফা খাওয়া যেতে পারে!!
১টায় রাইসার পরিবার এলো।রাইসার ভাই ও আছে দেখি।মনে হয় আমার থেকে বড়ই হবে। পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৪জন।সুখি পরিবার।
খাওয়া দাওয়া শেষ এইবার বিয়ের গল্প।আমি চলে যাচ্ছিলাম আন্টি হাত টেনে নিজের কাছে বসিয়ে নিলো।
হ্যা রে কে এইটা। (রাইসার মা)
__আমার মেয়ে বলতে পারিস।
বেশ মিষ্টি মেয়ে তো।
হ্যা কিন্তু মুখ খুললে তিতাই বের হবে(রাইসার বাবা)
__কি করবো বলেন তো আংকেল জন্মের সময় নীম পাতা খাইয়েছিলো মধুর বদলে! ভেবেছিলো নীমপাতার উপকারিতা পাবো।
সবাই বেশ হো হো করে হেসে উঠলো।
তা বিয়ের গল্প শুরু করা যাক?
__হ্যা হ্যা অবশ্যই(আংকেল)
আংকেল বিয়ে টা ৭দিনের মধ্যে হলে ভালো হয়!
__এত্ত তাড়া কিসের বাবা?(রাইসার মা)
আছে একটু।
__আচ্ছা তাই ই হবে বাবা।
বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো আর ৫দিন পর।মুখে বলা টা যত টা সহজ কাজ সামলানো তত টাই কঠিন।
রাইসার ভাই বললো একটা ভালো ওয়েডিং প্লানার এপোয়েন্ড করা দরকার এত্ত কম সময় কি হয়ে হবে সব..?
সমুদ্র বললো নীরাই সব করবেন।
এইবার রাইসার বাবা বলে উঠলো,
এই মেয়ে টাও বিয়ে তে থাকবে? তা থাকুক বিয়ের পর কিন্তু তাকে আমি এলাও করবো না।
কিছু বলতে যাবো সমুদ্রই বলে দিলো,
__হ্যা সে তো থাকবেই।সে চাইলে বিয়ের পরেও থাকবে।আপনি এলাও করেন আর না করেন।
না বাবা সেটা বলে নি। বিয়ের পর মেয়েদের একটু ইন্সিকিউরিটি বেশি থাকে আর একটা অবিবাহিত মেয়ে থাকলে তা আরো বেশি হয়ে যায়।তাই আর কি (রাইসার মা)
__আন্টি আমি চাইলে হয়তো রাইসা এ বাড়িতে আসতোই না।একটা মনে হয় আপনি জানেন। শুধু সবাই ই জানে।আর রাইসা তুমি ও কি মনে তোমার দানপত্য জীবন এ আমি অসুখ আনবো?
__না আপু।তুমি সত্যি অনেক ভালো।আর হ্যা বিয়ের প্লানিং এ আমাকে নিবে তো?
হ্যা অবশ্যাই নিবো।নিজের বিয়ে চাইলে তুমিও থাকবা।আর হ্যা আংকেল আমার ও হয়তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর কয়েকদিন পর।তাই চিন্তা করিয়েন না।পশ্চিম বাংলা সিরিয়াল এর মত কোনো কাজ করবো না।
তো ডিসিশন এইটাই হলো যে আর ৫ দিন পর সমুদ্র আর রাইসার বিয়ে হবে।
সবই চলে গেলো।আন্টি আর আমি বসলাম আংকেল ও এলো পরে সমুদ্র ও এলো।গায়ে হলুদ টা কমিউনিটি সেন্টার এ হবে আর ওই দিনেই একসাথে রাইসার ও হয়ে যাবে।বিয়ে তারা কোথায় করবে তাদের ব্যাপার কিন্তু বিয়ের রিসেপশন কমিউনিটি তে হবে। কোনো ঝামেলা বাড়িতে হবে না।তো বাড়ির পাশের কমিউনিটি সেন্টার টা বুক করে দেই কি বলো?
__হ্যা করে দাও দেখো কত টাকা লাগে?(আংকেল)
ওকে।আচ্ছা আন্টি মেয়ের গহনা আর বিয়ের কেনাকাটা কবে থেকে শুরু করবা আর দাওয়াত এর কার্ড?
__আজকেই যাওয়া যায়।সময় তো নাই।
হ্যা সন্ধ্যা সবাই যাবো। আর ওদিক থেকে রাইসাকেও ডেকে নিবো আচ্ছা __আচ্ছা।
তো ফ্রেশ হয়ে নাও।
নীরা? (মশাই)
__হুম
বিয়েতে আর হলুদে মেয়েপক্ষ আর ছেলে পক্ষ কি কালার এর জামা পরবে তা তো ঠিক করলা না??
_হুম আগে রাইসার সাথে কথা বলি।ওর ও তো বিয়ে পছন্দের কিছু থাকতে পারে।মেয়েদের বিয়ে নিয়ে কত প্লানিং থাকে তা আপনি বুঝবেন না।
হতে পারে।
__হতে পারে না হয়।আচ্ছা রেডি হয়ে যান।একটু পরে বের হবো। আংকেল আন্টি তোমারাও রেডি হও।
রুমে গিয়ে রেডি হলাম।রে হবো সমুদ্র নাকি গাড়ি চালাবে পিছনে বসতে যাচ্ছিলাম,
নীরা সামনে বসো(সমুদ্র)
__আংকেল সামনে বসুক।আমি পিছনে বসি?
কেনো সামনে বসলে জাত যাবে তোমার?
__না তা না।
তাহলে বসো।
__আচ্ছা।
গাড়ি যাচ্ছে আপন মনে আংকেল আন্টি বেশ গল্প করছে।সমুদ্র আমার দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে সামনে।শপিং মল এ গিয়া রাইসাকে কল দেওয়া হলো যেনো সে আসে।তারা নাকি আগেই চলে এসেছে।
গিয়ে দেখি তারা মল এ ওয়েট করছে।শাড়ির স্টল এ গেলাম ওর জন্য ৪টা কাতান আর ১টা বেনারসি কিনা হলো।গহনা ও সব কিনা শেষ।রাইসা কে জিজ্ঞাস করলাম আচ্ছে গায়ে হলুদ এ কি রঙ পরবে তোমারা?
__ট্রেডিশনাল টাই পরি? হলুদ আর লাল?
আচ্ছা তাইলে ছেলে রা নীল পরুক।
__আচ্ছা।
সব বাজার শেষ।সব কাজ ও শেষ।বাড়ি এসে বেশ ক্লান্ত সবাই।কাল কার্ড দেওয়া শুরু হবে। বিয়ের কার্ড। সবাই খাওয়া দাও শেষ করলাম।ওমা ফুলের তো ওর্ডার দেই নি।সমুদ্রর রুমে গেলাম জিজ্ঞাস করতে যে কি ফুল ইউজ করবো?
__তুমি তো সব জানোই আমার কি পছন্দ আর কি অপছন্দ।
অর্কিডস?এই সময় তো ভালো অর্কিড পাওয়া যাবে না।
__তুমি ওডিং প্লানার যা ভালো লাগে করো।
ওকে।আচ্ছা আমি যাই।গুড নাইট।
__কোনো কিছুই তো ভালো হচ্ছে না আর রাত টা কি হবে?
আমি আর কথা বাড়ালাম না চলে এলাম।
ঘুম থেকে উঠে দেখি কার্ড চল্র এসেছে।
সমুদ্র আমার রুমে এসে ২টা কার্ড আর একটা ব্যাগ হাতে দিলো।
__এইটা কি? আর ২টা কেনো?
তুমি আমার বিয়ে তে এইটা পড়বে।আর একটা তোমার জন্য আর অন্য টা স্পর্শর জন্য।
অহহ।আচ্ছা।তো কি গিফট নিবেন আমার কাছে থেকে?
__হাহাহা।
হাসছেন যে?
__ফাসির আসামি কে জিজ্ঞাস করছো কিভাবে মরতে চান?
আজব।আচ্ছা শুনুন আপনার জন্য এই নীল পাঞ্জাবী টা কিনেছি পারলে কখনো পরিয়েন।
__হুম আচ্ছা।এই নীরা??
হুম?
__আহ কিছু না।
বলেই সে চলে গেলো।
সব কাজ শেষ আজ হলুদ সন্ধ্যা সমুদ্রর।রাইসা কে অনেক সুন্দর লাগছে। সমুদ্র দেখি আমার দেওয়া পাঞ্জাবী টা পরেছে।সারা দিন দেখি নি ওকে সকালে চলে এসেছি কাজ নিয়েই ব্যস্ত। সমুদ্রকে অন্য কারো হতে দেখবো তা ভাবি নি কখনো।যাক আল্লাহ্ যা করেন ভালো জন্যই করেন।কেউ একজন ভুলে সমুদ্রর সাইডে হলুদ রেখে দিয়ে শিট ওর হলুদে এ এলার্জী আছে আল্লাহ।এই আন্টি আন্টি থাকেন উনাকে হলুদ মাখায়েন না উপ্তান টা মাখান।উনার এলার্জী আছে।
__আচ্ছা মা (ভালো হাসি মুখে বলে গেলেন কিন্তু পিছনে গিয়ে কানা খুসো শুরু ঠিকি করেছেন।)
রাইসার পরিবারের লোক জন আমাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না।
রাইসার বন্ধু বান্ধবী রা ডান্স করলো।রাইসা আর সমুদ্রর কাপল ডান্স করছে।বেশ সত্যি ই ভালো মানিয়েছে।এক পর্যায়ে আমাকে আর সমুদ্রকে ডান্স করতে বললো রাইসা তার নাকি গিফট চাই আমাদের ডান্স টা।তার ওয়েডিং গিফট।মেয়েরা যে আসলে কি দিয়ে তৈরী তা যে বানিয়েছে সেই ভালো জানে।নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো কাছে দেখে কি করে?
এতো টা কাছে চলে এসেছিলো যে ওর হৃদ স্পন্দন আমি শুনতে পাচ্ছিলাম।আজ ই হয়তো শেষ এত টা কাছে আসা। আর হবে না। হঠাৎ করে ওর চোখে পানি দেখাম।আমি আর পারলাম না সরে এলাম।ভালো মতোই সব শেষ হয়ে গেলো।
বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনি তে বসলাম রাত টা অনেক দীর্ঘ হতে যাচ্ছে আর অনেক কষ্টেরও।ঘুমানো উচিৎ কাল সকালে উঠতে হবে।কিন্তু রাত টা কাটাবো কি করে?
কিন্তু কাটাতে তো হবেই।কাল ওর বিয়ে।ভাবা যায়? একবার দেখে আসি ওকে। কাল তো অন্য কারো হয়ে যাবে।শেষ বারের মতো আমার মনে করে দেখবো।
রুমে গিয়ে দেখি ঘুমিয়ে গেছে।সারা দিন অনেক ধকল গেছে ওর।কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে আসছিলাম পেছন থেকে কেউ হাত ধরে ফেললো।পিছন থেকে বললো।
“তুমি তো আপ্পা দিলে আমাকে দিতে দিবে না?”
__…………
সে উঠে এসে একটা আপ্পা দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো আহ নীরা এখন ভালোবাসি কথাটা আর তোমার কাছে ম্যাটার করে না।কিন্তু সত্যি ই ভালোবাসি তোমাকে।
আজ অনেক দিন পর ওকে ও আমি জরিয়ে ধরলাম চোখ বরাবর দুজন এর ই নোনাজল পরছে।বলতে যাবো যে আমিও ভালোবাসি কিন্তু ওই ভিডিও টা চোখে ভেসে উঠতেই ছেড়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে আসলাম।ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। ৬টা ঘুম ভেঙে গেলো বাসায় অনেক মানুষ তাই ভেঙে গেছে হয়তো।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে দেখি সবাই উঠে গেছে সবাই ব্যস্ত।
নীরা মা খেয়ে নে।বিয়ে বাড়ি খাওয়া দাওয়ার কোনো ঠিক নাই।খেয়ে নে তুই?(আন্টি)
__হুম খাই।বর সাহেব খেয়েছে?
এইতো আসলাম।খেতে দাও(সমুদ্র)
__এই নাই খেয়ে নাও।
দেখতে দেখতে ১১টা বেজে গেলো।রেডী হওয়ার লাগবে।গোসুল সেরে সমুদ্রর দেওয়া প্যাট টা খুললাম।দেখি লেহেঙ্গা দিয়েছে বেনারসি কাপড় এর।চুড়ি, চুল, গোলার মালা সব। পরে ফেললাম।ভালোবাসার মানুষের বিয়েতে যাচ্ছি কি ভাগ্য আমার!
চুড়ি পরতেছিলাম হঠাৎ পেছন থেকে এসে সমুদ্র জরিয়ে নিয়ে ঠোট ঠোট বসিয়ে দিলো কিছু বুঝার আগেই।
নীরা এখনো সময় আছে আমরা শুরু করতে পারি।প্লিস নীরা আমি আর পারছি না।প্লিস।
__ আজ তোমার বিয়ে সমুদ্র।প্লিস চলে যাও।
আচ্ছা চলে যাচ্ছি দাও মাথায় এই বেলিফুল এর গাজরা টা পরিয়ে দেই।
__হুম।
গাড়ি তে উঠতে যাবো।
নীরা আর আমি একাই একটা গাড়িতে যাবো তোমারা অন্য গাড়িতে যাও।এইটা শুনার পর অনেকে অনেক কথা বলছে।কিন্তু তাতে মশাইএর মাথা ব্যাথা নেই।
ওর সাথেই যাওয়া লাগবে আমার।
সিগনালে গাড়ি থেমেছে।এই প্রথম বর নিজে ড্রাইভ করে বিয়ে করতে যাচ্ছে।সবাই তা হা করে দেখছি।কিন্তু পাশে আমাকে কি ভাবছে জানি না।আমিও আর পারছি না।অন্য কারো হতে দেখি কি করে ওকে।ওর কপালে আপ্পা দিয়ে বেরিয়ে এলাম গাড়ি থেকে।প্রাক্তন কে বর্তমান করার একটা সুযোগ ছিলো।কিন্তু নেই নি।সব সুযোগ নিতে নেই।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। মাথা টা ঘুরছে হয়তো পরে যাবো।পিছন থেকে অনেক আওয়াজ আসছে গাড়ি টা গাড়ি টি।পিছনে ঘুরে দেখি সমুদ্রর গাড়ি টা ট্রাক উড়িয়ে দিয়েছে।
মশাইইইইইইইইই
এই সময় কিছু একটা আমাকেও উড়িয়ে দিলো মুখ থুবড়ে পরে গেলাম চোখ ঝাপসা হয়ে উঠেছে অনেক আগেই।
আচ্ছা আমি কি মারা যাচ্ছি??আচ্ছা যারা মারা যায় তারা কি বুঝতে পারে?
আর সমুদ্র?
মশাই ভালোবাসি?
(সমাপ্ত)
Story ta avabe ses na holeo parto. khub besi valo lageni story ta. Thank you so much for the story.