#প্রিয়_অভিমান
পার্ট : ১১,১২
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
পার্ট : ১১
আমি অবাক হয়ে চারিপাশ দেখতে লাগলাম,বিছানাটা অর্কিড আর লাল গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো,খুব সুন্দর করে খাটটাকে সাজানো হয়েছে,পুরো রুমটাই অনেক সুন্দর আর মনোরম করে সাজানো ,রুমের মধ্যে অল্প আলোর একটা লাইট জ্বালানো,
বেলকুনির দরজাটা খোলা সেখান দিয়ে চাঁদের আলো আর মৃদু বাতাস আসছে,চাঁদের আলো ,তীব্র ফুলের ঘ্রান ,
মৃদু বাতাস সব মিলিয়ে রুমটাকে যেন মায়াপুরী মনে হচ্ছে ,কিন্তু এই সৌন্দর্যগুলো আমার মন ছুঁতে পারলোনা।এতো সৌন্দর্যের মাঝেও যেন আমার মনটা বিষাক্ত হয়ে রইল,কোন কিছুই ভাল লাগছে না ,কাব্য ভাইয়াকে অসহ্য লাগছে ,তার সাথে তার এই রুমটাকে রুমের সব কিছুকে,
যা দেখছি তাতেই মনে হচ্ছে সব মিথ্যে সবকিছু মিথ্যের মায়াজাল।
জোর করে বিয়ে করে আবার ফুলসজ্জার খাট সাজানো হয়েছে ,
শখ তো মন্দ নয় ,ছ্যাচড়া ব্যাটা কোথার এত কিছু কখন কিভাবে করল কে জানে,ফুলসজ্জার খাটে আমি নতুন বৌয়ের মতো গুটিসুটি মেরে বসে রইলাম ,
আমার মনের মাঝে নেই কোন আনন্দ ,নেই কোন শিহরন আছে শুধু ভয় আর একরাশ তিক্ত অনুভুতি।এই মিথ্যুক লোকটাকে আমি কোনদিন স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না।
আমার মনে যার কোনো স্থান নেই তার সাথে আবার কিসের ফুলসজ্জা।
,
.
কাব্য ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার পাশে বসলেন,
আমি ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে রইলাম,
উনি খানিক্ষন আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন,
তারপর আমার একটা হাত উনার দু হাতের মাঝে নিলেন,
উনি আমার হাত ধরতেই আমার প্রচন্ড রাগ হলো আমি হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম,কিন্তু উনি ছাড়লেন না শক্ত করে ধরে রইলেন,
ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল আজ বুঝি আমার আর রক্ষা নেই ,উনি নিশ্চই জোর করে উনার অধিকার কাটাবেন আমার উপর,
কিন্তু এভাবে একজন মিথ্যুকের কাছে হার মেনে নেওয়া যায় না,
আমি একটু সাহস নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
আমার হাত ছাড়ো,এভাবে যখন তখন পারমিশন ছাড়া হাত ধরতে ,কোলে তুলে নিতে লজ্জা করে না তোমার।
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে তিক্ষ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
সেদিন তো খুব বলেছিলে কোন অধিকারে আমি তোমাকে স্পর্শ করি ,ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিলে ,সেদিন আমার কোনো অধিকার ছিলনা ,তাই আমি কিছু বলতে পারিনি,
কিন্তু আজ তোমাকে স্পর্শ করার সম্পূর্ন অধিকার আছে আমার।
তোমার সমস্ত কিছুর উপর আজ থেকে শুধু আমার অধিকার,
আমার বিয়ে করা বৌয়ের হাত আমি ধরবো, যখন ইচ্ছে হবে কোলে নিবো সেখানে আবার লজ্জা কিসের,বলেই উনি আমার হাতের উপর কিস করে বসলেন।
উনার কথা শুনে আমি জটকা মেরে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলাম,
কিসের আধিকার জোর করে বিয়ে করে অধিকার ফলানো হচ্ছে,তুমি একটা মিথ্যুক মিথ্যে বলে আমাকে ফাসিয়ে বিয়ে করেছো,
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া ধীর শান্ত গলায় বলে উঠলেন,
এ ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না সুহা,
উনার কথা শুনে আমার আরো বেশি রাগ লাগল,আমি আবার ঝাজালো গলায় বলে উঠলাম,
কেন আমার সাথে এমনটা করলে তুমি ,আমি কি ক্ষতি করছিলাম তোমার, যার জন্য এতো বড় শাস্তি দিলে আমায়,
কথাগুলো শুনে কাব্য ভাইয়া আমার আরো কাছে এসে আবার আমার হাত ধরে বলতে লাগলেন,
জানো সুহা আমি দেশে আসার কিছুদিন পর একদিন বিকেল বেলা আমি প্রচন্ড রেগে আমার এক্স গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম,আমার এতো রাগ হয়েছিল মেয়েটাকে সামনে পেলে খুন করে ফেলতাম,রাগে আমি ফোনটাকেই ছুঁড়ে ফেলে দিলাম,
ফোন ছুঁড়ে ফেলাম সাথে সাথে কারো মৃদু চিৎকার আমার কানে এলো,
উনি থেমে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে আমার পাশে এসে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন,
আমি অবাক হয়ে বিস্ময় দৃষ্টি নিয়ে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম,একটা মানুষের কত রূপ কখনও শান্তশীষ্ট একজন নরমান মানুষ ,কখনও রাগী ,জেদী ভয়ংকর মানুষ,আবার কখনও দূর্ত ,মিথ্যেবীদী অভিনেতা।
উনি আবার বলতে লাগলেন,আমি চিৎকার শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি একটা লাল পরি দু হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চোঁখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে,তাকে এক নজর দেখেই আমার সমস্ত রাগ হাওয়া মিশে গেল,অজানা এক অনভুতিতে আমার মন ভরে উঠল,পরিটা যখন আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে দৌড় দিল তখন তার পিঠে থাকা তিলটা দেখে আমার বুকের ভিতর কেমন করে উঠল,বারবার মনে হচ্ছিল এই তিলের সৌন্দর্য শুধু আমার,এ সৌন্দর্য দেখার অধিকার আর কারো নেই।
সেদিন সারা রাত আমি ঘুমাতে পারিনি শুধু চোঁখের সামনে পরিটার মুখ ভেসে উঠছিল,শুধু ইচ্ছে হচ্ছিল তার কাছে ছুঁটে যাই।এক মুহূর্তের জন্য ও তাকে ভুলতে পারছিলাম না,নিজের এমন কান্ডে আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, বিদেশে থাকতে অনেক মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল কিন্তু তাদের কারো জন্য আমার এমন হয় নি,তাদের কাউকে দেখে আমার মনে এমন অনুভুতি সৃষ্টি হয় নি,তারপর আমি বুঝতে পারলাম সেই সব মেয়েদের জন্য শুধু আমার ভালো লাগা বা মোহ কাজ করতো,কিন্ত এই পরিটাকে আমি ভালোবাসে ফেলেছি,বুঝতে পারার পর পরিটার সাথে কথা বলতে গেলাম,কিন্তু সে আমাকে দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল ,আমাকে দেখলেই সে প্রচন্ড ভয় পেতো ,তারপর ও অনেক চেষ্টা করলাম কথা বলার জন্য কিন্তু পরিটা অল্প সল্প কথা বলে নানা অযুহাতে আমাকে ইগনোর করতে লাগল,তার এই কাজ গুলো আমাকে ভীষনভাবে কষ্ট দিত,তাকে একটু দেখার জন্য ভার্সিটিতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতাম সেটা ও সে বুঝলো না,সেখানেও সে আমার থেকে পালিয়ে লুকিয়ে বেড়াতো লাগলো ,কথা বলার কোন সুযোগই দিত না,যা ও একদিন জোর করে নিয়ে গেলাম সব বলার জন্য কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই সে ভয়ে বাচ্চাদের মতো কেঁদেদিল,তার মাঝে একদিন শুনলাম পরিটার নাকি বিয়ের কথা চলছে ,যার দিকে কোনো ছেলে তাকালে আমি সহ্য করতে পারি না থাকে আমি অন্যকারো সাথে কি করে মেনে নিবো ,আর সেদিন অধিকার নিয়ে তার বলা কথা গুলো শুনে আমি আর নিজেকে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না ,আরো আমি জানতে পারলাম আমার রাগ আর অধিক মেয়ের সাথে আমার সম্পর্কে জন্য সে আমাকে পছন্দ করে না ,ভালবাসার কথা বললে সে আমাকে এতো সহজে মেনে নিবে না,ভীষন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাকে হারানোর তাই নাটকে করে, মিথ্যে বলে,জোর করে বিয়ে করে তাকে নিজের করে নিলাম,
তোমাকে আমি খুব ভালবাসি সুহা এই কথা গুলো বলার জন্যই বারবার আমি তোমার কাছে যেতাম।
তোমাকে হারালে আমার পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পরতো।আমার বেঁচে থাকার জন্য তোমাকে আমার প্রয়োজন ।তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য হয়তো আমি মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছি কিন্তু আমার ভালোবাসা মিথ্যে নয়।
আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমার মন জয় করতে পারবো ,তুমিও একদিন আমাকে ভালবাসবে।
কথাগুলো বলেই কাব্য ভাইয়া আমার পিঠের চুলগুলো সরিয়ে পিঠে মুখ গুঁজে দিলেন,একের পর এক কিস করতে লাগলেন এবং হাত দিয়ে আমার পেটের মাঝে স্লাইড করতে লাগলেন ,
সব শুনে কিছুক্ষন আমি মূর্তির মতো বসে রইলাম,উনার স্পর্শগুলো পেয়ে আমার সম্মতি ফিরল,আমি ধাক্কা দিয়ে উানাকে সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম,
মিথ্যে সব মিথ্যে ,আমি তোমার একটা কথাও বিশ্বাস করি না,তুমি একটা মিথ্যুক তোমাকে কখনই আমি ভালোবাসব না ,এই বিয়ে আমি মানি না,
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া মৃদু হেসে বলে উঠলেন,তোমাকে তো আমাকে ভালোবাসতেই হবে,
একদিন তুমি তোমার নিজের থেকেও বেশী ভালবাসবে আমাকে ,
আর বিয়ে মানো না তাই না বিয়ে কিভাবে মানাতে হয় সেটা আমার খুব ভালোভাবে জানা আছে,
বলেই উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নিলেন,উনার এমন আচমকা আক্রমণে আমি দিশেহারা হয়ে পরলাম,উনি যে হঠাৎ এমন কিছু করে বসবেন আমি ভাবতেই পারিনি। অনেকক্ষন পর আমার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে আমার
বুকের কাপড় সরিয়ে সেখানে মুখ ডুবিয়ে দিলেন,
আমি কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারছিলাম না,কোনো উপায় না পেয়ে
আমি কেঁদে বলে উঠলাম তুমি শুধু জোর করে আমার দেহটাই পাবে কিন্তু আমার মন তুমি কোন দিন পাবে না,এই দেহ পাবার জন্যই তো তুমি আমাকে বিয়ে করেছো,
আমার কথা শুনে উনি থেমে গেলেন মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষন তারপর উঠে বসলেন,
ছাড়া পেতেই আমি উঠে বসে শাড়ী নিজের সমস্ত গায়ে জরিয়ে নিয়ে কাঁদতে লাগলাম,উনি কিছুক্ষন মাথা নিচু করে বসে রইলেন তারপর খাট থেকে নেমে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন ,আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কল্পনাও করোও না।
না হলে সব কিছু আমি ধ্বংস করে দিব।তুমি শুধু আমার ,শুধুই আমার।বলেই উনি রেগে মেগে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন,
আমি একা একা বসে কাঁদতে লাগলাম,কি করে একজন ভয়ংকর রাগী লোকের সাথে জীবন কাটাবো,
কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম জানি না।
সকালে ঘুম থেকে উঠে তাকিয়ে আমার চোঁখ ছানাবড়া গেল।
(চলবে )
#প্রিয়_অভিমান
পার্ট : ১২
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
.
ঘুম থেকে উঠে আমার চোঁখ ছানাবড়া হয়ে গেল
আমি এক ভয়ংকর চিৎকার করে দড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম,
আমার চিৎকার শুনে কাব্য ভাইয়া দৌড়ে এলেন উনার চোঁখে মুখে ঘুমের আভাস ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলেন কি হয়েছে,
শান্তি মতো ঘুমাতে ও দিবে না না কি ,এমনিতেই সারা রাত ঘুমাই নি,তুমি কি চিৎকার করা ছাড়া আর কিছুই জানো না,
উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে, আমি বিস্মিত হয়ে চোঁখ গোল গোল করে তাকিয়ে বললাম,
রাতে আমার স্পস্ট মনে আছে আমি বিছানাতে ঘুমিয়েছি,তাহলে আমি বেলকুনির সোফায় এলাম কি করে,
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া হামি তুলতে তুলতে নির্নিপ্ত ভাবে বলে উঠলেন,
আমি তোমাকে এখানে রেখে গেছি ,
উনার কথা শুনে আমি বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলাম,অবাক হয়ে বলে উঠলাম,
তুমি আমাকে এখানে রেখে গেছো ,কিন্তু কেন??
উনি দ্বিধাহীন ভাবে বলে উঠলেন,
তুমি আমাকে স্বামী হিসেবে মানো না কিন্তু আমি তো তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মানি একি বিছানায় থাকলে বলা তো যায় না কখন কি করে বসি ,আমি তো আর মহা পুরুষ নই রক্তে মাংসে গড়া সাধারন একজন মানুষ,
যদি নিজেকে কন্ট্রোল না করতে পারি ,তাই তোমাকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে গেলাম,
উনার কথাগুলো শুনে আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম কপাল কুচকে কিছুক্ষন উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
কি লুইচ্চা ব্যাটা নিজে কন্ট্রোল থাকতে পারবে না তারজন্য আমাকে বাইরে রেখে গেছে ,এখন থেকে যদি কোনো ভুত টুত আমাকে নিয়ে যেত তাহলে কি হতো,এতই যখন কন্ট্রোলের অভাব নিজেই এখানে ঘুমালে পারতো,
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাব্য ভাইয়া আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বলে উঠলেন,
আমাকে কি খুব বেশি সুন্দর লাগছে সুহা রানী এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে না কি ,এবার কিন্তু আমার খুব লজ্জা লাগছে বলেই উনি লজ্জা পাওয়ার ভান ধরলেন,
উনার কথাগুলো শুনে আমার ভীষন রাগ লাগল
আমি চোঁখ পাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলাম
তুমি কোন সাহসে আমায় এখানে রেখে গেলে ,তোমার যখন প্রবলেম তুমি এখানে ঘুমালে না কেন,তা না করে নিজে আরাম করে বিছানায় ঘুমিয়েছো সেলফিস কোথাকার।
যদি আমায় কোন ভুত বা অন্যকিছু এসে নিয়ে যেত ,তুমি কি জানো ছোট বেলা থেকে আমি ভীষন ভুতে ভয় পাই ,
সারা রাত আমি এখানে একা ছিলাম মনে হলেই আমার সারা গায়ে কাটা দিচ্ছে বলেই সুহা বাচ্চাদের মতো ভয় ভয় মুখ বানিয়ে বসে রইল,
সুহাকে এভাবে বাচ্চাদের মতো ভয় পেতে দেখে কাব্য ভীষন মজা পেল ,কাব্য ইচ্ছে করে সুহাকে এখানে রেখে গেছে সকালে সুহার এমন রিয়েকশন দেখার জন্য,কাব্য মৃদু হেসে মনে মনে বলল,
ভুত বলতে সত্যি কিছু আছে কি না আমি জানি না,
কিন্তু ভুত বা অন্যকোন কিছু তোমাকে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা কোন কিছু তোমার কাছেই আসতে পারবে না,
তোমার কাছে আসতে হলে তাদের আগে আমাকে ফেইস করতে হবে
,তুমি তো জানো না সুহা পাখি আমি সারা রাত বসে তোমায় পাহারা দিয়েছি,
একটুর জন্যও ঘুমাই নি,আমার যে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল চাঁদের আলোয় তোমার চাঁদ মুখটা দেখার ,
তাই তো তোমাকে এখানে নিয়ে এসে মন ভরে তোমায় দেখেছি,চাঁদের আলোয় তোমার মুখটা কতখানি মায়াবি আর স্নিগ্ধ লাগছিল তোমায় বলে বুঝাতে পারবো না,তুমি এতোটা সুন্দর কেন হলে সুহা ,তোমাকে নিয়ে সবসময় আমার ভয় হয়,যদি কারো নজর লেগে যায় তোমার উপর।তোমাকে এতো কাছে পেয়ে তোমার কাছ থেকে দূরে থাকা সত্যি আমার জন্য কষ্টকর,জানি না কত দিন নিজেকে সামলাতে পারবো,এই তুমি কবে বুঝবে আমার ভালবাসা।
কাব্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুহার দিকে এগিয়ে গেল,
সুহা তখনও মুখ গুমরা করে বসে আছে ,কাব্য গিয়ে সুহাকে কোলে তুলে নিল ,
কাব্যের এমন কান্ডে সুহা চাপা চিৎকার দিয়ে বলতে লাগল ,
-তুমি আমায় কোলে নিলে কেন ?নামাও বলছি আমাকে,
-রাতে আমার পাশে থাকতে দেই নি বলে আমার বৌয়টার খুব রাগ হয়েছে ,ভয় ও পেয়েছে এখন আদর দিয়ে সবটা পুষিয়ে দেবো,
-একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবে না ,আমার বয়েই গেছে তোমার পাশে থাকতে,নামাও বলছি ,বলা নেই কওয়া নেই হুটহাট এভাবে একদম আমায় কোলে নিবে না,
আমার কথা শুনে উনি ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
-একশো বার নিব ,হাজার বার নিবো ,তোমার কি ?আমার বৌকে আমি যখন খুশি তখন কোলে নিবো তাতে তোমার কি প্রবলেম ,
কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম,এ কেমন কথা!!!
আমি কাব্য ভাইয়ার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলাম এই মানুষটা দেখতে অসাধারন সুন্দর কিন্তু স্বভাব চরিএ খুব বাজে,
উনি আমাকে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলেন ,আমি উঠে যেতে চাইলাম কিন্তু উনি আমাকে দু হাত দিয়ে বিছানায় চেপে ধরে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে ,উনার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার ও কেমন ঘোর লেগে গেল,আমি এক দৃষ্টিতে উনার চোঁখের দিকে তাকিয়ে রইলাম,কি হচ্ছে না হচ্ছে আমার কোন খেয়াল রইল না ,
হঠাৎ নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় আমার ঘোর ভাংলো ,কি হচ্ছে বুঝতে পেরে আমি উনাকে হাত দিয়ে ধাক্কাতে লাগলাম ,আমাকে ছাড়ার জন্য,
কিন্ত উানার কোনো হেলদোল নেই উনি নিজের কাজেই মগ্ন রইলেন,উনার মতো বলিষ্ঠবান পুরুষের শক্তির সাথে আমি কিছুতেই পেরে উঠলাম না,আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল,কোনো উপায় না পেয়ে আমি বাজ্জাতটার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দিলাম,কামড় দেওয়ার সাথে সাথে উনি আমাকে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে হাতের উল্টপিট দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলে উঠলেন,
গুড মর্নিং কিস দিয়ে দিলাম আর রাগ করে থেকো না সুহা রানী আমার,আর হে লাভ বাইটা কিন্তু সেই ছিল,
বলেই চোঁখ মেরে ওয়াশ রুমে চলে গেলেন,
রাগে আমার মন চাইছিল উনার মাথার চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলি,
কি পেয়েছেটা কি অসভ্য লোকটা, যখন মন চাইছে কোলে নিচ্ছে,যখন মন চাইছে চুমু খাচ্ছে ,উনার এই চুমাচুমির কারনে আমার লাইফটা হেল হয়ে যাচ্ছে,
উফ!!অসহ্যকর,
.
,
নিচে নামতেই আপুর সাথে দেখা হলো আপু হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে এসে স্নেহাকে আমার কোলে দিয়ে গেলেন,
আমি ওকে নিয়ে সোফায় বসে খেলা করতে লাগলাম,
কিছুক্ষন পর কাব্য ভাইয়া এসে আমার পাশে বসলেন,
আমি উনার দিকে না তাকিয়ে স্নেহার সাথে কথা বলতে লাগলাম,আমার কথা শুনে মেয়েটা খিলখিল করে হাসতে লাগল,
ওর হাসি দেখলে মনটা ভরে উঠে ,আমি খুব ইনজয় করি ওর আদো আদো বলা কথা আর হাসি,
উনি মৃদু কাশি দিলেন আমার এটেনশন পাওয়ার জন্য কিন্তু আমি কোনো পাত্তাই দিলাম না স্নেহার সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে রইলাম,এমন একটা ভাব করছি যেন আমি আর স্নেহা ছাড়া এখানে আর কেউ নেই,
আমার কাছে পাত্তা না পেয়ে কাব্য ভাইয়া উনার মাথার চুল গুলো ঝাড়া দিয়ে উঠলেন উনার চুল গুলোতে থাকা পানি গুলো আমার চোঁখে মুখে এসে পরল,
আমি বিরক্তি নিয়ে তাকালাম উানার দিকে,আমি তাকাতেই উনি দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিলেন,
উনার ঠোঁট হালকা ফুলে আছে দেখে আমার একটু কেমন যেন লাগল ,আমি চোঁখ সরিয়ে নিলাম,
উনি আমার আরো কাছে এসে বসে বলতে লাগলেন,
এই ফুলা ঠোঁট নিয়ে আমি মা আর ভাবীর সামনে কিভাবে যাবো বলতো,তারা দেখলে কি ভাববে,ভাববে তোমার আর আমার মাঝে হেব্বি রোমান্স চলছে,ইশ!
কি লজ্জা জনক ব্যাপার স্যাপার,
উনার কথা শুনে আমি রাগি চোঁখে উনার দিকে তাকালাম,
আমার তাকানো দেখে উনি আবার হেসে উঠলেন,
স্নেহার আমার কাছ থেকে নিয়ে উনার কোলে বসিয়ে এক হাত পিছনে নিয়ে আমার কোমড় জরিয়ে ধরে আমার কাঁধে মাথা রাখলেন,
আমি উঠে যেতে চাইলে উনি বলে উঠলেন,
প্লিজ সুহা একটু বসো ,
উনার বলা কথা কেমন অন্যরকম শুনালো কথাটা উপেক্ষা করে আমি উঠে যেতে পারলাম না,বসে রইলাম স্থিরভাবে,
উনি আবার বললেন,সুহা আমার খুব ইচ্ছে আমাদের একটা ছোট্ট প্রিনসেস হবে,সেই প্রিনসেসটা আমাকে আদো বুলিতে পাপ্পা আর আমার সুহা রানীকে মা বলে ডাকবে, তুমি আমি আর আমাদের ছোট্ট প্রিনসেস নিয়ে আমাদের একটা হ্যাপি ফ্যামেলি হবে যেখানে থাকবে শুধু ভালবাসা আর ভালবাসা,
আমার সাধ্যের ভিতরে থাকা সব কিছু দিয়ে আমি তাদের খুশি রাখতে চেষ্টা করবো,আমাদের একটা ছোট্ট প্রিনসেস হবে তো সুহা,
উনার বলা কথাগুলো শুনে আমার ভেতর অদ্ভুত এক অনুভুতির সৃষ্টি হলো,বুকের ভেতর কেমন করতে লাগল ,জানি না কেন ভীষন কান্না পেল,আমি আর বসে থাকতে পারলাম না উঠে চলে এলাম,
রুমে চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু সামনে আন্টিকে দেখে থেমে গেলাম,
আমাকে দেখে আন্টি গম্ভির কন্ঠে বলে উঠলেন,
সুহা আমার সাথে একটু আমার রুমে এসে তো তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে,
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে উনার সাথে যেতে লাগলাম ,
আন্টি হঠাৎ আমাকে কি বলতে চান কিছুই বুঝতে পারলাম না,অজানা কৌতুহল নিয়ে উনার সঙ্গে হাঁটতে লাগলাম ।
(চলবে )