প্রিয়_অভিমান পার্ট : ১৫,১৬

0
1389

#প্রিয়_অভিমান
পার্ট : ১৫,১৬
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
পার্ট : ১৫
.
কাব্য ভাইয়া রুমে এসে ঠাস করে দরজা বন্ধ করলেন,
দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনে আমার প্রান পাখি উরে যায় যায় অবস্তা,এই রাক্ষসটা এভাবে ক্ষেপে আছে কেন কে জানে,নিলয়ের আমাকে জরিয়ে ধরা কি উনি স্বাভাবিক ভাবে নেন নি,
এতে এত রেগে যাওয়ার কি হল,বন্ধু হিসেবে ও আমাকে জরিয়ে ধরেছে এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়,সব সময় শুধু রাগ দেখানো এটা মেনে নেওয়া যায় না,
উনি তখন ও আমাকে কোলে নিয়ে গম্ভীর মুখে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছেন,উনার এভাবে হুটহাট যার তার সামনে আমাকে কোলে নেওয়াটা আমার খুব বিরক্তিকর লাগে,
উনি যে পরিমান রেগে আছেন ভয়ে উনার দিকে তাকাতে পারছিলাম না,
আমি উনার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে দিকে তাকিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলাম ,এটা কোন ধরনের ফাজলামো ,আর কত বার বলবো এভাবে যখন তখন যার তার সামনে আমাকে কোলে নিবে না ,নিজের লজ্জা সরম নেই বলে কি মনে কর অন্যের ও নেই ,
হুট করে কোলে নিয়ে চলে এলে ওরা কি ভাবছে কে জানে,
উনি চোঁখ মুখ শক্ত করে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন,কে কি ভাবছে তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না,আই ডোন্ট কেয়ার,,
উনার চিৎকার শুনে আমি কেঁপে উঠলাম,
এত মায়াবী চেহারার ছেলেটা সব সময় এত হাইপার থাকে কেন কে জানে ,অল্প কিছুতেই ভয়ংকর রেগে যায় ,এর রাগের পরিমাণটা একটু কম হলে কি এমন ক্ষতি হতো ,সবই আমার কপাল ,আমি রাগী মানুষ ভয় পাই আর শেষে কি না আমার কপালে এমন বদরাগী জল্লাদ বর জুটলো,
‘উনার রাগ দেখে আমার রাগ দমে গেল আমি মিনমিনিয়ে বলে উঠলাম,এবার তো আমাকে কোল থেকে নামাও ,না কি সারাদিন এভাবে কোলে নিয়েই দাঁড়িয়ে থাকবে ,
কাব্য সুহার কথার কোনো জবাব না দিয়ে হাঁটতে লাগল,কাব্যকে এভাবে হাঁটতে দেখে সুহা চাপা চিৎকার দিয়ে বলতে লাগল,কি করছো টা কি রুমের ভিতর কোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করেছো নামাও আমাকে,আমি কি বাচ্চা না যে হাঁটতে পারি না তাই কোলে নিয়ে হাঁটছো,
কাব্য সুহার কথায় কোনো পাত্তা দিল না,নির্লিপ্তভাবে হাঁটতে লাগল ,তারপর
ও সুহাকে নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে নামিয়ে দিল,কাব্যের চোঁখ মুখ থেকে রাগ
ঠিকরে পরছে ,ও হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রাগী দৃষ্টিতে সুহার দিকে তাকিয়ে রইল,
কাব্যের চাহনি দেখে আর হুট করে এখানে নিয়ে আসায় সুহা ঘাবরে গেল,ও গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে ভীতু চাহনিতে তাকিয়ে কাব্যের দিকে ভাবতে লাগল ,
আমাকে এখানে নিয়ে এলো কেন,কি করতে চাইছে টা কি ,কোনো বাজে মতলবে নিয়ে আসে নি তো ,আর এভাবে এতো এংরি লুক দিচ্ছে কেন,যেন মনে হচ্ছে এক্ষুনি গিলে খাবে আমাকে,আমি ভয়ে ভয়ে ঢুক গিলে বলে উঠলাম,আমাকে এখানে নিয়ে আসলে কেন??আমার কাজ আছে আমি যাচ্ছি তোমার দরকার হলে তুমি সারাদিন এখানে বসে থাকো আমার কোনো সমস্যা নেই,বলেই আমি বেরিয়ে আসতে চাইলাম তখনই উনি আমার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে একদম উনার কাছে নিয়ে গেলেন,আমি উনার কাছে যেতেই উনি শাওয়ারটা ছেড়ে দিলেন,হঠাৎ উনার এমন কান্ডে আমি থতমত খেয়ে গিয়ে দু পা পিছিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলাম ,শাওয়ারের নিচে পানিতে উনার সাথে সাথে আমি ও ভিজে একাকার হতে লাগলাম ,উনি তখন ও রাগী মুখ বানিয়ে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন,আমি উনার দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোঁখে বিস্ময় নিয়ে তাকালাম,সাথে সাথে উনি আমার শাড়ীর আচঁলটা টান মেরে ফেলে দিলেন,আমি আতংকে উঠে উনার দিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত শাড়ী
ঠিক করতে চাইলাম কিন্তু উনি আমার হাত শক্ত করে ধরে ফেললেন,আমি উনার এমন কাজে আমি লজ্জায় ভয়ে কুকড়ে গিয়ে বলে উঠলাম ,কি করছো কি তুমি পাগল হয়ে গেছো না কি,ছাড়ো আমার হাত,
আমার কথা শুনে উনি আমাকে নিজের আরো কাছে নিয়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলেন ,
নিলয়ের এতো বড় সাহস হলো কি করে আমার সামনে তোমাকে জরিয়ে ধরে,যার দিকে অন্য কোনো পুরুষ তাকালে আমার সহ্য হয় না সেখানে আমার সামনে ও তোমাকে জরিয়ে ধরল,এটা আমি কি করে সহ্য করবো,ও যদি আমার ভাই না হয়ে অন্য কেউ হতো তাহলে আজ ওখানেই ওকে পুতে ফেলতাম,আমি ছাড়া তোমার শরীরে অন্য কোনো পুরুষের স্পর্শ থাকবে না ,তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার শুধু আমার,আর কারো নেই।উনার এমন ভাবে জরিয়ে ধরায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল ,আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগলাম ,কিন্তু উনি কিছুতেই ছাড়ছেনা শক্ত করে জরিয়ে ধরে উন্মাদের মতো কথা বলতেই থাকলেন,
আমি নিরুউপায় হয়ে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলাম,এমন করছো কেন তুমি ছাড়ো আমাকে ,লাগছে আমার,
কিন্তু উনি আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বলতে লাগলেন,নিলয়ের এই স্পর্শ আমি কিছুতেই তোমার শরীরে থাকতে দেবো না,এই পানি আর আমার ভালেবাসার স্পর্শগুলো দিয়ে আমি নিলয়ের স্পর্শ তোমার শরীর থেকে মুছে দেবো ,
বলেই উনি আমার সারা শরীরে একের পর এক কিস করতে লাগলেন,আর উনার হাত ও এলোমেলো ভাবে আমার সমস্ত শরীরে বয়ে বেড়াতে লাগল,উনার এমন স্পর্শে আমার নি:শ্বাস আটকে আসতে লাগল,
কিন্তু নিজেকে উনার কাছ থেকে কিছুতেই ছাড়াতে পারছি না ,উনার শক্তির সাথে কিছুতেই আমি পেরে উঠছিলাম না,অনেকক্ষন পর উনি থেমে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আমার কপালের সাথে কাপাল ঠেকেয়ে রইলেন,উনার চোঁখ মুখ প্রচন্ড অশান্ত জোরে জোরে নি:শ্বাস ছাড়ছেন ,এমন একটা পরিস্তিতিতে পরে আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না,উনার দিকে তাকাতে ও পারছিলাম না লজ্জায় ভয়ে,আমি চোখ বন্ধ করে এক হাত দিয়ে শাড়ীর আঁচল কামছে ধরে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলাম,আমার সমস্ত শরীর মৃদু কাঁপছে কিন্তু কিসের জন্য কাঁপছে বুঝতে পারলাম না ,ভয়ের জন্য না কি ঠান্ডা লেগে ,না কি উনার এমন গভীর স্পর্শে শিহরিত হয়ে,হঠাৎ অনুভব করলাম পানি পড়ার শব্দ শুনা যাচ্ছে না গায়েও পানি পারছেনা আমার সম্মতি ফিরল ,উনার কোনো স্পর্শ ও পাচ্ছিনা,উনি কি চলে গেছেন ,উনি চলে গেছেন ভেবে আমি স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম,ধীরে ধীরে চোঁখ খুললাম,উনি আছেন কি না দেখার জন্য ,তাকিয়ে আমি ভরকে গেলাম উনি দু হাত আমার দু দিকে দেয়ালের উপর রেখে আমার সামনে স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন ,উনার চোঁখ নাক লাল হয়ে আছে চুল থেকে পানি জরছে সারা শরীর পানিতে ভিজে একাকার,চোঁখের দৃষ্টি কেমন তীক্ষ্ণ আর ভয়ংকর,উনাকে এই ভাবে দাঁড়িয়ে তাকতে দেখে আমার মাথা ভন ভন করতে লাগল ,আজ কি এই অসভ্য লোকের হাত থেকে আমার রক্ষা নেই ,সব দোষ এই নিলয়ের বাচ্চার ,এই গাধা ছেলের গাধামীর জন্য আমার এই অবস্তা,আমি বেশীক্ষণ উনার তীক্ষ্ণ দিকে তাকিয়ে তাকতে পারলাম না,চোঁখ নামিয়ে নিয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম,তখনই উনি ভয়ংকর রাগী কন্ঠে বলে উঠলেন,
কলেজে থাকতে নিলয়ের সাথে তোমার কেমন সম্পর্ক ছিল,তোমাদের মাঝে কি এতই গভীর রিলেশন ছিল যে সে তোমাকে দেখা মাএ জরিয়ে ধরল,
কলেজে থাকার সময়ও কি ও তোমাকে এভাবে জরিয়ে ধরতো,
আচমকা উনার মুখে এমন প্রশ্ন শুনে আমি বিব্রত হয়ে গেলাম,এটা কোন ধরনের প্রশ্ন ,আমি তো আগেই বলেছি ও আমার একজন ভালো বন্ধু তারপর ও উনি এসব কি জিজ্ঞেস করছেন,
আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে চুপ করে গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম,
উনি আবার একটা ভয়ংকর চিৎকার করে বলে উঠলেন,
কি হল কথা বলছো না কেন, স্পিক আউট ডেম ইট!!
উনার চিৎকার শুনে ভয়ে আমি ফুফিয়ে কেঁদে উঠলাম,
আমাকে কাঁদতে দেখে উনি আবার চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলেন,
কান্না থামাও আর আমি যা জিজ্ঞেস করছি সেটার উওর দাও ,,,এমনি তেই মাথা গরম আছে আর আমার মাথা গরম করিও না প্লিজ,,
উনার কথা শুনে ভয়ে আমি ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে বলে উঠলাম,ও শুধু আমার বন্ধু এ ছাড়া ওর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই ,কলেজে থাকতে আমাকে জরিয়ে ধরা তো দূরের কথা আমার হাতও কখনও ধরতে দেই নি,আমি জানি না ও কেন আমাকে এই ভাবে জরিয়ে ধরল,হয়তো এত দিন পর দেখা হয়েছে সেই এক্সসাইটমেন্ট থেকে ধরে ফেলেছে,
বলেই আমি কাঁদতে লাগলাম,
উনার কোনো সাড়া শব্দ পেয়ে আমি তাকালাম উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি কেমন নেশা লাগা চোঁখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন,উনি ধীরে ধীরে এক হাত দেয়াল থেকে নামিয়ে আমার পেটের মাঝে রাখলেন,আমি উনার হাতের মাঝ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলাম ,উনি অন্য হাত দিয়ে আমাকে চেপে ধরে আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে নিলেন,আমার চোঁখ দিয়ে অজোরে জল ঝরছে,আমি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছি,জোরাজুরি করে যে কোনো লাভ হবে না সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না,তারই নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করলাম না,
উনি আমার ঠোঁটে একটা গভীর কিস করে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে লাগলেন ,যাওয়ার পথে হঠাৎ দাড়িয়ে বলে উঠলেন,
এমন ঘটনা যেন দ্বিতীয়বার আমার সামনে না ঘটে,তোমার বন্ধুগুলো যদি আমার হাতে মরতে না দেখতে চাও তাহলে যেখানে যেখানে তোমার যে বন্ধুগুলো রয়েছে তাদের সবাইকে সতর্ক করে দিও বলেই উনি চলে গেলেন,আর আমি অস্রুজরিত নয়নে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

(চলবে)

#প্রিয়_অভিমান

পার্ট : ১৬

লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
.
.
নিলয় রুমে এসে কিছুক্ষন অস্তিরভাবে পায়চারি করল,তারপর খাটে বসে দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে মাথা নিচু করে বসে রইল,চোঁখের সামনে শুধু ভাসছে কাব্যের সুহাকে কোলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আর কানে বার বার প্রতিধ্বনী হচ্ছে ওর বলা কথাগুলো,বুকের ভিতর দুমরে মুচরে শেষ হয়ে যাচ্ছে,
সুহার বিয়ে হয়ে গেছে এই সত্যিটা এখনও তার কাছে অবিশ্বাসও লাগছে,নিজের এত দিনের ভালবাসা এখন অন্য একজনের বৌ ,যার জন্য এখানে আসা সেই অন্যের হয়ে গেছে,নিলয় একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজের মনে মনে বলতে লাগল,সুহা সেই কলেজে থাকাকালীন থেকে আমি তোমাকে ভালবাসি ,তুমি তো বলেছিলে প্রেম ভালবাসা করে কখনও বিয়ে করবে না,তার জন্যই তো তোমাকে হারানোর ভয়ে ভালবাসার কথা বলিনি ,সব শুনে যদি তুমি রাগ করও আমার সাথে আর কখনও কথা না বলো ,তোমার কাছাকাছি থাকার জন্য ভালবেসেও শুধুমাএ একজন বন্ধু হয়ে তোমার পাশে থেকেছি,মনের কথা কোনদিন প্রকাশ করিনি ,ভেবেছিলাম লেখা পড়া শেষ করে দেশে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে একে বারে বৌ করে তোমায় নিয়ে যাবো,এই আশাতে এতগুলো বছর আমি কাটিয়েছি,
তুমি তো জানোই না বিদেশে বসেও তোমার প্রতিটা পদক্ষেপের খবর রেখেছি,যাদের দিয়ে আমি তোমার উপর নজর রেখেছিলাম ওরা যখন জানালো দুই দিন ধরে তোমার কোনো খরব পাচ্ছে না এটা শুনে আমার মাথা একদম কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল,তাই তো কোনকিছু না ভেবেই আমি দেশে ফিরে এসেছি শুধু মাএ তোমার জন্য।কিন্তু দেশে এসে এমন কিছু দেখবো সেটা আমি কল্পনাও করি নি,তুমি তো বলেছিলে বিয়ের আগে প্রেম করবে না সেই তুমিই কিনা অন্য কাউকে ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করে ফেললে,আর সেটাও আমার আপন ফুফাতো ভাইকে,তাহলে আমায় কেন বললে তুমি বিয়ের আগে কাউকে ভালবাসবে না,তুমি মিথ্যেবাদী সুহা অনেক বড় মিথ্যেবাদী।
আমি কিছুতেই তোমাকে কাব্য ভাই এর পাশে মেনে নিতে পারছি না,আমার এত বছরের ভালবাসা আমি কি করে ভুলে যাবো,তোমায় আমি খুব ভালবাসি সুহা খুব ভালবাসি।তুমি অন্যকারো স্ত্রী সেটা ভাবতে আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে,আমি কিছুতেই এই সত্যিটা মানতে পারছি না,নিলয় দু হাত মুখ থেকে সরিয়ে নিজের মাথার চুল গুলো পাগলের মতো টানতে লাগল ,চুলগুলো টেনে ধরে বলতে লাগল,
এখন আমি বাঁচব কি নিয়ে ,কি করে আমি তোমাকে ভুলে যাবো কি করে,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে সুহা খুব কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে নিজেকে শেষ করে ফেলি,কথাগুলো বলেই দাঁড়িয়ে দেয়ালে ঘুষি মারতে
লাগল।
.
দুপুর হয়ে গেছে কাব্য সেই যে বেরিয়ে গিয়েছিল এখনও আর রুমে আসে নি,
ওয়াশ রুম থেকে কাব্য বেরিয়ে যাওয়ার পর সুহা অনেকক্ষন সেখানে বসে কান্না করে,তারপর কাপড় চেন্জ করে রুমে এসে বসে রইল,কাব্যের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ,ওর এটা ভেবেই কষ্ট হচ্ছে নিলয় ওকে জরিয়ে ধরেছে সেখানে ওর কোনো দোষ ছিল না,হুট করে কেউ এসে জরিয়ে ধরলে তার কি করার আছে,ও তো কাউকে জরিয়ে ধরে নি,ও নিজের মনে মনে বলতে লাগল ,
আমি তো কোনো দোষ করিনি উনি শুধু শুধু আমার উপর রাগ দেখিয়ে আমাকে শাস্তি দিলো ,আমার সাথে এমন বাজে আচরন করলো ,দোষ করল নিলয়ের বাচ্চা আর শাস্তি পেলাম আমি,নিজের ভাই বলে ওকে কিচ্ছু না বলে ক্ষমা করে দিল,স্বার্থপর ছেলে কোথাকার নিজের ভাই জরিয়ে ধরছে ওকে কিছু বলল না আর আমার ফ্রেন্ডরা কিছু করলে ওদের খুন করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে,উনি খুব বাজে খুব খারাপ একজন মানুষ,উনার সাথে আমি আর কোনে কথাই বলবো না।
সুহা রুমে বসে রাগে ফোঁস ফোঁস করেছে আর নিজের মনে কথা বলছে,আবার ভীতু চোঁখে বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে যদি কাব্য চলে আসে সেই ভয়ে,
দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেছে ও রুম থেকে বের হলো ,সুহা ভেবেছিল কাব্য নিচে আছে কিন্তু নিচে এসেও ওকে পেল না,ভাবল হয়তো নিলয়ের সাথে আছে,এটা ভেবে কাব্যকে মনে মনে একটা ভয়াবহ গালি দিল,যার জন্য রেগে আগুন হয়ে আমার সাথে এমনটা করল,তার সাথে ঠিকি গিয়ে ভাব জমাচ্ছে,আমার সাথে খারাপ আচরন করার বাহানা খুঁজে শুধু ,কাব্যকে গালি দিতে দিতে ডাইনিং টেবিলে গেল,গিয়ে দেখল ওর শাশুড়ী ,বোন সবাই বসে আছে ও দেখে ওর শাশুড়ী বলে উঠলেন,
দাঁড়িয়ে আছো কেন মা বসো ,আমরা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি ,
উনার কথায় ও মৃদু হেসে চেয়ারে বসে পরল,কিছুক্ষন পর নিলয় ও চলে আসলো,নিলয় আসার পরও কাব্য আসছে না দেখে সুহার কপাল সামান্য কুচকে গেল,ও ভাবতে লাগল,এই রাক্ষসটার আবার কি হল সবাই খাওয়া শুরু করে ফেলেছে এখন ও আসছে না,আমাকে জ্বালানোর জন্য তো সবার আগে এসে বসে থাকে ,উনি কি বাসায় নেই তখন কি রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন,কথাগুলো ভেবেই আমি অস্বস্তিতে পরে গেলাম,এখন যদি উনারা কেউ জিজ্ঞেস করেন উনি কোথায় তাহলে আমি কি বলবো,
আমি তো জানি না উনি কোথায়,উনি বাসায় আছেন কি বাইরে আছেন সেটাই তো আমি সঠিক মতো জানি না,এরি মাঝে আপু বলে উঠলেন , সুহা ভাইয়া কোথায় তুই একা খেতে চলি এলি ভাইয়াকে বলে আসিস নি,
আপুর কথায় আমি বিব্রত হয়ে পরলাম ,কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না,
তখনই আন্টি বলে উঠলেন,
কাব্য একটু বাইরে গেছে ,কি যেন একটা দরকারে আমাকে বলে গেছে ওর আসতে লেট হবে,
আন্টির কথায় স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে খেতে শুরু করলাম,যাক বাঁচা গেল ,আপদটা তাহলে সত্যি বাসায় নেই অনেকক্ষন শান্তি মত থাকতে পারবো,
খেতে খেতে একটা বিষয় খেয়াল করলাম,
নিলয়কে কেমন গম্ভীর লাগছে ,কোনো কথা বলছে না চুপচাপ খাচ্ছে ,দুয়েক বার আড় চোঁখে আমার দিকে তাকিয়েছে কিন্তু আমি তাকালেই চোঁখ সরিয়ে নিচ্ছে,
আসার পর তো কত খুশী ছিল হঠাৎ কি হল,কাব্য শয়তানটা কি একেও কিছু শুনিয়ে দিয়েছে,হতেও পারে না হলে একে এমন বিমর্ষ লাগছে কেন,
কার পাল্লায় যে আমি পরলাম,আমার লাইফটাকে একদম হেল করে দিচ্ছে।কেন যে এর সাথে আমার দেখা হলো আফসোস করতে করতে খাওয়া শেষ করলাম।
.

সারা দিন খুব ভালো কাটলো ,অনেক শান্তি শান্তি কোন ভয় নেই প্যারা নেই একদম নিজের মতো ,আপু সাথে মুভি দেখলাম,আন্টির সাথে গল্প করলাম,
সারা সন্ধ্যা স্নেহাকে নিয়ে কাটালাম,রাত হতেই আবার ভয় হতে লাগল,এখন তো যে কোনো সময় উনি চলে আসবেন,
রাতের খাবার সাজাচ্ছি হঠাৎ মনে হলো পিছনে আমার পিঠে হাত দিয়ে কেউ কিছু বলে উঠল,রাক্ষসটা মনে হয় এসেছে গেছে এসেই শুরু করে দিয়েছে,আমি রাগ নিয়ে পিছনে তাকালাম,তাকিয়ে আমি অবাক পিছনে কেউ নেই,তাহলে কি আমি ভুল শুনলাম,আমার অবচেতন মন উনার কথা ভাবছে বলেই কি এমনটা হলো,
বিষয়টাকে পাত্তা না দিয়ে আমি কাজে মন দিলাম,
.
রাতে খাবার সময় ও উনি এলেন না এবার আমার একটু চিন্তা হলো রাগ করে কি সন্যাসী হয়ে গেলেন মা কি ,বাড়ী ঘর ছেড়ে একদম বাইরে গিয়ে বসে আছেন,
ভালোই হলো আমি বেঁচে গেলাম,উনি সন্যাসী হয়ে গেছেন ভেবে মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করলাম,
খাওয়া শেষ করে রুমে যাচ্ছি এমন সময় নিলয় এসে পথ আগলে দাঁড়ালো ,ও সামনে আসতেই আমি ব্রু কুচকে ওর দিকে তাকালাম,
ও গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,আমাকে কেন মিথ্যে বলেছিলে তুই,তুই তো বলেছিলে প্রেম ভালবাসা করে কখনও বিয়ে করবি না তাহলে এমনটা কেন করলি,
ওর হঠাৎ এমন প্রশ্নে আমি থতমত খেয়ে গেলাম,
কি থেকে কি বলবো আমি তো ওকে সত্যি বলেছিলাম,আমি যে পরিস্তিতির স্বীকার সেটা কি করে বলবো ওকে।আমি ওর প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বলে উঠালাম,
অনেক রাত হয়ে আমার খুব ঘুম পাচ্ছে তোর সাথে পরে কথা বলবো বলেই আমি ওকে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম,
.
রুমে ঢুকে আমি অবাক হয়ে গেলাম ,আমি তো লাইট অন করে গিয়ে ছিলাম,তাহলে অফ করল কে রুম এতো অন্ধকার হয়ে আছে কেন??এমনিতেই ভয় পাচ্ছি বিকেলে আপুর সাথে বসে হরর ফিল্ম দেখে,
এখন এই অন্ধকারে আমি একা একা থাকবো কি করে ,রুমে না ঢুকেও তো উপায় নেই ,দোয়া পরতে পরতে ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকলাম,লাইট অন করার জন্য হাতরে হাতরে রুমে হাঁটছি,হঠাৎ কেউ আমাকে পেছন দিক থেকে জরিয়ে ধরলো ,আতংকিত হয়ে আমি ভুত ভুত বলে বিকট এক চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here