#প্রিয়_অভিমান
পার্ট : ১৭,১৮
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
পার্ট : ১৭
কেউ আমার মুখ চেপে ধরে আমার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,
-সরি বউ,আই এম রিয়েলি সরি,
ভয়ে আমার প্রান যায় যায় অবস্তা ভুত আমাকে জরিয়ে ধরে বউ বলছে ,কিন্তু কেন?
আমি আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে চাপা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম,
আমি কোনো ভুতের বউ না আমি কাব্য রাক্ষসের বউ,প্লিজ আমায় মেরো না,আমাকে ছেড়ে দাও,আমি মরতে চাই না আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ প্লিজ,আমার কথা শুনে ভুত অবিকল কাব্য ভাইয়ার কন্ঠে বলে উঠল,
-কি যা তা বলছো ,ভুত রাক্ষস এসব কি সব বলছো,মাথা খারাপ হয়ে গেছে না কি ,
বলেই আমাকে ছেড়ে দিল,
ছাড়া পেয়ে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচালাম কিন্তু একটা ভাবনা মনের মাঝে নাড়া দিল ভুত উনার কন্ঠ নকল করে আমার সাথে কথা বলল কেন ,কন্ঠটা তো একদম উনার কন্ঠের মতো মনে হলো,
এসব ভাবনা পরে ভাবা যাবে আগে নিজের প্রান বাঁচাই অন্ধকারের মাঝেই দ্রুত পা চালিয়ে বাইরে যাবার জন্য দরজা খুঁজতে লাগলাম ,
কিন্তু বাইরে বের হবার আগেই লাইট জ্বলে উঠল,পেছন থেকে ভুতটা আবার উনার মত গলা করে বলে উঠল,
-কোথায় যাচ্ছো??দাঁড়াও ,এক পা ও যেন রুমের বাইরে না যায়,
কথাটা শুনেই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে ভীষন কান্না পাচ্ছে ,সেই সাথে কাব্য ভাইয়ার কথাও মনে পরল,উনি যে কোথায় চলে গেলেন,উনি থাকলে আজ আমাকে ভুতের পাল্লায় পরতে হতো না,বড় একটা ঢুক গিলে পেঁছন ফিরে তাকালাম,তাকিয়েই আমি অবাক ভূতটা শুধু উনার কন্ঠটাই নকল করে নি উনার মত চেহারা বানিয়ে ও দাঁড়িয়ে আছে,
এটাকে দেখে আমি ভাবনায় পরে গেলাম এটা কি উনি না কি ভুত ,উনি কিভাবে আসবেন উনাকে তো বাসায় আসতে দেখিনি,আমি নিশ্চিত এটা ভুত ,ভয়ে আমি চোঁখ বন্ধ করে চিৎকার করতে লাগলাম,ভুত ভুত কে কোথায় আছো আমাকে বাঁচাও ,ভুতটা আমাকে মেরে ফেলল ,
ভুতটা আমার কাছে এসে বলতে লাগল ,হচ্ছেটা কি চেচামেচি বন্ধ কর,তাকিয়ে দেখ ভুত টুত কিচ্ছু নেই এখানে আমি রয়েছি ,
তবুও আমি চিৎকার করতে লাগলাম,হঠাৎ ভুতটা এক বিশাল বড় ধমক দিয়ে উঠল,
-সুহা স্টপ ইট!!!!!
ধমক শুনে আমার চিৎকার বন্ধ হয়ে গেল,আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গেলাম ,এটা কাব্য রাক্ষস ছাড়া আর কেউ নয়,উনি ছাড়া এমন রাম ধমক আর কেউ দিতে পারবে না,কিন্তু উনি বাসায় আসলেন কখন ,চোরের মত বাসায় এসে রুমের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে আছে,অসহ্য লোক একটা,
আমি চোঁখ খুলে তাকিয়ে দেখি উনি বিরক্তিকর মুখ বানিয়ে বলে উঠলেন,
-লাইক সিরিয়াসলি সুহা ,এ যুগের মেয়ে হয়ে তুমি ভুতে বিশ্বাস করো,নিজের স্বামীকে ভুত ভেবে ভয় পাচ্ছো,অদ্ভুত তো তুমি,বাচ্চাদের মতো ভুত ভুত বলে চেচাচ্ছো,ইটস ভেরি ফানি বলেই হাসতে লাগলেন ,
উনাকে দেখে আমার সকালের ঘটনাগুলো মনে পরে গেল ,
আমি কিছু না বলে মন খারাপ করে খাঁটে গিয়ে বসে পরলাম,আমি বসতেই উনি আমার সামনে এসে হাটু গেরে ফ্লোরে বসে পরলেন ,উনার এমন কাজে আমি খানিকটা অবাক হলাম কিন্তু সেটা চাপা দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম,উনার সাথে আমি কিছুতেই কথা বলবো না,
উনি আমার হাত দুটি ধরে বলে উঠলেন,
-সকালের ঘটনার জন্য সত্যি আমি সরি বউ,আমি জানি নিলয়ের জরিয়ে ধরার মাঝে তোমার কোনো দোষ ছিল না,
কিন্তু হঠাৎ করে এমন একটা ঘটনায় আমার ভীষন মাথা গরম হয়ে যায়,
রাগের মাথায় তোমার সাথে খুব বাজে বিহেভ করে ফেলেছি ,
কি করবো বল তোমার সাথে অন্য কাউকে আমি সহ্য করতে পারি না ,
আমি যে খুব খুব বেশি ভালবাসি তোমাকে ,তোমার সাথে অন্য কাউকে দেখলে আমার ভীষন ভয় হয় মন হয় যদি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও,
আমার মনের মাঝে সব সময় তোমাকে হারানোর ভয় থাকে ,
তোমাকে হারালে আমি মরে যাবো আমার পক্ষে তোমাকে ছাড়া বাঁচা সম্ভব না ,
এখন হয়তো বুঝতে পারছো না আমার ভালবাসা ,আমি যখন থাকবো তখন তুমি বুঝবে আর আমার এই ভালবাসাগুলেকে মিস করবে,
দূরে যাওয়া বা হারিয়ে না ফেলা পর্যন্ত কিছু জিনিসের মূল্য মানুষ বুঝে না ,জানি না কবে তুমি তুমি আমার ভালবাসাটা বুঝবে,
আই রিয়েলি লাভ ইউ সুহা ,তুমি আমার সাথে কথা না বললে আমার ভীষন কষ্ট হয় ,প্লিজ বউ রাগ করে থেকো না ,আমার সাথে কথা বল প্লিজ ,কি হল কিছু তো বল,বলেই উনি মাথা নিচু করে আমার হাত ধরে বসে রইলেন,
শেষের কথা গুলো উনি কেমন আবেগ জরিত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন,
উনার কথাগুলো শুনে মনটা কিছু নরম হলো কিন্তু রাগ পুরোপুরি কমলো না আমি উনাকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে একটু কড়া কন্ঠে বলে উঠালাম,
-দেখি সরও আমার ঘুম পাচ্ছে ,অন্য কেউ দোষ করলে সেটার রাগও আমার উপর ঝাড়তে হবে এটাই ভালোবাসার নমুনা,বলেই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম ,আমার সাথে সাথে উনি ও দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে উঠলেন,
-বললাম তো সরি ভুল হয়েছে,আমার সুহারানীটা কি খুব বেশি রেগে আছে আমার উপর ,কি করলে বলতো রাগ কমবে ,
উনার কথায় আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
-কিচ্ছু করতে হবে না আমার জন্য,আমি তো খেলার পুতুল যার যেমন যে ভাবে ইচ্ছে হয় সে ভাবেই যেন আমার সাথে আচরন করে,আমার তো কোনো মন নেই,আমার তো কোনো কষ্ট হয় না,
বলেই আমি গাল ফুলিয়ে খাটের উপর উঠে বসে পরলাম,
উনি ও আমার সাথে সাথে আমার পাশে এসে বসে বলতে লাগলেন ,
-আমার সুহারানীর দেখছি খুব রাগ হয়েছে আমার উপর ,কি করলে তার রাগ কমবে সেটা যদি একটু সে বলতো,সে যা বলবে তার বাজে রাগী বর সেটাই করবে,মহারানী যদি একটু কষ্ট করে বলেন তাহলে এই অধম ব্যাক্তির জীবন ধন্য হয়,
উনার কথাগুলো শুনে আমি বিরক্তি নিয়ে তাকালাম,
উনি আমার দিকে করুন দৃষ্টতে তাকিয়ে আবার বলে উঠলেন,
-প্লিজ বলোনা কি করলে তুমি আর আমার উপর রেগে থাকবে না,
উনার কথা শুনে আমার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো ,সব সময় শুধু আমার সাথে শয়তানি এবার দেখো আমি কি করি,
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
-আমি যা বলবো সেটাই করবে তাই তো
উনি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন,
উনার সম্মতি পেয়েই আমি বলে উঠলাম ,
-আমার খুব ফুচকা খেতে ইচ্ছে,যদি এখন এনে দিতে পারো তো আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিতে পারি,
আমার কথা শুনে উনি চোঁখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
-এখন রাত ১টার সময় আমি ফুচকা কোথায় পাবো??
-সেটা আমি কি করে বলবো তুমিই তো বলেছো আমি যা বলবো তাই করবে ,তাই আমি চাইছি তুমি এখন আমার জন্য ফুচকা নিয়ে আসবে,কোথা থেকে আনবে সেটা তোমার ব্যাপার,
-এটা বাদ দিয়ে অন্য কিছু বলা যায় না,
-না আমার এটাই চাই,যদি এনে দিতে পারো তো তুমি এই রুমে ঘুমাবে না হলে আজ তুমি ছাদে ঘুমাবে,
আমি কথা শুনে উনি আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে,
-এভাবে তাকিয়ে কোনো লাভ নেই যদি না পারো তাহলে কাঁথা বালিশ নিয়ে ছাদে চলে যাও,
-এই এত রাতে ফুচকার দোকানদার কি আমার জন্য ফুচকা সাজিয়ে নিয়ে বসে আছে,যে আমি যাবো আর গিয়ে নিয়ে আসবো,এটা বাদ দিয়ে অন্যকিছু বল,
উনার কথা শুনে আমি ভেংচি কেটে বলে উঠলাম,
-কিছু করার মুরদ নেই আবার বলে কি না আমি যা বলবো তাই করবে,শুধু বড় বড় কথা হুহ্!!
আমার কথা শেষ হতেই উনি রাগী রাগী ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রেগে মেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন,
উনি বেরিয়ে যেতেই আমি লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় বসে রইলাম,
-আহ্ কি শান্তি লাগছে আচ্ছা করে বেটাকে জব্দ করা গেছে,আমি দেখব কি করে এত রাতে উনি আমার জন্য ফুচকা নিয়ে আসেন,
অনেক্ষন বসে অপেক্ষা করলাম কিন্তু তার আসার নাম গন্ধই নেই,আমারই বুঝার ভুল ,উনি নিশ্চই অন্য রুমে গিয়ে শুয়ে আছেন আর আমি কি না কি ভেবে বসে আছি,
এ আমার জন্য এত রাতে গিয়ে ফুচকা নিয়ে আসবে এটা শুধু কল্পনাই মানায়,আমি শুধু শুধু না ঘুমিয়ে অপেক্ষা করে বসে আছি,
আরো কিছুক্ষন বসে থেকে ঘুমিয়ে পরলাম,
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার চোঁখ কপালে উঠে গেল,আমি উনার বুকে ঘুমিয়ে আছি ,তড়িগড়ি করে উঠে বসলাম,উনি তখনও ঘুমিয়ে আছেন, কত বড় শয়তান লোক যা বললাম করার জন্য সেটা তো করলই না উল্টো চোরের মতো এসে আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে,মন চাইছে একটা লাত্তি দিয়ে খাট থেকে ফেলে দেই,এই ছেলেটা হাড়ে হাড়ে বজ্জাত,উনাকে গালি দিতে দিতে খাঁট থেকে নামলাম,
খাট থেকে নামতেই আমার চোঁখ গেল ড্রেসিং টেবিলের উপর তাকাতেই আমি চমকে উঠলাম,সেখানে সুন্দর করে এক প্লেট ফুচকা সাঁজানো,তার মানে উনি সত্যি সত্যি কাল রাতে ফুচকা নিয়ে এসেছেন,ফুচকা গুলো দেখে আমি চিন্তাই পরে গেলাম এত রাতে উনি ফুচকা পেলেন কোথায়,
আমি ফুচকাগুলোর তাকিয়ে ভেবেই চললাম হঠাৎ উনার ডাকে ভাবনায় ছেদ পরল,
উনার দিকে চোঁখ গুল গুল করে তাকাতেই উনি বলে উঠলেন,
-রাতে ফুচকা নিয়ে এসে দেখি তুমি ঘুমিয়ে গেছো তাই আর জাগাই নি , খুব তো ফুচকা খেতে ইচ্ছা হচ্ছিল ,যাও ফ্রেশ হয়ে এসো সব গুলো ফুচকা এখন আমার সামনে বসে খাবে ,
উনার কথা শুনে আমার মাথায় বাঁজ পরলো আমি একবার উনার দিকে আর এক ফুচকাক প্লেটের দিকে তাকিয়ে বড় একটা ঢুক গিললাম।
(চলবে )
#প্রিয়_অভিমান
পার্ট : ১৮
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
.
.
শালা আস্ত একটা বজ্জাত এই সাধ সকালে জোর করে আমাকে দিয়ে এক প্লেট ফুচকা খাওয়ালো,কে জানতো এভাবে ফেসে যাবো আমি তো ভেবেছিলাম এতো রাতে উনি ফুচকা কিছুতেই আনতে পারবেন না,
কোথা থেকে যে খুঁজে নিয়ে এলো কে জানে,
কতবার করে মানা করলাম আমি সব খেতে পারবো না শুনলই না আমার কথা,
জোর করে আমাকে দিয়ে সব গুলো ফুচকা গিলালো,
যখন যা মন চায় তাই করে আমার সাথে,
কোনদিন ভালো হবে না তোর একটা নিরিহ মেয়েকে এভাবে টর্চার করার ফল ভোগ করবি,
আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি তুই একদিন ফুচকাওলা হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবি,
উনাকে গালি দিতে দিতে নিচে নামলাম।
.
নাস্তার টেবিলে সবাই মিলে নাস্তা করছি সবাই যার যার মতো খাচ্ছে আমি কিছুই খেতে পারছি না ,খাবো কি ভাবে সকালের ফুচকা গুলোই পেটের মাঝে রয়েছে,
খাবার ছেড়ে উঠতেও পারছি না উঠলে তো সবার নানা রকম প্রশ্নের সম্মোখিন হতে হবে,বসে বসে খাবার নাড়া ছাড়া করছি,
আন্টি খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যেতেই ভাবলাম উঠে পরবো কিন্তু তার আগেই উনি বলে উঠলেন,
-খেতে খেতে টায়ার্ড হয়ে পরছি হাতে ভীষন ব্যাথা করছে,সুহা তোমার তো খাওয়া শেষ আমার বাকি খাবার গুলো আমাকে তুমি খাইয়ে দাও তো,
উনার কথা শুনে আমি বিষম খেয়ে আপু আর নিলয়ের দিকে তাকালাম ,তাকিয়ে দেখি আপু মুখ টিপে হেসে মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছেন আর নিলয় কেমন গম্ভীর মুখ বানিয়ে তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
এই নিলয়টার যে কি হল আসার পর তো কত খুশি ছিল এর পর থেকে কেমন যেন আপসেট হয়ে রয়েছে,
উনার কথায় সবার সামনে আমি বিব্রত হয়ে পরলাম,
বলে কি এখানে আপু ,নিলয় আর কাজের লোকের সামনে আমি উনাকে মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দিব,নির্লজ্জ বেহায়া ছেলে এত যখন টায়ার্ড হয়ে পরেছে তাহলে খাওয়া ছেড়ে উঠে পরলেই তো হয়,
আমি উনার দিকে বিস্ময় নিয়ে কপাল কুচকে তাকালাম,
আমি তাকাতেই উনি বলে উঠলেন,
-এভাবে আমাকে দেখছো কেন?আমাকে দেখতে বলি নি খাইয়ে দিতে বলেছি,
আহ্ !হাতে প্রচুর ব্যাথা খেতে পারছি না ,একটু খাইয়ে দাও না গো,
উনার কথায় আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলাম,
-এতক্ষন ধরে তো খেয়েই গেলেন হাতে যখন এতো ব্যাথা আর খাওয়ার কি দরকার উঠে পরলেই তো হয়,
-তার মানে তুমি বলছো আমি খিদে নিয়েই উঠে পরবো,ছি!সুহা স্বামী হাতের ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছে খেতে পারছে না আর তুমি তার মুখে সামান্য খাবার তুলে দিতে পারছো না,
উনার কথায় আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আপু বলে উঠলেন ,
-সুহা এই সব কি ভাইয়া কি খিদে নিয়ে খাওয়া ছেড়ে উঠবেন না কি,তোর তো খাওয়া শেষ একটু খাইয়ে দিলে কি এমন হবে,বেচারা হাতের ব্যাথায় খেতে পারছে না,
-কিন্তু আপু আমি
-সুহা কোনো কথা নয় ,
আপুর কথার উপরে আমি আর কোনো কথা বলতে পারলাম না,
অসম্ভব মেজাজ খারাপ নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে উনাকে খাওয়াতে লাগলাম ,
আর উনি মহা আনন্দে লাট সাহেবের মত মনে সুখে খাচ্ছেন,
হঠাৎ নিলয় কিছু না বলে অর্ধেক খাবার রেখে উঠে চলে গেল,
ওর এমন কান্ড আমরা সবাই অবাক হয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।এর আবার কি হল কে জানে,
.
এভাবেই উনার সাথে খুনশুটির মধ্য দিয়েই দিন চলছে,
রাতে ঘুমাতে সময় উনি শর্ত দিয়ে বসলেন ,হয় উনার বুকে ঘুমাতে হবে না হয় বেলকুনিতে গিয়ে একা শুতে হবে, আমি যা ভয় পাই জীবনেও একা বেলকুনিতে ঘুমাতে পারবো না ,
তাই বাধ্য হয়ে প্রতিদিন উনার বুকের উপরই ঘুমাতে হয়,
প্রথম প্রথম অস্বস্তি হলেও এখন আর কোনো সমস্যা হয় না অভ্যাস হয়ে গেছে,
এখন মনে হয় উনার বুকের উপর না ঘুমালে আমার বোধ হয় ভালো করে ঘুমই হবে না।
আমি কম যাই না রাত বিরাতে এটা ওটা খেতে মন চাইছে বলে উনাকে জ্বালাতন করি,
আর উনিও যত রাতই হোক না কেন সেটা নিয়েই আসেন,
আবার কখন ও চাঁদ দেখতে মন চাইছে বলে সারা রাত উনাকে ঘুমাতে না দিয়ে বেলকুনিতে আমার পাশে বসিয়ে রাখি,
কখনও বা ঘুম আসছে না বলে উনাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি নিয়ে গিয়ে ছাদে হাঁটা হাঁটি করি,আর উনি ঘুম ঘুম চোঁখ নিয়ে আমার পাশে হাঁটতে থাকেন,
উনার ঘুম কাতর অবস্তা দেখে আমার খুব হাসি পায়,
উনাকে এভাবে জ্বালাতন আমার ভীষন ভালো লাগে,
আর উনি ও কম যান না,সারা দিন আমার পেছনে পড়ে থাকেন,
নিচে যখন কাজ করি হুট করে এসে পেছন দিক থেকে জরিয়ে ধরেন আবার কখনও কখনও সবার সাথে বসে আছি হুট করে এসে সবার চোঁখের আড়ালে গালে কিস করে বসেন,
আমি ভয়ে লজ্জায় একাকার হয়ে যাই যদি কেউ দেখে ফেলে সেই ভয়ে,
খাবার খেতে বসে প্রায়ই একি বাহানা থাকে হাতের ব্যাথা খেতে পারছি না ,তখন আমাকে খাইয়ে দিতে হয়,
রান্না ঘরে গিয়ে শান্তি নেই সেখানে কোনো না কোনো বাহানায় চলে যান,তখন কাজের লোক ,আপু সবাই মিলে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসা হাসি করেন,কাজের লোকেরা তো ফিসফিসিয়ে বলা শুরু করে,
ছোট ভাইজান বিয়ের আগে কোনো দিন ভুলেও রান্না ঘরে এসে পা দেন নি,এখন কেমন ভাবির জন্য রান্না ঘরে এসে উকিঁ মারেন,
ওদের ফিসফিসানি আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসা হাসির কারনে লজ্জায় আমি রান্না ঘর থেকে চলে আসি।
মাঝে মাঝে উনি যখন আমার উপর রেগে যান আমি কিছুই বলি না চুপচাপ দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করি,পরে যখন উনার রাগ কমে আমার সাথে কথা বলতে আসেন তখন আমি কথা না বলে মুখ গুমরা করে বসে থাকি ,সেটা দেখে উনি কান ধরে উঠা বসা শুরু করেন,এমন বদ রাগী লোককে এভাবে বাচ্চাদের মত কান ধরতে দেখে যে কারোই হাসি পাবে,উনার এমন বাচ্চাদের মত কান্ড দেখে আমি আর গুমরা মুখে বসে থাকতে পারি না হেসে ফেলি।
.
উনার এই সব ছোটখাটো আবদার পাগলামো এখন আর খারাপ লাগে না বরং ভালোই লাগে,উনাকে ও আগের মতো বিরক্তিকর লাগে না,
মাঝে মাঝে উনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে প্রায়ই আবেগ মাখা কন্ঠে এই কথা গুলো বলেন,
-তোমার কাছে আমার দুইটা জিনিস চাওয়ার আছে সুহা ,এক হলো তোমার ভালবাসা আর দুই হলো আমাদের ছোট্ট প্রিনসেস,এ ছাড়া আমি আর কিছুই চাই না,তুমি কি এই দুইটা জিনিস আমাকে দিবে,এ দুটি জিনিস ছাড়া আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই ,তুমি কবে আমাকে ভালবাসবে ,নিজের মুখে আমাকে ভালবাসার কথা বলবে নিজ থেকে আমাকে তোমার কাছে টেনে নিবে,
উনার এই কথাগুলো শুনলে আমাকে উনার জোর করে বিয়ে করার কথা মনে পরে যায় ,আমার প্রতি বাবা,মায়ের অভিমানের কথা মনে পরে যায়,তখন আমি কিছু না বলে মন খারাপ করে উনার কাছ থেকে সরে যাই ,ছাদে গিয়ে একা একা বসে কান্না করি,
উনার প্রতি এখন আমার কোনো রাগ না থাকলেও অনেক অনেক অভিমান জমা আছে,উনি আমার সাথে যা করেছেন সেটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারবো না।
.
নিলয় এখন ও আমাদের বাসাতেই আছে ,
আমি যখন একা থাকি ও কেমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিন্তু উনি যখন আমার আশে পাশে থাকেন তখন ও সেখান থেকে সরে যায়,ওর আচরন ও কেমন অদ্ভুত লাগে,উনি যখন বাসায় থাকেন না আমার রুমের পাশে ঘুর ঘুর করে,আমি ছাদে গেলে আমার পিছন পিছন সেখানে চলে যায় ,কথা বলতে চাইলে কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে,মনে হয় যেন ও আমাকে কিছু বলতে চায়।
.
রাতে টেবিলে খাবার সাজাঁচ্ছি খুব গরম লাগছে শাড়ী পরে আছি তার উপর চুল গুলো ছাড়া,
উনার আবার নির্দেশ আছে রুমে বাইরে আসলে চুল খোপা করা যাবে না,খুব গরম লাগছে চুল গুলো কাজে বাঁধা দিচ্ছে বার বার সামনে চলে আসছে,
চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম এখান আপাতত কেউ নেই তাই চুল গুলোকে খোপা করে নিয়ে কাজ করতে লাগলাম,
হঠাৎ করে কেউ চুলগুলোতে একটা টান দিয়ে খোপাটা খুলে দিল,
ভয় পেয়ে পিছন ফিরে দেখি উনি রক্তচুক্ষু নিয়ে দাড়িয়ে আছেন,
উনাকে এভাবে দেখে আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম,
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়,একটুর জন্য চুলটা খোপা করেছি সেটাও উনি এসে দেখে ফেললেন,এতো রেগে যাওয়ার কি হল এখানে তো কেউ নেই,কারো সামনে তো আর করিনি,কিভাবে তাকিয়ে আছেন দেখে মনে হচ্ছে আমাকে গিলে খাবেন,
আমি ভয়ার্ত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম উনি কিছু না বলে রেগে মেগে আমার এক হাত ধরে টেনে রুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলেন ,ভয়ের কারনে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না,যাওয়ার সময় দেখলাম নিলয় ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে আছে ,নিলয়কে দেখে আমি বেশ অবাক হলাম,
ও কখন এখানে এলো ,আমি তো এখানে কেউ ছিল না দেখে চখোপা করেছিলাম,ও কখন এলো টেরই তো পেলাম না,এর জন্যই কি উনি এতো রেগে গেলেন।
যদি সেটাই হয় তাহলে আমার কপালে বিরাট দু:খ আছে আছে।
ভয়ে আমার ঘাম ঝরতে লাগল।রুমে এসেই উনি দরজাটা বন্ধ করে দিলেন,আর আমি অপরাধীর মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
(চলবে)