#প্রিয়_অভিমান
পার্ট: ২
লেখা: নিশাত সিদ্দিকা
।
বাইরে এসে আমি অবাক।
কাব্য ভাইয়া বাইরে দাড়িয়ে রয়েছেন ,
উনাকে দেখেই ভয়ে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল,
আমি একটা ঢুক গিলে ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকলাম,
উনাকে এখানে এইভাবে দাড়িয়ে তাকতে দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবতে লাগলাম ,
পার্টিতে এতো এতো সুন্দর মেয়ে থাকতে উনি আমার পিছনে পরলেন কেন?
উনার সাথে তো আমি তেমন ভাবে কথাও বলি না ,
তাহলে হঠাৎ আমার সাথে এমন জগন্য আচরন করলেন কিসের জন্য,উনি আজ যা করলেন তার জন্য উনাকে আমি কখনও ক্ষমা করবো না।
মনের মাঝে তার প্রতি চাপা অভিমান আর রাগ তৈরী হলো।
মনে মনে এসব ভাবছিলাম কাব্য ভাইয়ার ডাক শুনে কেঁপে উঠলাম,
ভয়ও পেয়ে গেলাম আবার যদি শাড়ি খুলে ফেলেন বা বাজে কথা শুনান,
কিন্তু আমার ভাবনাকে ভুল প্রমানিত করে কাব্য ভাইয়া নরম কন্ঠে বলে উঠলেন,
-সুহা আমার সঙ্গে আসো ,
আমি অবাক হলাম উনার কথায় ,একটু আগেও তো রেগে আগুন হয়ে রয়েছিলেন আর এখন কেমন শান্ত ছেলের মতো আচরন করছেন।
যেন কিছুই হয় নি,
উনাকে দেখে কিছুক্ষন আগের ঘটনা ও উনার বলা বাজে কথাগুলো মনে হয়ে বিতৃষ্ণা ও রাগে মনটা ভরে উঠল,
কি বিশ্রী আচরন আর কি আজে বাজে কথা বললেন উনি
,
আমি উনার দিকে রাগী চোঁখে তাকিয়ে বললাম,
-আমি তোমার সাথে কোথাও যাবো না ,আমি বাসায় যেতে চাই ,এখানে আমি এক মুহূর্ত ও আর তাকবো না,আমি এক্ষুনি বাসায় চলে যাবো ।
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া হাল্কা হেসে ব্রু নাচিয়ে বললেন,
-এক্ষুনি চলে যাবে ?বাহ্! কি কনফিডেন্স।এক্ষুনি যাবে নাকি এক যুগ পরে যাবে সেটা তো নিয়তি
ঠিক করবে ,তুমি নও মিস.সুহা ইসলাম।
,
উনার এমন উল্টপাল্টা কথার মানে আমি কিছুই বুঝলাম না,আমি আমার নিজের বাসায় যাবো সেখানে নিয়তি আসলো কোথা থেকে ।
আমি একটু কড়া কন্ঠে বলে উঠলাম,
-আমার পথ ছাড়ো ভাইয়া আর আমাকে যেতে দাও!!
আমার কঠিন কন্ঠস্বর শুনে কাব্য ভাইয়া একটু রেগে গিয়ে বললেন,
-কিছুক্ষন আগের ঘটনা কি সব ভুলে গেলে ?
একদম আমার সাথে এভাবে চোঁখ রাঙিয়ে কথা বলবে না ,তা না হলে আগের চেয়ে খারাপ কিছু ঘটবে,
কাব্য ভাইয়ার হুমকি শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম,
আজ যা করলো তারপর এই ছেলেকে বিশ্বাস নেই ,
আমার ভাবনা শেষ হবার আগেই উনি আমার হাত ধরে জোর করে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন,
।
কাব্য ভাইয়া আমাকে উনার রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিলেন ,
দরজা বন্ধ করায় আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম,
ভয়ে আমার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল,
কি করতে চাইছেন উনি ,উনাকে আমি শুধু একজন প্লেবয় ভাবতাম কিন্তু উনি যে তার চাইতে ও বেশী খারাপ আমার জানা ছিল না ,একজন সুন্দর মানুষের চরিএ যে এতটা ভয়ানক অসুন্দর হতে পারে আমার জানা ছিল না,
নিচে সবাই পার্টিতে ব্যস্ত এখানে যদি উনি আমার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করেন আর আমি বাঁচার জন্য চিৎকার করি তাহলে কেউই শুনবে না।
আমি কাব্য ভাইয়াকে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে অনুরোধ করতে লাগলাম ,
-প্লিজ ভাইয়া আমায় ছেড়ে দিন, আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না ।
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া শয়তানি হাসি দিয়ে বললেন,
-ভয়ে কোনো কারন নেই বিয়ের পরের কাজ আমি কখনই বিয়ের আগে করবো না ।ওটা আমি বিয়ের পরেই করবো।তুমি যতটা খারাপ আমায় ভাবো ততটা খারাপ ও আমি নই।
‘চুপচাপ কথা না বলে এখানে দাড়িয়ে থাকো,
বেশী কথা বলা আর কথার অবাধ্য হওয়া আমি একদম পছন্দ করি না।
আর আমি রেগে গেলে কি হতে পারে সেটা নিশ্চই তোমার অজানা নয়।
‘
উনার কথা শুনে আমি বিস্ময় নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম,
আজ কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছিলাম একটার পর একটা খারাপ ঘটনা ঘটেই চলছে আমার সাথে,
আল্লাহ্ তায়লাই ভালো জানেন এর পর কি আছে কপালে,
।
আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে কাব্য ভাইয়া কি যেনও খুঁজতে লাগলেন ,
একটা মলম নিয়ে আমর সামনে এসে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে পরলেন ,
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,
আর কখনই তুমি শাড়ী পরে পার্টিতে যাবে না
শাড়ী পরলে তোমাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগে,
চুলগুলোও কখনও খোঁপা করবে না,সবসময় চুল ছেড়ে রাখবে ,চুল খোঁপা করলে তোমার পিটের তিলটা স্পস্ট দেখা যায় ,আমি চাই না ওই তিলের সৌন্দর্য কেউ দেখুক ,তুমি জানো পার্টিতে সব ছেলেরা
তোমার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
মন চাইছিল সব গুলোকে ওখানেই পুতে ফেলি ।
আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল ।
তার জন্য এমন আচরন করে ফেলেছি।কিন্তু তুমি যদি আমার কথার অবাধ্য হও তাহলে এর থেকেও খারাপ আচরন করতে আমি দ্বিধাবোধ করবো না।
।
কথা গুলো উনি ভীষন রেগে বললেন,
উনার এমন অদ্ভুত আচরনে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে,
,
আচমকা উনি আমার শাড়ি পেট থেকে সরিয়ে মলম হাতে নিয়ে
উনার দেওয়া আঁচরের ক্ষত হওয়া জায়গায় মলম লাগিয়ে দিতে লাগলেন,
হঠাৎ উনার এমন স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে উঠলাম,
উনাকে দেখে ভয়ে এই আচরের ব্যাথার কথা ভুলে গিয়েছিলাম ,কিন্তু এখন মলম লাগাতেই সেই ব্যাথা দ্বিগুন হয়ে অনুভূত হচ্ছে।
পেটের মাঝে যেন কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে,
একদিকে মলম লাগানোর জ্বালা অন্যদিকে কাব্য ভাইয়ার এমন স্পর্শ দুটোই যেন অসহ্যকর।
আমি চোঁখ বন্ধ করে উনার শার্ট কামছে ধরলাম।
উনি আলতো করে ফুঁ দিতে দিতে মলম লাগিয়ে দিতে লাগলেন ।
‘
কাব্য মলম লাগিয়ে দিতে দিতে সুহাকে এতো কাছ পেয়ে ওর ঘোর লেগে গেল ও অজান্তেই নিজের ঠোঁট জোরা ছুঁইয়ে দিল ওর পেটে।
।
কাব্য ভাইয়ার ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে আমার সম্মতি ফিরল,
আমি কাব্য ভাইয়কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম , তারপর উনার থেকে সরে দাঁড়িয়ে শাড়ি দিয়ে পেটটা ঢেকে নিলাম।
এমন আচমকা ধাক্কা খেয়ে কাব্য ভাইয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পরলেন,
আমি রাগী দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলাম,
,
-কোন অধিকারে তুমি আমার পেটে হাত দিচ্ছো বারবার,ব্যাথা দিয়ে আবার মলম লাগিয়ে দিতে আসছেন।আমাকে টাচ করার কোনো রাইট নেই তোমার ।একটু আগে যে এতো বড় বড় উপদেশ দিলে , তুমি আমাকে এসব বলার কে ?
আর তোমার কথা আমি কেন শুনবো।আমার যখন যা মন চায় সেটাই পরবো , যে ভাবে মন চায় সেভাবে চুল বাঁধবো ।নিজের অধিকারের সীমা কতটুকু সেটা ভুলে যেও না।
এই সব অধিকার তোমার সো কলড গার্ল ফ্রেন্ডদের দেখিও আমাকে নয়।
।
আমার বলা কথাগুলো শুনে উনি কিছু না বলে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ।
আমি উনার এমন দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ,দরজা খুলে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে লাগলাম।
বাইরে আসতেই কাব্য ভাইয়ার রুম থেকে কাঁচ ভাঙ্গার বিকট আওয়াজ পেলাম।
আমি সে দিকে পাত্তা না দিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম।
পার্টির এখানে আসতেই আপু আর আম্মু আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
উনাদের এভাবে তাকানো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম ।
তারা কি আমাকে দেখে কিছু বুঝে ফেললো না নাকি।এই বাজে ঘটনা আমি কিছুতেই কারো সাথে শেয়ার করতে পরবো না।
আমি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে হাসি মুখে তাদের কাছে গেলাম।
কাছে যেতেই আপু বলে উঠলেন ,
‘কিরে কখন থেকে তোকে খুঁজচ্ছি কোথায় ছিলি আর তোর এই অবস্থা কেন?
খোঁপা খুলে চুল গুলোকে এইভাবে এলোমেলো করে রেখেছিস কেন?
আমি মুখে জোর পূর্বক হাসি এনে বললাম,
‘এই তো ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম ,শাড়িটা একটু খুলে গিয়েছিল সেটা
ঠিক করার জন্য আর খোঁপাটা ও কেমন হয়ে গেছিল তাই খোলে ফেললাম।
আমার কথা শুনে মা বলে উঠলেন,
‘তাহলে আমাকে বললি না কেন আমি ঠিক করে দিতাম খোঁপাটায় তোকে ভীষন ভালো লাগছিল।
আমি মায়ের কথায় একটু হেসে বললাম ,
‘মা বাদ দাও তো একটু পর তো চলেই যাবো।
আমার কথা শুনে তারা আর কিছু বলেন না।
,
এই একটি বাজে ঘটনা পার্টির পুরো আনন্দটাই মাটি করে দিল,
ভীষন বিরক্তি লাগা নিয়ে সমস্ত পার্টি শেষ করলাম,
পার্টিতে আর কোথাও কাব্য ভাইয়াকে দেখিনি,
মনে মনে খুশিই হলাম উনাকে না দেখে,দেখলেই হয়তো রাগে ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠতো ,
পার্টি শেষে বাসায় আসতে যাবো তখনই কাব্য ভাইয়া
এসে বলে উঠলেন ।
(চলব)