প্রিয়_অভিমান পার্ট : ২৬ শেষ

0
1698

#প্রিয়_অভিমান
পার্ট : ২৬ শেষ
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
.
.
ডক্টরের বলা কথা গুলো শুনে কাব্য কিছু সময় স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল,
তারপর হঠাৎ করে ডক্টরের কলার চেপে ধরে এগ্রেসিভ হয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল,
-দুজনের একজনকে বাঁচাতে পারবো মানে কি আমার দুজনকেই সুস্ত চাই ,বাঁচাতে পারবো না বললেই হলো আপনারা আছেন কি করতে ,আপনারা না পারলে প্রয়োজন পরলে বিদেশ থেকে ডক্টর আনান যত টাকা লাগে আমি দিবো তবুও আমার দুজনকেই সুস্ত চাই,
কাব্যের এমন পাগলামো দেখে ডক্টর নিজেকে ছাড়ানো চেষ্টা করতে করতে বলে উঠলেন ,
-আরে করছেন কি মি.মেহরাব ছাড়ুন আমাকে আর আপনি শান্ত হোন,
কাব্য ডক্টরের কোনো কথাই শুনলো না ও বলতে থাকলো,
-আমি কিছুতেই আপনাকে ছাড়বো না আগে বলুন দুজনকেই সুস্থ করে ফিরিয়ে দিবেন আমার কাছে,
কাব্যকে এমন করতে দেখে স্নগ্ধ গিয়ে ওকে ধরলো এবং জোর করে ডক্টরের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে বলতে লাগল,-কাব্য শান্ত হো ভাই আমার বাচ্চাদের মতো এমন পাগলামো করিস না,উনার সাথে এমন করলে সুহা সুস্থ হয়ে যাবে না ,
ভাইয়ে কথা শুনে কাব্য কিছুটা শান্ত হলো তারপর ছলছল চোঁখে অসহায়ের মতো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
-ভাইয়া উনি কেন বললেন দুজনের একজনকে বাঁচানো যাবে ,উনাদের যে দুজনকেই বাঁচাতে হবে আমার যে দুজনকেই চাই,
কাব্যের কষ্ট দেখে স্নিগ্ধের বুকটা হাহাকার করে উঠল,
ও কি বলবে ভেবে পেলো না শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলো ,-দুজনকেই সুস্থ করে দাও প্রভু না হলে যে আমার ভাই টা পাগল হয়ে যাবে ,
ডক্টর কাব্যের এমন করুন অবস্তা দেখে নিজের মনের মাঝে কষ্ট অনুভব করলেন ,একজন মানুষ স্ত্রী আর সন্তানকে কতটা ভালবাসেন সেটা তার পাগলামো দেখেই বুঝা যাচ্ছে,
উনি কাব্যের কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে ভরাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বলে উঠলেন,-টাকা দিয়ে সব সময় সব কিছু হয়না কিছু কিছু জিনিস উপর ওয়ালার হাতে থাকে যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না ,ধৈর্য ধরুন আর আল্লাহকে স্মরন করুন ,আমরা আমাদের বেস্টটা দিয়ে চেষ্টা করবো যাতে দুজনকেই বাঁচাতে পারি ,বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা ।
কাব্য ডক্টরের দিকে অনুশোচনার দৃষ্টি তাকিয়ে বলে উঠল,-আসলে টেনশনে মাথা কাজ করছেন না কি করতে কি করে ফেলেছি আই এম সরি ফর এভরিটিং
-আমি বুঝতে পারছি বিষয়টা ইটস ওকে ,মলিন হেসে কথাগুলো বলে ডক্টর অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে চলে গেলেন,
কাব্য জড় পদার্থের মতো চেয়ারে বসে রইল,
স্নিগ্ধ নিজের স্ত্রী সানার কাছে গেল ও কেঁদে কেঁদে চোঁখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে তবুও কেঁদেই যাচ্ছে ওর কাছে গিয়ে ওকে শান্তনা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিল বাসায় ওদের মেয়ে স্নেহা কাজের লোকেদের কাছে একা রয়েছে,সানা কিছুতেই সুহাকে এখানে রেখে যেতে চাইছিল না স্নিগ্ধ প্রায় জোর করে ওকে পাঠিয়ে দিয়েছে।
.
ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা চারিদিকে সুশান নিরবতা
ঘড়ির কাটার টিক টিক শব্দ স্পস্ট শুনা যাচ্ছে,
চারিদিকে ভয়ংকর নিরবতা বিরাজ করছে ,মনে হচ্ছে আশেপাশে কোথাও মৃত্যু ঘাপটি মেরে বসে,আর সেই ভয়ে পরিবেশটা এত গুমোট হয়ে আছে,
অজানা আশংকায় ঘুম নেই কারো চোঁখে ,রাত যত গভীর হচ্ছে সবার বুকের ধুকপুকানি ততই বেড়ে চলছে,এখনও সুহা আর ওর বেবির কোনো খবর পাওয়া যায় নি সেই যে ডক্টর ভিতরে ঢুকেছিলেন এখন পর্যন্ত কোনো ডক্টর বের হননি ,
রাতে কারোরই খাওয়া হয় নি সানা বাসায় গিয়ে সবার জন্য খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে কিন্তু এই রকম সিচুয়েশনে কারো গলা দিয়েই খাবার নামবে না ,
কাব্যের মা আর সুহার মা দুজনেই পাশাপাশি বসে রয়েছেন ,স্নিগ্ধ তাদের থেকে একটু দূরে আর কাব্য অপারেশন থিয়েটারের কাছে একটা চেয়ারে বসে আছে,
কাব্য হাত ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে উঠে পরলো
ওয়াশ রুমে গিয়ে ওযু করে এসে ফ্লোরে জায়নামাজ বিছিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজে দাঁড়িয়ে পরলো ,
নামাজ শেষে মোনাজাতে ডুকরে কেঁদে উঠলো কাব্য ,
কেঁদে কেঁদে সুহা আর ওর বেবির সুস্থতা কামনা করলো,
ওর কান্না দেখে ওর মা সুহার মা আর স্নিগ্ধের চোঁখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো,
কাব্য জায়নামাজেই বসে রইল,
কিছুক্ষন পর অপারেশন থিয়েটার থেকে ডক্টরা বেরিয়ে এলেন ডক্টকে দেখে কাব্য আর বাকি সবাই সে দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল,
কাব্য ডক্টরদের কাছে গিয়ে অস্তির হয়ে বলতে লাগল ,
-ডক্টর আমার স্ত্রী আর আমার বেবি ঠিক আছে তো ওরা কেমন আছে ??
সবাই এক বুক আশা নিয়ে ডক্টরদের দিকে তাকিয়ে রইল উওর এর আশায়,
ডক্টরদের মধ্যে একজন ডক্টর হাসি মুখে কাব্যের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,-কনগ্রেচুলেশন মি.মেহরাব আপনার মেয়ে হয়েছে,এবং আপনার বেবি একদম সুস্থ স্বাভাবিক রয়েছে,
এটা শুনে সবাই স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলল কিন্তু কাব্য আগের থেকেও বেশি অধৈর্য হয়ে বলে উঠল,
-আর আমার স্ত্রী আমার সুহা ও কেমন আছে ,
ও সুস্থ আছে তো ,
এটা শুনে ডক্টররা একজন অন্যজনের মুখের দিকে তাকালো কিন্তু কেউই কোনো কথা বলল না,
ডক্টরদের চুপ থাকতে দেখে কাব্য ভীষন রেগে গেল ও রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠল,-আপনারা কথা বলছেন না কেন ?সুহা কেমন আছে ওর সাথে কি করছেন আপনারা ,যদি আমার সুহার কিছু হয় আপনাদের কাউকে ছাড়বো না আমি সবাইকে খুন করে ফেলবো,
কাব্যের পাগলামো দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেল,
স্নিগ্ধ ডক্টরদের দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে বলে উঠল,-প্লিজ ডক্টর বেবির মায়ের কি অবস্তা সেটা আমাদেরকে জানান ,
-বেবির মায়ের জ্ঞান এখন ও ফিরে নি আমাদের হাতে চার ঘন্টা সময় আছে চার ঘন্টার মাঝে জ্ঞান না ফিরলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না ,বলে হতাশ উঠলেন একজন ডক্টর,
খবরটা শুনেই কাব্য দু পা পিছিয়ে গেল ও পরে যেতে যেতে দেয়ালে হাত দিয়ে নিজের পড়ে যাওয়া আটকালো,স্নিগ্ধ দ্রুত পায়ে ওর কাছে গিয়ে দু হাত দিয়ে ওকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল,
সুহার মা খবর টা শুনে সুহার শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন,
কাব্য পাথরের মতো শূন্য দৃষ্টি নিয়ে বসে রইল,দেখে মনে হচ্ছে প্রান শূন্য দেহ বসে রয়েছে,
কিছুক্ষন পর একজন নার্স বেবিকে নিয়ে এসে সুহার শাশুড়ীর খোলে দিল ,বেবিকে দেখে সুহার মা আর উনার চোঁখ দিয়ে অজোরে জল ঝরতে লাগলো,
কাব্যের মা চোঁখের জল মুছে বেবিকে নিয়ে কাব্যের কাছে গেলেন উনি কাব্যের কাছে গিয়ে বলে উঠলেন,
-দেখ বাবা তোর সন্তান ,ওকে আমাদের কাছে দিয়ে গেছে তুই তোর প্রিন্সেসকে দেখবি না ,তাকা ওর দিকে তাকিয়ে দেখ দেখতে একদম তোর মতো হয়েছে ,
মায়ের কথা শুনে কাব্য বেবি দিকে না তাকিয়ে রোবটের মতো বলে উঠল,
-মা ওকে পৃথিবীর আলো দেখাতে গিয়ে আমার সুহা আজ মৃত্যুর মুখমুখি ওকে ছাড়া স্বার্থপরের মতো একা একা বেবির মুখ আমি কি করে দেখবো আমার সুহারানীর জ্ঞান ফিরলেআমরা দুজনে মিলে এক সাথে ওর মুখ দেখবো,
ওর কথা শুনে কাব্যের মা আঁচলে মুখ চেপে কেঁদে চলে গেলেন,
.
কাব্য দাড়িয়ে আছে সুহার কেবিনে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে রাখা হয়েছে সুহার মুখে ,সুহার নিথর দেহ পরে রয়েছে বেডে ,সুহাকে এই অবস্তায় দেখে কাব্যের ভেতরটা জ্বলে পুরে খাক হয়ে গেল মনে হচ্ছিল ওর ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে,আর মাএ পনের মিনিট বাকি রয়েছে চার ঘন্টা হতে ,কাব্য সুহার বেডের পাশে বসে ওর হাত শক্ত করে ধরে ওর কপালে গভীর চুম্বন একে দিল,তারপর সুহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
-তোমার কিচ্ছু হবে না সুহারানী ,তুমি
ঠিক হয়ে যাবে ,আমি প্রভুর কাছে শুধু এই দোয়াই করছি আমার সমস্ত আয়ু দিয়ে যেন উনি তোমাকে বাঁচিয়ে দেন,প্রভু নিশ্চই আমাকে ফেরাবেন না,তুমি ভালো হয়ে যাবে সুহারানী,
কাব্যের কথা বলার মাঝে ফজরের আজান পরে গেল ,ও সুহার দিকে একবার তাকিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে ওযু করে নামাজে দাড়িয়ে গেল,নামাজ শেষ করে মোনাজাত করে ঘড়ির দিকে তাকালো আর মাএ পাঁচ মিনিট বাকি রয়েছে ও সেজদারত অবস্তায় জায়নামাজে পরে রইল,
অন্যদিকে স্নিগ্ধ আর বাকি সবাই দুশ্চিন্তগ্রস্ত অবস্তায় পায়চারি করতে লাগলো ,সবার চোঁখে মুখে আতংক,
ডক্টররা সবাই আশা ছেড়ে দিয়ে সুহার কেবিনের দিকে গেলেন,
ডক্টরা যখন সব আশা ছেড়ে দিয়ে সুহাকে মৃত ঘোষনা করার মনস্থির করলেন তখনই ঘটে গেল মিরাক্কেল চার ঘন্টা হবার দুই মিনিট আগে সুহার জ্ঞান ফিরে এলো,ডক্টরা সবাই আশ্চার্য হয়ে গেলেন সবার মুখে ফুঠলো বিজয়ে হাসি ,একজন ডক্টর হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এসে হাসি মুখে বলে উঠলেন ,-প্রেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে ,উনার হাজব্যান্ডকে খবরটা দিন,
কথাটা শুনা মাএ সবার মাঝে প্রান ফিরে এলো ,স্নিগ্ধ আর সুহার মা ভেতরে গেলেন সুহার সাথে দেখা করার জন্য আর কাব্যের মা ছুটে গেলেন কাব্যের কাছে,কাব্যের কাছে গিয়ে দেখলেন ও সেজদারত অবস্তায় পরে রয়েছে উনি ওর কাছে গিয়ে হাপিয়ে হাপিয়ে বলতে লাগলেন ,সুহার জ্ঞান ফিরেছে তারাতারি সুহার কাছে যেতে কিন্তু উনি এতবার বলার পরও কাব্যের কোনো সাড়া শব্দ পেলেন না তখন উনি ওকে সমান্য ধাক্কা দিলেন সাথে সাথে কাব্য নিচে লুকিয়ে পরল,সেটা দেখে কাব্যের মা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠলেন ,উনার চিৎকার শুনে স্নিগ্ধ আর দু জন ডক্টর বেরিয়ে এলেন উনারা ধরে কাব্যকে একটা কেবিনে নিয়ে গেলেন,
কেবিনে নিয়ে গিয়ে ডক্টররা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে গম্ভীর মুখ নিয়ে বলে উঠলেন,-অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার ফলে উনি হার্টফেল করেছেন,হি ইজ নো মোর,
কথাটা শুনা মাএ কাব্যের মা একটা চিৎকার করে কেঁদে উঠে সেন্সলেস হয়ে গেলেন,স্নিগ্ধের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো ও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না ,নিজের আদরের ছোট ভাইয়ের এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারলো না ,ও কান্নায় ভেঙ্গে পরলো,সুহার মা ও এসে খবরটা শুলে ফেললেন উনি ও হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন
কেবিনে কান্নার রুল পরে গেল,
একজন নার্স এসে তরিগরি করে বলে উঠলেন ,
-স্যার পাশের কেবিনের প্রেশেন্ট উনার হাজব্যান্ড আর পরিবারের লোকজনের খুঁজ করছেন,কি করবো,
ডক্টর চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে উঠলেন ,
-প্রেশেন্টকে কিছুতেই এখন এ খবর দেওয়া যাবে না উনাকে কুয়িক ঘুমের ইন্জেকশ দিয়ে ঘুম পাকিয়ে দাও,
.
ভোরের আলো ফুঠতে শুরু করছে সেই সাথে খবরটা পুরু হসপিটাল ছড়িয়ে গেল হসপিটালে স্টাপ ডক্টর ,নার্স থেকে শুরু করে সবাই এসে ভীর জমালো কাব্য আর সুহাকে দেখার জন্য ,এমন করুন কাহিনী শুনে সবার চোঁখে জল চলে এলো,
খবরটা শুনে সানা ও হসপিটাল চলে এলো ও কান্না করতে করতে সুহার বেবিকে সামলাতে লাগলো ,কিছুক্ষন পর পর কাব্যের মায়ে জ্ঞান ফিরেছে আর উনি কাব্য বলে কাঁদতে কাঁদতে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন ,স্নিগ্ধ নিজের বুকে পাথর চেপে কাব্যের লাশ দাফন করার ব্যাবস্থা করতে লাগলো ,
.
ঘড়িতে সকাল দশটা স্নিগ্ধ কাব্যকে দাফন করে এসে নিথর দেহ নিয়ে ফ্লোরে বসে পরলো,
ওর মাকে ঘুমের ইন্জেকশন দিয়ে রাখা হয়েছে,
সুহার ঘুম ভাংলো ও তাকিয়ে দেখলো ওর মা আর বোন ওর পাশে বসে রয়েছে ওর বোনের খোলে ওর বেবি ও চারিপাশে একবার চোঁখ বুলালো কাব্যের খুঁজে ,কাব্যকে কোথাও দেখতে না পেরে ও বোনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,-আপু ও কোথায় ওকে কোথাও দেখছি না কেন,ওর কথা শুনিনি বলে ও কি রাগ করে রয়েছে আমার উপর ,
সুহার মুখে কাব্যের কথা শুনে দুজনেই কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন,
ওদেরকে এভাবে কাঁদতে দেখে সুহা অস্তির হয়ে পরলো কি হয়েছে জানার জন্য,
ওর এমন অস্তিরতা দেখে সুহার মা আর থাকতে মা পেরে কেদে কেদে বলে উঠলেন,-কাব্য আর নেই মা,
উনি সবকিছু ওকে খোলে বললেন,
সবটা শুনে সুহা বিকট একটা চিৎকার করে উঠে বসলো হাত থেকে টান দিয়ে স্যালাইনের নল খুলে ফেলল,ওর মা আর বোন ওকে ধরে রাখতে পারলেন না ও নিজের মাথার চুল গুলোকে টেনে চিরে ফেলতে লাগলো আর পাগলের মতো বলতে লাগলো,-আমি বিশ্বাস করি না তোমরা মিথ্যে বলছো,ও আমাকে না বলে এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে না ,
ওর কান্নায় সমস্ত হসপিটালের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠলো ,ওর এমন করুন আর্তনাদ দেখে ডক্টর নার্সরা কেঁদে উঠলেন,কেউই কে শান্ত করতে পারলো না
অবশেষে ঘুমের ইন্জেকশন দিয়ে ওকে শান্ত করা হলো,
.
দুই দিন কেটে গেল এভাবেই কাব্যের মা কিছুটা স্বাভাবিক হলে ও সুহা এখন ও স্বাভাবিক হয় নি ,
ওর সেন্স ফিরলেই কাব্যের কাছে যাবো বলে পাগলামো শুরু করে দেয় নিজের শরীরে নিজের আঘাত করে ওকে এ দুই দিন শুধু ঘুমের ঔষুধ দিয়ে রাখা হয়েছে,আর ওর বেবিকে ওর বোনই দেখে রাখছে।পাঁচ দিন সুহাকে হসপিটাল রাখা হলো।
.
আজ আমাকে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে আমি নিজে আমাদের প্রিন্সেসকে নিয়ে বাসায় ঢুকেছি ,আজ উনি থাকলে হয়তো এই দিনটা অন্য রকম হতো আনন্দে সারা বাড়ী মেতে থাকতো কিন্তু আজ তার বদলে আছে শুধু সবার চোঁখে জল,কিন্তু আমার চোঁখে কোনো জল নেই ,আমি সম্পূর্ন পাথর হয়ে গেছি আনন্দ, দু:খ ,কষ্ট এসব ফিলিংস এর কোনো কিছুই আমি অনুভব করতে পারছিনা,
রাত হয়ে গেছে আমি বেবিকে নিয়ে সোজা রুমে চলে আসলাম কারো সাথেই কোনো কথা বললাম না,
রুমের ভেতর ঢুকতেই ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো ,এই রুমটা আমাদের দুজনের ছিল কিন্তু আজ থেকে এখানে আমাকে একা থাকতে হবে ,চারিদিকে উনার এতো এতো স্মৃতি সবকিছুর মাঝে আমি উনাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো তো,কিন্তু আমাকে তো বেঁচে থাকতে হবে উনার প্রন্সেসের জন্য,
গলার ভেতর কান্না দলা পাকিয়ে আসছে,বেবিকে নিয়ে বেনকুনিতে চলে এলাম ,
হসপিটাল থাকতে দুইদিন কিভাবে কেটেছে আমি নিজেই জানি না কিন্তু তৃতীয় দিন যখন জ্ঞান ফিরল তখন,আমার শাশুড়ী মা এসে আমার হাত ধরে কেঁদে বলে উঠলেন ,এই বেবির কাব্যের একমাএ শেষ স্মৃতি,আমাদের বেবির উনার বেঁচে থাকার একমাএ অবলম্বন ওর কিছু হয়ে গেলে উনি বাঁচবেন না ওকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আমাকে সুস্থ থাকতে হবে,সেই থেকে নিজেকে পাথর করে নিলাম,
আমাকে বাঁচতে হবে উনার প্রিন্সেসের জন্য আমাকে বাঁচতে হবে।উনি তো সেটাই চেয়েছিলেন আমি আর উনার প্রিন্সেস যেন ভালো থাকি,উনার শেষ ইচ্ছা আমি পূর্ন করবো,
হসপিটালের শেষের দুইদিন শুধু অপেক্ষা করেছি উনার ফিরে আসার জন্য ,ভেবেছি হঠাৎ উনি এসে সুহারানী বলে ডেকে আমাকে সারপ্রাইজ দিবেন তখন আমি উনার সাথে কথা বলবো না কারন উনার উপর আমার অনেক অভিমান জমে আছে ,আমাকে আর আমার বেবিকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য ,কিন্তু আস্তে আস্তে আমার ভুল ধারনা ভেঙ্গে গেল উনি আর কখনই আমার অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য ফিরবেনা এই অভিমান নিয়েই সারা জীবন আমাকে বাঁচতে হবে ,
উনি সত্যি সত্যি আকাশের তারা হয়ে গেছে ,আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে আমার চোঁখ দিয়ে এক ফোটা জল গরিয়ে পরলো,একটা গানের লাইন আজ খুব মনে পরছে আমি আপন মনে বলে উঠলাম ,
‘নিজের মতো ভালো থেকো ছেড়ে দিলাম পিছু টান
বাঁচবো না হয় সারাজীবন নিয়ে প্রিয় অভিমান।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here