প্রিয়_অভিমান পার্ট: ৩,৪

0
1584

#প্রিয়_অভিমান
পার্ট: ৩,৪
লেখা: নিশাত সিদ্দিকা
পার্ট: ৩

পার্টি শেষে বাসায় আসতে যাবো তখনই কাব্য ভাইয়া
এসে হাজির হলেন।উনাকে দেখে আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম ,উনার চোঁখ দুটি ভয়ংকর ভাবে লাল হয়ে আছে , দেখে ভয়ে আমি ঘাঁমতে লাগলাম।আজ যা সাহস দেখিয়েছি তার জন্য উনি যে আমায় কি শাস্তি দেন সেটা উনিই ভালো জানেন,ভালোই ভালোই বাসায় চলে যেতে পারলেই বাঁচি।

আর কিছুক্ষন এখানে থাকলে কাব্য ভাইয়ার চোঁখের জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় ভস্ম হয়ে যাবো ।
উনি বারবার যে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন আমার দিকে।
ভয়ে আমার প্রান যায় যায় অবস্তা।
মাকে তাড়া দিতে লাগলাম বাসায় ফিরার জন্য।
কিন্তু মা আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে কাব্য ভাইয়া কি বলতে চাইছেন সেটা শুনতে লাগলেন,
উনি মাকে অত্যন্ত মিষ্টি ভাষায় বলতে লাগলেন,
অনেক রাত হয়ে গেছে আমরা যেন এখানে থেকে যাই,
মা বললেন সুহার বাবা বাসায় একা রয়েছেন থেকে গেলে হবে না।
এটা শুনে উনি বললেন তাহলে এতো রাতে আমাকে নিয়ে যাওয়া
ঠিক হবে না আমাকে যেন এখানে রেখে যান,
উনার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পরলাম,
আমি চাইছি সিংহের গুহা থেকে বের হয়ে যেতে ,
আর সিংহ কিনা গুহার পথ আগলে দাঁড়তে চাইছে।
আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম আমি এখানে কিছুতেই থাকেবোনা ।উনি যে আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য রাখতে চাইছেন সেটা আমি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি।
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া আমার দিকে রক্তচুক্ষু
নিয়ে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
বড়দের কথার মাঝে যেন নাক না গলাই ,বড়রা যা ডিসাইড করবে সেটাই হবে।
আমার মা আবার ওল্ড ফ্যাশনের উনি জীন,পরি এগুলিতে ভীষন ভাবে বিশ্বাস করেন ,কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে তিনি ভয় পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে এখানে রেখে যাবেন ,আমার মায়ের চোঁখে আমি বিশ্বসুন্দরী তাই উনি আমাকে নিয়ে সব সময় ভয়ে থাকেন ,বলাতো যায় না উনার এতো সুন্দর মেয়ের উপর আবার কখন কিসের নজর লেগে যায়।তার সাথে যোগ দিলেন আমার
বোন ও সেও নাকি আমাকে এতো রাতে যেতে দেবে না।
আমি অনেক করে কাকুতি মিনতি করলাম আমি এখানে থাকবো না কিন্তু আমার মা জননি আমাকে সিংহের গুহায় রেখে চলে গেলেন।
মা চলে যেতেই কাব্য ভাইয়া আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে চলে গেলেন ,যে তাকানোর মানে ছিল আমার আর রক্ষা নেই।
ভেবেছিলাম বাড়িতেই তো চলে যাবো শাস্তি দেওয়ার জন্য সে আর আমাকে পাচ্ছে কোথায়।শেষ পরিনতিটা যে এমন হবে আমি ভাবতেই পারিনি।
উনার এমন তাকানো দেখে আমি একটা শুকনো ঢুক গিললাম।

অনেক রাত হয়ে গেছে রুমে আসলাম ,
শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন কাব্য ভাইয়ার স্পর্শ শরীরে লেগে আছে গা ঘিন ঘিন করছে শাওয়ার না নিলে শান্তি পাবো না।
হারামজাদাটার জন্য এতো রাতে ও গোসল করতে হচ্ছে ,
কাব্য ভাইয়াকে হাজারটা গালি দিতে দিতে ওয়াশ রুমে ঢুকলাম।
শাওয়ারে যাওয়ার পর পানি লেগে ক্ষত জায়গাগুলিতে অনেক জ্বালা করলো সেগুলো দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলাম।

শাওয়ার সেরে ভেজা চুলগুলো শুকাচ্ছি আর ভাবছি।
কাল কাব্য ভাইয়ার সাথে দেখা হওয়ার আগেই বাসায় চলে যাবো।কিছুতেই উনার সামনে পরা যাবে না।
মনে মনে প্ল্যানিং করতে লাগলাম কিভাবে কাব্য ভাইয়ার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাবো।
এই সবই ভাবছি হঠাৎ দরজায় নক হওয়ার শব্দে আমার ভাবনায় ছেদ পরলো।
আমি শব্দ শুনে চমকে উঠলাম,
এতো রাতে কে এসেছে,নিশ্চই আপু কোনো দরকারে এসেছেন তাছাড়া এতো রাতে কে হবে?
কাব্য ভাইয়া নিশ্চই এতো রাতে আমাকে শাস্তি দিতে আসবেন না।
দরজার মাঝে ক্রমাগত নক হচ্ছে ,
হয়তো জরুরি কিছুর জন্য আপু ডাকছেন
,আমি দ্রুত উঠে দরজা খুলতে লাগলাম।
দরজা খুলে আমি অবাক ,কাব্য ভাইয়া একটি নীল টি শার্ট আর হোয়াইট কালারের থ্রি কোটার পরে দরজার ওপারে দাড়িয়ে রয়েছেন।
কি যে সুন্দর লাগছে উনাকে দেখতে ,যে কোনো মেয়ে উনার এমন সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতে বাধ্য ।
মুখেএমন একটা ইনোসেন্ট ভাব রাখে দেখে বুঝারই উপায় নেই যে এই ছেলে শত শত মেয়ের সাথে প্রেম করে আর সে এতোটা বদ রাগী।
উনার এমন স্বভাবের জন্য উনার এমন মনমুগ্ধ করা
সৌন্দর্য কখনই আমায় আকর্ষিত করে না।
না হলে নির্ঘাত আমি এই ছেলেটার প্রেমে পরে যেতাম।
উনাকে দরজা ওপাশে দেখে আমি আতংকিত হয়ে পরলাম যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।এই প্রবাদটা হুবোহুব আমার সাথে মিলে গেল।
যেই দরজাটা লক করতে যাবো ,
উনি আমার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলেন।
উনার এমন কান্ডে ভয়ে আমার সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো।
উনি আমার বিছানায় আয়েশী ভঙ্গিতে পায়ের উপর
পা তুলে বসে পা নাচাতে লাগলেন,
আমি রুমের এককোনে দাড়িয়ে ভয়ে ভয়ে চোরা চোখে
উনাকে দেখতে লাগলাম,
উনি আমার দিকে তাকিয়ে খোশ মেজাজে পা নাচিয়ে নাচিয়ে বলতে লাগলেন,কি ভেবে ছিলে আমাকে অপমান করে আমার নাকের ডগা দিয়ে নাচতে নাচতে বাসায় চলে যাবে আর আমি কিছু করতে পারবো না।
এই কাব্য মেহরাবকে তুমি চিনতেই পারো নি সুহারানী।
বলেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা ভয়ংকর হাসি দিলেন ।
যেটা দেখে আমার হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো,
উনি দাড়িয়ে গেলেন ঠোঁটে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে আমার দিকে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন,
সেটা দেখে ভয়ে আমি চোঁখ বন্ধ করে চিৎকার করে বলে উঠলাম,
‘ভাইয়া!ভাইয়া আমার ভুল হয়ে গেছে এইবারের মতো ক্ষমা করে দাও !!এই জীবনে তোমাকে অপমান তো করা দূরের কথা তোমার সামনেই কখন আসবো না।
বলেই চোঁখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম ভয়ে তাকানোর সাহসই পাচ্ছিনা ।
হঠাৎ ঠোঁটে হাতে স্পর্শ পেয়ে চোঁখ খোলে তাকালাম,
তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন।
উনাকে এভাবে আমার এতো কাছে দেখে ভয়ে আমার মাথা ঘুরছে,আমি কাতর চোখে উনার দিকে তাকালাম ,
আমার তাকানো দেখে আমার মুখ চেপে ধরে রেখেই ব্রু কুচকে বলে উঠলেন,
‘এই মেয়ে ক্ষমা চাওয়ার কথা এতো চিৎকার করে বলার কি হলো ,তোমার এতো সাহস আমাকে কালা ভাবো,এখনতো আরো একটা শাস্তি এড হলো,আচ্ছা তোমার কি ধারনা আমি কানে কম শুনি,
উনার এমন কথা শুনে আমি চোঁখ বড় বড় করে দু দিকে মাথা নাড়তে লাগলাম যে এমটা আমি কখনই ভাবি না।
আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে উনি বলতে লাগলেন,
‘আমার শর্ত মানলে তোমার শাস্তি কিছুটা কমতে পারে।
আমি উনার কথা শুনে কিছু না ভেবে দ্রুত বলে উঠালম,
‘আমি তোমার সব শর্তে রাজি প্লিজ আমার সাথে উল্টোপাল্টো কিছু করো না।
আমার কথা শুনে উনি একটা বাকা হাসি দিয়ে বললেন,
‘যা বলছো ভেবে বলছো তো?
ভাবা ভাবির কি আছে রে রাক্ষস আমি তো ভালোভাবেই জানি তর শর্ত মানলেও আমি বিপদে পরবো না মানলেও বিপদে পরবো ।শর্ত মেনেই বিপদে পরি তাহলে হয়তো শাস্তির মাএা কিছুটা কম হতে পারে।আমি যে আজ বাজে ভাবে ফেসে গেছি সেটা ভালোই বুঝতে পারছি ।
এখন মাথা ঠান্ডা রেখে উনার কথা শুনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
আমি চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা নি:শ্বাস নিয়ে বললাম ,
‘হ্যা আমি তোমার শর্ত মানতে রাজি।
‘ওকে ! আমার শর্ত হলো আমি যা যা বলবো সেটাই তোমাকে করতে হবে।কোনো প্রশ্ন না করে।
বলেই উনি খাটে গিয়ে হাত পা ছাড়িয়ে শুয়ে পরলেন,
উনার এমন কান্ডে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম উনি কি আজ আমার বিছানায় শুনবেন ,
এটাই কি উনার শর্ত ছিলো।
হায়!হায়! একি ভুল করে ফেললাম শর্ত মেনে।
আমি ভয়ে ভয়ে উনার কাছে গিয়ে অনুনয়ের সুরে বললাম,
‘ভাইয়া আমাকে কি করতে হবে?
আমার কথা শুনে উনি বলে উঠলেন,
‘আমার পা টা একটু টিপে দাও তো সুহা ।ইশ!ভীষন ব্যাথা করছে।
উনার কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পরলো।
আমি উনার কোন জন্মের চাকরানি যে উনার পা টিপে দিবো।
এটা শুনে রাগে আমার সমস্ত শরীর কাঁপছে।
আমি রাগি রাগি দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
‘কি হলো কথা কানে যায় না ,
কি আর করা এখন মাথা গরম করলে চলবে না ভালোই ভালোই এটাকে বিদায় করলে বাঁচি।

এক রাশ বিরক্তি লাগা নিয়ে উনার পা টিপটে লাগলাম ,
আর মনে মনে উনাকে অভিশাপ দিলাম,
তর জীবনেও বিয়ে হবে না,তর কপালে বউ ঝুটবে না,
তর সব গার্ল ফ্রেন্ড তকে চ্যাকা দিয়ে চলে যাবে, তুই সারা জীবন দেবদাস হয়ে ঘুরবি।
মনে মনে উনাকে বকছি আর পা টিপে দিচ্ছি।
পা টিপতে টিপতে হাত ব্যাথা হয়ে গেল।
তাতে উনার কোনো হেলদোল নেই উনি মহা শুয়ে শুয়ে ফোন
টিপছেন।
তারপর আমাকে দিয়ে কফি বানিয়ে আনালেন ।
ইচ্ছে হচ্ছিল কফিনে বিষ মিশিয়ে দেই ।
উনার চুলগুলো ও টেনে দিতে হলো।
সমস্ত চুল ছিড়ে উনাকে নেড়া বানিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল।
আমার জন্য নাকি পার্টিতে খেতে পারেনি,
এখন খেতে ইচ্ছে করছে ,নিচে গিয়ে খাবার গরম করে আনতে বললেন।
দাঁতে দাঁত চেপে উনার সব কথা মেনে চলছি।
নবাবের মতো হুকুম করছে আর আমি চাকরানির মত
সেটা পালন করছি।
সব কাজ করে উনার দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে বললাম,
ভাইয়া অনেক রাত হয়ে গেছে আমার ভীষন ঘুম পাচ্ছে,
আমার কথা শুনে উনি বলে উঠলেন,
ঘুম পাচ্ছে তো মেঝেতে ঘুমিয়ে পরো ,আমি আজ এই বিছানা ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।
উনার কথা শুনে আমার সমস্ত ধৈর্য ভেঙ্গে গেল,
আমি চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলাম ,
এবার কিন্তু তুমি সব কিছু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো,
আমার কথা শুনে উনার চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল,
রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে,আমার কাছে এসে
আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন উনার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আছে ,
আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম যতই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি ততই উনি শক্ত করে চেপে ধরছেন।
ভয়ে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না ,
উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কটমটিয়ে বলতে লাগলেন,
‘তখন আমার রুমে আমাকে কি বলেছিলে তোমাকে কোন অধিকারে আমি টাচ করি।কিসের অধিকারে আমি তোমাকে উপদেশ দেই।আমার অধিকার নেই তাহলে কার আছে ,যেই অধিকার দেখাতে আসবে তাকেই আমি খুন করে ফেলবো।আর কি যেন বলেছিলে ,
আমি যেন আমার সীমার মধ্যে থাকি,নিজের সীমা যেন না ছাড়াই ।
আজ আমি তোমাকে দেখাবো সীমা ছাড়ানো কাকে বলে,
বলেই উনি আমার ঠোঁটে উনার ঠোঁট মিশিয়ে দিলেন ,
এমন অপ্রত্যাশিত আক্রমণে আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম।
যতই নিজেকে বাঁচানো চেষ্টা করতে লাগলাম ততই উনি আরো বেশী করে আঁকড়ে ধরতে লাগলেন।
যেন উনার সমস্ত রাগ আমার ঠোঁটের ওপর মিটাতে লাগলেন।
আমি কিছুতেই উনার শক্তির সাথে পেরে উঠতে পারলাম না।
উনি উনার কাজ শেষ করে ধাক্কা দিয়ে আমায় বিছানায় ফেলে দিলেন।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলেন,
‘শেষ বারের মতো অনাধিকার চর্চা করে গেলাম।
কালকের পর থেকে শুধু অধিকার ফলাবো ।কালকের পর থেকে পৃথিবীতে আমার থেকে বেশী অধিকার তোমার উপর কারো থাকবে না।
বলেই উনি হনহনিয়ে চলে গেলেন।
আর আমি ছলছল চোঁখে শূণ্য মস্তিস্ক নিয়ে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

(চলবে)

#প্রিয়_অভিমান

পার্ট : ৪

লেখা : নিশাত সিদ্দিকা


সুহা খাটে বসে রইল গুটিশুটি মেরে ।বড় বড় শ্বাস
পরছে এলোমেলো ভাবে ।
চোঁখ দিয়ে জল পরছে অঝোর ধারায়।ঠোঁট কাঁপছে মৃদু।
মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ,যা হলো এটা নিয়ে কিছুতেই কিছু ভাবতে পারছেনা ,কিছুক্ষন আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা অবিশ্বাস্য লাগছে নিজের কাছে।

সুহা মাথা নিচু করে , কপাল হাঁটুতে ঠেকিয়ে বসে ভাবতে লাগল কাব্যের কথা,
ওর বড় বোনের বিয়ের সময় কাব্য অস্ট্রেলিয়া ছিল লেখা পড়ার জন্য,
সুহা শুধু শুনেছিল ওর বোনের একজন দেবর আছে আর সে বাইরে থাকে। লেখা পড়া শেষ করে দেশে ফিরবে।
এ বিষয়ে সুহার কোনো আগ্রহই ছিল না শুধু বোনের মুখে নামটা শুনেছিল।
নামটা ওর খুব ভাল লেগেছিল।
কিন্তু কখনও ফটো বা কোনোভাবে দেখার ইচ্ছে হয় নি।
ওর বড় বোন সানার বিয়ের দের বছর পর কাব্য দেশে ফিরে ।
কাব্য দেশে ফিরার অনেক দিন পর সুহা একদিন ওর বোনের মেয়ে স্নেহাকে দেখার জন্য ওদের বাসায় আসে
তখন প্রথম কাব্যের সাথে দেখা হয়।
সুহা দেখে একটি ছেলে ফোনে কথা বলে নিচে নামছে,
ছেলেটার চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সে খুব রেগে আছে কিন্তু রাগটা যেন তার সৌন্দর্যকে একটুও কমাতে পারেনি। সুহার দু চোঁখ আটকে গিয়েছিল ওকে দেখে ।
কাব্য তখন ফোনে কারো সাথে ভীষন রেগে কথা বলছিল ,কথা বলার এক পর্যায়ে কাব্য রেগেমেগে ফোনটা সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে।
সুহা সেটা দেখে একটা চাপা চিৎকার দিয়ে দু হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চোঁখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।

সুহার চিৎকার শুনে কাব্যের চোঁখ পড়ে সুহার দিকে ও তাকিয়ে দেখে রেড কালারের কামিজ আর হোয়াইট কলারের পায়জামা ও ওড়না পরা একটা মিষ্টি পরি চোঁখ মুখ খিচকে হাত দিয়ে কান চেপে ধরে দাড়িয়ে রয়েছে,
চুলগুলো বেনি করে এক পাশে রাখা।
মেয়েটাকে এক পলক দেখে কাব্যেকের সমস্ত রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল,সেখানে জন্ম নিল একরাশ ভালো লাগার অনুভুতি।বিদেশে থাকতে কত মেয়ের সাথে রিলেশন করেছে কিন্তু কাউকে দেখে মনের ভেতর এমন অনুভুতি হয়নি।কাউকে দেখেই হার্ট বিট ফাস্ট হয় নি ।কিন্তু এই মেয়েকে এক নজর দেখার পর থেকে হার্ট বিট অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে।সে অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকালো।

সুহা কিছুক্ষন পর চোঁখ খুলে দেখল ছেলেটা তার সামনে দাড়িয়ে অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে,
সুহা কোনো কিছু না বলে দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে বোনের রুমে চলে আসে।
সুহা ছোটবেলা থেকেই রাগী মানুষদের ভয় পায়।
,
সুহার পিছন ফিরে দৌড় দিতেই কাব্যরের নজর যায় সুহার পিটে থাকা তিলটার উপর,
সেটা দেখে কাব্যের বুকের বা পাশে সুক্ষ ব্যাথা অনুভুত হলো।ও শুকনো গলায় একটা বড় ঢোক গিলে সুবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ।

বোনের কাছে ছেলেটার সম্পর্কে জানতে চাইলে যানতে পারে ছেলেটা তার বোনের দেবর কাব্য ,আরো জানতে পারল বিদেশে কাব্যের একাধিক মেয়ের সাথে রিলেশন ছিল।আর কাব্যের ভয়ংকর রাগের কথা।
সেই থেকে কাব্যের প্রতি ওর কোনো আগ্রহই রইল না ।
কাব্যের সাথে ওর পরিচয় হওয়ার পর থেকে,যতবার ওর সাথে কাব্যের দেখা হয়েছে, কাব্য বিভিন্ন ভাবে সুহার সাথে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু সুহা সবসময় ওকে এড়িয়ে গেছে ।
ফর্মালিটির দুই একটা কথা বলেই পালিয়ে পালিয়ে বেড়াত।কাব্যের সাথে কথা বলতে অস্বস্তি হতো ওর মনে হতো কোনো প্লে বয়ের সাথে কথা বলছে।
কাব্যের সাথে পরিচয় হবার পর থেকে প্রায়ই কাব্যকে ওর ভার্সিটিতে দাড়িয়ে থাকতে দেখতো ।কাব্য একদিন ভার্সিটিতে সুহার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল আর সুহা কথা না বলে চলে যাচ্ছিল সেটা দেখে কাব্য রেগে গিয়ে যখন জোর করছিল সুহাকে কথা বলার জন্য ,তখন ভয়ে সুহা কেঁদে দিয়েছিল।তারপর থেকে কাব্য ওর সাথে কোনো কথা বলার চেষ্টা করতো না শুধু দাড়িয়ে তাকতো ।তাই এই বিষয় নিয়ে সুহা ততোটা মাথা ঘামায় নি।
ভেবেছিল এখানে কোনো মেয়ের সাথে হয়তো রিলেশন করছে তাই আসছে।
সেদিনের পর থেকে কোনো ছেলে সুহার সাথে কথা বললে পরেরদিন সুহা কথা বলতে গেলেই সে এড়িয়ে যতো,
সুহা বিষয়টা প্রথম খেয়াল না করলেও পরে দেখলো ভার্সিটির কোনো ছেলেই ওর সাথে কথা বলে না ও বলতে গেলেই তারা কেমন ভয়ে ভয়ে ওকে এড়িয়ে যায়।
এসব বিষয় কিছুই সুহার মাথায় ঢুকল না কিন্তু সে বিষয়টাতে ততোটা পাত্তা দিলনো না।
কারন ভার্সিটিতে কোনো ছেলের সাথে সুহার গভীর কোনো সম্পর্ক ছিলো না।
তার কিছুদিন পর ভার্সিটিতে একটি নতুন ছেলে সুহার সাথে মিস বিহেভ করে আর ওর হাত ধরে ,
কাব্য সেদিন ছেলেটাকে এতো মার মেরেছিল মারতে মারতে শেষে ছেলেটার হাতটাই ভেঙ্গে দিয়েছিল ।
সেটা দেখে সেদিন সুহা ভয়ে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।
জ্ঞান ফিরে নিজেকে নিজের বিছানায় আবিষ্কার করেছিল কিন্তু গায়ে ছিল প্রচন্ড জ্বর যে জ্বর সারতে
টানা সাত দিন লেগেছিল ।
সেদিনের পর থেকে কাব্যকে দেখলে ভীষন ভয় পেতো।
কাব্যকে সামনের দিকে দেখলে ও পিছন দিক দিয়ে পালিয়ে যেত।
ভয়ে বোনের বাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রায়।
কিন্তু কাব্য প্রতিদিনই ভার্সিটিতে গিয়ে দাড়িঁয়ে থাকতো।
এভাবেই চলছিল দিন।
কিন্তু বোনের একমাএ মেয়ের জন্মদিন হওয়ায় বাধ্য হয়ে এখানে আসতে হলো ।আর এসে এমন বিশ্রী ঘটনার সম্মুখীন হতে হলো।
কাব্য ভাইয়া কেন এমন করছেন আমার সাথে ,আমার কাছে কি চান উনি?
যতই আমি তাকে এড়িয়ে চলে তার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাইছি ততই উনি এগ্রেসিভ হয়ে আমার আরো কাছে চলে আসছেন।

হাঠাৎ আযানের সুর কানে আসায় ভাবনায় ছেদ পরলো আমার।

হাঁটু থেকে মাথা তুলে বসলাম,মাথাটা ভার হয়ে আছে
সারা রাত জেগে থেকে কান্না করার জন্য হয়তো এমন হচ্ছে ।
ঠোঁটে এখনও মনে হচ্ছে কাব্য ভাইয়ার স্পর্শ লেগে আছে ।উন্মাদের মতো হাতের উল্টো পিট দিয়ে কয়েক বার ঠোঁট জোরা মুছতে লাগলাম,কিন্তু নাহ তবুও মনে হচ্ছে স্পর্শটা যাচ্ছে না ।
উঠে দাঁড়ালাম আবার শাওয়ার নিতে হবে ,পানি দিয়ে এই স্পর্শগুলো মুছে ফেলতে হবে তা নাহলে শান্তি পাবো না।
আমার সমস্ত শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে এই অপরাধের জন্য কাব্য ভাইয়াকে কঠোর শাস্তি দেই।
কিন্তু কি করবো আমি ,কি শাস্তিই বা দেবো এই দানবটার সাথে কিছুতেই পেরে উঠবো না আমি।
আর এই অপ্রীতিকর ঘটনা আমি কাউকে কিভাবে বলবো।
মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম আর কোনদিন কাব্য ভাইয়ার সামনে আসাতো দূরের কথা এই বাড়িতেও আর কোনদিন আসবো না, যত দিন উনি এখানে আছেন।
দরকার পরলে ভার্সিটিতে ও আর যাবো না।

ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নায় নিজের মুখ দেখে চমকে উঠলাম ,চোঁখ দুটি কেমন ফুলে লাল হয়ে আছে অতিরিক্ত কান্না করার জন্য।
ঠোঁটের দিকে চোঁখ পরতেই রাগে সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো ,চোঁখে সামনে বার বার রাতের ঘটনাটা ভেসে উঠতে লাগল ,মনে হচ্ছিল ঠোঁট দুটি নিজের থেকে আলাদা করে দেই।
এলোমেলো ভাবে দু হাত দিয়ে সমস্ত মুখে পানির জাপটা দিতে লাগলাম।

শাওয়ার সেরে নামাজ পরে নিলাম।
তারপর জানালা খুলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম সকাল হওয়ার অপেক্ষায়।
কাব্য ভাইয়া উঠার আগেই এখান থেকে চলে যেতে চাই ।কিছুতেই উনার মুখমুখি হতে চাইনা।
এই ভয়ংকর কালো রাতটা আমার জীবন থেকে মুছে ফেলতে চাই ।

সকাল হতেই নিচে নেমে আসতে লাগলাম,ভয়ে ভয়ে চারিদিকে তাকাচ্ছি কোথাও কাব্য ভাইয়া আছেন কিনা সেটা দেখার জন্য ।
উনি ঘুম থেকে দেড়িতে উঠেন জানি তবুও কেন যানি ভয় করছে।
উনাকে এখানে না দেখে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম।যত দ্রুত সম্ভব এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরতে হবে।
নিচে নামতেই আপুর সাথে দেখা হলো ।
আমাকে দেখেই আপু আতংকে উঠে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,
চোঁখ মুখের এই অবস্তা কেনো?রাতে কি আমি ঘুমাই নি?
রাতে ভীষন মাথা ব্যাথা করেছিল তাই ঘুম হয়নি বলে আপুকে ম্যানেজ করলাম।
স্নেহাকে নিয়ে খেলা করছি,বাবুটা দেখতে একদম কিউটের ডিব্বা।গুলোমোলো একটা পুঁতুল দেখলেই শুধু আদর করতে ইচ্ছা করে।
হাসলে আবার গালে ছোটছোট দুইটা ডিম্পল পরে পুতুলটার।
কি যে মিষ্টি দেখায় ওকে হাসলে সেটা বলে বুঝাতে পরবো না।
ও আমার খুলে বসে হাসছে আর খেলা করছে ।
আর আমি ভয়ে ভয়ে কিছুক্ষণ পর পর উপরে তাকাচ্ছি কাব্য ভাইয়া আসছেন কিনা দেখার জন্য।
আপুকে তাড়া দিতে লাগলাম বাসায় ফিরার জন্য,
কিন্তু আপু তো আর আমাকে নাস্তা না করিয়ে বাসায় ফিরতে দিবেন না ।
কাজের লোকের সাহায্যে আপু নাস্তা ডাইনিং এ সাজাতে লাগলেন।
আমি স্নেহাকে নিয়ে বসে আছি কিন্তু মনে একটুও শান্তি পাচ্ছি না ।জানি না কেন কোন এক অজানা ভয়ে বাব বার বুক কেঁপে উঠছে ।
ভালোই ভালোই এই বাসা থেকে বেরিয়ে পরতে পারলেই বাঁচি।আর সেটা অবশ্যই কাব্য ভাইয়া উঠার আগেই।

নাস্তার টেবিলে বসে আছি আমি ,আপু আর উনার শাশুড়ী ।আপুর শশুড় বেঁচে নেই আপুর বিয়ের অনেক বছর আগেই তিনি মারা গিয়েছেন।আর দুলাভাই ব্যবসার কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে কাটান ।
আপুর বাসায় মানুষজন বলতে আপু,আপুর শাশুড়ী ,কাব্য ভাইয়া,স্নেহা আর কাজের লোকজন।
নাস্তা করছি কিন্তু খাবার আমার গলা দিয়ে নামছে না,বার বার উপরের দিকে তাকাচ্ছি,
শুধু মনে হচ্ছে এই বুঝি উনি এসে পরলেন এই বুঝি উনি এসে কোনো কান্ড ঘটিয়ে ফেলেন।

আমার এই অবস্তা দেখে আন্টি জিজ্ঞেস করতে লাগলে ,আমি খাচ্ছি না কেন কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি ,
আমি উনার এমন প্রশ্নে মৃদু হেসে মাথা দু দিকে নাড়লাম।
আন্টি অনেক ভালো মানুষ, ভীষন মিশুক এবং একজন পরিপাটি আধুনিক মহিলা,দেখতেও ভীষন সুন্দর।
কথা বার্তায় ,পোশাকে ,কাজে কর্মে উনার আধুনিকতা ও বুদ্ধিমতার পরিচয় পাওয়া যায়।
উনার চোঁখের দিকে তাকালে বুঝা যায় এই বুদ্ধিদীপ্ত অভিজ্ঞ চোঁখ দুটি কিছু না বললে ও অনেক কিছু বুঝে যায়।
আপুর বাসার সবাই অনেক ভালো শুধু কাব্য ভাইয়া ছাড়া ।আমি নিশ্চিত হসপিটালে যখন আন্টি ছোট ছেলের জন্ম হয়েছিল তাকে পাল্টে ফেলে কেউ এই বজ্জাতটাকে রেখে গেছে।
আন্টির মতো একজন অসাধার মহিলার ছেলে কখনই এই বজ্জাতটা হতে পারে না।
নাস্তা কোনো মতে সেরে আপু আর আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম ।
বাইরে এসে চোঁখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিলাম।
আহ্! কি শান্তি এই অসহ্য প্রাণিটা আর কখনও আমার নাগাল পাবে না।
ভাবতেই ভীষন আনন্দ লাগছে।
শ্বাস নিয়ে চোখ খুলে তাকালাম,তাকিয়েই আমি
৪৪০ ভোল্টের শক খেলাম।

(চলব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here