প্রিয়_অভিমান পার্ট : ৫,৬

0
1309

#প্রিয়_অভিমান
পার্ট : ৫,৬
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
পার্ট : ৫

তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া গাড়ীতে হেলান দিয়ে দুহাত পকেটে পুরে গম্ভির মুখ নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছেন।
উনার চোঁখ মুখ ফোলে রয়েছে ,চোঁখটা ও ভীষন লালচে হয়ে আছে দেখে বুঝা যাচ্ছে রাতে একটুও ঘুমাননি।
উনাকে দেখে আমার মাথা ভন ভন করে ঘুরছে ,কান দিয়ে মনে হচ্ছে গরম ধোয়া বের হচ্ছে।
ভয়ে আমার অসহনিয় গরম লাগছে ,শরীর থেকে ঘাম ঝরছে ফোঁটা ফোঁটা হয়ে।
নিজেকে প্রচন্ড শক্তিহীন অসহায় লাগছে।
পা দুটি ভয়ে জমে বরফ হয়ে গেছে,মন চাইছে এখান থেকে ছুটে পালিয়ে যাই কিন্ত এক পা ও নড়তে পারছি না।
যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম।
এক পা ও এগুতে পারলাম না।
আমি সব সময় যা ভাবি হয় তার উল্টোটা সেটার আবার প্রমান পেয়ে গেলাম।
ভেবেছিলাম কাব্য ভাইয়া উঠার আগেই এখান থেকে পালিয়ে যাবো কিন্তু পুরা কপাল আমার আমার আগেই উনি উঠে বসে আছেন।
এখন কিভাবে পালাবো সেটাই ভাবতে লাগলাম।
বিপদের সময় নিজের মাথাটাও শত্রু হয়ে যায় একদমই কাজ করে না।
.
আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাব্য ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন ।
সেটা দেখে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না ।
এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে তাকলে যে আমি ঘোর বিপদের মাঝে পরবো সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে।
নিজের মাঝে সাহস যুগিয়ে প্রাণ পণে দিলাম এক দৌড় কিন্তু বেশী দূর যেতে পারলাম না তার আগেই কাব্য ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে ফেললেন শক্ত করে।
হাত ধরায় আমি ঘুরে তাকাতেই উনি আমার হাতে একটা হেচকা টান দিলেন আর আমি গিয়ে পরলাম উনার বুকে।
আমার কপালটা উনার বুকে গিয়ে ঠেকল,
উনি উনার হাত দিয়ে আমার কোমরটা শক্ত করে ধরে রইলেন।
আমি মাথা তুলে তাকাল কাব্য ভাইয়ার দিকে ,
উনি কঠোর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমি তাকতেই কাব্য ভাইয়া চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলেন,
‘আমি ভেবেছিলাম তুমি এমন কিছুই করবে ,তাই তো সেই ভোর বেলা থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি তোমাকে ধরার জন্য।
আর তুমি কিনা আমাকে ফাঁকি দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছো।
তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে পালাতে দেবো।
এই কাব্যর কাছ থেকে পালানো এতো সহজ নয়।
এক মাএ আল্লাহ আর মৃত্যু ছাড়া এই পৃথিবীতে কারো সাধ্য নেই তোমাকে আমার কাছ আলাদা করার।
এতদিন অনেক সহ্য করেছি তোমার এই পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো কিন্তু আর নয়।
তোমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছি ,ভেবেছিলাম আস্তে আস্তে তুমি আমার সাথে সহজ হতে পারবে,কিন্তু এখন বুঝতে পারছি তুমি
ঠিক হওয়ার মানুষ নও।
কাব্য ভাইয়ার বলা কথা গুলো আমার মাথার উপর দিয়ে গেল ,আমি তো উনার কথা কিছুই মন দিয়ে শুনছি না, আমি ব্যস্ত নিজেকে উনার হাত থেকে ছাড়াতে।
অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু আমি ব্যর্থ ।কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না।অবশেষে পরাজিত মুখ নিয়ে,
কাব্য ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেইস বানিয়ে
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠালাম,
‘প্লিজ ভাইয়া আমাকে ছাড়ো আমি বাসায় যাবো,
আমি তো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি আমার সাথে এমন করছো কেন?
আমার একথা শুনে কাব্য ভাইয়া তাচ্ছিল্যের সাথে বলে উঠলেন,
‘তুমি তো আমার সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করে ফেলছো,
যা এত দিন কারো করার সাধ্য হয়নি ,
তুমি আমার এতো বড় একটা ক্ষতি করেছো যেটার জন্য এই কাব্য নিজেকে নিজের মাঝ থেকে হারিয়ে ফেলেছে।
তোমাকে আমি কিছু বলার জন্য অনেক বার তোমার কাছে গিয়েছি ,কিন্তু তুমি আমাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে বার বার হয় এড়িয়ে গেছো নয় পালিয়ে গেছো,
এই পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো খেলাটা আমি আর নিতে পারছি না।
আজ আমি এমন কিছু করবো যা তোমার পালিয়ে বেরোনোর সব রাস্তা বন্ধ করে দিবে।
ক্ষতি যখন করেছো ক্ষতি পূরণ তো তোমাকে দিতেই হবে।
বলেই উনি আমার কোমড় ছেড়ে আমার হাত ধরলেন শক্ত করে,তারপর টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন গাড়ীর দিকে।
আমি অনেক মিনতি করলাম যে আমি উনার সাথে যেতে চাই না কিন্তু উনি আমার কোনো কথাই শুনলেন না ,জোর করে আমাকে গাড়িতে তুলে দরজা লক করে দিলেন,
তারপর উনি এসে উঠে বসে গাড়ী স্টার্ট দিলেন।
সেটা দেখে আমি চিৎকার করে বলতে লাগলাম,
‘আমি তোমার সাথে যেতে চাই না আমি একাই বাসায় ফিরতে পারবো,
তোমার আমাকে পৌচ্ছে দিতে হবে না ,প্লিজ গাড়ি থামাও!!
কিন্তু উনি আমার কোনো কথার উওর দিলেন না নির্লিপ্ত ভঙিতে ড্রাইভ করতে লাগলেন ।
ড্রাইভ করতে করতে উনি কার সাথে ফোনে কি যেন কথা বলতে লাগলেন ,
আমি সেটা বুঝতে পারলাম না কারন আমি তখনও উনার দিকে তাকিয়ে একনাগারে বলে চলছি গাড়ী থামাতে ।
অনেকক্ষন একি কথা বলতে বলতে আমি হাপিয়ে উঠালাম কিন্তু কাব্য ভাইয়ার কোনো হেলদোল নেই উনি মুখে গাম্ভীর্যপূর্ন ভাব রেখে নিজের মতো গাড়ী চালাচ্ছেন আমার দিকে তাকাচ্ছেনা পর্যন্ত।
বুঝতে পারলাম আমার আর কিছুই করার নেই,আমি শুধু শুধু নিজের এনার্জি লস করছি উনি তো আমার কোনো কথাই কানে নিচ্ছে না।
বড় একটা নি:শ্বাস ফেলে সামনের দিকে তাকালাম ।
তাকিয়ে আমার চোখ ছানা বড়া হয়ে গেল।
এটা তো আমার বাসার রাস্তা নয় ,উনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
রাস্তার দিকে তাকিয়ে আমি এক বিকট চিৎকার দিয়ে বলে উঠালাম,
‘ভাইয়া এটা আমার বাসার রাস্তা নয় তুমি ভুল রাস্তা দিয়ে যাচ্ছো,
আমার চিৎকার শুনে কাব্য ভাইয়া জোরে গাড়ী ব্রেক করলেন তারপর অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকালেন,
উনার এভাবে তাকানো দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলেম,
একটা ঢোক গিলে তুতলাতে তুতলাতে বলে উঠলাম,
‘ তু তুমি ভুল রাস্তা দিয়ে যাচ্ছো।
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া মৃদু গর্জে উঠে বললেন,
আমি অন্ধ নই কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি সেটা আমি স্পট দেখতে পাচ্ছি ।
যদি তুমি মুখ বন্ধ না করে বসো কি করে মুখ বন্ধ করতে হয়ে সেটা আমার ভালো ভাবে জানা আছে ।
রাতের কথা নিশ্চই ভুলে যাও নি সেই রকম কিছু যদি না চাও মুখ বন্ধ করে বসে থাকো।
উনার কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম তবুও সাহস যুগিয়ে বলে উঠলাম,
‘ভাইয়া আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
আমার কথা শুনে উনি একটু দুর্বোধ্য হেসে বললেন,
‘কোথায় যাচ্ছি সেটা একটু পরই বুঝতে পারবে।
আর যদি কোনো প্রশ্ন করো তাহলে রাতের ঘটনাটা এখানে আবার ঘটবে ।
আমার কিন্তু কোনো প্রবলেম নেই,তোমার ঠোঁটের টেস্টটা কিন্তু অসাম।
নাউ চয়েজ ইজ ইউস!!!
বলেই উনি আবার গাড়ী ড্রাইভিং করতে লাগলেন।
উনার কথা শুনে আমি বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে তাকিয়ে রইলাম,
আর একটি কথাও বলতে পারলাম না,
রাতের ঘটনা আবার ফেইস করার মতো সাহস আমার নেই ।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ,উনি চাইছেনটা কি,
অজানা ভয়ে আমার বুক ধুর ধুর করে কাঁপতে লাগল,
অনেক প্রশ্ন আমার মাথার মাঝে ঘুরা ফিরা করছে কিন্তু ভয়ে কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারছি না।
আমি এক মনে ভেবেই চলছি ,আমি উনার কি ক্ষতি করলাম ,আমার জানা মতে আমি তো উনার কোনো পাকা ধানে মই দেই নি,তাহলে উনি কিসের ক্ষতির কথা বলছেন।
নিজের অজান্তেই কি উনার কোনো বড়সড় ক্ষতি করে ফেললাম।আর সেটার শাস্তি দিতেই কি উনি আমাকে কোনো গোপন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে খুন করতে।
খুন কথা মনে হতেই ভয়ে আমার সমস্ত শরীর কাটা দিয়ে উঠল,আমি ভয়ে ভয়ে চোরা চোঁখে একবার কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকালাম ,উনার মুখের দিকে তাকালে কেউই বুঝতে পারবে না উনি এতো ভয়ংকর একজন মানুষ,
আজই কি তাহলে আমার শেষ দিন,
ভয়ে আমি এসি গাড়ীর মধ্যেও কুলকুল ঘামতে লাগলাম।
হঠাৎ গাড়ী থামার শব্দে আমার ভাবনার ঘোর কাটল।
তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া গাড়ী থেকে নামছেন,
উনি নেমে আমার দিকের দরজা খুলে দিলেন ,আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি চোঁখ দিয়ে ইশারা করলেন নামতে,
আমি গাড়ী থেকে নেমে সামনের দিকে তাকলাম, তাকিয়েই আমার চোঁখ বিষ্ফোরিত এবং মুখ রক্ত শূণ্য হয়ে গেল।

(চলবে)

#প্রিয়_অভিমান

পার্ট : ৬

লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
.
তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া আমাকে একটা বিরাট বড় পার্লারের সামনে নিয়ে এসেছে ,কিন্তু উনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন কি করতে চাইছেন উনি আমার সাথে ,
আমি বিস্ফোরিত চোঁখ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালাম কাব্য ভাইয়ার দিকে,
উনি আমাকে তাকাতে দেখে বলে উঠলেন,
,ভেতরে চলো কাজ আছে ,
উনার কথায় আমার কোনো হেরফের হলো না ,
আমি যে ভাবে ছিলাম সেভাবেই তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম,
আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে তাকতে দেখে কাব্য ভাইয়া আবার বলে উঠলেন,
‘কি হল এভাবে রসগোল্লার মতো চোঁখ বানিয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন,
তারপর ঝুকে আমার কানের কাছে মুখ এনে রসিকতার সুরে বলে উঠলেন,
হাঁটতে পারছো না, পায়ে ব্যাথা করছে, কোলে উঠতে চাও?
সেটা মুখ ফুটে বললেই পারো এতো হেজিটেট
করছো কেনো,
আমি তো তোমার নিজের মানুষই,
আমার কাছে এতো লজ্জা কিসের,
বলেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলেন,
উনার কথা শুনে আমার মেজাজ গরম হয়ে গেল ,চোঁখ রাঙিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
‘আমি এখানের ভিতরে কেন যাবো,আমাকে বাসায় না নিয়ে গিয়ে তুমি এখানে কেন নিয়ে আসলে ,
তোমার প্রয়োজন হলে তুমি যাও,
আমার চোঁখ রাঙ্গানো দেখে উনি রেগে গিয়ে বলে উঠলেন,
একদম আমাকে চোঁখ রাঙাবে না ,আমি কিন্তু ভুলে যাবো আমরা পাবলিক প্লেসে আছি,
উনার কথা শুনে মনের সব সাহস বেলুনের মতো চুপসে গেল,
আমি কিছু না বলে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম,
আমাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে উনি স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলেন,
তোমাকে এখানে একটা জরুরি কাজের জন্য নিয়ে এসেছি,
আমি অবাক হায়ে উনার মুখের মুখের দিকে তাকিয়ে শুনতে লাগলাম উনার কথা,
কাব্য ভাইয়া থেমে আবার বলে উঠলেন,
আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে একটা নাটক বানাচ্ছি সেখানে একটা কনের রুল আছে ,যাকে এই রুলটা প্লে করতে দিয়েছিলাম সে আজ জানিয়েছে যে সে এটা করতে পারবে না,এই অল্প সময়ে এখন হিরইন পাবো কোথায় তাই এই রুলটা তোমাকে প্লে করতে হবে,তোমাকে কনে সাজানোর জন্য এখানে নিয়ে এসেছি।
উনার কথা শুনে আসমান ভেঙে আমার মাথায় পরলো,বিচলিত মুখে উনার দিকে তাকালাম,
আমার তাকানো দেখে কাব্য ভাইয়া বলে উঠলেন,
ভয় পাবার কোনো কারন নেই মাএ দশ মিনিটের একটা শট আমি কিন্তু তোমাকে ভার্সিটির অনুষ্ঠানে নাটকে অংশগ্রহন করতে দেখেছি,
তুমি যদি আমার এই উপকারটা করো তাহলে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আর কখন তোমার ভার্সিটিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাকবো না,
উনার কথা গুলো আমি এতক্ষন নিরব স্রোতার মতো শুনলাম,
ভেবে পাচ্ছি না কি বলবো ,এই কাব্য ভাইয়াটা বারবার কেন যে আমায় ফাসিয়ে দেয়,
প্যারা দেওয়ার জন্য উনি কি পৃথিবীতে আর কাউকে পান না শুধু আমাকেই পান।
আমি যে উনার কোন জন্মের শত্রু তা উনিই ভালো জানেন।
আমাকে কিছু না বলতে দেখে উনি অসহায় মুখে আবার বলে উঠলেন,
প্লিজ সুহা রাজি হয়ে যাও !! এতে কিন্তু তোমার ও লাভ আছে।
উনার অসহায় মুখ দেখে আমার খুব খারাপ লাগল,
আহারে বেচারা হয়তো সত্যি বিপদে পরেছে আর তাছাড়া এটা করলে আমিও উনার হাত থেকে বেঁচে যাবো,
উনাদের বাড়িতে তো আর জীবনেও আসবো না,আর উনি তো আমাকে কথা দিচ্ছেন ভার্সিটিতে ও আর যাবেন না।
তাহলে তো এই রাগী রাক্ষসটার মুখমুখি আমাকে আর কখনও হতে হবে না।
এই একটা সুযোগ আছে নিজেকে বাঁচানোর ।
বুদ্ধিমানেরাই তো সুযোগকে কাজে লাগায়,
আর আমি একজন বুদ্ধিমতি ,আমারও উচিত সুযোগকে কাজে লাগানো।
.
আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বলে উঠলাম,
আমি রাজি তোমার কথায়,তুমি কিন্তু তোমার কথা রেখো।
আমার কথা শুনে উনি দুর্বোধ্য হেসে মাথা নাড়ালেন,
.
ভেতরে বসে আছি দুই তিন জন মেয়ে মিলে আমাকে সাজাচ্ছে ,একদম নব বধূর সাজে,
ভীষন বিরক্ত লাগছে তবুও সব কিছু নিরবে সহ্য করছি ,এটা ভেবে মনকে শান্তনা দিচ্ছি আজকেই শেষ এর পর থেকে এই অসহ্য প্রাণিটাকে কখনও দেখতে হবে না,
আমাকে আর কোনো ভাবেই বিরক্ত করতে পারবে না।
মেয়ে গুলো অনেক যত্ন নিয়ে সাবধানে আমাকে সাঁজাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে একটু ভুল হলে কেউ ওদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবে।
আমি কাঠের পুতুলের মতো বসে আছি ,
এই সাঁজগুজের প্রতি আমার কোনো আগ্রহই লাগছে না।
কাব্য ভাইয়া আমার জন্য বাইরের রুমে ওয়েট করছেন।
মন চাইছে গিয়ে গলা টিপে উনাকে মেরে ফেলি।
.
টানা এক ঘন্টা পর আমাকে সাজানো শেষ হলো ,
মেয়ে গুলো আমাকে সাঁজিয়ে দিয়ে বলতে লাগল,
‘আপনাকে কোনো অপ্সরির থেকে কোনো অংশে কম লাগছে না,
আপনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে,
যে আপনাকে চয়েজ করছে এবং আপনার সাঁজগুজের জন্য এসব জিনিস কিনেছে তার পচ্ছন্দ সত্যি অসাধারন এবং প্রশংসার যোগ্য।
ওদের কথায় আমি কিছু বললাম না শুধু একটু মৃদু হাসলাম।
আয়নাতে নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারছি না,
বাহ্! বধূবেশে আমায় তো অন্য রকমের সুন্দর লাগছে,
নিজের সৌন্দর্য দেখে নিজেই আশ্চার্য্য হলাম,
বধূবেশে হয়তো সব মেয়েদেরই এমন সুন্দর লাগে,
তাই হয়তো আমাকেও এমন অবাক করা সুন্দর লাগছে।
ভারী গয়না ,গাঢ় খয়েরি রংয়ে লেহেঙ্গা আর সাঁজগুজে মনে হচ্ছে কোনো রুপকাথার রাজ্যের রানী ।
.
বাইরের রুমে এসে দেখি কাব্য ভাইয়া আমার লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং করে গাঢ় খয়েরি রংয়ের পান্জাবী পরে চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছেন,
খয়েরি পান্জাবীতে উনাকে ভীষন সুদর্শন লাগছে ,
ফর্সা মুখ, গালে কুঁচা কুঁচা চাপ দাঁড়ী ,ঘন ব্রু যুগলের নিচে গভীর এক জোরা চোঁখ।
বেবি পিংক কালারের এক জোরা ঠোঁট সব মিলিয়ে অসাধার একজন পুরুষ ।
পার্লারে কর্মরত কয়েক জন মেয়ে হা হয়ে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,আরো অনেকে আড় চোঁখে বারবার তাকাচ্ছে।
কাব্য ভাইয়ার এমন সাঁজগুজের মানে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না,
আমাকে দেখা মাএ উনি দাঁড়িয়ে গেলেন ,
কাব্য ভাইয়া অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন,
.
কাব্য সুহা কে দেখে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে পরল,
ওর মনে হচ্ছে সয়ং কোনো পরি আকাশ থেকে নেমে ওর সামনে দাড়িয়ে আছে।
ওর মিষ্টি পরিটাকে বধূবেশে ওর কল্পনার চাইতেও বেশী সুন্দর লাগবে নিজেই ভাবতে পারে নি।
সুহার এমন সৌন্দর্য দেখে বিভোর হয়ে আশেপাশের সব কিছু ভুলে গিয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে সুহার দিকে তাকিয়ে রইল,
কাব্য যেন চোঁখের পলক ফেলতে ও ভুলে গেল।
.
উনার এমন তাকানো দেখে আমার অস্বস্তি লাগল,
আমি উনার একটু কাছে গিয়ে হালকা কেঁশে উঠালাম,
আমার কাঁশির শব্দ শুনে উনার ধ্যান ভাঁঙ্গল,
উনি হকচকিয়ে উঠে একবার নিচের দিকে তাকিয়ে আবার ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন,
তখন আমি উনার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে সন্দেহের চোঁখ নিয়ে বলে উঠালাম ,
‘তুমি এভাবে সেঁজেছো কোন মতলবে,
আমার প্রশ্ন শুনে উনি ব্রু নাচিয়ে জবাব দিলেন,
নাটকের একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্যারেক্টার আমাকে করতে হবে,
অভিনয় কি শুধু তুমি একা জান নাকি আমিও যে অভিনয়ে পারদর্শি সেটা আজ তোমাকে দেখিয়ে দেবো।
আমি উনার কথায় বিস্ময় নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলাম,
বাবাহ্ কাব্য ভাইয়া নাটকও বানাচ্ছেন আবার সেই নাটকে বিশেষ চরিএে অভিনয় ও করছেন উনার কি ট্যালেন্ট মাইরি।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here