প্রিয়_অভিমান পার্ট : ৯,১০

0
1403

#প্রিয়_অভিমান
পার্ট : ৯,১০
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
পার্ট : ৯
.
সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমি ফ্রেশ হয়ে একটা ব্লু কালারের জামদানী শাড়ী পরে আপু রুমে বসে রইলাম,শাড়ী টারি পরার কোনো ইচ্ছাই ছিল না কিন্তু আপুর নির্দেশে পরতে হলো ।
বসে বসে ভাবছি মা আসলে আজই আমি মায়ের সাথে এখান থেকে চলে যাবো কিছুতেই এখানে থাকবো না।
এত বড় মিথ্যেবাদী শুধু মিথ্যেবাদী নয় মহা মিথ্যাবাদী লোকের সাথে আমি কিছুতেই থাকবো না।
মানুষ এতোটা খারাপ হতে পারে সেটা উনাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।
নিজের বোকামীর জন্য এইভাবে ফেঁসে যাবো বুঝতেই পারিনি ভীষন রাগ লাগছে নিজের উপর ।কি থেকে কি ঘটে গেল আমার জীবনে।মাকে কিভাবে সব সত্যি কথা বুঝাবো সেটাই ভাবতে লাগলাম,মা নিশ্চই আমার কথা বিশ্বাস করবেন।
হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে আমার সম্মতি ফিরল,
সামনে তাকাতেই দেখি কাব্য ভাইয়া দরজা লাগিয়ে বাঁকা হেসে আমার দিকে এগোচ্ছেন,
উনার পরনে ছাই রংয়ে টাউজার আর ব্লু রংয়ে টি শার্ট চুলো গুলো ভেজা কিছু কপালের সাথে লেপ্টে আছে,বোধহয় এই মাএ গোসল করে এসেছেন।
উনাকে এভাবে এগোতে দেখে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল,
এই পাজি অসভ্য ছেলেটা এখানে কি চায় ,একি আমায় একটুও শান্তি দেবে না।
এর সাথে দেখা হবার পর থেকে আমার জীবনে শান্তি নামক জিনিসটা ডিলিট হয়ে গেছে।
এখন আবার কি করবে কে জানে এই ছেলেকে একদম বিশ্বাস নেই।এর প্রতিটা কাজে আমাকে ফাঁসানোর প্লান থাকে।নিশ্চই কোনো কুমতলবে এসেছে।
আমি উনার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠলাম,
দরজা বন্ধ করলে কেন ?আর তুমি এখানে কেন এসেছো এক্ষুনি বেরিয়ে যাও,
উনি আমার কাছে এসে বসে বলে উঠলেন,
বারে দরজা বন্ধ করবো না স্বামী স্ত্রী মাঝে প্রাইবেসি বলে একটা ব্যাপার আছে না , আর আমি আসবো না তো কে আসবে সদ্য নতুন বিয়ে করেছি বৌকে ছাড়া কি করে থাকি ,
ভীষন মিস করছিলাম তোমাকে,
তুমিও নিশ্চই আমাকে মিস করছিলে তাই না ,দেরি করে এসেছি বলে রাগ করে বের করে দিচ্ছো,বলেই আমার দিকে তাকিয়ে চোঁখ মারলেন,তারপর হাত দিয়ে চুল
ঠিক করতে করতে আবার বলে উঠলেন ,ইশ! কি অভিমানী আমার বৌ টা,এজন্য তো এত্তগুলা ভালবাসি,
ব্লু শাড়িতে তোমায় কি মিষ্টি দেখাচ্ছে একদম পার্ফেক্ট নতুন বৌ,আজকের পর থেকে তুমি বাড়ি সবসময় শাড়ী পরে থাকবে কিন্তু বাইরে বেরোলে কখনই শাড়ী পরে যাবে না,কথাটা যেন মাথায় থাকে ।বলেই আমার আরো কাছে চলে আসলেন ,
উনি আমার কাছে আসায় আমি পিছন দিকে পিছিয়ে একটু সরে বসলাম,আমার কান্ড দেখে উনি মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলেন ,
উনার হাসি আর উনার বলা কথাগুলো শুনে রাগে আমার সমস্ত কাঁপতে লাগল,
তাকে আমি দুই চোঁখে সহ্য করতে পারিনা আর সে বলে কিনা তাকে আমি মিস করছিলাম,আর মামার বাড়ীর আবদার সবসময় শাড়ী পরে থাকবে ,আমাকে হুকুম করা হচ্ছে ,রাগে মন চাইছিল উানার সিল্কি চুলগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেই চুলগুলোর সাথে সাথে শয়তানের কারখানায়টাও পুরে ছাই হয়ে যাক,
আমি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলে উঠালাম,
তুমি এমটা কেন করলে নিজে আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করে আবার সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে,
আমাকে বোকা বানিয়ে সব এমন ভাবে সাজালে এখন সবাইকে সব সত্যিটা বলেও কাউকে কিছু বিশ্বাস করাতে পারছি না,
তুমি খুব খারাপ,তুমি খুব খারাপ একজন মানুষ ,
কিছুতেই আমি তোমার সাথে থাকবো না মা আসলেই আমি মায়ের সাথে এখান থেকে চলে যাবো।
আমার কথাগুলো শুনে কাব্য ভাইয়া একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে উঠলেন,
তোমার ফ্যামেলি যদি সত্যি জানে যে আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছি তাহলে তারা কখনই এই বিয়ে মেনে নিবে না,আর তোমাকে আমার সাথে থাকতে দিবে না।তার জন্যই তো এতোটা নাটক করতে হলো,তুমি কি জানো সুহাপাখি এই বিয়ের প্লানিং করতে আমার কতটা কষ্ট হয়েছে আমার কত বুদ্ধি খরচ করতে হয়েছে।
কাল সারা রাত জেগে জেগে এই প্লানিংগুলো করেছি।একটুও ঘুমাই নি ।এন্ড ফাইনাললি আম সাকসেসফুল ।
আর তুমি কিনা বলছো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে,
আমার শাশুড়ী মা তোমাকে সাথে নিয়ে গেলে তো তুমি যাবো,তোমার চলে যাওয়ার কোনো পথই আমি খোলা রাখবো না,
বলেই উনি আমার কোলে মাথা রেখে ,আমার কোমড় শক্ত করে ধরে পেটে মুখ গুঁজে দিলেন,উনার আচমকা এমন কান্ডে আমার চোঁখ কপালে উঠে গেল ,উনি আস্তে আস্তে আমার পেট থেকে শাড়ী সরাতে লাগলেন আমি উনাকে বাঁধা দেওয়ার জন্য উনার হাত ধরতেই উনি একবার আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে উনার একটা হাত দিয়ে আমার হাত ধরে অন্য হাত দিয়ে শাড়ী সরিয়ে আমার উন্মুক্ত পেটে কিস করে বসলেন,সাথে সাথে আমার সমস্ত শরীর কাটা দিয়ে উঠলো ,পিটের শিড় দ্বারা বেয়ে এক শীতল স্রোত বয়ে গেল,হৃদপিন্ড ছুটলো ট্রেনের গতিতে,উনি আমার হাত ছাড়তেই আমি দু হাত দিয়ে উনাকে ধাক্কাতে লাগলাম,উনাকে যতই আমি ছাড়াবার চেষ্টা করছি ততই উনি আমাকে আরে শক্ত করে ধরতে লাগলেন ,
কিছুক্ষন পর উনি আমার পেট ছেড়ে দিয়ে গলায় মুখ গুঁজলেন,
উনার দু হাত এলোমেলো ভাবে আমার সমস্ত শরীরে বয়ে বেরাতে লাগলো,উনার এমন কান্ডে
আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হলো,আমি চোঁখ বন্ধ করে বড় বড় নি:শ্বাস নিতে লাগলাম ,আর প্রানপণে চেষ্টা করতে লাগলাম উানাকে ছাড়ানোর ,
কিন্তু উনাকে কিছুতে সরাতে পারছিনা,আমি যতই উনাকে সরাবার চেষ্টা করছি উনি ততই আরো শক্ত করে আমাকে আকড়ে ধরতে লাগলেন,
হঠাৎ দরজায় নক হওয়ার শব্দে কাব্য ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন , উনি আমাকে ছাড়তেই যেন আমি দেহে প্রান ফিরে ফেলাম,
উনি হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে দরজা খুলতে চলে গেলেন,
আমি দড়ফড়ি উঠে অপ্রস্তুত অবস্তায় শাড়ী ঠিক করতে লাগলাম ।
কিন্তু আমি সম্পূর্ন ঠিক হওয়ার আগেই কাব্য ভাইয়া দরজা খুলে দিলেন,
আমি সামনে তাকিয়ে দেখি দরজার ওপারে মা দাড়িয়ে আছেন,
আমি এলোমেলো চুল আর এলোমেলো শাড়ী নিয়ে এক লজ্জাজনক অবস্তায় পরলাম মায়ের সামনে,
অপ্রস্তুত ভাবে সব কিছু ঠিক করতে লাগলাম ,কোনো মতে নিজেকে সামলিয়ে কাব্য ভাইয়ার দিকে আড় চোখে তাকালাম ,
আমি তাকাতেই উনি একটা রহস্যময়ি হাসি দিয়ে বাইরে চলে গেলেন,
উনার এভাবে হাসার কোনো মানেই আমি বুঝতে পারলাম না,
কাব্য ভাইয়া বেরিয়ে যেতেই মা রুমে ঢুকলেন,
মায়ের সামনে এমন অপ্রীতিকর অবস্থায় পরে আমি লজ্জায় ভয়ে ঘামতে লাগলাম,যা যা ভেবে রেখেছিলাম মাকে বলবো সব কিছু গুলিয়ে গেল,কি থেকে কি বলবো ভেবে পরাচ্ছিলাম না ,এমন একটা অবস্থায় দেখার পর মা আদো আমার কথা বিশ্বাস করবেন কি না কে জানে,কোথা থেকে কি শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না,
আমি কিছু না বলে মায়ের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।

(চলবে )

#প্রিয়_অভিমান

পার্ট : ১০

লেখা নিশাত সিদ্দিকা
.
আমি অসহায়ের মতো একা একা বসে কাদঁতে লাগলাম,শেষ পর্যন্ত মা ও আমায় ভুল বুঝলেন,
কেউই আমার কোনো কথা শুনলো না সবাই কাব্য ভাইয়ের বলা মিথ্যা কথাগুলো বিশ্বাস করে নিল,
কাব্য ভাইয়া সবটা এতো নিখুঁত ভাবে সাজিয়ে ,আমায় এমন এক সিচুয়েশনে এনে দাঁড় করালেন যেখানে সত্যিটা আমি চিৎকার করে বললেও কেউ বিশ্বাস করবে না।
তারা ভাবছে আমি ভয় পেয়ে মিথ্যা কথা বলছি।
কারন সবাই জানে আমি ছোট বেলা থেকেই ভীতু প্রকৃতির ,কাব্য ভাইয়া আমার এই দুর্বলতারই সুযোগ নিলেন,
উনি খুব জগন্য একজন মানুষ ,উনার সাথে একটু রেগে কথা বলার জন্য উনি আমার এত বড় একটা ক্ষতি করে প্রতিশোধ নিলেন।
শুধু মাএ উনার জন্য মা আমাকে ভুল বুঝে এতোটা কষ্ট পেয়েছেন।
এর জন্য কাব্য ভাইয়াকে আমি কোনদিনও মাফ করবো না।
,
.
কিছুক্ষন আগের ঘটনা,
আমি মাথা তুলে মায়ের দিকে তাকালাম কিছু বলার জন্য ,আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলে উঠলাম,
মা তোমাকে আমার অনেক কিছু বলার আছে,মা কাব্য ভাইয়া আমাকে,
এটুকু বলার মাঝে মা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন ,
তোকে আর সাফাই গাইতে হবে না আমি সবটা শুনেছি,আর এখানে এসে যা দেখলাম তাতে আমার কাছে সবটা জলের মতো পরিষ্কার ,
তুই কাব্যকে আগ থেকে পছন্দ করতি ,সেটা আমাদের বললেই পারতি,
আমি মায়ের কথার মাঝখানে কেঁদে কেঁদে বললাম,
-মা আগে আমার কথাটা তো তুমি শুনো,তুমি আমায় ভুল বোঝছো,
আমার কথা শুনে মা আমাকে একটা ধমক দিয়ে বললেন,
আর কি শুনার বাকি রেখেছিস,কাউকে ভালবাসা তো অপরাধ না ,আমাদের একটিবার বলে দেখতে পারতি আমরা কি করি, তা না করে কাউকে কিছু না জানিয়ে
সবাইকে লুকিয়ে বিয়ে করে ফেললি,লুকিয়ে বিয়ে করতে ভয় করেনি এখন সেটা সবার কাছে স্বীকার করতে ভয় পাচ্ছিস।
তুই যে এভাবে এমন একটা কাজ করবি আমরা ভাবতে পারিনি ।তোর কাছ থেকে আমরা এটা আশা করিনি ,তোর এই কাজের জন্য তোর বাবা এবং আমি খুব কষ্ট পেয়েছি,
বলেই মা কেঁদে কেঁদে চলে গেলেন ,আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ।
,
হঠাৎ কারো আগমনের সারা পেয়ে আমার ভাবনার ঘোর কাটল,তাকিয়ে দেখি আপু এসেছেন,
আপু আমার কাছে আসতেই আমি আপুকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বলতে লাগলাম,
আপু মা আমাকে ভুল বুঝে কষ্ট পেয়ে চলে গেলেন,
মা,বাবা আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছেন আমি তাদের কাছে যেতে চাই,প্লিজ আপু আমায় বাড়ি যাবার ব্যবস্তা করে দে,
আমার নিজেকে ভীষন অপরাধী লাগছে,নিজেকে নিজে শেষ করে দিতে মন চাইছে,মায়ের চোঁখে অপরাধী হয়ে আমি বাঁচতে পারবো না,
আমাকে এই ভাবে পাগলের মতো কাঁদতে দেখে আপু আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আমাকে শান্ত হতে বলতে লাগলেন,
সুহা শান্ত হও বোন আমার এভাবে কাঁদিস না,তুই যা করেছিস তাতে বাবা,মায়ের খারাপ লাগারি কথা,কষ্ট পেয়ে মা অভিমান করে চলে গেছেন ,কিন্তু তারা তোর উপর বেশিদিন রাগ করে থাকতে পারবেন না,
দেখিস কিছুদিন পর সবটা ঠিক হয়ে যাবে ।
এরি মাঝে আন্টি ও রুমে চলে এলেন তিনি এসে ও আমায় শান্তনা দিতে লাগলেন,আন্টি বললেন,তিনি আমাদের নাকি বাবা,মায়ের কাছে নিয়ে যাবেন ক্ষমা চাওয়ার জন্য তাহলে নাকি তারা আর আমাদের উপর রাগ করে থাকতে পারবেন না,আরো বললেন বাবা , মারা সন্তানের উপর রাগ করে থাকতে পারে না সন্তান যত বড় ভুলই করোক না কেন।
আন্টি আর আপু কথায় আমি ভরসা পেয়ে কান্না থামিয়ে শান্ত হলাম,অপরাধ না করে ও আজ আমি কাব্য ভাইয়ের করা অপরাধের সমান অংশীদার ,কিন্তু উনাকে তো কেউ কিছু বলছে সব কথা আমাকে শুনতে হচ্ছে।
আপু আর আন্টি আমার কাছে বসে আমাকে আরো অনেক কিছু বুঝাতে লাগলেন,
তারপর অনেক রাত হয়েছে বলে তারা আমাকে খাবার খাওয়ার জন্য জোর করতে লাগলেন,তাদের অনেক করে বললাম যে আমি খাবো না আমার খিদে নেই কিন্তু তারা আমার কোনো কথাই শুলো না জোর করে আমাকে নিয়ে গেলেন।
,
.
নিচে এসে দেখি কাব্য ভাইয়া স্নেহাকে কোলে নিয়ে হাঁটছেন আর স্নেহা উনার কোলে ঘুমিয়ে পরেছে,
কি সুন্দর একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে পরম যত্নে ঘুম পাড়াচ্ছে একে দেখলে কারো বুঝার সাধ্য নেই এ এতো বড় একটা শয়তান।
আমি মাথা নিচু করে উনাকে পাশ কাটিয়ে চলে এসে আন্টির পাশে ডাইনিং চেয়ারে বসলাম,
খানিক্ষন পর আপু আর উনি ও চলে আসলেন,উনি এসে আমার সামনের চেয়ারে বসলেন,
আমি কোনদিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে খেতে লাগলাম,
হঠাৎ পায়ে কিছুর স্পর্শ পেয়ে আমি চমকে উঠলাম ,আমি খাওয়া থামিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম জিনিসটা কি,
এটা প্রথমে আমার পা চেপে ধরল তারপর পায়ের মাঝে আস্তে আস্তে স্লাইড করতে লাগল,আমি প্রথমে ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম কিন্তু
কিছুক্ষনের ব্যবধানে আমার আর বুঝতে বাকি রইল না এটা কি ,আমি অগ্নি দৃষ্টি উনার দিকে তাকালাম কিন্তু সে আমার অগ্নিদৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মহা আনন্দ খেতে খেতে আমার পায়ে স্লাইড করতে লাগল,
উনার এই পায়ে ঘষাঘষির অত্যাচারে আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল,এই আপদটা যে আমাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে কয়লা বানিয়ে শান্ত হবে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ।
পৃথিবীতে এতো এতো ভালো মানুষ থাকতে এর মতো একটা বজ্জাত লোকই আমার বোনের দেবর হতে হলো,
আর আজ থেকে আবার সে বজ্জাতটা আমার বর হয়ে গেল,ইশ!!আমার ভাগ্যটা এতো হলো কেন কে জানে,
আমি পা সরিয়ে নিতে চাইলে সে আমার পা শক্ত করে চেপে ধরছে,
বসে বসে এই অত্যাচার সহ্য করছি আর খাবার নাড়া ছাড়া করছি,
গলা দিয়ে আমার খাবার নামছে না,
আমাকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে আন্টি প্রশ্ন করলেন,
কি হলো সুহা তুমি খাচ্ছো না কেন কোনো সমস্যা,
কিছু হয়েছে তোমার মুখটা এমন দেখাচ্ছ কেন?
আমি আন্টির দিকে তাকিয়ে জোর করে মুখে একটা শুকনো হাসি এনে বললাম,
কিছু হয়নি আন্টি এইতো খাচ্ছি।
খাবার ছেড়ে উঠতেও পারছি না আপু আর আন্টির জন্য,উনারা কি ভাববেন,
উনার এই স্পর্শগুলো বারবার আমার শরীর কাঁপিয়ে তুলছে,আমার এই অবস্তা দেখে উনি মজা পাচ্ছেন কিছুক্ষন পর পর আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিয়ে হাসছেন,উনার এই হাসি দেখে রাগে আমার ইচ্ছা হচ্ছিল খাবার প্লেটটা উনার মুখে ছুঁড়ে মারি ,কিন্তু ইচ্ছে হলেই তো হবে না আমি যদি তার মুখে প্লেট ছুঁড়ে মারি দেখা যাবে এই রাক্ষসটা আমাকেই আছাড় মেরে ফেলে বর্তা বানিয়ে ফেলেছে ,নিজের ইচ্ছাকে নিজের মাঝে দমিয়ে রেখে
দাঁতে দাঁত চেপে খাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেলাম,মনে মনে উনাকে ভয়ংকর সব গালি দিতে লাগলাম ,অবশেষে অসহ্য হয়ে খানিক্ষন পর প্লেটে পানি ঢেলে উঠে পরলাম ,
,
.
ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে সোজা আপুর রুমে চলে এলাম,
কিছুক্ষন পর আপুও চলে এলেন,আপুর সঙ্গে বসে গল্প করতে লাগলাম ,বিয়ের সত্যিটা আর ভয়ে বলতে যাইনি ,বললেও বিশ্বাস করবে না উল্টো আমাকে ধমক দিয়ে বলবে বারবার একি মিথ্যে কথা কেন বলছি ,অনেকক্ষন আপুর সাথে কথা বললাম ,খুব ঘুম পাচ্ছে আপুকে ঘুমানোর কথা বলতেই আপু বলে উঠলেন,
কাব্য ভাইয়ার রুমে গিয়ে ঘুমাতে ,আজ থেকে নাকি ওটাই আমার রুম,
আপুর মুখে এমন কথা শুনে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল,আমি ওই রাক্ষসটার সাথে একি রুমে অসম্ভব !!!
আপুকে ব্ল্যাকমেইল করতে হবে,আজকের রাতটা কোনো মতে আপুর সাথে কাটিয়ে কালই আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে,
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে কাতর কন্ঠে রিকুয়েস্ট করতে লাগলাম,
আপু আজ আমি তোমার সাথে থাকবো ,প্লিজ আপু তুমি মানা করো না ,একটা রাত তোমার সাথে থাকিনা ,আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে মাকে ভীষন মনে পরছে ,বাড়িতে থাকলে তো মায়ের সাথে ঘুমাতাম,তুমি কি তোমার কাছে আমায় থাকতে দিবে না,প্লিজ আপু প্লিজ !
-কিন্তু সুহা ভাইয়া কি এটা মানবেন,
-প্লিজ আপু তুমি উনাকে একটু বুঝিয়ে বলো না,
আমার রিকুয়েস্ট করার মাঝে কাব্য ভাইয়া রুমে এসে ঢুকেলেন,উনাকে দেখে আমি থেমে গিয়ে অসহায় দৃষ্টি আপুর দিকে তাকিয়ে রইলাম,
উনি এসে আপুকে বলে উঠলেন,
কি হল ভাবি আমি কি এবার আমার বৌ কে নিয়ে যেতে পারি ,
আমি তখনও আপুর দিকে অসহায় মতো তাকিয়ে রইলাম,আপু একবার আমার দিকে তাকালেন তারপর কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
ভাইয়া একটা রিকোয়েস্ট ছিল,
আপুর কথা শুনে কাব্য ভাইয়া বলে উঠলেন,
ভাবি এমন কোনো রিকোয়েস্ট করো না যেটা আমি রাখতে পারবো না,
উনার কথা শুনে আপু দমে গেলেন,
কাব্য ভাইয়ার রাগ সম্পর্কে সবার ধারনা আছে তাই আপু উনাকে আর না ঘাঁটিয়ে ,আমার দিকে তাকিয়ে চোঁখ দিয়ে ইশারা করলেন আমি যাতে উনার সঙ্গে চলে যাই,
কাব্য ভাইয়া আমার দিকে আদেশের সুরে বলে উঠলেন,
সুহা রুমে চলো অনেক রাত হয়েছে,
উনার কথায় আমি জেদের সাথে বলে উঠলাম,
আমি কোথাও যাবো না আজ আমি আপুর সাথে এখানেই থাববো,
আমার কথায় উনি রেগে গিয়ে বলে উঠলেন,
আমাকে রাগালে কিন্তু খুব খারাপ হবে যেটা বলছি শুনো ,আমার সঙ্গে এক্ষুনি রুমে চলো,
উনার কথা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল কি পেয়েছেটা কি এই লোক সবসময় শুধু জোর খাটানো
আমি তো আজ কিছুতেই উনার সাথে যাবো না,
আমি উনার রাগকে তোয়াক্কা না করে বললাম,
আমি কারো সাথে কোথাও যেতে পারবো না আমি এখানেই ঘুমাবো বলেই আমি ঘুমানোর জন্য খাটে উঠতে যাবো তখনই কাব্য ভাইয়া এসে আমাকে পাজো কোলে তুলে নিলেন,
উনার এমন কান্ডে আমি হতবিহ্বল হয়ে পরলাম,তারপর চিৎকার করে বলতে লাগলাম ,ছাড়ো আমাকে আমি তোমার সাথে যাবো না ,আমি আপুর সাথে থাকবো,হাত পা ছুঁড়তে লাগলাম নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ,কিন্তু উনি কিছু না বলে আমাকে কোলে নিয়ে নির্লিপ্তভাবে হেঁটে যেতে লাগলেন ,উনার মুখের ভাব ভঙ্গি এমন যেন আমি উনার নিজের সম্পত্তি ,আর আপু নিরব দর্শকের মতো তাকিয়ে রইলেন আমাদের দিকে।
,
.
কাব্য ভাইয়া আমাকে উনার রুমে নিয়ে এলেন আমি তখনও মৃদু চিৎকার করছিলাম আমাকে ছাড়ার জন্য,
রুমে এসেই উনি আমাকে একটা ধমক দিলেন,
চিৎকার থামাও না হলে এক্ষুনি কোল থেকে ফেলে দিবো,
উনার ধমক শুনে আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম,
মুখ বন্ধ করে তাকালাম চারিদিকে তাকিয়ে আমি অবাক,
উনি আমাকে নিয়ে খাটে বসিয়ে দিলেন,তারপর উনি গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন,
উনার দরজা লাগানো দেখে ভয়ে আমার সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগল ,
উনি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন ।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here