প্রিয়_তুই,১৯,২০

0
264

#প্রিয়_তুই,১৯,২০
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_১৯

-”তবুও বলি, আপনার বড় ভাই মিশান কসম দিয়েছিল যেন আপনাকে না জানায়। কারণ উনি চাচ্ছিলেন না উনার আম্মুকে আপনি দেখেন।”

তিতাসের কথা শুনে ভোর মৃদু হাসল। মিশান এখনো তাকে আপন ভাবতে পারে নি। হয়তো এখানেও তার দোষ। এখন অবধি যা কিছু ঘটেছে বা ঘটছে সবকিছুর সঙ্গে সে জড়িত।
হোক সেটা স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়।

আর মিশানের মা ওর বাবার প্রথম স্ত্রী। যিনি মিশানকে জন্ম দিতে গিয়েই মারা গেছেন। এরপরে, ভোরের মাকে তার বাবা বিয়ে করেছিলেন। দিনকালও ভালোই কেটেছে। তবে ওর মা কখনো তিন সন্তানকে আলাদাভাবে দেখেন নি। বরং তাদের তুলনায় মিশান সর্বদা সবকিছু বেশি পেয়েছে। সেটা জেদের বশে হোক বা অন্য কোনোভাবে।হাজার দোষ করলেও তাকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে।কারণ সে হচ্ছে বাসায় বড় সন্তান।
তাছাড়া মিশানও তার মাকে সত্যি খুব ভালোবাসত, এখনো বাসে। সে কেন জানি ভয় পেতো, ভোর বা নিশান বুঝি নতুন মাকেও ওর থেকে কেড়ে নিবে। পূর্বের মতোই মা ওকে ছেড়ে চলে যাবে। এজন্য প্রায় সময় মাকে জড়িয়ে ধরে বলত ‘মা, ওহ মা, তুমি শুধু আমার মা।’
মিশান খুব সহজে মাকে মেনে নিলেও তাকে আর নিশানকে এখনো মেনে নিতে পারে নি। তাদের মধ্যে অদৃশ্য দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। তার মানে এই না, ওদের সঙ্গে কথা বলে না অথবা খুব খারাপ ব্যবহার করে। সে সবই করে তবে লিমিট রেখে। একচুল কমও না বেশিও না।সৌজন্যে রক্ষার্থে এই আর কি।
মায়ের মৃ/ত্যু/তে কষ্ট পেয়েই হয়তো মাকে শেষবার দেখতেও
দিতে চায়নি। বোধহয় এটা ভেবেছিল, ভোর ওর মাকে মেরে ফেলেছে। তবে সে দেখেছে, দূর থেকে। ওর মা মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একজন নার্স তাকে কল করেছিল। হসপিটালের সব খবরা-খবর তাকে জানিয়েছিল। এসব শুনে হঠাৎ ওকে কাঁদতে দেখে তিতাসের বাবা সবটা জানতে চান, সে বলেও।
দারোয়ান তখনো ভোরকে বের হতে দেয় না। পরে তিতাসের বাবা পেছনের দরজা দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।যেন তার মনে আফসোস না থাকে।যেহেতু চোখের দেখাটা দেখতে পেয়েছে
তাই সে মিশানের সঙ্গে তর্কে জড়ায় নি। আর সে অবস্থা ওর ছিল না। তাই নিখুঁতভাবে ব্যাপারটা চেপে গিয়েছে। ঝামেলা করে তো আর মাকে ফিরে পাবে না। তাই এই ব্যাপারে ভোর কথা বাড়াতে চায়ল না। যা হয়ে গেছে তা নিয়ে বাক-বিতর্ক করাও বোকামি। তাই তিতাসকে পড়তে বসতে বলে সে গেল রান্নাঘরে। আজ কারোই মন ভালো নেই, তাই নিজেই নিলো দুপুরের রান্নার দায়িত্ব। সে আপনমনে কাজ করতে করতে হঠাৎ খেয়াল করল পাশে কারো উপস্থিতি। কিঞ্চিৎ বাম ঘাড়
ঘুরিয়ে দেখে রোজা হুইল চেয়ারে মন ভার করে বসে আছে। হয়তো আবার মায়ের বকা খেয়েছে। ভোর ওর মন খারাপের কারণ জানতে না চেয়ে রোজার সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলো। আর
রোজাও মন খারাপের রেশ ছুঁড়ে ভোরের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠল।

টানা কয়েক ঘন্টা পড়ে তিতাস খুব বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল। ঘাড়টা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ড্রেসিংটেবিলে নিজেকে দেখে নিলো। অকারণে চুল ঠিকঠাক করে শরীরে পারফিউম স্প্রে করল। তারপর ভোরের সাজগোছের জিনিস ঘাটাঘাটি করে এলোমেলো করে রাখল। পুরো রুম পরিপাটি দেখে মেজাজ খারাপ হলো তার। তাই উঠে সব এলোমেলো করে খুশি মনে বসতেই, তখন ভোর গোসল সেরে বের হলো। তার চুলে শুভ্র তোয়ালে জড়ানো আর হাতে ভেজা কাপড়। মুখজুড়ে পানির
বিন্দু বিন্দু ফোঁটা। পরনের গোলাপি কামিজ হালকা ভেজা।
তখন তিতাস তার পথ আগলে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

-‘এ্যাই শুনুন।”
-”বল।”
-”আমি আর কতদিন বিবাহিত ব্যাচেলর থাকব?”
-”যতদিন না বড় হচ্ছিস।”
-”তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছিলাম বলে, ক্লাস ফাইভে থাকতে বাবা আমার খা/ৎ/না করিয়েছেন। আর এখন আমি হাইটে পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির একজন হবু ডাক্তার। তবুও এই কথা!”
-”তুই কি মানুষ হবি না?”
-”হয়ে কি হবে? একদিন তো মরেই যাব।”
-”বে/য়া/দ/ব সর সামনে থেকে।'”

একথা বলে ভোর তিতাসকে সরিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। নয়তো এই পাগল ওর মাথা খারাপ করে দিবে। ভোর ভেজা কাপড় মেলে রুম এসে দেখে তিতাস নেই। তবে রুমের করুণ অবস্থা। সে বিরক্ত হয়ে সব ঠিকঠাক করে বাইরে গেল।খেয়ে
ভাতঘুম দিতে হবে। এমন অলস দুপুরে না ঘুমালেই নয়।ঠিক
তখন ড্রয়িংরুম থেকে তিতাসের চেঁচামেচি শোনা গেল। রেগে কাউকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলছে।ভোর দ্রুত পায়ে গিয়ে
দেখে অতীব সুন্দরী একটা মেয়ে সোফায় বসে আছে। সাজ পোশাকে আভিজাত্যের ছোঁয়া। তবে তিতাস যে তাকে এত বাজেভাবে অপমান করছে তবুও তার মাঝে হেলদোল নেই। সে হাসিমুখে তিতাসের মুখ পানে তাকিয়ে আছে। যেন এসব কথাগুলো তার কাছে মিষ্টি লাগছে। এজন্য গোগ্রাসে গিলে যাচ্ছে। এত চেঁচামেচি শুনে বাকিরাও সেখানে উপস্থিত হয়ে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। ভোর সকলের মুখভঙ্গি পরখ করে সেও মেয়েটার কান্ড দেখতে লাগল।মেয়েটার ফেসকাট কিছুটা পিয়াসের মতো। তবে চোখ দু’টো তিতাসের মতো। এ চোখে যেন অদ্ভুত মায়া মেশানো। মেয়েটাকে দেখে তিতাসের বাবাও রেগে গেলেন, তেড়ে গেলেন মারতে। তবে তিতাসের মা মেয়েটার মুখ পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।যেন উনি কতকালের তৃষ্ণা মিটাচ্ছেন। উনার চোখ দিয়ে ঝরছে বারি ধারা। তখন রোজা হুইল চেয়ার ঠেলে মেয়েটার কাছে ঘেষে বসে বলল,

-”তোমাকে ছোট মিয়া বকছে কেন সারা আপু?”
-”আরে লিলিপুট যে, কেমন আছিস পাখিটা?”
-”ভালো। তুমি কি আবার চলে যাবে আপু?”
-”এখানে থাকার অনুমতি নেই আমার, যেতে তো হবেই।”
-”যেও না। আমি আর তুমি আমার রুমে থাকব।”
-”হা হা হা, আমি এখন সবার কাছে অর্ধমৃ/ত। আর অর্ধমৃ/ত মানুষরা সভ্য সমাজে বাস করতে পারে না।”

সারার কঠিন কথাগুলো রোজা বুঝতে পারল না। তাই চুপ করে শুনে গেল। তখন রোজার মা এসে রোজাকে নিয়ে চলে গেলেন। বড়দের কথার মাঝে ওর না থাকায় শ্রেয়। উপরের রুমে রোজাকে রেখে উনি পুনরায় নিচে এলেন। হঠাৎ সারার আগমন উনাকে খুব বেশি ভাবাচ্ছে। না জানি আবার কোন প্যাঁচ কষছে মেয়েটা। তখন সারা উঠে তিতাসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,

-”তোর বাসায় খেতে আসি নি, থাকতেও আসিনি। শুধু কিছু কথা জানাতে এসেছি।”

-”আমি আপনার মুখে একটা শব্দ শুনতেও ইচ্ছুক নয়। সদর দরজা খোলা আছে, বিদায় হন।”

তিতাসের ঘৃণাভরা দৃষ্টি দেখে সারা মলিন হাসল। তারপর ওর মায়ের সামনে গিয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ছলছল চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে গেল ক্ষণিকেই।প্রিয় মাকে একবার
ছোঁয়ার জন্য হাত বাড়িয়েও গুটিয়ে নিলো। এই অধিকার সে হারিয়েছে অনেক আগেই। অতঃপর নিজেকে সামলে সারা ওর মায়ের পায়ের কাছে বসল। ওর অপবিত্র শরীরের ছোঁয়া যেন ওর মাকে স্পর্শ না করে এমনভাবে। তারপর কান্নারত কন্ঠে বলল,

-”আম্মু, তুমি নিজের এবং বাবার প্রতি খেয়াল রেখো। খুব
খুব ভালো থেকো তোমরা। আমার সময় শেষ, আমাকে যে এবার যেতে হবে।”

ওর আম্মু নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাব দিলেন,

-”আচ্ছা। ”

-”যেখান থেকে এসেছি সেখানকার কথা বলছি না।”
পেজের রিভিউ অপশনে গিয়ে রিভিউ দিয়ে আসবেন প্লিজ। ?গল্পগুচ্ছ সমগ্র?
-“তবে?”

-”ক’ ব’ রে।”

তিতাস এবার আরো রেগে গেল। সারার মন ভোলানো কথা ওর সহ্য হলো না। ওদের মান সন্মান ধূলোয় মিশিয়ে এখন এসেছে ভালো সাজতে। সে সারাকে দাঁড় করিয়ে দরজার কাছ অবধি নিয়ে গেল। তখন তাকে সাধল ভোর। তিতাসের হাত ছুটিয়ে সোজাসাপটা সারাকে বলল,

-”এই মানুষগুলো নামেই শুধু বেঁচে আছে। হাতজোড় করছি এসব বন্ধ করুন। উনাদের আর ছোট করবেন না, প্লিজ। না রেখেছেন মানসন্মান আর না দিয়েছেন শান্তি। আর কতবার ছোট করবে উনাদের? বন্ধ করুন এসব, প্লিজ বন্ধ করুন।”

সারা এবার ওর হাত ছুটিয়ে হ্যান্ডব্যাগ থেকে দু’টো খাম বের করে ভোরের দিকে এগিয়ে দিলো। ভোর তাতে দৃষ্টি বুলিয়ে হতভম্ব। কারণ সেটা মেডিকেল রিপোর্ট। যেখানে স্পষ্টভাবে লিখা সারা এইডসে আক্রান্ত।আর এই রিপোর্ট গতকালকের আর অন্য খামেরটা দশ বছরের আগের। কাগজ দেখে মনে হচ্ছে অনেক পুরনো। এবার ভোরকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে সারা বলতে লাগল,

জুবায়ের (প্রাক্তন স্বামী) প্রথমে যার সঙ্গে মিলিত হতে বাধ্য করেছিল। সেই ছিলেন এইডসে আক্রান্ত। এ কথা ওই ব্যক্তি নিজেও জানতেন না।আর উনার সঙ্গেই একাধিবার মিলিত হতে বাধ্য করেছিল জুবায়ের। কারণ উনি ছিলেন বিদেশি
বিসনেস পার্টনার। উনাকে পটালেই ওর বিজনেস শীর্ষস্থানে।
ফলস্বরূপ সারা ধীরে ধীরে এইডসে আক্রান্ত হয়। পরে এসব কথা জানাজানি হলে সে পিয়াসের সঙ্গে বাসায় চলে আসে। এখানে এসে দিন দিন শরীরের পরিবর্তন লক্ষ্য করে একটা টেষ্ট করায়। যদিও সে ভেবেছি প্রেগনেন্ট হয়তো। কিন্ত তার ধারণা ছিল সম্পূর্ণ ভুল। কারণ সেদিনই জানতে পেরেছিল, সে এইডসে আক্রান্ত। এরপর অনেক ভেবেই সিদ্ধান্ত নেয়,
ম/র/তে যখন হবেই তখন এমন কয়েকটা বিশ্বাসঘাতকের শরীরে ম/র/ণ ব্যাধি ছড়িয়েই তারপর মরবে। বিশেষ করে, যারা বউ বাচ্চা রেখে অন্যের শরীরে সুখ খুঁজতে যায়। পণ্য ভাবে মেয়েদের। তাদের আর যায় হোক ভালো মানুষ বলা যায় না। সে তো কখনো বলবে না। কারণ ওরা বিশ্বাসঘাতক, বেইমান। তারা প্রিয় মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গ করা বহুরুপী কীট।
এরপর বাসায় ছেড়ে বেরিয়ে উদ্দেশ্যে সফল করতে থাকে।
আর এই অবধি যারা স্বেচ্ছায় তার কাছে এসেছিল, এখন তারা সবাই এইডসে আক্রান্ত। অনেকে মারাও গেছে। খুশির খবর হচ্ছে জুবায়ের নিজেও এই ব্যাধিতে ধুঁকে মরছে। তার জারিজুরি শেষ। প্রথম থেকেই সে বড় বড় বিসনেসম্যানদের টার্গেট করেছিল বিধায় প/তি/তা/ল/য়ে কখনো যেতে হয় নি। বরং তাকেই কতজন ফ্ল্যাট গিফট করেছে। ক্যাশটাকা, গয়না থেকে শুরু বাড়ি গাড়ির কোনো কিছুর অভাব নেই।
শুধু অভাব থেকে গেছে সুখ আর শান্তির। যেটা এ জীবনে সে পেলো না। অসুস্থতার কারণে আজ তার ভারি মেকাবের আড়ালে নিজস্ব রুপহীন চেহারা ঢেকে আছে। কত নির্ঘুম রাতের সাক্ষী চোখের নিচে পড়া বিশ্রী কালিগুলো। এতদিন কেউ তাকে সেভাবে দেখে নি, বুঝে নি, আর জানেও নি ওর ভেতরের হাহাকার। তাই আজ এসেছে সব সত্যি জানাতে, কারণ তার হাতে বেশি সময় নেই। তাকে এবার যেতে হবে না ফেরার দেশে।

To be continue………..!!

#গল্পগুচ্ছ_সমগ্র
#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২০

সারা নিজের কথা সম্পূর্ণ করে ছলছল চোখে মুখভর্তি হাসি নিয়ে সবার দিকে তাকাল। এতদিন যাদের চোখে ঘৃণার রেশ দেখেছিল, আজ তাদের চোখে বিষ্ময় খেলা করছে। হয়তো মনে মনে উনারা আফসোসে ডুবে মরছে, তড়পাচ্ছে। মেধাবী নম্র ভদ্র মেয়েটার জীবনের মোড়টা বি/শ্রী/ভাবে ঘুরে গেছে।
সেও রঙিন কিছু স্বপ্ন দেখেছিল আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের
মতো সুখ ধরতে চেয়েছিল। স্বামী সোহাগী হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চেয়েছিল। আফসোস, তা আর হলো কই! ওর জীবন ওকে নিয়ে ইচ্ছে মতো খেলেছে এবং খেলছে। নয়তো বিয়ের আগে তো কখনো ভাবেনি, তার জীবনে তিক্ত অতীত যুক্ত হবে। আর সেই বিষেভরা অতীতটা তাকে জ্ব/লিয়ে, পু/ড়ি/য়ে, নিঃস্ব করে দিবে। ওর বিষভর্তি অতীতের এত জ্বালা এত তীব্রতা যে না পারে সইতে আর না পারে সব ছেড়ে ছুঁড়ে পালিয়ে যেতে। আর পালিয়ে আর যাবে কোথায়? যাওয়ার জায়গা থাকলে তো? সে তো এখন সকলের চেনা মুখ। যাকে সবাই একনামে চিনে, ‘রাতপরী’। আর এই রাতপরীর কাছেই
রাতে এসে ভিড় জমায় চেনা -অচেনা পুরুষ।স্বেচ্ছায় আসার
কারণে সেও অনায়াসে বিলিয়ে দেয় তার দে/হ/খানা।খায়েশ
মিটিয়ে রোগের ভাগ নিয়ে টাকা দিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায় সেই পুরুষরা। তখন সে তাদের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যে হেসে বিরবির করে,

দিবাতে হও সুপুরুষ
রাত্রিতে তুমি কাপুরুষ।
কপটতার হায়েনা তুমি
নারীদেহে হও সন্তোষ।

জীবনে এত রঙের মানুষ দেখেছে যে, বাবা ভাই ছাড়া পুরুষ বলতে নিকৃষ্ট প্রাণীকে বোঝে। বিশেষ করে যারা তার কাছে সুখ খুঁজতে আসে। মনের নয়, দেহের সুখ। যে সুখের কারণে পাপ পূর্ণ্যের ধার ধারে না। কারণ তারা টাকার রাজা। টাকায় পায় সুখের দেখা। সুখ যে তাদের মুঠোয় পুরা।

এমনও পুরুষকে সে দেখেছে ওর শরীরে হাত বিচরণ করেও বউ বাচ্চার কাছে খুলে বসেছে মিথ্যাের ঝুলি। বউকে শপথ করে বলেছে, সে ছাড়া কোনো নারীতেই তার আসক্তি নেই।”
বাচ্চাকে উপদেশ দিয়েছে, ভালো একজন মানুষ হওয়ার।অথচ সেই পুরুষই কিছুক্ষণ আগেও তার গ্রীবাদেশে অধর ছোঁয়াতে মত্ত ছিল। এমনকি তার চিবুকে চুম্বন করেই কথা গুলো আওড়াচ্ছিল। এসব দেখে দেখে তারও আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। বাঁচবে আর কি! সে তো এখন জীবন্ত লা/শ। জুবায়ের ওকে সেদিনই মে/রে/ ফেলেছে, যেদিন ওকে অন্য
পুরুষের কাছে পাঠিয়েছে। ভুল পথে পা বাড়িয়েও সে ভাবত, এখনো ভাবে ওর সুখপূর্ণ পরিবারের কথা। বিয়ের আগের জীবনের কথা। রশিক বাবা, আদুরে মা, কলিজার টুকরো দু’টো ভাইয়ের সন্মানের কথা। তার জন্যই উনারা কতভাবে অপমানিত হয়েছে, হচ্ছে। তার কারণেই তাদের চোখে অশ্রু ঝরে। এই অশ্রু দাম সে কখনো মিটাতে পারবে না, কখনোই না। এই সাধ্যও তার নেই।

সারার এসব ভাবনার ছেদ ঘটল ওর মায়ের আহাজারিতে।
মেয়ের অতীত শুনে উনি কান্নায় ফেটে পড়েছেন। ওর বাবাও নীরবে অশ্রু ঝরাচ্ছেন। তিতাস ভোরের থেকে রিপোর্ট দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার এখনো কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না।
সবটা ক্ষণিকের স্বপ্ন মনে হচ্ছে। ওকে এত স্থির দেখে সারা আরো কিছু রিপোর্ট তাকে দেখাল। দেশের বাইরে গিয়েও সে চিকিৎসা করিয়েছে, লাভ হয় নি। এখন মৃ/ত্যু নিয়ে মুক্তির
অপেক্ষায়। অদূরে শাহিনাকে ছলছল নেত্রে তাকিয়ে থাকতে
দেখে সারা ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

-”তোমাকে আমি বহুবার বলেছিলাম জীবন যার মর্জি তার। এ কথাটার মর্ম তুমি ধরতে পারো নি। চাচ্চু ঠিকই বলত তুমি একটা বোকা পাখি। যে সবকিছু সহজভাবে নিতে গিয়ে ধরা খায়। বাকিরাও তোমার সরলতা ফায়দা উঠায়। জানো তো, মানব জীবনে ঠকারও প্রয়োজন আছে। নয়তো মানুষ উঠে দাঁড়ানোর সাহস জোগাতে পারত না।”

শাহিনার কাছে সারার কথাগুলো কেন জানি ভালো লাগল না। তার মনে হচ্ছে, সারা ভালো সাজার অভিনয়টা আজকে একটু বেশিই করছে। তাছাড়া সে কচি বাচ্চা নয়, সবই বুঝে। শাওন ঠিকই বলেছে এরা এক একটা স্বার্থপর। এটা পারেই শুধু তার ক্ষতি করতে। তবে সারার পুরো কথা শুনে উপস্থিত সকলে নির্বাক। তখন সারা ভোরের উদ্দেশ্য করে বলল,

-” ভোর, আমি সত্যিই অনুতপ্ত আমার সেদিনের ব্যবহারের জন্য। আসলে আমি দেখতে চেয়েছিলাম, তুমি কেমন। আর তা বুঝেও গেছি। সত্যি বলতে, কেন জানি পিয়াসের মৃ/ত্যু/র পর তোমার উপর একটা চাপা রাগ ছিল। বারবার মনে হতো এর পেছনে তুমি দায়ী। যদিও আমি এখনো জানি না আমার ভাই কেন ওই পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এখন মনে হয় হয়তো আমারই কারণে। যায় হোক, বড় মিয়া তো এখন নেই। তবে ছোট মিয়াকে সামলে রেখো। সে কিন্তু বাঁধনহারা মুক্ত পাখি। তার পায়ে দ্রুত শেকল বেঁধে নিও। নয়তো দেখতে সে ফুড়ুৎ করে উড়ে যাবে। আর হ্যাঁ, যদি উড়েও যায়, তবে তার ডানা ভাঙ্গতে ভুলো না কিন্তু।”

এ কথাগুলো বলে সে সকলের দিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে পড়ল। না ওকে কেউ পিছু ডাকল, আর না সে কারো ডাকের আশায় পিছু ফিরল।
___________________পেজের রিভিউ অপশনে গিয়ে রিভিউ দিয়ে আসবেন প্লিজ ??গল্পগুচ্ছ সমগ্র??

পরেরদিন সকালে তিতাস না খেয়েই রেডি হচ্ছে। আজ তার পরীক্ষা। গতকালকে সারার কথাগুলো জানার পর থেকে সে থম মেরে গেছে। রাতেও পড়ে নি অথচ এখন যাচ্ছে পরীক্ষা দিতে।ভোর তড়িঘড়ি করে খাবার হাতে রুমে ঢুকে তিতাসকে
ডাকল। তিতাস না তাকিয়ে জানাল, এখন খাবে না সে। পরে কিছু খেয়ে নিবে। ভোর বাক্য ব্যয় না করে তিতাসের হাত টা টেনে চেয়ারে বসাল। অতঃপর নিজেও বসল তার কোলের উপর। যেন উঠে যেতে না পারে। তিতাস ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,

-”এসে কোলে নিবো, এখন সরুন।”
-”হা কর।”
-”খেতে ইচ্ছে করছে না, বমি পাচ্ছে।”
-”রাতেও খাই নি, আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে। আজকে তোর এঁটো খাবার খাবো আমি। সিনিয়র বউরা এঁটো খেলে নাকি জুনিয়র বরদের দ্রুত বুদ্ধি বাড়ে। তাই আমি চাই তোর বুদ্ধি বাড়ুক, কিছুটা সুবুদ্ধি হোক। ওদিকে রাজ্যকেও তো পৃথিবী দেখাতে হবে।”

তিতাসের লাগামহীন জবাব শোনার আগেই ভোর তার মুখে খাবার পুরে দিলো। শেষ হতেই পুনরায় দিলো। তাকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না। তারপর পুরো খাবার খাইয়ে হাত
ধুয়ে ভোর পছন্দ মতোন শার্ট বের করে পরতে ইশারা করল।
তিতাসের পরনের শার্ট টা তার পছন্দ হচ্ছে না। এরচেয়ে এই মেরুনটাতে ওকে বেশ মানাবে। কিন্তু তিতাস পরোটার শেষ অংশটুকু ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে এখনো বসে আছে। ওর দৃষ্টি ভোরের দিকেই। না খাচ্ছে আর না ফেলছে। ভোর তার দুষ্টু
মতিগতি বুঝে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে পরোটাটুকু মুখে নিলো। তখন তিতাসের ঠোঁটে ফুটে উঠল তৃপ্তির হাসি। ওকে হাসতে দেখে ভোরও হাসল। তিতাস পানি খেয়ে এঁটো পানি ভোরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

-”পরীক্ষা শেষ করেই প্রস্তুতি নিবো।”
-”কিসের?”
-”রাজ্যকে পৃথিবীতে আনার।”
-”আসার সময় আমার জন্য রজনীগন্ধ ফুল আনবি।”
-”আর কিছু?”
-”না। পরীক্ষা যেন ভালো হয়, নয়তো।”
-”নয়তো কি?”
-”আয়মানকে বিয়ে করে নিবো, হা হা হা।”
-” তাহলে পরীক্ষা টরীক্ষা সব বাদ। আজকে সারাদিন আমি বাসরদিন পালন করব।”
-”আগে বড় হোন হবু ডাক্তার।”
-”বড় হয়েছি কিনা এখনই প্রমাণ দিচ্ছি, চলুন।”
-”থাক লাগবে না।”

ভোর ঘড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে পার্স থেকে কিছু টাকা নিয়ে তিতাসকে দিলো। তিতাস মুখ বেজার করে বলল,

-”মাত্র এক হাজার টাকা?”
-”বেশি হয়ে গেলো? তাহলে পাঁচশ ফেরত দে?”
-”না থাক, ধন্যবাদ।”
-”সাবধানে যাবি।”
-”আচ্ছা।”

একথা বলে পা বাড়াতেই হঠাৎ শার্টে টান খেলো। ভোর তার কাঁধের শার্ট আঁকড়ে ধরেছে। তিতাস থেমে গিয়ে পিছু ফিরে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই, কপালে পেলো ভোরের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া।

To be continue…….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here