প্রিয়_তুই,২১,২২

0
230

#প্রিয়_তুই,২১,২২
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২১

ভোর তিতাসের কাঁধের শার্ট আঁকড়ে ধরেছে। তিতাসও থেমে গিয়ে পিছু ফিরে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই, ওর কপালে পেলো ভোরের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া। সঙ্গে সঙ্গে সর্বাঙ্গে খেলে গেল, এক অদ্ভুত শিহরণ। বাক্‌শূন্য তিতাস, অপ্রত্যাশিত এ কান্ডে বিষ্মিত চাহনিতে অনড় হয়ে তাকিয়ে আছে৷ যেন ওর মস্তিষ্ক এখনো ধরতে পারে নি, কি ঘটে গেল? এটা তার ভ্রম, নাকি প্রাপ্তি? আর এত সহজে প্রাপ্তি মিলল! যে প্রাপ্তির পূর্ণ
হওয়ার প্রতীক্ষায় সে। শক্তপোক্ত আবরণে আবৃত মেয়েটা
অবশেষে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। পরিশেষে ওকে মেনে নিয়েছে স্বামীরুপে। যদিও মনে মনে তার যে পণ ছিল, সেটা আজ স্বার্থক হলো। যেই মেয়েটা ওদের বিয়েতে সর্বদা নাকচ করেছিল। বয়সে ছোট ভেবে বারবার আঙুল তুলেছিল, কত কথা বলে ফিরিয়ে দিয়েছিল। আজ সেই মেয়েটাই সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে স্বেচ্ছায় প্রথম ধাপ এগিয়েছে। যদিও তার পণ ছিল, ভোরই তাদের সম্পর্কের বাঁধনটা মজবুত করবে, করতে তাকে হবেই। ততক্ষণে সে চেষ্টা চালিয়ে যাবে নিজের নাম ভোরের হৃদয়ে খোদাই করার। তার প্রেমসৌহার্দে উন্মাদ করার। তার নিগূঢ় প্রণয়ে পিপাসিত করার। তা হোক; কল্পিত লোক দেখানো ভালোবাসা অথবা মিথ্যাে খুনশুটির মাধ্যমে।
তাছাড়া মেয়েরা হয় প্রচন্ড আবেগী। তারা কখনো ছেলেদের মন পড়ে না, খতিয়ে পরখও করে না ভালোবাসার গভীরতা।
ভুলেও বাজিয়ে দেখে না মোহ নাকি মুগ্ধতা? নাকি অকস্মাৎ মন থেকে গড়া এক প্রেমের কাব্যকথা। এর আগেই যে, তারা মজে ছেলেদের দুষ্টু মিষ্টি কথার জালে।সামান্য একটু যত্নকে
রুপ দেয় ভালোবাসার। মরিয়া হয়ে ওঠে প্রেমিক পুরুষটাকে হৃদয় নিংড়ে সমস্ত প্রেমটুকু ঢেলে দেওয়ার। বিশেষ করে ওর দেখা সব কয়টা মেয়েই এমন আবেগী।ভোরও এর ব্যতিক্রম নয়, আজ তা প্রমাণও পেলো। বেলাশেষে প্রাপ্তি তার হাতের মুঠোয়। ধীরে ধীরে ভোরও মেনে নিয়েছে তাকে বিশ্বাসী এক চিরসখা হিসেবে। ঠাঁই দিচ্ছে তার হৃদকুঠুরে। আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছে শক্ত বাঁধনে। স্বপ্নও সাজাতে চাচ্ছে নব্যরূপে। যেখানে তার স্থান সবার শীর্ষে। আর ভোরের মনের নাগাল পেয়ে সে স্বযত্নে সাজিয়েও ফেলেছে এরপরের পদক্ষেপ। তবে আজ সকালে ভোরের এত পরিবর্তন দেখে হতবাকও সে। এতকিছু একসঙ্গে আশা করে নি। এসব ভেবেই এখনো তিতাসের দৃষ্টি নিবন্ধ ভোরের সিগ্ধ মুখশ্রীতে। আর তার মুখপাণে চেয়েই সে
ভেবে যাচ্ছে নানান ভাবনা। ভোর আড়চোখে তা দেখে মুচকি হেসে নিজের কাজে মগ্ন হয়েছে। তিতাসের মুখ দেখে ভীষণ হাসিও পাচ্ছে তার। ছেলেটাকে এভাবে ভড়কে দিয়ে মজাও পেয়েছে। তারপর রুম গুছিয়ে চুল আঁচড়াতে বসেছে। যদিও এটা তিতাসের বেহায়া দৃষ্টি থেকে বাঁচার বাহানা মাত্র।তখনো
তিতাস নিজের ভাবনায় বিভোর। সামনে বসে থাকা মেয়েটা যে তার ভালোবাসা নয়, একথা সে এখনো জোর দিয়ে উঁচু গলায় বলতে পারবে। ভোরকে ভালোবাসার মতো পদক্ষেপ এখনো সে নেয় নি। তবে হ্যাঁ, ভোর বর্তমানে তার মায়া, এক
গভীর আসক্তি, এক বদ অভ্যাসের নাম। যাকে না জ্বালাতে শান্তি মিলে না, ভালো লাগে না। একরাশ অস্বস্থি এসে হানা দেয় তার বক্ষতীরে। খুঁ’চি’য়ে খুঁ’চি’য়ে ভার করে তোলে মনের
অন্দরমহল।তাই সে চায়, ভোর তার ভালোবাসা নয় আসক্তি
হয়ে থাকুক। বদ অভ্যাস হয়ে সঙ্গে থাকুক চিরকাল। অদৃশ্য মায়াতে বেঁধে রাখুক ইহকাল। এসব ভেবে নিজেকে সামলে বেশ বিরক্ত নিয়ে তিতাস বলল,

পেজের রিভিউ অপশনে গিয়ে রিভিউ দিয়ে আসবেন প্লিজ ?গল্পগুচ্ছ সমগ্র

-“শেষে কী না আমার নিষ্পাপ গালের উপর হামলা? ফিরে এসে, আপনার হচ্ছে, ফাজিল সিনিয়র বউ কোথাকার।”

একথা বলে সে ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে দ্রুত প্রস্থান করল। ইস,
হাতে একদমই সময় নেই। নয়তো এখনি সব শোধবোধ করে নিতো। ওকে যেতে দেখে ভোর এবার শব্দ করে হেসে উঠল।
সকালবেলা তিতাসকে নাস্তানাবুদ করতে পেরে তার অধরে ফুটে উঠল, মিষ্টি হাসি।মুখপদ্মে ছড়িয়ে গেল লাজুক আভা।
এবার জুনিয়র বরকে বুঝাতে হবে সিনিয়র বউয়ের দগ্ধীভূত
ভালোবাসার সমঝোতা। সেও বুঝাবে, ওর মনেও প্রণয়পুষ্প
পরিস্ফুটভাবে ফুটে ওঠার উপকথা। রচিত করবে তিতাস ও তার প্রেমকাব্যের সূচনা। এসব ভেবে হেসে ,’পাগল একটা’ বলে ঘুরতেই স্বজোরে টান খেলো বাম হাতে। তাৎক্ষণিক সে অনুভব করল কেউ একজন কামড়ে ধরেছে ওর ওষ্ঠজোড়া। এর পরপরই তার ওষ্ঠ ছেড়ে কেউ ছুঁইয়ে দিচ্ছে, ওর কপাল, গাল, থুতনিসহ, গ্রীবাদেশের কিছু অংশ।সে ছটফটিয়ে ধাক্কা
দিয়ে সরাতে গেলে তিতাসই তাকে ছেড়ে নিজের ঠোঁটজোড়া মুছতে মুছতে বলল,

-”তিতাস কখনো কারো ধার রাখে না। বরং পাওনা থাকলে দ্বিগুনহারে দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। যেমন, এখন দিলাম। কামড় দিয়েছি, আমি না আসা অবধি লোভনীয় ওই ঠোঁটের ব্যথাটা বহাল রাখার জন্য। যেন বারবার আমার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ব্যথা যখন দিয়েছি ফিরে এসে ব্যথাটা বাড়িয়ে আমিই ব্যথার উপশম করব, এখন বাই।”

একথা বলে সে শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেল। ভোর ঠোঁট চেপে ধরে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তিতাসের কামড়ে তার ঠোঁট কিঞ্চিৎ কেটেছে। লবনাক্ত স্বাদ পাচ্ছে জিহ্বার ডগায়।
তবুও সে হাসছে, কারণ এখন থেকে তার জুনিয়র বরের সব অত্যাচার সহ্য করতে প্রস্তুত সে।বিনিময়ে বুঝে নিবেএকবুক
নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।

_______________________________??গল্পগুচ্ছ সমগ্র??

আয়মান তিতাসের বাসার মোড়ে গাড়িতে বসে আছে। প্রায় সপ্তাহ খানিক হচ্ছে,সে তীক্ষ্ণভাবে তিতাসের গতি বিধি লক্ষ্য করছে।গোপনীয়তা বজায় রেখে দারোয়ানের মাধ্যমে খোঁজ
খবরও চালিয়ে যাচ্ছে। তিতাসের বাসার ঝুটা কাজের বুয়াও এতক্ষণে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ফেলেছে। এর
বিনিময়ে তাকে কিছু ক্যাশ টাকা দিতে হয়েছে। গরীব বা ধনী টাকার কাছে সবাইই পরাজিত।বুয়াও প্রথমে নীতিবাক্য পাঠ করেছিল, তারপর টাকা দেখে নিশ্চুপ।তিতাসের বাবা ভোরে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছেন। উনি বিজনেসের কাজে বাইরের দেশে যাচ্ছেন। ফিরবেন দিন চারেক পরে। শাহিনা রোজাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবেন। রোজার গতরাত থেকে প্রচন্ড জ্বর। রাগ করেই তিনি ভোর বা তিতাস কাউকেই জানান নি।
টাকা ছিটালে ডাক্তারের অভাব নেই। অযথা তাদের পা কেন ধরতে যাবেন ভেবে। আর এখন তিতাসও বেরিয়ে গেছে তার পরীক্ষা দিতে। এখন বাসায় তিতাসের মা এবং ভোর। ওরাও
এতক্ষণে ওষুধ মেশানো খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে হয়তো।
এসব ভেবে আয়মান বসে কুটিল হাসছে। বাসা এখন ফাঁকা
এবার সে ধীরে সুস্থে তার ফায়দা উঠিয়ে আসবে। আয়মান এসব ভেবে তিতাসের বাসায় প্রবেশ করল, আশেপাশে না তাকিয়েই সোজা হাঁটা ধরল ভোরের রুমে। ভোর তখন ঘুমে ঢুলঢুল হয়ে বই পড়ছিল। নাস্তা করার পরেই ঘুমের কারণে
সে চোখ খুলে তাকাতে পারছে না। পরিশেষে আর না পেরে
ঘুমিয়ে গেল। তখনই আয়মান পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে
ভোরের দিকে এগিয়ে গেল।তখনই বিকট শব্দে রুমের মধ্যে সাইরেন বেজে উঠল। অচেনা পুরুষ রুমে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে সাইরেন বেজে উঠবে। এবং তিতাসের কাছে পরক্ষণেই
মেসেজ চলে যাবে। হঠাৎ এমন শব্দে আয়মান হতবাক হয়ে
দিক বেদিক না তাকিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। নয়তো তার সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। ভোর আর তিতাসের মা তখন ঘুমে বিভোর। তাদের কারোর কানেই পৌঁছাল না সাইরেনের শব্দ। তিতাস ততক্ষণে পরীক্ষা প্রশ্ন পত্র হাতে পেয়ে লিখতে শুরু করে দিয়েছে। সে বুদ্ধি করে তার ফোন জমা রেখেছে, রবিনের কাছে। কেন জানি কয়েকদিন ধরেই তার মনটা কু ডাকছে। বারবার মনে হচ্ছে খারাপ কিছু ঘটবে। এজন্য সে
রবিনকে দায়িত্বও দিয়েছে সর্বক্ষণ ওর বাসার আশেপাশেই থাকার। যদিও রবিন তাকে জানিয়েওছিল আয়মানের গাড়ি ঘুরঘুর করছে মোড়ের দিকে। তিতাস নিজেও দেখেছে এবং ব্যবস্থা নিয়েও রেখেছে। রবিন তখন তিতাসের বাসার দিকে চায়ের দোকানে ছিল। হঠাৎ একের পর এক মেসেজ দেখে তাৎক্ষণিক সে তিতাসের বাসায় যায়। কিন্তু ভোর, তিতাসের মা ছাড়া কাউকেই পায় না। গেটের দারোয়ান এমনকি বুয়াও লাপাত্তা তাই সে নিজেই গেটে কাছে বসে রইল। এখন শুধু তিতাসের ফেরার অপেক্ষা।

কিছুদিন আগে তিতাসের সঙ্গে রবিন গিয়েছিল আয়মানের সঙ্গে শেষবার কথা বলতে। তিতাস তাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলেছে, ভোরের পিছু ছাড়তে ভোর বর্তমানে বিবাহিত নারী।
আয়মান জবাবে হেসে বলেছিল,

-”ভোরকে এক রাতের জন্য দে। ”

-” লাগাম টেনে কথা বল। সে কিন্তু তোর বোনও হয়।”

-”বোন ভাবলে তার শরীরের লোভে পড়তাম নাকি? তাছাড়া
ওকে আমি কখনো বোন টোন মানি না, আর মানবও না।”

-” আমার হাত নিশপিশ করছে। এখনো বলছি, লাগাম টেনে কথা বল। নয়তো গ্লাস দিয়ে তোর থোবড়া ঢিলে করে দিবো।
তখন আবার বলিস না, শশুড়বাড়ির লোকদের আপ্যায়ন করতে জানি না।”

-”তুইও এত সাধু সাজিস না তিতাস। তোর বড় ভাই ভোরকে ছুঁতে পারে নি বলেই তুই যেঁচেই ভোরকে বিয়ে করেছিস। তা নয়তো তুমিও শা* লেজ গুটিয়ে পালাতে। যখনই দেখলে সে এখনো ভা ‘র্জি’ ন তখনই দরদে উতল উঠল তোমার। মরিয়া হয়ে উঠলে ভোরকে বিয়ে করার। কী ভেবেছ বুঝি না আমি?
এসব তোমার চাল।”

আয়মান কথা শেষ করতেই তিতাস কাঁটা চামচ গেঁথে দিলো আয়মানের হাতে। তারপরেই বিনাবাক্য সে উঠে এসে রবিন
বলল,

-”পরীক্ষা শেষ করেই ব্যবস্থা নিবো। ততক্ষণ খেয়াল রেখো।”

এসব ভেবে সেখানে বসে রবিনের অনেক সময় কেটে গেল।
তবুও ভোর অথবা তিতাসের মাকে না দেখে তার সন্দেহ গাঢ় হলো। সে এবার উঠে বেশ শব্দ করেই ভোরকে ডাকল। কিন্তু সাড়াশব্দ না পেয়ে বাধ্য হয়েই রুমে উঁকি দিলো। এরপর যা দেখে তাতেই তার শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেল। ভোরের নাক মুখ দিয়ে গলগল করে র/ক্ত বের হচ্ছে। পুরো বিছানা র/ক্তে
ভিজে লালবর্ণ হয়ে গেছে। অবচেতন ভোর অনড় হয়ে পড়ে আছে বিছানার মাঝখানে। পাশের রাখা বই লাল রুপ ধারণ করেছে। রবিন এবার দৌড়ে গেল তিতাসের মায়ের রুমে।সে গিয়ে দেখে উনারও একই অবস্থা। উনিও পড়ে আছেন সাদা
টাইলস করা মেঝেতে। পরণের শাড়িটা র/ক্তে ভিজে বেহাল দশা। রবিন আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত হসপিটালে ফোন করে এ্যাম্বুলেন্স আনতে বলল। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়াল তিতাসদের বাসার গেটে।

To be continue…………..!!

#গল্পগুচ্ছ_সমগ্র
#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২২

তিতাস তার পরীক্ষা শেষে ফুরফুরে মেজাজে গেল ফুলের দোকানে। পরীক্ষা হয়েছে মন মতো। এজন্য মন একটু বেশি ভালো। সে দোকানে গিয়ে লাল গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুল কিনল। মুখে তার মিটিমিটি হাসি। ভোর এই প্রথম মুখ ফুটে তার কাছে কিছু চেয়েছে। তাই না দেওয়া পর্যন্ত মন অস্থির অস্থির লাগছে। পরীক্ষার খাতায় লিখতে লিখতেও ভেবেছে
সঙ্গে আর কী কী দিবে। আর কী পেলে ভোর খুব খুশি হবে?
কাজল নাকি চুড়ি? মনমতো কিছু পেলে ভোর আবেগী হয়ে কী তাকে জড়িয়ে ধরবে? নাকি জুনিয়র ভেবে মুখ ভেংচিয়ে বলবে, ‘খবরদার আমার পটাতে আসবি না। ছোট ছোটোর মতোই থাক। নয়তো থাপ্পড়ে তোর প্রেমিকগিরির শখ ঘুচিয়ে দিবো।”
যদিও একথা সে বলতেও পারে। রাত দিন যেই হারে পঁচায় তাতে বলাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এসব ভেবে সে গোলাপ
ফুলের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। গোলাপ ওর মায়ের ভীষণ পছন্দ। গোলাপ পেলে উনি ছোট বাচ্চাদের মতো ভীষন খুশি হয়। আনন্দ যেন উপচে পড়ে উনার পুরো মুখজুড়ে। খুশিতে ফুলগুলোর সুগন্ধ নিতে থাকেন বার বার। আর সেই দৃশ্যটুকু মন ভরে দেখে সে। আগে মাঝেমধ্যেই পিয়াস হুটহাট ফুল এনে ওদের মাকে দিতো। তিতাস একদিন বেশ বিরক্ত মুখে জিজ্ঞাসা করেছিল,

-”ফুল না এনে খাবার আনলেও তো পারো ভাইয়া?”

-”উহুম, আম্মু খাবারের চেয়ে গোলাপই বেশি পছন্দ করবে।গোলাপ পেয়ে উনি খুশি হয়ে যেই হাসিটুকু দেয়। সেই হাসিটা অমূল্য ভাই, অমূল্য। এটার সঙ্গে আর কিছুর তুলনা হয় না।”

এরপর থেকে সেও হুটহাট ফুল কিনে ওর আম্মুকে উপহার দিতো। এতে উনি খুশি হয়ে অশ্রু ঝরাতেন। আর এখন ভোর এবং ওর আম্মু এই দু’জন নারীর স্থান তার কাছে সবকিছুর
ঊর্ধ্বে। তার হাসির কারণ, বাঁচার কারণ। তাই তাদের মুখে হাসি ফুটাতে ছুটে এসেছে ফুল কিনতে। ফুল দেখে যদি তার প্রিয় মানুষ দু’টো কিঞ্চিৎ হাসে তাহলেই তার সব কষ্ট স্বার্থক।এসব ভেবে সে বাইক নিয়ে চলল বাসার পথে। না জানি ঠোঁটে ব্যথা নিয়ে ভোর তাকে কত গালি দিয়েছে। এখন গিয়ে ব্যথা উপশমের কিছু একটা করতে হবে। প্রয়োজনে পুনরায় কা’ম’ড় বসাবে ভোরের ওই মিষ্টি অধরে। আর উপহারস্বরুপ কিল, ঘুষি, থাপ্পড়, যায় ভাগ্যে জুটুক সাদরে গ্রহনও করবে।
তাছাড়া, সিনিয়র বউয়ের গোমড়া মুখ তার আবার ভালো লাগে না, মন কাঁদে, হৃদয় পুড়ে। দেহখানা অস্বস্থিতে ভুগে।
এসব ভাবতে ভাবতেই তিতাস দ্রুত ব্রেক কষে ভ্রু কুঁচকে
তাকিয়ে রইল। ওদের গাড়ি দেখে মুখে গালি এনেও গিলে ফেলল। এভাবে কেউ পথ আঁটকায় আর একটু হলেও তো
সে ছিঁটকে পড়ত। ততক্ষণে গাড়ির ড্রাইভার তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে বলল,

-”তিতাস ভাই, আমি অনেকক্ষণ ধরে আপনাকে খুঁজছি।”
-”কেন, কি হয়েছে?”
-”ভাবি ওয়াশরুমে পা পিছলে পড়ে গেছে। বড় মেডাম নতুন
হসপিটালে নিয়ে গেছেন। আর আপনাকে যেতে বলেছেন।”
-”কখন পড়েছে?”
-”সকালে আপনি বের হওয়ার পরপরই।”
-”বাসায় ফিরেছে এখন?”
-”না।”
???গল্পগুচ্ছ সমগ্র???
তিতাস ভুলেও আর একটা শব্দও ব্যয় করল না। সে দূরন্ত গতিতে চলল হসপিটালের দিকে। ড্রাইভার মিথ্যা বলছে সে বুঝে গিয়েছে। কারণ সামান্য কথা বলার সময় উনার কন্ঠ প্রচন্ড কাঁপছিল। বাসার বুয়া থেকে শুরু করে মালি অবধি তাকে কেন জানি ভয় পায়। তারা যখন মিথ্যা বা অন্যকিছু লুকাতে চায় তখন তারা এভাবে তোতলায়। আর সেও অতি বুঝে যায় মিথ্যার রাখঢাক। তাছাড়া এখন ড্রাইভারের দৃষ্টি নড়বড়ে। সচারাচর মিথ্যা বলার সময় কারো দৃষ্টি যেমনটা থাকে ঠিক তেমন। আর মানুষ সত্য লুকাতে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। অর্থাৎ ভোরের সঙ্গে খারাপ কিছু ঘটেছে।রবিন পইপই
করে ড্রাইভারকে বলে দিয়েছে একথা বলার। যেন টেনশনে তিতাস দূর্ঘটনা না ঘটিয়ে বসে। আর মায়ের কথা বলা যাবে না কারণ মা ভক্ত ছেলে সে। না জানি একথা শুনবে সে কী করবে। এদিকে, অজানা ভয়ে তিতাসের মুখ শুকিয়ে বুক দুরুদুরু কাঁপছে। এমনটা হয়েছিল ওর আম্মুর অসুস্থতার সময়। বার বার মনে হতো আম্মুকে হারিয়ে ফেলবে, চিরতরে
একা হয়ে যাবে। তবে এখন ভোর কথা শুনে বুক শূন্য শূন্য লাগছে। চিনচিন ব্যথা অনুভব বুকের বাঁ পাশে। না জানি সে এখন কেমন আছে? কি অবস্থায় আছে?এসব ভেবে তিতাস বাইকের স্পিড বাড়িয়েও কাজ হলো না। কিছুদূর গিয়ে বাঁধা পড়ল বিশাল জ্যামে। রাগে দুঃখে টেনশনে সে খামছে ধরল নিজের মাথার চুল। আর এই পথ ছাড়া বিপরীত পথও নেই। এখন যেতে হলে তাকে জ্যাম ছুটার অপেক্ষা করতে হবে। না জানি ওদিকে কী অবস্থা।তিতাসের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে
গেল। সামনেই পরিচিত এক প্রতিবেশীর দোকান আছে। সে প্রতিবেশীর দোকানের সামনে বাইক রেখে দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগল। এই জ্যাম দুই ঘন্টাতেও ছুটবে নাকি সন্দেহ। হাঁটতে হাঁটতে তার মনে হলো ভোরের তাকে প্রয়োজন, তাকে করুণ সুরে ডাকছে। তার সঙ্গ কামনা করছে। এসব ভেবে সে দৌড় শুরু করল। তাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে কতজন বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল। অতঃপর দৌড়ে হেঁটে সামনে এগিয়ে দেখে দুটো মালবাহী ট্রাক উল্টে পড়ে আছে। আর এজন্যই জ্যাম বেঁধেছে। তিতাস জ্যাম পেরিয়ে একটা সিএনজিতে উঠে বসল। তখন ড্রাইভারের থেকে গাড়িটা নিলেও সমস্যায় পড়ত। না নিয়েই ভালো করেছে। তারপর পনেরো মিনিটের মধ্যে হসপিটালে পৌঁছে, সে রিসিপশন গিয়ে জিজ্ঞেস করে তিনতলায় চলে গেল। সেখানকার চেয়ারে রবিন মাথায় হাত রেখে বসে ছিল। এতক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করে কেবলই বসেছে।হঠাৎ তিতাসের দিকে চোখ পড়তেই ছুটে এসে কিছু বলার আগে তিতাস বলল,

-”ভোর কোথায়? ঠিক আছে সে?”
-”ওটিতে।”
-”সিরিয়াস কিছু?”
-”আসলে ঘুম..।”

তখন একজন নার্স এসে রবিনের হাতে ওষুধের লম্বা লিস্ট ধরিয়ে চলে গেলেন। আর বলে গেলেন দু’জন পেশেন্টেরই অবস্থা খারাপ। দু’জনে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ খেয়ে এর পরপরই আরেকটা মেডিসিন খেয়েছেন। ফলে তাদের র/ক্ত চলাচল অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। একপর্যায়ে নাক মুখ দিয়ে র/ক্ত বেরিয়ে তাদের শরীর এখন র/ক্তশূন্য। রবিন যেন আরো সাত থেকে আট ব্যাগ র/ক্ত জোগাড় করে রাখে। নয়তো বিপদ অনিবার্য। একথা বলে নার্স ওটিতে ছুটলেন।তখন তিতাস প্রশ্ন ছুঁড়ল,

-”নার্স আর কাদের কথা বলল রবিন? কারা ঘুমের ওষুধ খেয়েছে?”

রবিন এবার ধীরে ধীরে পুরো ঘটনা তিতাসকে খুলে বলল।
তিতাস নিশ্চুপ হয়ে শুনে সেখানকার চেয়ারেই বসে পড়ল। ওর শরীর যেন ক্ষণিকেই শক্তিহীন হয়ে গেল। একফোঁটাও শক্তি পাচ্ছে না সে উঠে দাঁড়ানোর। তবে এবার সে নিশ্চিত তার মা আর ফিরবে না। আর হয়তো দেখতে পাবে না সেই প্রাণখোলা হাসি মুখখানা। দোষ করলে কেউ চোখ রাঙিয়ে শাষণ করবে না। তার বোধহয় দেওয়াও হবে না সদ্য কেনা গোলাপ গুলো। অন্তত সে তো জানে তার মায়ের শরীরিক অবস্থা। আর নাক মুখ দিয়ে র/ক্ত বের হওয়া মানে মোটেও
সাধারণ ব্যাপার নয়। এমনিতেই উনি অসুস্থ। তখন তিতাস উঠে দাঁড়িয়ে ওটির দিকে পা বাড়িয়েও পিছু ফিরে বলল,

-”আচ্ছা রবিন, আমি আগে কার কাছে যাবো বলো তো? না মানে, মায়া নাকি মমতার কাছে?”

তিতাসের কথা শুনে রবিন ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল। এই ছেলে আসলে কি দিয়ে তৈরি সে বুঝে না। পিয়াস যখন মারা গেল, তখন সবাই কেঁদে নিজেদের কষ্ট কমাচ্ছিল।আর এই ছেলে নিশ্চুপ হয়ে বসে সবার কান্না দেখছিল। পিয়াসের দা’ফ’ন করে সবাই ফিরে আসলেও সে ফিরেছিল না। পরে
ভাইয়ের ক’ব’রের পাশে বসে ছোটদের মতো চিৎকার করে কেঁদেছিল। কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। অথচ পরদিন বাসায় ফিরেছিল স্বাভাবিকভাবে। যেন তার কাছে সব স্বাভাবিক। আর এই মুহূর্তে তাকে এত শান্ত দেখে রবিন বিষ্মিত। কারণ তার এত শান্ত থাকাও ভয়ের কারণ। হয়তো তিতাস এতক্ষণে কিছু আন্দাজও করেছে। যদিও আন্দাজ করাটাই স্বাভাবিক। কেননা দিনের বেলায় ঘুমের ওষুধ ভোর কিংবা তার মা খাবেন না। খাওয়ার প্রয়োজনও দেখছে না। তাহলে নিশ্চয়ই কেউ খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে। তাছাড়া আজকের খাবার বানিয়েছিল বুয়া। মূখ্য কথা বুয়ার এতটা দুঃসাহস হওয়ার কথা নয়। তাহলে এখানে নিশ্চয়ই তৃতীয় ব্যক্তির প্ররোচনা রয়েছে। তিতাস ততক্ষণে উত্তরের আশায় না থেকে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চলেও গেছে। ডাক্তার তাকে জানাল, তার মায়ের অবস্থা একটু বেশিই শোচনীয়। তিতাস নিজেও ইটার্নি ডাক্তার তাই ডাক্তার খোলাখুলি কথা বলল। তারপর দিন পেরিয়ে রাত হলো। তিতাস এবং রবিন রক্ত জোগাড় করতে ব্যস্ত। তিতাসের বাবাও দেশে ফেরার জন্য ফ্লাইটে উঠে পড়েছেন।

কিন্তু তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে গেছে ‘ সারার মৃত্যুর খবর। সেই সঙ্গে প্রতিটি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ ” রাতপরী সারার নিজ বাসায় সারাসহ শাওন নামের এক যুবকের
লা/শ উদ্ধার।”

To be continue………….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here