প্রিয়_তুই,২৩,২৪

0
257

#প্রিয়_তুই,২৩,২৪
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৩

ব্রেকিং নিউজ ” রাতপরী সারার নিজ বাসায় সারাসহ শাওন নামক এক যুবকের লা/শ উদ্ধার।”

টিভির প্রতিটি চ্যানেলে এটাই ব্রেকিং নিউজ। সাংবাদিকদের ভিড় জমেছে সারার বাসার সামনে।কেউ বা লাইভে দেখাচ্ছে
সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি। বিলাশ বহুল ফ্ল্যাটের একটা
বেড রুমে তাদের দু’জনের লা/শ পাওয়া গেছে। দু’জনে খুব বাজে ভাবে নিজেদের জ’খ’ম করেছে। শাওনের বুকের ডান পাশে এখনো ছু/রি গাঁথায় আছে। তার নিথর দেহখানা পড়ে আছে রুমের এক কোণে। র/ক্তে ভিজে আছে ওর টিশার্টসহ সাদা টাইলসে্র মেঝে। তারই পাশে পড়ে রয়েছে র/ক্ত মাখা
ভাঙ্গা ফুলদানি। রুমের জিনিসপত্রসহ লকারের তালা ভাঙা।
প্রয়োজনীয় কিছু কাগজও ছড়ানো ছিটানো রুমের আনাচে – কানাচে। জুবায়েরের (সারার স্বামীর) ছবি লুটোপুটি খাচ্ছে শাওনের র/ক্তে। হয়তো সারা গোপনে তাকে ভালোবাসে তাই তার ছবি লুকিয়ে রেখেছে নিজেরই কাছে। নারীর মন বুঝি একেই বলে। পুরো পৃথিবীর সম্মুখে ঘৃণার তীর ছুঁড়লেও সে
আজও তাকেই হৃদয়ে পুষে রাখে অতি গোপনে, স্ব-যতনে।
নীরবে নিভৃতে মন মাঝারে গেঁথে রাখে তারই নাম। শাওনের
থেকে একটু দূরেই সারার অ’ র্ধ ‘ন ‘গ্ন’ দেহখানা বসা অবস্থায় দেওয়ালে হেলান দেওয়া। ওর মুখ থেকে গড়াচ্ছে সাদা সাদা ফ্যানা। বাম হাতটা মুচড়ে ভেঙে ফেলা। গালে থাপ্পড়ের দাগ সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। ঠোঁটে, বুকে, পেটে, ভারী কিছুর আঘাত স্পষ্ট। পাশেই পড়ে আছে বালিশ এবং সবুজ রঙের জর্জেট ওড়না। এতে ধারণা করা যাচ্ছে, সম্ভবত কেউ তাকে শ্বাসরোধ করে মেরেছে। হয়তো তারা দু’জনেই পূর্ব পরিচিত এবং শত্রুতার রেশ ধরে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এরমধ্যে জানা গেছে, এই বাসায় আরো চারজন মেয়ের আনাগোনা বেশি। তারা হলেন গীতা, সীতা, রিপা, এবং সোনিয়া। তারাও সবার পরিচিত মুখ এবং পেশায় প/তি/তা। যাদের চলাফেরা হাই সোসাইটির পয়সা-ওয়ালা কাপুরুষ লোকদের সঙ্গে। সারার মতোই তাদেরও নিজ নিজ ফ্ল্যাটসহ গাড়ি বাড়ি সবই আছে।
শুধু মান-সন্মান বাদে। আর সারাকে দেখতে তারা মাঝেমধ্যে এখানে আসত, আড্ডা দিতো, মজা করত। আজ বিকালেও
সীতা আর রিপা এসেছিল।কারণ সারা সকালে জানিয়েছিল তার নাকি ভীষণ জ্বর।র/ক্ত বমিও করেছে বেশ কয়েকবার।
এজন্য কাস্টমার বিদায় করে তারা দেখে করতেও এসেছে। আর এসে দেখে সারা এবং শাওন দু’জন মৃ/ত অবস্থায় পড়ে আছে। আর শাওনকে তারা চিনে। কারণ শাওন তাদের শয্যা সঙ্গী হয়েছে বেশ কয়েকবার। তারপর ওরা দু’জন পুলিশকে জানালে, ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে সাংবাদিক এসে লাইভ করে খবরটা ভাইরাল করে দেয়। মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়েও যায় ‘রাতপরী’ সারার মৃ’ ত্যুে’ র খবর। এতে সাধারণ জনতা সংবাদটা দেখে কটুক্তি করে গালমন্দ করতেও বাকি রাখল না। রাতপরীর সঙ্গ নিতে কত পুরুষের সংসার ভেঙেছে তার ইয়াত্তা নেই।আজ সেই পুরুষদের সহধর্মিণীরা শাপ-শাপান্তর করছেন, প্রচন্ড খুশিও হয়েছেন। শুধু সারার কারণেই উনারা স্বামী সুখসহ সোনার সংসারটাও হারিয়েছেন। আর সন্তানরা হয়েছে পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত। আর যারা সারার কাছে গিয়ে ম/র/ণ ব্যাধি এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ
ভয়ে কাঁদছেন, মৃ/ত্যু/র ভয়। কারণ উনাদের মৃ/ত্যু/ও অতি সন্নিকটে। ছেলের কথা শুনেই তাৎক্ষণিক শাওনের বাবা-মা সারার বাসায় উপস্থিত হয়েছেন। শাওনের দে/হ/খা/না নিতে
কিন্তু পুলিশ জানালেন, বডি পো/ষ্ট/ম/র্টে/ম না করা অবধি দেওয়া যাবে না। বরং পো/ষ্ট ম/র্টে/ম করে ডেডবডি বাসায় পৌঁছে দিবেন। টাকা এবং ক্ষমতার জোরেও উনারা ছেলের পো/ষ্ট/ ম/র/টার্ম ঠেকাতে পারলেন না। অগত্যা কেঁদে ফিরে গেলেন শূন্যহাতে।
__________________________???গল্পগুচ্ছ সমগ্র???

সাদা এ্যপ্রোন শরীর থেকে খুলতে খুলতে তিতাস কেবল পা রাখল ভোরের কেবিনে। ভোরের শরীর র/ক্ত দেওয়া যাচ্ছে।
এই নিয়ে চার ব্যাগ। আর ওর মাকে রাখা হয়েছে আইসিইউ
রুমে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।তিতাস সবকিছু ঠিকঠাক দেখে নিঃশব্দে বসে মাথা রাখল ভোরের বুকে।অতঃপর মনোযোগ সহকারে শুনল ভোরের হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি। তারপর ওর মাথা তুলে ভোরের কপালে অধর ছুঁইয়ে মলিন হাসল। স্নিগ্ধ হাস্যোজ্জ্বল মুখখানাতে বেদনার ছাপ। তিতাস ভোরের হাত ধরে আঙুলের ভাঁজে নিজের আঙুল রেখে বলল,

-”একবেলা খাইয়ে দিয়ে সারাদিন উপোস রাখলেন, এটা কি ঠিক? সত্যিই সিনিয়র বউরা দায়িত্ব বুঝে না। তারা স্বামীদের কথা ভাবে না, ভালোবাসা তো দূর।”

জ্ঞানহীন ভোরের থেকে কোনো জবাবই এলো না। সে এখন ঘুমে বিভোর। তিতাস ভোরের কপালের চুল সরিয়ে কানে কানে মৃদু স্বরে বলল,

-”আপনাকে আমার এখনো অনেক ভালোবাসা বাকি ভোর।
আপনার সঙ্গে দীর্ঘ পথচলাও বাকি। শুনবেন না, ভালোবাসি কি না? পরখ করে দেখবেন না আমার মনে আপনার স্থানটা ঠিক কোথায়? কতভাবে আপনার মায়াতে জড়িয়ছি আমি।
কি হলো, জবাব দিন?”

তখনই অনড় ভোরের গালে তিতাসের চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তিতাস নীরবে কাঁদছে। তবুও ভোর জানতেও পারল না, প্রানবন্ত ছেলেটা তার নীরবতা সহ্য করতে পারছে না। সে নিশ্চুপ তাই তিতাস ক/ষ্টে পুড়ছে, একা একা গুমড়ে মরছে।
ছেলেটা নাকি তাকে ভালোবাসে না। তার জন্য নাকি একটুও ভালো নেই। মায়া যদি এমন নেশাক্ত হয় তবে ভালোবাসার প্রয়োজন নেই। এই মায়ার বশেই নাহয় আষ্টে-পিষ্টে জড়িয়ে থাকুক একে অপরের সঙ্গে। তিতাস দু’চোখ মুছে ভোরের শুকনো ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,

-“প্লিজ, আমাকে এভাবে নিরাশ করবেন না ভোর। এই পঁচা ছেলেটা আপনাকেই ভীষণ ভালোবাসতে চাই, ভীষণ। আর একটাবার সুযোগ দেন। কথা দিচ্ছি, ভালোবাসার মুড়িয়ে রাখব।”

চঞ্চল তিতাসের কন্ঠে এই মুহূর্তে চঞ্চলতা নেই। আছে শুধু, একরাশ অভিমান এবং অতি মূল্যবান কিছু ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা। তিতাস ভোরের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,

-” আপনাকে এভাবে দেখতে পারছি না। আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে ভোর, বুকে প্রচন্ড ব্য/থা হচ্ছে।”

তিতাস আর কিছু বলার আগেই কেবিনের দরজায় পরপর
দু’বার নক পড়ল। তিতাস উঠে দরজা খুলে দেখে ছলছল চোখে রবিন দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগে
রবিন তাকে টেনে বাইরে নিয়ে এলো। তারপর বলতে গিয়েও
রবিন থেমে গেল। কারণ ঠিক তখনই হন্তদন্ত হয়ে তিতাসের বাবার সেখানে উপস্থিত হলেন। এই বিপদের কথা শুনে উনি
কীভাবে পৌঁছেছেন কেবল উনিই জানেন। উনি এসেই কান্না ভেজা কন্ঠে উনার সহধর্মিণীর এবং পুত্রবধূর কথা জিজ্ঞাসা করলেন। তিতাস জবাব না দিয়ে আগে বাবাকে জড়িয়ে ধরে চেয়ারে বসালো। তারপর দ্রুত পানি এনে খাইয়ে শান্ত হতে বলল। উনার পুরো শরীর কাঁপছে যেন এক্ষুণি পড়ে যাবেন।
একটুপর তিতাস উনাকে বুঝিয়ে শান্ত করতেই পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল।

-”হেই তিতাস তোমার বে** বোনটা মারা গেছে শুনেছো?”

একথা শুনে তিতাস বজ্রাহতের মতো ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে এক সিনিয়র ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছেন।মুখভর্তি তাচ্ছিল্যের হাসি। তবে কথাটা উনিই বললেন।তিতাস উত্তরে কিছু বলতে গেলে
তিতাসের বাবার অশ্রুফোঁটা ঝরে তিতাসের ডান হাত স্পর্শ করল। নিঃশব্দে ঝরে যাচ্ছে তার বাবার অশ্রু। তিতাস এবার ঘুরে বিষ্মিত দৃষ্টিতে রবিনের দিকে তাকাতেই রবিন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। এতে তিতাস অবাকের চূড়ান্ত পযার্য়ে পৌঁছায়।
তখন বাবার দৃষ্টির সঙ্গে দৃষ্টি পড়লে উনিও কান্নাভেজা নেত্রে সম্মতি সূচক মাথা নাড়ান। অর্থাৎ সত্যি। তিতাস এবার দু’পা পিছিয়ে থম মেরে বাকশূন্য হয়ে যায়। সারাকে ঘৃণা করলেও
কখনো তার মৃত্যু কামনা করে নি। মুখে খারাপ ব্যবহার করে
আড়ালে গিয়ে কেঁদেছে অনেকবার। বড় বোন হয় তার।আর আজ সকালেও তো সারা তাকে বেস্ট অফ লাক জানিয়েছে মেসেজ করে। তিতাস নিজেকে সামলে পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখে চেনা পরিচিতদের অহরহ মেসেজ, কল।
তখন আইসিইউ রুমে প্রবেশের কারণে ফোন সাইলেন্ট করে পরে জেনারেল করতে ভুলে গেছে। তাছাড়া দৌড়ের উপরেই আছে এসে থেকে। ভোর এবং তার মায়ের র/ক্ত জোগাড়েই কালঘাম ছুটে গেছে। ডোনার খুঁজে পাচ্ছিল না। একদিকের বিপদ সামলে না উঠতেই আরেকটা বিপদের সম্মুখীন হলো।
তিতাস নিজের শরীরের ভার ছেড়ে সেখানেই বসে পড়ল। সে
আর সহ্য করতে পারছে না হারানোর ব্যথা। এই ব্যথা তাকে নীরবে গোপনে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। তখন তিতাসের বাবা ছুটে গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। বাবার ছেলের অবস্থা দেখে রবিনও কেঁদে ফেলেছে।ঠিক তখন তার ফোনে মেসেজ আসল,

-”রবিন ভাই, শাহিনা তিতাসের বাবার লকারের তালা ভেঙে কিসব কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল। উনার সঙ্গে বড় ট্রলি আছে।”

To be continue……….!!

#গল্পগুচ্ছ_সমগ্র
#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৪

বিপদের মুহূর্তটুকু যেন অতিবাহিত হতেই চায় না। সেকেন্ডের কাটা যেন ঘন্টার কাটায় পরিণত হয়। তিতাসের কাছে এখন সেটাই মনে হচ্ছে।সর্বগ্রাসী বিপদ ওকে চারদিক থেকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। যারা এই মুহূর্তে বিপদগ্রস্ত তারা সবাই আপন, অতি কাছের মানুষ। কাকে ফেলে কার কাছে ছুটবে সেটাই দিশা পাচ্ছে না। নিজেকে ওর পাগল পাগল লাগছে।
একদিনেই এতকিছুর ঘটেছে নিজেকে সামলে উঠতেই তার বেগ পেতে হচ্ছে। তার বোধগম্য হচ্ছে না, কার জন্য কাঁদবে কার কষ্টে স্বান্ত্বণা দিবে। তবে দাঁড়িয়ে থাকার মতো সময় ওর কাছে নেই। সে আর না দাঁড়িয়ে দৌড়ে ভেতরে চলে গেল।
হসপিটাল কতৃপক্ষকে জানিয়ে ওর মা এবং ভোরের সুরক্ষা জোরদার করল। তারপর মা এবং ভোর ঠিক আছে কি না দেখে দ্রুত ফিরে আসল বাবার কাছে। ওর বাবা বুকে হাত রেখে বসে আছেন। বোধহয় ব্যথা পুনরায় বেড়েছে। তিতাস
এসে বিনাবাক্য ওর বাবার হাতে ইনজেকশন পুশ করে চুপ থাকার ইশারা করল। কিছু বলতে গেলে অন্য কথার তাল টানল। তারপর জোরপূর্বক হালকা কিছু খাবার খাইয়ে দু’টো ওষুধ খাইয়ে দিলো। না উনার বারণ শুনল আর না সে কিছু
বলার সুযোগ দিলো।অতঃপর বাবার কাঁধে হাত রেখে বলল,

-”আমার মা এবং বউয়ের দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি তোমায়। এই দায়িত্বের নড়চড় হলে খবর আছে বলে দিলাম। পুত্রবধূ নয়, তোমার আরেকটা মেয়ের পাশের বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ো।”

-”তুমি কোথায় যাচ্ছো?”

-”যতই পাপ করুক সে আমার বোন বাবা, আমার বোন। তাই আমি সেখানেই যাচ্ছি।”

-”আমিও যাবো, চলো।”

-”না বাবা, তুমি থাকো আমি ফোন করে সব জানাব।”

-” বাবা হয়ে সন্তানের লা/শ কাঁধ নিতে পারছি না আমি। এই জন্যই কী এখনো বেঁচে আছি?”

তিতাস কথা ঘুরাতে রবিনকে বলল সবার খেয়াল রাখতে। তারপর বাবাকে জোরপূর্বক ভোরের পাশের ফাঁকা বেডে শুইয়ে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিতাসের বাবা ঘুম রাজ্যে পাড়ি জমালেন। আলাদা কেবিন নিতে পারতো তবে রবিনের জন্য কষ্টকর হয়ে যেতো। সেই বেচারা কত দিকে বা খেয়াল রাখবে। সে যা করেছে বা করছে এই ঋণই সে শোধ করতে
পারবে না। তাছাড়া এখন তিনজন ঘুমাচ্ছে উঠার চান্স খুবই কম। তিতাস আর দাঁড়াল না নার্সদের ডেকে পুনরায় বলে বেরিয়ে পড়ল। তবে গাড়ির কাছে যেতেই ওর মাথার ভেতর চক্কর দিয়ে উঠল।হয়তো না খেয়ে ক্লান্ত শরীরে দৌড়াদৌড়ির কারণে। তিতাস নিজের দিকে পাত্তা দিয়ে গাড়ির নিয়ে চলে গেল। তার যাওয়ার মিনিট দু’য়েক পরেই ওয়ার্ড বয় রবিনকে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল,

-‘তিতাস স্যার খাবারটা খেয়ে নিতে বলল। খাবার নষ্ট করলে পরে এসে হিসাব কষবে।”

রবিন প্যাকেটটা হাতে নিলে ছেলেটা চলে গেল। আর রবিন পূর্বের চেয়ারে বসেই কেঁদে ফেলল। ছেলেটার সবদিকে যেন নজর থাকে। অথচ সারাদিনে নিজেও দাঁতে কুটোটিও কাটে নি। না জানি কখন মাথা ঘুরে পড়ে যায়। আর কত দিকই বা সামলাবে সে? পিয়াসের মৃত্যুর পর থেকেই তার উপর দিয়ে কম ধকল যাচ্ছে না। একটার পর একটা ঝামেলা পোহাতেই আছে। ওই দিকে শাহিনা না জানি কোন প্যাঁচ কসাচ্ছে। এই মুহূর্তে তিতাস এমনিতেই খু্ব টেনশনে আছে এখন শাহিনার কথা বললে আরো ভেঙ্গে পড়তে পারে। পরে নাহয় শাহিনার ব্যাপারটা ভাবা যাবে। কতদূরই বা যাবে সে। ওদিকে তিতাস সারার বাসায় গিয়ে দেখে সারার লা/শ নেই। পো/ষ্ট /মর্টে/ম
করতে ডে/ডবডি পাঠানো হয়েছে। আর সারার বাসাটা সীল গালা করা হয়েছে তদন্তের স্বার্থে। তিতাস চোখ মুছে সেখান থেকে বেরিয়ে সারাকে যেখানে পাঠানো হয়েছে সেখানেই গেল। তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা বসে জানতে পারল, কালকে
সকালের আগে লা/শ দিবো না। তিতাস ওখানে থাকা একটা ছেলেকে টাকা খাইয়ে সারার লাশটা দেখাতে বলল। ছেলেটা টাকা নিয়ে তাই দেখালো। তিতাস সারার মুখ দেখে ভেতরের কষ্টটাকে উগলে দিয়ে ছোট্ট তিতাসের মতো কেঁদে ফেললো।
তার কষ্টেমাখা অশ্রুফোঁটা গড়িয়ে গেল অঝর ধারায়।সারার হাতটা সে কপালে ঠেকিয়ে অনেক কষ্টে উচ্চারণ করল,

-”আ আ আপু।”???গল্পগুচ্ছ সমগ্র????❤️

প্রায় দশ বছর পর তিতাস এই ‘আপু’ শব্দটা উচ্চারণ করল।
মানুষের ঘৃ/ণা মিশ্রিত কথা শুনে রাগে দুঃখে কত কথায় না
শুনিয়েছে বোনটাকে। তিতাস সারার পুরো মুখে হাত বুলিয়ে হাতের উল্টো পিঠে চুমু এঁকে শব্দ করে কাঁদতে লাগল। আর
তার চোখের সামনে ভাসতে লাগল তাদের তিন ভাইবোনের খুনশুটির মুহূর্তগুলো। কতই না রঙিন ছিল তাদের জীবন।
আরপাঁচটা সাধারণ ভাই বোনেদেন মতোই তাদের সম্পর্কও ছিল মধুর। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে পাল্টে গেল পরিস্থিতি। হারিয়ে
ফেললো সুখগুলো, ক/ষ্ট এসে জুড়ে বসল তাদের জীবনে।
এসব ভাবনার ছেদ ঘটল পাশের ছেলেটার বিরক্তমাখা কথা শুনে। ছেলেটা তিতাসকে তাড়া দিতে লাগল চলে যাওয়ার।
নয়তো কেউ দেখে ফেললে তার চাকরি চলে যাবে। তিতাস শেষবার সারার মুখ দেখে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

-” মুখে যত যায় বলি আমার মোনাজাতে তুই ছিলি, আছিস, আর সর্বদা তাই থাকবি আপু।”

একথা বলে তিতাস দুই হাতে চোখ মুছে বেরিয়ে গেল। আর পিছু ফিরে মায়া বাড়াল না। তবে তার চোখের পানি অঝরে ঝরে গেল সারাপথ। সারার কথা আম্মু জানলে না জানি কী করবে। আর জানাবেই কখন উনি তো অজ্ঞান। তিতাস গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই বাসায় ফোন দিলো।এদিকের ঝামেলা পোহাতে গিয়ে চাচী ও রোজার কথা ভুলতে বসেছে। ওরা যে বাসায় কি করছে কে জানে। এতবার কল করেও কাউকেই পেলো না। কল বেজে বেজে কেটে গেল। তারা ঘুমাচ্ছে ভেবে সকালে কল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। তিতাসের হসপিটালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত দুইটা বেজে গেল। রবিন কেবিনের সামনে চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে পড়েছে। তিতাস ক্লান্ত পরিশ্রান্ত শরীরে আগে হাতমুখ ধুয়ে রবিনকে ডেকে তুলে গাড়ির চাবি দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিলো। রবিন যেতে চাচ্ছিল না তিতাসই জোর করল। তারপর ভোরের কেবিনে গিয়ে দেখে ওর বাবা নেই, উনি আইসিইউ রুমে সামনে বসেছিলেন। পরে রবিনের অনেক রিকুয়েষ্টে উনাকে আইসিইউ রুমে এলাও করেছেন ডাক্তাররা। উনি এখন সহধর্মিণীর হাতটা ধরে চুপ করে বসে আছেন। মেয়েটাও মারা গেছে আর সহধর্মিণীর এই অবস্থা, উনার ভেতরে কী হচ্ছে উনিই জানেন। তিতাস নিজে গিয়েও বাবাকে বাইরে থেকে দেখে আসল। নার্সকে ইশারায় বোঝাল খেয়াল রাখতে। তারপর তিতাস কেবিনের দরজাটা খুলতেই ভোর তার দিকে তাকাল। সে জেগে আছে। ভোর ওকে দেখে তড়িঘড়ি উঠতে গিয়ে হাতে টান লেগে ব্যথাতুর শব্দ করে
উঠল। তিতাস ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই ভোর রুগ্ন কন্ঠে বলল,

-”এতক্ষণ কোথায় ছিলি তুই? চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? কিছু খেয়েছিস, পরীক্ষা কেমন হয়েছে তোর?”

তিতাস জবাব না দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে ভোরের মুখপানে। ভোরকে উতলা হতে দেখতে ভালো লাগছে। কেউ একজন তার জন্য ভাবছে, চিন্তা করছে। দিনশেষে এটা যেন এক মধুর প্রাপ্তি। এতগুলো কথার একটা জবাবও তিতাসের থেকে না পেয়ে ভোর বলল,

-”এজন্যই বয়সের ছোট ছেলেকে বিয়ে করতে চাই নি। এরা বউদের ভালোবাসতে জানেই না। বরং বউ ভালোবাসা পেতে চায়লেও বুঝে না। কোন দুঃখে যে তোকে বিয়ে করেছিলাম, এরচেয়ে আয়মানই ঢের ভালো।”

তিতাস তবুও নিরুত্তর। নারীজাতি আসলেই অদ্ভুত। এদের বেশি ভালোবাসলেও দোষ, কম ভালোবাসলেও দোষ। মন প্রাণ উজাড় করে হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উগড়ে দিলেও তারা বলে, আরো চায়, আরো দাও। নয়তো ওমুকের মতো ভালোবাসো, তমুক তোমার চেয়ে বেশি ভালোবাসত আমায়।
মানে পুরুষ মানুষের জীবনের অর্ধেকটা সময় ভালোবাসার প্রমাণ দিতে দিতেই কেটে যায়। তবুও নারী জাতি এটা বুঝে না, এক একজন পুরুষের ভালোবাসার ধরণ ও বর্হিপ্রকাশ এক এক ধরনের। কেউ ভালোবাসার কথা বলে মুখে ফ্যানা তুলে দেয় তো কেউ নীরবে নীরালায় ভালোবেসে যায়। ভোর এবার তিতাসকে ভালোভাবে পরখ করে বলে,

-”আমাকে ধরে হেলান দিয়ে বসা তো।”
-”যা বলার শুয়ে বলুন, আমি শুনছি।”
-”যা বলছি কর নয়তো নার্সকে ডেকে দে।”

তিতাস আর কথা না বাড়িয়ে ভোরকে ধরে উঠে বসাল। সে সরতে গেলে ভোর একহাতে শার্ট খামচে ধরে জড়িয়ে ধরল।
এতে তিতাস নড়লো না, সরলোও না। বরং ভোরকে আগলে নিলো বাহুডোরে। অতঃপর কিছুক্ষণ দু’জনেই নিশ্চুপ থেকে ভোর বলল,

-”বুয়ার বানানো নাস্তা খেয়ে প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছিল আমার। পরে ঘুমিয়েও পড়েছিলাম। ঘুমানো এক ঘন্টা পর, চাচী রোজার জন্য জুস বানিয়েছিল সেটা নাকি বেশি হয়ে গিয়েছিল। পরে উনি আমাকে জোর করে খাইয়েছেন।ওটা খাওয়ার পরপরই
শরীর খারাপ লাগছিল। পরে হঠাৎ র/ক্ত বমি হওয়ার শুরু করল। এরপর আমি আর কিছু জানিনা। এখন ঠিক আছি, চিন্তা করিস না।”

তিতাস এবারও নিরুত্তর। তখন ওর বাবা এসে খাবার দিয়ে
তিতাসকে খেতে জোরাজুরি করলেন। তিতাসও বিনাবাক্য খেয়ে ভোরের পাশের বেডে শুয়ে পড়ল। তিতাসের বাবা চলে গেলেন তখন ভোর শুয়ে তিতাসকে বলল,

-“আচ্ছা আমি ম/রে গেলে কাঁদবি?”
-”এসব কী না বললেই নয়?”
-”যদি কখনো বুঝতে পারি তুই আমার সঙ্গে গেম খেলছিস। তবে আমি সত্যি সত্যি হারিয়ে যাবো একথা স্মরনে রাখিস।”
-”আচ্ছা।”
-”তিতাস।”
-“হুম।”
-”আমাকে মন থেকে কবে ভালোবাসবি?”
-”জানি না। তবে আমি প্রণয়কাব্য রচনা করবো তিনজনকে নিজ হাতে শা/স্তি দেওয়ার পর।”

To be continue………..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here