প্রিয়_তুই,২৫,২৬

0
222

#প্রিয়_তুই,২৫,২৬
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৫

পরদিন সকালে সারার ডে/ড বডি তিতাসদের বাসায় এসে পৌঁছাল। পাড়া-পড়শীরা উঁকি দিয়ে দেখলেও কেউ এগিয়ে আসলেন না। পরে তিতাস মাদ্রাসার কয়েকজন মহিলাদের এনে সারার গোসল সম্পূর্ণ করল। তারপর এতিমখানার শত শত ছেলেদের এনে সারার জানাযায় শরীক করল। কাছের আত্মীয়-স্বজন কেউ আসলেন তো কেউ মুখ ফিরিয়ে চলেও গেলেন। তবুও তিতাস কাউকে কিছু বলল না। আজ ভোরের দিকেই ওর মায়ের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। উনি সারার কথা শুনে শুধু এইটুকু বলেছেন,’আমার মেয়েটাকে দেখার একটু সুযোগ করে দাও।”
পরে তিতাস তার মা ও ভোরকে নিয়ে বাসায় চলে এসেছে।
তাদের হসপিটালে রেখে ভরসা পাচ্ছিল না। যেভাবে ওদের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হচ্ছে তাতে রিক্স নেওয়াটা বোকামি।
তারপর সারার দাফন কাজ সম্পূর্ণ করা হলো। ধীরে ধীরে সবাই চলেও গেল। শুধু সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে সারায় চিরনিদ্রায় শায়িত রইল। তার এই ঘুম আর কখনো ভাঙ্গবে না, কখনো না। এতিমখানার ছেলেগুলোর জন্য খাবারের এবং বস্ত্রের সু-ব্যবস্থাও করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তিতাস। এখন ক’ব র স্থান ফাঁকা।শুধু তিতাস আর ওর বাবা
সেখানে বসে নীরবে অশ্রু ঝরিয়ে দোয়া করল সারার জন্য।
পিয়াসের ক’ব র জিয়ারত করতেও কেউ ভুললেন না। এর
ঘন্টা দু’য়েক পরে তিতাস ওর বাবাকে নিয়ে বাসায় ফিরল।
পুরো বাসা থমথমে রুপ ধারণ করেছে। গুমোট ধরে আছে পরিবেশে। আবহাওয়াতেও কেমন গুরু গম্ভীর ভাবটা স্পষ্ট।
এভাবে সারাদিন কেটে রাত ঘনিয়ে এলো। ঘড়ির কাটা ঘুরে
এখন রাত দশটার ঘরে। সময় যেন দ্রুত বেগে ছুটে চলছে।
এরপরও কেউ চাচীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেন না।
তিতাসের বাবার লকার ভাঙা দেখে যা বোঝার উনারা সব বুঝে নিয়েছেন। রোজাকেও নিয়ে গেছেন তিনি। ভোর অসুস্থ শরীরে সকলের খাবারের ব্যবস্থা করল। তারপর তিতাসকে দিয়ে পাঠাল ওর বাবা-মাকে সামান্য কিছু হলেও খাওয়াতে।
ওর খুব শরীর খারাপ করছে। সে চুপচাপ শুয়ে চোখজোড়া
বুজে নিলো। আর তিতাস বিনাবাক্যে উঠে গেল ওর বাবার রুমে।
___________★_★___________
??গল্পগুচ্ছ সমগ্র????
বর্তমানে বিলাশ বহুল এক বাসায় অবস্থান করছেন শাহিনা। পাশের রুমে শুয়ে শুয়ে রোজা কাঁদছে। মেয়েটা হুইলচেয়ার থেকে পড়ে গেছে।পানির পিপাসায় সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করছে। মা! মা! করে এতবার ডেকেও কোনো লাভ হচ্ছেনা।
শাহিনার প্রেমিকও শাহিনাকে উঠে যেতে দেয় নি। শারীরিক মিলনে উন্মাদ তারা দু’জন। বাচ্চা মেয়েটার করুণ আতনার্দ তাদের কানে পৌঁছালেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। পরে নাহয় গিয়ে দেখবে। তাদের পাশেই পড়ে রয়েছে মোটা-সোটা বড় একটা ফাইল। সেখানে তিতাসের বাবার সম্পত্তির দলিলপত্র আছে। শাহিনা আসার সময়ই ক্যাশ টাকাসহ এগুলো সঙ্গে এনেছে। তাছাড়া উনি আর সেখানে ফিরবেন না। তবে রেখে এসে কী হবে? এতদিন অনেক ভালো সেজে সকলের কথায় নেচেছেন, তবে আর নয়। এবার নিজের কথা ভাবার সময় এসে গেছে। আর শাওন মরেছে ভালো হয়েছে। সে তো ছিল একটা গুঁটিমাত্র। সারা ওকে না মারলে সেই মে/রে ফেলতো।
তবে সারাকে মারার সময় উনার বেশ মজা লেগেছে। একটা শত্রুকে মে/রে প্রাণে প্রশান্তির ছোঁয়া পেয়েছেন। আহা, প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। তবে আফসোস ভোর আর উনার জা নাকি ম/রে নি। সত্যি বাবা এদের কৈ মাছের প্রাণ। নয়তো বাঁচার কথা না। ধুুর সব কষ্ট বৃথা গেল। ভোর মর/লে তিতাসের বড় বড় লোকচার অন্তত বন্ধ হতো। ছেলেটা উনাকে বড্ড বেশিই
ভুগিয়েছিল। তবে কাজের কাজ কিচ্ছুই হাসিল করতে পারে নি। তাকেও ধোকা দিয়ে ঠিকই ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে। তবুও
এই ছেলের শিক্ষা হয় নি, উনার পেছনে লোক লাগিয়েছিল।
ভাগ্যিস সেদিন ডাক্তারের কাছেই গিয়েছেন, নয়তো কী যে হতো। এছাড়াও কেউ কী কখনো জানবে উনার কথা শুনেই সারা ভুল পথে পা বাড়িয়ে ছিল। ওকে বাসা থেকে যেতে উনি সাহায্য করেছিলেন। এমনকি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার নাম করে সারার কাছে গিয়ে লাখ লাখ টাকা আনতেন। বিনিময়ে সারাকে ওর মায়ের হাতের রান্না খাবার দিয়ে আসতে হতো।
একবার সারা ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিল। পরে উনি সারাকে থুথু মেশানো খাবারও খাইয়েছিলেন। আর মেয়েটা
মায়ের হাতে রান্না পেয়ে খুশিত গদগদ হয়ে খেয়েছিল। এই কাজ উনি প্রায়ই করতেন, মনে শান্তি পেতেন। যদিও একথা আর কখনো প্রকাশিত হবে না। হওয়াও তো সম্ভবনায় নেই।
আর সারা কীভাবে যেন উনার প্রেমিকের কথাটা জেনেছিল,
এবং উনাকে থ্রেট দিয়েছিল সবাইকে জানানোর। এই জন্যই ওকে ম/র/তে হলো। আহারে বেচারা সারা।

সেদিন দুপুরের ঘটনা,

শাওন প্রায় সারার বাসায় অন্য উদ্দেশ্যে আসত। তবে সারা কখনোই তার সঙ্গে ইন্টিমেন্ট হতে চায়নি। কিন্তু শাওন ওকে ছাড়ত না, ছ্যা’চ’ড়া’র মতো পেছনে লেগেই থাকত। সেদিনও সে সারার বাসার সেই কারণেই এসেছিল। সারা প্রচন্ড অসুস্থ ছিল আর বাসা ফাঁকা পেয়ে শাওন জোরপূর্বক ওর উদ্দেশ্য
হাসিল করার চেষ্টা করো। সেই মুহূর্তে শাহিনা সেখানে পৌঁছে এসব দেখেও চুপ থাকে। বরং শাওনকে উৎসাহিত করে তার কাজ করার। শাওনও নিজেকে সিংহ প্রমাণ করতে তাই’ই করে। পরে সারা শাওনের বুক বরাবর লাথি মেরে ওকে নিচে ফেলে দেয়। তারপর ঝটপট উঠে দাঁড়িয়ে ফল কাটার ছু/রি
তুলতেই শাওন তাকে থাপ্পড় মেরে বিছানায় ছুঁড়ে মারে এবং ধর্ষণ করে। শাহিনার কল আসায় সে সারার সবুজ রঙের রং সারার মুখ গুঁজে পাশের রুমে চলে যায়। এরপর ইচ্ছে মতো প্রেমালাপ চালিয়ে এই রুমে দেখে সারা শাওনের বুকে ছু/রি বসিয়ে বদ্ধ পাগলের মতো কুঁ/পিয়ে যাচ্ছে। শাওন ততক্ষণে
মারা গেছে। শাহিনার নিঃশব্দে ঢুকে আস্তে করে ফুলদানিটা তুলে আঘাত করে সারার কাঁধে। সারা মুখ থুবকে পড়ে যায়।
তারপর শাহিনা তাকে ইচ্ছে মতো ঠোঁটে, বুকে, পেটে আঘাত করে। এতেও শান্তি পাচ্ছিলেন না তাই ফিনাইল এনে সারার মুখে খুলে জোর করে খাওয়ান। পরক্ষণেই সারার মুখ দিয়ে সাদা ফ্যানা বের হতে থাকে এবং নিস্তেজ হতে থাকে। তখন উনি সবুজ রঙা ওড়না দিয়ে সারাকে শ্বাসরোধ করে মে/রে
অ’ র্ধ’ ন’গ্ন অবস্থায় দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসিয়ে রাখেন। এবং সারার লকার থেকেও টাকা গয়না যা পেয়েছেন নিয়ে এসেছেন।যদিও ভেবেছিলেন একদিনে সব কয়েকটা পথের কাটাকে মে/রে ঝামেলা মুক্ত হবেন। কিন্তু আফসোস হলো না, ভোর ও তিতাসের মাকে কড়া ডোজের ওষুধ খাইয়েও কাজ হলো না, তারা বেঁচে গেল। তবে এটাই এর নয় খেলা
এখনো বাকি।

_________★_★________??গল্পগুচ্ছ সমগ্র?????

সারা মারা যাওয়ার তিন সপ্তাহ পর তিতাসের জোড়াজুরিতে
উনারা এই বাসাটা ছেড়ে দিলো। কারণ শাহিনা তাদের নামে কেস করেছে। উনাকে নাকি মানসিক ও শারীরিকভাবে খুব অ’ত্যা চা/র করা হতো। এত অ’ত্যা’চার সহ্য করতে না পেরে উনি বাধ্য হয়ে বাসা থেকে পালিয়ে গেছেন। উনি এখন এই বাসার দখল চান। স্বামীর অবর্তমানে মেয়েটাকে নিয়ে বেঁচে থাকা আশ্রয় চান। এই একটা সপ্তাহে এসব ঝামেলায় বাকি সদস্য অতিষ্ঠ। পরে, তিতাস রেগেই ওদের আরেকটা ফ্ল্যাটে বাকিদের নিয়ে উঠেছে। গোছগাছের কাজও শেষ। তিতাস জেদ করেই আরো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এজন্য ভোর ওর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রেখেছে। তিতাস ওদের রুমে এসে দেখে ভোর বেলকণিতে দাঁড়িয়ে আছে। সে বেলকণিতে গিয়ে খুব সন্তপর্ণে ভোরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,

-”আমার চাঁদের মুখখানা মলিন কেন, হুম?”
-”ছাড়, ভালো লাগছে না।”
-”শরীর খারাপ?”
-”না।”
-”মন খারাপ?”
-”না।”
-”তবে?”
-”ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নকে এভাবে নষ্ট করিস না তিতাস, প্লিজ
। জীবনটা ছেলেখেলা নয়। কেন করছিস পাগলামি বল না? আগামীকাল পরীক্ষা আছে যা পড়তে বস।'”

-”না, বলেছিই তো পরীক্ষা দিবো না। বাবার ব্যবসা দেখভাল করবো। ভয় পাচ্ছেন নাকি, আপনার ভরণপোষণ ঠিকঠাক ভাবে দিতে পারব না ভেবে?”

ভোর আর নিজের রাগ সামলাতে না পেরে তিতাসকে থাপ্পড় মেরে বসল। তারপর তিতাসের টি- শার্টের কলার ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসাল। এরপর বই এনে হাতে ধরিয়ে পড়তেও ইশারা করলো। কিন্তু তিতাস বই রেখে উঠতে গেলে ভোর পুনরায় তাকে আঁটকালো। নিজেকে সামলে তিতাসকে
সাধ্যমতো বোঝাল। কিন্তু তিতাস গোঁ ধরে পা বাড়াতেই ভোর তার পায়ের উপর উঠে তিতাসের নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে রাখল। তিতাস ছড়াতে চায়লেই সে দাঁত বসিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে ভোর নোনতা কিছুর স্বাদ পেলো।বোধহয় র/ক্ত বেরিয়ে গেছে। তবুও সেও রাগ নিয়ে সেভাবেই দাঁত বসিয়েই রাখল।
তিতাস আর না পেরে ভোরকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ঠোঁট চেপে ধরল। তখন ভোর ওর ঠোঁটে লেগে থাকা র/ক্ত মুছতে মুছতে বলল,

-”এবার বল, পরীক্ষা দিবি না?”
-”ভোর আমাকে রাগাবেন না বারবার কিন্তু ছাড় পাবেন না।”
-”কি করবি, ইন্টিমেন্ট হবি? তো আয় বাঁধা দিবো না আমি। তবুও তোকে পরীক্ষা দিতে হবে মানে দিতে হবেই।”

তিতাস ঠোঁটটা চেপে ধরে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। মুখে তার বিরক্তির ছড়াছড়ি। এসবের মানে হয়? তখন ভোর দুই পা এগিয়ে বিনাসংকোচে সরিয়ে ফেললো তার শাড়ির আঁচল।
তখন তিতাস ভোরের চোখে চোখ রেখে বলল,

-”যা করছেন ভেবে করুন। আমি কিন্তু আজ পিছ পা হবো না। কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিবো আমার পাওনা।”

To be continue………………!!

#গল্পগুচ্ছ_সমগ্র
#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৬

-”যা করছেন ভেবে করুন। আমি কিন্তু আজ পিছ পা হবো না। কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিবো আমার পাওনা।”

একথা বলে তিতাস ফিক করে হেসে দিলো। এতক্ষণ গম্ভীর ভাবটা ধরে রাখলেও সেটা আর অটুট রাখতে পারল না সে।
ভোরের মুখটা দেখে তার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। সিনিয়র বউটা আজ ভীষণ ক্ষে’ পে’ ছে। তাতে এই রুপে তাকে মন্দ লাগছে না বরং বউ বউ রুপ ফুটে উঠেছে। তবে পরীক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সে সত্যিই নিয়েছে। কারণ পিয়াসের মৃ/ত্যু/র পর সে না পেয়েছে একদন্ড শান্তি আর না একটু স্বস্তি। ঝামেলা পোহাতে পোহাতে সে অতিষ্ঠ। ওর মনে সর্বদা যুদ্ধ চলছে সুখ এবং স্বস্তির। রোজকার এসব ঝামেলায় আদৌও পড়াশোনা হয়? এটা কী ক্লাস ওয়ানের পড়া? তাছাড়া, নিজের কথায় ভাবার সময় নেই সেখানে পড়াশোনা কীভাবে হবে?কতদিন বা চলবে এভাবে? গতকাল তার কানে পৌঁছেছে ওর বাবা সবদিক থেকে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। উনার ব্যবসার অবস্থাও বেগতিক। এমন চলতে থাকে ওদের পথে বসতে হবে। সবটা স্বাভাবিক করলে হলে তাকেই হাল ধরতে হবে। যদিও এখন সে নিজেকে বড্ড বেশি পরিশ্রান্ত অনুভব করে। এসব থেকে মুক্তি পেতে তার প্রাণটা আয় চায় করে। গা ঢাকা দিতে ইচ্ছে করে, রোজকার ঝামেলা থেকে। কিন্তু পারে কই, দায়িত্বের বোঝা এখন তার কাঁধে। এই দায়িত্ব তাকে এক পাও সামনে এগোতে দেয় না। শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখে একই স্থানে।
এজন্য নিরুপায় হয়েই মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছে পরিস্থিতির নির্মম কড়াঘাত। ভেতরে ভেতরে হচ্ছে দ/গ্ধ। এসব ভেবে সে একদম নিশ্চুপ হয়ে গেল। ওকে হঠাৎ নিশ্চুপ দেখে ভোর ভ্রু
কুঁচকে তাকিয়ে রইল। তিতাসের মতি-গতি বোঝার আপ্রাণ
চেষ্টা চালাচ্ছে সে। কিন্তু ভোরের প্রয়াসে বিঘ্ন ঘটিয়ে তিতাস চটজলদি তার শাড়ির আঁচলটা তুলে কাতুকুতু দিতে লাগল।
অকস্মাৎ এহেন আক্রমণে ভোরও হতবাক। তাৎক্ষণিক খুব শক্তি প্রয়োগ করেও সে ব্যর্থ। ততক্ষণে তিতাস স্বজোরে এক ধাক্কা দিয়েছে বিছানায়। সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে উঠার আগেই
তিতাস পুনরায় তাকে কাতুকুতু দিতে থাকল। ভোর থামাতে চায়লেও পারল না। একপর্যায়ে কাতুকুতুর চোটে সেও হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগল বিছানার মধ্যেখানে। তাদের হাসির কলবরে মুখোরিত হলো বদ্ধ রুমের চারিপাশ। খানিকবাদেই তিতাস ভোরকে নিজের খুব কাছে টেনে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলল,

-”রাগের বশে আদরের তাল টানলাম না। হিতে বিপরীত হতে পারে তাই ছাড় দিলাম। ”

-”আসলেই কী তাই? নাকি অন্যকিছু?”

তিতাস জবাব না দিয়ে কেবল হাসল।ভোর জবাবের আশায় তার মুখ পানে চেয়ে আছে। আজকাল তিতাসকে তার বড্ড অচেনা মনে হয়। হয়তো পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে। সেও মানুষ। তার উপর আজকাল খুব বেশি চাপ যাচ্ছে এটা সেও বুঝে। কিন্তু পরিস্থিতির লাগাম যে তার হাতেও নেই। সেও যে নিরুপায়। ভোরের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিতাস মৃদু স্বরে ডাকল,

-”ভোর!”

-”হুম।”

-”আপনি আমার মানসিক প্রশান্তি হবেন?”
??গল্পগুচ্ছ সমগ্র???
-”না, আমি তোর সুখ হবো। তোর কষ্ট নিবারণের মুখ্য কারণ হবো। তোর ঠোঁটের হাসি হবো।পরিশেষে তোর রাজ্যের রাণী হবো।”

-”তবে আমি কাছে আসলে কেন অস্বস্তি ফুটে ওঠে আপনার
অঙ্গভঙ্গিতে?ওই চোখজোড়া কেন জানান দেয় অন্য কথা? আপনার দুই হাত কেন ব্যস্ত হয়ে পড়ে আমাকে ধাক্কা দিতে।
যেন দূরে সরার নীরব আহ্বাণ। আমি বয়সে ছোট বলেই কি এত অস্থিরতা, নাকি অন্যকিছু চাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা?”

-”ব্যাপারটা তা নয়। আসলে..!”

-”শাড়ির আঁচল ফেলে শরীরের প্রতি আকৃষ্ট করানো একটা
ভালো বউয়ের গুরু দায়িত্ব হতে পারে না। যদি মনে সামান্য ভালোবাসাও থাকে তাহলে ওই চোখ বলে দেয় অনেক কথা। আমি এতটাও বোকা নই ভোর, বুঝি অনেক কিছুই। এজন্য আপনাকে আরো সহজ হতে সময় দিচ্ছি। তারমানে এই না, আমি একজন দূর্বল পুরুষ।”

-”আসলে তুই কাছে আসলে আমার মনে হয় কেউ আমাদের দেখছে। আমার ষষ্ঠী ইন্দ্রীয় জানান দেয়, কোন পুরুষ মানুষ আমাকে তীক্ষ্ণ নজরে গিলে খাচ্ছে। আমার শরীরের প্রতিটা ভাঁজে কারো দৃষ্টি ঘুরছে। কেউ আমাদের একান্ত মুহূর্তটাকে
নজরবন্দি করছে। ঠিক এই কারণেই আমি চায়লেও সহজ হতে পারি না। অস্বস্তিতে ডুবে মরি, নিজের অজান্তে তোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলি।”

-”আপনার ধারণা সঠিক। আর সত্যি সত্যি আমাদের উপরে কেউ নজর রাখত। আমার রুমে আপনার প্রতিরক্ষার সকল ব্যবস্থা সেইই নষ্ট করেছিল। তবে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি আমার রুমে প্রবেশও করেছিল। অথচ এটা কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ অজ্ঞাত কেউ রুমে প্রবেশ করলেই সাইরেন বেজে উঠবে। এমনকি সঙ্গে সঙ্গেই আমার কাছে একটা পর একটা এলার্ট মেসেজ আসতেই থাকবে। আমি সেভাবেই আপনাকে
দূর থেকেও নিরাপত্তা দিতাম।কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে সেটাতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমি ঠিকও করেছিলাম। কিন্তু কেউ
সেটা পুনরায় নষ্ট করার ফন্দি এঁটেছিল।যদিও আমি এখনো জানতে পারি নি, সে কে? জেনে যাবো যথাশীঘ্রই। তবে হ্যাঁ, এই বাসায় এমন কিছু ঘটবে না নিশ্চিন্তে থাকুন।”

এসব শুনে ভোর আর একটা টু শব্দও করল না। শুধু চোখ বন্ধ করে ওর বালিশে মাথা রাখল। আজকাল তার বড্ড ইচ্ছে করে, আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই বরের কাছে আহ্লাদী আবদার করতে। কারণে অকারণে তিতাসকে প্রচন্ড জ্বালাতে, রাগিয়ে দিতে। ‘ভালোবাসি’ বলে জড়িয়ে ধরে তার
প্রশস্ত বুকে মাথা রাখতে। পুরুষালি শক্ত হাতের আঙুলে ওর আঙুল গুঁজে রাতের সোডিয়ামের নিয়ন আলোয় হাঁটতে।
নদীর পাড়ে বসে কাঁধে মাথা রেখে ঢেউয়ের নাচন উপভোগ করতে। বেলাশেষে তার ক্লান্ত মুখের ঘামার্ত কপালে স্বযত্নে
চুমু এঁকে দিতে। জোছনা বিলাস করতে করতে একই মগে দু’জন কফির স্বাদ নিতে। ঘুমানোর আগে চুলে বিলি কেটে দেওয়ার আবদার জুড়তে। এমনকি তিতাসের নিষিদ্ধ স্পর্শে বারংবার শিহরিত হতে। এসব চাওয়া তার অপূর্ণ রয়ে গেছে।
তিতাস বয়সে ছোট বলেই হয়তো এসব সংকোচ কাজ করে।
আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে। আচ্ছা তিতাসের
জায়গায় পিয়াস হলে কী এমন মনে হতো? বোধহয় না। সে হয়তো বুঝতো ওর গোপন কিছু আকাঙ্খার কথা। যেমনটা করেছিল বিয়ের দিন গাড়িতে বসে। যদিও এখন মাঝে মাঝে তার মন বলে এসব আবদারগুলো তিতাসের সামনে প্রকাশ করতে। তাকে আকার ইঙ্গিতে বোঝাতে।কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়, তিতাস যদি ভুল বোঝে। যদি মুখের উপরেই বলে বসে, “এসব আপনাকে মানায় না ভোর।। এসব ছেলেমানুষী এই
বয়সে বেমানান।” আচ্ছা তার চাহিদা কী খুব বেশি? ডাক্তার বলে কী সব শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিতে হবে? দুইবার বিয়ে হয়েছে বলে কি শখ পূরণ করতে পারবে না? বয়সে ছোট ছেলেকে বিয়ে করার অপরাধে কী সারাজীবন ভুগতে হবে?
কখনো কী পারবে না তিতাসের সঙ্গে সহজ হতে? ওর নারী সত্তা তো বাকিদের মতোই চায় স্বাভাবিক জীবন, সংসার।
এত অপূর্ণতা কী কখনো পূর্ণতার রুপ পাবে না? তিতাস কী কখনো তাকে বুঝবে না? সে মেয়ে, আগ বাড়িয়ে কীভাবেই বা বলবে, ”চল তিতাস আমরা প্রণয়ের বি/ষ পান করি। এই
প্রেমসুধা গ্রহন করে হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটায়। মরিয়ে হয়ে যায় একে অপরের প্রতি।”

একান্ত নিজের ভাবনায় বিভোর থাকতে থাকতে ভোর কখন ঘুমিয়ে গেছে। তিতাস পাশে নেই, ভোরকে ঘুমাতে দেখে উঠে চলে গেছে। রাত এখন বারোটা সাত। তিতাস আগের বাসায়
এসেছে তাও চুপিচুপি। ঘন আঁধারে ডুবে আছে চারিপাশ। বাসায় কারো অস্তিত্ব নেই, শূন্যতা বিরাজ করছে পুরো বাসা জুড়ে। তিতাস সময় নিয়ে নিজের পরিকল্পনা মাফিক কাজ সেরে বেরিয়ে এলো। মোড়ের দিকে তার গাড়ি দাঁড় করানো।
পাশেই গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছে রবিন। ছেলেটাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে এখানে এনেছে সে। কারণ তারা এখন যাবে শাহিনার অবস্থানরত বাসায়। রোজাকে সে তার কাছে এনে রাখবে নয়তো শাহিনা তাকে অযত্নেই মেরে ফেলবে। তিতাস আর রবিন সেখানে গিয়ে বাসার পেছনের দিকে যেয়ে প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। অতঃপর তারা যখন ভেতরে প্রবেশ করতে উদ্যত হয় তখন পরিচিত এক কন্ঠস্বর শুনে থমকে যায়। তারা দ্রুত নিজেদের বাঁচাতে থামের পেছনে লুকিয়ে যায়। আর থামের আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখে খুব পরিচিত এত বেইমানের চেহারা। তখন রবিন অতি সন্তর্পণে ফিসফিস করে বলে,

-”নিশান স্যার এখানে কেন? উনি না দেশের বাইরে ছিলেন?”

-”প্রাক্তন প্রেমিকার টানে ফিরে এসেছে।”

-”উনার প্রাক্তন প্রেমিকাটা আবার কে?”

-”আমার চাচী শাহিনা সুলতানা।”

To be continue……………!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here