প্রিয়_তুই,২৭,২৮

0
229

#প্রিয়_তুই,২৭,২৮
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৭

-”আমার চাচী শাহিনা সুলতানা।”

-”মানে? উনি নিশান স্যারের প্রাক্তন? এটা কীভাবে সম্ভব?”

-”অসম্ভবের কী হলো?”

-”আমার হিসাব মিলছে না স্যার।”

-”মিলানোর চেষ্টা করো মিলে যাবে। ”

-”নিশান স্যার দেশে কবে ফিরলেন? ভোর ম্যাম জানেন?”

-”ফিরেছে মাস দেড়েক হবে। না ভোর এখনো কিছু জানে না। কারণ নিশান এসে গা ঢাকা দিয়ে আছে।”

একথা শুনে রবিন হাঁপানি রোগীর মতো হাঁপাতে লাগল। সে এটাও ভাবছে, তিতাস তার সঙ্গে মজা করছে কী না। কিন্তু ওর মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে না সে মজা করছে। বরং চাপা ক্ষোপে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে নিশানের দিকে। এই দৃষ্টি মোটেও মঙ্গলজনক নয়। বরং এটা ধ্বংসের দ্বার-প্রান্তরে পোঁছানোর নীরব হুমকি। রবিন তিতাসের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো ড্রয়িংরুমের দিকে। সেদিকে তাকিয়েই সে
ভাবগ্রাহী, সে ভোরের সহকারী হয়ে আছে বছর দুয়েক হতে যাচ্ছে। ভোরের বাসায় প্রত্যেকটা সদস্যকে সে চিনে, জানে। কার ব্যবহার কেমন সুক্ষভাবে স্মরণেও রেখেছে। নিশানকে তার কখনোই খারাপ মনে হয় নি। বরং মিশান (ভোরের বড় ভাই) এর চেয়ে নিশানকে অনেক নম্রভদ্র বলে জানে। কারণ এই নম্রতা ওর চলনবলনে সুস্পষ্ট।নিরহংকারী নিশান বাসার সকলের স্নেহের পাত্রও বটে।মিশান ও নিশান দুই ভাই হলেও তাদের বনিবনা খুব একটা সুবিধার নয়। কেমন যেন লাগাম ছাড়া মনে হলেও বাকিদের সাথে ঠিকঠাক। এতদিনের এত পরিচিত কারো এমন রুপ দেখে রবিন হতবাক। তাই সে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
???গল্পগুচ্ছ সমগ্র????
-”স্যার বোধহয় আমাদের কোথাও বুঝতে ভুল হচ্ছে। আমার জানামতে, নিশান স্যার এমন ধরনের ছেলে নয়।”

-”আমি কি বলেছি নিশান খারাপ? ”

-”না।”

-”তবে?”

রবিনের এবার নিজেকেই পাগল পাগল লাগছে। তিতাসের কথার মর্ম বুঝতে সে অক্ষম। প্রাক্তন হলেই খারাপ হবে এর কোনো মানে নেই। বরং এটা অযৌক্তিক অবান্তর এক যুক্তি।
কারণ প্রাক্তন মানে একটি ব্য/থা। ক্ষেত্রবিশেষ এই ব্য/থাটা কারো ক্ষেত্রে গভীর তো কারো কাছে অতি নগন্য। কেউ বা এই ব্য/থাটা আজীবন বুকের অভ্যন্তরে পুষে রাখে তো কেউ
স্মরণেও আনতে চায় না। কারো প্রাক্তনের অভিজ্ঞতা সুমিষ্ট তো কারো ক্ষেত্রে জঘন্য। যদিও বেলাশেষে ব্যর্থ প্রেমের গল্প
রচিত হয় অহরহ। আর এ পৃথিবীর বুকে প্রণয়ের ছলে কেউ হাসি মুখে ঠকায় তো কেউ হাসিমুখে জেনে বুঝে মেনে নেয়। তবুও তিতাসের পাল্টা প্রশ্নে রবিন চিন্তিত। তার মস্তিষ্ক জুড়ে এখন একটা কথায় ঘুপরপাক খাচ্ছে, শাহিনার সঙ্গে নিশান সম্পর্কে জড়িয়ে কবে এবং কীভাবে?কী এমন ঘটল যে এক
বাচ্চার মা হয়েও প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে শাহিনা।
তবে মহিলা প্রচুর ধূর্ত নিশ্চয়ই অন্য কোনো কাহিনি লুকিয়ে আছে। তাছাড়া, শাহিনা অজপাড়াগাঁয়ের আর নিশান শহুরে
শিক্ষিত ছেলে।ওরা দু’জন দুই মেরুর পথিক তাহলে কীভাবে কী? এছাড়াও,নিশান তো অবগত এটা তার বোনের সংসার। কেনই বা সে যেচে বোনের সংসারে আ/গু/ন লাগাচ্ছে? এর ফলে ভোর কত কষ্ট পাবে সে কী ভাবছে না? নাকি ভোরকে কষ্ট দেওয়া তার মূল উদ্দেশ্যে। রবিন এসব ভাবনার ক/র্তন
ঘটিয়ে বিরক্তমাখা দৃষ্টিতে শাহিনাকে দেখল। অদূরের থাকা এক সোফায় সে কফির মগ হাতে বসে আছে। নিশান তাকে
কিছু বলছে আর সে বিরক্তমাখা মুখে তাকিয়ে আছে। তখন উপর থেকে রোজার ডাক শোনা গেল।শাহিনা তখন চেঁচিয়ে
বললেন,

-”আর একটা টু শব্দ করলে তোর ডাকাডাকি জন্মের মতো ঘুচিয়ে দিবো, বেয়া/দব একটা। এত মার খেয়েও লজ্জা হয় না ,ম/রে গিয়ে শান্তিও দেয় না। কতদিন বললাম বৈদ্যুতিক সুইচে চেপে তার মধ্যে আঙুল দিয়ে আমাকে চিরতরে মুক্তি দে। সবাই যেনো ভাবে দূঘর্টনা। কিন্তু না তা করবে কেন, সে তো বেঁচে থাকবে আমার হাঁড় মাংস জ্বালিয়ে খেতে। মন চায়
সারার মতো শ্বাসরোধ করে মা/রি।”

বাসায় কেউ নেই ভেবে শাহিনা তার মনের কথাগুলো বলেই যাচ্ছেন। নিশান নীরব শ্রোতা। রবিন আর তিতাস এসব শুনে হতবাক। তখন রোজা কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিলো,

-” আম্মু আমি ওয়াশরুমে যাবো। প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো।”

-”পারব না, তুই একা একা যা।”

-”আর ডাকব না আমি এবারই শেষ। বিছানা থেকে নামতে পারছি না আমি, আমার হুইলচেয়ার দূরে রাখা। তুমি এসো আম্মু, প্রমিস আজ রাতে খাইয়ে দিতে বলব না।”

একথা শুনে শাহিনা রাগে গজগজ করে রোজার কাছে চলে গেলেন। তারপর দু’ ঘা বসিয়ে দিলেন রোজার পিঠে। রোজা ছটফটিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে দিলো। কারণ শব্দ করলেও আম্মু আবার মারবে। সেদিনের মতো করে জোরপূর্বক মুখে ওড়না ঢুকিয়ে চিৎকার করে কান্না করার শা/স্তি দিবে। তারপর এক হ্যাঁচকা টানে রোজাকে উঠিয়ে শাহিনা ওকে ধরে ওয়াশরুমে রেখে আসল। অতঃপর হুইলচেয়ারটাও সেখানে রেখে উনি
হনহন করে বেরিয়ে গেলেন। এখন বাকি কাজ রোজা একা একা সামলে নিতে পারবে, তার অভ্যাস আছে। ড্রয়িংরুমে এখন শুনসান নীরাবতা। নিশান কিছুক্ষণ আগে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে আর শাহিনা তার রুমে। এই সুযোগেই তিতাস রবিনকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে পনেরো মিনিটের মধ্যেই রোজাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। তিতাসের বুকের সঙ্গে লেপ্টে আছে ছোট্ট রোজা। তার গলা জড়িয়ে ধরে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে তিতাসের মুখপানে। তিতাস আর কালবিলম্ব না করে গাড়ি নিয়ে ওদের ফ্ল্যাটে চলে এলো। তিতাসের মা- বাবা রোজাকে দেখে বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন। রোজা উনাদের দেখে কেঁদে ওর আম্মুর নামে বেশ কয়েকটা অভিযোগ করল। একে একে বলেও দিলো শাহিনা ওর সঙ্গে কী কী করেছে, কতবার মেরে/ছে। পিয়াস, তিতাস আর সারাকে দেখে ছোট্ট রোজাও তিতাসের বাবাকে ‘ বাবা’ ডাকে আর মাকে বড় মা। উনারাও খুব ভালোবাসেন বাঁচাল রোজাকে। তোতাপাখির মতো বকবক করে বাসাটা মাতিয়ে রাখা ছোট্ট পাখিটাকে। পিয়াসও নেই, সারাও নেই, বর্তমানে
তিতাস আর রোজায় হচ্ছে উনাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।
এই বাসায় জ্বলতে থাকা জ্বলন্ত প্রদীপ। উনাদের চাওয়া এই প্রদীপ দুটো যেন চিরকাল এই বাসা আলোকিত করে রাখে।
রোজা বাবা ও বড় মাকে পেয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছে। তিতাসের মা রোজার পিঠে মলম লাগিয়ে দিচ্ছেন। পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে মেয়েটার ফর্সা পিঠে।শাহিনা ওর ব্যবহারে বুঝিয়ে দিচ্ছে, সে মা নামের কলঙ্ক। নয়তো এমন ফুলের গায়ে কেউ এভাবে হাত তুলে, কষ্ট দেয়। তখন তিতাস রোজাকে রেখেই রবিনকে সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিল। এখন খাবারের প্লেট হাতে
বাবা- মায়ের রুমে প্রবেশ করল। তারপর রোজার পাশে বসে
ইয়া বড় হা করে বলল,

-”আম্মু খবরদার বলছি ওই টেপিকে একটুও দিবা না। এখন চটজলদি আমাকে খাইয়ে দাও। আহা, স্পেশাল বিরিয়ানি।”

-”আমাকেও একটু দাও ছোট মিয়া।”

-” তোর মাকে গিয়ে বল কিনে দিতে, এখন যা ভাগ।”

-”আম্মু কিনে দিবে না বরং বললেই মারবে।”

-”একটা শর্তে দিবো যদি তুই রাজি থাকিস।”

-”কি শর্ত?”

-”তুই এখন থেকে আমাদের সঙ্গে থাকবি, ভুলে তোর আম্মুর কাছে যাওয়ার আবদার করতে পারবি না, রাজি?”

-”আচ্ছা, এমনিতেই আম্মু আমাকে ভালোবাসে না। বারবার মরে যেতে বলে। আমি না থাকলেই নাকি আম্মু খুব ভালো থাকবে।”

-”যদি এই শর্তের নড়চড় করিস তোকে সিলিংয়ের সঙ্গে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখব, মনে রাখিস।”

-”আচ্ছা।”

তিতাসের আম্মু হেসে প্রথম লোকমা রোজার মুখেই দিলেন।
তা দেখে তিতাস মুখ ভেংচি দিয়ে পরের লোকমা মুখে পুরে ওর আম্মুকে বলল,

-”আম্মু বাকিটুকু তোমার স্বামী আর রোজাকে খাইয়ে দাও।
ভদ্রলোক যেভাবে তাকিয়ে আছে পেট খারাপ হবে নিশ্চিত।
আর আমি আমার বউয়ের কাছে গেলাম। তোমাদের এসব ঝামেলায় বউটাকেও সময় দিতে পারি না, কবে যে আমাকে ছেড়ে চলে যায়, কে জানে।”

তিতাসের বাবা জবাবে কিছু বলতে গেলে তিতাস হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে হাঁটা ধরল। আর ওর মা সত্যি সত্যিই ওর বাবার মুখে খাবার পুরে রোজার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসিতে ফেটে পড়লেন। একপর্যায়ে মুখে খাবার নিয়ে ওর বাবা হেসে ফেললেন। কারণ তিতাস যাওয়ার আগে উনাকে ইশারায় বলে গেছে” খুশি তো? এবার হাসো।” তার এহেন কান্ডে উনি সত্যিই না হেসে পারলেন না। ততক্ষণে তিতাস শিষ বাজিয়ে রুমে ঢুকে দেখে ভোর আধশোয়া হয়ে বসে বই পড়ছে। ঘুরে বসার কারণে তিতাসকে দেখতে পায় নি। তিতাস নিঃশব্দে পা টিপে ভোরকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে গিয়ে বলল,

-“ম্যাও।”
-”ঢং করা হয়ে গেলে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়।”
-”না ঘুমিয়ে জেগে কেন শুনি?”
-”আগামীকাল থেকে হসপিটালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন ছাড় আমায় উঠব।”
-”উহুম না, ছুটিতে আছেন তাহলে হসপিটালে কেন?”
-”ছুটি ক্যান্সেল করেছি।”
-”কেন?”
-”সেই কৈফিয়ত তোকে দিবো না। আর তোর ঢং আমার সহ্য হচ্ছে না, ছাড় বলছি, ছাড়!”
-”আশ্চর্য, আমি আবার কি করলাম?”
-”আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গিস না, আমার থেকে দূর সর। ঘৃনা হচ্ছে তোকে দেখে। তোর ছোঁয়া আমার শরীরে কাঁটার মতো বিঁধছে। যার শরীরের টানে বার বার ছুটে যাস সেখানেই যা।”

একথা শুনে তিতাসের শক্ত বাঁধন আপনাআপনিই ঢিলে হয়ে গেল। সে বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ভোরের দিকে। এসব বলার কারণ তিতাসের বোধগম্য হচ্ছে না। তাই সে জিজ্ঞাসা করতে উদ্যত হলেই ভোর তাকে ঠেলে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। আর তিতাস সেভাবেই শুয়েই হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

To be continue………………..!!

#গল্পগুচ্ছ_সমগ্র
#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৮

তিতাস সেভাবে শুয়েই হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এসবের মানে হয়? মেয়েদের এই এক সমস্যা কোথায় কী শুনে এসে যাচাই বাছাই না করে রিমান্ড শুরু করবে। রিমান্ডে নিতে তো বাঁধা নেই। অ’ ন্যা/য় করলে রিমান্ড নয় ফাঁ/সি দিলেও মঞ্চুর করা যাবে। কিন্তু অপরাধী জানেই না তার কী অপরাধ? সে আসলে করেছেটা কি? বলা নেই কওয়া নেই হুট করে তাকে ফাঁ/সি/র মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। না বলার সুযোগ দিচ্ছে; আর না ভোর নিজে বোঝার করছে।এ আবার কেমন ধারার বিচার? বিচার শব্দটা ব্যবহার করাও তার ভুল হচ্ছে। কারণ ভোর তার বিচার করছে না বরং ”ডাইরেক্ট একশান” নিচ্ছে।
যাচাই-বাছাই না করে অপরাধী বানিয়ে কঠিন শা/স্তি জারি করেছে। আর ভোরের আচানক এহেন আচরণ সে মানতেও
পারছে না। তাছাড়া সে কী কী যেন বললো, “ওর ঘৃণা হচ্ছে, তার ছোঁয়া ওর শরীরে কাঁটার মতো বিঁধছে। আর সে রোজ যার শরীরের টানে ছুটে যায়, সেখানে যেতে।”
এসব অবান্তর কথা বলার মানে হয়! মেয়েটা নিশ্চিত পাগল হয়ে গেছে। সব পাগল তার কপালেই কেন জুটে, কে জানে।
কিন্তু কথা হচ্ছে, সে কারো শরীরের টানে ছুটে যায় একথাটা ভোরকে জানাল কে? কে বুঝিয়ে এসব কথা? হুম, তারমানে
এখানে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির হাত আছে। সেই ধূর্ততার সঙ্গে কলকাঠি নেড়েছে। না, তার এই জীবনে স্বস্তি পাওয়ার আর হবে না।একটার পর অন্য ঝামেলার আর্বিভাব হতেই আছে। মুখ্য কথা, সিনিয়র বউটাও যদি অবুজের মতো করে তাহলে কীভাবে হবে। তার তো একটু বোঝা উচিত। এসব ভেবে সে শার্টের বোতাম খুলে একদিকে ছুঁড়ে মারল। ঘার্মে ভেজা শার্ট মেঝেতে লুটোপুটি খেতে লাগল।তারপর সে দুই হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে ভোরের অপেক্ষা করতে লাগল।প্রায় মিনিট দশেক পরে ভোর চোখ মুখ লাল করে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। ভীষণ কেঁদেছে চেহারাতে তা স্পষ্ট। তিতাস চটজলদি উঠে তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে বলল,

-“নুডলস খাবেন, রান্না করে দেই?”

ভোর জবাব না দিয়ে পাশ কাটিয়ে তোয়ালে না নিয়ে আঁচলে মুখ মুছল। ভাবখানা এমন যেন তিতাসকে দেখতেই পায় নি।
তিতাস পুনরায় ওর পথ আঁটকে জোরপূর্বক হেসে বলল,

-”আমি কি করেছি? কেউ কিছু বলেছে? বলুন আমাকে, না বললে বুঝবো কীভাবে?”

ভোর ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে দেখে রাত তিনটা বাজে।
সে অহেতুক তর্কে না জড়িয়ে ওপর পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। ওর নীরবতা তিতাসের সহ্য হলো না। সে ফ্রেশ না হয়েই তার সিনিয়র বউয়ের রাগ ভাঙাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ভোর জবাব দিচ্ছে না দেখে আরো উতলা হয়ে উঠল। বসে থেকেই গলার স্বরে মধু ঢেলে কয়েকবার ডাকল,

-”ভোর শুনছেন? এই সিনিয়র বউ এদিকে তাকান না প্লিজ।”

ভোর নেত্রজোড়া বন্ধ করে অনড় হয়ে শুয়ে আছে। যেন তার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। অথচ সে জেগে থেকে ঘুমের ভান করছে। তার মুখ থমথমে। ভাবভঙ্গি প্রকাশে অনিচ্ছুক। তার চোখের কোণে অশ্রুফোটাঁ চিহ্ন রেখে নিমিষেই বালিশের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। শব্দহীন সেই কান্না। ওকে কাঁদতে দেখে তিতাস উঠে ভোরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদুরে কন্ঠে বলল,

-”সিনিয়র বউদের এত রাগতে নেয় জুনিয়র বর’রা এতে কষ্ট পায়। তাদের বুকের মধ্যে যন্ত্রণা হয়, নিঃশ্বাস আঁটকে আসে। জুনিয়র বররা তাদের বউকে খুব ভালোবাসে, সন্মান করে। অন্যের শরীরের প্রতি তাদের টান নেই। তারা দু’মুখো হতেও পারে না। কারণ তাদের মস্তিষ্কে সর্বদা গেঁথে থাকে বউ নামক ভাইরাসের কথা। যে ভাইরাস তাদের দেহ ও মনে বিশাল স্তর জুড়ে জায়গা দখল করে আছে। আর নানান ঝামেলায় ওরা সময় দিতে না পারলেও বউকে তারা হেলা করে না, তুচ্ছ’ও ভাবে না। প্লিজ এভাবে কাঁদবেন না,আমাকের মারুন, বকুন, যা ইচ্ছে করুণ তাও কান্না বন্ধ করুন প্লিজ।”

-” ঘুমা নয়তো পাশের রুমে চলে যাবো।”

-”বউ কাঁদলে ঘুম আসে?”

একথা বলে সে ভোরকে আরো শক্ত করে বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো। ঘাড়ে মুখ ঘষে চুমু একেঁ দিলো পরপর।তার এক হাত বিচরণ করছে ভোরের পেটে। আজকে তিতাস তার অজান্তে ভোরের একটু বেশিই কাছে চলে এসেছে। হয়তো ঘনিষ্ঠ হতে চাচ্ছে, নিষিদ্ধ কোনো চাওয়াতে। তার রাগান্বিত বউয়ের রাগ
মোচন করতে চাচ্ছে, আদরের তাল টেনে।ভেসে যেতে চাচ্ছে
অচিন এক সুখরাজ্যে। তিতাস যখন ধীরে ধীরে তার বাসনা পূরণের পথে অগ্রসর হচ্ছিল ঠিক তখনই ভোর পায়ের নখ বিঁধে দিলো তিতাসের পায়ের পাতায়। একই সঙ্গে স্বজোরে এক ধাক্কা দিলো তিতাসের প্রশস্ত বুকে।তিতাস ব্যথাতুর শব্দ করে উঠে বসল। তাৎক্ষণিক ঘোর কেটে সে ভোরের দিকেই তাকিয়ে আছে। ভোর পূর্বের মতোই পাশ ফিরে শুয়ে আছে।
তখন তিতাস রাগ না করে মনে মনে বলল,
??গল্পগুচ্ছ সমগ্র????
-”তুই আমার একমাত্র বউ, কোথায় আমাকে জড়িয়ে ধরবি, ভালোবাসবি। এমন রোমাঞ্চকর প্রহরে আমাকে সঙ্গী করে রোমান্টিকতার সাগরে ভেসে বেড়াবি। আদরে আদরে উন্মাদ করে তুলবি আমায়। তা না করে তুই কেন রাগ করবি, খামচি দিবি, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবি?”

এসব ভেবে তিতাস মুখটা করুণ করে বসে রইল।কয়েকবার
জিজ্ঞাসা করলেও ভোর টু শব্দ করল না। এভাবেই কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর, ভোর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে উঠল,

-”বাইরে থেকে শূন্য হাতে ফিরেছিস বোধহয় তাই না?এতদিন তো ভুলেই বসেছিল তোর বউ আছে?আজ হঠাৎ এত কাছে
টানছিস, ওহ হো শরীরে টান পড়েছে বুঝি?”

ভোরের কথা শুনে তিতাস নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইল। এমন খোঁচা মারা কথা সে সহ্য করতে পারে না। রাগে গা নিশপিশ করে। এখন ভোরের স্থানে অন্য কেউ হলে এতক্ষণে থাপ্পড় বসিয়ে দিতো। শুধু ভোরের উপর রাগ দেখাতে পারে না বলে নিজেকে সামলে সুন্দরভাবে জিজ্ঞাসা করল,

-”আপনার সমস্যা কী বলবেন আমায়?”

-”আমার কোনো সমস্যা নেই তো।”

-”তাহলে কাছে গেলে দূরে সরান দূরে গেলে কাছে টানেন, কেন? আমাকে মানুষ মনে হয় না? আমার অনুভূতির মূল্য নেই, এত তুচ্ছ আমি?

-”তোর জীবনে প্রেমিকা আর প্রেম কোনোটার অভাব আছে নাকি? তা কতজনের উপর অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছিস?”

-”তা ঘটাব কেন? তাছাড়া এই যুগে প্রেম করে না কে দেখান আমায়? সেই হিসেবে আমিও করেছি বিয়ের আগে। প্রেমের ছলে ইন্টিমেন্ট হয়ে কাউকে অবৈধভাবে প্রেগনেন্ট তো আর করি নি। আপনি নাহয় বিশ্বের সবচেয়ে নম্রভদ্র এবং পড়াকু এক মেয়ে। বরের জন্য জীবনের সবটুকু প্রীতি সৌহার্দ্য তুলে রেখেছেন। অথচ বর কাছে গেলে উশখুশানি আরম্ভ করেন।
যত রকমের রং ঢং আছে নিজের মধ্যে জাহির করেন। সেই
আপনিই আবার সুন্দরভাবে আমার দিকে আঙুল তুলে এক মনগড়া গল্প সাজিয়ে দোষী সাবস্তও করলেন। বিনাঅপরাধে
কথা দিয়ে আমাকে হিট করছেন, দূর্বল পয়েন্ট আঘাত করে মজা নিচ্ছেন। যত অপরাধই করি না কেন আপনি জিজ্ঞাসা করলে আমি সত্যিটাই বলি, ভবিষ্যতেও বলবো। আজকেও এর ব্যতিক্রম হতো না। তবে না জেনে দোষ দিয়ে অকারণেই আমাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তিটা আপনাকে পেতেই হবে ভোর, পেতেই হবে। যে কারণে আমাকে এভাবে ধাক্কা দিলেন আমি ঠিক সেই কাজেরই পূর্ণতা চাই, আর সেটা এই মুহূর্তে।”

-”আম আমার কথা শোন।”

-”উহুম না, আর কত? এবার যে দূরত্ব কাটানোর সময় এসে গেছে। রাগ বা জেদের বশে প্রাপ্য অধিকার চাচ্ছি না আমি। স্বজ্ঞানে স্বেচ্ছায় আমি আপনাকে কাছে পেতে চাচ্ছি ভোর, খুব কাছে। প্লিজ আমার আর ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিবেন না।”

একথা বলে তিতাস ভোরকে নিজের খুব কাছে টেনে নিলো।
আর ভোর হতভম্ব হয়ে নত মস্তকে বসে রইল। ততক্ষণে তার
ওষ্ঠে তিতাসের ওষ্ঠজোড়া রাজত্ব শুরু করছে। ভোর ভুলেও আজ বাঁধা সৃষ্টি করল না। বরং বিনাবিঘ্নে মেনে নিলো তার জুনিয়র বরের আবদার। অতঃপর তিতাসের স্পর্শে শিহরণ বয়ে আনল তার সর্বাঙ্গে। তারপর….তারপর…..তারপর…!
_____________________

পরেরদিন সকালে কানের কাছে তিতাসের ফোনটা ভাইব্রেট হতে লাগল। ফোন দেখে তিতাসের স্মরণে আসল, সে রাতে ফোনটা বাসায় ফেলে গিয়েছিল। তিতাস পাশ ফিরে ভোরের বন্ধ চোখজোড়ায় চুমু এঁকে, মিটিমিটি হাসল। বেশ আদুরে লাগছে ভোরকে দেখতে। ওর আদরে আদরে আদুরে ভাবটা ফুটে উঠেছে। এসব ভেবে হেসে সে ফোন হাতে নিয়ে বিরক্তই হলো। ফোনের স্ক্রিন জুড়ে জ্বলজ্বল করছে তার এক্স গফের (রুম্পার) নাম। ততক্ষণে কল কেটে যাওয়াতে তার এটাতেও
দৃষ্টি গেল, গতরাতে এই নাম্বারেই কথা হয়েছে তিন মিনিটের মতো। অথচ ফোন তার কাছেই ছিলো না। তিতাসের বুঝতে আর বাকি রইল না প্যাঁচ ঠিক কোথায় বেঁধেছে। সে ভোরের উপরে তার শরীরের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে স্পিকার দিয়ে কলটা রিসিভ করল। হঠাৎ নিজের উপরে ভারি কিছু অনুভব করে
ভোরের ঘুমটা ভেঙে গেল। কিছু বলতে গেলে তিতাস ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে চুপ থাকার ইশারা করে একটা চুমুও খেলো।তখন শোনা গেল রুম্পার ন্যাকামিযুক্ত কন্ঠস্বর,

-” তিতাস, আমার জানপাখিটা কি করছো তুমি?”

-” এভারেস্টের চূড়ায় উঠে তোমার কথায় ভাবছিলাম সোনা পাখিটা।”

-” ওয়াও সো কিউট। রাতে কল রিসিভ করে কথা বলছিলে না কেন বাবু? আমি ভেবেছিলাম আমার কথা ভুলে গেছো। এজন্য আমাদের প্রথম মিট থেকে শুরু করে লং ড্রাইভের ঘটনা বলে মনে করাচ্ছিলাম। ওমা পরে দেখি সব না শুনেই কল কেটে দিয়েছো। জানো আমি ভয় পেয়েছিলাম, তোমার কিছু হলো ভেবে।”

-”তখন আমি না আমার দুষ্টু বউ টা কল রিসিভ করেছিলো। যাইহোক, আমাকে কল দিও না আমার বউ পছন্দ করে না। সে আবার মারাত্মক রাগী, পরে গালি টালি দিলেও আমার কিছু করার থাকবে না তাই সাবধান। এখন বাইই।”

কল কেটে তিতাস ভোরকে বলল এই মেয়েটা ওর এক্স গফ। বড় লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া ললনা। এদের পাখি ধরতে যেমন সময় লাগে না তেমনি ছাড়তেও।তার সঙ্গে ওর গভীর সম্পর্ক ছিলো না, আর না এখন আছে। শুধু সে কেনো, তার ছাব্বিশটা গফের কারো সঙ্গেই তার গভীর সম্পর্ক ছিল না। এরা শুধু টাইম পাসের মাধ্যম। তবে বর্তমানে ভোর এবং ওর মা ছাড়া সে কোনো মেয়েকে ওর জীবনে ঠাঁই দেয় নি, আর দিবেও না। কারণ এরাই তার মুখে হাসি, বাঁচার অবলম্বন।

To be continue………!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here