প্রিয়কাহন❤️,পর্ব : ৪,৫

0
775

#প্রিয়কাহন❤️,পর্ব : ৪,৫
#লেখিকা ‘কায়ানাত আফরিন’

বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর ভাব আজ। শত সহস্র পান্জাবি পরিহিতা মানব মানবীদের আনাগোনা চলছে এখানে। প্রিয়তা আর অদ্রি দাঁড়িয়ে আছে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস ভবনের সামনে। আজ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ উৎসব। যদিও ওরা নবীন না কিন্তু তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে দায়িত্বের কোনো হেলফেল করেনি। প্রিয়তা মোবাইলে ঘড়ির দিকে তাকালো। পরখ করে নিলো সময়। রুদ্রের কোনো খবর নেই। ছেলেটা সেই যে মোড়ের দোকানে চা খেতে গিয়েছে আর আসছে না। অদ্রিও বিরক্ত হলো। মনে মনে ধাতস্থ করার ব্যর্থ চেষ্টা চালালো খামোখা। অতএব বিদীর্ণ কন্ঠে ছুড়লো,

‘ আই এম শিউর, হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিউর কুত্তাটায় কোনো মাইয়া পটাইতে সময় নষ্ট করতাসে। এই ছেলেদের জাতটাই ছুঁক ছুকাইন্না জাত। জীবনেও নারীসঙ্গ ছাড়া এদের চলবো না। আমার ভাই তো কি হইসে? আমি জানি ওই হারামজাদাটায় কতবড় ক্যারেক্টারলেস হইতে পারে।’

প্রিয়তা অপ্রতিভ হলো। বললো,

‘ আহা! সকাল সকাল খামোখা নিজের মুখ খারাপ করিস না তো!’

প্রিয়তার মনে হলোনা অদ্রি ওর কথা শুনেছে। বরাবরের মতোই মেয়েটা নিজের জমজ ভাই টাকে ভয়াবহ গালাগাল দিয়ে চললো। প্রিয়তার মাঝে মধ্যে মনে হয়, এদের দুজনকে এক ঘরে পাঠিয়ে বিধাতা বড় আব্বু আর বড় আম্মুর প্রতি চরম জুলুম করেছে। ডাক পড়ছে অডিটোরিয়ামে। এক ছেলে দ্রুত গতিতে সবাইকে বলছে কাঙ্খিত স্থানে যেতে।

প্রিয়তা আর অদ্রি তাই রুদ্রকে রেখেই পা চালালো অডিটোরিয়ামের দিকে।

অডিটোরিয়ামের এদিকে হাজারো মানুষ। সবারই একই রঙের ড্রেস কোড। প্রিয়তা সেই কোড অনুযায়ী পড়েছে সবুজ শিফনের শাড়ি। সেই সাথে অদ্রিও। ওদের গোটা কয়েক বন্ধুবান্ধব এসে পড়লো ওদের কাছে। প্রশংসার পঞ্চবাক্য ছুড়লো। প্রিয়তার সেদিকে ধ্যান না থাকলেও অদ্রির যেন খুশির শেষ নেই। কোনো সুন্দর মানব কমপ্লিমেন্ট দিলে সেও সমান তালে রসাবাক্য ছুড়ে মারলো। এসবের কিছুতেই খেয়াল নেই প্রিয়তার। সে তো মগ্ন ‘অভী’ নামক মানুষটা থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাবে সেটা নিয়ে। সায়রা বানু সকালে পইপই করে বুঝিয়ে দিয়েছে অভীর সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা। কি করবে, কিভাবে কথা বলবে সেগুলো সম্পর্কে দিয়েছে বস্তা বস্তা উপদেশ। প্রিয়তা বুঝে উঠতে পারলো না যে এই ছেলের মধ্যে কি দেখেছে সবাই। কেমন একটা গম্ভীর, নিরামিষ, পাষাণ টাইপ ছেলে। তুখড় মেধাবী ছাড়া আর কোনো গুণই নেই তার মধ্যে। তারপরও এত চড়া আকর্ষণীয়তা?

অজস্র ভাবনার টান পোড়নের ইতি টানা হলো হঠাৎ কারও ওপর চোখ পড়াতে। দেখা মাত্রই বিস্ময়ে অবিভূত হয়ে রইলো। অভী দাঁড়িয়ে আছে। তার সাথেই রয়েছে তার তথাকথিত বন্ধুবান্ধবগুলো। নীল পান্জাবী পড়েছে সে। স্লিভ গোটানো। যার লাইট টোনের স্কিন খানিকটা দৃশ্যমান। ছেলেটার মধ্যে তুমুল ব্যস্ততা। জুনিয়র কয়েকজন ছাত্রছাত্রীদের উপদেশ দিচ্ছে কিভাবে কি করতে হবে। সম্ভবত ব্যাকস্টেজের দায়িত্ব নিয়েছে অভী। প্রিয়তা বিমূঢ় হয়ে রইলো। ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে রইলো অভীর দিকে। মানুষটাকে অনতিপূর্বে এতটা গভীরভাবে দেখেনি প্রিয়তা। বুকের ঢিপঢিপ শব্দ বেড়ে গেলো। জানান দিলো নবঅনুভূতির পূর্বাভাস।

হঠাৎই কানের কাছে অদ্রি সম্মোহনী কন্ঠে বললো,

‘ অভী ভাইয়াকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে জানু?’

প্রিয়তার চোখ বিস্ফোরিত হলো। পরীক্ষার হলে পরীক্ষকের কাছে ধরা পড়লে যেমন অবস্থা হয় অমনই এক ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হলো। অদ্রির লালচে ঠোঁটে বিশ্বজয়ের হাসি। চোখে ভয়াবহ ক্রুরতা। প্রিয়তা দৃষ্টি সরালো। দ্বিধাগ্রস্ত কন্ঠে ফোড়ন কেটে বললো,

‘ তোর মতো অশ্লীল না আমি বুঝছিস যে অল্পতেই যাকে তাকে খেতে ইচ্ছে করে। তোরা দুই ভাই বোন হচ্ছিস ফটকার ফটকা। আমার তো মাঝে মাঝে সত্যিই সন্দেহ হয় বড় আব্বু আম্মুর ঘরে কিভাবে তোদের মতো ভয়াবহ পোলাপানগুলা জন্ম দিলো। ‘

অদ্রি প্রিয়তার খোটা মারা কথায় পরোয়া করলো না। বলে উঠলো,

‘ শোন ছেলেদের রূপের পাই টু পাই বর্ণণা দেওয়াও একটা আর্ট বুঝলি? এইযে অভী ভাইয়ার বন্ধু অন্তু ভাইয়াকে দেখ। পোলায় সবদিকে ভালো। স্টুডেন্ট ভালো, স্পোর্টস এ এক্সপার্ট, হাসিখুশি, মিশুক ছেলে। অভী ভাইয়ার মতো খাটাস না যে সারাদিন শুধু গম্ভীর নিরামিষ হয়ে থাকে। নাইলে তুই ভাব, এই তিন বছরে অগণিত ছেলের সাথে ফ্লার্ট করেছি, অভী ভাইয়াকে করিনি এর কারন ব্যাটায় ইগোর বস্তা নিয়ে ঘুরে। আর অদ্রির কাছে তারাই চান্স পায় যারা ইগো গঙ্গায় ছুঁড়ে মারতে পারবে।’

প্রিয়তা আর চেষ্টা করলো না অদ্রির সাথে ব্যার্থ কথা চালানোর। বিরক্তি নিয়ে অন্যত্র তাকাতেই যাবে হঠাৎই অভীর চোখে দৃষ্টি পড়লো। অভী তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখের কঠিন দৃষ্টি। প্রিয়তার বুক ভারী হয়ে গেলো। চট করে বুঝতে পারলো না অভীর এমন ভঙ্গি। দৃষ্টি এড়ানোর চেষ্টা করলো। তবে একটু পর তাকিয়ে দেখলো অভী আগের মতোই আছে।

প্রিয়তা অস্বস্তি নিয়ে বললো,

‘ অ..অদি?’

‘ হুম বল?’

‘ এখান থেকে বাইর হই এখন বোন? রুদ্র কোথায় ওকেও তো খোঁজতে হবে?’

প্রিয়তা কাঁপছে। গলার স্বর শুকিয়ে যাচ্ছে। বুদ্ধিমতি অদ্রির চোখে এড়ালো না সেটা। সন্দিহান কন্ঠে প্রশ্ন করলো,

‘ হঠাৎ কি হলো তোর?’

‘ আর এক সেকেন্ড এখানে থাকলে দম বন্ধ অবস্থায় মরে যাবো অদি। প্লিজ চল!’

অগত্যাই দুজনে বের হলো অডিটোরিয়াম থেকে। দু’তিন মিনিট হাটার পরই এক কোণে অবশেষে দেখা পেলো রুদ্রর। অদ্রি ঠিকই বলেছিলো। রুদ্র একটি মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মেয়েটাকে দেখে স্পষ্ট প্রতীয়মান যে সে ইউনিভার্সিটির ফ্রেশার৷ রুদ্র কিছু বলছে আর একটু পর পর রমনীটি লজ্জায় লাল, নীল, বেগুনি হয়ে যাচ্ছে। ওরা আরেকটু এগোতেই শুনতে পারলো রমনীটির উদ্দেশ্যে রুদ্রের বলা কথাটি,

‘ তোমার হাসিটি মুক্তার মতো সুন্দর বেলীফুল!’

অদ্রি বিভৎস ভাবে উপহাস করলো রুদ্রের মাত্রাতিরিক্ত ছেলেমানুষি কথাবার্তার জন্য। ভেংচি কেটে বলে উঠলো,

‘ উহ! ফ্লার্টিং এর তো একটা লিমিট আছে বইন। ডাইনির মতে হাসি আর কুত্তাটায় কয় মাইয়ার হাসি নাকি মুক্তার মতো। ‘

অদ্রি এগোলো। ডাক দিয়ে বললো,

‘ রুদ্র?’

রুদ্র বিদায় নিয়ে এলো মেয়েটার কাছ থেকে। আসার আগে কন্ট্যাক্ট নাম্বার নিয়ে নিলো। দাঁত কেলিয়ে বললো,

‘ তোর এই ভাইয়ের বড্ড বেশি ডিমান্ড বুঝলি? মেয়েটার সাথে একটু হেসে খেলে কথা বলেছি বলে সুরসুর করে গলে গেলো। আমি তো আবার মহা দয়ালু। কোনো মেয়েকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে পারিনা। তাই অদি আমার পকেটে থাকা তোর নতুন লিপস্টিকটা দিয়ে দিলাম কেমন?’

তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো অদ্রি। বলে উঠলো,

‘ শালা কুত্তা, হারামজাদা, তুই তোর আন্ডারওয়্যার খুইলা দে আমি কিছু কইতাম না। আমার লিপস্টিক দিলি কোন সাহসে?’

রুদ্র ঠান্ডা মাথার বুদ্ধিমান ছেলে। অল্পতেই আগুনে ধেই ধই করা অদ্রিকে সামলে নিলো। তারপর তিনজনে বসে পড়লো সামনে থাকা বিশাল লনে। আকাশ ফকফকা পরিষ্কার। সেখানে উড়ে চলছে সাদা পাখি। প্রিয়তা ভয়ে আছে। বুঝার চেষ্টা করছে অভীর তখনকার সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।

‘ কি ভাবছিস প্রিয়তা?’

রুদ্রের কথায় প্রিয়তা বলে উঠলো,

‘ আমারে বাঁচা ভাই। জলদি টিপস দে কিভাবে অভী ভাইয়া আমারে রিজেক্ট করতে পারে। উনারে বিয়ে করলে স্যার টিচারের মতো জীবন স্ট্যান্ড আপ এন্ড সিট ডাউনের মতো হয়ে যাবে রে। ‘

দুজনে ভাবলো। গভীরভাবে ভাবার ভনিতা করলো। ফট করে অদ্রি বলে উঠলো,

‘ একটা আইডিয়া আছে।’

প্রিয়তা,রুদ্র সচকিত হলো। বলে উঠলো,

‘ কি আইডিয়া?’

‘ চল আমার সাথে!’

অদ্রি হঠাৎ সটান হয়ে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেলো অডিটেরিয়ামের দিকে। সেখানে গিজগিজ করেছে মানুষ। প্রিয়তা রুদ্র উভয়েই অবাক হলো৷ ধরতে পারলো না অদ্রির কার্যকলাপ। অদ্রি এবার অভীকে খোঁজার জন্য চিরুনি অভিযান শুরু করলো। অবশেষে পেয়েও গেলো তাকে। অভী এককোণে বসে আছে ওর বন্ধুবান্ধবদের সাথে। অদ্রি ধেই করে এসেই আচমকা বলে উঠলো,

‘ আসসলামু আলাইকুম দুলাভাই?’

সুনসান আকাশে হঠাৎ বজ্রপাত হলে যেরকম ভয়াবহ অবস্থা হয়, এখানে তার ঠিক উল্টোটাই হলো। এত কথা, প্রাণোচ্ছলতার মাঝে অদ্রির এমন সম্বোধনে হঠাৎ করেই ছেয়ে গেলো সুনসান থম মারা নীরবতা। সবাই হঠাৎ চিতাবাঘের চাউনি নিক্ষেপ করলো অদ্রির দিকে। চোখে রাজ্যের প্রশ্নের আনাগোনা। অদ্রি বোকার মতো বলে উঠলো,

‘ আই নো আমি সুন্দরী ভাইয়াগণস! কিন্তু সবাই এমন ভাবে তাকাচ্ছো কেন?’

‘ তুমি দুলাভাই কাকে বললে?’

তীর্যক চাহিনী নিক্ষেপ করলো অভীর বন্ধু অন্তু। ঠোঁট কামড়ে ছেলেটা তাকিয়ে আছে অদ্রির দিকে। অদ্রি বলে উঠলো,

‘ যে সম্পর্কে আমার দুলাভাই হয় তাকেই বলেছি।’

প্রিয়তা ঘাবড়ে গেলো। তাকালো অভীর দিকে। অভীর অবস্থাও বিপরীতমুখী নয়। রয়েছে সামান্য অপ্রতিভতা। হয়তো আশার বাইরে ছিলো যে অদ্রি এভাবেই ওর বন্ধুদের সামনে দুলাভাই বলে সম্বোধন করবে। কেননা আকারে ভঙ্গীতে অভী স্পষ্টই জানান দিচ্ছে যে এমন কোনো বিষয়েই সে অবগত ছিলো না।
প্রিয়তা আতঙ্কে চেপে ধরলো অদ্রির হাত। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,

‘ কি করছিস তুই অদি?’

‘ আমাকে আমার কাজ তুই করতে দে।’

অদ্রি এবার সরাসরি দাঁড়ালো অভীর সামনে। কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,

‘ সালাম দিচ্ছি- জবাব দিচ্ছেন না কেন?’

বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো অভীর বন্ধুমহল৷ বলে উঠলো,

‘ এই পিচ্চি মেয়েটা কি বলছে এসব?’

‘ ভুল কিছু বলিনি বস! উনাকেই জিজ্ঞেস করেন, উনি প্রিয়তার উডবি। তাই না দুলাভাই?’

অভী এতক্ষণে মুখ খুললো। থমথমে গলায় বললো,

‘ স্টপ দিস অদ্রি, বারবার দুলাভাই ডাকবে না।’

‘ আচ্ছা দুলা ব্রাদার!’

‘ অদ্রি প্লিজ। ‘

‘ আমি দুঃখিত দুলা ব্রাদার। খোদার কসম জীবনেও আপনাকে দুলাভাই ডাকবো না। প্রিয়তার বর বলে ডাকবো। এই ডাকটা ভালো না দুলাব্রাদার?’

অভী কোনোমতে সংবরন করলো নিজেকে। এই মেয়ে যা মহাকর্ম করার করেই ফেলেছে। এবার ঘটনাটা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে ইউনিভার্সিটিতে। ভেবেছিলো গতকাল প্রিয়তার সাথে একটু মশকরা করার পর বাবাকে ঠান্ডা মাথায় বোঝাবে এই বারবার ভয়ংকর কান্ড করা মেয়েটাকে সে কিছুতেই বিয়ে করবে না। এবার যে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যাবে তা ভালোমতোই ধরতে পারলো অভী। আর অদ্রির মতো দস্যু মেয়ে যে কেন এটা করেছে সেটাও ভালোমতো জানে।

অন্তু অবিশ্বাস্য হয়ে তাকালো অভীর দিকে। বলে উঠলো,

‘ কি হচ্ছে এসব?’

‘ কি আর হবে? তোর বন্ধু বিয়ের পিড়িতে বসবে- এমনটাই হচ্ছে!’

অভীর বেপোরোয়া ভাব। কঠিন দৃষ্টি দিলো সে প্রিয়তার দিকে। চট করে নিভে গেলো প্রিয়তা। রুদ্রের আড়ালে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো।

অভী হঠাৎ অবাক করে দিয়ে বলে উঠলো,

‘ আমার সাথে বাইরে চলো প্রিয়তা!’

সবার তালগোল দৃষ্টি এখন প্রিয়তার দিকে। কেউ কেউ তাকাচ্ছে বারবার ঈর্ষান্বিত চোখে, আবার কেউ দেখছে অবহেলিত মনে। প্রিয়তা সম্মতি জানালো। বেরিয়ে এলো বাইরের দিকে।

অভী ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। পান্জাবির পকেটে হাত গুঁজে রাশভারি চোখ নিয়ে বললো,

‘ এই সিনক্রিয়েট টা কি খুব দরকার ছিলো? ‘

‘ আমি কিছু করিনি বিশ্বাস করেন, সব ওই অদ্রির দোষ। ওই শয়তান বিচ্ছু মেয়েটা সব করেছে।’

‘ আর কেন এসব করছে?’

‘ কারন আপনার মতো ছেলেকে আমি জন্মেও বিয়ে করবো না।’

ফট করে বলে ফেললো প্রিয়তা৷ তাকালো অভীর দিকে। তার কোনো হেলদোল নেই। চট করে ধরা অসম্ভব তার প্রতিক্রিয়া। অভী নিঃশ্বাস ফেললো হতাশার সাথে। বললো,

‘ তুমি গাধা আগে থেকেই জানতাম। তবে গাধা প্রজাতির মধ্যে তোমার মান যে এতটা কটু হবে তা আজ আরও ভালোভাবে টের পেলাম। গাধা বলেছি বলে আবার চিৎকার করে কাঁদবে না কিন্ত। কাঁদলেও আমার কিছু করার নেই। গাধাকে গাধাই বলা উচিত। তোমার যদি বিয়ে করার ইচ্ছে না-ই থাকে তাহলে কেন খামোখা ছড়ালে আমাদের কথা?’

প্রিয়তা কথা বললো না। অদ্রিকে বিশ্রিভাবে মেরে কুপোকাত করার মতো ভয়ঙ্কর থেকেও ভয়ঙ্কর বাসনা জেগেছে ওর মনে। অভীর অপমান শুধু মাত্র অদ্রির মতো গর্দভ মেয়েটার জন্য গায়ে মেখে নিলো।

সে এখন কাদো কাদো স্বরে তাকালো অভীর দিকে। বলে উঠলো,

‘ কিছু করুন না আপনি প্লিজ!’

অভী হাসলো। এগিয়ে গেলো প্রিয়তার দিকে। ওর বন্ধুগুলো ওদিকেই উৎসুক হয়ে ওদের দেখছে।তাই নিরাপদ দুরত্ব নিয়ে বলে উঠলো,

‘ প্রবলেম তোমার প্রিয়তা। তোমার যেহেতু আমার মতো নিরামিষ ছেলেকে বিয়ে করতে সমস্যা, তুমিই হ্যান্ডেল করবে। তুমিই আমাদের ডিপার্টমেন্টকে বুঝাবে যে আমাদের কোনো প্রেমঘটিত সম্পর্ক নেই। তোমার গাধা বোন অদ্রিকেও বাসায় গিয়ে চার পাঁচটা থাপ্পড় তুমিই মারবে। আর যদি এসব করতে না পারো তবে এই নিরামিষ ছেলেটাই নাহয় মেনে নাও?’

প্রিয়তার হতাশা নিয়ে তাকালো অভীর দিকে। যেগুলো করতে বলেছে সবগুলোই করা অসম্ভব। আজ অদ্রি যে কান্ড করেছে কাল সকালের মধ্যে এটা যে ক্যাম্পাসের মোড়ে মইন মামার চায়ের দোকানে রসালো খবর হয়ে যাবে এটা ভাবতেই চোখ অন্ধকার হয়ে এলো। আর ভাবতে পারলো না প্রিয়তা। অভীকে মেনে নেওয়ার কথা আসতেই হঠাৎ কংক্রিটের রাস্তায় জ্ঞান হারিয়ে পড়ে মাথা ফাটিয়ে ফেললো। অভী হঠাৎ হতভম্ব হয়ে গেলো প্রিয়তার এমন কাজে। তামাটে গাল হয়ে উঠলো লাল। সবাই ইতিমধ্যে এদিকে এসে পড়েছে। সবার চোখে মুখে এমন এক কঠিন অভিব্যক্তি যে অভী হয়তো এমন কিছু বলেছে যার জন্য প্রিয়তা জ্ঞান হারালো।

অভী কথা বললো না। রুদ্র অদ্রিকে ইশারায় ডাক দিয়ে প্রিয়তাকে কোলে তুলে নিলো। চরম হতাশা নিয়ে বললো,

‘ চমৎকার প্রিয়তা- অপমান করাতে তোমার জুড়ি নেই!’
.
.
#চলবে

ভুলক্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here