প্রিয়জন❤❤Part-04

0
3908

প্রিয়জন❤❤Part-04
Writer-Moon Hossain

[এক্সামে বিজি আছি তাই এফবিতে আসতে পারিনি]
গ্রামের পুকুর থেকে বিশাল সাইজের মাছ ধরা হচ্ছে। খাসি জবাই দেওয়া হচ্ছে। নানা রকমের মিষ্টি বানানোর জন্য ময়মনসিংহ থেকে কারিগর আনা হয়েছে।এসব কিছু আগুনের আপ্যায়নের জন্য করা হচ্ছে।
আগুনের জন্য এসব আয়োজন দেখে মোমের বাবা আরমান আহত বোধ করছে।
সে কিছুতেই আগুনকে সহ্য করতে পাচ্ছেনা।
দুপুরে বিশাল আয়োজন হয়েছে। দস্তরখানা বিছিয়ে খাবার পরিবেশন করছে বাড়ির ছেলেরা। মেয়েরা সব ভেতর থেকে রান্না করেছে।সবাই জোহরের নামাজ পড়ে খেতে এসেছে। আগুন আয়োজন দেখে বলল…
-খালু সাহেব এটা তো একেবারে রাজভোজ।
-বাবা সাহেব রাজভোজের কি দেখেছেন এখন । এখানে তো কম আয়োজন করা হয়েছে। আপনি তো আমাদের পরম আত্মীয়।
খাওয়া শুরু হয়েছে।
এক একজন মেহমানের জন্য এক একজন করে লোক খাবার পরিবেশন করছে।
আগুনের সাথে দুইজন লোক মোতায়ন করা হয়েছে।
আগুনের প্লেট একটু পর পর ভর্তি করে দেওয়া হচ্ছে।
.
.
আগুন খেতে খেতে প্রায় জ্ঞান হারানোর মতো সিচুয়েশনে পড়ল।
.
.
আগুন তার ঠিক করা রুমে শুয়ে আছে।
পাশের টেবিলে খাতা কলম রাখা আছে।
আগুন একটা পেজ নিয়ে ছোট চিরকুট লিখেছে।
এই চিরকুটটা মোমের ভাইয়ের ছেলের হাতে দিয়ে মোমের কাছে পাঠিয়েছে আগুন।
মোমের ভাই বিয়ে করেছে। তার ওয়াইফের নাম আয়েশা। আয়েশা মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করেছ আর খুব সুন্দরী পরহেজগারি মেয়ে । মোমের ভাইয়ের একটা ছেলে আছে সাড়ে তিন বছরের। তার নাম আরব। আরবের খুব কৌতুহল। তার মনে সবসময় নতুন নতুন জিনিস দেখে প্রশ্ন জাগে। সারাদিন সবাইকে প্রচুর প্রশ্ন করে বেড়ায় আরব। খুব দুষ্টু আর যেটা দেখে সেটাই হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুয়ে বলবে… ঐটা কি? এটা কি? ওটা কি?
-এটা কি?
আগুন হেসে বলল…চিরকুট।
-চিকুট কি?
-চিঠি
-চিচি কি?
আগুন আরবের গালে চুমু দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে মোমের কামরা বরাবর নামিয়ে দিয়ো বলল…তোমার ফুপির কাছে দিয়ে এসো। এটা তোমার ফুপির।
আরব এক দৌড়ে মোমের কোলে উঠে বসল।
মোম সবে নামাজ পড়েছে।
আয়েশাা নামাজ পড়তে বসেছে।
মোম আরবের গালে চুমু দিয়ে বলল…তোমার হাতে এটা কি বাবু?
-বাবু কি?
-বাবু হলে তুমি।
-আমি বাবু??
-হ্যাঁ তুমি বাবু।
আয়েশা নামাজ পড়ে বলল..সারাক্ষণ ফুপিমা কে জ্বালানো।
চলো আরব আমার সাথে।
খাবে চলো।
-আরব মোমের ওড়নায় নিজেকে ঢেকে ফেলে বলল…আরব নেই।
মোম আর আয়েশা দুজনেই হেসে ফেলল।
আরব বলল…না না আমি যাবনা। ফুপির কাছে থাকব।
-ভাবি আরব থাক না আমার কাছে।
-না একদম নয়। তুমি রেস্ট নাও। তোমার শরীর দূর্বল।
আয়েশা আরবকে নিয়ে চলে গেলো।
মোম চিরকুট খুলে দেখলো দুই লাইনের লেখা।
“মোম এখনো খাওনি তাইনা? তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও নইলে শরীর খারাপ করবে। নিজের যত্ন নাওনা কেনো তুমি?
” আগুন”
মোমের চোখ কপালে উঠলো।
হঠাৎ আগুন তাকে চিরকটে এতো কেয়ারের কথা বলল কেনো।
লোকটা আসলেই বোঝার বাহিরে।
.
.
সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন একবার বাহিরে যায়। একবার বারান্দায়। একবার ছাঁদে যায়।
মোম এটা লক্ষ্য করেছে। লোকটা কি পাগল হয়ে গেলো নাকি। এতো পায়চারি করছে কেনো।
আগুনের পায়চারি দেখে মনে হচ্ছে সে কাউকে দেখার জন্য আকুল হয়ে আছে।
সন্ধ্যায় সবাই জড়ো হয়ে গল্প করছে।
বাড়ির ছেলেরা উঠোনে বসেছে আর মেয়েরা বোরখা পড়ে বারান্দায় বসেছে।
খালু সাহেব নাকি একবার জ্বীন দেখেছিলো সেই গল্পটাই করছে জোরে জোরে।
উঠোনের ছেলেরা আর বারান্দার মেয়েরা সেই গল্পই শুনছে।
.
.
হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ এলো।
সম্ভবত পাশের বাড়ি থেকে।
সবাই সেখানে ছুটে গেলো।
একটা ২৫-২৬ বছরের আধ-পাগলা লোককে গাছের সাথে বাধা হয়েছে।
তাকে ঘিরে আছে কয়েকজন কবিরাজ।
কবিরাজদের যিনি সর্দার তিনি প্রকান্ড লাঠি নিয়ে লোকটাকে লাঠিপেটা করছে।
কেউ বাধা দিচ্ছেনা।
কবিরাজ এখন এক বোতল গরম তেল নিয়ে লোকটার মুখের কাছে নিয়ে ধরেছে খাওয়ানোর জন্য।
কি নির্মম দৃশ্য।
বাড়ির মেয়েরা এসব দেখে মর্মাত হলে আর ভয়ও পেলো। মোম সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারালো।
আগেও এমন হয়েছে গ্রামে।
আগুন মোমকে নিয়ে বাড়ির মেয়েদের চলে যেতে বলল…
কবিরাজ গরম তেল নিয়ে লোকটার মুখে দিতে যাবে অমনি আগুন বাধা দিলো।
কবিরাজ বলল…ছেলেটাকে জ্বীনে ধরেছে। গরম তেল না খাওয়ালে জ্বীন ছাড়বেনা।
আগুন বলল…ওআচ্ছা তাই নাকি? তো জ্বীনে ধরেছে এটা আপনি দেখেছেন নাকি?
-হ্যাঁ দেখেছি বলেই সমাধান করছি।
-তাহলে আমাদেরকে দেখান জ্বীনটাকে।
তাহলেই আমরা বিশ্বাস করব আর আপনাকে আপনার কাজ করতে দেবো।
-জ্বীনকে নিয়ে হেলাফেলা করবেন না বাবাজি।
আপনি শহরের ছেলে তাই জ্বীন সম্পর্কে জানেন না।
জ্বীন সবার সামনে আসেনা।
– এসব যুক্তিহীন কথা বার্তা বলে লাভ নেই। আপনি জ্বীন দেখাতে পারবেন না কারণ আপনিও ভালো করে জানেন জ্বীনের কোন বিষয় নয় এখানে।
ছেলেটাকে ছাড়ুন। এভাবে আপনাকে যদি অকারণে টর্চার করা হতো তাহলে আপনার কেমন লাগতো?
-বাবাজি মনে হয় ধর্ম কর্ম জানেন না।
আমাদের আল কোরআনে জ্বীনের কথা বলা আছে। জ্বীন নামে সূরাও আছে।
-দেখুন এটা ঠিক আমার ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান নেই কিন্তু ভালো মন্দ বোঝার মতো বয়স আমার হয়েছে।
যেটা অন্যায় সেটা আমার কাছে অন্যায়। ন্যায় অন্যায় বোধ আমার হয়েছে। কোনটা অন্যায় আর কোনটা ন্যায় তার পার্থক্য আমি বুঝি। আর আমি অন্যায় সহ্য করিনা।
তাই আপনার কাজে আমি বাঁধা দেবো। গ্রামের ছেলেরা বোকা সোঁকা হয়ে থাকে। তাদের মাঝে উদাসী পাগলা ভাব চলে আসে। তার মানে এটা নয় যে তাকে জ্বীনে ধরবে।
আর আপনার মতো লোকেরা এভাবে পশুর মতো অত্যাচার করবেন।
.
.
.
আগুন কারোও ধার ধারে না। আগুন খালু সাহেবের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ছেলেটাকে ময়মনসিংহে নিয়ে এসে একটা হসপিটালেে ভর্তি করে পরের দিন ভোরে গ্রামে উপস্থিত হলো।
.
.
মোমের বাবার কাছে আগুনের এসব বিষয় নাগ গলানো ভালো লাগলো না।
খালু সাহেবের ভালো লেগেছে কারণ তিনিও অনেক চেষ্টা করেছেন গ্রামে জ্বীনের নামে অত্যাচার চালানো বন্ধ করতে।
মোমের বাবা আরমান মোমের মায়ের কাছে জানতে পারলো সবাই মিলে নৌকা ভ্রমণ করতে গিয়েছে। আগুন আর মোম দুজনেই গিয়েছে।
বিশাল নৌকা আছে খালু সাহেবের। ওটা করে সবাই নৌকা ভ্রমণ করছে।
আগুনের বাংলাদেশে প্রথম নৌকা ভ্রমণ।
মোমেও প্রথম। মোমের পানি দেখলে বেশ ভয় করে।
আগুন আর মোম দূরে বসেছে কিন্তু মুখোমুখি।
মোম মেয়েদের সাথে গল্প করছে। মোম বলল…দুনিয়ার সুখ হলো…. বাবা মা, নেক ছেলে মেয়ে, নেক বিবি, নেক স্বামী।
আখিরাতের সুখ হলো… ইলম, পরহেজগা, সদকা,নেক আমল।
আগুন একদৃষ্টিতে মোমের দিকে তাকিয়ে আছে।
মোম বোরখা নেকাব পড়েছে তবুও আগুন মোমের দিকে তাকিয়ে আছে।
মোম হঠাৎ এটা লক্ষ্য করল। মোম অস্থিরতা বোধ করলো। মোম একটু নড়ে বসতেই ধপ করে নদীতে পড়ে গেলো।
.
.
সবাই চিৎকার করে উঠলো।
মোমের বাবা আর ভাই যদি জানে সবাই থাকতেও মোম পানি পড়েছে তাহলে কারও রক্ষে নেই।
হঠাৎ আগুনকে সবাই ঝাপিয়ে পড়তে দেখলো।
নদীতে এখন স্রোত বইছে।
সবার জান যায় যায় এমন অবস্থা হয়েছে।
আগুন মোমকে উদ্ধার করে কোলে করে পাড়ে শুইয়ে দিলো।
মোমের পেটে প্রচুর পানি। পানি খেয়ে মোমের পেট ফুলে গিয়েছে।
আগুন লক্ষ্য করলো তার শরীর আর মন দুটোই কাঁপছে।
এই প্রথম আগুন মোমের এতো কাছে এসেছে।
এতো কাছ থেকে দেখছে মোমকে। মোমকে জলপরীর মতো লাগছে।
সবাই নৌকা থেকে নেমে ওদের কাছে আসতে শুরু করেছে।
আগুন মোমের হাত নিয়ে মোমের পেটে চাপ দিলো আর মোমের মুখ থেকে এমনিই গড়গড় করে পানি বের হচ্ছে। মোমের একটু একটু হুশ ফিরছে। মোম আবাছা আবছা আগুনকে দেখতে পেলো।
সবাই আসতেই আগুন মোমের কাছ থেকে চলে গেলো ।
আগুন বুকে হাত রেখে হাটছে কারণ তার হার্ট প্রচন্ড গতিতে চলছে। এতে এক প্রকার সুখ অনুভব হচ্ছে তার।
.
.
মোমের বাবা মোমের পানিতে পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আগুনের বাঁচানো পর্যন্ত সব কিছু শুনলো।
আগুন নিজের রুমে বসে বসে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলো। মোমের বাবাকে দেখে আগুন দাড়িয়ে পড়ল।
– হ্যালো আংকেল কেমন আছেন? শরীর ভালো আছে?
-তুমি এখন আমার শরীর খারাপের একমাত্র কারণ।
-সেটা কেমন করে?
-তুমি জানো না কেনো?
-নাতো জানিনা আংকেল।
-আমাকে আংকেল ডাকবেনা। এতো সুন্দর ব্যবহারের অভিনয় করবেনা।
-তাহলে বাবা ডাকবো?
-তুমি আমাকে রাগাচ্ছোা কিন্তু। আসল কথা এসো। এসব বন্ধ করবে কখন?
-কি বন্ধ করব?
-নাটক করবেনা একদমই।
-আপনি যে আমার সাথে নাটক করছেন তার বেলায়?
-আমি তোমার সাথে কি নাটক করছি??
-কথা ছিল দেশে ফিরলেই আমার আমানত আমাকে বুঝিয়ে দেবেন। আপনি সহ আপনার ফ্যামিলি এমন ভাব করছেন যেনো কিছুই হয়নি।
মোমের বাবা শান্ত হয়ে বলল…তোমার আর আমার পরিবার আলাদা। আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি আলদা। তাই আমাদের মাঝে কোন রকম সম্পর্ক হতে পারেনা।
-তাহলে সম্পর্ক কেনো তৈরি করলেন তখন?
-তখন পরিস্থিতি আলাদা ছিলো। তোমার বাবা আর আমি একই ছিলাম। আর যা হয়েছে তা তোমার বাবার পাগলামিতে হয়েছে। তোমার বাবার পাগলামীর জন্য আমি আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারিনা। ভালো মেয়ে দেখে তোমার যোগ্যতা অনুযায়ী বিয়ে করে নাও।
-আমার বিয়ে হয়েছে একবার। আমি কিছুই ভুলিনি। আর বউ থাকতে আমি আবার বিয়ে করবো না কখনো। অসম্ভব।
মোমের বাবা রাগ সামলিয়ে বলল…ওটা তোমাদের সমাজে বিয়ের পর্যায়ে পড়েনা।
তুমি আর মোম খুব ছোট ছিলে। তাছাড়া মোমের কিছু মনে নেই। মোম তোমার মতো উগ্র ছেলেকে স্বামী বলে মানবেনা বরং ও দুঃখে মরে যাবে।
-সেটা আমি বুঝব। মোম আমার বউ। আমার সমাজে বিয়ের পর্যায়ে না পড়লেও আপনার সমাজে পড়ে ।
.
.
মোমের বাবার আর আগুনের কথপোকথন ভেতর থেকে শুনে মোমের খালার বাড়ি আৎকে উঠেছে। সবাই ভয়ে অস্থির আর মোম ঘুমিয়ে আছে।
-মোমকে তোমার হাতে দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তুমি কি করতে পারবে? কোন প্রমাণ আছে?
আগুন হেসে বলল… ওটা আমার বিষয় আমি কি করব। আর প্রমাণ ছাড়াই আমি অনেক কিছু করতে পারি সেটা আপনি জানেন তাছাড়া আমি আপনার সমাজের লোকেদের কাছে যাব তারাই আমাকে আমার আমানত দেবে।
-কোন বাবার ছেলে তুমি ভুলে গিয়েছিলাম। এখনি তুমি চলে যাবে এখান থেকে। আর কখনো আমার সামনে আসবেনা বেয়াদব ছেলে।
আগুন ড্রাইভ করছে ময়মনসিংহে যাওয়ার উদ্দেশ্য আর মোমের সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে। আগুনের এতোদিনের লুকায়িত ভালোবাসার মোমকে ছেড়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব।
.
.
.
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here