প্রিয়জন❤ Part-12

0
3061

প্রিয়জন❤ Part-12
Writer-Moon Hossain

[যাদের আমাকে পছন্দ না তারা চলে যেতে পারেন কিন্তু বিনা কারণে অপমান করবেন না। মেয়ে তো তাই একটু বেশি দুঃখ লাগে]
মোম বিছানায় শুয়ে আছে উপর হয়ে।
আগুনের স্পর্শ গুলো এখনো মনে হচ্ছে গায়ে মেখে আছে।
কি দারুণ অনুভূতি।
লাইফে প্রথম ছোঁয়া তাও আবার এতো গভীর।
আগুনের কাছে যতক্ষণ মোম ছিল ততক্ষণ মনে হয়েছিল যেনো কোন শান্তির দুনিয়াতে আছে তারা।
-ননদিনী আসব??
-হ্যাঁ এসো।
-কি ব্যপার সন্ধ্যা বেলা শুয়ে আছো কেনো?
দেখি দেখি শরীর খারাপ নাকি?
-ভালো করে ছুয়ে দেখ । শুধু কপালে নয় গলায় আর হাতেও পরিক্ষা করে দেখ।
-হ্যাঁ দেখব তো।
এসো তোমাকে পরিক্ষা করে দেখি আজকাল তোমার কি হয়েছে।
.
.
.
মোম -আমি এক লাফে বিছানা থেকে উঠে পড়লাম।
ভাবি আবার কিছু বুঝে ফেললো নাকি।
আমি যে উনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম সে বিষয়ে কিছু বুঝে ফেললে কেয়ামত হয়ে যাবে।
ভাবি হলো স্বামীর আদেশে জীবন পার করা লোক।
স্বামীর থেকে কিছুই লুকায়না।
স্বামীকে ছাড়া এক পা ফেলে না।
ভাবি কিছু জানলে তা ভাইয়াও জানবে নিশ্চিত।
পৃথিবী উল্টে কেয়ামত হলেও ভাবি তার পেটে কথা লুকাতে পারেনা ভাইয়ার কাছ থেকে।
ভাইয়া আর ভাবি একদম আল্লাহর তৈরি করা সেরা জুটির মধ্যে এক জুটি।
.
.
.
মাগরিবের নামাজ পড়ে শুয়ে আছি ।
আমার মনে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে তা ক্রমশ বাড়ছে। কিছুতেই কমছেনা।
বেলকুনিতে হাটাহাটি করলে কমতে পারে তাই সেখানে গেলাম। বেলকুনির স্নিগ্ধ হাওয়া আমার গায়ে কাটা দিয়ে যাচ্ছে।
বেলকুনির নীরব পরিবেশ আমাকে উনার কথা আরও বেশি মনে করিয়ে দিচ্ছে।
আমার চোখ গেলো রাস্তার দিকে।
রাস্তার সাইডে দুদিন আগে উনি আমার জন্য ঝড় তুফান উপেক্ষা করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে জ্ঞান হারিয়ে ছিলেন।
না না এখান থেকে যাওয়া উচিৎ তা না হলে আমি মরেই যাব উনার কথা ভাবতে ভাবতে।
.
.
একটু পর মা নাশতা নিয়ে এলো।
আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে খেতে বলল।
কি করে খাব আমি। আমার পেট যে ভরা।
উনাকে আমি খাইয়ে দিয়েছি আর আমাকে উনি।
উনি যেমন প্রচুর খেলেন তেমনি আমাকেও প্রচুর খাওয়ালেন।
.
.
কিছুক্ষণ শুয়ে থাকা যাক তাহলে অস্থিরতা কমতে পারে।
আগুন বেলকুনিতে এক্সারসাইজের সরঞ্জাম নিয়ে বসে আছে।
কিন্তু কিছুতেই কিছু করতে পাচ্ছেনা।
সব সময় মোমের মুখশ্রী ভেসে আসছে।
এমন তো কখনো হয়না।
আগুনের রাতে এক্সারসাইজ করার হেবিট।
আগুনদের একজন সার্ভেন্ট ভয়ে ভয়ে আগুনের জন্য করলার জুস দিয়ে গিয়েছে রুমে।
কেন জানি তার আগুনকে দেখে ভয়ে বুক কেঁপে উঠে যদিও আগুন কারও সাথে খারাপ ব্যাবহার করেনা।
আগুনের রুমে দামী দামী জিনিসপত্র এদিক ওদিক ছড়ানো ছিটানো থাকে ।
কোথায় ছোঁয়া লেগে জিনিসপত্র ভেঙে যাবে এই ভয়ও আছে তার।
তবে এই সার্ভেন্টটা আগুন কে ইতোমধ্যে পছন্দ করে ফেলেছে।
এই তো সেদিন মন খারাপ করে সে কোণায় দাড়িয়ে ছিল।
আগুন এসে বলল…কি হয়েছে তোমার??
মালিকের বড়লোক ছেলের কথা শুনে ভয় লেগেছিল ঠিক কিন্তু মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেলো মন খারাপের কথাটা – স্যার আমার মেয়েটা অসুস্থ।
ওর জন্য মন কাঁদছে।
-কি নাম তোমার???
-স্যার আব্দুল হাকিম
-আব্দুল হাকিম এখুনি তুমি তোমার মেয়ের কাছে যাও।
কিছু টাকা লাগবে কি তোমার??
– না স্যার
– তোমার না লাগতে পারে বাট তোমার মেয়ের লাগতে পারে।
আগুন তিনটে নোট নিয়ে হাকিমের হাতে দিল।
হাকিমের আসলেই টাকার প্রয়োজন ছিল বাট মুখ ফুটে বলতে লজ্জা লাগছিল।
-স্যার আল্লাহ আপনার ভালো করবে আমি দোয়া করব।
– আমার জন্য দোয়া করতে হবেনা। শোনো, হাকিম তুমি আমার হবু ছেলে মেয়েদের জন্য দোয়া করবে যেনো ওদের কে এই সুন্দর প্রথিবীতে নিয়ে আসতে পারি।
জানো তো ওদের মাকে আমার কাছে ওদের নানুর ফ্যামিলি দিতে চাচ্ছেনা।
আগুনের কথা শুনে আগুনের জন্য ঠিক কি দোয়া করবে সেটাই ভাবছে হাকিম। মানুষ টা কি অদ্ভুত!!
.
.
.
মোম বিছানা থেকে উঠে সোজা কোরআন পাঠ করা শুরু করলো।
মোমের কোরআন তেলওয়াত পুরো বাড়িতে মুখরিত হয়ে উঠে।
মোমের বেশ সুরেলা কন্ঠ যা দিয়ে সে সুরেলা ভাবে কোরআন তেলওয়াত করতে পারে।
মোম মাঝরাত পর্যন্ত কোরআন তেলওয়াত করলো।
এখন ওর মনে কিছুটা শান্তি এসেছে। কোরআন তেলওয়াত না করলে নির্ভার আগুনের জন্য অস্থির হয়ে হার্টফেল করে মারা যেত মোম।
.
.
আগুনের ঘুম আসছেনা।
তার মনেও অস্থিরতা চলছে।
বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই মোমের কথা আরও বেশি করে মনে পড়লো তার।
আগুন – ঠিক এই জায়গাতেই আমার প্রিয়তমা শুইয়ে ছিলাম।
এখনো ওর গায়ের আতরের গন্ধ লেগে আছে।
এই যুগে কত রকমের এক্সপেন্সিভ পারফিউম ব্যবহার করা হয় বাট আমার প্রিয়তমা আতর ব্যবহার করে।
এই আতরের সুভাসটাই আমার প্রচন্ড ভালো লাগে।
আতরের সুভাসটা একদম ওর গায়ের সাথে বেশ মানিয়েছে।
.
.
.
এখনো ওর লজ্জা ভয় মিশ্রিত মুখশ্রী আমার চোখে ভাসছে ওকে যখন এই বেডে শুইয়ে ছিলাম।
ওর খুব কাছে থেকে ওর নিষ্পাপ সুন্দর মুখখানি দেখছিলাম তখন ও লজ্জায় চোখ বন্ধ করেছিল।
যখন ওর আরও কাছে যেতে চাইলাম তখন ওর বুকের মধ্যে ভয়ের আওয়াজের ধ্বনি শুনতে পেলাম।
আমি সত্যিই তখন ওকে কাছে পেতে চাচ্ছিলাম। হয়ত সেই কাজটা করেই ফেলতাম। মোম তখন ইচ্ছে সত্বেও বাঁধা দিতে পারতো না।
মোমকে আমি কোন রকম অসস্থিকর সিচুয়েশনে দেখতে পারব না। ওর আফসোস হলে আমি কখনো নিজেকে মাফ করতে পারবনা।
তাই ওর ওর গালে হাত দিয়ে উঠে বসলাম বিছানায়।
আর ওর লজ্জা ভয় মিশ্রিত মুখশ্রী দেখতে থাকলাম।
সন্ধ্যা হওয়াতে অনিচ্ছা সত্বেও ওকে ওর বাবার বাড়িতে দিয়ে আসলাম।
পথে ও লজ্জায় আমার দিকে তাকাতে পাচ্ছিল না। তাই আমিও আর লজ্জা বাড়িয়ে দিইনি। ও যাওয়ার সময় শুধু বলেছিলাম -আজ রাতে আমার ঘুম হবেনা কারণ আমার বেডে তোমার গায়ের সুভাস থাকলেও তুমি নেই।
.
.
আজ আর ঘুম হবে বলে মনে হচ্ছেনা।
বেডের দিকে তাকালে ওকে দেখতে পায় তাই বেডের নিচে বসে বসে নেক্সট প্ল্যানটা বানালাম।
.
.
মোম -রাতে কেনো যেন ঘুম হলো না।
ঘুমটা থেকে থেকে ভেঙে যাচ্ছিল।
মনে হচ্ছিল কেউ আমাকে দেখছে।
কারও মন আমার মনের সাথে মিশতে চাচ্ছে।
বাবার আদেশ ভোরে হাটতে হয় পাশের পার্কে।
তাড়াতাড়ি বোরখা পড়ে নিলাম।
বাবা মা কথা বলতে বলতে সবার সামনে হাঁটছে।
ভাইয়া আর ভাবি হাত ধরাধরি করে হাঁটছে।
আরব আমার সাথে হাটছে আর নানান প্রশ্ন করে আমার মাথা নষ্ট করে ফেলছে।
-ফুপি এটা কি?
-গাছ
-গাছ কি?
আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। গাছ কি এখন কিভাবে বোঝাব ওকে।
-ফুপি ওটা কি?
-তোমার ফুপাজান।
আরব হুট করে উনাকে দেখিয়ে প্রশ্ন করেছিল আর আমিও হঠাৎ উনাকে দেখে বলে ফেললাম কথাটা।
আগুন – মোমরা সবাই এই পার্কে হাটতে আসে তাই আমি এলাম।
এসেই দেখি আরব প্রশ্ন করছে আর আমার প্রিয়তমা মুখ ফসকে সত্যিটা বলে দিলো।
আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম কি বললে…
ও আমতা আমতা করে বলল… কই কিছু নাতো।
-আমি তো শুনলাম।
– ভুল শুনেছেন।
– তোমার গালে দুটো কিস করতে ইচ্ছে করছে।
-কি??? ছোট ছেলের সামনে এসব কথা না বললেই নয়।
-কই কিছু বলিনি তো।
-আমি তো শুনলাম।
-কি?
– আপনি আমার গালে দুটো….
– কি তোমার গালে???
-আপনি অস্বীকার কেন করছেন?
আপনি জানেন আপনি কি বললেন।
-তুমি ভুল শুনেছো।
-কি মিথ্যেবাদি আপনি। আল্লাহ কোথায় তুমি??
-তুমিও মিথ্যেবাদি। আল্লাহ কোথায় তুমি??
.
.
.
-আপনার সাথে কথা বলায় বৃথা।
– আচ্ছা যাও স্বীকার করছি কথাটা। এখন আবারও বলছি আমার সত্যি সত্যি তোমার গালে দুটো ডীপ কিস করতে মন চাচ্ছে।
এখানে করব নাকি একটু আড়ালে যাবে??
-আপনার সাথে কথা বলা মানেই আপনার লাগাম ছাড়া কথা বার্তা শুনতে হয়।
নির্লজ্জ্য।
-আর তুমি এই নির্লজ্জের ওয়াইফ। তাই তোমাকে লাগাম ছাড়া কথা বার্তা শুনতেই হবে। এটাই সত্যি।
মোম আরবকে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো।

– প্রিয়তমা কি করছো??
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
-আপনি আমার পথ ছাড়ুন।
আগুন আরবকে কোলে নিলো।
আরব বলল- তুমি কে?
-আমি তোমার ফুপাজান।
তুমি আমাকে আঙ্কেল বলে ডাকবে।
-আঙ্কেল কি?
-ফুপাজান
-ফুপাজান কি?
-আঙ্কেল?
-আঙ্কেল কি?
-একটু আগেই তো বললাম ফুপাজান। তুমি তো বুদ্ধিমান বয় ভুলে গেলে?
আরব একেবারে চুপ।

মোম- বাবা দেখলে সমস্যা হবে।
– সেটা আমি বুঝব।
-আরব কে দিন
আগুন জানে আরবকে কোলে নিয়ে থাকলে মোম ওর কাছেই থাকবে।
আগুন হাঁটছে আর মোমও আগুনের পিছনে হাঁটছে।
আগুন একটা খাবারের স্টলের দিকে গেলো।
আরবকে খাইয়ে দিয়ে মোমের মুখে স্যান্ডউইচ তুলে দিলো।
-খাব না।
-তোমার অনুমতি চেয়েছি?
চুপচাপ নেকাব খুলো বলছি।
আগুন মোমের নেকাব খুলে মোমের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে।
মোমের মুখশ্রী দেখলে আগুনের আর কিছুই মনে থাকে না।
-নাও হা করো। কাল রাতে কিছুই খাওনি তুমি।
মোম অবাক হলো।
-ভাবছো কিভাবে জানলাম।
স্বামীর এতো কাছ থেকে চলে গেলে কোন মেয়ের নিশ্চয়ই ক্ষিদে লাগবেনা।
বডির কি অবস্থা বানাচ্ছো। তোমাকে কোলে নিলে মজা পাব না। একটু মোটা হতে হবে।
.
.
.
মোম একবার খেয়েই আরবকে নিয়ে কোন রকম পালিয়ে চলে আসলো।
আরেকটু থাকলেই সে হার্টফেল করে মারা যেতো।
.
.
মোমরা একটা বিয়েতে এসেছে।
মোম একা একা হাঁটছিল অমনি কেউ ওর হাত ধরে মুখ চেপে টেনে কোথায় নিয়ে যেতে থাকলো….
.
.
.
চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here