প্রিয়জন❤ Part-49

1
4966

প্রিয়জন❤ Part-49
Writer-Moon Hossain

মোম কে লেডি ডক্টর দেখছেন আর আগুন মোমের হাত ধরে বসে আছে পাশে।
আগুন ডক্টর কে মোমের পেটে চোট লাগার কথা জানিয়েছে।
চোট পাওয়ার কারণে মোম এবং তাদের অনাগত সন্তানের কিছু হয়ে গেলে আগুন নিজেকে কখনো মাফ করতে পারবে না।
আগুনের নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। সে তার সন্তান সম্ভবা প্রিয়তমা স্ত্রী কে দেখে রাখতে পারেনি এর চেয়ে জীবনে ব্যর্থতা বলে আর কি আছে।
ডক্টর আগুনকে বলল টেনশন মুক্ত করলো।
ডক্টর বলল-মিঃ আগুন আপনার ওয়াইফ এন্ড বেবি দু-জনেই ঠিক আছে।
তবে?
আগুনের মুখে হাসি ফুটে এলেও ডক্টরের পরের কথা শুনে আগুন চিন্তিত হয়ে বলল- তবে কি?
-আরেকটু হলেই মিস ক্যারেজ হয়ে যেত। আপনার ওয়াইফেরও এতে ক্ষতি হতে পারতো বড় ধরনের।
এখন থেকে আপনার ওয়াইফকে দেখে শুনে রাখবেন প্রসব হওয়ার আগ পর্যন্ত উনার পাশে পাশে থাকবেন সব সময়।
লাইফে কাজ থাকবেই কিন্তু আমরা ভুলে যায় সেই কাজ গুলো প্রিয়জনদের জন্যই করা হয় সো প্রিয়জন হলো সবার আগে।
মিঃ আগুন আপনি কয়েকমাস আপনার ওয়াইফ এন্ড বেবির সাথে টাইম স্পেন্ড করুন। টেক কেয়ার!
আগুন মোমের কপালে একটা চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো তার স্ত্রী সন্তান সহী সালামত আছে বলে।
মোমকে হালকা ডোজের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। ঘুম থেকে উঠার পর মোমের ব্যাথা কমে যাবে ডক্টর বলেছে।
আগুন জানালার পর্দা মেলে মোমের দিকে লক্ষ্য করলো। জানালা দিয়ে সুন্দর নির্মল কোমল হাওয়া কামরায় ঢুকছে।
মোমের শাড়ি হাওয়ায় উড়ছে। চুল গুলোও সমুদ্রের ঢেউের মতো উড়ে উড়ে খেলা করছে।
আগুন মোম পাশে গিয়ে বসে মোমের কানে চুল গুজে দিলো।
আগুন পলকহীন ভাবে মোমের মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে রইলো।
আগুন- কি আছে ওর ঐ মুখশ্রীতে ? ওর মুখশ্রী না দেখে এক মোমেন্টও থাকতে পারিনা। ওর এতোটুকুও পেইন আমি সহ্য করতে পারিনা।
আগুন মোমের হাত আগুনের বুকের বাম পাশে রেখে চোখ বন্ধ করলো।
মোম আগুনের সামনে থাকলে আগুনের হ্রদয় দ্রুত স্পন্দিত হয়। আগুন মোমের খুব পাশে থাকলে মনে হয় আগুনের হ্রদয় শরীর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।
কি আছে মোমের মাঝে।
আগুন – এই সে নারী যাকে আমার সত্তায়, আমার মনে মিশিয়ে ফেলেছি। যার জন্য আমার বুকে প্রেমের তাজমহল গড়ে উঠেছে।
ওর আর আমাদের ভালোবাসার অনাগত সন্তানের কিছু হলে আমি এক মূহুর্তও বাঁচতে পারতাম না। ওখানেই আমার শরীর থেকে আমার প্রাণ কবজ করে নিতেন আজরাইল! ওদের আগে আমাকেই কবর দেওয়া হতো।
.
.
মোম পায়ে হালকা চোট পেয়েছে। ডক্টরের নির্দেশনায় আগুন মোমের পায়ে মলম লাগিয়ে দিলো।
মোমের পায়ে নূপুর দেখে আগুনের মনে পড়লো সে কিভাবে মোমের পায়ে জোর করে নূপুর পরিয়ে দিয়েছিল।
মোম কিছুতেই আগুন কে পায়ে হাত দিতে দেবেনা। এদিকে আগুন জেদ ধরে বসে আছে সে তার প্রাণ প্রিয় প্রিয়তমাা স্ত্রীকে নূপুর পরাবে নিজ হাতে।
নূপুরের হালকা আওয়াজে আগুন জানতে পারবে তার প্রিয়তমা তার থেকে কত দূরে আছে। হঠাৎ নূপুরের আওয়াজ লক্ষ্য করে আগুন মোমকে খুঁজে বের করে পেছন থেকে জরিয়ে ধরবে।
তখন আগুন মোমকে বলেছিলো মহানবী (সাঃ) এর সাফিয়া নামের একজন বেঁটে স্ত্রী ছিলো যিনি ঘোড়ায় উঠতে পারতেন না উচ্চতার কারণে।
সেজন্য মহানবী(সাঃ) ঘোড়ার পাশে হাটু গেড়ে বসে থাকতেন এবং তার স্ত্রী মহানবী(সাঃ) এর পিঠে পা রেখে ঘোড়ায় উঠতেন।
মোম আগুনের কথা শুনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো আর আগুন যত্ন সহকারে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর কোমল পায়ে নূপুর পরিয়ে দিলো।
আগুন মোমের পায়ে চুমু খেলে মোম বলল তার নাকি সুড়সুড়ি লাগছে।
আগুন তখন ইচ্ছে করে মোমের পায়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। মোম খিল খিল করে হাসছিলো আর বলছিল আল্লাহর দোহায় থামুন নইলে হাসিতে আমার মরণ হবে।
আগুন মোমকে কাছে টেনে বলে – আর তোমার প্রেমে আমার মরণ হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আগুনের কথা শুনে মোম তার স্বভাব মতোই লজ্জায় গোলাপি হয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ লুকালো।
.
.
জানালায় হাওয়ার ঝাপটায় আগুন বাস্তবে ফিরে এলো।
পুরোনো সুখের সৃতি মনে করে তার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠেছিলো।
.
.
জানালার হাওয়ায় মোমের শাড়ি এলোমেলো হয়ে গেছে।
আগুন মোমের নাভিতে কান পেতে তার অনাগত সন্তানের অস্তিত্ব অনুভব করার চেষ্টা করছে। মোমের কোল জুড়ে যখন একটা খোকন বা খুকি আসবে তখন পৃথিবীর সমস্ত সুখ আগুন কিনে নেবে।
আগুনের ঘর আলো করে তার সন্তানরা যখন থাকবে তখন আগুনের সমস্ত পৃথিবীটাই আলোকিতো হয়ে যাবে খুশিতে।
আগুন বেশ কিছুক্ষণ মোমের নাভিতে মুখ গুজে রইলো।
মোমের জ্ঞান ফিরতে অনেক দেরি।
মোম এখন শান্তিতে ঘুমুচ্ছে।
একটু আগে কি তীব্র ব্যাথায় না পেতো হলো আগুনের প্রাণের প্রিয়তমাকে।
.
আগুন মাগরিবের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করছে তার পরিবারের জন্য। মোম আর তার সন্তানের সুস্থতার জন্য আগুন আল্লাহর দরবারে হাত তুলে কেঁদে কেঁদে ফরিয়াদ আর্জি করলো।

❤ দোয়া কবুল হওয়ার বেশকিছু শর্ত রয়েছে। যেমন:

১. আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকে না ডাকা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন: “যখন প্রার্থনা করবে তখন শুধু আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করবে এবং যখন সাহায্য চাইবে তখন শুধু আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাইবে।”[সুনানে তিরমিযি (২৫১৬), আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

এটাই হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণীর মর্মার্থ “আর নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহ্‌রই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।”[সূরা জিন্‌, আয়াত: ১৮] দোয়ার শর্তগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এ শর্ত পূরণ না হলে কোন দোয়া কবুল হবে না, কোন আমল গৃহীত হবে না। অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে মৃতব্যক্তিদেরকে মাধ্যম বানিয়ে তাদেরকে ডাকে। তাদের ধারণা যেহেতু তারা পাপী ও গুনাহগার, আল্লাহ্‌র কাছে তাদের কোন মর্যাদা নেই; তাই এসব নেককার লোকেরা তাদেরকে আল্লাহ্‌র নৈকট্য হাছিল করিয়ে দিবে এবং তাদের মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে মধ্যস্থতা করবে। এ বিশ্বাসের কারণে তারা এদের মধ্যস্থতা ধরে এবং আল্লাহ্‌র পরিবর্তে এ মৃতব্যক্তিদেরকে ডাকে। অথচ আল্লাহ্‌ বলেছেন: “আর আমার বান্দারা যখন আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (তখন আপনি বলে দিন) নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী। দোয়াকারী যখন আমাকে ডাকে তখন আমি ডাকে সাড়া দিই।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬]

২. শরিয়ত অনুমোদিত কোন একটি মাধ্যম দিয়ে আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে ওসিলা দেওয়া।

৩. দোয়ার ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করা। তাড়াহুড়া করা দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বড় বাধা। হাদিসে এসেছে, “তোমাদের কারো দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়া করে বলে যে: ‘আমি দোয়া করেছি; কিন্তু, আমার দোয়া কবুল হয়নি”[সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহিহ মুসলিম (২৭৩৫)]

সহিহ মুসলিমে (২৭৩৬) আরও এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে। বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাড়াহুড়া বলতে কী বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন: বলে যে, আমি দোয়া করেছি, আমি দোয়া করেছি; কিন্তু আমার দোয়া কবুল হতে দেখিনি। তখন সে ব্যক্তি উদ্যম হারিয়ে ফেলে এবং দোয়া ছেড়ে দেয়।”

৪. দোয়ার মধ্যে পাপের কিছু না থাকা। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া না হওয়া; যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদিসে এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে।”

৫. আল্লাহ্‌র প্রতি ভাল ধারণা নিয়ে দোয়া করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তেমন।”[সহিহ বুখারী (৭৪০৫) ও সহিহ মুসলিম (৪৬৭৫)] আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে, “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস (একীন) নিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া কর।”[সুনানে তিরমিযি, আলাবানী সহিহুল জামে গ্রন্থে (২৪৫) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করে আল্লাহ্‌ তার উপর প্রভুত কল্যাণ ঢেলে দেন, তাকে উত্তম অনুগ্রহে ভূষিত করেন, উত্তম অনুকম্পা ও দান তার উপর ছড়িয়ে দেন।

৬. দোয়াতে মনোযোগ থাকা। দোয়াকালে দোয়াকারীর মনোযোগ থাকবে এবং যাঁর কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে তাঁর মহত্ত্ব ও বড়ত্ব অন্তরে জাগ্রত রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ্‌ কোন উদাসীন অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।”[সুনানে তিরমিযি (৩৪৭৯), সহিহুল জামে (২৪৫) গ্রন্থে শাইখ আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

৭. খাদ্য পবিত্র (হালাল) হওয়া। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আল্লাহ্‌ তো কেবল মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ২৭] এ কারণে যে ব্যক্তির পানাহার ও পরিধেয় হারাম সে ব্যক্তির দোয়া কবুল হওয়াকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদূরপরাহত বিবেচনা করেছেন। হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যিনি দীর্ঘ সফর করেছেন, মাথার চুল উস্কুখুস্ক হয়ে আছে; তিনি আসমানের দিকে হাত তুলে বলেন: ইয়া রব্ব, ইয়া রব্ব! কিন্তু, তার খাবার-খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় হারাম, সে হারাম খেয়ে পরিপুষ্ট হয়েছে তাহলে এমন ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে?[সহিহ মুসলিম, (১০১৫)]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন, হারাম ভক্ষণ করা দোয়ার শক্তিকে নষ্ট করে দেয় ও দুর্বল করে দেয়।

৮. দোয়ার ক্ষেত্রে কোন সীমালঙ্ঘন না করা। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা দোয়ার মধ্যে সীমালঙ্ঘন করাটা অপছন্দ করেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক; নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” [সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫] আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন41017 নং প্রশ্নোত্তর।

৯. ফরয আমল বাদ দিয়ে দোয়াতে মশগুল না হওয়া। যেমন, ফরয নামাযের ওয়াক্তে ফরয নামায বাদ দিয়ে দোয়া করা কিংবা দোয়া করতে গিয়ে মাতাপিতার অধিকার ক্ষুণ্ণ করা। খুব সম্ভব বিশিষ্ট ইবাদতগুজার জুরাইজ (রহঃ) এর কাহিনী থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ জুরাইজ (রহঃ) তার মায়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে ইবাদতে মশগুল থেকেছেন। ফলে মা তাকে বদদোয়া করেন; এতে করে জুরাইজ (রহঃ) আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, আলেমগণ বলেছেন: এতে প্রমাণ রয়েছে যে, জুরাইজের জন্য সঠিক ছিল মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া। কেননা তিনি নফল নামায আদায় করছিলেন। নফল নামায চালিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে- নফল কাজ; ফরয নয়। আর মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব এবং মায়ের অবাধ্য হওয়া হারাম….”[শারহু সহিহু মুসলিম (১৬/৮২)]
.
.
আগুন রুম সার্ভিসকে দিয়ে কিছু খাবার আানিয়ে রেখেছে মোমের জন্য। যদি মোমের ঘুম ভাঙে তাহলে মোমকে খাইয়ে দেবে আগুন।
মোম আর তার সন্তান এখনো কিছু খায়নি তাই আগুনও কিছু খেলো না। প্লেটে হাত ধুয়ে পাশে রেখে দিলো খাবার।
ময়মনসিংহ থেকে এপর্যন্ত সবাই কল করছে একের পর এক। সবাই মোমের সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন। আগুন কাউকে কিছু বলেনি মোমের ওয়াশরুমে পড়ে যাওয়ার বিষয়ে। সবাই টেনশনে থাকবে। যাদের হার্টের সমস্যা তাদের নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে। তখন আবার আরেক সমস্যা দেখা দেবে।
আগুন জানে ময়মনসিংহের সবাই মোম বলতে অজ্ঞান।
আসলে মোম এমন একজন নারী যাকে সবাই ভালোবাসে।
মোম সব সময় তার দায়িত্ব গুলো পালন করে। ইসলামিক ভাবে জীবন যাপন করে।
জীবন যাত্রা খুব কঠিন। মুসলিম জীবন যাত্রায় অনেক গুলো কুসংস্কার ঢুকেছে কালের বিবর্তনে।
যেগুলো কে সবাই এখন শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত মনে করছে। যেমন নাক ফুল। নাক ফুল একটা অলংকার। আর এই অলংকার কে সবাই স্বামীর জন্য পরিধান করে। বিয়ের সময় নাক ফুল পড়তেই হবে এবং স্বামী মারা গেলে নাক ফুল খুলে ফেলতে হবে। নাক ফুল নাকি বিবাহিতা মেয়েদের স্বামীর দেওয়া চিহ্ন। তাছাড়া গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে সালামের বিষয়টাও শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছে সবাই। মুরব্বিদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেই হবে। বিয়ের পর খালা, ফুপু, চাচী, মামী, নানি, দাদি শাশুড়ীকে পায়ে হাত ধরে সালাম করতেই হবে।এখন প্রতিটা পরিবারে এইরকম প্রথা চালু রয়েছে। আগুন আর মোমের বিয়ের পর গ্রাম থেকে আসা কিছু মুরুব্বি মহিলাদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। উনাদের বুঝিয়েও লাভ হয়নি।
আগুন একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে সবার জন্য ফরিয়াদ করলো যেন সবাই কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয় আর আল্লাহর সঠিক পথ অবলম্বন করে জীবন ধারণ করে।
[পায়ে হাত দিয়ে সালাম এবং স্বামীর জন্য নাক ফুল পরা সহ আরও অনেক কুসংস্কার আমাদের মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে যেগুলো সারাজীবন থেকেই যাচ্ছে আমাদের জীবনে।সঠিক থেকে ভুল গুলোর দিকে আমরা অধিক অগ্রসর হচ্ছি। আমি ২য় পার্টে পায়ে হাত দিয়ে সালামের কথা লিখেছিলাম সেটা বাস্তব জীবনের নাক ফুলের একটা উদাহরণ ছিল যেখানে আমার দোষ নেই। তবুও আমি ভুল করেছি নেক্সট সুক্ষ্ম ভাবে লাইন বাই লাইন গল্প লিখব, ওয়াদা করলাম ]

আগুন মোমের গলায় মুখ গুজে চোখ বন্ধ করে আছে।
মনে হচ্ছেনা আজ রাতে মোমের ঘুম ভাঙবে।
সারারাত আগুন আর মোমের সাথে কোন কথা বলতে পারবে না। মোমের কন্ঠও শুনতে পারবে না।
আগুনের হালকা মন খারাপ হলো। সে সোফায় বসে অফিসের কিছু কাজ করতে লাগলো ল্যাপটপে।
ফাঁকে ফাঁকে মোমকেও দেখছে আগুনের তৃষার্ত চোখ দুটো। মোমের শরীর থেকে চাদর সরে গিয়ে শাড়ি এলোমেলো হয়ে বাতাসে উড়ছে জানালা দিয়ে আসা সমুদ্রের প্রবাল বাতাসে।
চাঁদের আলোর ছটায় মোম পুরপুরি জ্বলজ্বল করছে। আজকের রাতে আগুনের কাছে মোম কে অদ্ভুত সুন্দরী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে মোমের মতো সুন্দরী পৃথিবীতে আর একটিও নেই। আগুন মোমের দিক থেকে চোখ ফেরাতে কষ্ট হচ্ছে। মোমের মা হওয়ার জন্যই মোমকে মনে হয় এতো সুন্দর লাগছে। প্রতিটা মা বুঝি এমন সুন্দরী দেখায়!
আগুন মোমের কাছে গিয়ে এলোমেলো শাড়িটা ঠিক করতে চেয়েও করলো না। মোমের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে মোমের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। চাঁদের আলোতে দেখা যাচ্ছে সদ্য কিশোরী এক সন্তান সম্ভবা মেয়ের শাড়ি এলোমেলো হয়ে উড়ছে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। চুল গুলো কালো মেঘের মতো উড়ছে। আগুনের কাছে এই মূহুর্তটা দেখতে ভালো লাগছে। যদি আগুনের সাধ্য থাকতো তবে এই মূহুর্তটা ফ্রেমে বন্দি করে রাখতো। তার পর জীবনের শেষ মূহুর্তে চেয়ারে বসে রুপালি চশমার ফাঁকে ফাঁকে তার কিশোরী প্রিয়তমাকে দেখতে পারতো।
.
.
ফজরের আজানের মধুর ধ্বনি ভেসে আসছে।
মোম হঠাৎ চোখ মেলে তাকালো। আগুন মোমের কাছেই ঘুমিয়ে পড়েছে মোমকে জরিয়ে ধরে। মোমের হঠাৎ পেটে তীব্র পেইন শুরু হলো। আজ কেন যেন তাদের সন্তানের অস্তিত্ব অনুভব করতে পাচ্ছেনা মোম। তবে কি? মোমের কলিজা শুকিয়ে গেলো। তার জগতের কোন দিকেই খেয়াল নেই। ডক্টরের রিপোর্ট অনুযায়ী তিন সপ্তাহ হয়েছে প্রেগ্ন্যাসির যেটা মোম বা আগুন আগে বুঝতে পারেনি।
মোম কয়েক সেকেন্ডই বুঝতে পারলো ঠিক কি হয়েছিলো বা এখন হয়েছে।
মোম একটা চিৎকার দিলো। আগুন আচমকা জেগে মোমকে দেখতে পেলো।
মোম চোখ বন্ধ করে এক নাগাড়ে আমার সন্তান, আমার সন্তান বলে চিৎকার করছে পেটে হাত দিয়ে।
আগুন কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা। আগুনের হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে মোমের ব্যাকুল আর্তনাদের কান্না দেখে। পরিস্থিতি ভীষণ ভয়ংকর হয়ে গেলো নিমিষেই। আগুনের মাথা কাজ করছেনা।
.
.
চলবে…………

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here