প্রিয়জন❤Part-05

0
4868

প্রিয়জন❤Part-05
Writer-Moon Hossain

[১পার্ট রোমান্টিক গল্প হিসেবে লিখেছিলাম কিন্তু পোস্ট করার সময় ইডিট করে ভেতরে ইসলামিক ঢুকিয়েছি সেজন্য গল্পের প্রথম টুকু অন্যরকম হয়েছে।ইসলামিক গল্পে বিয়ের আগে প্রেম করা নিয়ে অনেকেই উল্টো পাল্টা কথা বলেছেন তাই ট্রিকস করে বিয়েটা দিতে হলো আগেই।এখন শুরু হবে আসল প্রেম সো কেউ কিছু বলতে পারবেন না ]
আগুন- সত্যিকারের ভালোবাসা নাকি কখনো হারায়না। আমার বেলাও তাই হয়েছে। মোমকে নিয়ে অতটা সৃত্মি আমার ছিলোনা তবে যেটুকু সৃত্মি ছিলো সেটাই মোমের প্রতি আমার ভালোবাসা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ বিদেশে থেকেছি। ওখানকার কালচারে বড় হয়েছি। মেয়েদেরকে সেখানে যেনো টাকার দাঁড়িপাল্লায় মাপা হয়। আমার বন্ধুরা সারাক্ষণ মেতে থাকতো বিদেশি মেয়েদের নেশায়। আপনজনের কাছ থেকে দূরে আসার দুঃখ ভোলার একমাত্র ঔষধ নাকি মেয়ে।
পড়তে আসা দেশের ছেলেরা ডজন ডজন গার্লফ্রেন্ডস বানিয়ে রাখতো। আজকাল নাকি এটাই ফ্যাশন। গার্লফ্রেন্ড না থাকলে নাকি হায়ার লেভেল স্ট্যাটাসে উঠা যায়না। বাবা মায়ের পাঠানো টাকা সবটাই আমোদ প্রোমোদের খরচে কাটাতো । আমিও একসময় সবার মতোই হয়ে যায়। আমারও সুন্দরী মেয়েদের সাথে উঠতে বসতে হতো কিন্তু কেউ আমার মন জয় করতে পারেনি। আমি সবাইকে একরকম চোখে দেখতাম। সবাইকে জাস্ট ফ্রেন্ড ভাবতাম।
বিচিত্র কারণে মেয়েরা আমার পেছনেই ঘুরে বেড়াতো।
সব মেয়েরা ছিল প্রচন্ড মর্ডান। প্রচুর সাজগোছ আর উগ্র টাইপের পোশাক পড়তো। এরা কেউ প্রকৃত সুন্দর ছিলো না। মনে হতো সুন্দরী হওয়ার ভান করে রয়েছে।
আমি অন্যদের মতো বাবার টাকায় আয়েশ করে কাটিয়েছি। প্রচুর খরচ করতাম বন্ধুবান্ধব, ডিস্কো, বারে।
কিন্তু কোথাও যেনো আমি আমার মনটা একজনের কাছে রেখে এসেছিলাম।
হ্যাঁ আমি বিবাহিতা ব্যাচেলর। যার স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক কোন সম্পর্ক পর্যন্ত নেই।
বিদেশে যাওয়ার আগে বাবা তার বন্ধুর মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলো হঠাৎ।
আমি ফুটবল খেলছিলাম স্কুল মাঠে।
হঠাৎ বাবা এসে আমাকে বাসায় নিয়ে গেলো। মা দেখলাম আঁচলে মুখ ঢেকে হাসছে।
আমাকে কে যোনো গোসল করিয়ে পাজামা পান্জাবি পরিয়ে দিলো।
তারপর বিছানায় বসা মাত্রই মৌলবি এসে আমাকে বলল….বাবাজি বলুন কবুল।
কি সর্বনাশের কথা।
আমি কিছুতেই কবুল বললাম না। বরং ভয়ে কেঁদে ফেললাম।
বাবা ধমক দিয়ে বলল….ছেলে হয়ে কান্না করো কেনো।
বিয়ের সময় ছেলেরা হাসে। তোমাকে আমরা বউ সাজিয়ে অন্যের বাড়িতে পাঠাচ্ছিনা।
বিয়ে সমপন্ন হওয়া মাত্রই সবাই মিষ্টি মুখ করাতে লাগল একে অন্যকে।
তখনই মায়ের কোলে ফুটফুটে একটা মেয়কে দেখলাম লাল রংয়ের ফ্রক পড়া।
মা বলল…. ওর নাম মোম। তোমার আরমান আংকেলের মেয়ে। মোম হচ্ছে আমাদের বাড়ির বৌমা।
বাবা আগুন আজ থেকে মোম হচ্ছে তোমার বউ।
আমার মা বলতে বলতেই মোমকে সোজা আমার কোলে বসিয়ে দিলো।
মোম আমার কোলে বসেই আমার গাল টানা শুরু করলো।
রাগে দিলাম এক ধমক।
মোম তৎক্ষনাৎ আমার গালে একটা কামড় দিলো। আমি তো হতভম্ব মেয়ের কান্ড দেখে।
যে ছেলেকে স্কুলের সবাই ভয় পায় এমনকি স্যার ম্যাডাম পর্যন্ত। আর এতোটুকু মেয়ের কি সাহস।
মোমের দিকে চোখ লাল করে তাকালাম যেনো একটু ভয় পায়। ভয় তো দূরে থাক উল্টে আমার ঘাড়ে প্রচন্ড জোরে কামড় বসালো।
.
.
.
কামড় বসিয়ে মোম সে কি হাসি।
আর আমি হঠাৎ রাগের বদলে ওর ফুটফুটে হাসি দেখছিলাম।
ভালোবাসা কি তখন জানতাম না।
বিদেশে যাওয়ার সময় আমি লুকিয়ে অনেক গুলো চকলেট কিনে মোমকে দিয়েছিলাম।
মা জানতে পেরে সবাইকে এই কথা বলে দিয়ে আমার প্রেস্টিজের বারোটা বাজিয়েছিল।
সবাইকে বলে বেড়াতো এই কথা…. এই যে আপা শুনুন জানেন আমার ছেলে তার বউকে এই প্রথম চকলেট কিনে দিয়েছে। এই টুকু ছেলের কত ভালোবাসা বউয়ের প্রতি দেখুন।
মোম যতবার আমাদের বাসায় আসতো ততবারই আমার কোলে উঠাতে হতো। আমি মোটামুটি বুঝতে পারি তখন সবকিছু তাই লজ্জা পেতাম সবার কাছে।
মোম আমাকে প্রচন্ড রকমের কামড়ে কামড়ে অতিষ্ঠ করে তুলতো। আমিও মনে মনে রেখেছিলাম সব কামড় শোধ আসলে ফেরত দেবো।
বিদেশে যাওয়ার আগে মা কানে কানে বলেছিলো।
-মাই ডিয়ার আগুন অনেক গুলো সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড বানাবে কিন্তু।
-উফ মা আমার লজ্জা করছে। কিসব বলছো?
-এইটুকু ছেলের লজ্জা করে বুঝি। যা বলছি ঠিক বলছি।
কিন্তু সব সময় মনে রাখবি তোর একজন আছে। যে তোর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনবে। তোর বউকে কখনো ভুলবিনা বাবা। আমার মাথা ছুয়ে প্রতিজ্ঞা কর।
মায়ের মাথা ছুয়ে মাকে ওয়াদা করে বলেছিলাম তোমার বৌমা আমার সারা গায়ে যেকটা কামড় দিয়েছে সেগুলোর দাগ কখনো ওকে ভুলতে দেবেনা।
.
.
.
আমি প্রাচুর্যে নিজেকে হাড়িয়ে ফেলেছি ঠিক বাট আমার ওয়াইফকে ভুলিনি। ভুলিনি আমি বিবাহিত ইসলামের অনুসারে।
.
.
মোম আমার বুকের পাঁজরে ছিল।এয়ার্পোটের একেবারে কর্ণারে যেখানে মেয়েদের লাইন সেখানে আমি একটা মেয়েকে দেখে থমকে যায়। মেয়েটার হাসির আওয়াজ ঠিক মোমের মতো ছিলো।
মেয়েটা মুখ চেপে বলছিল মেয়েদের জোরে হাসা ঠিক না। এমনকি কারও অতিরিক্ত হাসা ঠিক না।
সাধারণত তখন অনেক গুলো মেয়ে জোক্স বলছিল।
মেয়েটার ফেস দেখিনি তখন কারণ হিজাব পরা ছিলো।
তারপর বাবা আর আরমান আংকেলের সাথে এই মেয়েটাকেই দেখতে পেলাম।
আমি শিউর এটাই আমার
জান প্রিয়তমা চাইল্ডহুডের ওয়াইফ। যাকে আমি বিদেশে সপ্নে দেখতাম কিন্তু কখনো ফেস দেখতে পারিনি।
মোমের নেকাব তুলে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। বিনা সাজে কি অপরুপা নারী।কালো ভ্র জোড়া ভ্রয়ের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। কালো মনির তীক্ষ্ণ চোখ গুলোর দিকে ছিলাম অবাক হয়ে। হাসিমাখা মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলাম মুগ্ধ হয়ে। এই মেয়ের জন্য আমি সারাজীবন অপেক্ষা করতেও দ্বিধা করবো না। সাজগোছ ছাড়া একটা মেয়ে এতো সুন্দর হতে পারে ধারনার বাহিরে। আমার প্রিয়তমার সামনে মর্ডান সুন্দরী মেয়ে গুলো এক কণা ধুলোর সমান।
আরমান আংকেলের ফেস দেখলাম কালো হয়ে আছে। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম সিচুয়েশন চেঞ্জ হয়েছে।
মোমের কিছুই মনে নেই আর কেউ আমার কথা বলেও নি। মোম যে ধরনের মেয়ে তাতে আমি ভালো বিহেভিয়ার করে ওর সাথে কথা বলতে পারতামনা।
ইচ্ছে করে ওর সাথে সামান্যতেই বাজে বিহেভিয়ার শুরু করি।
রুমের দরজার ফাঁকে ওকে সিল্কের শাড়ি পরে অন্য সব নকল সুন্দরী মেয়েদের মতো সাজগোছে দেখে আমি প্রচন্ড রেগে যায় আর ওকে যাতা বলি। যদিও ওর কোন দোষ ছিলোনা। ও তো অন্য লোকেদের দেখাতে যায়নি ওর এই সৌন্দর্য যার উপর শুধু ওর স্বামীর অধিকার।
.
.
.
মোম -আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে ।
পেটে প্রচুর নদীর পানি খেয়েছি।
আর কখনো নৌকার কিনারায় বসবনা। ভাবিনি একটু দোল লাগতেই এভাবে পড়ে যাব।
আল্লাহ কোথায় তুমি? তোমার বান্দার উপর রহম করো। ভাবিকে দেখলাম প্লেটে খাবার নিয়ে এসেছে।
-ননদিনী আসতে পারি?
-হ্যাঁ ভাবি এসো।
-খেয়ে বিশ্রাম নাও।
-ভাবি নদীর সব পানি খেয়ে সাভার করেছি আল্লাহর দয়ায়। দুই দিনের আয় হলো তোমাদের।
-আল্লাহর রহম আছে আমাদের উপর।
এখন চলো বাহিরে যায়।
বেদেনী মহিলারা এসেছেন সাপ নিয়ে। ছাদে সাপ খেলা দেখাবেন নিশ্চয়ই।
আমাদের দেখার বাহিরে অনেক সাপ এনেছেন।
সবাই সেখানে আনন্দ করছে।
-না ভাবি এখন না। বোরখা পড়তে পারব না খুব গরম।
– আচ্ছা তাহলে আমি যাচ্ছি।
-ভাবি একটা কথা বলবে? বাবার চিৎকার শুনলাম একটু আগে।
-আসলে আগুন সাহেবের সাথে উনার সমস্যা হয়েছে।
-বলো কি? কি সমস্যা?
-তেমন কিছু না। আসলে বিদেশি কালচারে বড় হয়েছে তো তাই এখানকার কোন কিছু জানে না।
দেখলেনা কবিরাজের সাথে ঝগড়া করেছে।
তাই বাবা উনাকে চলে যেতে বলেছেন।
.
.
.
-ভালো হয়েছে। উনাকে দেখলে আমার ভেতরে কেমন যেনো অস্থির ভাব হয়।
আয়েশা ভয় পেয়ে বলল.. কি সর্বনাশের কথা।
তুমি উনাকে নিয়ে সপ্ন দেখো নাকি আজকাল?

-ছিঃ ভাবি। কিসব বলো একটা বেগানা লোককে নিয়ে।
-যাক বাবা। আল্লাহ যা করেন সবার জন্য করেন।
আচ্ছা মোম তুমি কি জানো মেয়ে হয়ে আমার তোমাকে ছুঁতে ইচ্ছে করে। তাহলে ভাব একবার তোমার স্বামী তোমাকে দেখলে কি করবে?
-উফ ভাবি তোমার সব বাজে কথা। আমাকে কেউ টাচ করলে তার চোখ আমি গেলে দেব। ছেলে যখন হওনি তখন আফসোস করোনা ভাবি।
.
.
গ্রামের বিয়ে উৎসব সাদামাটা করে হলো। বিয়ের দিন মেয়েরা মোমকে শাড়ি পরতে বলল কিন্তু মোম ভয়ে পড়লো না।
শাড়ির নাম শুনলেই আগুনের কথা মনে পড়ে যায়।
ময়মনসিংহ মোমরা এসেছে বিকেলে।
আরমান ঠিক করেছে মোমের বিয়ে দিয়ে দেবে তাড়াতাড়ি।
আর সেটা আগুনের আড়ালে এবং মোম যেনো কিছুতেই জানতে না পারে তার আগুন নামের কারো সাথে বিয়ে হয়েছিল।
রাতে মোমের জানালার নিচে আগুন গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মোমের রুমের লাইট অফ হওয়া পর্যন্ত আগুন দাড়িয়ে থাকে। এই কাজটা তার খুব ভালো লাগে তাই তো বিদেশ থেকে আসার পর প্রতিদিন এই কাজ করে। ঝড় তুফান কিছুই আগুনকে আটকাতে পারেনা।
.
.
.
মোম ভার্সিটি যেতেই আগুন ওর হাত ধরে ফেলল…
-আগুন ভাইয়া আমার হাত ছাড়ুন। এতো বড় সাহস আপনার? এটা বিদেশ নয়। আমার হাত ছাড়ুন নতুবা এর ফল ভালো হবেনা কিন্তু। আমি কোন অসহায় অবলা নারী নয়।
আগুন -ওর কথা শুনে এমন রাগ উঠল যে ধমক দিলাম জোরে…. আমাকে বলে ভাইয়া। আমি ওর হাত চেপে বললাম… আরেকবার ভাইয়া বললে তোর খবর আছে। আমি তোর কোন কালের ভাই??? তোর তো নিজের ভাই আছে আর আমর ঘরে বোনও আছে….
মোম হতভম্ব আগুনের কথা শুনে। কি ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়েছে আল্লাহ তার সাথে।
-ভাইয়া গ্রামের জ্বীন আপনার উপর ভর করেছে।
-সো ওয়াট?
-চিকিৎসা প্রয়োজন আপনার।
-কি চিকিৎসা?
-আপনার কানে গরম তেল ঢালতে হবে। চোখে মরিচের গুড়ো দিতে হবে এবং পা থেকে মাথা পর্যন্ত ধোলাই করতে হবে। গ্রামের জ্বীন তাই গ্রাম্য চিকিৎসা।
আগুন হতভম্ব। আগুন হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পাচ্ছেনা।

.
.
.
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here