প্রিয়জন❤Part-08

0
3333

প্রিয়জন❤Part-08
Writer-Moon Hossain

[এক্সামের জন্য প্রচন্ড বিজি তাই ফেসবুকে আসতেই পারিনা]
আকাশ খুব মেঘলা।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। সকাল বিকেল থেকে বৃষ্টি দুই দিন ধরে। । মোমের ভীষণ জ্বর। মোমের চোখের পানি গুলো যেনো বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে যাচ্ছে।
মোমের প্রচন্ড লেভেলের জ্বর।
আরমান বেশ চিন্তায় আছে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে।
আশরাফ তার বাবাকে আস্থা দিয়েছে ঐরকম বিদেশ ফেরত উগ্র টাইপের ছেলের সাথে তার বোনকে যেতে দেবেনা কোনোভাবেই।
.
.
মোম চোখ মেলে দেখলো আগুন তার সামনে দাড়িয়ে আছে।
আগুন মোমের কাছে আসলো কিছুটা।
আগুন বলল…Hi, What’s up?? মোমের হ্রদয়ে জ্বর বইতে লাগল অস্থিরতার।
মোম ছটফট শুরু করতে লাগলো।
আগুন মোমের মাথায় পানি ঢালছে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আগুন-বললে নাতো কেমন আছো?
মোম ইতস্তত করে বলল…আমি নিজেও জানিনা কেমন আছি।
-মাথা ব্যাথা করছে?
-হূ
-আমি মাথা টিপে দিচ্ছি দেখবে সেরে যাবে।
-আচ্ছা।

আগুন আবার বলল… তোমাকে নিতে এসেছি বউ।
বউ ডাক শুনে মোম চমকে গেলো।
-টেবিলের খাবার গুলো এখনো প্লেট ভর্তি। তারমানে কিছু খাওয়া হয়নি?
এজন্যই তো সুস্থ হচ্ছোনা।
দেখি দেখি হা করো।
মোম হা করলো অল্প। আগুন মোমকে খাইয়ে দিচ্ছে।
আগুন বলল… তুমি না খেয়ে থাকলে আমি খাই কি করে বলো??
মোমের বলতে ইচ্ছে করছে আপনি কি খেয়েছেন?
কিন্তু লজ্জায় বলতে পাচ্ছেনা কিছু।
আগুনকে কেনো যেনো প্রচন্ড লজ্জা লাগছে মোমের।
তবুও মোম নরম স্বরে লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল…আপনি খেয়েছেন?
-না
-কেনো খান নি?
-তুমি জানো না আমি কেনো খাইনি বউ।
বিকট এক শব্দ হলো বজ্রপাতের। মনে হয় পাশেই বজ্রপাত হয়েছে।
.
.

মোম তাকিয়ে দেখলো পুরো কামরা খালি।
বাহিরের ঝিরিঝিরি বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
বৃষ্টির শব্দ গুলো যেনো কারও পায়ের নূপুরের শব্দ।
তালে তালে বৃষ্টির শব্দ নূপুরের শব্দ হয়ে ছন্দের শব্দের সৃষ্টির হয়েছে।
চারদিক অন্ধকার। বিদুৎ চমকাচ্ছে আর বিকট আওয়াজের বজ্রপাত হচ্ছে একটু পর পর।
বেলকুনির দরজা খোলা। রাশি রাশি বাতাস ঢুকছে কামরায়।
জানালার পর্দা ভিজে ভেতরে বৃষ্টির পানি ঢুকছে ঝাপটা দিয়ে।
টেবিলের খাবারটাও আগের জায়গা মতোই আছে।
মোম জ্বরের ঘোরে আগুনকে সৃষ্টি করেছিলো। মোমের অবচেতন মনে আগুনের ভাবনা ছিলো তাই আগুনকে সরাসরি কল্পনায় সৃষ্টি করে ফেলেছে।
.
.
আগুন বসে আছে তার রুম অন্ধকার করে খালি গায়ে।
আগুনের মা ঘরে ৩য় বারের মতো খাবার নিয়ে এলো।
-বাবা খেয়ে নাও কিছু।
আগুন নরম স্বরে বলল…না।
-তোমার শরীর খারাপ করবে তো।
বিয়ে যখন হয়েছে তখন তো বৌমাকে আসতেই হবে এই বাড়িতে।বিয়ে করা বউকে দেবেনা মগের মুল্লুক নাকি?
তোর বাবা তো সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। পাচঁ মিনিটের ভেতর বৌমাকে এই বাড়িতে দেখতে পারবি।
-মা বাবাকে বলো কিছু করতে হবেনা।
আমি নিজেই নিজের সমস্যা সমাধান করব।
-কিন্তু এটা অনেক টাফ সমস্যা।
আগুন মায়ের হাত ধরে বলল… তুমি জানো তোমার ছেলে পারেনা এমন কোন কাজ নেই।
আমি অসম্ভব কে সম্ভব করতে পারি সেটা তুমি জানো।
তোমার ছেলে হারতে শিখেনি।
.
.
-এখন কোথায় যাচ্ছিস বাবা?
এই বৃষ্টিতে?
আগুন ব্লেজার পড়ে নিয়ে সোজা ড্রাইভ করে মোমের জানালা নিচে দাড়ালো।
মোম খুব কষ্টে জানালার সামনে এসে দাড়ালো।
মোম ভাবছে আগুনের সামনে সে কিভাবে দাড়াবে।
মোম অস্পষ্ট রুপে আগুনকে দেখতে পেলো।
আগুনের ফুলকির মতো তীক্ষ্ণ চোখ দুটো মোমের দিকে তাকিয়ে আছে।
এই বৃষ্টিতে কেউ বাহিরে বের হয়না আর আগুন ছাতা ছাড়ায় দাড়িয়ে আছে রোডের মাঝখানে।
আগুনের দুইপাশ দিয়ে চলন্ত গাড়ি যাচ্ছে।
এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে মোম প্রচন্ড ভয় পেলো।
মোম বিছানার সাইডে ফ্লোরে শুয়ে আছে।
আগুনের দৃষ্টি ভোলার মতো না।
আগুনের দৃষ্টি বার বার কিছু বলতে চাচ্ছে মোমকে।
আগুনের জন্য প্রচন্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে মোমের।
যদি জ্বর হয়, যদি বড় রকমের অসুখ হয়, যদি কোন ধরনের এক্সিডেন্ট হয়।
আগুন পুরোপুরি ভাবে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টির উপেক্ষা করে রোডে দাড়িয়ে আছে।
আগুনের হ্রদয় একটা কথায় বলছে… আমার প্রিতমার জন্য আমি যুগ যুগ ধরো অপেক্ষা করবো এভাবে।
আগুন দেখতে চাচ্ছে মোম তার কাছে আসে কিনা। রাত হয়ে গেছে তবুও মোম এলো না। আগুন প্রচন্ড রেগে আছে।
জেদ করে রাতেও দাড়িয়ে আছে এই বৃষ্টিতে।
আগুনের শরীর হঠাৎ নেতিয়ে গেলো।
আগুন সেন্সলেস হয়ে গেলো।
মোম এটা পর্দার আড়াল থেকে দেখলো।
মোমের হ্রদয় যেনো রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে।
মোম কি করবে বুঝতে পাচ্ছেনা।
মোম শেষে আরুর কাছে ফোন করে আগুনে বিষয়ে জানালো।
আগুনকে তার বাবা নিয়ে যাচ্ছে সেন্সলেস অবস্থায় গাড়িতে করে।
মোম পর্দার আড়াল থেকে এটা দেখলো।
মোম ফ্লোরে বসে আছে।
মাথায় কেউ হাতুড়ি দিয়ে বারি দিচ্ছে এমন লাগছে মোমের।
.
.

মোমের টেলিফোনের রিংটোন বাজছে….
মোম টেলিফোন ধরে আছে। ওপাশ থেকে কারও নিঃশ্বাস ভেসে আসছে।
মোমের হ্রদয় কেঁপে উঠলো।

আগুন ওপাশ থেকে বলল….আমি চাইলে আমার প্রিয়তমাকে আমার কাছে পাঁচ মিনিটের ভেতর আনতে পারি। এতে কারও সাধ্য নেই আমাকে বাঁধাা দেওয়ার।
কিন্তু আমি তা করবো না।
আমি জোর করে ভালোবাসা আদায় করলে এতে সুখ পাবনা। আমি চাই আমার প্রিয়তমা আমার কাছে নিজ থেকে আসুক।
আমি অপেক্ষা করবো যুগ যুগ ধরে। দেখব আমার ভালোবাসার টানে কিভাবে না এসে পারে।
আমি এরজন্য মৃত্যুকেও বরং করে নেবো। আমিও দেখতে চাই আমার ভালোবাসার জোর কতখানি।
মোম চুপ করে থেকেও যেনো অনেক কিছু বলতে চাচ্ছে।
খট করে ফোনের রাখার আওয়াজ হলো।
আগুন শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে আছে।
ঝিরিঝিরি করে পানি পড়ছে শাওয়ার থেকে।
এদিকে মোমও এই জ্বরে শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে আছে।
প্রচন্ড ঠান্ডায় মোম জমে ক্ষীর হয়ে গেলো।
কাজের মেয়ে মোমের এই অবস্থা দেখে সবাইকে জানালো।
.
.
.
রাতে মোমের উপর দিয়ে একটা ঝর গেলো।
রাতে পুরোপুরি বেহুশ ছিলো মোম।
এদিকে আগুনও বেহুশ ছিলো পুরো রাত।
আগুনের জন্য দুটো ডক্টর আনা হয়েছে।
আগুনের মা বাবা আরু সবাই মিলে কাদঁছে।
আরু আগুনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল কাঁদতে কাদঁতে বলল. .. মা ভাইয়া কি ঠিক হবেনা??

.
.
আগুন লক্ষ্য করলো মোম একটা শাড়ি পড়ে রান্নাঘরে কাজ করছে।
আগুন মোমের কোমর জরিয়ে ধরলো পেছন থেকে।
আগুনের নিশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মোমের ছোঁয়াা পেয়ে।
মোমের ঘাড়ে মুখ গুজে আগুন বলল…তোমার গায়ের সুভাস সবথেকে আলাদা।
পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকনা কেনো তোমাকে আমি ঠিক খুঁজে বের করে আমার বুকে লুকিয়ে রাখব।
মোমকে সামনে দিকে ঘুরিয়ে মোমের হাসিমাখা মুখশ্রী দেখে আগুন থমকে গেলো।
যেনো কত যুগ ধরে মোমকে দেখেনি আগুন।
আগুনের তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মোমকে হাজার বছর দেখেও তৃষ্ণা মিটবেনা।
যত দেখছে ততই তৃষ্ণা বেড়ে যাচ্ছে আগুনের।
আগুনের চোখে পলক পড়ছেনা। আগুন মোমকে দেখে সবকিছু ভুলে যায়। মনে হয় সে জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝিতে আছে।
.
.
.
আগুন মোমের গোলাপি ঠোঁটে আঙুল রাখলো তখনই আগুনের জ্ঞান ফিরে এলো।
আগুন এক ঝটকায় বেডে উঠে বসলো।
সপ্নের মতোই মনে হচ্ছে এখনো মোমের সুভাস চারদিকে বইছে।
আগুন এক দৌড়ে রান্না ঘরে গেলো… আগুনের শরীর প্রচন্ড লেভেলের দূর্বল তাই ফ্লোরে পড়ে গেলো।
.
সকালে মোম মোটামুটি সুস্থ হলো। শরীর একটু দূর্বল।
মোমের পাশে সারা রাত তার ভাইয়া আর ভাবি ছিলো।
আরমান সারা রাত মসজিদে কাটিয়েছে মেয়ের জন্য।
মোমের মা নিজের ঘরে জায়নামাজে বসে ছিলো।
মোম হঠাৎ করে বেলকুনিতে গেলো।
মোম আগুনকে প্রচন্ড ফিল করতে লাগলো।
আগুন কেমন আছে সেটা না জানা পর্যন্ত মোমের শান্তি লাগছেনা।
আগুনকে না দেখা পর্যন্ত তার অস্থিরতা কমছেনা।
মোমের ভেতর মারাত্মক অস্থিররতা শুরু হয়েছে।
এই অস্থিরতার কারণে তার মৃত্যু হবে বলে মোম ধারণা করছে।
সকাল সকাল মোম ভার্সিটি চলে গেলো।
ভার্সিটিতে মোম খুব ভোরেই গেলো কাউকে কিছু না জানিয়ে।
এতো ভোরে ভার্সিটিতে কোন ক্লাস নেই তবুও মোম ভার্সিটি গেলো অজানা এক কারণে।
.
.
মোম একাই ড্রাইভ করছে।
এখনো ঝির ঝির বৃষ্টি পড়ছে।
চারদিকে বাতাস বইছে।
হঠাৎ মোমের সামনে দুটো গাড়ি এসে পথ আটকালো।
মোম কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়ি থেকে অনেক গুলো ছেলে বের হলো।
সবার মুখ রুমাল দিয়ে বাধা।
মোমকে সবাই ঘিরে ফেললো।
মোমের মুখ চেপে ধরাতে চিৎকারও দিতে পাচ্ছে না সে।
মোমের কলিজা ফেটে চিৎকার আসছে। প্রচন্ড ভয়ে মোম আঁতকে উঠলো।
মোমের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
রাস্তা পুরো ফাঁকা।
মোম আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছে।
তার অন্তর আত্মার কাকুতি মিনতি ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
একটা ছেলে মোমের বোরখা একটানে খুলে ফেললো। মোমের জামার অনেকাংশ ছিড়ে যাওয়াতে ধবধবে ফর্সা শরীর দেখা যাচ্ছে।
সবাই মোমকে দেখে অবাক।
এতো সুন্দরী মেয়ে দেখে কেউ লোভ সামলাতে পাচ্ছেনা…
সবাই বলছে এই সুন্দরী কে আগে ক্লাবে নিয়ে যেতে। মোমের জীবন কি এখানেই শেষ।
তার কত সপ্ন ছিল।
সব সপ্ন এভাবে ভেঙে গেলো।
এই জীবনে স্বামী সন্তান সুখ সে কি পাবে না। মোম আল্লাহর কাছে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাচ্ছে। মোম ভয়ে জ্ঞান হারালো একসময়। এমনিতেই মোমের দূর্বল শরীর।
ছেলেগুলো মোম কে নিয়ে ক্লাবের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে তখনই একটা ব্ল্যাক কার এসো দাড়ালো ওদের সামনে……..
.
.
.
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here