প্রিয়জন❤Part-11

0
3163

প্রিয়জন❤Part-11
Writer-Moon Hossain

মোম অনেক ক্ষণ ধরে চোখ বন্ধ করে আছে। কিছুতেই চোখ খুলছেনা। মোমের দুই হাত আগুনের হাতের মুঠোয় এখনো।
মোম ভয়ে আর লজ্জায় কুঁকড়ে আছে।
অন্ধকার খালি কামরায় মোম আর আগুনের মতো সিংহ রয়েছে। সিংহের থাবায় মোমের কি হয় সেটা আল্লাহ তায়ালা জানে।
মোম-এভাবে কি থাকা যায়। ভয় লাগছে খুব। কেনো যে জেনে শুনে এলাম এই সিংহের গুহায় আল্লাহ জানে।
আগুন মিটিমিটি হাসছে আর জানালার আবছা আলোয় মোমের মুখখানি দেখছে। মোমের লজ্জা রাঙা মুখশ্রী আগুনের বুকে বিঁধে।
আগুনের ইচ্ছে করে মোমকে আরও লজ্জা দিতে। চূড়ান্ত লজ্জা রাঙা সিচুয়েশনে মোমকে কেমন লাগবে এবং মোম তখন কি করবে তা দেখার বড় স্বাদ জেগেছে আগুনের বুকে।
.
.
.
খালি কামরায় দুজনের নিরবতা চলছে মুখের কথায়। কথা চলছে মনে মনে দুজনায়।
পুরো কামরায় মোমের শ্বাস আর আগুনের প্রশ্বাসের
আওয়াজে দুটো মিলে শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে।
দুটি মন যেনো একাকার হতে চাচ্ছে।
.
.
হঠাৎ মোম বলল…আমি নামাজ পড়ব।
আগুন মুচকি হেসে বলল…আছরের নামাজ তো শেষ আর মাগরিবের নামাজের বিশাল সময় আছে। তো এখন কোন ওয়াক্তের নামাজ?
মোম একটু ভেবে বলল.নফল, নফল নামাজ পড়ব আমি।
আগুন মোম কে ছেড়ে দিয়ে হাসতে লাগল…
আগুন বলল…তুমি খুব চালাক। দেখতে হবেনা কার তুমি?
মোম ধীরে ধীরে পা দিল যাওয়ার জন্য।
আগুন পেছন থেকে মোমের হাত ধরে বলল…পালিয়ে কোথায় যাচ্ছেন কোথায় সুন্দরী? আজ আপনার সৌন্দর্যে সাতাঁর কাটতে ইচ্ছে হচ্ছে।
মোম বলল… আপনি কি হাত ধরার চাকুরী নিয়েছেন ?? সব সময় সময় অসময়ে আমার হাত ধরেন শুধু শুধু। কি আজব!
আগুন মোমের হাত মোজা খুলে ফেললো। মোম বাঁধাা দিয়ে পারল না।
-আমার প্রিয়তমার কোমল হাত ধরতে চাকুরির নিড নেই। আমার অধিকারের
লাইসেন্স আছে আমার প্রিয়তমার হাত ধরার।
.
.
মোমের খুব লজ্জা করছে এই মূহুর্তে। আগুন সব সময় মোমের সাথে পাটিসাপটার মতো সেঁটে থাকে। আগুন বোঝেনা এতে মোমের লজ্জা করে। আর কি সব আজব কথা বলে।
-একি আপনি দরজা লাগাচ্ছেন কেনো?
-তোমার সমস্যা?
-দরজা খুলুন।
-কেনো বাহিরে যাব।
-এসেছো নিজের ইচ্ছেই যেতে হবে আমার ইচ্ছেই।
নক করেও লাভ নেই।
কেউ আমার রুমের ধারে কাছেও আসবেনা।
সবাইকে বলে দিয়েছি তুমি এলে আমার রুমের আশেপাশেও যেনো কেউ না আসে। সো এনার্জি নষ্ট করোনা। এনার্জি বাঁচিয়ে রাখ। ফিউচারে কাজে দেবে।
.
.
.
মোম দরজা নক করতে করতে বলল…দরজা খুলুন দয়া করে। সবাই কি ভাববে?
-কি ভাববে??
আমার কিছু যায় আসেনা।
-শুনুন আমার আসে।
-কেনো?
-কেনো মানে? এটা বাংলাদেশ আপনার লন্ডন নয়। এখানে যুবক যুবতিরা বিয়ে ছাড়া দিনে দুপুরে বন্ধ কামরায় থাকতে…….
মোমের হেচকি উঠে গেলো পুরো কথা না বলে।
আগুন মোমের কাছে এসে বলল…বিয়ে ছাড়া কি?? বলো??
মোমের টোল পড়া চিবুক তুলে লজ্জা রাঙা মুখশ্রী ধরে বলল…. আমরা কি বলো তো?
মোম নিশ্চুপ।
-বুঝেছি লজ্জা পাচ্ছো।
আচ্ছা সহজ করে বলছি। আমরা কি বন্ধু?
-না
-আমরা জিএফ বিএফ??
-না
-আমরা স্বামী স্ত্রী?
-হ্যাঁ। হ্যাঁ বলেই মোম জিহ্বায় কামর দিলো।
আগুন হেসে বলল…এতোক্ষণে মুখ দিয়ে সুন্দর চিরন্তন সত্যিটা বের হলো।
আগুন মোমের আরও কাছে এলো।
মোমের হ্রদয় হাই স্প্রিরিটে বাড়তে শুরু করলো।
আগুন বলল… জানতে চাচ্ছিলে ডোর কেনো লক করলাম??
মোম কোন কথা বলছেনা দেখে আগুন আবার বলল… বলছিলে না সবাই কি বলবে?
মোম নিশ্চুপ।
আগুন হেসে বলল…. তুমি কিন্তু স্বীকার করেছো আমরা স্বামী স্ত্রী। স্বামী স্ত্রী রাতে বা দিনে ডোর লক করতেই পারে। এটা তাদের পার্সোনাল ম্যাটার। এটা নিয়ে কারও যায় আসেনা।
আর দরজা বন্ধ করে স্বামী স্ত্রী কি করে বলেতো???
মোম এবার বলল…জানিনা যান!
আগুন মোমকে পেছন থেকে হালকা ভাবে মোমকে জরিয়ে ধরে বলল…. জানো না যখন তখন আমি প্র্যাক্টিক্যালি জানিয়ে এবং বুঝিয়ে দিতে পারি। বন্ধ নিস্তব্ধ অন্ধকার রুম,সামনে বেড। সবকিছু কিন্তু রেডি আছে।
মোম আগুনের পেটে জোরে একটা কিল দিয়ে বলল…. লাগাম ছাড়া কথা বার্তা। লজ্জা নেই এতোটুকু?বিদেশে সব জলাঞ্জলি দিয়েছেন? নির্লজ্জ ব্যাহায়া কোথাকার।
আপনার ঠোঁট দুটো সেলাই করা দরকার।
আগুন হেসে বলল…. ঠোঁট খুব ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস। এটা দিয়ে অনেক কাজ আছে। সো একটা সেলাই করা যাবেনা।
-আপনি আসলেই একটা লাগামহীন অসভ্য বর্বর নির্লজ্জ লোক।
-তো আমি কি মানা করেছি। আর আমি তো আমার ধর্মমতে বিয়ে করা স্ত্রীর সাথেই নির্লজ্জ লাগামহীন হয়েছি।
মোম বুঝতে পেরেছে এই লোকের সাথে কথা বলে পারা যাবেনা।
.
.
.
মোম -কামরায় খাবার আগেই রেডি ছিল। পানিও পর্যন্ত আনা ছিল।
আমি সোফার সামনে দাড়িয়ে আছি হাত ধুয়ে। আর উনি আগেই সোফায় বসে আছেন।
উনি বললেন… দাড়িয়ে কেন বস।
আমি গিয়ে অন্য সোফায় বসলাম।
উনি মুচকি হেসে সোজা আমার গা ঘেঁষে বসলেন।
যতবারই উনার গায়ের সাথে আমা গায়ে স্পর্শ হয় ততবারই আমি আমার মধ্যে থাকিনা।
মনে হয় অজানা কোন জাহানে চলে এসেছি।
সেই জাহানে উনাকে ছাড়া কাউকে দেখতে পাইনা।
.
.
.
উনি বললেন – তোমার বডির সাথে আমার বডির টাচ হলেই মনে হয় আমার বডিতে হাই বোল্টেজের কারেন্ট রানআপ করছে।
আমি সরে গিয়ে বললাম-তাহলে দূরে থাকুন। তা না হলে শকড লাগবে।

– আমার প্রিয়তমার শকড খেয়ে মরে যেতেও রাজি। অসম্ভব ভালো লাগে তোমার স্পর্শ।
.
.
আমি বিসমিল্লাহ বলে বললাম -নিন শুরু করুন।
– এখানে কেন এসেছো তুমি?
-আপনাকে খাওয়াতে।
-তাহলে খাওয়াচ্ছো কোথায়?
-মানে?
উনি অভিমান করে বললেন তোমার হাতে খাব। নইলে না। দ্যাটস ফাইনাল।
.
.
.
আমি চামচ দিয়ে খাবার তুলে দিতেই উনি রাগে এমন ভাবে তাকালেন।
– চামিচ দিয়ে খেলে আমি আমার প্রিয়তমার হাতের টেস্ট পাব?
এভাবে তো আমি নিজেই খেতে পারি তো তোমার হাতে খাওয়ার জন্য না খেলে থাকলাম কেনো? তুমি চাও আমি না খেয়ে থাকি। না খেয়ে না খেয়ে মারা যায়।
উনার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললাম… হুশশশ আল্লাহর দোহায় এসব বলবেন না। আপনি আমার আয়ু নিয়ে শত বছর বেচে থাকবেন। আমিন।
উনিও আমার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল…How dare you? তোমার আয়ু মানে? আমি আর তুমি এক সমান বাঁচব।
আর কখনো এমন কথা বললে তোর খবর আছে।
আমি মুচকি হাসলাম।
.
.
.

আমি উনার পছন্দের বিরিয়ানি হাত দিয়ে উনার মুখে তুলে দিলাম।
উনি মুখে তুলে নিলেন আমার আঙুল গুলো সহ।
-বিরিয়ানির সাথে সাথে আঙুলও খেয়ে ফেলেছেন ।
-বিরিয়ানির সাথে তোমার আঙুলের টেস্টও চলবে।

.
.
-যাহা বলবেন মহারাজ।
-আচ্ছা তুমি খাওয়ানোর আগে কি বললে?
-কেন বিসমিল্লাহ!
আচ্ছা আপনি বিসমিল্লাহ বলেছেন?
-দাড়াও ভেবে বলছি।
উনি একবার চোখ বন্ধ করে আরেকবার চোখ খুলে বললেন নাতো।
আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম… আপনার খাওয়া দাওয়া বন্ধ। আমার আঙুল ছাড়ুন।
আপনি কেন বিসমিল্লাহ বলেন নি?
উনি অপরাধীর মতো বললেন -সরি, ফর গিভ মি। আমার মনে ছিল না খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলতে হয়।
এবারের মতো মাফ করে দাও।
.
.

আগুন- খাবারের আগে ওর বিসমিল্লাহ বলাটা ভালো লাগল। ছোটবেলায় ওদের বাড়িতে গেলে আন্টি আমাকে খাওয়ানোর সময় বিসমিল্লাহ বলতো আর আমাকেও বলতে বলত।
আমি বললাম -জানো প্রিয়তমা, আমি
বিদেশ যাওয়ার পর কখনো বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করিনি।
-কেন?
– ওখানে তোমার মতো কেউ ছিলো না। যে আমাকে চোখ রাঙিয়ে বিসমিল্লাহ বলতে বলবে। না বললে বলবে আপনার খাওয়া দাওয়া বন্ধ।
.
.
উনার কথা শুনে দুফোটা পানি পড়ে গেলো চোখের।
উনি সাথে সাথেই আঙুল দিয়ে চোখের পানি ছুয়ে বললেন -আমার প্রিয়তমার মুক্তোর মতো চোখের পানির কণা সবচেয়ে মূল্যবান।
.
.
উনাকে এক ঘন্টা ধরে খাওয়ালাম। বাচ্চাকে খাওয়ানো সহজ উনার থেকে।
আমি যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
অমনি উনার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম। উনি আমাকে সামলানোর জন্য আসতেই দুজন মিলে বিছানায় পড়ে গেলাম।
উনি আমার খুব কাছে তাই খুব বেশি লজ্জা আর ভয় পেলাম।
উনি আমার দুই হাত উনার হাতের মুঠোয় করে ধরে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলল…প্রিয়তমা সবকিছু রেডি আছে। তাহলে চলো আমরা আজ হারিয়ে যায় প্রেমের সমুদ্রে।
কথা শুনে ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
-আল্লাহ আমাকে বাচাও বিপদ থেকে।
-আমার থেকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা সুন্দরী। এটা আগুনের রাজ্য হা হা হা!!

.
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here