প্রিয়জন❤Part-14

0
3109

প্রিয়জন❤Part-14
Writer-Moon Hossain

[#Dangerous_Lover দিয়ে আজকের দিন থেকে গল্পের জগতে পা দিয়ে ছিলাম গত বছর। আজ আমার একবছর পূরণ হলো ]
আগুন-কি বললে তুমি??
তালাক মানে??
আমি তোমাকে কেন তালাক দেব???
-হাত ছাড়ুন বলছি। আপনার সাথে আমার যায়না বলে তালাক দেবেন।
আপনি আমার সাথে থাকতে পারবেন না বলে তালাক দেবেন।
নতুন কাউকে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী বিয়ে করবেন বলে তালাক দেবেন।
আগুনের মাথা গরম হয়ে গেলো চরম আকারে। মনে হচ্ছে বুকে কেউ পাথরের আঘাত করছে।
আগুন নিজের হাত মুঠোয় নিয়ে বলল- প্রিয়তমা আরেকবার তালাকের নাম নিলে কেয়ামত ঘটিয়ে ফেলব।
এই শব্দটা আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন আর না শুনি।
-শুনলে কি করবেন?
-আমার হাত চলবে।
-আমাকে মারবেন???
ঠিক আছে এই নিন আঘাত করা শুরু করুন।
-প্রিয়তমা প্লিজ রাগ উঠাবে না। আমার সহ্যের সীমা পার হয়ে যাবে।
-এটাই চাই। আঘাত করুন আমাকে ।
আমি এই কথা একশত বার বলব। তালাক। বললাম কি করবেন।
.
.
.

আগুন মোমকে অবাক করে দিয়ে সোজা মোমের গলা চেপে ধরে বলল- এবার বল দেখি। তোকে আমি কেন আঘাত করব? তুই আমার ওয়াইফ।
মোম কথা বলতে পাচ্ছেনা।
আগুন প্রচন্ড রেগে আছে। আগুন বলল-
আজ এর শেষ দেখে ছাড়ব। তোমরা কি ভেবেছো আমাকে?
বিয়ের সময় মনে ছিলো না ফিউচারে কি হবে?
এখন তাহলে ফিউচারে কি হবে না হবে সেটা নিয়ে ভাবনা কিসের?
আমি তোমার সাথে থাকব মৃত্যুর পরেও। আমি তোমার আর আমার মধ্যে সামান্য কণাকেও এলাউ করতে পারিনা সেখানে আস্তো মানুষকে এলাউ করব?
তোমাকে কে বলেছে আমরা সুখী হব না? আমাদের সংসার টিকবে না?
কে বলেছে তোমাকে আমার মোহ দুই দিনেই কেটে যাবে তোমার থেকে???
আজ সব উওর দিতে হবে।
আজ তোমাকে ছাড়ছিনা।
নিজেদের মতো একটা কিছু ভেবে নেবে আর আমি তোমাদের কথা শুনে আমার এতোদিনের আশা ভরসাকে মাটি চাপা দিয়ে দেব।
.
.
মোমের চোখ থেকে পানি পড়া শুরু করেছে।
মোমের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
মোম হাত দিয়ে নিজেকে আগুনের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে বাট পাচ্ছেনা।
মোম মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে।
.
.
.
আগুন হঠাৎ মোমকে ছেড়ে দিয়ে বলল- ওহ গড এটা কি করছিলাম আমি।
মোম নিচে বসে পড়েছে। জ্ঞান হারানোর উপক্রম।
মোম কাশছে প্রচন্ড ভাবে।
গলা ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে।
আগুনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।
মোম বলেছিল আগুন মোমের একটা ভুলের জন্য মোমকে ভেঙে গুড়িয়ে ফেলবে। এখন মোমের কথায় সত্যি হলো।
মোম তালাকের কথাটা বার বার বলাতে আগুনের মাথা ঠিক ছিলো না।
আগুন মাটিতে বসে পড়ল।
মোমের দিকে তাকিয়ে মোমের কষ্ট অনুভব করার চেষ্টা করল সে।
আগুন – প্রিয়তমা আমি অনুতপ্ত। আমাকে মাফ করে দাও। আমি ইচ্ছে করে এমন করেনি।
তোমাকে কষ্ট দিলে সেটা হাজার গুন আমার কাছে ফেরত আসে।
মোমের চোখ মুখ ফুলে লাল হয়েছে। মোম কথা বলতে পাচ্ছেনা। গলায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে।
.
.
আগুন মোমের হাত ধরে নিচে বসে আছে মোমের সাথে।
মোমের গালে হাত দিয়ে বলল- খুব কষ্ট লাগছে তোমার? ট্রাস্ট মি আমি এরকম করতে চাইনি।
মোম হাত সরিয়ে নিলো।
আগুন মোমের কষ্ট দেখে নিজেও কষ্ট পাচ্ছে।
আগুন তাড়াতাড়ি করে মোমকে পানি এলো দিলো।
মোম পানি খাচ্ছেনা কিছুতেই।
মোম আগুনের হেল্প নিতে চাচ্ছেনা।
আগুন-ওর কষ্ট সহ্য হচ্ছে না আমার৷ কতটা কষ্ট পাচ্ছে অথচ আমার হাত থেকে পানি পান করবে না। ও ঠিক কাজ করছে। আমিও ওর জায়গায় হলে সোজা মাডার করতাম আমাকে। আর ও তো চুপ করে আছে।
ওর বাবা ভাইয়াকে পর্যন্ত ডাকছেনা।
আমি এবার জোর করে ওকে পানি পান করিয়ে দিলাম।
– দেখ আমার উপর রাগ করা জায়েজ। বাট পানির উপর রাগ করলে তোমার পাপ হবে কিন্তু।
তুমি পানি ফেলে দিতে চাচ্ছো কেন?
অপচয় করা মানে শয়তানের তালে তাল মেলানো। তুমি এটা আমাকে ঐদিন বলেছিলে।
ঔষধ কাজে লেগেছে। পাপের কথা শুনে মোম আমা দিকে তাকালো।
আমি মোমকে পানি পান করিয়ে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলাম।
মোমকে উঠাতে চাইলে মোম হাত দিয়ে ইশারা করে ওর গায়ে টাচ না করতে।
মোম আমি থাকতে দেয়াল ধরে উঠে দাড়ালো। এটা দেখে আমার আরও বেশি কষ্ট হলো।
আমি তৎক্ষনাৎ একটা চেয়ার এনে সামনে রাখলাম।
মোম সেখানে বসল।
মোমের চোখ ফুলে গিয়েছে।
মোম-খুব কষ্ট হচ্ছে। তবে কেন যেন আমি শান্তি পাচ্ছি।
এটাই আমার শাস্তি ছিল। অতি সামান্য শাস্তি ছিল এটা। এর থেকেও বড় শাস্তি কেন উনি আমাকে দিলেন না। উনার এতো বছরের অপেক্ষার আমি কি মূল্য দিচ্ছি। বিয়েতে আল্লাহর রহমত থাকে তাই তো স্বামী স্ত্রী মন বাধা পড়ে যায় অজানা বন্ধনে। উনি আমাকে মনে রেখে আমার জন্য এতো কাল ধরে সপ্ন বুনেছেন। আমাকে নিতে এসেছেন সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে।
উনার এতো সাধনার কি মূল্য আমি দিচ্ছি।
কি করব আমি একদিকে জন্ম দাতা পিতা অন্য দিকে আমার স্বামী।
পিতার কথা মেনে চলতে গিয়ে স্বামীর সাথে অন্যায় করছি।
পিতা মাতার ঋণ কখনো শোধ করা যায়না। সেই পিতা মাতার ঋণের জন্য এখন স্বামীর কাছে অপরাধী হয়ে যাচ্ছি।
আল্লাহ তুমি বলে দাও কি করব? কাকে মেনে চলব আমি? পিতা নাকি স্বামীকে???

.
.
.
উনি আমার জন্য কোথা থেকে যেন গরম দুধ আর মলম নিয়ে এসেছেন।
উনি বললেন – ভেতর থেকে নিয়ে এসেছি। এই দুধটুকু খাও তাহলে আরাম পাবে গলায়। তোমার গলায় ব্যথা কমবে।
খাবারের উপর রাগ করতে নেই।
খেয়ে সুস্থ হয়ে আমার গলা চেপে ধরে আমাকে শাস্তি দেবে। আমাকে এমন শাস্তি দেবে যে আর কখনো তোমার গায়ে হাত না তুলতে পারি। বাট বেশি জোরে চাপ দিয়ে যেওনা তা না হলে উপরে চলে যেতে পারি। শেষে না তোমার গায়ে স্বামী হত্যার স্পট লাগে। আমি জান্নাতে যাব আর তুমি জাহান্নামে যাবে এটা কিন্তু আমার মোটেই ভালো লাগবে না।
উনার কথা শুনে গলা ব্যথা নিয়েও জোরে হেসে ফেললাম।
আমি বললাম- আপনি জান্নাতে যাবেন ?? কোথা থেকে খবর পেলেন??
উনি একটু চিন্তা করে বলল- গ্রাম্য লোকেরা বলে স্বামীর হাতে স্ত্রী মারা গেলে সেই স্ত্রী জান্নাতে যায়। সো ক্যালকুলেশনে বলে স্ত্রীর হাতে স্বামী মারা গেলে স্বামী জান্নাতে যাবে মেবি।
আমি উনার কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। উনি প্রচন্ড ধরনের চালাক হলেও অনেক সরল।
উনার একেবারে সরল মন শিশুদের মতো।
মনের সহজ সরল কথা গুলো কি সহজেই না বলে দিলো।
কিন্তু আমি আমার মনের কথা গুলো কেন সহজেই বলতে পারিনা উনার কাছে।
উনার সাথে কি বাজে ব্যবহারটা করলাম।
উনি আমাকে মেরে ফেললেই আমার মনে শান্তি আসতো।
উনার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম-আমাকে আঘাতে আঘাতে মেরে ফেললেন না কেন? আমি মরলেই আপনি নতুন জীবন পাবেন। এই বিয়ে থেকে মুক্তি পাবেন।
কবুলের মায়া জাল থেকে বের হতে পারবেন।
নতুন জীবন শুরু করতে পারবেন।
“হে আল্লাহ উনাকে সুখী করো। উনার রাগ নিয়ন্ত্রণ করো। উনি যেন সব সময় হাসি খুশি থাকে। উনার জীবনে পরিপূর্ণতা দান করো।
.
.
.
উনি আমার হাত ধরেও ছেড়ে দিলেন।
-না তোমাকে এখন টাচ করছি না। এবার হেপি?? এখন চলো আমার সাথে।
মলম লাগাতে হবে।
উনার পেছনে পেছনে আমি একটা কামরায় গেলাম।
উনি দরজা বন্ধ করে দিলেন।
আমি বললাম -দরজা বন্ধ করলেন কেন? মানুষ কি বলবে?
উনি শান্তস্বরে বললেন- তোমার প্রবলেম হয়েছে বলেই রুমে এসেছি।
তোমার বোরখা খুলে মলম লাগাবো বলেই ডোর ক্লোজ করলাম।
স্বামী স্ত্রীর প্রবলেম সল্ভ করছে বলেই কেউ কিছু বলবে না।
.
.
আমি আর কিছু বললাম না।
আমার ইতস্তত লাগছে বোরখা খুলতে। এটা দেখে উনি বললেন – আচ্ছা যাও আমি অন্যদিকে তাকাচ্ছি।
উনি অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন দেখে বুকের ভেতর কষ্ট অনুভব করলাম। অন্য স্ত্রীদের মতো বলতে পারলাম না আমার সকল সৌন্দর্য আপনার জন্য।
কি কপাল আল্লাহ আমায় দিয়েছেন। আল্লাহ যদি বাবার মধ্যে একটা পরিবর্তন এনে দিতো আর উনার মাঝেও কিছু ধার্মিক পরিবর্তন এনে দিত তাহলে কি আমি উনার সাথে সংসার করতে পারতাম??
উনি বললেন- সামান্য বোরখা খুলতেই এতো টাইম। বুঝেছি আমার বাসর রাতে আমার আর বাসর করা হবেনা।
আমি উনার কথা শুনে হাসব না কাঁদব বুঝতে পাচ্ছিনা।
উনি এতো লাগামহীন কথা কোথা থেকে বলেন।
.
.
আগুন -ওর বোরখা খোলা শেষ হতেই ও চুপ করে আমায় বলল।
আমি ওকে বোরখা ছাড়া মাত্র দুই একবার দেখার সৌভাগ্য পেয়েছি।
ওর কাছে গিয়ে লক্ষ্য করলাম আমার হাতের দেওয়া আঘাত গুলো লাল বর্ণ ধারন করেছে।
ওর গলা, গাল, হাত না জানি আরও কোথায় কোথায় আঘাত করেছি।
আমি ওর কাছে গিয়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছি। আর ও চোখ বন্ধ করে আছে।
এই প্রথম এভাবে ওর সৌন্দর্যের এতো কাছে উপস্থিত হয়েছি।
নিজেকে ঠিক রাখা কষ্টকর হচ্ছে।
আমার বুকের সমুদ্রের ঢেউ যেন উত্তাল হয়ে বইছে প্রচন্ড বেগে।
.
.
.
ওর মিষ্টি কন্ঠের সাথে শারীরিক গঠন খুব সুন্দর করে বানিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। আমার প্রিয়তমার গায়ের রং সবথেকে আলাদা। ওর গায়ের সুভাষ কোটি গুন পারফিউম থেকেও সুভাষিত।
সত্যিই বিয়েতে আল্লাহর রহমত আছে। নইলে আমার মতো উগ্র টাইপ ছেলে কিনা সেই ছোট বেলার ছেলেখেলার মতো বিয়ের বন্ধনের মায়া জালে আটকে রয়েছে কিভাবে।
.
.
মোম -আমার খুব লজ্জা করছে।
উনি আমার এতো কাছে।
আমার বুকে সেই অস্থিরতা কোটি কোটি গুন বেড়ে চলেছে।
উনার এতো কাছে এভাবে আরকিছছু ক্ষণ থাকলে সুখে আমার মরণ হবে। ছেলেবেলার বিয়ের বন্ধনের মায়া জাল আমাকেও আটকে ফেলেছে।
উনার প্রতিটি স্পর্ষ আমাকে আরও কাছে নিয়ে যাচ্ছে উনার। আমি চোখ খুলতেই দেখি একটা লাল টকটকে গোলাপ আমার মুখের সামনে ধরে রেখে আমাকে দেখছেন। উনি আমার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেছেন।
উনি বললেন -এই গোলাপের থেকেও আমার প্রিয়তমা বেশি সুন্দরীী ❤।
আমাকে এতো কাছে পেয়েও উনি নিয়ন্ত্রণে আছেন। সত্যি আল্লাহ উনাকে ধৈর্য দান দিয়েছে। উনার প্রতি বিশ্বাস আরও বাড়লো। উনাকে আমার বিশ্বাস করে উনার হাতে সুখে শান্তিতে মরে যাওয়ার স্বাদ জেগেছে এখন।
.
.
.
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here