প্রিয়জন❤Part-17

0
2893

প্রিয়জন❤Part-17
Writer-Moon Hossain

মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে মোম বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
আজ সে এমন ভাবে আগুনকে জড়িয়ে ধরেছিলো যেটা সে নিজেও কল্পনা করতে পারেনি। ভাবতেই চোখ বন্ধ হয়ে আসছে লজ্জায়।
আগুনের গায়ের গন্ধ এখনো মোমের গায়ে লেগে আছে এমন মনে হচ্ছে মোমের।

মোমের খুশি যেনো তার নূরের মুখশ্রীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
মোমের ফোনের রিংটোন টা বেজে উঠলো।
অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে।
অনেক ক্ষণ ধরেই কল বাজছে।
মোম রিসিভ করবেনা বলেও রিসিভ করে ফেললো।
.
.
.
ওপাশ থেকে কেউ বলল-আমার কথা ভাবছো?
মোমের হার্ট হাই স্প্রিরিটে চলতে শুরু করলো।
মোম কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
-কি হলো? আমার কথা ভাবতে ভাবতে আমাকেই ভুলে গিয়েছো?
মোম ধপ করে ফোনটা কেটে দিলো।
আগুনের কন্ঠটা একদম বুকের ভেতর বাজতে শুরু করেছে।
ফোনে কথা বলা সম্ভব নয় মোমের পক্ষে। মোম ফোনটা বুকের কাছে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। আগুনের সাথে এখন তার মজবুত একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আগুনকে জড়িয়ে ধরার পর থেকে মোমের অস্থিরতা আরও চার গুন বেড়েছে। এই অনূভুতি খুব সুখের।
প্রচন্ড সুখে মোমের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
ম্যাসেজের শব্দ হলো।
” হ্যাশট্যাগ আমার প্রিয়তমার লজ্জা লাগছে মেবি। ফার্স্ট টাইম হতে পারে ফোনে কথা বলা। সে যদি ফার্স্ট টাইম হাসব্যান্ডের সাথে কথা বলা হয় তাহলে তো লজ্জা ফিল করার কথা। বুঝি বুঝি সব বুঝি। I can understand.
.
.
.
মোম -উনার ম্যাসেজ দেখে শান্তি পেলাম। যাক বাবা রাগ করেন নি কল কেটে দেওয়াতে।
আমি ফোনটা দুই হাত দিয়ে বুকের মাঝে নিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম।
হঠাৎ আরেকটা শব্দ।
“রিপ্লে দিতেও লজ্জা লাগছে? আরে বাবা আমি তো সামনে নেই আর কন্ঠও শুনতে পারবেনা যে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রাখবে।
ম্যাসেজে কথা বলে সহজ হয়ে নাও। এতোদিনের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আর তুমি কিনা সামান্য রিল্পে দিতেও লজ্জা ফিল করছো। হায়!!আমার কি লাক!!!
.
.
.
মোম রিপ্লে দিলো।
“আসসালামু আলাইকুম”
ম্যাসেজ সিন হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর ওয়ালাইকুম আসসালাম এবং কিছু কান্নার ইমুজি আসলো।
মোম আবার ম্যাসেজ দিলো।
“কেমন আছেন?
এটাও কিছুক্ষণ সিন করার পর আগুন বলল” একজন এক সমুদ্রের পানির জন্য ওয়েটে ছিল। বিনিময়ে এক জগ পানি পেলে যেমন থাকে তেমন আছি।
.
.
.
মোম -” বিন্দু বিন্দু পানি দিয়ে বিশাল জলরাশির সৃষ্টি হয় ঠিক তেমনি এক জগ পানি দিয়ে একদিন সমুদ্র তৈরি হবে। তার জন্য সবুর করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা সবুরের মধ্যেও নেকি দিয়েছেন।
আগুন-” প্রিয়তমা তুমি যখন কথা বলো তখন তোমার কথা গুলো অমৃতের মতো লাগে।
তোমার প্রতিটা কথার মাঝে আল্লাহর নূর লুকিয়ে থাকে। তোমার কথা গুলো শুনলে ভরসা সৃষ্টি হয়। তুমি মহান আল্লাহ তায়ালার একজন নেক নারী”
.
.
.
মোম-আপনিও এমন হতে পারবেন চাইলে।
আগুন-তোমার স্পর্ষে ইবলিশও নেক বান্দা হয়ে যাবে।
আচ্ছা তুমি চেন্জ করে নিয়েছো?
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে তোমাকে আমার কাছে আনা ঠিক হয়নি। তুমি এমনিতেই দূর্বল। তোমার কষ্ট হয়েছে সেজন্য আমি দ্বায়ী।
মোম-আপনি নিজেকে দোষারোপ করবেন না। আমি সুস্থ আছি বরং আপনার জন্য টেনশন হচ্ছে।
আপনি চেঞ্জ করেছেন কখন?
আগুন কতগুলো হাসির ইমোজি দিয়ে বলল- একা চেন্জ করতে কষ্টকর। কি আর করব ওয়াইফ থাকতেও একাই করতে হয়।
.
.
মোম- আপনার উপর জ্বীন আছর করেছে। সেই আপনাকে দিয়ে লাগামহীন কথা বলাচ্ছে।
এভাবেই মোম আর আগুনের কথা মাঝরাত পর্যন্ত চলছে। আগুনের দুষ্টুমি কথা আর মোমের ইসালামিক নূরের আলোর কথা ম্যাসেজিং হচ্ছে একের পর এক।
হঠাৎ আগুন বলল- আমি সত্যি একজন দায়িত্বহীন হাসব্যান্ড।
মোম -হায় আল্লাহ কি বলছেন?
আগুন-তা নয়ত কি? কটা বাজে? তোমাকে না খাইয়ে রেখেছি আমি। ইচ্ছে করছে মাথাটা ফাটিয়ে দিই।
দিলাম মাথা ফাটিয়ে।
মোম তাড়াতাড়ি রিপ্লে দিলো – আল্লাহর দোহায় এমন কাজ করবেন না।
আপনি কতটা দায়িত্ববান তা আল্লাহ তায়ালা জানেন।
আমার কারণে আপনি আঘাত পেলে আমার জাহান্নামে যেনো জায়গা হয়।
-তাহলে এখুনি লক্ষ্যি মেয়ের মতো খেতে বস।
-মাফ করবেন আজ খেতে ইচ্ছে করছে না।
-তুমি না খেলে এখুনি মাথা ফাটাবো তারপর তোমার বাড়িতে এসে আমার শশুরের সামনে তোমার রুমে গিয়ে তোমাকে খাইয়ে আসব।
– আল্লাহর দোহায় ভয় দেখাবেন না। নিজের কোন ক্ষতি করার কথা সপ্নেও ভাববেন না।
-আল্লাহর দোহায় আমি মাথা ফাটাবো। এই এই দিলাম মাথা দুভাগ করে।
– না না আমি এখুনি খাচ্ছি।
-একেবারে পুরোদস্তুর ফুল প্লেট খাবে। মাইন্ড ইট!!
.
.
.
মোম নিচে গিয়ে তাদের কাজের মেয়ের রুমে গেলো। ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করলো না। সারাদিন তো কত খাটুনি হয়। মহানবী কাজের লোকেদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ ছিলেন। নিজে যা পরতেন, খেতেন তা তাদেরও তা দিতে বলতেন । মোম গায়ে চাদর টেনে দিলো কাজের মেয়েটার৷
মোম নিজেই ফ্রিজ থেকে মশলা মাখানো তেলাপিয়া দুটো মাছ বের করে ভেজে নিলো। তাদের নতুন কাজের মেয়েটা তাকে ছাড়া খায়না। মোম জানে রাতে সে খায়নি তাই এই মেয়েটাও খায়নি।
মোম আর কাজের মেয়েটা এক টেবিলে বসে খাবার খেলো। মেয়েটা প্রকান্ড ভয়ে ছিলো। এমন সুন্দরী মেয়ে তাকে নিজের সাথে বসে খাওয়াচ্ছে। জ্বীন-ভূত ধরলো নাতো। মোম হাসছে মেয়েটার বড় বড় ড্যাঁপ ড্যাঁপ চোখ দেখে।
.
.
.
মোম তাড়াতাড়ি খেয়ে ম্যাসেজ দিলো “শেষ ”
সাথে সাথেই ম্যাসেজ আসলো “ঘুম পেয়েছে তোমার অথচ আমি একজন দায়িত্বহীন স্বামী হয়ে এতো রাত পর্যন্ত জাগিয়ে রেখেছি।
আমার কঠিন শাস্তি হওয়ার দরকার। কি করব বলো তোমার সাথে কথা বলতে আমার পাগল মন ওয়েটে থাকে সারাক্ষণ। আমার এখন মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে।
মোম তাড়াতাড়ি রিপ্লে দিলো – আপনি নিজের কোন ক্ষতি করবেন না কখনো কথা দিন আমায়?
আগুন কতগুলো হাসির ইমোজি দিলো।
আগুন হঠাৎ বলল-আচ্ছা তোমার স্বামী খেয়েছে কিনা তা তো বললে না?
মোমের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো, তাইতো।
আগুন আবার ম্যাসেজ পাঠালো – স্বামীকে না বলেই স্ত্রী ফুল প্লেট খেয়ে এসেছে। আল্লাহ কোথায় তুমি? নিরীহ স্বামীর একি দূর্দশা।
মোমের চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো।
আগুনের সাথে কথা বলার সময় তার সমস্ত ইন্দ্রিয় অজানা রাজ্যে ছিল। হ্রদয়ে তখন বিশাল সমুদ্রের ঢেউ পারি দিচ্ছিল। অস্থিরতা বসত মোমের খেয়াল নেই।
আগুন আরেকটা ম্যাসেজ দিলো ” চোখের পানি মুছে ফেল প্রিয়তমা।প্রিয়জনদের সাথে ফার্স্ট টাইম মনের কথা বলার সময় সবকিছু ভুলে যাওয়া হয়। I can understand! বলতে ভুলে গিয়েছি আমি তোমার কাছ থেকে বিধায় নিয়ে রেস্টুরেন্টে একাই পাঁচ হাজার বিল করেছি ডিনার করে।
.
.
.
মোম ম্যাসেজ সিন করে বসে আছে। হাসবে নাকি কাদঁবে বুঝতে পাচ্ছেনা।
এমন দুষ্টু, কথা বার্তা লাগামহীন, দায়িত্ববান, ভরসা, বিশ্বস্ত , কেয়ারনেস, লোকের সাথে আর যায় হোক রাগ করা যায়না। যার বুকে অসীম ভালোবাসা আর চোখে অসীম স্নেহ তার উপর অভিমানও চলে না!!!
.
.
.

.
.
.
মোমের ভেজা চুলের পানিতে আগুনের ঘুম ভেঙে গেলো।
মোম -শুভ সকাল
আগুন-শুভ সকাল প্রিয়তমা
মোম-আজকের দিনটি আল্লাহর রহমতে আপনার জন্য খুশি বয়ে আনবে। আমিন।
আগুন – আমি ওর পবিত্র মুখশ্রী স্পর্শ করতেই ওর মুখশ্রী গোলাপি আভা হয়ে গেলো লজ্জায়।
আমি ওর আঁচল টেনে নিজের কাছে আনালাম।
ওর কপালে চুমু খেয়ে ওর গালে হাত দিয়ে বললাম – যার ঘরে মহান আল্লাহ এমন পবিত্র নেকি বউ দান করেছেন তার প্রতিটা দিন আল্লাহর রহমতে খুশিতে কাটবে।
আমি ওর ঘোমটা লম্বা করে টেনে দিয়ে বললাম -আমার লক্ষ্যি লাল টুকটুকে বউ।
মোম মুচকি হেঁসে মুখখানি নিচু করে রাখলো। ওর হাসিতে মুক্তো ঝরছে। আমি ওর গোলাপি ঠোঁটে আঙুল ঘষে ওর কাছে যেতেই হঠাৎ ও মুচকি হেসে এমন জোড়ে একটা কামড় বসালো যে আমি কোলবালিশ নিয়ে সোজা নিচে পড়ে গেলাম।
.
.
আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ দেখেনি তো। OH god! What a sweet dream!!!.. আমার ঠোঁটে হাসি থামছেনা। আমার প্রিয়তমা আমাকে পাগল করে খুশিতেই মেরে ফেলার প্ল্যান করেছে। কোলবালিশ নিয়ে ফ্লোরেই শুয়ে পড়লাম।
শুনেছি প্রেমে পড়লে মানুষ পাগল হয়ে যায়। আমারও সেম স্টোরি!!
.
.
.
মোম-ফজরের নামাজের সময় মনে হয় ঘুম থেকে উঠতে পারতামনা উনি মিসকল না দিলে। উনি কি করে জানলেন আমার ঘুম ভাঙেনি। ম্যাসেজও দিয়েছিলেন একটা “ঘুম ভেঙে থাকলে নামাজ পড়ে নাও”
সকালে নাশতা না করেই বেড়িয়ে পড়লাম উনার আদেশে।
গাড়ি নিয়ে যাইনি। উনি পিক করবেন আদেশ দিয়েছিলেন।
হঠাৎ একজন ভিক্ষুক এসে বলল-সুন্দরী আপা দুটো টাকা দেন! আমি নোট বের করে ভিক্ষুকের দিকে তাকিয়ে শকড খেলাম!! এটা উনি।
উনি ভিক্ষা করছেন কেন!!!
অনেক ক্ষণ চোখ বন্ধ করে তারপর চোখ খুলে দেখলাম একজন বয়স্ক লোক। নিজের কপালে হাত দিয়ে বললাম –
ধূর,ধূর,ধূর ভালো লাগেনা!!! প্রেমে পড়ে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।
.
.
.
খুব বেশি লজ্জা লাগছে আজ উনার সাথে সামনাসামনি বসে থাকতে। কি দিয়ে শুরু করব ভাবতেই চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।
উনি হেসে বলল- এখনো নেকাব?? আমি কি অন্য লোক?
উনি আমার নেকাব খুলে আমার গাল স্পর্শ করলেন।
গাল থেকে হাত না নামিয়ে বললেন -আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা তুমি আর আমি এখন আমরা হয়েছি।
বুঝতে পাচ্ছি আমার ভেতরে অস্থিরতা শুরু হয়েছে।
উনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন স্যান্ডউইচ। আমি নিচে তাকিয়ে তাকিয়ে মনের সুখে খাচ্ছি। হঠাৎ উনি বললেন- তুমি আমাকে খাইয়ে দাও তো। চামিচ ছাড়া।
আমি লজ্জায় তাকাতে পাচ্ছিনা আর উনাকে খাইয়ে দেব! কি সর্বনাশ!! আমি মাথা নাড়াতেই উনি বললেন -যদি না বলো তাহলে এই রেস্টুরেন্টের উইন্ডো দিয়ে এক লাফ দেব। দিলাম লাফ!!!!!
আমার কলিজা শুকিয়ে গেলো। উনি সবসময় দুষ্টুমি করে উনার ক্ষতির কথা বললেও আমার কলিজায় আঘাত হানা দেয়। কি করব না করব ভেবে পেয়ে উনার হাত ধরে বললাম-
” সকাল সন্ধায় ৩বার করে এই দোয়া পড়লে আসমান জমিনের কোন কিছুই আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সকালে তিনবার ও সন্ধ্যায় তিন বার এই দুআ পড়বে, কোনো কিছুই ঐ ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারবেনা।”
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণঃ বিস্‌মিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াদুররু মা‘আ ইস্‌মিহী শাইউন ফিল্ আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামী‘উল ‘আলীম (৩ বার)
অর্থঃ আমি সেই আল্লাহর নামে শুরু করছি, যার নামে শুরু করলে আসমান ও যমীনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারেনা, তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।
(আবূ দাউদ, ৪/৩২৩, নং ৫০৮৮; তিরমিযী, ৫/৪৬৫, নং ৩৩৮৮; ইবন মাজাহ, নং ৩৮৬৯; আহমাদ, নং ৪৪৬। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ২/৩৩২। আর আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘তুহফাতুল আখইয়ার’ গ্রন্থের ৩৯ পৃষ্ঠায় এটার সনদকে হাসান বলেছেন- হিসনুল মুসলিম থেকে)
.
.
.
আগুন- আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আল্লাহ তায়ালার নূর ওর মুখশ্রীতে স্পষ্ট। রিয়েলি তোমার মতো প্রিয়জন পাওয়া সৌভাগ্য প্রিয়তমা!!!
.
.
চলবে………❤❤❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here